ক্রাশ পর্ব -০৫

#ক্রাশ
#পর্ব_০৫
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ
ভাইয়া?
তুই সত্যি মেয়েটাকে চিনতে পারিস নি?
মেয়েটা বার বার এতো করে বললো।
আর তুই ডাইরেক্ট বলে দিলি যে তুই চিনিস না তাকে।
একই স্কুলে পড়েছিস তবুও একদিন তোর চোখে পড়ে নি?
সাগর সামিরার উপর রাগ দেখিয়ে বললো,
মহা ঝামেলায় তো পড়ে গেলাম।
সত্যি বলছি মেয়েটাকে আমি চিনি না।
আর যদি দেখেও থাকি মনে করতে পারছি না।
তাছাড়া স্কুলে হাজার হাজার স্টুডেন্ট দের ভিতর সবাই কে মনে রাখা কি সম্ভব নাকি?

সামিরা তখন বললো কিন্তু মোহনা আপু তো বললো তোরা দুইজনে একসাথে স্টেজে উঠে পুরুষ্কার নিয়েছিলি?
তুই সেবার সেকেন্ড হইছিলি আর উনি ফাস্ট হইছিলো।
এটা তো ভোলার কথা না ভাইয়া?
তোকে টেক্কা দিয়ে একটা মেয়ে ফাস্ট হইছিলো আর তুই তাকে মনে রাখিস নি এটা অসম্ভব ব্যাপার!!!

সাগর তখন রাগ করে বললো,
আচ্ছা ঠিক আছে আমি ওকে চিনি।
তাহলে এখন কি করবো?
ওকে নিয়ে নাচবো?
না সবাইকে বলে বলে বেড়াবো যে মোহনাকে আমি চিনতে পেরেছি।
একসময় আমরা একই স্কুলে পড়তাম।

সামিরা বললো ঠিক আছে ঠিক আছে।
আর রাগ দেখাতে হবে না।
এবার আরেকটা সত্যি কথা বল দেখি?
তোর প্রিয় বিড়াল টার নাম মোহনা রাখছিস কেনো?
এতোদিন ভাবতাম এমনি রেখেছিস।
কিন্তু আজ কেনো জানি রহস্যের গন্ধ পাচ্ছি।

সাগর তখন বললো তোর মাথা কি পাগল হয়ে গেছে?
মোহনা কি শুধু ওই মেয়েটার নামই?
দুনিয়ায় কি আর কারো নাম মোহনা হতে পারে না?
এমনিতেই মনে হয়েছে তাই রেখেছি।

সামিরা তখন হাসতে হাসতে বললো কি মিল তোদের?
তোর পছন্দের নামও মোহনা।
আবার ওই মেয়েটার নামও মোহনা।
যে মেয়েটাকে তুই নাকি দেখিস ই নি।
আর এদিকে ঐ মেয়েটা তোকে এক দেখায় চিনে ফেললো।
এটা কিন্তু অনেক চিন্তার বিষয়!!!!!

সাগর সামিরার প্রশ্ন এড়িয়ে গেলো।
সে তার রুমে চলে গেলো।
কারন এইমাত্র তারা বাসায় পৌঁছেছে আর বাসায় এসেই সামিরা শুধু মোহনার কথায় বলে যাচ্ছে।

এদিকে মোহনা বাসায় এসেই তার ডায়রি টা হাতে নিলো।
আর তাতে লিখলো,
দীর্ঘ ছয় বছর পর আবার তার সাথে দেখা।
আমি তো তাকে ভুলেই গিয়েছিলাম।
কিন্তু কেনো আবার দেখা হলো তার সাথে?
কেনো আমার মন টা আবার দূর্বল করে দিলো সে?
কিন্তু সে তো আমাকে চেনেই না?
এই মায়াজাল থেকে বের হতে চাই।
কিন্তু কিভাবে তাকে ভুলে যাবো???
মোহনা তার মনের কথাগুলো লিখে ডায়রি টা আবার আলমারি তে তুলে রাখলো।
এই ডায়রি তে শুধু সে সাগরের কথায় লিখেছে।

