#গল্পটা_তোমারই
[৪র্থ পর্ব]
|১১|
আজ প্রথম ভার্সিটিতে এসেছে অহমি।পাশেই ফুল ভাব নিয়ে যাকে বলে হিরো হিরো ভাব নিয়ে অহমির পায়ের সাথে তাল মিলিয়ে হাটছে সেহরিশ।
সেহরিশের কান্ডে অহমি বিরক্ত হয়ে আড়চোখে সেহরিশের দিকে তাকাচ্ছে অহমি।চারপাশে ছেলে-মেয়েরা ড্যাব ড্যাব করে সেহরিশ-অহমির দিকে তাকিয়ে আছে।
সবার এভাবে তাকিয়ে থাকা দেখে আনইজি ফিল করলো অহমি।
ইতিমধ্যে ভার্সিটির সবাই ইফাজ আর অহমির কথা জেনে গেছে।
সেহরিশ সব ফর্মালিটিন পূরন করে অহমিকে ক্লাস পর্যন্ত পৌঁছে দিলো।ক্লাসে ডুকতেই সবার হাজারো প্রশ্নের মুখোমুখি হলো অহমি।
মাথা নিচু করে মধ্যে ব্যাঞ্চ’এ বসলো অহমি।চারিদিকে ছেলে-মেয়ে গুলো তাকে নিয়ে কানাঘুষা করছে আর মিটিমিটি হাসছে।তাদের কথা স্পর্ষ্ট শুনতে পারছে অহমি।
– দোস্ত শুনেছিস মেয়েটাকে তার হাসবেন্ড ছেড়ে দিয়েছে শুনলাম মেয়েটার মাঝে নাকি কোন খাদ আছে তাই হাসবেন্ড ডিভোর্স দিয়ে বাড়ি থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছে!(কান ঘুষা করে)
অন্যজন বলে উঠলো।
– দেখ দেখ হাসবেন্ড ডিভোর্স দিয়েছে দু’দিনও হয়নি মেয়েটা একটা ছেলের সাথে ঘুরঘুর করছে আরে এসব মেয়েরা ক্যারেক্টারলেস দেখেই হাসবেন্ড ছেড়ে দেয়!(মিটমিট করে হেসে)
ওদের কথা শুনতে পেয়ে আরও নিবিড় ভাবে মাথা নিচু করে নিলো অহমি।চোখে জল চিকচিক করে উঠলো।আজ শুধু ইফাজের জন্যেই তাকে লোকজনের থেকে এইসব কথা-বার্তা শুনতে হচ্ছে।
যত সময় যাচ্ছে ইফাজের প্রতি অহমির সব ভালোবাসা ঘৃনা,অভিমানে পরিণত হচ্ছে।ইফাজ অহমির সম্পর্কটা আজ সমাজের কাছে হাস্যকরে পরিণত হয়েছে।
অহমি কোন মতে ক্লাস শেষ করে বেরিয়ে গেলো।আজ স্যার ম্যামও তার আর ইফাজের সম্পর্কে প্রশ্ন তুলেছে।ভাবতে গায়ে কাটা দিয়ে উঠছে অহমি।
রাস্তার মোড়ে আসতেই হঠাৎ কেউ অহমিকে একটানে নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করে নিলো।
হঠাৎ এভাবে টান দেওয়া নিজেকে সামলাতে পারলো না অহমি।সামনে থাকা ব্যাক্তিটির বুকের সাথে মিশে গেলো সে।হকচকিয়ে লোকটার মুখের দিকে তাকাতেই ঘৃনায় দমে গেলো অহমি।
কেননা সামনে ইফাজ দাড়িয়ে আছে।ইফাজ কে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে সরিয়ে নিলো অহমি হিজাব ঠিক করে মুখে কাঠ্যিনতা এনে বলে উঠলো।
– এভাবে পথে-ঘাটে অচেনা অজানা একটা মেয়েকে জরিয়ে ধরার সাহস হয় কি করে আপনার!(কাঠ্যিনতা ফুটিয়ে)
অহমির এমন কথা হয়তো ইফাজ কল্পনাও করতে পারেনি আজ পুরো দু’সপ্তাহ্ পর অহমিকে এভাবে দেখেছে ইফাজ।নিজের পুরনো ভালোবাসাকে দেখে নিজেকে ঠিক রাখতে পারেনি ইফাজ।
ধীর গলায় ইফাজ বলে উঠলো।
– অহু কেমন আছো!এতদিন কোথায় ছিলে তুমি! তোমার জন্য আমার অনেক চি,,(ধীর গলায়)
ইফাজকে পুরো কথা শেষ করতে না দিয়ে রাগে ফোস ফোস করতে করতে বলে উঠলো অহমি।
