#কুঞ্জছায়া
#কুঞ্জা_কাবেরী
#পর্ব৮
(কপি করা নিষেধ)
..
পৃথিবীতে আপন বলতে শুধু নিজের বুকে পোষা অতি গোপন দুঃখটুকুই।নয়তো পৃথিবীতে সব জিনিসের উপরই ভাগ আছে।কিন্তু দুঃখের কোন ভাগ হয় না কোনদিন।
অরন্য ক্লাস শেষ করে নিজের কেবিনে বসেছিলো।আজ তার নাইট ডিউটি আছে। রাতে একটা অপারেশন আছে।সব ডিটেইলস লাগবে।এক সিস্টারকে ডেকে ছায়াকে ইনফরম করতে বললো আর বললো ছুটির পর যাতে এসে দেখা করে যায়।অভিক ফোন দিলো সেই সময়।
-অরন্য আমি এই সপ্তাহেই আসছি।এই দিকে সব ফর্মালিটিস পূরণ করা হয়ে গিয়েছে।
অরন্য বেশ শান্তভাবেই উত্তর দিলো,
-ঠিক আছে।সাবধানে আসিস।দেখা হচ্ছে।
আরো কিছু দরকারি কথা বলে ফোন রেখে দিলো।
..
সিস্টার গিয়ে ছায়াকে বললো ছুটির পর থাকতে।তড়িঘড়ি করে বললো,
– অরন্য স্যার বলেছে দেখা করতে।
ছায়া শুনলো কিন্তু প্রতুত্তর করলো না।সিস্টারের কি আর এতো সময় আছে এই খানে দাঁড়িয়ে ছায়ার উত্তরের অপেক্ষা করার।সে কথাটি বলেই নিজের কাজে চলে গেলো।
…
অরন্য নিজের কেবিনে বসে টেবিলের ওপর রাখা পেপার ওয়েট টা হাত দিয়ে ঘুরাচ্ছিলো আর গভীর ভাবনায় মগ্ন ছিলো।বিবশ শান্ত স্থির তার চাহনী।ঠোঁটজোড়া একবারে শুষ্ক হয়ে আছে।গলাও শুকিয়ে গিয়েছে।হাতের কাছে গ্লাস কিন্তু পানিটা হাত বাড়িতে খেতে ইচ্ছে করছে না।ভাগ্য তাকে আজ কোথায় এনে দাঁড় করালো সেটাই ভাবতে বিভোর সে।সে কি আসলেই এইসব ডিজার্ভ করে? অবশ্যই না।এইবার কি তাকে শক্ত হয়ে খুটি ধরতে হবে?নাকি এতো বছরের মতোই থাকবে নির্বাক।মাথাটা ব্যাথায় টনটন করছে।সময় পালটেছে সেই সাথে পালটেছে তার স্বভাব,আচরণ। সেই সময় দরজায় কেউ নক করলো।সে চুপ থাকলো।বুঝতে পারছে কে এসেছে।দেয়ালে টানানো ঘড়িটার দিকে তাকালো।৩ টা বেজে ১০ মিনিট।ছায়া
আবার নক করলো আর এইবার অস্বস্তিময় স্বরে বললো,
– মে আই কাম ইন স্যার?
সে গম্ভীর কন্ঠে বললো,
– ইয়েস কাম।
ছায়া আসলো। এইবার সে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলো।কিন্তু অরন্য কিছুই বলছে না।ছায়ার বুকের ভিতর ঢিপ ঢিপ আওয়াজ করছে। তার অস্বস্তি হচ্ছে।কিন্তু অরন্য কিছুই বলছে না।
সে আবারো বললো,
– স্যার ডেকেছিলেন আমাকে?