সাগর তার লাস্ট সেমিস্টারের পরীক্ষা দিয়ে বসে আছে।
রেজাল্ট বের হলেই সে বি,এস,সি টা কম্পিলিট করবে।
তারপরেই যেকোন কোম্পানি তে একটা জব করবে।
সে এখন বাড়িতেই আছে।
কিন্তু তার বোন সামিরা রাজশাহী তে পড়াশোনা করে।
তাই তাকে মেস থেকে আনতে গিয়েছিলো।
কারন সবাই মিলে সাগরের বিয়ের জন্য মেয়ে দেখতে যাবে।
যদিও সাগর এখনি বিয়ে করতে রাজি নয়।
কারন তার তো এখনো পড়াশোনা কম্পিলিট ই হয় নি।
তার ইচ্ছা পড়াশোনা শেষ করে চাকরি করবে তারপর বিয়ে।
কিন্তু তার দাদুর কথা এখনি তিনি সাগর কে বিয়ে করাবেন।
কারন তার মতে ছেলেমেয়েদের তাড়াতাড়ি বিয়ে দেওয়াই ভালো।
তা না হলে একা একা নিজেরাই পছন্দ করে রাখবে।
বিয়ের আগে প্রেম ভালোবাসা সাগরের পরিবারের কেউ পছন্দ করে না।
তাই তাদের ফ্যামিলিতে কেউ প্রেম করে বিয়ে করে না।

সাগর তার মাকে অনেক বুঝায়ছে কিন্তু তার মা সাগরের বাবা কে বলার সাহস পায় নি।
সাগরের দাদু আর বাবা প্রচন্ড রকমের রাগী মানুষ।
তারা যেটা সিদ্ধান্ত নেবে সেটাই মেনে নিতে হবে।
কিন্তু সাগর যেহেতু অনেক মেধাবী স্টুডেন্ট তাই তার পড়াশোনার ক্ষতি হতে পারে এইজন্য সাগর তার বিয়ে বন্ধ করার জন্য অনেক চেষ্টা করেছে।
কিন্তু পারে নি।
তাই সামিরা বলেছে ভাইয়া কোন চিন্তা করিস না।
আমাকে পাত্রী দেখাতে নিয়ে যাবি।
আমি যেকোন একটা দোষ বের করে তোর বিয়ে আটকে দেবো।
এইজন্য সাগর পাত্রী দেখতে যাওয়ার জন্য রাজি হয়ে গেছে।
যেহেতু সামিরা নিজে সাগরের বিয়ে বন্ধ করার জন্য দায়িত্ব নিয়েছে।
এজন্য নিজেই সামিরা কে আনতে গিয়েছিলো রাজশাহীতে।

প্রায় এক সপ্তাহ পর,,,,,,,,,

আজ সাগরের জন্য মেয়ে দেখতে বের হবে সবাই।
সাগর ভীষণ চিন্তার মধ্যে আছে।
তাই সাগর তার দাদীর কাছে গেলো আর বললো,

দাদী, আর দুই বছর পর বিয়ে টা করলে কি সমস্যা হবে?
এদিকে এই দুইবছরে আমার পড়াটা শেষ হয়ে যেতো।
তুমি দাদুকে একটু বোঝাও না?

দাদী তখন সাগর কে একটা ধমক দিয়ে বললো বিয়ের পর পড়াশোনা করা যায় না?
তোর দাদু মাত্র ১৭ বছরে বিয়ে করেছে।
আর তোর বাবা মাত্র ১৯ বছর বয়সে।
তারা কি অশিক্ষিত কেউ?
সবাই বিয়ের পর পড়াশোনা করেছে।
তুই ও সেটাই করবি।
তাছাড়া তোদের বংশে সবাই বিয়ের পরই পড়াশোনা করে।
তাছাড়া তোকে বিয়ে দিয়ে আবার সামিরার জন্যও তো পাত্র খুঁজতে হবে।
সামিরার এইস,এস,সি এক্সামের পর পরই ওকেও বিয়ে দিয়ে দেবো।
সাগর তাই আর কথা বাড়ালো না।
সে চুপচাপ রেডি হয়ে নিলো।

সামিরার আজ অনেক খুশি লাগছে।
ওকে দেখে মনে হচ্ছে না সে সাগরের বিয়ে ভাংগার জন্য যাচ্ছে।
সামিরার এমন আনন্দ দেখে সাগর তাকে ঘরে ডেকে আনলো।
আর বললো,
তুই কি সত্যি বিয়ে টা ভাংতে পারবি?
সামিরা তখন বললো তুই অতো ভাবিস না তো?
মেয়ে যত সুন্দরই হোক আমি একটা না একটা দোষ বের করবোই।
কিন্তু মেয়ে যদি সত্যি অনেক সুন্দরী হয় আর তাদের ফ্যামিলিও অনেক ভালো হয় তখন কি করবো ভাইয়া?

