কৃষ্ণ মেঘের প্রেম পর্ব -০৯

#কৃষ্ণ_মেঘের_প্রেম
৯.
রোদ্র উঠে বসে ও হাতের ওপর থুতনি রেখে বলে,

“মানে মানে না করে বলো ফেলো ব্যাপার টা কি?”

লাবনী ব্যাপার এড়িয়ে গিয়ে লাইট নিভিয়ে ফট করে শুয়ে পরে। রোদ্র লাবনীর হাত টেনে তুলে বসিয়ে দেয়।লাবনী মিথ্যে ঘুমে ভান ধরে বলে,

“কি হলো? আমার ঘুম ধরেছে ঘুমোতে দিন তো। আপনার জাগতে মন চাইলে জেগে থাকুন..”

” এই চালাকি করবে না একদম তুমি কিছু লুকোনোর চেষ্টা করছো। বলো তো ….. ”

“কোনো চালাকি না আমার মনে হয়েছিল আপনার কালকে অফিস আছে বা কোনো ইম্পর্ট্যান্ট কাজ আছে। মানুষের জীবনে কত রকম ইম্পর্ট্যান্ট কাজ থাকে সেটা হোক পরিবারের মানুষ বা বাইরের মানুষ সেটা। এখন আপনার পার্সোনাল লাইফে হোক বা ফর্মাল লাইফে হোক ব্যস্ততা থাকতেই পারে বরং থাকাই স্বাভাবিক অনেক মানুষ আপনার সাথে বিকেল সন্ধ্যা দেখা করতে চাইতে পারে অফিস ছুটির দিনে। দ্যাস্ট হুয়াই আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম ক্লিয়ার?”

কিছুক্ষণ শূন্যে তাকিয়ে থাকে লাবনী তারপ আবারও বালিশে মাথা এলিয়ে কাঁথা দিয়ে মাথা পর্যন্ত ঢেকে শুয়ে পরে। এবং কিছুক্ষণের মধ্যে ঘুমে হারিয়ে যায়।
রোদ্র বসে আছে শূন্যে তাকিয়ে লাবনীর বলা কথা ভাবছে।

রোদ্র ভাবছে..লাবনীর কথাগুলো ওর কানে বাজছে।।
মানুষের জীবনে কত রকম ইম্পর্ট্যান্ট কাজ থাকে সেটা হোক পরিবারের মানুষ বা বাইরের মানুষ সেটা। এখন আপনার পার্সোনাল লাইফে হোক বা ফর্মাল লাইফে হোক ব্যস্ততা থাকতেই পারে বরং থাকাই স্বাভাবিক অনেক মানুষ আপনার সাথে বিকেল সন্ধ্যা দেখা করতে চাইতে পারে অফিস ছুটির দিনে! কথাগুলোতে কেমন অভিমান মিশে আছে্। আর বিকেলে সন্ধ্যে দেখা করতে
চাইতে পারে কথাটা লাবনী নিশ্চয়ই ওই ম্যাসেজের জন্য-ই বলছে। কিন্তু ও ম্যাসেজ দেখলো কখন? আর
আমার কলিগ স্নেহাও না এরকম একটা ঝামেলার মেয়ে জানে আমি বিবাহিত তাও ওরকম এমনেতেই আড্ডা দিতে আমাকে বিকেলে ডেকেছে্। যদিও আমি হ্যা বলিনি তবুও লাবনীর অভিমান বোধহয় এই নিয়েই!
এখন রাত হয়েছে কাল বরং অভিমান ভাঙাবো…

______________

সকালে আড়মোড়া ভেঙে বসতেই লাবনী দিকে লাল রঙের কুর্তি আর ভেজা চুল মুছতে দেখেত পায় রোদ্র দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময় দেখে নিলো।
ঘড়ির কাটা সময় বলছে, ৭ঃ৪০।

এত সকাল এমন গোসল করে রেডি হওয়ার কারণ বুঝতে পারলো না রোদ্র। ফ্রেশ হতে চলে গেল।
জানে লাবনী কে কিছু বললে এখন ও এড়িয়ে যাবেই যেহেতু অভিমান করেছে।

