কুঞ্জছায়া পর্ব ৬+৭

#কুঞ্জছায়া
#কুঞ্জা_কাবেরী
#পর্ব৬
(কপি করা নিষেধ)

রাত ১২ টা।অরন্য বারান্দায় বসে ধূমপান করছে। হাতে একটি মেয়ের হাস্যোজ্জ্বল ছবি।ছবিটিতে মেয়েটি লাল রঙের সোনালি পাড়ের একটি শাড়ি পড়েছে।মাথায় বেলী ফুলের গাজরা।চোখে কাজল,পায়ে আলতা। মেয়েটি হেসে হেসে কারো সাথে কথা বলছিলো।সেই সময়েই ছবিটি তোলা।অরন্য একদৃষ্টিতে চেয়ে আছে ছবিটিতে।হঠাৎ করেই লাইটারটা নিয়ে ছবিটিতে আগুন ধরিয়ে দিলো।ছবিটি জ্বলছে।ধোয়াগুলো কুন্ডলি পাকিয়ে উপরের দিকে উঠছে ক্রমশ। আচ্ছা হৃদয় পোড়ার ধোয়া হয় না? হৃদয় পুড়লে দেখা যায় না কেন?এই যে তার হৃদয়টা পুড়ে পড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে দেখা যাচ্ছে না বাইরে থেকে।যদি দেখা যেতো কেমন হতো?মানুষ বুঝি দেখে বলতো যে ইশশ দেখো ছেলেটার হৃদয় বলতে কিছুই রইলো না পুড়ে ছাই হয়ে গেলো।মানুষ মনে হয় সমবেদনা জানাতো।আফসোস করতো।যেই না ছবিটির মুখ পড়ে যাবে সেই মুহুর্তে অরন্য হাত দিয়ে আগুন নিভাতে লাগলো অস্থিরচিত্তে।হাত দিয়ে আগুন নিভাতে গিয়ে হাতে আগুনের ছ্যাকা লাগলো। হাতের ব্যথা তার কাছে কিছুই না এর থেকে বড় ক্ষত সে হৃদয়ে নিয়ে ঘুরছে।হাতে ছবিটি নিয়ে তাকিয়ে থেকে তাচ্ছিল্যের স্বরে বললো,

-দেখো আজও আমি ব্যার্থ।পারলাম না আমি তোমাকে পুড়াতে।অথচ দেখো আমাকে পুড়াতে পুড়াতে তুমি নিঃশেষ করে দিয়েছো।রাত গুলাও কেমন যেন দীর্ঘ হয়।শেষ হতে চায় না।আমার জীবনের আধারও কাটতে চায় না।আজ বোধ আর ঘুম হবে না।নিকোটিনের ধোয়ায় আজ নিজেকে হারাতে হবে।

ছায়ার ফোনে কল দিচ্ছে অনবরত মীরা বেগম।এইবার ছায়া ফোনটা ধরলো।ওইপাশ থেকে গম্ভীর কণ্ঠ স্বর।

-খুব বড় হয়ে গিয়েছো দেখছি।আজকাল মায়ের ফোনটাও রিসিভ করছো না।কিসের এতো রাগ তোমার আমাদের উপর।চুপ করে থেকো না উত্তর দাও।

ছায়া জানতো তার মা ফোন দিয়ে এইসবই বলবে তাই রিসিভ করতে চাইছিলো না।একটু ভালোবাসলে কি হয়? সে তো ভালোবাসার কাঙাল।

ছায়া মলিন কন্ঠে বললো,

– কেন ফোন দিয়েছো?

-কবে বাড়ি আসবি? কত মাস ধরে আসিস না।তোর বাবা তোকে নিয়ে বেশ চিন্তায় আছে।ঢাকা শহরে একা একা থাকছিস। কখন কোন বিপদ হয়ে যায় কে জানে?

-দেখি কিছুদিনের মধ্যেই আসবো।বাবা,রোজি কেমন আছে?

