গল্পটা_আমারই পর্ব : ১৮

0
291

#গল্পটা_আমারই

পর্ব : ১৮
(সুরমা)

লাইট অফ করে শুয়ে ছিলাম। হঠাৎ আম্মু এসে লাইট অন করে। হঠাৎ লাইটের আলোয় আমি উঠে বসি। আমার দুটো চোখ রাগে জলজল করছে। লাইটের আলোটা আমার সহ্য হয়না।

কান্না করে চোখ গুলো ফোলিয়ে ফেলেছি। এখন আর চোখ গুলো বড়বড় দেখায় না। এখন চোখ গুলো ছোট হয়ে গেছে। আমি রাগে বললাম,,,,

-লাইট অন করেছো কেন? আমার ভালো লাগে না। আর তুমিই বা আমার রুমে কেন?
-এভাবে বলছিস কেন? আর ইদানীং তুই এমন রাফ বিহেব করিস কেন?

– আমার কাছে আসো কেন? না আসলেই তো আমার রাফ বিহেব শোনতে হয়না। আম্মু আমার পাশে বসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,,,,

– কি হয়েছে তোর? আমাকে বল। কেন সব সময় এমন আচরণ করিস? কি হয়েছে তোর?
– আমার কিছু হয়নি। শুধু আমাকে একা থাকতে দাও। কেউ আসবে না আমার কাছে।

– একটু পরতো চলেই যাবি আমাদের ছেড়ে। এইটুকু সময় তাকি। তোকে নাহয় আজকে একটু ডিস্টার্ব করি । আর কখনওতো ডিস্টার্ব করার সুযোগ পাবো না। আম্মুর চোখে পানি। আমি আম্মুর দিকে চেয়ে দেখলাম আম্মু অসহায় হয়ে আছে। আমার কান্না আর বাঁধা মানলো না। আমি আম্মুকে জড়িয়ে ধরে হো হো করে কেঁদে দিলাম।

কষ্টে আমার বুক ফেটে যাচ্ছে। এতো কষ্ট কেন জীবনে? মনে মনে বললাম, হে প্রভু তুমি আমাকে তোমার কাছে নিয়ে যাও। আমার যে আর সহ্য হচ্ছে না।

অর্ণবের সাথে আমার ব্রেকাপ হওয়ার পর থেকেই আমি কারণে অকারণে আম্মু আব্বুর সাথে খারাপ ব্যবহার করি। যদিও আমার আর অর্ণবের রিলেশন নষ্ট হওয়ার পেছনে আব্বু আম্মুর হাত নেই। বরং আমার ফ্যামিলির সবাই অর্ণবকে মেনে নিয়েছিল।

অর্ণবকে আমি কতোটা চাইতাম সেটা শুধু আমিই জানি । কখনও চিন্তা করি নি আমার জীবনে এতো কষ্টের একটা দিন আসবে। অর্ণবের জন্য এতোটা আঘাত পেতে হবে।

আমাদের প্রেমকাহিনী ভালোই চলছিল। অর্ণবের সাথে আমার রিলেশনের তিন বছর পূর্ণ হয়েছিল। এর মাঝে কোনদিনও আমাদের মাঝে ঝগড়া হয় নি। অর্ণব আমার সব আবদার পূরণ করতো। আমার আবদার মাত্রাতিরিক্ত কোনো বিষয় ছিল না। আমার আবদার ছিল অর্ণবের ভালোবাসায়। আমি শুধু ওর ভালোবাসা পেতে চাইতাম। ওকে কাছে পেতে চাইতাম।

সবে মাত্র আমার পরীক্ষা শেষ হয়েছিল। একদিন আব্বু বাসা থেকে আমাকে কল করে। আমি তখন ঢাকায়। আমি আর তন্বী আপু কথা বলছি। তখনেই আব্বুর কল। আমি ফোনটা রিসিভ করি। আব্বু বলে,,,,

– হ্যালো মামনি। কেমন আছো?
– আব্বু আমি ভালো আছি। তোমরা কেমন আছো?
– আমরাও ভালো আছি মামনি। কি করছো তুমি?