ফ্রেশ হয়ে আর লাবনীকে দেখতে পেল না রোদ্র।-“সম্ভবত ওকে এড়াতেই নিচে চলে গিয়েছে। ”
তপ্ত শ্বাস ফেলে নিচে নামলো।

দেখলো লাবনী আর ওর মা কিছু নিয়ে কথা বলছে ওকে আসতে দেখে রুপালী বেগম (রোদ্রের মা) রোদ্র কে কাছে আসতে বললো যাওয়ার পর বললো,

” শোন আমরা তোর বড় খালার বাসায় যাচ্ছি ”

“ও আচ্ছা তাই বলি সকাল সকাল লাবনী কেন রেডি হচ্ছে। আচ্ছা কখন যাচ্ছো তোমরা?”

“তোমরা কি আমরা বল..তুইও যাচ্ছিস..”

“আমিও? ”

“হ্যা তুইও…,আর এডমিশন তো গতকাল না?”

“ও হ্যা এই ব্যাপারে ভুলেই গিয়েছিলাম।

” ভুললে হবে না। তোর বউকে নিয়ে তোর সিন্সিয়ার হতে হবে বুঝেছিস!”

এতক্ষণ লাবনী চুপচাপ ওদের কনভারসেশন শুনছিল।এখন মুখ খুললো,

“আমি একাই যেতে পারবো আমার এক ফ্রেন্ড সেও যাবে আমরা দুজন চলে যাবো নি..”

” ও মা কেন? সে নাহয় তোর বান্ধবী আসবে তাই বলে রোদ্র যাবে না কেন? ও ও যাবে। আর এই নিয়ে কোনো কথা শুনতে চাচ্ছি না আমি।”

লাবনী কিছু বললো না। রোদ্র চলো গেল রেডি হতে রুপালী বেগম আরো বলেছেন, আজ দুপুরে খেয়ে ব্যাক করার সময় ওরা যেন চলে আসে আর ওনি থাকলে থাকতেও পারেন আসার সময় লাবনী রোদ্র যেন সপিং এ যায় লাবনীর যা যা প্রয়োজন ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য ও কিনে নিবে নাহয়।

গাড়িতে রুপালী বেগম পেছনের সিটে উঠে বসার পর লাবনী ওনার পাশে বসলে উনি জোর করে রোদ্রের পাশের সিটে ওকে ঠিক পাঠিয়ে দিলেন। উনি চান রোদ্র লাবনী দ্রুত ফ্রি হোক স্বামী স্ত্রীর হতে হয় বন্ধুর মতো।
আর বন্ধু হওয়ার জন্য যত সম্ভব সময় কাটাতে হবে একসাথে। দুজনের দুজনকে বুঝতে হবে।

_______
রুপালী বেগমের বোনের সাথে বহুদিন পর দেখা দুই বোন কুশল বিনিময় করেই আলাপে মেতে উঠেছেন।
ওনার একটা মেয়ে আছে এইটে পড়ে। লাবনীকে পেয়েই সে গল্পের ঝুড়ি নিয়ে বসেছেন। মেয়েটা বেশ মিশুক তাই বুঝি ওর নাম মিশু।
লাবনী মিশুর রুমে বসে ওর সাথে কথা বলছে।
মিশু নিজের মেক-আপ তারপর বিভিন্ন শখের জিনিস লাবনীকে দেখাচ্ছে লাবনী মেয়েটার কান্ড দেখে হাসছে আবার গল্প করছে। রোদ্র কিছুক্ষণ আগে রুমের গেটের সামনে থেকে এসে ঘুরে গেছে তবে লাবনী তা খেয়াল করেনি। রোদ্রের বিরক্তি বোধ হচ্ছে। কেউ ওকে পাত্তাই দিচ্ছে না। ওর মা নিজের বোনকে নিয়ে আর ওর বউ ওর খালাতো বোনকে নিয়ে ব্যস্ত ওকে কেউ সময়ই
দিচ্ছে না।তাই সোফা শুয়ে মোবাইল টিপছে রোদ্র।
স্নেহা মেয়েটাক ওকে অনলাইনে দেখতেই যেন অপেক্ষা করছিল অনলাইনে আসতে না আসতেই ম্যাসেজ করা শুরু করলো। -“হাই, হ্যালো, কেমন আছো?”

