গল্পটা তোমারই পর্ব ৭

#গল্পটা_তোমারই
[৭ম পর্ব]

|২১|
রাস্তার মাঝখানে ইফাজের রক্তাক্ত নিথর দেহটা পড়ে আছে।তার কিছু দূরত্বেই দাড়িয়ে আছে অহমি বাকরুদ্ধ হয়ে ইফাজের দিকে তাকিয়ে আছে।মূর্তির মতো ইফাজের দিকে তাকিয়ে দাড়িয়ে আছে।
অহমির নিশ্বাস ভারী হয়ে আসছে।চারিপাশ‌ একটু একটু করে অন্ধকার লাগতে শুরু করলো অহমির কাছে।
,
ভার্সিটি শেষে মাথা নিচু করে বাড়ি ফিরছিলো অহমি।মাঝপথে কারো সাথে ধাক্কা খাওয়ায় ব্যালেন্স না রাখতে পেরে পড়ে যেতে নেয় তবে ভাগ্য বশত সামনে থাকা ব্যাক্তিটা তাকে ধরে ফেলে।
অহমি কাপাঁ কাপাঁ পাপড়িতে সামনে তাকালো।দেখলো ইফাজ তার হাত ধরে দাড়িয়ে আছে।ইফাজকে দেখা মাত্রই অহমির বুকের ভেতরেটা দুমরে মুছরে যাচ্ছে।
কিভাবে ভুলবে সে ইফাজ,রোদেলার দেওয়া বিশ্বাসঘতকতার মূহুর্ত গুলো।
রাগে,ঘৃনায় সোজা হয়ে দাড়িয়ে এক ঝটকায় হাত ছাড়িয়ে নিলো‌ ইফাজের থেকে।

অহমির এমন রিয়্যাক্ট দেখে অনুতাপের মুচকি হাসি দিয়ে ইফাজ।অহমির থেকে এই সামান্য টুকু ঘৃনাটা তার প্রাপ্য ছিলো।
ইফাজ অনুতাপের গলায় অহমিকে মিনমিন করে বলে উঠলো।

– অহমি পারলে আমায় ক্ষমা করে দিও!জানো অহমি মায়া এমন একটা জিনিস যা ক্ষণিকের মধ্যে কারো সম্পর্কে সৃষ্টি করে আবার ক্ষণিকের মধ্যে দুজনের ৫,৬ এবং কি ১২ বছরের সম্পর্কও ভেংগে যায়।(মিনমিনে গলায়)

ইফাজের খাপছাড়া অনুতাপের গলার কথা গুলো শুনে বড্ড খারাপ লাগলো অহমি।ইফাজের কথায় একটুও ভুল নেই সত্যিই সামান্য মায়ার কারনে শত বছরের ভালোবাসায় বিকৃত হয়ে যায়।
তবে ইফাজের মুখে এইসব কথাগুলো বড্ড বেমানান লাগছে অহমির কাছে।যে ভালোবাসার মর্যাদা ইফাজ দিতে জানে না সে ভালোবাসার কথা ইফাজ বলছে ভাবতেই অহমির হাসি পাচ্ছে।
তাচ্ছিল্যের হেসে বলে উঠে।

– যেই লোকটা নিজের স্ত্রীয়ের সম্মান নিয়ে খেলা করে,বিশ্বাসঘাতকতা এবং স্ত্রীয়ের বোনের মতো বেষ্টফ্রেন্ডের সাথে পরকীয়ায়‌ লিপ্ত হয়ে তাকে ডিভোর্স দিয়ে সমাজের চোখে তার নামের পাশে আপনাআপনিই কলংকিত শব্দটা লাগিয়ে দিতে পারে।দোষ,গুন না থাকাে পরও মিথ্যা ভুয়া মা না হতে পারার রিপোর্ট বানিয়ে সমাজে সকলের সামনে স্ত্রীকে চরিত্রহীন প্রমান করতে পারে সেই লোকটার মুখে এইসব কথা বড্ড বেমানান লাগে!(তাচ্ছিল্যেতা হেসে)

অহমির কথা গুলো শুনে ইফাজের নিশ্বাস ভারী হতে লাগলো চোখের কোণে আপনআপনি জলেরা ধরা দিতে লাগলো। আজ নিজের করা কাজ গুলোর জন্য বড্ড খারাপ লাগছে ইফাজ।
আজ যদি সে এইসব ঘটনা না ঘটাতো তাহলে অহমি আর ইফাজের সংসারটা হয়তো খুব সুখে থাকতো।
ভাবতেই ইফাজের চোখ থেকে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো।

