#গোধুলীর_শেষ_প্রহরে
#পর্বঃ৯
#রাউফুন (ছদ্মনাম)
‘আই লাভ ইউ কুহুলতা মেম’
‘হোয়াট?আর ইউ ক্র্যাজি ম্যান?হাউ ডেয়ার ইউ ট্যাল ইউর টিচার!হাউ ইউ ডোন্ট হ্যাভ অ্যানি কোমপ্যানিওন্স হাহ্?’
শৈবাল আব্দুল্লাহ স্যার এর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো তার কথায়।এই চাহনিতে আব্দুল্লাহ স্যার কিছু টা চুপসে গেলেন।আস্তে আস্তে বিড়বিড় করলেন,”বে’য়া’দব একটা”। সজল স্যার, নুর মোহাম্মদ স্যার পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছেন।রেখা মেম আশ্চর্য হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।তার অবাক হওয়া টা অস্বাভাবিক কিছুই না।তিনি কিছুই বুঝতে পারছে না ঠিক কি হতে যাচ্ছে বা হবে।
কুহু রেস্টুরেন্টের আশেপাশে তাকালো।সব লোক জন তাদের দিকেই তাকিয়ে আছে।দাঁতে দাঁত চেপে কিড়মিড় করছে সে।এই ছেলেটা কে সে প্রায়ই দেখে তাকে আড়াল থেকে দেখে।ক্লাস নেওয়ার সময় তার দিকে ভে’ব’লা’র মতো তাকিয়ে থাকে।সেদিনই তো ইংরেজি একটা ডেফিনেশন ধরেছিলো পারেনি ছেলেটা।শুধুই তাকিয়ে ছিলো সে সময়।যদিও যে বিষয় টা নিয়ে ধরেছিলো সেটা পড়াই ছিলো না।তবুও ইংরেজি নিয়ে অনার্স করতে আসা ছেলে কিনা এই সামান্য বিষয় পারলো না।অনার্স ফাইনাল ইয়ারের এরকম গা’ধা ছেলেটা কিনা তাকে প্রপোজ করছে।তাকে আড়ালে লুকিয়ে চুরিয়ে দেখে ছেলেটা কিন্তু কিছুই বলে না কুহু।কিন্তু আজ একেবারে তাকে ফলো করে এই অব্দি চলে এসেছে।সহ্যের সীমা লংঘন করে ফেলেছে ছেলেটা।এই অব্দি এসেছে ঠিক আছে কিন্তু তাই বলে সবার সামনে তাকে এইভাবে প্রপোজ করবে।ল’জ্জা’য় তার মা’থা কা’টা যাচ্ছে সবার সামনে।এর একটা বিহিত করতেই হবে তাকে।
শৈবালের চোখ জ্বলজ্বল করছিলো কুহুলতাকে দেখে।সে এসেছিলো এখান থেকে খাবার কিনতে।বাসায় ঢুকার সময় তার কানে এসেছে তার ভাই ওই মহিলা টাকে(সাহিরা) বলছে, ‘মা আজকে আপনার হাতে ফিরনী খাবো!’ শৈবাল ভাবলো আজকে সে বেস্ট রেস্টুরেন্ট থেকে তার ভাইয়ের জন্য ফিরনী কিনে নিয়ে যাবে।সেটাও সাহিরা বেগমের আগেই।তাই সে এখানে এসেছে ফিরনী কিনতে।কিন্তু এখানে এসেই তার নজর পরে কুহুলতার দিকে। এক মুহুর্তের জন্য সে থমকে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছিলো কুহুলতার আজকের রুপ দেখে।এতো দিন বুঝতে না পারলেও আজ ঠিকই বুঝেছে যে কুহুলতাকে ছাড়া আর তার চলবে না।কুহুলতাকে আজ শাড়ীতে দেখে সে উম্মাদ হয়ে গেছে।মনের ভেতরে সৃষ্টি হয়েছে তোলপাড়।এই রুপে বিমূর্ত হয়েছে তার হৃদয়।মনের মধ্যে অজানা ঝড়ের আভাস পাচ্ছে সে।আজ যদি সে কুহুলতাকে না বলে তবে যেনো সে আর বাঁঁচবে না।শৈবাল জোরে শ্বাস ফেলে এগিয়ে এলো কুহুর দিকে,
‘তুমি জানো কুহুলতা মেম? এই শৈবাল গত দুই মাসে কোনো একজনও মেয়েকে টি’জ করেনি।ভার্সিটিতে র্যা’গ করেনি একটিও মেয়েকে।একটিও মেয়ের দিকে তাকাইনি।ফেসবুকে একটা মেয়ের সাথেও ম্যাসেজ করেনি।একটাও মেয়ের কথা তার মাথায় আসে নি।একটাও মেয়ের কাছে সে কোনো রকম নে’শা খুঁজে পাইনি।কেন জানো, কেন?’