রোদ্র ওর থেকে যথেষ্ট বড় হওয়ার পরও যেখানে আপনি বলে ভদ্রতা বজায় রাখে সেখানে ও তুমি বলে গায়ে পরে। রোদ্র ইগনোর করলো এ-র সাথে কথা বলে আরো মেজাজ খারাপ করার ইচ্ছে আপাতত ওর নেই।

ইউটিউবে গিয়ে একটা মোটিভেশনাল স্পিচ শুনতে লাগলো ইয়ারফোন ওর কাছেই ছিল সব সময়ই রাখে।
মোটিভেশনাল স্পিচ যখন প্রায় শেষ তখন ওর মা -খালা আর লাবনী, মিশু এলো। ওর খালা ওকে খাবারের জন্য ডেকে কাজের মেয়েকে খাবারের আইটেম সব আনতে বললো। আর প্লেট উনি নিজেই সাজাতে লাগলেন তা দেখে লাবনী ওনার সাথেও যুদ্ধ করে নিজেই প্লেট সাজাতে লাগলো তা দেখে ওর খালা শাশুড়ী বললো,

“দেখো আপা তোমার ছেলের বউ দেখি কাজ করার জন্য যুদ্ধ ও করতে পারে..”

” বাসায়ও মাহমুদার সাথে এমন যুদ্ধ করলো গতরাতে।”.

“তোমার বউ ভারী মিষ্টি আপা। আমার ছেলে থাকলে ওকে আমার বাড়ির বউ করে আনতাম.. ”

“কেন খালামনি? আমি কি তোমার ছেলে লাগি না?” রোদ্র এন্ট্রি নিয়ে বললো।

” তাও তো কথা!” বলে ওরা হেঁসে ফেললো।

মিশু লাবনী রোদ্র পাশাপাশি বসেছে আর রুপালী বেগম আর ওনার বোন। খাওয়ার সময়ও মিশু
লাবনীর সাথে টুকিটাকি কথা বলে একপ্রকার ওকে
ব্যস্ত রাখায় লাবনীর সাথে কোনো কথা রোদ্র বলতে পারলো না। খেতে খেতে মনে মনে রোদ্র বললো,

-” বাঁচা গিয়েছে আমার বিচ্ছু বোন টা আপাতত বাসায় নাই। আসলে ও ও মিশুর মতো লাবনীকে নিয়ে নিজের রুমেই সারাদিন ব্যস্ত রাখবে। আয়হায় বউ থেকেও বউবিহীন আমি!”

খাওয়া দাওয়া শেষ করে আরো কিছুক্ষণ থেকে লাবনী রোদ্র সপিং মলের জন্য রওনা হলো ওরা তো লাবনীকে পারলে রেখেই দেয় রোদ্রের মায়ের সাথে। তবে কাল এডমিশন বলেই রাখতে পারলো না।
লাবনী রোদ্রের পাশের সিটে বসে। রােদ্র ড্রাইভ করছে। লাবনী রোদ্র বুঝতে দিতে চায় না ও অভিমান করেছে তাই ড্রাইভিং সিটের পাশে বসেছে। তবে একটুও শব্দ করছে না। তা দেখে রোদ্র একটা মিষ্টি গান ছেড়ে দিল।
তা দেখে লাবনী বললো,

“গান টা বন্ধ করে দিন না.. আমার ভাললাগছে না।”

গান বন্ধ করে রোদ্র বললো,

“লাবনী..

-“চলবে”
লেখিকা:- ইশানূর ইনায়াত

#writer_ishanur_inayat

-ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। রিচেক করা হয়নি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here