– অহমি শেষবারের মতো রিকুয়িষ্ট করছি প্লিজ আমায় ক্ষমা করে দিও হয়তো আজকের পর থেকে আমার মতো একটা কালপিটের মুখ আর কখনো তোমায় দেখতে হবে না।
আমার কথা ঘৃনিত কাজগুলোর জন্য আমি খুব অনুতপ্ত অহমি খুব অনুতপ্ত।পারলে আমায় মাফ করে দিও।
(ইফাজ কথা গুলো বলছে আর হাইওয়ের দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে)

|২২|
অহমি’র চোখের কিনারায় জল জমাট বেধেঁ গেছে। নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করে চোখের জল মুছে নিলো ইফাজের দিকে তাকানো মাত্রই একটা ট্রাকের সাথে প্রচন্ড জোরে ইফাজের সংঘর্ষ হয়ে মুহুর্তেই ছিটকে কয়েক হাত দূরে গিয়ে পড়লো ইফাজ।

অহমি বাকরুদ্ধ,,
.
লোকজনের চিৎকারের আওয়াজে জ্ঞানে ফিরলো অহমি।ইফাজ বলে জোরে চিৎকার দিয়ে ইফাজের দিকে ছুটে গেলো।
ইফাজের এখনো ধীর গতিতে নিশ্বাস চলছে।বড় বড় শ্বাস নিচ্ছে।
অহমি দৌড়ে ইফাজের কাছে গিয়ে জোরে কান্না করে উঠলো।
ইফাজের চোখ মেলে তাকাতেও কষ্ট হচ্ছে।কষ্টকে হাড় মানিয়ে মুখে প্রশান্তির হাসি ছিটিয়ে আটকানো গলায় বলল।

– অহ অহমি প পারলে আমায় ক্ষমা করে দিও!আম্ আমি সস সত্যিই খুবই অনু অন অনুতপ্ত।
আম আমি আমার কথা রেখেছি হ হয়তো আর কখনো আম্ আমার মতো কালপিটের ম মুখ দেখতে হ হবে না তোমার!

অহমি কথাগুলো শুনে মাথা নিচু করে কান্না করতে লাগলো।চারিপাশে লোকজনের ভিড় জমে গেছে।
ইতিমধ্যে কেউ কেউ অহমি আর ইফাজের শেষ কথাবার্তার সাক্ষ্যি হিসেবে চোখের জল ফেলছে।
ইফাজের কথা বলাও এখন মুশকিল হয়ে যাচ্ছে।তবুও শত কস্ট পার করে জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে বলে উঠলো।

– আম্ আমার এক্ একটা শেষ ই‌ ইচ্ছে, আব্ আ আবদার আছে অহু জ জ জীবনের শ শেষ বারের মতো তোম তোমার হাত ধরে চা চাইছি ব বলতে ভা ভালোবাসি!,(রুদ্ধদ্বার কন্ঠে)

ইফাজের প্রতিটা কথায় বুকের ভেতরটায় ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে যাচ্ছে অহমির।ইফাজ যতই ঠকবাজ হোক না কেন জীবনের কোন এক সময়,দিনে,রাতে,বছরে তাকে ভালোবেসেছিলো অহমি।
হয়তো আজও সেই ভালোবাসা কোথাও একটা লুকিয়ে আছে তবে তা বেচেঁ আছে।কারনটা জীবনের প্রথম ভালোবাসা কখনো মরে যায় না সবসময়ের জন্য অমর হয়ে স্মৃতিময় হিসেবে বেচেঁ থাকে তবে তা লুকায়িত।

অহমি ইফাজের বাম হাতটা শক্ত করে ধরে কাপাঁ কাপাঁ গলায় বলে উঠলো।

– ইফ ইফাজ আপ্ আপনার কিছু হবে না!প্লিজ চ চোখ বন্ধ করবেন না?(কাপাঁ কাপাঁ গলায়)
ইফাজ নিজের উত্তর পেয়ে গেছে মুচকি হেসে ডান হাত উচিঁয়ে অহমির গাল স্পর্শ করে বলে উঠলো।

– ভা ভালোবাসি!
ইফাজের মাথা ফেটে চারদিক রক্তে ভেসে গেছে।ইফাজ আর এক দমই পারছে না চোখ খোলা রাখতে।ইফাজ নিজেকে ছেড়ে দিলো চোখটা আপসেই নিরবে বন্ধ হয়ে এলো।