এইবার অরন্য চাইলো তার দিকে ভালো করে আর বললো,
-জ্বি মিস ছায়া বসুন।
ছায়া বসলো আর এদিক ওদিক তাকালো কিভাবে কথা শুরু করবে বুঝতে পারছে না।অরন্য চেয়ে চেয়ে তার কার্যকালাপ সব পর্যবেক্ষন করছে।অরন্য গলা পরিষ্কার করে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বলার জন্য তৈরি হলো।
-দেখুন মিস ছায়া আমাকে অ্যাসিস্ট করবেন প্র্যাকটিক্যালের জন্য ভালো কথা কিন্তু ব্যক্তিগত বিষয় যাতে প্রফেশনাল লাইফে না আসে আমি সেই আশায় করছি।আশা করি বুঝতে পারছেন।
ছায়া এই কথা শুনে কিছুটা স্বস্থি পেলো যেনো।একটা শান্তির শ্বাস ফেললো আর অরন্যের সাথে সম্মতি জানালো মাথা দুলিয়ে।
অরন্য আবারো বললো,
-দেখুন মিস ছায়া আমি কিছু বিষয় পরিষ্কার করছি দ্বিতীয়বার যাতে আমাকে আর না বলতে হয়।আই থিংক আপনি বুঝতে পারছেন।
ছায়া মাথা ঝাকালো।দৃষ্টি তার টেবিলের দিকে স্থির বইগুলার দিকে।
অরন্য আবারো ছায়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বললো,
-আমি একদমই লেইট পছন্দ করি না।রেগুলারিটি,ডিসিপ্লিন, টাইম ম্যানেজমেন্ট যাতে ঠিক থাকে একদম।আর আমি যেই অ্যাসাইনমেন্টগুলা দিবো সেই গুলা যাতে সঠিক সময়ের মধ্যেই কমপ্লিট হয়ে যায়।একদিনও দেরি হলে আমি আর জমা নিবো না।আর এই অ্যাসাইনমেন্টের কপি গুলা ক্লাসকে তিনটা গ্রুপে ভাগ করে একটা গ্রুপকে দিবেন আর আপনি তাদের লিড করবেন।
রাত দিন নেই আমার সাথে কাজ করতে গেলে।অবশ্যই কন্টাক্ট করার প্রয়োজন হলে আমি যেনো পাই সঠিক সময়ে।খেয়াল থাকে যেনো।আর আমার আন্ডারে যেই পেশেন্টগুলা থাকবে তাদের দিকে খেয়াল রাখবেন আর আমার রুটিনটা অবশ্যই মাথায় রাখবেন।অপারেশন টাইমে আমার সাথে থাকবেন।ওকে নাউ ইউ ক্যান গো।
ছায়া অরন্যের দিকে হা করে তাকিয়ে ছিলো।এইসব কি ছিলো?এতো এতো রুলস সে মানবে কিভাবে?সে আর কোন প্রশ্ন না করে কেবিন থেকে বেরিয়ে যেতে নিবে এমন সময় অরন্য বলে,
-আজ আমার অপারেশন আছে যদিও আজ আপনার থাকার দরকার নেই।নিজেকে মেন্টালি প্রিপেয়ার করে কাল থেকে জয়েন করবেন আমার সাথে।ছায়া একবার পিছনে ফিরে তাকিয়ে হু বলে চলে আসলো।নীলা মেঘা তার জন্য মাঠে অপেক্ষা করছিলো।ছায়া মাঠে যেতেই নীলা আর মেঘা তাকে ঘিরে ধরে একের পর এক প্রশ্ন করতে লাগলো।
মেঘা উত্তেজিত হয়ে বললো,
-ছায়া সব ঠিক ছিলো?স্যার কি বললো?
নীলাও বেশ চিন্তিত ছিলো ছায়াকে নিয়ে।সেও অতি আগ্রহের সহিত সব জানতে চাইলো।
ছায়া একে একে সব উত্তর দিতে লাগলো।
মেঘার গাড়ি আসলে সে বিদায় নিয়ে চলে যায় আর নীলা ছায়া রিকশা নিয়ে বাসায় চলে আসে।
বাসায় এসে ছায়া ফ্রেশ হয়ে বের হতেই ফোন হাতে নিয়ে দেখে ২০+ মিসড কল মায়ের নাম্বার থেকে।সে ভীত হলো বাবার কিছু হলো নাতো?
সে মাকে ফোন দিলো।
ফোন সাথেই সাথেই রিসিভ হলো।অপরপাশ থেকে তার মা চিল্লিয়ে উঠলো আর বললো,
-এই দিন দেখার জন্যই কি তোমাকে জন্ম দেওয়া হয়েছিল?আমরা কি তবে তোমাকে সঠিক শিক্ষা দিতে ব্যর্থ? শেষ অবধি একটা মেয়ের সংসার ভাঙতেও তোমার হাত কাঁপলো না? একটা ছেলের জীবন তো কেড়ে নিয়েছিলে এখনকি মেয়েটাকে বেঁচে থেকে মৃত্যু যন্ত্রনা ভোগ করতে হবে?