-তোর বাবার শরীরটা কিছুদিন ধরে ভালো যাচ্ছে না।রোজ তো নিজে ভালোই থাকে কিন্ত আমাকে জ্বালিয়ে মারে।
তখনি ছো মেরে ফোনটা রোজ নিয়ে হাপাতে হাপাতে বলে
-একদম বিশ্বাস করো না আপু।মা শুধুই এমন বলে।সারাদিন আমাকে বকে।সারাদিন এমন করলে কারো ভালো লাগে বলো?

ছায়া নীরবে হাসলো বোনের কথা শুনে।আর আদুরে গলায় বললো,

– ভদ্র মেয়ে হয়ে থাকবি কেমন? আর বাবা মায়ের খেয়াল রাখবি।টইটই করে ঘুরে বেড়াবি না।আমার ফুল গাছগুলোর যত্ম নিতে ভুলবি না।আমি আসার সময় কমিক আর তোর জন্য চকলেট নিয়ে আসবো।

রোজ যেনো খুশিতে আত্মহারা হলো।এর থেকে আনন্দের আর হতেই পারে না।রোজ বোনের আসার দিন গুনতে লাগলো।
ছায়া কান থেকে ফোন নামিয়ে বিছানায় ছুড়ে মারলো।

পুরনো কিছু স্মৃতি মানসপটে ভেসে উঠলো।

মা আদুরে কন্ঠে ছায়াকে সকালে ঘুম থেকে উঠার জন্য বলছে,
-এই ছায়া।মা আমার উঠ দেখ সকাল কয়টা বাজে।স্কুলে যাবি না?রিয়া তো চলে আসবে।রিয়া চলে গেলে একা একা কিভাবে যাবি?

ঘুম ঘুম চোখে পিট পিট করে তাকালো ছায়া।ঢুলো ঢুলো কন্ঠে বললো,

-উফফ মা তোমার জন্য ঘুমাতে পারি না একদিনও।

এইটা বলে আর দেরি করে না।চট করেই মায়ের কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়ে বিড়াল ছানার মতো। মায়ের কোল থেকে কেমন যেনো মা মা গন্ধ আসছে।আহ কি আরাম!
-মা একটু মাথায় হাত বুলিয়ে দাওতো।

মীরা বেগম মেয়ের মাথায় বিলি কাটতে কাটতে বলে,

-দেখেছো মেয়ের কান্ড।কে বলবে এই মেয়ে ক্লাস টেনে পড়ে।পাগল মেয়ে আমার।হয়েছে আদর পরে খাওয়া হবে।এখব নাস্তা করে স্কুলে যান।

ছায়া উঠে ফ্রেশ হয়ে গিয়ে ডাইনিং টেবিলে বসলো।ওইখানে রেজাউল হক বসে পত্রিকা পড়ছিলো আর চা খাচ্ছিলো।মেয়েকে দেখে কাছে ডাকলো আর ছায়া গুটি গুটি পায়ে গিয়ে বাবার সামনে দাড়ালো আদর খাওয়ার জন্য।বাবা মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,

– গুড মর্নিং মামনি।ঘুম ভালো হয়েছে?

ছায়া প্রতিউত্তরে মাথা ঝাঁকালো।

– গুডমর্নিং আব্বু।

এইটা বলে চেয়ারে বসে নাস্তা করা শুরু করলো নাকে মুখে এমনিতেই দেরি হয়ে গিয়েছে।আজ জলদি বেরোতে হবে। রিয়া কখন জানি চলে আসে।ছায়ার মা মেয়ের কান্ড দেখে ধমকে বললেন,

– ঘুমের সময় মনে থাকে না।এখন তারাহুড়া করলেই কি হবে?