– নিজেকে সংযত করুন মি. ইফাজ আমার সাথে আপনার কোন সম্পর্কে অবশিষ্ট নেই কারন আপনি নিজেই আমাকে ছেড়ে দিয়েছেন!জানেন এই সমাজ একটা ডিভোর্সি মেয়েকে মেনে নেয় না প্রতিনিয়ত তাকে তুচ্ছ প্রমান করে যেমন আমাকে প্রতিনিয়ত লোকজন,সমাজ থেকে আমায় ভিত্তিহীন কথাবার্তা শুনতে হচ্ছে।(ধরা গলায়)
কথা গুলো যেনো অহমির গলায় জোট পাকিয়ে বসলো।জেনো সেগুলো ইফাজের সামনে আসতে চাইছে না।
|১২|
ইফাজ অহমির হাত চেপে ধরে বলে উঠলো।
– অহু আমায় ক্ষমা করে দিও প্লিজ দেখো আমাদের সম্পর্কটা আমি ভাংগে চাইনি কিন্তু আমি নিরুপায় ছিলাম সত্যিই নিরুপায় ছিলাম।(অহমির হাত চেপে ব্যাথিত গলায়)
অহমি আশেপাশে খেয়াল করলো লোকজন তাদের দিকে তাকিয়েই কানা-ঘুষা করছে।এটা দেখে ঘৃনা,রাগে ঝাড়ি দিয়ে হাত ছাড়িয়ে নিলো ইফাজের থেকে আর সজোড়ে ইফাজের গালে একটা চড় মেরে বলে উঠলো।
– নিজের লিমিটে থাকুন মি.ইফাজ আপনার জন্য আমার নামের পাশে চরিত্রহীন উপাধি টা লেগে গেছে।আর আমার নাম অহমি অহু নয় দ্বিতীয় বার থেকে আপনার এই অসহ্য,বিরক্ত মাখা চেহারা নিয়ে আমার সামনে আসবেন না।(বলেই অহমি চোখের জল মুছে দ্রুত দৌড়ে চলে গেলো)
শূণ্যচোখে গালে হাত দিয়ে অহমির যাওয়ার পথে চেয়ে আছে ইফাজ।কখনো ভাবতে পারেনি যে অহমি সবার মাঝে এভাবে পাবলিকেলি তাকে চড় মারবে।কিন্তু এটা যে তার প্রাপ্য ছিলো তার জন্যই আজ মেয়েটা কতটা কষ্ট পাচ্ছে।
ভাবতেই ইফাজের চোখ থেকে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো।ব্যাথিত মন নিয়ে ধীর পায়ে চলে গেলো ইফাজ।নিয়তি তাদের দুজনের ভাগ্য নিয়ে করুন খেলা খেলছে।
বাড়িতে ডুকেই নিজের রুমে চলে গেলো অহমি।ফ্রেশ হয়ে নিচে মনিমার রুমে চলে গেলো সে।গিয়ে দেখে মিসেস রিহিয়া হুইল চেয়ার ছেড়ে উঠার চেষ্টা করছেন।মিসেস রিহিয়া পড়ে যেতে নিলেই অহমি দ্রুতজলদি মিসেস রিহিয়াকে ধরে আবার চেয়ারে বসিয়ে দেয়।
– মনিমা তুমি একা একা কেন উঠতে যাও যদি এখন পড়ে যেতে তাহলে কি হতো ভাবতে পারছো!আর এমন করবে না বুঝলে আমি আসলে আমার সাহায্য উঠার চেষ্টা করবে একা একা ভুলেও এমন করতে যাবে না।(হালকা অভিমান মিশ্রিত কন্ঠে)
অহমি’র এমন কথা শুনে মিসেস রিহিয়া একগাল হেসে বলে উঠলেন।
– পাগল মেয়ে সবসময় এত আমাকে নিয়ে দুশ্চিন্তিতা করিস নাতো সবসময় বলিস মনিমা এটা করোনা মনিমা ওটা করোনা।উফফ তুই এত কেয়ার করিস যে মাঝে মাঝে মনে হয় তুই আমার মা!জানিস যখন আমি ছোট ছিলাম তখন আমার মাও তোর মতোই আমাকে এত ভালোবাসতেন তিনি খুবই মিশুল ছিলেন যেমন তোর মতো।(একগাল হেসে)
মিসেস রিহিয়া কথা শুনে মিসেস রিহিয়া হাটুতে মাথা রাখলো।অহমির ভিষন করে তার মায়ের কথা মনে পড়ছে যদি সত্যিই সত্যিই আজ তার মা তার কাছে থাকতো।মাঝে মাঝে সৎ মায়ের কঠিন আচরন দেখে অহমির ভিষন অভিমান হয় তার মায়ের প্রতি কেন তাকে ফেলে গেলো!
