কৃষ্ণ মেঘের প্রেম পর্ব -০৮

#কৃষ্ণ_মেঘের_প্রেম
৮.
ডাক পরায় নিচে ছুটে গেল লাবনী।
দেখলো রুপালী বেগম কপালে হাত ঠেকিয়ে ড্রইং রুমে সোফায় বসে আছেন। আর পাশে মাহমুদা (সার্ভেন্ট) দাঁড়িয়ে আছে হাতে এক গ্লাস পানি নিয়ে।
লাবনী গিয়ে রুপালী বেগমের পাশে বসে জিজ্ঞেস করে,

“কি হয়েছে মা? আপনি এত চিন্তিত কেন?”

রুপালী বেগম চিন্তিত হয়ে বললেন,
“দেখ না.. ১০ঃ৪৫ বাজে এখনও রোদ্র বাসায় ফিরলো না। আজকে তো অফিসও ছুটি শুক্রবার বলে। ও তো ওর বন্ধু দের সাথে আড্ডা দিতে গিয়েছিল। সন্ধ্যায় বাসায় ফিরার কথা। এখনও এলো না। ওকে ফোন করছি বাট আমার মোবাইলে নেটওয়ার্ক প্রবলেম হওয়ায় যাচ্ছে না। তুই ফোন কর তো লাবনী…”

লাবনীর খেয়াল-ই ছিল না কয়টা বাজে। কথা বলতে বলতে এতো সময় পেরিয়ে গিয়েছে।লাবনী ওর কন্ট্যাক্ট লিস্টে রোদ্রের নাম্বার খুঁজতে লাগলো। বাবা ওকে রোদ্রের নাম্বার দিয়েছিল দেওয়ার পর পরই ”Rodro ” বলে সেভ করে রেখেছিল লাবনী। এখন কেন যে পাচ্ছে না। লগ লিস্টে থাকার সম্ভাবনা তো শূন্যের কোটায় কেন না। ও কখনও রোদ্রকে এই পর্যন্ত ফোনই করেনি।
বিরক্ত হয়ে বাবার পাঠানো ম্যাসেজ থেকে রোদ্রের নাম্বার কপি পেস্ট করে সেটা করে সেটা Keypad এ দিতেই সেভ করা নাম্বার সামনে ফোনের কৃত্রিম পর্দায় জ্বলজ্বল করে উঠলো।ফোন করলো লাবনী। রিং হয়ে শেষ হয়ে গেল ওপাশ থেকে ফোন ধরলো না কেউ।
একটু চিন্তিত হয়ে পরলো লাবনী। পরক্ষণেই ভাবলো হয়তো বা রাস্তায় থাকায় সাউন্ড শুনতে পারেন নি৷ নিজেকে আশ্বাস দিয়ে দ্বিতীয় বার ফোন লাগালো লাবনী।এবারও রিসিভ করলো না।

কলিংবেল বেজে ওঠলো তন্মধ্যে।
মাহমুদা গিয়ে গেট খুলে দিলো। রোদ্র দাঁড়িয়ে। মুখে
দেখে বোঝা যাচ্ছে ক্লান্ত।ভেতরে ঢুকে মাহমুদা কে এক গ্লাস পানি আনতে বলে সিংগেল সোফা বসে শরীরের ভার ছেড়ে দিয়ে তপ্ত শ্বাস ফেললো। রুপালী বেগম কে রোদ্রকে ঝাড়া শুরু করলেন। এতক্ষণ কোথায় ছিল? ফোন কেন ধরছিল না? এত দেরি কেন করলো? বাসায় কেন জানালো না সে? তার কত চিন্তা হচ্ছিল।

রোদ্র আকুতির স্বরে বললো,

“মা পরে বকো! অনেক ক্লান্ত লাগছে আমি রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসি খাবার রেডি করো…”

রুপালী আর কিছু বললেন না রোদ্রকে।
মাহমুদাকে খাবার এনে ডাইনিং টেবিলে রাখতে বললেন।লাবনীকে বললেন রোদ্রকে গিয়ে জিজ্ঞেস করতে যে এডমিশন নিতে কবে যাবে..

