ক্রাশ পর্ব -০৪

#ক্রাশ
#পর্ব_০৪
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ
মোহনা মন দিয়ে পড়াশোনা করতে লাগলো।
আর সাগর কে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করলো।
কিন্তু তবুও সাগরের কথা তার ভীষণ মনে পড়তো।
জীবনের ফাস্ট ক্রাশ বলে কথা!!!

এইভাবে মোহনা তার স্কুল জীবনের গন্ডী পার করে কলেজে উঠলো।
কলেজ লাইফ শেষ করে ভার্সিটিতে ভর্তি হলো।
প্রথমবার পরীক্ষা দিয়ে সে কোন ভার্সিটিতেই টিকতে পারলো না।
তাই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়।
পরে দ্বিতীয় বার পরীক্ষা দিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পায়।
সে তার বাবার ইচ্ছা পূরন করার জন্য অনেক চেষ্টা করেছিলো।
মেডিকেল এবং বুয়েটে ভর্তির জন্য পরীক্ষাও দিয়েছিলো।।।
কিন্তু একটাতেও টিকতে পারে নি।
তার ভাগ্যে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার চান্স কোনটাই ছিলো না।

এদিকে মোহনা ধীরে ধীরে সাগর কে প্রায় ভুলেই যায়।
কারন সাগর স্কুল থেকে বিদায় নেওয়ার পর আর তাদের দেখা বা কথা হয় নি।
সাগর এখন কোথায় পড়াশোনা করছে সেটাও জানে না।
এদিকে মোহনা রাগ করে সাগরের ফোন নাম্বার টাও ছিঁড়ে ফেলে।
যদিও ফোন নাম্বার টা মুখস্ত ছিলো কিন্তু একবারের জন্যও ট্রাই করে নি।
সাগরের বাড়ি কোথায় সেটাও জানে না।
মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে একবার ফোন করে তার খোঁজখবর নিতে।
কিন্তু সাগর যদি তাকে না চেনে এই ভেবে কল দেয় না।
সাগরের জন্য সে আগে অনেক পাগলামি করেছে কিন্তু এখন তার মধ্যে একটা ম্যাচুরিটি ভাব এসেছে।
সে অনেক কিছুই বুঝতে শিখেছে।
যা আগে বোঝে নি।
আগে যেকোন সিদ্ধান্ত হুটহাট করেই নিতো।
কিন্তু এখন অনেক ভেবেচিন্তে নেই।

মোহনার ফাস্ট ইয়ারের পরীক্ষা শেষ তাই সে ছুটি কাটাতে বাড়ি যাবে।
মোহনা এবার অনেক দিন গ্রামে গিয়ে থাকবে তাই তার সব ড্রেস রাখার জন্য একটা বড় ব্যাগ নিলো।
আর সেটা নিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলো।

হঠাৎ মোহনা গাড়ির মধ্যে সাগর কে দেখতে পেলো।

অনেক দিন পর সাগরের সাথে দেখা তার।
সাগর কে দেখামাত্র তার বুক টা কেঁপে উঠল।
তার হার্টবিট দ্রুত বেড়ে গেলো।
সে আর দেরী না করে তাড়াতাড়ি করে তার সীটে গিয়ে বসলো।

সাগর তাকে দেখে নি।
কারণ সে একটা মেয়ের সাথে গল্প করছে।
মেয়েটা সাগরের সাথে একই সীটে বসে আছে।
মোহনা বার বার আড় চোখে তাকিয়ে তাকিয়ে সাগর কে দেখতে লাগলো।

অনেক চেঞ্জ হয়েছে সাগরের।
আগের চেয়ে অনেক লম্বা হয়েছে।
একটু মোটাও হয়েছে।
স্কুলে পড়াকালীন তো পাঠকাঠির মতো চিকন ছিলো।
আর এখন গালে আবার খোঁচা খোঁচা দাঁড়িও আছে।
তবে একটা জিনিষ তার পরিবর্তন হয় নি।
তার চোখের চশমা।
আগে যে চশমা টা পড়ে স্কুলে আসতো সেই একই চশমা এখনো তার চোখে।

হঠাৎ একটা ছেলে এসে মোহনাকে বললো আপা আপনার ব্যাগটা এখানে রেখেছেন কেনো?
ব্যাগটা অন্য জায়গায় রাখতে হবে।
মোহনা তখন বললো আমার কাছেই থাক।
এই ব্যাগে অনেক দরকারী জিনিসপত্র আছে।

মোহনার কথা শুনে সাগর আর মেয়েটা মোহনার দিকে তাকালো।
সাগরের চোখের সাথে চোখ পরতেই মোহনা অন্য মুখ হলো।
আর মুচকি মুচকি হাসতে লাগলো।
সাগর কে দেখামাত্র তার সেই পুরনো স্মৃতি মনে পড়ে গেলো।
চোখের সামনে তার সেই ভালোলাগার মানুষ টা,
তবুও কথা বলার সাহস নেই তার।
সে আবার তাকালো সাগরের দিকে।
অপলক দৃষ্টিতে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলো।
তারপর মোহনা নিজেকে সামলিয়ে নিলো।
কারন এভাবে একটা ছেলের দিকে তাকানো মোটেও ঠিক না।
তাছাড়া এখন নিশ্চয় সাগরের প্রেমিকা আছে।
আগে যদিও ছিলো না,কিন্তু এখন তো মনে হয় না সে সিংগেল আছে?
মোহনার অনেক জানতে ইচ্ছে করছে যে তার পাশে বসা মেয়েটা কে?
কিন্তু সে সাহস আর হলো না।
মোহনা মেয়েটাকে সাগরের গার্লফ্রেন্ড মনে করলো।

