#ক্যাসিনো ©লেখিকা_(মায়া)
#পর্ব_২৬
বেস্ট ফ্রেন্ডদের কে কখনই প্রেমে পড়তে দিবেন না। দরকার হয় তাকে ছাদ থেকে ফেলে দিয়েন, তবুও প্রেমে পড়তে দেওয়া উচিত নয়। কিংবা বন্ধুদের হারাতে না চাইলেও কখনই তাদের বিয়ের ব্যাপারে সাপোর্ট ও দিবেন না। ইচ্ছে করলে তাদের উপর কালো যাদু করে সারা জীবন কুমার/কুমারী রেখে দিবেন। তবুও এক দিনের রোস্ট খাওয়ার জন্য বিয়ে বাড়িতে হৈচৈ আনন্দ করবার জন্য ধেই ধেই করে সব থেকে কাছের বন্ধুর গলায় বিবাহিত ট্যাগ দিতে যায়েন না😁
ছেলে হলে বউয়ের কথা মানতে যাবে,আর মেয়ে হলে স্বামীর আদেশ ছাড়া কোথাও যেতে পারবে না। মেহমেত গালে হাত দিয়ে এসবি ভাবছে। ক্যাম্পাসের মাঝখানে ঘাসের উপর বসে আছে এক জোড়া দম্পতি,,তিন দিন হয়েছে তাদের বিয়ের। তিন দিন আগেও নিশান বিয়ে না করার জন্য ভয়ে ছিল। আর এখন শাহানা কে চোখে হারাচ্ছে কি আজব বন্ধন এই বিয়ে নামক নিয়মে।
এক সপ্তাহ আগের কথা____!!!!
পরিক্ষার মাত্র ১০দিন বাকি,ভর দুপুর বেলা বইয়ের পাতায় মুখ গুজে বসে আছে নিশান,আর এই দিকে মেহমেত ফোনে কথা বলতে ব্যস্ত, ওদের লুতুপুতু কথা শুনে নিশানের কান ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছে, মাঝে মাঝে তো চোখ বন্ধ করে কানে হাত দিয়ে থাকছে । আবার কিছু ক্ষন পর তীব্র ক্ষোভে হাতে বই নিয়ে মেসের বারান্দায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পড়ছে আর পায়চারি করছে। পড়া শুনাই মন বসছে কিছুতেই তার আবার রুমে চলে গেল নিশান,,এবার দ্রুত পায়ে গিয়ে মেহমেতের কান থেকে ফোন টা নিয়ে সুইচ অফ করে খাটের দিকে ছুঁড়ে ফেলল। মেহমেত বিস্ফোরিত নয়নে তাকিয়ে আছে নিশানের দিকে চোখ দুটো বড় বড় করে বলল,এই তুই আমার ফোন নিলি কেন?? নিশান ঝাঁঝালো কন্ঠে জবাব দেয়, সামনে পরিক্ষা আর তোরা কিনা পড়া শুনা বাদ দিয়ে দিন রাত ফোন ফোন করে মরে যাচ্ছিস। এই প্রেম করলেই সারা দিন এতো হ্যালো হ্যালো করতে হবে?? নিজেরা তো পড়ছিস নাই আর আমাকে শান্তি তে পড়তে দিচ্ছিস না অসহ্যকর!!