ছায়ার বাবা ছায়ার মাকে মানা করলেন মেয়েদের সাথে উঁচু স্বরে কথা বলতে,

-আহা মীরা আমার মেয়েদের সব সময় এতো বকা-ঝকা করো না তো।আমার মেয়েরা যথেষ্ট ভালো।তাই না আম্মারা?
রোজ মাথা ঝাকাতে ঝাকাতে বললো,

– হ্যাঁ হ্যাঁ পাপা কিন্ত আম্মু বুঝে না।আম্মু পচা।

এই কথা শুনে মীরা বেগম চোখ বড় বড় করে এগিয়ে এসে রোজের কান ধরে বললো,

-কি বললি আরেকবার বল।

রোজ তখন দুপাটি দাঁত বের করে খিক খিক করে হেসে বললো,

-আই লাভ ইউ মম।
রোজের কথা শুনে মা মাথায় হাত, দেখেছো এইটুকুন মেয়ে তাকে পাম মারে।পুরো টেবিল জোরে হাসির রোল পরে গেলো।
নীলার ডাকে ছায়ার হুশ ফিরে।সে অতীত থেকে বের হয়ে এলো।তার কি সুন্দর হাসি খুশি একটা পরিবার ছিল। সবাই এখন কেমন যেন বদলে গেছে।নাকি সে নিজেই বদলে গেছে কে জানে।সময় মানুষকে পরিবর্তন করে ফেলে।
আর বিলম্ব না করে শুয়ে পড়লো তারা।সকালে উঠতে হবে।


ব্রেক টাইম ১২ টায় অফিস রুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে ছায়া ছুটির জন্যে।অধ্যক্ষ আজমির চৌধুরীর সাইন নিতে এসেছে অ্যাপ্লিকেশনে।এক স্যার জানালো তিনি নিজের কেবিনে আছে। তাই ছায়া আজমির স্যারের কেবনের দিকে পা বাড়ালো।জরুরি ভিত্তিতে তার ছুটির দরকার।পা বাড়িয়ে পিছনের দিকে ঘুরতেই কারো সাথে ধাক্কা খেলো।সামনে তাকাতেই দেখে সেটা অরন্য।পরিস্থিতিটা একে বারেই অনাকাঙ্ক্ষিত ছিল।সে অরন্যকে আশা করেনি।সেই সময় অরন্য ফোঁড়ন কেটে বলে উঠলো,

-চোখ কোথায় নিয়ে ঘুরেন মিস?

ছায়ার শ্বাস বোধ হয় বন্ধ হয়ে গেলো কয়েক মুহুর্তের জন্য।সে কিছু না বলেই দ্রুত আজমির স্যারের রুমের দিকে পা বাড়ালো।
অরন্য তার যাওয়ার পানে চোখ মুখ কুচকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ বিড়বিড় করে নিজের কেবিনের দিকে চলে গেলো।

আজমির সাহেব প্রানের সাথে জরুরি বিষয় নিয়ে আলোচনা করছিলেন।ঠিক সেই সময় দরজায় ধাক্কা পড়ে। বিনয়ের সহিত ছায়া অনুমতি চায়,

-মে আই কাম ইন স্যার?

আজমির সাহেব নমনীয় কন্ঠে বললেন,

-ইয়েস কাম।

ছায়া এইবার কিছুটা উশখুশ করলো।জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিলো।

-স্যার আমার কিছুদিনের জন্য ছুটি লাগবে।
কিছুটা অস্বস্তি নিয়ে আমতা আমতা করেই বললো।

আজমির সাহেব এইবার কিছুসময় ভাবলেন।

-সামনেই তো এক্সাম এখন কি ক্লাস মিস দেওয়া ঠিক হবে?