ছায়া ভড়কালো মা এইসব কি বলছে!ব্যাথিত কন্ঠে জানতে চাইলো,
-আমি কি করলাম মা?
মীরা বেগম বেশ কঠোর স্বরে বললো,
-আহান বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছিলো। তার অবন্তীর সাথে ডিভোর্স হয়ে গিয়েছে।আর সেই কারণটা তুই ছায়া।অবন্তী আমাদের বাড়ি এসে কান্নাকাটি করেছে অনেক।মেয়েটার কি দোষ বল?কেন কেড়ে নিচ্ছিস।আহানের সাথে নাকি এখনও সম্পর্ক আছে?
ছায়া চমকালো আহানের ডিভোর্সের কথা শুনে তার চেয়ে বেশি অবাক হয়েছে যখন শুনেছে সেই কারনটা সে।
ছায়া কিছু বলতে পারলো না।তার অক্ষিযুগল থেকে লবণাক্ত স্বচ্ছ জলের নহর বেয়ে পড়ছে চিবুক বেয়ে।
ছায়া বললো কম্পিত কন্ঠে,
-আমি তোমার মেয়ে তো মা? আমার কথা কেন একবার শুনলে না।সেইদিনও না আর আজও না।আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই অপরাধী বানিয়ে দিচ্ছো কেন?আমার সাথে আহানের যোগাযোগ নেই পাঁচ বছরের বেশি হবে।আমাকে বিশ্বাস করো।
মীরা বেগম নিজেও মেয়েদের ভালো চান।কিন্তু নিজের চেহারায় সব সময় কাঠিন্যতা বজায় রাখেন।তিনি মনে করেন শাসনের মাধ্যমেই মেয়েদের ঠিক রাখা যায়।
এই বার মীরা বেগম কিছুটা নরম হলেন।মেয়েটা তার কষ্টে আছেন বুঝতে পারলেন।
-মারে আমাদের সম্মানটা তোর হাতে।সমাজে মুখ দেখাতে পারবো না।তোর ছোট একটা বোন আছে।তাকেও বিয়ে দিতে পারবো না।আমাদের পছন্দের কাউকে বিয়ে করে নে।আর কতোদিন একা থাকবি।শেষবারের মতো আমাদের কথা শোন।
ছায়া মলিন কন্ঠে জবাব দিলো,
-ঠিক আছে মা।
এইটা বলে ফোন কেটে দিলো।আজ সে কাঁদবে, অনেক কাঁদবে। ভিতরের সব দুঃখ অশ্রুর মাধ্যমে বের করে দিবে।জীবনটা এমন কেনো?তার শক্ত খোলসটাকে মুক্ত করে দুঃখ বিলাস করবে।অতীত কেন পিছু ছাড়ে না?
নীলা এসে তার পাশে এসে দাঁড়ায়,।তার চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো,
– পাগলি কাঁদছিস কেনো? চকোলেট খাবি?
এইটা শুনে ছায়া কিঞ্চিৎ ঠোট প্রসারিত করলো।এই মেয়েটা না থাকলে তার কি হতো?