এক এক করে সকল যাত্রী যার যার সীটে বসে পড়লো।
এখনো গাড়ি স্টার্ট দেয় নি।
তাই যে যার মন মতো বসে আছে।
হঠাৎ সাগরের পাশে বসা মেয়েটা মোহনাকে বললো,

Hi?
Hello?
আমি সামিরা।
তোমার নাম কি?
মোহনা সেই কথা শুনে বললো আমার নাম মোহনা।
মেয়েটা তখন বললো তুমি কই যাবে?
মোহনা তার ঠিকানা বলতেই মেয়েটা বললো তাহলে তো তুমি আমাদের এলাকারই।
মোহনা তখন হেসে বললো তাই নাকি?
তাহলে তো খুব ভালো হলো।
একসাথে গল্প করতে করতে যাওয়া যাবে।
এই বলে মেয়েটা মোহনার পাশের সীটে এসে বসলো।
আর সাগর কে বললো ভাইয়া তোকে আর আমাকে সময় দিতে হবে না?
গল্পও করতে হবে না।
আমি এই আপুটার সাথে গল্প করতে করতে বাড়ি যাবো।
মোহনা সামিরার মুখে ভাইয়া ডাক শুনে জিভে একটা কামড় দিলো।
কারন সামিরাকে সে সাগরের গার্লফ্রেন্ড ভেবেছিলো।
কিন্তু সামিরা তো সাগরের বোন হয়।

সাগর সে কথা শুনে মোহনার দিকে তাকালো।
আর বললো এভাবে অপরিচিত কারো সাথে বেশি মেশা ঠিক না।
পরে কোন একটা বিপদ হলে তখন বুঝবি কেমন মজা!!!
সেই কথা শুনে মোহনা মন খারাপ করলেও সে চুপ করে বসে থাকলো না।
সাগর কে এর উলটো জবাব দিলো।

মোহনা বললো,
সামিরা তোমাকে আমার সীটে বসতে হবে না।
তুমি তোমার ভাই এর সীটে গিয়েই বসো।
তোমার ভাই মনে হয় একা একা ভয় পায়।
সেজন্য এভাবে বলছে।
সেই কথা বলে মোহনা হেসে উঠলো।
মোহনার হাসি দেখে সামিরাও হাসতে লাগলো।

তখন সাগর বললো এখানে হাসির কি হলো সামিরা?
আমি তোর ভালোর জন্যই বলছিলাম কিন্তু।
অপরিচিত ছেলেমেয়েরা এইভাবে আগে মধুর মধুর কথা বলে তারপর মিল হলে তাকে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে দিয়ে তার সবকিছু চুরি করে পালিয়ে যায়।

মোহনার এবার আর সহ্য হলো না।
সে তখন সাগর কে বললো আমি অপরিচিত?
আপনি আমাকে চেনেন না?

সাগর বললো না।
আমি তোমাকে কি করে চিনবো?
মোহনা তখন বললো আমাকে আপনি একদিনও দেখেন নি?
সাগর বললো না তো?
মোহনা তখন রাগ করে বললো আপনি মিথ্যা বলছেন।
আপনি আমাকে চেনেন।
সাগর তখন হাসতে হাসতে বললো কি বলে রে মেয়েটা?
তুমি পাগল নাকি?
আমি তোমাকে কি করে চিনবো?

মোহনা তখন এক নিঃশ্বাসে বললো আপনি এস,এম পাইলট হাইস্কুলে পড়াশোনা করেছেন।
আপনার নাম সাগর।
আপনি ক্লাস টেনে কবিতা আবৃতি তে সেকেন্ড হয়েছিলেন।
আমি সেবার ফাস্ট হয়েছিলাম।
আপনি আর আমি স্টেজে একসাথে উঠে পুরুষ্কার নিয়েছিলাম এবং আপনি আমাকে কংগ্রাচু,,,,,,,,,

তখন সাগর মোহনাকে থামিয়ে দিয়ে বললো যা কিছু বললে তা তো সব আমার সম্পর্কেই বললে।
হতে পারে তুমি আমাকে তখন ফলো করেছো তাই আমার ব্যাপারে সব জানো।
কিন্তু আমি তো তোমাকে কোনদিন ফলো করি নি।
তাই তোমাকে চিনতে পারছি না।
তোমাকে আগে কোথাও দেখেছি কিনা মনে পড়ছে না।

মোহনা সাগরের কথা শুনে খুব অপমান বোধ করলো।
সে জানতো এই রকমই কিছু একটা বলবে সাগর।
তাই সে নিজের থেকে কথা বলতে চাইছিলো না।
তবুও তার সাথে কথা বলা লাগলো।
মোহনা রাগ করে গাড়ির জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছে।।।