ছায়া চোখ এইবার চঞ্চল হলো।ঘন ঘন পাপড়ি ফেললো।কিছুটা আত্মবিশ্বাস নিয়ে বললো,

– স্যার আমি নোটস কালেক্ট করে নিবো।নো প্রবলেম।

আজমির স্যার কিছু বলতে যাবে ঠিক তখন প্রাণ ইশারায় ছুটি না দিতে বললো। আজমির স্যার জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালেই প্রান বোঝায় যে পরে বলবে বুঝিয়ে।
ছায়া অন্যমনস্ক থাকায় বিষয়টা ছায়ার নজরে পরেনি।

আজমির স্যার হালকা কাশি দিয়ে প্রাণের দিকে চোরা দৃষ্টি নিক্ষেপ করে।এরপর গলার টাই টা ঢিলা করে কিছুটা দ্বিধা নিয়েই বলে যে,

-দেখো এক্সাম এর খুব বেশি দেরি নেই।তোমার উপর আমাদের ভরসা আছে কিন্তু আমাদেরও তো কিছু রেসপনসিবিলিটিস আছে।কয়েক দিনের মধ্যেই প্র্যাকটিক্যাল শুরু হবে।তাই ছুটিটা পরীক্ষার পরই নিয়ো কেমন?

ছায়া আর কিছু বলতে পারলো না হতাশ হয়ে ফিরে গেলো ক্লাসে।

#চলবে#কুঞ্জছায়া
#কুঞ্জা_কাবেরী
#পর্ব৭
(কপি করা নিষেধ)
..
ব্রেক টাইম শেষ।তাই যে যার যার ক্লাসে ফিরে আসলো।ব্রেক টাইমের পরেই আজ অরন্যের ক্লাস ছিলো।আজ ডক্টর অরন্যের সাথে ডিপার্টমেন্ট প্রধান অধ্যক্ষ ডক্টর সাইফুল ইসলাম স্যার প্রবেশ করলেন কিছু জরুরি নোটিশ দিতে।তিনি শক্ত হয়ে বললেন,

-আমরা তোমাদের ইয়ারমেটদের থেকে ৩ জন সিলেক্ট করেছি যারা আমাদের এই খানে তিন জন প্রফেসরদের অ্যাসিস্ট করবে।এটি মুলত করা তোমাদের ক্লাস সম্পর্কে জানতে,তোমাদের ভুল ত্রুটি সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত হতে ও তোমাদের অভিজ্ঞ করতে যাতে পরবর্তীতে নিজেরা অন্যদের গাইড করতে পারো।এই সিলেকশনটা মুলত ক্লাসের স্টুডেন্টদের রেসাল্ট,অ্যাটেন্ডেন্স,পারফরমেন্স এর উপর ডিপেন্ড করে তৈরে করা।এইটা আমাদের হসপিটাল কমটি একসাথে বসে ডিসিশন নিয়েছে।এই সিলেকশনটা ৩য় আর ফাইনাল ইয়ারের স্টুডেন্টদের জন্য।তাই আমাদের বিবেচনার উপর আশা করছি তোমাদের কোন অভিযোগ থাকবে না।আর থাকলেও তা গ্রহনযোগ্য হবে না।বিশেষ করে ব্যক্তিগত সমস্যা থাকলে সেটা এডুকেশনাল লাইফে আসা উচিত না।আর সব চাইতে বড় কথা প্র্যাকটিক্যাল এক্সামের সুবিধার জন্য এমনটা করা।

চাপা গুঞ্জন শুরু হলো ক্লাসে। সবাই স্যারের কথা শুনে বলা বলি শুরু করলো যে ক্লাসের টপ তিন জনকেই নেওয়ার সম্ভাবনা বেশি।অহনা তো ব্যাপক এক্সাইটেড হয়তো এইবার সে অরন্যের সাথে সময় কাটানোর সুযোগ পাবে।সীমা তাকে এটা সেটা বলছে আর ২ জনে মিটমিট করে হাসছে।
অন্যদিকে ছায়া এইটা শুনে বিচলিত হলো। প্রার্থনা শুরু করলো যাতে এর জন্য তাকে এসবের মধ্যে না টানা হয়।