…
রাত ১১ টায় অরন্য হসপিটালের করিডোরে দাঁড়িয়ে। নিজের জীবনের হিসাব মিলাচ্ছিলো।
সেই সময় হঠাৎই বলে উঠলো,
– আপনাকে আমি একা ছাড়িনি ।আমি পারিনি নিজেকে দূরে রাখতে।ঠিকই আবারো চলে এলাম।এইবারের খেলাটা হবে একেবারেই ভিন্ন।টিট ফর ট্যাট।আমি ভুগেছি এতোদিন এখন আপনাকে ভুগতে হবে।ইউ মাস্ট রিপেন্ট।ইটস মাই প্রমিস।
অরন্য তার ছোটবেলার বন্ধু আশিককে কল দেয় জরুরি ভিত্তিতে। এইবার সে ডিবিতে আছে।কিছু বিষয় তার অজ্ঞাত।সেইসব জানা যে বড্ড জরুরি।
…
প্রান বান্দারবান একটা রিসোর্টের বেলকনিতে বসে জ্যোৎসা বিলাস করছিলো।সেই সময় তার মোবাইল কাপিয়ে অচেনা নাম্বার থেকে কল আসলো। প্রাণ ভ্রু কুচকালো। প্রায়ই এই নাম্বারটা থেকে কেউ কল দিয়ে একবারেই নিশ্চুপ থাকে।কোন কথা বলে না।এইবার ভাবলো সে ফোন রিসিভ করে কিছু কঠিন কথা শুনিয়ে দিবে।ফোন কানে ধরলো কিন্তু নিশ্বাসের শব্দ ছাড়া আর কারো শব্দই কানে আসছে না।
সে এক ধমক দিয়ে বললো,
-মগের মুল্লুক পেয়েছেন।যখন তখন ফোন দিয়ে বিরক্ত করছেন।লজ্জ্বা নেই? আমি ফোন ধরি না তার মানে আমি কথা বলতে ইচ্ছুক নই।এতটুকু কমনসেন্স নেই?
ঠিক তখনি ফোনের অপরপাশ থেকে কোন মেয়ের ফুপিয়ে কান্নার আওয়াজ আসছে।প্রান মন দিয়ে শুনলো সেই আওয়াজ।কান্নার তরঙ্গ ধ্বনি তার হৃদয়ে গিয়ে হানা দিচ্ছে।মস্তিষ্কে অনুরণন সৃষ্টি করছে।
অপরপাশ থেকে চট করেই কলটা ডিসকানেক্টড হয়ে গেলো।প্রান আবারো কল দিলো কিন্তু সুইচড অফ বললো।প্রানের মনটাই খারাপ হয়ে গেলো।সে ভেবেছিলো কেউ হয়তো মজা নিচ্ছে।কিন্তু কেইসটা এমন না। তবে অন্যকিছু।সে কালই ঢাকা ব্যাক করবে আর এই বিষয়টা খুটিয়ে দেখবে।
#কুঞ্জছায়া
#কুঞ্জা_কাবেরী
#পর্ব৯
(কপি করা নিষেধ)
…
নিস্তব্ধ ঘরের এক কোণে একাকী বসে এক কিশোরী অনবরত কেঁদে চলেছে।তার মনে তৈরী হওয়া এই অযাচিত আবেগের কি নাম দেবে? ভালোবাসা নাকি মোহ?অনন্যা বুঝতে পারছে না কি করবে।কাকে বলবে এই কথা? ভাইয়া জানতে পারলে কি করবে? নিশ্চয় অনেক বকবে।আর কোনদিন তার সাথে কথা না বললে?যদি তার জন্য তাদের বন্ধুত্ব নষ্ট হয় তবে কোনদিন নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে না।কিন্তু তাকে ছাড়া ভালোও থাকতে পারবে না।তার মনে হয়ে গেলো কিছু পুরনো কথা।
তখন সে ক্লাস নাইনে পড়ে।কেবলমাত্র বুঝতে শুরু করলো সব।ভাইয়ার সাথে প্রান ভাইয়া প্রায়ই আসতো বাসায়।একদিন বাসায় ভাইয়া নেই।শুধু জেসমিন বেগম আছেন।প্রান ভাইয়া আসলো ভাইয়ার খোঁজে। ভাইয়ার নাকি কোন খবর নেই।তখন ছিলো গ্রীষ্মের দুপুর।বাইরে তেজি রোদে গা স্বেদজলে ভিজে একাকার।সেইদিন প্রান ভাইয়া এলো একটি কালো পাঞ্জাবি পড়ে।পাঞ্জাবি ভিজে গায়ের সাথে চিপকে ছিলো।ফরশা গায়ে একদম ফুটে উঠেছিল। সেইদনই অনন্যার মনে অন্যরকম ভালোলাগা ছেয়ে যায়।প্রান এসেই জিজ্ঞেস করলো কিরে বুড়ি তুই নাকি সেই ফাকিবাজ হয়েছিস পড়তে চাস না।এই বলেই অনন্যার মাথায় এক টুকা দিলো।অনন্যা একটু লজ্জা পেলো।সে প্রানকে বসতে বলে লেবুর শরবত বানাতে চলে গেলো।বানিয়ে এনে প্রানের হাতে দিলো।প্রানের এদিক ওদিক তাকানো, কথা বলার ভঙ্গি সবই যেনো তাকে চুম্বকের ন্যায় টানছিল। সেই দিন যে ডুবলো আজ দুই বছর হতে চললো দিন দিন বাড়ছেই এই অনুভূতি।
…
বিকাল ৪ টা.
