গল্পটা তোমারই পর্ব ৫

#গল্পটা_তোমারই
[৫ম পর্ব]

|১৪|
নিশ্চুপ হয়ে দাড়িয়ে আছে ইফাজ।সব কিছু যেনো তার সপ্নের মতো লাগছে।যেই রোদেলার জন্য এত কিছু করেছে সেই রোদেলাই তাকে আড়ালে ঠকাচ্ছে,ভাবতেই ইফাজের গায়েঁ কাটা দিয়ে উঠছেঁ।
ভালোই তো ছিলো ইফাজ অহমি মাঝখানে রুপের মোহে পড়ে অহমিকে ভুলে বুঝে রোদেলাকে নিজের করে পাওয়ার জন্য ইফাজ অহমির থাকে ঘৃন্য তম কাজ করলো।সমাজের চোখে ডিভোর্সি ও চরিত্রহীন মেয়ে নামে পরিচিত করে দিলো।
কিন্তু সত্যিই কি অহমি চরিত্রহীন নাকি সে!কথাটা ভাবতেই প্রতি মুহুর্তেই ভেংগে পড়ছে ইফাজ।
হয়তো কোন এক নিস্পাপ‌ মেয়েকে ঠকানোর শাস্তি দিচ্ছে নিয়তি তাকে।থমকানো চোখে রোদেলার দিকে তাকিয়ে আছে।রোদেলা হিংস্র চোখে ইফাজের দিকে তাকিয়ে আছে যেনো আজ তার আসল রুপ ইফাজের সামনে বেরিয়ে আসছে এই রাগে নিজেকে কন্ট্রোল করা তার পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাড়াচ্ছে।

– রোদেলা তোমার জন্য আমার আর অহমির পবিত্র সম্পর্ক অপবিত্র হয়েছে!একমাত্র তোমার কারনে ও সমাজের চোখে ডিভোর্সি,চরিত্রহীন মেয়ে হিসেবে পরিচিত হয়েছে এর জন্য আমি তোমাকে কখনোই ক্ষমা করবো না!(রাগ মিশ্রিত গলায়)

রোদেলা তাচ্ছিল্যের হেসে বলে উঠলো।

– ওহ্ আচ্ছা মি. ইফাজ মির্জা এখন সব আমার দোষ যেই আপনি আমার আসল রুপ দেখলেন অমনি বলতে শুরু করেছেন সব দোষ আমার।দোষ তো আপনার আপনি তো কোনসময় অহমির যোগ্যই ছিলেন না মানলাম আমি অহমি আর আপনার সম্পর্কটাকে সহ্য করতে পারতাম না ইভেন অহমিকেও না কারনটা জানেন কি কারনটা হলো আমি আপনায় ভালোবাসতাম।
কিন্তু আপনি সেই ভালোবাসার মর্যাদা দিন নি!(তাচ্ছিল্যের হেসে)

ইফাজ ধীর চোখে রোদেলার দিকে তাকালো।
রোদেলা দীর্ঘনিশ্বাস নিয়ে বলতে আবারো লাগলো।
– আমি শুধু চেয়েছিলাম আপনি আর অহমি আলাদা হয়ে যাক অহমি সমাজের চোখে খারাপ প্রমাণ হোক।পরিশেষে আপনিও কষ্ট পান আর দেখুন সব কিছু সেই মাফিকই হয়েছে আর বাকি রইলো অহমির মা না হওয়ার কথাটা,কথাটা তো সম্পূর্ণ মিথ্যা আমি যেই বললাম অহমি পরকীয়া করে সেই আপনি অন্ধের মতো অহমিকে ছাড়ার জন্য মিথ্যা মেডিকেল রিপোর্ট বানিয়ে রিজন হিসেবে দাড়া করলেন যে মা হতে পারবে না এমন মেয়েকে আমি আমার জীবনে চাই না!
আরে অহমি পরকীয়াতো দূরে কোনদিন কোন ছেলের দিকে তাকাও নি।

রোদেলার কথা শুনে ইফাজ ভ্রু কুচকে তার দিকে তাকালো রোদেলা ঠোঁট কামড়ে বলে উঠলো।

– সত্যিটাতো জানেনই না আমি আর অহমি বেস্টফ্রেন্ড।আমি আপনাকে ভালোবেসেছি আর আপনি অহমিকে এটা আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারেনি আপনি আমার ছাড়া অন্যকারো তাই প্ল্যান সাজিয়ে আলাদা করে দিলাম আপনাকে আর অহমিকে।(বলেই পাগলের মতো হাসতে লাগলো রোদেলা)