নীলা আর মেঘা তো মহা খুশি ছায়া টপ তিনজনের ভিতর আছে।এইবার ছায়া নিজেকে প্রমান করার সুযোগ পাবে।

কিন্তু ছায়ার মনটা খচখচ করছে।তার চোখে মুখে উৎকণ্ঠা। সে এটা চাইছে না।তার ছুটি প্রয়োজন কিছুদিনের।কিন্তু এইখানে তাকে সিলেক্ট করলে সে সহজে ছুটি পাবে না।আর বাড়িও যেতে পারবে না।ফুস করেই একটি নিঃশ্বাস ছাড়লো।
তখনই সাইফুল ইসলাম স্যার তিনজনের নাম বললেন।অহনা,ছায়া,সিনহা।
নীলা আর মেঘা চোখ বড় বড় করে ছায়াকে ইয়াহু বলে জড়িয়ে ধরলো।তাদের চোখে মুখে বিজলির ঝিলিক যেনো উৎসারিত হচ্ছে।এতো আনন্দ কি গাছে ধরে?উচ্ছলসৌন্দর্য প্রকাশ পাচ্ছে তাদের মধ্যে।এইবার চপলমতির মতো বলা শুরু করলো,

-কোন খারুস স্যার এইবার ছায়ার ভাগ্যে না পড়লেই হয়।

সাইফুল স্যার এইবার প্রফেসরদের নাম ঘোষণা করলেন। অহনা ডক্টর রহমানকে,সিনহা ডক্টর আরাফকে আর ছায়া অ্যাসিস্ট করবে ডক্টর অরন্যকে।

এইটা শুনে ছায়া একবারে স্তব্ধ হয়ে গেলো।গা হিম করা বরফে যেনো জমে গেলো।বিবিশ হলো তার চাহনি।বুকে চাপ অনুভব করতে লাগলো।
এইটা কি হয়ে গেলো?অসম্ভব!সে পারবে না।কখনো না।

অন্যদিকে অরন্যও একইভাবে চমকালো।ইষৎ দুলে উঠলো তার শরীর।ঠোঁট গোল করে একটা উষ্ণ নিঃশাস বের করে।হয়তো বিষয়টা তার থেকে এইজন্যই লুকানো হয়েছিল।আর প্রান এইসব করেছে।এর কঠিন মুল্য দিতে হবে তাকে এইজন্য।সে রাগে কটমট করলো। হাত মুষ্টিবদ্ধ করলো।উপর থেকে ডিসিশন নেওয়া হয়েছে।পাল্টানো মুশকিল হবে আবার না করাও যেতে পারে।

আকাশ থেকে পড়লো যেন অহনা এইটা শুনে সে রাগী দৃষ্টিতে তাকালো ছায়ার পানে।এই মেয়েটার জন্য আজ এতো বড়ো একটা সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেলো।নাহ বসে থাকলে হবে না।তাকে কিছু একটা করতে হবে।অহনা রাগের সাথে সাথে কিছুটা মন খারাপের স্পর্শ ও পেলো যেনো।এই মন খারাপ হলো মন কেমন করা মন খারাপ।যেই মন খারাপ ব্যাখ্যা করে বুঝানো যায় না।শুধু অনুভব করা যায়।আর সেই মন খারাপের তাপে পুড়ে যাওয়া যায়।মনে কু গাইলো।অরন্য স্যারের কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে যেকোন মূল্যে।সীমা আর যুথি তাকে শান্ত করতে লাগলো।

সাইফুল স্যার ব্যস্ত ভঙ্গিতে সবার উদ্দেশ্যে বললো,

-যাদের নাম এইমাত্র ঘোষণা করা হলো তারা কুইক অফিস রুমে আসো।ফরম ফিল আপ করতে হবে।এইটা বলে স্যার রুম ত্যাগ করলো।