মেহমেত কিছু বলতে যাবে তখনই নিশান রুম থেকে হনহন করে বেরিয়ে যায়। মেহমেত এই দিকে মুচকি মুচকি হাসছে।
নিশান ২ বছর থেকে একটা কোম্পানিতে পার্ট টাইম জব করে, ভার্সিটি শেষ করে ৩_৯টা পর্যন্ত। পড়া শুনার খরচ সরকার দিলেও নিজের বাড়তি খরচ পরিবার থেকে নিবে না বলেই এই চাকরি করছিল সে। সামান্য বেতনের চাকরি হলেও বাবা মার চিন্তা সে কিছু টা লাঘব করতে পেরেছিল এই অনেক। সামনে পরিক্ষা বলে চাকরি টা ছেড়ে দিয়েছে। আর সেই চাকরির বেতনে ২টা মোবাইল কিনেছিল,একটা বাবাকে দেওয়ার জন্য আর নিজের জন্য একটা। মোবাইল টা পেয়ে নির্জনী (নিশানের ছোট বোন) এতো খুশি হয়েছিল বলার মত তার ভাইয়ের সাথে এবার ইচ্ছে করলেই কথা বলতে পারবে। মন্ডল বাড়ি গিয়ে আর ধন্যা ধরে কথা বলতে হবে না। খুশিতে গদগদ হয়ে ভাই কে জরিয়ে ধরেছিল। নির্জনীর জন্য এক টা লাল সাদা পাড়ওয়ালা শাড়িও নিয়ে ছিল। শাড়িতে মেয়েটা কে যা মানিয়েছিল একদম যেন রাঙা বৌ।
নিশান হাঁটতে হাঁটতে নির্জনীর কথা ভাবছে সামনে তার বোন এসএসসি দিবে। এইচএসসি পাস না করার আগে তাকে কখনই বিয়ে দিবে না। বোনটার পড়া শুনা ও অনেক ভালো। অনেক মনযোগী পড়া শুনাই। কিন্তু গ্রামের মেয়ে কৈশোরে পা দিতে না দিতেই ঘটকের আনাগোনো শেষ হয় না বাড়ি থেকে। বোন টাকে এক জন যোগ্য পাত্রের হাতে তুলে দিতে পারলে নিশানের শান্তি। মায়ের প্রেশার টা নাকি আবার বেড়েছিল,বাবার ধানে এবার নাকি খুব একটা লাভ হয়নি। ঋন করে ধান লাগিয়েছিল সেই ঋন এখনো শোধ হয়নি। এর আগেও মন্ডল বাড়ি থেকে প্রচুর টাকা ঋন করেছে বাবা তার পড়া শুনার জন্য। কত দিনে যে সে তার বাবা মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে পারবে কে জানে। এতো এতো চিন্তায় মাথা ফেটে যাচ্ছে নিশানের তার উপরে শাহানা কে নিয়ে চিন্তা সব যেন গুলিয়ে যাচ্ছে তার কাছে। হাইওয়ের রাস্তা ধরে হাঁটছে। ব্যস্ত সব গাড়ি নিজের গন্তব্যে ছুটছে বিরামহীন ভাবে। হঠাৎ কিছু না প্যান্টের পকেট থেকে মোবাইল টা বের করে শাহানার নাম্বারে ডায়েল করলো ,, কল করতেই এক নারী কন্ঠী ভেসে আসলো,
আপনি যে নাম্বারে কল দিয়েছেন তা এই মুহূর্তে ওয়েটিং এ আছে। নিশান বিরক্ত মাখা মুখ নিয়ে কল টা কেটে মোবাইল টা আবার পকেটের ভিতর রাখলো। কিছু ক্ষন মোবাইলের রিং টোন বেজে উঠলো, শাহানা নিজে কল করেছে। এক ধ্যানে রিং টোন শুনছে নিশান কলটা কেটে গেল। আবার একটু পর ফোন দিলো শাহানা এবার বিরক্তিকর ভাব টা ছেড়ে ফোন রিসিভ করলো।
বাইরের রোদের তাপমাত্রা এমন যেন সব কিছু ঝলছে দেওয়ার জন্য পণ নিয়েছে এমন কাঠফাটা রোদে হাইওয়ের ফুটপাতে এক জোড়া যুবক যুবতী দাঁড়িয়ে আছে। উত্তেজিত আর উদ্বিগ্ন হয়ে জিজ্ঞেস করে শাহানা ।