রোদ্র ফ্রেশ হয়ে খালি গায়ে একটা ট্রাউজার পরেই ভেজা চুল টাওয়াল দিয়ে মুছে নিচ্ছিলো। কেমন অস্বস্তি বোধ করছিল বলে গোসল করেছে। লাবনী রুমে এসে রোদ্রকে এমন অবস্থায় দেখে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। তা রোদ্রও খেয়াল করেছে। আয়নায় তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছিল। চুল গুলো একবার আঁচড়ে নিয়ে নিচে নামলো রোদ্র দেখলো লাবনী প্লেট গুলো সাজাচ্ছে আর মাহমুদা তাকে বাঁধা দেবার চেষ্টা করছে, তবে লাবনী সেই বাঁধা মানছে না।

রুপালী বেগমকে ওনার বোন ফোন করেছে বলে কথা বলছেন। কথা বলা শেষ হলে ডাইনিং এ আসতেই দেখলেন মাহমুদা মুখ কাচুমাচু করে দাঁড়িয়ে আর লাবনী চেয়ারে বসে মাহমুদার দিকে হাসি মুখে তাকিয়ে।

তিনি মাহমুদা কে জিজ্ঞেস করলেন,

“কি রে মাহমুদা? এমন মুখ কাচুমাচু করে কেন দাঁড়িয়ে আছিস? হু?”

“দেখুন না মেডাম আমি প্লেট গুলো আর ম্যাট গুলো টেবিলে সাজাবো বলে আনলাম ছোট মেডাম হাত থেকে কেড়ে নিয়ে নিজেই সাজানো শুরু করলেন! ”

রুপালী বেগম লাবনীকে বললেন,
“তুমি কেন করতে গেলে মাহমুদা তো সাজাচ্ছিল।”

“সাজিয়ে দোষ করে ফেললাম মা? ” কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বললো লাবনী।

রুপালী বেগম হেঁসে চেয়ারে বসলেন। সবাই খাবার খাওয়া শুরু করলো এর-ই মধ্যে রোদ্রের ফোন এলো। ফোন পিক-আপ করে কথা বলা শুরু করে দিল রোদ্র কিছুক্ষণ পর চেয়ার থেকে ওঠে একটু দূরে চলে গেল। তা দেখে লাবনী একটু ভ্রু কুঁচকে তাকালো। কারণ রোদ্র ওর পাশে বসেছিল ও একজন মেয়েলি কন্ঠ শুনতে পেয়েছে ফোনের ওপাশ থেকে।

কেন যেন লাবনীর ভেতর ভেতর ঈর্ষা হতে লাগলো।
‘কে ওই মেয়েটা যার সাথে কথা বলছে? আবার কথা বলতে বলতে ওঠে চলেও গেল!? কোনো ম্যানার্সও নেই এমন খাওয়ার টাইমে কেউ ফোন করে নাকি আজব?
ফ্যামিলির সাথে এখন কি আরাম মতো বসে খাবার ও খেতে পারবো না বুঝি!” নিজের রাগের কারণ খুঁজে না পেয়ে আরো বিরক্ত হলো লাবনী সেই বিরক্তি ঝারলো খাবারের ওপর এমন ভাবে খাবার চিবোচ্ছে যেমন খাবার না নিজের রাগ কে চিবোচ্ছে!

কথা শেষ করে ফিরে এসে রোদ্র খাবার খাওয়া কন্টিনিউ করলে তখন ওর মা বলেন,
“শোন লাবনীর সাথে এডমিশন নিয়ে কথা বলে নিস। আর লাবনী তুই ও কোথায় কিভাবে এডমিশন নিতে চাস কথা বলে নিস”

লাবনী ছোট করে উত্তর দেয়,

“আচ্ছা মা।”