পুরো ক্লাসে সবাই ছায়াকে কংগ্রেস করছে।আবার কেউ হিংসা করছে।আবার কেউ বাকা নজরে দেখছে।
ছায়ার মুখ থমথমে।তার মুখে বিরাজ করছে কাঠিন্যতা।নীলা আর মেঘা ভয়ে কথা বলতে পারছে না।কে জানে কি হয়?এমনটা হবে তারা কল্পনা করতে পারেনি।এইবার সামনে কি হবে আল্লাহ ভালো জানে।কোন অঘটন না যাতে হয় তারা সেই প্রার্থনা করছে।তারা ছায়াকে শান্ত করার জন্য বললো,

– যা হবে দেখা যাবে।এতো চিন্তা করিস না।বি নরমাল।আমরা ছুটির পর ঘুরতে যাবো।মন ভালো হয়ে যাবে।অরন্য স্যার একটু রাগী মানিয়ে নেওয়া কষ্ট হবে কিন্তু যা মনে হলো এইবার আর তেমন কিছু হবে না।

অহনা আর সিনহা অফিস রুমে গেলো ফরম ফিলাপ করতে।কিন্তু ছায়া বেঞ্চে বসে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।একদম চুপচাপ।না কারো কথা তার কানে ঢুকছে আর না কিছু সে বলছে।তার মনে চলছে অস্থিরতা। কয়েকবার জোরে জোরে শ্বাস নিলো।

অরন্য ছায়াকে এতোক্ষন নোটিস করছিলো।তার ক্লাস শুরু করতে হবে ওদের ফর্ম ফিলাপ করার পরই। তাই সে তাড়া দিয়ে বলে উঠলো,

-মিস ছায়া ইউ হ্যাভ টু গো নাউ।

ছায়া অরন্যের কথা শুনে তড়িৎ গতিতে অরন্যের পানে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো।অরন্য কেমন যেন নির্বিকার।তার চেহারায় গাম্ভীর্যতা ছাড়া আর কিছুই নেই।শুন্য তার দৃষ্টি।
ছায়া উঠে দাঁড়ালো আর কম্পিত কন্ঠে বললো,

– ইয়েস স্যার।

গুটি গুটি পায়ে হেঁটে অফিস রুমে গেলো।এখন সে না করলে উপযুক্ত কারণ দেখাতে হবে।যেটা ছায়া দেখাতে পারবে না।তাই চুপচাপ মেনে নিলো।চলে গেলো অফিস রুমে।অহনা তার দিকে একবার বাকা নজরে তাকিয়ে ফর্ম ফিলাপ করতে লাগলো।ছায়াও যথারীতি ফর্ম ফিলাপ করে ক্লাসের সামনে আসলো।অরন্য এতোক্ষন সবার আসার অপেক্ষাই করছিলো।বই ঘাটাঘাটি করছিলো।

ছায়া ক্লাসের বাইরে দাঁড়িয়ে পায়ের আঙুল ঘষাঘষি করছিল একটার সাথে আরেকটা।অনুমতি নিতে পারছিলো না। কেমন যেনো একটা জড়তা তাকে আটকে দিচ্ছিলো।

অহনা আর সিনহা তখন অনুমতি চাইলো,

-স্যার আসবো?

অরন্য তাদের আসতে বললো।ছায়া ওদের পিছু পিছু আসছিলো।
তখনি অরন্য বলে যে,

– হেই মিস আপনি কি পারমিশন নিয়েছেন?

ছায়া এটা আশা করেনি।সে আমতা আমতা করতে লাগলো।হাসফাস করে বললো,

– সরি।

অরন্য তাকে একবার উপর থেকে নিচে অবধি দেখে বললো

– ওকে কাম।

এইটা বলে পড়ানো শুরু করলো।কেউই আর কারো দিকে ভ্রুক্ষেপ করলো না।
ক্লাস শেষ করে অরন্য চলে গেলো।
স্যারের যাওয়ার পানে চেয়ে মেঘা বললো,

– ইশশ স্যারটা কি ড্যাশিং রে নীলু।আমি তো কেরাশ খাইয়াছি মামু।

নীলা মেঘার মাথায় চাটি মেরে বললো যে,

-তোর বফকে রেখে এখন স্যারের দিকে নজর দিচ্ছিস। জিজু জানে?