ইফাজের রেসপন্স না পেয়ে অহমি জেনো পাথর হয়ে যেতে লাগলো।মাথাটা ঘুরে উঠলো তার কাপাঁ কাপাঁ গলায় ইফাজকে ডাক দিলো কিন্তু ইফাজ কোন উত্তর দিলো না।
অহমির সময় জেনো থেমে গেলো মুহুর্তেই লোকজনের চিৎকার শুনতে পেলো সে।চারদিকে অন্ধকারে পরিপূর্ণ হয়ে গেলো।

|২৩|

চোখ খুলতেই নিজেকে হসপিটালের পোশাক পরিহিত দেখে চমকে গেলো অহমি।মুহুর্তেই মনে পড়ে গেলো ইফাজের কথা।একপ্রকার পাগলামীতে মেতে উঠলো অহমি।
একনাগাড়ে ইফাজ,ইফাজ আপনি কোথায় ‌এটা বলেই বেড থেকে নেমেই দৌড়ে দরজার দিকে এগিয়ে যেতেই কারো সাথে থাক্কা খেলো।

– আরে আরে অহমি আপনি এভাবে দৌড়াচ্ছেন কেন!ডক্টর সাহেব আপনাকে বেড রেস্ট নিতে বলেছে অহমি আপনি কি শুনতে পারছেন।(চিন্তিত গলায়)

অহমি সেহরিশের বুকে লেপ্টে আছে আর ক্রমান্বত ইফাজের নামের উচ্চারণ করছে।

– ভা ভালোবাসি আমি ইফাজকে ভালোবাসি বলুন না সেহরিশ আমার,আমার ই ফ ইফাজ কোথায়!ওকে এখানে দেখছি না কেন!বলুন না সেহরিশ আমার ইফাজ কোথায়(পাগলের মতো করে)

সেহরিশ চমকে উঠলো আচমকা অহমির মুখে ইফাজকে ভালোবাসি শব্দটা শুনে বুকের ভেতরে তোলপাড় শুরু হলো সেহরিশের।
অহমিকে বুকের সাথে আরও গভীর ভাবে চেপে ধরে বলে উঠলো।

– অহমি শান্ত হোন প্লিজ?ডক্টর বলেছে এই সময়ে আপনাকে উত্তেজিত হতে না!প্লিজ নিজেকে সংযত করুন!( অহমিকে বুকের সাথে চেপে ধরে)

অহমির গভীর,বড় বড় নিশ্বাস ফেলছে।একসময়ে নিস্তব্দ হয়ে সেহরিশের বুকে চুপ করে রইলো।
কিছুক্ষন পর সেহরিশ অহমিকে বুকের থেকে ছাড়িয়ে বেডে বসালো।
এরপর পাশে থাকা টেবিল থেকে ঝগ নিয়ে গ্লাসে পানি ঢেলে অহমিকে দিলো।
মাত্র দুই ঢোকে পুরো এক গ্লাস পানি শেষ করে ফেললো অহমি।
ঘেমে একাকার হয়ে গেছে অহমি।ইফাজের এক্সিডেন্টের দৃশ্য গুলো বারবার চোখের পাতায় ভাসমান দিয়ে উঠেছে ।
কাপাঁ কাপাঁ গলায় সেহরিশকে বলে উঠলো।

– সেহ সেহরিশ ইফাজ ক কোথায়?(কাপাঁ কাপাঁ গলায়)

অহমির উপোরোক্তি কম্পিত গলার কথাগুলি শুনে আপন গতিতে মাথা নিচু করে নিলো সেহরিশ সে কি উত্তর দিবে বুঝতে পারছে না।
সেহরিশের মুখের এক্সপ্রেশন সুবিধা জনক মনে হচ্ছেনা অহমির কাছে।ঘনঘন নিশ্বাসের সাথে ঘনঘন পাপড়ি ফেলছে অহমি।

|২৪|
সেহরিশ দীর্ঘনিশ্বাস ত্যাগ করে বলে উঠলো

– অহমি আপনি এখন এসব কথা বাদ দিন আপনি অসুস্থ এখন রেস্ট নিন পড়ে সব আপনাকে খুলে বলবো।(বলেই সেহরিশ উঠে যেতে নিতে অহমি বলে উঠলো)

– কথা এড়াচ্ছেন কেন সেহরিশ বলুন ইফাজ কোথাও?

– যদি সত্যি জানতে চাও ইফাজ আর,,

চলবে,,

[কেমন হয়েছে জানাবেন গল্প হ্যাপি এন্ডিংই দিবো]
[পরবর্তী পর্ব রেসপন্সের উপর ভিত্তি করে]
[কার্টেসি ছাড়া কপি করা নিষেধ]

#Rubaita_Rimi(লেখিকা)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here