মিসেস রিহিয়া আপনমনে অহমির মাথায় বিলিকেটে দিতে লাগলেন।
|১৩|
– ভার্সিটির জরিয়ে ধরা ওই ছেলেটা কে ছিলো অহমি!
হঠাৎ সেহরিশের কন্ঠ শুনে চমকে উঠলো অহমি।দ্রুত গায়ের ওড়না ঠিক বলে আমতা আমতা করতে লাগলো অহমি কিভাবে সেহরিশকে বলবে যে ওটা তার প্রাক্তন স্বামী ইফাজ ছিলো।
অহমিকে আমতা আমতা করতে দেখে সেহরিশ হালকা হেসে বলে উঠলো।
– ওটা ইফাজ ছিলো তাই না অহমি!আচ্ছা অহমি আপনি কি ইফাজের লাইফে দ্বিতীয় বার ফিরে যেতে চান!(হালকা হেসে)
সেহরিশের কথা শুনে মাথা নিচু করে স্থির চোখে ফ্লোরের দিকে তাকালো অহমি বলার ভাষ্য নেই তার কাছে।তার কি সত্যিই ইফাজের কাছে ফেরা উচিৎ!
অহমির দ্বিধাদন্ত দেখে সেহরিশ মুচকি হেসে বিরবির করে বলে উঠলো।
– বিশ্বাসহরন কারীকে কখনোই ক্ষমা করা যায় না তবে ভালোবাসার কাছে সেটা তুচ্ছ!(বলেই সেহরিশ রুম থেকে বেরিয়ে গেলো)
অহমি নিশ্চুপ হয়ে ধপ করে বিছানায় বসে পড়লো।চোখের পানি যেনো আর বাধ মানছে না।
_______________________
ক্লাবে রোদেলা আর একটা ছেলের ঘনিষ্ঠমূহুর্তে দেখে থমকে সেদিকে তাকিয়ে রইলো ইফাজ।যার জন্য এতকিছু করেছে যার কথা একটা নিস্পাপ মেয়েকে সমাজের চোখে খারাপ বানালো সেই মেয়েটাই কিনা চরিত্রহীন কাজকর্ম করছে।
এদিকে কিছু ভাংগা শব্দে সেদিকে তাকালো রোদেলা তাকাতেই চমকে উঠলো।একি সামনে ইফাজ কোথা থেকে আসলো।রোদেলা চমকে হতচকিত হ্য়ে ছেলেটার থেকে দূরে সরে আসলো।ইফাজের কাছে যেতেই দেখলো ইফাজের হাত থেকে রক্ত টুপটুপ করে পড়ছে।ইফাজের চোখের দিকে তাকালো রোদেলা তাকাতেই ভয়ে দমে গেলো সে ইফাজ ভয়ংকর রেগে আছে।
ইফাজ রোদেলাকে সজোড়ে একটা চড় মেরে দিলো।আর রোদেলার চুলের মুঠো ধরে বলে উঠলো।
– আজ তোর জন্য আমি আমার অহমিকে এতটা কষ্ট দিয়েছি।সবার সামনে তার নামের পাশে চরিত্রহীন শব্দ লাগিয়েছি অহমিকে ডিভোর্স দিয়ে সমাজের চোখে একজন ডিভোর্সি বানিয়েছি।শুধুমাত্র তোর কথায় কিন্তু তুই যে নিজেও একটা চরিত্রহীন তা আজ এখানে প্রকাশ পেয়েছে তুই কেন এমনটা করলি।(ভয়ংকর রেগে)
রোদেলাকে চড় মারার কারনে আর চুলের মুঠি ধরার কারনে রোদেলা রেগে ইফাজকে ধাক্কা দিয়ে বলে উঠলো।
– হ্যাঁ বাধ্য করেছি তোমাকে কারন তোমার আর অহমির এই প্রেমের সংসার আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারেনি!অহমির সুখ আমার সহ্য হয়নি আর তোমাকে আমি ভালোবাসতাম তাই তোমাকে আর অহমিকে আলাদা করতে আমি এসব করেছি বাধ্য করেছি তোমায় অহমিকে ডিভোর্স দিতে।(রাগে ফোস ফোস করতে করতে)
চলবে,,
[অসুস্থতার কারনে গল্প দিতে লেট হয়েছে তার জন্য আমি অত্যান্ত দুঃখিত।কেমন হয়েছে জানাবেন।পরবর্তী পর্ব রেসপন্সের উপর ভিত্তি করে]
[কার্টেসি ছাড়া কপি করে নিষেধ!]
#Rubaita_Rimi(লেখিকা)