সাগর সে কথা শুনে সামিরার মাথায় একটা টোকা দিলো আর বললো কি করবি মানে?
আমি বলেছি তো এখন আমি বিয়ে করবো না।
সামিরা বললো ঠিক আছে,ঠিক আছে।
আর বলতে হবে না।

সাগরের পরিবারের সবাই গেলো মেয়ে দেখতে।
তাদের কে একটা রুমে বসতে দেওয়া হলো।
আর তাদের সামনে দেওয়া হলো হরেক রকমের নাস্তা।

সামিরা পাত্রী কে দেখার জন্য উঠে পড়লো,
আর বললো মা আমি একটু মেয়েটাকে দেখে আসি।
তখন সামিরার মা বললো,
না যাস না।
পাত্রী সামনে এলে এমনিতেই দেখতে পাবি।
সেজন্য সামিরা আর গেলো না।
কিন্তু সামিরা মনে মনে ফন্দি এঁটেছিলো যে পাত্রীকে মিথ্যে মিথ্যে কথা বলে বিয়েটা ভেংগে দেবে।
কিন্তু তার মা তো তাকে যেতেই দিলো না।

সামিরা বুঝতে পারলো না কিভাবে সে বিয়ে টা ভেংগে দেবে?

হঠাৎ পাত্রীকে আনা হলো।
সাথে পাত্রীর বড় বোন আর চাচী ছিলো।

পাত্রীকে দেখামাত্র সাগরের দাদু বললো মাশাল্লাহ।
এইরকম একটা নাতবউ ই তো আমি চাইছিলাম।
এক এক করে সবাই মেয়েটার প্রশংসা করতে লাগলো।
কিন্তু সাগর একবারের জন্যও তাকালো না।
তার খুব অস্বস্তি লাগছে।
কখন যে এই বাড়ি থেকে চলে যাবে সাগর সেই অপেক্ষায় করছে।

কিন্তু সামিরা পাত্রীকে দেখে হা করে তাকিয়ে থাকলো।
সে কিছুই বুঝতে পারছে না।
এটা কি করে সম্ভব?
এটাও কি কাকতলীয়?
না আগে থেকে পরিকল্পিত?
কারন পাত্রী ছিলো মোহনা।

পাত্রী নিচ মুখ হয়ে বসে আছে।
তাই সাগরের মা বললো মা,একটু মুখ টা উপরে তোলো।
কিন্তু মোহনা মুখ উপরে তুললো না।
বোঝায় যাচ্ছে তাকেও জোর করেই পাত্রের সামনে আনা হয়েছে।
কারন তার চোখ মুখ ফোলা ছিলো।
মনে হয় বিয়ে করবে না দেখে অনেক কেঁদেছে।
হঠাৎ মোহনার বোন নিজেই মুখ টা উপরে তুললো।
আর বললো তাকা সবার দিকে।
যার সাথে বিয়ে হবে তাকে একবার দেখে নে।
সেই কথা শুনে মোহনা মনে মনে ভাবলো তার পছন্দের যদি এতই গুরুত্ব থাকতো তাহলে তো তাকে একটিবার বলতো সবাই যে তাকে বিয়ের জন্য বাড়ি আসতে বলা হয়েছে।

মোহনা কিছুক্ষন আগে জানলো যে তাকে আজ দেখতে আসবে।
মোহনা আজ সকালে শোফায় শুয়ে টিভি দেখছিলো।
হঠাৎ করেই রুমে একজন লোক আসলো।
মোহনা তাড়াতাড়ি করে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
তিনি এসেই মোহনার বাবাকে খুঁজতে লাগলেন।
কিন্তু মোহনার বাবা বাড়ি ছিলেন না।
তাই তিনি মোহনার মায়ের সাথে কথা বললেন।
মোহনার মা লোকটিকে নাস্তা করালেন।
তার কিছুক্ষন পরেই লোকটি চলে গেলেন।

লোকটি চলে গেলে মোহনা তার মা কে জিজ্ঞেস করলো,
লোকটি কে মা?
তার মা বললো তোর বাবার পরিচিত।
তবুও একবারের জন্য বলে নি যে আজ তাকে দেখতে আসবে।

কিন্তু এক ঘন্টা আগে তার বোন হঠাৎ রুমে এসে বললো তাড়াতাড়ি করে রেডি হয়ে নে।
তোকে আজ দেখতে আসবে।