এতো জরুরি তলব কিসের বলো!! কি বলতে ডেকেছো আমায়?? উৎসুক দৃষ্টিতে এক ধ্যানে নিশানের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে শাহানা সে আজ সেই কাঙ্ক্ষিত কথা টি বলতে ডেকেছে নিশান। আজ বলবে তাহলে সে!! অধীর আগ্রহে তার কান নিশানের সেই বলা কথা টা শুনতে চাই। বার বার শুকনো ঢুক গিলছে শাহানা। শাহানার মুখ বরাবর সূর্যের আলো এসে পড়েছে,সেই আগুন ধরা তাপমাত্রা তেওঁ শাহানা দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে। নিশান রোদের আলো যেন শাহানার মুখে না লাগে তার জন্য নিশান শাহানার আর একটু কাছে আসে এবং তার মুখ বরাবর দাঁড়ায়। শাহানা মুচকি হাসি দিল। ইশ্ কত যত্ন নেই তার ।
রোদের তাপমাত্রা অনেক প্রখর সামনে কোন গাছের নিচে দাঁড়িয়ে কথা বলি চল,!! তোমার খুব গরম লাগছে বুঝতে পারছি,
নাহ লাগবে না তুমি এখানেই বলো আমাকে কি বলবে!! বট গাছের মত তুমি তো দাঁড়িয়েই আছো। আমার গরম করছে না।বলো তো তারাতারি তুমি,,!!! আসলে বলছিলাম কি সামনে তো পরিক্ষা। আর মাত্র কটা দিন বাকি। এই সময় তোমাদের পড়াশোনাই মনোযোগ দেওয়া উচিৎ। ভালোবাসো!! ভালোবাসা ভালো কিন্তু অতিরিক্ত মাখামাখি ভালো নয় ,, আগে তো মানুষ যখন প্রেম করেছিল! তখন আর এই ফোন ছিল না। মাসে সপ্তাহে একটা করে চিঠি আদান প্রদান করা হতো। তখন ও তো মানুষ ভালোবেসেছিল তাই না!! যদি তোমরা একে অপরকে ছাড়া থাকতে পারছো না তাহলে পরিবারের সম্মতিতে বিয়ে করে নাও। বিয়ের মত পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হও। কিন্তু পড়া শুনা টা নষ্ট করো না। কথা বার্তা টা কম বলার চেষ্টা করো। শাহানা ভগ্নহৃদয় নিয়ে ছলছল চোখে নিশানের চোখে দৃষ্টিপাত করে আহত কন্ঠে বলল,এই সব বলার জন্য আমাকে ডেকেছো এখানে?? হ্যাঁ ঐ আসলে মেহমেত কে বলে কোন লাভ হচ্ছিল না তাই তোমাকেই বলা টা প্রয়োজন মনে করলাম। আশা রাখছি তুমি আমার কথা টা শুনবে। শাহানা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল তার পর রাস্তার দিকে মুখ করে তাকালো। নিশান শাহানার ঘামে ভেজা মুখটার দিকে তাকালো। নাকের ডগায় বিন্দু বিন্দু ঘাম যেন মুক্তোর মত চিকচিক করছে। মায়াবী মুখ খানা আরো যেন মায়াবী লাগছে। শাহানা নিশান কে কিছু না বললেই উল্টো পথে রওনা দিল।
নিশান শাহানার চলে যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে। মেয়েটার আচারন আজ কাল কেমন উদ্ভট হয়ে গেছে। সে তাকে কিছু বলতে চাইলেই কেমন উদ্বিগ্নতার সাথে শুনতে চায়। তার পর কথা শেষ হতেই আহত চেহারা বানিয়ে চলে যায়। মেহমেতের সাথে সম্পর্ক টা কি স্বাভাবিক তার?? নাকি কোন মরিচিকা???