রোদ্র লাবনীর মুখের দিকে তাকাতে খেয়াল করলো লাবনীর মুখটা কেমন কালো হয়ে আছে। যেমন মন খারাপ করলে বা রাগ করলে হয়। তবে সেটার দিকে অতটা লক্ষ্য করলো না রোদ্র খেতে খেতেই মোবাইলে কারোর সাথে চ্যাট করছিল লাবনী আড়চোখে দেখলো ম্যাসেঞ্জারে কাকে যেন বলছে আচ্ছা কালকে বিকাল সাড়ে চারটে নাগাত চলে এসো। আর দেখতে পেল না রোদ্র মোবাইল অফ করে খাবারের প্লেটের একপাশে রেখে দিল। লাবনীর মনে হলো এটাই কি ওই মেয়েটা যার সাথে ফোনে কথা বলছিল? কোথায় যাবে বিকেল সাড়ে চারটায়? যাওয়াচ্ছি আমি আপনাকে।

“মা…. আমার না কালকে কিছু জিনিস কেনার জন্য মল এ যাওয়া দরকার আপনি যাবেন?”

“না রে…..।আমার পক্ষে এখন কোথাও যাওয়া সম্ভব না শরীর টা ভালো না। তুই বরং রোদ্র সাথে যাস কাল ও তো ওর ছুটিই আছে। রোদ্র লাবনী কে নিয়ে কাল মল এ যাস!”

রোদ্র এক বারেই রাজি হয়ে গেল সামান্য কিন্তুও না করে।লাবনী অবাক হয়ে গেল ব্যাপার কি?
মানা করলো না যে! তাহলে ওই ব্যক্তিকে কি মানা করে দিবে নাকি?

রুমে গিয়ে লাবনীকে রোদ্র এডমিশনের ব্যাপারে কথা বললে লাবনী আগের কথাই বললো যা রুপালী বেগম কে বলেছিল। ও ড্যাফোডিল এ-ই ভর্তি হতে চাচ্ছে। আগামী পরশু যাবে এডমিশনের জন্যে।
বাইরে ভীষণ হাওয়া বইছে। রুমের জ্বানালা খোলা থাকায় ড্রেসিং টেবিলের কাছে দাঁড়িয়ে থাকা লাবনীর গায়ে বারংবার এসে ছুঁয়ে দিয়ে যাচ্ছিলো হিমশীতল হাওয়া।সেইসাথে বারবার কেঁপে উঠছিল লাবনী্। তা দেখে রোদ্র বলে,

“জানালা টা বন্ধ করে দেও” লাবনী চুপচাপ জানালা বন্ধ করে দিল।কোনো বাড়তি কথা বললো না।
সাধারণত লাবনীর মুখে হালকা করে হলেও একটা মিষ্টি, ক্লান্ত অথবা কৃত্রিম হাসির রেখা দৃশ্যমান হয়ে থাকে। তবে আজকে সেটুকুও নেই। রোদ্র ব্যাপার টা খেয়াল করে বললো,

“তোমার কি মন খারাপ লাবনী?”

কেন যেন এই ছোট প্রশ্ন টুকুই ওর মন ভালো করার মেডিসিনের মতন কাজ করলো। মুখে অকৃত্রিম মিষ্টি হাসির রেখা বিদ্যমান করে লাবনী উত্তর দিল,

“না তো! কেন? ”

“না এমনেই জাস্ট মনে হলো আরকি!”

“ও আচ্ছা ”

চুল আঁচড়ানো শেষ করে লাবনী খাটে এসে বসলো।চুল বেনী করতে করতে লাবনী জিজ্ঞেস করলো,

“আপনি কি আসলেই কালকে ফ্রি? আমাকে মল এ নিয়ে যাওয়ার জন্যে? নাকি অন্য কোনো কাজ আছে?”

রোদ্র খাটে হেলান দিয়ে আধ বসে ছিল। পুরোপুরি বসে লাবনীর দিকে তাকিয়ে বললো,

“কেন বলো তো? তোমার কেন মনে হলো যে আমার কোনো কাজ আছে?”

“না মানে…

-“চলবে”
লেখিকা:- ইশানূর ইনায়াত

#writer_ishanur_inayat

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here