– মিস ছায়া আপনি এই কাগজে কিছু সই করে দিনতো নিজের কেবিনে বসে ছায়াকে উদ্দেশ্য করে বললো অরন্য।
ছায়া জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে চাইলো অরন্যের পানে।
জানতে চাইলো কিসের পেপারস।
অরন্য ছায়ার দিকে চাইলো সরু করে।
-এইগুলা হচ্ছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পেপারস যার অপারেশন আজ করা হবে।ডক্টর ব্যাতিত অন্য কেউ ওটিতে এলাউড না।যারা ইন্টার্ন ডক্টর তারা ঢুকতে পারে।কিন্তু আমরা রিস্ক নিচ্ছি আপনাকে নিয়ে।কারন থিওরিতে আপনি ভালো হলেও প্রাকটিক্যাল লাইফে আপনি একটু কম দক্ষ।যদিও সময়ই সব বলে দিবে।তাই চাচ্ছি আপনি থাকুন আমার সাথে।
ছায়া পেপারগুলা খুব ভালো করে পড়লো কিছুই পেলো না। সব ঠিকঠাকই আছে।অরন্যকে আবারো বললো,
-কিন্তু আমিতো মাত্র ৩য় বর্ষে পড়ছি।এখনই কিভাবে?
অরন্য হাতের কলমটা নাড়াতে থাকে।তার সব মনোযোগ যেনো এই কলমটাতেই স্থির।
-অপারেশন করা প্র্যাকটিক্যালি না দেখে শিখবেন কিভাবে মিস?
অরন্যের কথার উপর আর কোন কথা বললো না ছায়া।সে পেপার গুলো ভালো করে পড়ে সাইন করে দিলো।
অরন্য এইবার হাতের কলমুটা টেবিলে রেখে চেয়ারে গা এলিয়ে বসলো সে।একটা হামি দিয়ে ছায়াকে উদ্দেশ্য করে বললো,
-এক কাপ কফি নিয়ে আসুন মিস।
ছায়া কিছুটা না শোনার ভঙ্গিতে বললো,
-কী?
অরন্য কিছুটা অবাক হয়ে বললো,
-আপনার কাছে সমস্যা আছে? সমস্যা থাকলে ড.হামিদ স্যারের কাছে যেতে পারেন।ওনি নাক,কান,গলা বিশেষজ্ঞ।
ছায়া আমতা আমতা করে বলেই ফেললো,
-এইখানে পারসোনাল কোন কাজ করানোর জন্য আমাকে রাখা হয়নি।
অরন্য কিঞ্চিৎ হাসলো।আর বললো,
-এইখানে আমার জন্যই রাখা হয়েছে আপনাকে।সেই সুবাদে এইটুকু আমি চাইতেই পারি।
-ছায়া আর কিছু না বলে ইন্সট্যান্ট কফি নিয়ে আসলো ক্যান্টিন থেকে।কফিটা এনে অরন্যের টেবিলে রাখতেই অরন্য কফটা একটু মুখে দিয়ে তা ফ্লোরে ঢিল মেরে ফেলে দিলো।
অরন্য অতি শান্ত স্বরে ছায়াকে আবারও বললো,
-ক্লিন ইট মিস?