তখন সামিরা বললো তুমি কি মন খারাপ করলে?
আসলে ভাইয়া এমনই।
কাউকে মনে রাখতে পারে না।
তবে অনেকেই ওকে চেনে।
ও সারাক্ষন শুধু বই নিয়েই বসে থাকে।
ওর নজর শুধু বই এর দিকেই থাকে।

তখন মোহনা বললো আসলে তোমার ভাইয়া সবাইকেই চেনে।
আর আমাকে তো না চেনার প্রশ্নই আসে না।
কিন্তু উনি অহংকার করে বলছেন আমি তোমাকে চিনি না।

সামিরা তখন বললো তুমি দেখি ভাইয়াকে অহংকারী ভাবছো।
ও আসলে একটুও অহংকারীও না।
তুমি হয় তো ওকে ভালো করে দেখেছো তাই মনে আছে।
কিন্তু ভাইয়া হয় তো তোমাকে দেখে নি,
আর দেখলেও সেভাবে খেয়াল করে নি।

মোহনা সেই কথা শুনে জোরে জোরে বললো এতোদিন ভাবতাম উনি অনেক বুদ্ধিমান ছেলে।
ওনার মতো মেধাবী একজনও নাই।।
কিন্তু ওনার যে স্মরন শক্তি এতো খারাপ এটা জীবনেও ভাবি নি।
এখন বুঝলাম শুধু পড়াশোনায় ফাস্ট হলেই তাকে বুদ্ধিমান বলা যায় না।
যে সব দিক দিয়ে পারফেক্ট সেই আসল মেধাবী।

তখন সাগর বললো কি বললে তুমি?
আমার বুদ্ধি নাই?
আমি মেধাবী না?
আরে বুদ্ধি যদি নাই থাকতো তাহলে ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়াশোনা করতে পারতাম না।
আর আমি অযথা আমার টাইম নষ্ট করি না।
তোমাকে আমার কি জন্য মনে রাখতে হবে?
সামিরা তখন যে কথা টা বললো ওটাই ঠিক।
হয় তো দেখেছি কিন্তু মনে রাখার প্রয়োজন মনে বোধ করি নি।

সাগরের এমন কথাবার্তা শুনে মোহনা অনেক মন খারাপ করলো।
এই অহংকারী ছেলেটাকে এতোদিন সে পছন্দ করে আসছে?
এই সাগরের জন্য সে এখন পর্যন্ত অন্য কোন ছেলেকে পছন্দ করতে পারছে না?
কত ভালো ভালো ছেলের প্রপোজ সে ক্যান্সেল করে দিয়েছে।

মোহনা আর একটা কথাও বললো না।
সে মন খারাপ করে চুপচাপ বসে থাকলো।
হঠাৎ সামিরা বললো আপু তুমি কিসে পড়াশোনা করছো?
মোহনা বললো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে।
সামিরা বললো তাহলে তো তুমিও অনেক মেধাবী স্টুডেন্ট।
ভার্সিটিতে চান্স পাওয়া তো মুখের কথা না।
মোহনা তখন বললো না না আমি অতো মেধাবী স্টুডেন্ট না।
ভাগ্যের জোরে টিকে গিয়েছি।
পড়াশোনায় তেমন ভালো না আমি।
এই বলে মোহনা সাগরের দিকে তাকালো।

সামিরা তখন বললো আপু তোমার ফেসবুক আইডি আছে?
তোমার সাথে এড হতে চাই।
মোহনা সেই কথা শুনে তার ফেসবুক আইডির নাম বললো।
সামিরা সার্চ দিয়ে মোহনাকে রিকুয়েষ্ট পাঠালো।
আর মোহনা এক্সসেপ্ট করলো।
হঠাৎ সামিরা বললো আপু কিছু মনে না করলে তোমার ফোন নাম্বার টা কি আমাকে দেবে?
মোহনা তখন বললো কেনো?
আমার ফোন নাম্বার দিয়ে কি করবে?
সামিরা তখন বললো কথা বলবো।
তাছাড়া আমিও রাজশাহীতেই পড়াশোনা করছি।
এবার এইচ,এস,সি দেবো।
মোহনা আর কোন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলো না।
সে তার ফোন নাম্বার টা সামিরাকে দিয়ে দিলো।

মোহনা আর সামিরার সাথে এই বাসের মধ্যেই বন্ধুত্ব তৈরি হয়ে গেলো।
যেহেতু তাদের বাসা একই দিকে তাই তারা পুরো রাস্তা গল্প করেই কাটিয়ে দিলো।

মোহনার সবকিছু কল্পনা মনে হতে লাগলো।
কারন এতোবছর পর তার আবার সাগরের সাথে দেখা হলো।
আবার সাগরের বোন সামীর সাথেও তার বন্ধুত্ব তৈরি হলো।

চলবে,,,,,,,
পরবর্তী পর্ব পড়তে চাইলে অবশ্যয় লাইক কমেন্ট করতে হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here