মেঘা একটা বোকা হাসি দিয়ে বললো,

– হেহেহে কি যে বলিস না তোরা।আমি তো একটু তারিফ করছিলাম আরকি।নীলা হেসে বললো, তাই বুঝি?

ছায়া ওদের কথা শুনে বললো,

-এই কি শুরু করলি তোরা একসাথে বসলেই ক্লাস টু এর বাচ্চাদের মতো মারামারি করিস।সাইড দে আমি বসি মাঝখানে।তোরা দুইটা একদম চুপচাপ থাকবি।ওরা দুইজনই মুখ ফুলালো।
..
সীমা হতাশচিত্তে বললো,

-এই অহনা অরন্য স্যার তো আমাদের দিকে তাকায়ই না।কিভাবে কি হবে বুঝতে পারছি না।পরে হিতে বিপরীত হলে?

অহনা নিজেও বুঝতে পারছে না।তার মন ঘিরে তৈরি হয়েছে হতাশার সমুদ্র।

-আমি কিছু জানি না।সব সময়ের উপর ছেড়ে দিয়েছি।আল্লাহ চাইলে সব হবে।

সীমা আর যুথী অহনার মধ্যে পরির্তব লক্ষ্য করলো।কিছুটা আশ্চর্য হলেও তা প্রকাশ করলো না।অহনাকে ভরসা দিলো,

-বেবি আমরা সবসমই তোর সাথে আছি।চিন্তা করিস না

অহনা মাথা দুলায়।


অরন্য ক্লাস থেকেই বের হয়েই হন্যে হয়ে প্রানকে খুঁজছে।একজন কলিগ জানালো আজ প্রান ছুটিতে আছে।অরন্য ভয়ঙ্কর রকম রেগে আছে।প্রানকে হাতের কাছে পেলে সেই কেলানো দিতো।
অরন্য ফোন লাগালো প্রানকে।অপরপাশ থেকে ফোন রিসিভ হতেই অরন্য এক হুংকার দিলো

-তোর সাহস কি করে হলো এমন একটা কাজ করার।কেন করলি এমন সব জেনেও?

প্রান জানতো এমন কিছুই হবে তাই তো পুটলা পুটলি নিয়ে কিছুদিনের জন্য বিপদসীমার বাইরে চলে গেছে।
প্রান গলা ঝেড়ে বললো,

-দেখ দোস্ত এটা প্রি-প্লেন্ড ছিলো না।ডিসিশনটা কমিটি নিয়েছে।সিলেকশনও তারাই করেছে।আমি জাস্ট একটু আইডিয়া দিলাম কে কার জন্য ঠিক হবে।

এটা বলেই হাসফাস করলো প্রাণ।যেন মুখ দিয়ে কিঞ্চিত বেফাঁস কথা বের হয়ে গেলো।পারলে এখনি মুখের কথা ফিরিয়ে নিতো।
অরন্য রাগে কটমট করলো।দাঁতে দাঁত পিষে বললো,

-খুব খারাপ করলি।একবার পাই তোকে তোর নাক যদি না ফাটিয়েছি আমার নাম ড.অরন্য চৌধূরী না।মাইন্ড ইট।

এইটা বলেই টুট করে ফোন কেটে দিলো।
প্রান ফোনটা রাখতেই যেনো আত্মায় পানি ফিরে পেলো।শালার জান বের করে ফেলছিলো।ভাবা যায়।জলদি বুকে থুথু ছিটিয়ে দিলো।শুকরিয়া আল্লাহর।

#চলবে
(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here