শাহানা আর মেহমেত কে তিন দিন থেকে নিশান দেখেনি। সেই দিনের পর থেকে শাহানা কে বেশ কয়েক বার ফোন দিয়েছিল নিশান কিন্তু রিসিভ হয়নি। মেহমেত কে ফোন দিয়েছিল সে বলেছে কোন এক কাজে খুব ব্যস্ত আছে সময় পেলে কথা বলবে।
বিকেল সাড়ে তিনটা বাজে নিশানের ফোন টা বেজে উঠলো। বইটা বন্ধ করে দেখে শাহানা ফোন দিয়েছে। হঠাৎ নিশানের মনে হলো মরুভূমি তে হারিয়ে যাওয়া পথিক দিক খোঁজে পেয়েছে। তারাতারি করে ফোন টা রিসিভ করেই নিশান বলল,হ্যালো! শাহানা?? হ্যাঁ !! শুনো আমি তোমার মেসের গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে আছি জলদি করে রেডি হয়ে নিচে নামো ৫মিনিট সময় দিলাম। নিশান কিছু বলতে যাবে ওমনি ফোন কেটে দিল শাহানা। অগত্যা এক টা শার্ট গায়ে দিয়ে বোতাম গুলো লাগাতে লাগাতে নেমে পড়ে নিশান । শাহানা দাঁড়িয়ে আছে মেরুন রঙের একটা শাড়ি পড়ে। কানে বড় বড় দুল পড়েছে, ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক ও দেওয়া।হাতে রেশমি চুড়ি ঝনঝন আওয়াজ করছে। এমন ভাবে শাহানা কে দেখবে নিশান ভাবতেও পারেনি। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল শাহানার দিকে মুখে কোন কথা নেই তার। শাহানা কে এতো টা সুন্দর লাগছে নিশানের কাছে মনে হচ্ছে এই সৌন্দর্যে সে শহীদ হয়ে যাবে। শাহানা নিশান কে এমন হা হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলে কি দেখছো এভাবে?? মুখ বন্ধ করো নাহলে মশা ঢুকে পড়বে। শাহানার কথায় নিশান অপ্রস্তত হয়ে পড়ে হাবলার মত মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলে না আসলে!! শাহানা ভ্রু কুঁচকে বলে কি আসলে??? কিছু না! তুমি কি কোথাও যাচ্ছো ?? হ্যাঁ চল তারাতারি!! কোথায়??
কাজী অফিসে ,, নিশান অবাক কন্ঠে বলে কাজি অফিসে মানে?? কেন??
বিয়ে করতে যাচ্ছি.. এক জন সাক্ষী কম পড়েছে তাই তোমায় নিতে আসলাম এখন কথা না বাড়িয়ে চল তারাতারি। বিয়ের কথা টা শুনে নিশানের কলিজায় যেন টান পড়লো মনে হয় তার কলিজা কেউ ছিঁড়ে নিতে চাচ্ছে!! কাঁপা গলায় নিশান বলে তোমার বিয়ে?? হ্যাঁ আমার বিয়ে?? তুমিই তো সেদিন জ্ঞান দিলে বিয়ে করার জন্য। এখন এসব কথা বাদ দাও তো আর রিক্সায় উঠো।
চাতক পাখির মতো শাহানার মুখের দিকে ব্যাথিত নয়নে তাকিয়ে আছে নিশান। আজ একটা স্বাভাবিক পরিবার যদি তার হতো তাহলে শাহানা কে সারাজীবন আগলে রাখার দায়িত্ব টা নেওয়া হতো। হঠাৎ রিক্সার চাকা ছোট খাদে পড়ে যায় রিক্সার তাল সামলাতে না পেরে শাহানা পড়ে যেতে নিবে তখনই নিশান নিজের বলিষ্ঠ হাত দ্বারা শাহানা কে পাকড়াও করে। দুজনেই একে অপরের দিকে তৃষ্ণার্ত পাখির মতো চেয়ে আছে…..
চলবে ______?????
(বি:দ্র) প্রথমে বিয়ে নিয়ে এমন মন্তব্য করার জন্য মাফ চাচ্ছি। বিয়ে কে আমি ব্যঙ্গ করিনি শুধু একটা ফানি মভমেন্ট এটাচ করছি। দয়া করে কেউ সিরিয়ার হবেন না 🥰