রোদেলার বোধগম্য হচ্ছে না যে এতে অহমির নিস্পাপ জীবনটা নষ্ট হয়ে যাবে।সে তর পাগলামীতেই সীমাবদ্ধ।ইফাজ আর শুনতে পারছে না মোহে পড়ে অহমির সাথে সম্পর্কে ছিন্ন করে দিলো কেবলমাত্র মিথ্যা পরকীয়া কথার শুনে,মোহে।

|১৫|
– মনিমা তুমি জানো আমার বেষ্টু রোদ অনেক ভালো জানো প্রতি বছরের আমাদের বার্ড ডেতে আমরা অনেক মজা করতাম লুকিয়ে সবাই পচাঁ ডিম সাথে আটা’র গুড়ি আনতাম তারপর সুযোগ বুঝে রোদের মাথায় ফাটিয়ে আটা’র গুড়ি ঢেলে একেবারের চুলে,মুখে মাখিয়ে পেত্নী বানিয়ে দিলাম।(খিলখিল করে হাসতে হাসতে)
মিসেস রিহিয়া মিটি হাসলেন।এ কয়েকদিনে মেয়েটাকে তার বড্ড আপন লাগে।মনে হয়ে একদম নিজের মেয়ের মতো।মিসেস রিহিয়া অহমির মাথায় হাত বুলিয়ে বলে উঠলেন।

– তুই তো দেখছি ভারি দুষ্টু তোর বিয়ের পর তোর হাসবেন্ডের কি যে অবস্থা হবে।তবে তোর হাসবেন্ড হাজারো লোকের মধ্যে লাকি হবে তোর মতো দুষ্টু,মিষ্টি মেয়েকে বিয়ে করে!(হালকা হেসে)

মিসেস রিহিয়ার কথা শুনে মাথা নিচু করে নিলো অহমি।তার জীবনটায় যে তাচ্ছিল্যেতে ঘেরা।অহমি কি করে বলবে সে অপয়া,অলক্ষি সে কখনোই মা হতে পারবে না কখনো মাতৃত্বের স্বাদ‌ নিতে পারবে না।
অহমির চোখের কোণায় পানি চিকচিক করে উঠলো।আজ যদি ইফাজ এমনটা না করতো তাহলে তাদেরও তো একটা সুন্দর সংসার হতো।
ইফাজের সাথে যখন অহমির বিয়ে হয়েছে তখন থেকেই অহমি মনে মনে ছোট্ট একটা সপ্নে বুনে নিয়েছে।যেখান সে ইফাজ,ছোট্ট একটা ঘর একটা কিউট বিড়াল সাথে তাদের ছোট্ট প্রিন্সেস।কিন্তু ভাগ্য যে বেগতিক নিমিষেই একটা ঝড়ে অহমির জীবনটা উলোট-পালোট হয়ে গেছে।
অহমি আড়ালে মিসেস রিহিয়ার থেকে চোখের জল মুছে নিলো।
মিসেস রিহিয়া অহমির চোখে পানি দেখতে পেয়ে ভ্রু কুচকে বলে উঠলেন।

– অহু তুই কাদঁছিস!
অহমি চমকে‌ উঠলো।হাসার নাটক করে আমতা আমতা করে বলে উঠলো।

– ক ক কই নাতো চোখে কি জানি এক একটা প পড়েছে তাই চ চোখের জল বেড়িয়েগেছে!(হাসার নাটক করে)

এতক্ষন দরজায় হেলান দিয়ে দাড়িয়ে ছিলো সেহরিশ।অহমির মিথ্যা কষ্ট লুকানোর কৌশল দেখে ঠোঁট চেপে মিটি হাসলো।আসলেই মেয়ে মানুষ এমনি সবার সামনে যতই স্ট্রং থাকার চেষ্টা করুক না কেন দিন শেষে শেষ রাত অব্দি কান্নাই তাদের রাতের বন্ধু।
সেহরিশ দীর্ঘনিশ্বাস ফেলল।নিঃশব্দে নিজের রুমের দিকে চলে গেলো।

|১৬|
– অহমি আর কতো মিথ্যা কষ্ট লুকানোর চেষ্টা করবেন!দেখুন সময়তো আর থেমে থাকেনা কারো জন্য!আপনি চাইলেই আপনার জীবমটা আবারো নতুন করে সাজিয়ে নিতে পারেন।শুধু শুধু প্রতিরাতে এভাবে একটা ঠকলোকের জন্য কান্না করে কোন লাভ হবে না!(নির্লিপ্ত গলায়)
সেহরিশের কথায় কান্নারত ভেজা চোখে সেহরিশের দিকে তাকালো অহমি।এরপর চোখের জল ‌মুছে নিজেকের স্বাভাবিক করার ব্যর্থ চেষ্টা করলো।এতে রাতে সেহরিশের এমন কথায় দ্বিধায় পড়লো অহমি আমতা আমতা করে কম্পিত গলায় বলল