ছায়া যেনো তাজ্জব বনে গেলো। একটু দমে গেলো অরন্যের ভাব ভঙ্গি দেখে।সে রেগে গেলো কেন বুঝতে পারছে না।আর একটা প্রফেসরের সাথে উচ্চবাক্য ব্যয় করাটা ভালো দেখাবে না।সে চুপচাপ কিচ্ছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ক্লিনারকে ডাক দিতে গেলে অরন্য তাকে বাধা দিয়ে বলে,
-আপনাকেই সাফ করতে হবে মিস।
ছায়া আজ যেনো অবাকের চরম সীমানায় পৌঁছে যাচ্ছে।স্যার তাকে কাজের মহিলার মতো ট্রিট করছে কেনো? তাকে কি অপমান করতে চাইছে?ছায়া ফ্লোর সাফ করলো ঠিকই কিন্তু বাড়তি কোন কথা বলেনি।তার অভিব্যক্তি বুঝা যাচ্ছে না।
অরন্য শুরু থেকে শেষ অবধি দেখলো সব সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ভাবে।যেনো মেয়েটার ধৈর্য পরীক্ষা করাই তার মূল উদ্দেশ্য ছিলো।মেয়েটা রিয়েক্ট কেনো করবে না?হুয়াই?শি স্যুড।
তার মনে কি চলছে সেই ভালো বলতে পারবে।মেয়েটা এতো চাপা স্বভাবের কেনো রাগ,দুঃখ,ভালোবাসা কিছুই প্রকাশ করে না।
ছায়াকে আপাতত যেতে বললো হতাশচিত্তে,
-যান মিস।তবে আজ সার্জারির আগে সঠিক সময়ে উপস্থিত থাকবেন।
ছায়া বের হলো। আজ সে নির্বিকার।এইসব যেনো তার পাওনা।
কলেজ বের থেকে তখনই অহনা তার পথ আটকে দিলো।
অহনা কিছুটা দম্ভ নিয়ে বললো,
-ছায়া তুমি অরন্য স্যারকে আর অ্যাসিস্ট করবে না।এর বদলে আমি তোমাকে কিছু অফার দিচ্ছি।
ছায়ার প্রচুর রাগ হলো।সেও চোখে মুখে অগ্নির বিচ্ছুরণ ঘটিয়ে বললো যে,
-আমি নিজেও চাইছি না এটা আর।বাট কিছুই করার নেই কিসমত। আর এইসব কোন কিছুর অফার এটলিস্ট এই ছায়াকে করো না।গিভ মি আ সাইড।
অহনা দাত কিড়মিড় করে বললো,
-জাস্ট টু মাচ।
সীমা আর যুথি অহনাকে শান্ত করতে লাগলো।ওরা হলো চাটুকার। অহনার টাকা বেশি তাই ওর সাথে চিপকে থাকে।
নীলা আগেই চলে গিয়েছে।নীলা থাকতে চেয়েছিলো কিন্তু ছায়াই না করে।এতো সময় শুধু শুধু বসে থাকার দরকার নেই।তাই আজ ছায়াকে একা একাই যেতে হবে।কলেজ গেইট পেরিয়ে মেইন রোডের কাছে আসতেই বুঝতে পারলো গা পুড়ে যাচ্ছে রোদের তাপে।রিকশার জন্য কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হবে কে জানে।বিকাল ৪ টা হলেও গরমের দিনে ৫ টা অবধি রোদের তেজ থাকে অনেক।এমন সময় একটা ছেলে এসে তার পাশে দাঁড়ায়।তার দিকে ছাতা এগিয়ে দেয়।ছায়া ছেলেটার দিকে তাকিয়ে দেখে সিনিয়র ভাই আকির।
আকির ছায়াকে দেখে লাজুক হাসি দিয়ে বললো,
– ছাতাটা ধরো।তোমার হয়তো কস্ট হচ্ছে।
ছায়া একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলেও তা চেহারায় প্রকাশ করলো না।সে বিনয়ের সহিত না করে দিলেও ছেলে নাছোড়বন্দা।তাই উপায় না পেয়ে ছাতাটা নিয়ে নিলো।কাল আবার ফিরিয়ে দেওয়া যাবে।
অরন্য বাড়িতে যাচ্ছিলো।গাড়ি পার্কিং এরিয়া থেকে বের করে মেইন রোড ধরতেই দেখলো ছায়া আর আকিরকে বেশ হেসে হেসে কথা বলতে।অরন্য তা দেখে তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো।পরে আর কোনদিকে নজর না দিয়ে ড্রাইভ করে বাড়ি চলে গেলো।
#চলবে
(