মোহনা সেই কথা শুনে বললো আপু,তুমি কি পাগল হইছো?
আমাকে দেখতে আসবে মানে?
এখনি বিয়ে দেবে আমাকে?
মোহনার বোন তখন বললো আমরা কেউই তো রাজি নই।
ঘটক নাকি এক মাস থেকে আমাদের বাসায় ঘোরাঘুরি করছে।
অনেক ভালো একটা ফ্যামিলি।
তাই বাবা নাকি আসতে বলেছে ওদের।

মোহনা সেই কথা শুনে বললো তোমরা সেইজন্য আমাকে বাড়ি আসতে বললে?
আগে জানলে কখনোই বাসায় আসতাম না।
তখন মোহনার বোন বললো এইরকম কত দেখতে আসবে।
আমাকে তো এইরকম কত দেখতে এসেছে মনে নেই তোর?
আরে দেখতে আসলেই কি বিয়ে হয়ে যায়?
ওরা দেখে যাক তারপর আমরা সবাই মিলে বসে সিদ্ধান্ত নেবো কি করা যায়?
তুই যেহেতু এখনি বিয়ে করবি না আমি এ ব্যাপারে বাবার সাথে কথা বলবো।
কিন্তু আজ যেহেতু ওরা আসতে চেয়েছে তাই এখন একটু কষ্ট করে ওদের সামনে যেতেই হবে।
মোহনা তার বোনের কথা শুনে পাত্র পক্ষের সামনে এসে বসে আছে।

হঠাৎ সামিরা বললো ভাইয়া তুই একটু তাকিয়ে দেখ।
তোর কেমন লাগলো সবাইকে বল?
সাগর সেই কথা শুনে রাগ করে সামিরার দিকে তাকালো।
একবারের জন্যও মোহনার দিকে দেখলো না।
সামিরা তখন বললো আমার দিকে না তাকিয়ে তোর হবু বউ এর দিকে তাকা।
সামিরার কন্ঠ শুনে মোহনা সবার দিকে দেখতে লাগলো।
সে সাগর আর সামিরাকে দেখে অবাক হয়ে গেলো।
এ কেমন অবিশ্বাস্য ব্যাপার?
সাগর তাকে দেখতে এসেছে?
এটা কি করে সম্ভব?

মোহনা কিছু না বুঝেই সাগর কে বললো আপনি এখানে?
আপনিই পাত্র?
তখন সামিরা বললো আমার ও তো সেই একই প্রশ্ন?
আমরা তোমাকে দেখতে এসেছি?
তোমার সাথে ভাইয়ার বিয়ে হবে?

সাগর আর সামিরার কথা শুনে সাগরের দাদু বললো তোমরা এই মেয়ে টাকে আগে থেকেই চেনো?

তখন সাগর বললো না দাদু।
আমি চিনি না।
সাগর উল্টো মোহনাকে প্রশ্ন করলো তুমি আমাকে কিভাবে চিনলে?
আমাদের কি আগে কোথাও দেখা হয়েছিলো?
মোহনা রাগ করে আর একটা কথাও বললো না।
সাগর তাকে আবার অপমান করছে।
তাই সে চুপ করেই থাকলো।

তখন সামিরা বললো আসলে দাদু আমরা সেদিন বাসের ভিতর মেয়েটাকে দেখেছিলাম।
এই মেয়েটাও রাজশাহী থেকে ফিরছিলো।
তাই না ভাইয়া?
তোর মনে নেই?
সাগর মোহনার দিকে তাকিয়ে বললো আমি অতো খেয়াল করি নি।
তাই চিনতে পারসি না।

তখন সাগরের দাদু বললো তাই বল?
আমি আরো ভাবছি এরা দুইজন দুইজনকে চিনলো কিভাবে?
সামিরা তখন বললো সেটাই তো?
আমাদের সাগর ভাই কি সেইরকম ছেলে?
সে কি কোন মেয়ের দিকে তাকায় নাকি?
আমি তো ভাবছি অন্য কথা।
ভাই যে কোন দিন আমাকেও না ভুলে যায়?
আমাকেও বোন হিসেবে অস্বীকার করে????

সাগরের মা তখন বললো সামিরা এখন একটু চুপ কর তো।
তুই একটু বেশি কথা বলছিস।
সামিরা আর একটা কথাও বললো না।
শুধু সাগরের দিকে তাকিয়ে রইলো।
সাগর সেই আগের মতোই নিচ মুখ হয়ে বসে থাকলো।

চলবে,,,,,
পরবর্তী পর্ব পড়তে চাইলে অবশ্যয় লাইক কমেন্ট করতে হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here