– স সেহরিশ আপ আপনি এত রাতে আম্ আমার রুমে কি করছেন!আর আর এ এইসব ক কথায় কোন মা মানেই নেই(কম্পিত গলায়!)
অহমি’র কথা শুনে ঠোঁট কামড়ে খানিকঞা হেসে বলে উঠলো।

– প্রতিরাতে এভাবে নিঃশব্দে কান্না করাটাও বেমানান আপনি চাইলেও জীবনটাকে অন্য রকম ভাবে শুরু করতে পারেন আপনি ভুল যান ইফাজকে!(ঠোঁট কামড়ে হেসে)
অহমি এখনো নিঃশব্দে কান্না করছে।জীবনে প্রথম ভালোবাসা ছিলো ইফাজ এত সহজে কি করে সে ইফাজকে ভুলে যাবে। যেই সে ইফাজকে ছাড়া বাচার কল্পনা করতে পারতো না সেই সে ইফাজকে ভুলে যাবার কথা বলছে।
অহমিকে চুপ থাকতে দেখে সেহরিশ মুচকি হেসে রুম ত্যাগ করলো।
___________________________
অতি মোহে
প্রেমিক মরে,,
কথাটার সাথথ ইফাজের কাহিনী পুরো মিলে যাচ্ছে।মোহর জন্য বেষ্টটাকে হারিয়েছে সে।এককথায় দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম বোঝেনি‌ কিন্তু এখন তা হারে হারে বুঝতে পারছে
ল্যাম্পপোষ্টের হালকা আলোয় বেঞ্চে মাথা নিচু করে বসে আছে ইফাজ।চোখ বেয়ে হাজারো কষ্ট কান্নার অশ্রু বিসর্জিত হচ্ছে।
নিয়তি তাকে তার করা অন্যায়ের শাস্তি দিচ্ছে।
ইফাজ সব হাড়িয়ে এখন খুব করে অহমিকে পাশে চাইছে কিন্তু যা আর কখনোই‌ সম্ভব না কারন আজ অহমির চোখে ইফাজ তার জন্য স্পর্ষ্ট ঘৃনা,রাগ,অভিমান দেখতে পাচ্ছে যা কখনোই ফুরানোর না।
ইফাজের বারবার অহমির কান্নামাখা চেহারা টা মনে পড়ছে। তার জন্য একয়েকদিনে মেয়েটাকে কত কিনা সহ্য করতে হয়েছে শুধু তার জন্য।
ইফাজ পারছেনা এখন চিৎকার করে কাদঁতে কিন্তু ছেলেদের কাদঁতে নেই।ইফাজের হাত এখন কিছু করার নেই বড্ড দেরি করে ফেলেছে সে অহমি নামক গল্পটাকে হাড়িয়ে ফেলেছে জীবনের পৃষ্ঠা থেকে।

জীবনটাকে বর্তমানে ঘৃনিত মনে হচ্ছে।ইফাজের মন চাচ্ছে মরে যেতে কিন্তু বাবা-মায়ের কথা ভেবে তাও পারছে না ইফাজ নিরুপায় অনেক নিরুপায়।
নিয়তির একেকটা নিয়ম যে তাকে মেনে চলতেই হবে। সে যেমন কর্ম করেছে তাই সে রির্টান গিফট হিসেবে ফিরে পাচ্ছে।
নিজেকে তুচ্ছ মনে হচ্ছে ইফাজের।

চলবে,,
[আপনারা কি চান‌ ইফাজ অহমিকে মিলিয়ে দিতে নাকি সেহরিশ অহমিকে মিলিয়ে দিতে]
[পরবর্তী পর্ব রেসপন্সের উপর ভিত্তি করে]
[কার্টেসি ছাড়া কপি করা নিষেধ!]

#Rubaita_Rimi(লেখিকা)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here