– কিছু না। শোয়ে আছি। আম্মু কেমন আছে?
– তোমার আম্মুও ভালো আছে। তুমি আজকে ব্যাগ গুছিয়ে রাখো। কাল বাসায় রওনা দিবে। আমি আব্বুর কথা শোনে বেশ অবাক হলাম।

আব্বু আমাকে কোনদিন এভাবে বাসায় যেতে বলে না। আমি শোয়া থেকে উঠে বসে বললাম,,,,,
– কেন? কি হয়েছে? সব ঠিক আছে তো? আমার কথা শোনে আব্বু হেসে বলেন,,,

– সব ঠিক আছে। তোমার পরীক্ষা তো এখন শেষ। এখন ঢাকায় কি করবা? তাছাড়া অনেকদিন হলো তুমি বাসায় আসো না। তাই বললাম। আব্বুর কথায় আমি স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বললাম,,,

– অহ! আচ্ছা তাহলে আমি দুদিন পর আসি।
– দুদিন পর কেন? কালেই আসো।
– আব্বু এখানের সব কিছু তো গুছিয়ে আসতে হবে। বললেই আসা যায় না।

– আজ রাতের মধ্যে সব গুছিয়ে সকাল ৮টায় রওনা দিবা। কাল তোমার বাসায় আসাটা ইম্পরট্যান্ট। আমার কেমন অদ্ভুত লাগছিল সব কিছু। এভাবে কখনও আব্বু বলে না। আমি বললাম,,,

– আচ্ছা আমি দেখছি।
– দেখছি না। আসতেই হবে। আব্বু ফোন কেটে দিলে আমি চুপ করে বসে থাকি। কি হচ্ছে কিছুই আমার মাথায় ঢুকছে না। তন্বী আপু বলে,,,

– কিরে, তোর আবার কি হলো। এভাবে আবুল হয়ে আছিস কেন?
– আব্বু কল করেছিল। কাল বাসায় যেতে বলেছে।

– তো এভাবে বসে থাকার কি হলো? তুইতো অনেকদিন হলো বাসায় যাস না। এখন তো পড়াশোনাও নাই। যা গিয়ে ঘুরে আয়।
– কিন্তু আপু অর্ণব?
– অর্ণব কি?

– ওকে তো বলা হয়নি। ওর তো কাল এক্সাম। ফোনটা বন্ধ করে রেখেছে। কাল ১টার আগে ওকে ফোনেও পাওয়া যাবে না।

– পরে বলিস। ওও কিছু বলবে না। আমি মুখটা কাঁচুমাচু করে বললাম,,,,,

– ওকে তো লাস্ট একবার দেখেও যেতে পারবো না। আবার কখন আসি। কখন দেখা হয়। আমার কথা শোনে তন্বী আপু শোয়া থেকে উঠে বসে চোখ মার্বেলের মতো করে বলে,,,,,,

– ওরে প্রেম রে। রাস্তা দিয়ে তো ভিডিও কলে কথা বলে বলে যাবি। আবার বলছিস কবে দেখা হবে। আল্লাহ তোদের এতো প্রেম কই থেকে আসে? সারাদিন দেখি দুটো প্রেম করেই যাচ্ছিস। ইদানীং খেয়াল করছি অর্ণবও চেঞ্জ হয়ে গেছে।

যে ছেলে পড়াশোনা ছাড়া কিছু বুঝতো না সেই ছেলে এখন পড়াশোনা বাদ দিয়ে প্রেম প্রেম পাগলামি করে অল টাইম। আর তুই, তোর কথা কি বলবো । যখন প্রথম আমার রুমে এসেছিলি তখন দেখতাম ছেলেদের সহ্যই করতে পারিস না। আর এখন, আল্লাহ, সারাদিনে তোর সাথে কথা বলার চান্স পাইনা। আমি অসহায় হয়ে বললাম,,,,

– আপু, আমরা এতো প্রেম করি কই? আমার ইচ্ছে করে অর্ণবের সাথে সারাদিনরাত কথা বলি। কিন্তু,,,

– ওরে কে আছিস আমায় ধর। কি বলছিস? এক কাজ কর। তুই অর্ণবের ভেতরে ঢুকে যা। আর অর্ণবকে তোর ভেতরে ঢুকিয়ে ফেল। তাহলে কেউ কাউকে ছাড়া এক সেকেন্ডও থাকতে হবে না।

– আপু, আমি বিয়ে করে ফেলতে চাই। কিন্তু অর্ণবতো বিয়ের কথা শোনতেই পারে না।
– করে ফেল। অর্ণবকে জাদু করে ফেল। যাতে বিয়েতে রাজি হয়ে যায়।
– কি সব বলো।

– হো, যেভাবে পারিস বিয়ে কর। না হলে এই চিন্তায় তুই একদিন স্টোক করবি। আমি আপুর দিকে চোখ বড়বড় করে তাকালাম। আপু বলে,,,,

– বিশ্বাস কর, আমি আজ পর্যন্ত তোর মতো একটা মেয়েও দেখিনা। তুই অর্ণবকে এতো এতো ভালোবাসিস। তোর মতো একটা লক্ষ্মী মেয়েকে কেউ ভালো না বেসে পারে? অর্ণব খুব লাকি তোর মতো একজনকে জীবন সঙ্গী হিসাবে পাবে।

পরদিন আমি ৮টার বাসে বাসায় রওনা দিলাম। অর্ণবকে বলা হয়নি। কিন্তু আব্বুর কথা ফেলাও সম্ভব হচ্ছে না। আব্বু আমাকে প্রচুর ভালোবাসে। আমি দুনিয়ার সব কিছু অগ্রাহ্য করলেও আব্বুর কথা ফেলতে পারিনা। আব্বু আমার সব আবদার রাখে। আমার জীবনের প্রথম ভালোবাসার পুরুষ আমার বাবা, আর শেষ ভালোবাসা আমার বাচ্চার বাবা। মানে, আমার প্রিয়তমেষু। অর্ণব। দুজন মানুষ আমার দুটো কিডনি।

বাসায় এসে দেখি এলাহি কাণ্ড। চলছে রান্নার আয়োজন। আমি অবাক হলাম। আমি বাসায় আসার উপলক্ষে এতো আয়োজন? আগেও তো কতবার আসছি।

এতো আয়োজনতো কখনও হয়নি। আমি খাবারের গন্ধে মাতাল হয়ে যাচ্ছি। আহ! বিরিয়ানি, ইলিশ ভাজা, মাংস আরো কত কি। আমি ব্যাগটা ডয়িং রুমে রেখে ডাইনিং টেবিল থেকে একটা ইলিশ মাছের বড় পেটি নিয়ে খেতে খেতে রান্নাঘরে চলে গেলাম। আম্মু আরো কি কি রান্না করছেন।

আমি আম্মুকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললাম,,,,
– ইয়াম্মি। এতো এতো খাবার? আহ! আমার জন্য এতো কিছু আগে বলনি কেন? তাহলে গতকাল থেকে খাওয়া বন্ধ করে দিতাম। আমার কথা শোনে আম্মু হাসতে লাগলো। পেছন থেকে আমার ভাই বলে,,,,

– আপু, এতো খাবার তোর জন্য না। তোর শ্বশুর বাড়ির লোকজনদের জন্য। দিপ্তর কথা শোনে আমি হা হয়ে গেলাম। মুখে মাত্রই দেওয়া মাছ ভাজিটা। আমি আম্মুকে ছেড়ে দিয়ে আমতা আমতা করে বললাম,,,,

– কার জন্য?
– তোর শ্বশুর বাড়ির লোকজনদের জন্য। আজকে তোকে দেখতে আসবে। এই জন্যতো আব্বু তোকে ইমারজেন্সি আসতে বললো।

দিপ্তর কথায় এবার আমার হাত থেকে মাছ ভাজিটা ফ্লোরে পড়ে যায়। আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। আমি এসব কি শোনছি? আমি কি সব ঠিক শোনছি? নাকি ভুল? ভুল হলে ভালো। আমার শরীর অসাড় হয়ে আসছে। মাথা ঝিমঝিম করছে। চারপাশের সব কিছু অন্ধকার দেখছি।

চলবে——–

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here