বিবর্ণ,বিচরণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে কুহু শৈবালের দিকে।তারা মুভি দেখে একটা রেস্টুরেন্টে বসেছিলো।অপেক্ষা করছিলো খাবারের।খাবার আসার পর কাবাবে সবে মাত্র একটা বাইট বসিয়েছে কুহু।তখনই শৈবাল কোথা থেকে যেনো উদয় হলো।সবাই এখন শিটিয়ে রইলেও অনড় ছিলো শুধুই কুহু,কুহুলতা।যার সুন্দর চোখের বিচক্ষণ দৃষ্টি দেখেই মানুষ ভীত হয়ে পরে।সেখানে শৈবাল কতটা অবিরাম অন্তহীন ভাবে তাকে সবার সামনে প্রপোজাল দিচ্ছে।কোনো এক কারণে ঘেন্নাই মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে কুহু।কিন্তু একটাও শব্দ মুখ থেকে বের করেনি।বরং অবিচ্ছেদ্য ভাবে বিষয় টাকে নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে।ঠিক তখনই আবার শৈবাল তার হাত ধরে বলে,
‘বিকজ অফ ইউ মেম।শুধুই তুমি।সেদিন তোমাকে দেখার পর থেকে আমার একটা মুহুর্তও শান্তি তে কাটেনি।তোমার সেই রাগী চোখের ধা’রা’লো চাহনি আমাকে দিন দিন পা’গ’ল করে তুলেছে।তোমার অভিনব,মধুর কন্ঠ বার বার আমাকে,আমার হৃদয়কে অশান্ত করেছে।তোমাকে আড়াল থেকে রোজ দেখা।তোমার প্রতিটি পদক্ষেপ আমাকে অদ্ভুত ভাবে দগ্ধ, অধৈর্য করে তুলেছে।আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।তুমি বিহীন আমি মরে যাচ্ছি মেম।এক মাত্র তুমিই পারো আমাকে দম দিতে।আমাকে বাঁচাতে।’
কুহু এক দিকে লজ্জিত হতে হচ্ছে সব স্যার দের সামনে আর একদিকে মনে মনে ক্রুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে।কিন্তু এবার সে শান্ত শীতল কণ্ঠে বলে,
‘ডীড ইউ নো দ্যাট ইউ উইল’বি ইয়াঙ্গার দ্যান আই এম? অলসো আ’ম ইউর টিচার এন্ড ডোন্ট ইউ ফরগেট দ্যাট ওকে!’
শৈবাল এক বারের জন্য এই কথাটি ভাবে নি কুহুর ওর চেয়ে বয়স বেশি হতে পারে।কুহুর বয়স ওর থেকে বেশি হলেও ওর কিছু যায় আসে না।কুহুকে ওর চাই ই চাই।এমন একটা বাসনা তার মাঝে বিরাজমান।সে চাইলেও কুহুকে নিজের মন মস্তিষ্ক থেকে সরাতে সক্ষম হয়নি।এতো মেয়ের সঙ্গে সে প্রেমের নাটক করেছে কোনো দিন কারোর জন্য সে এতোটা সেন্সিটিভ হয়নি সে।যতটা কুহুকে প্রথম দেখায় তার মনে হয়েছিলো অন্য কোনো মেয়েকে দেখেই তার এমন টা হয়নি।সে এই মেয়েটির প্রেমে পরেছে নিজের অজান্তেই।আর শৈবাল একবার যাকে চাই তাকে পেয়েই ছাড়ে।তাকে নিজের করবেই সে।করবেই করবে।সে মুচকি হেসে বলে,
‘আমার কোনো সমস্যা নেই মেম।তোমার বয়স,তুমি আমার সম্পর্কে কি?তুমি আমার ভার্সিটির শিক্ষিকা এসব কিচ্ছু ম্যাটার করে না মেম। তোমাকে ভালোবাসি আমি এটাই ম্যাটার করে।ভালোবাসার কাছে বয়স, সম্পর্ক ম্যাটার করে না মেম!’
‘মেম বলছো আবার তুমিও বলছো?লজ্জা করছে না?’
‘না মেম লজ্জা করছে না।কারণ টা তোমাকে বললামই একটু আগে নাকি আবার শুনতে চাচ্ছো কথাটা?’
‘জাষ্ট শাট-আপ শৈবাল।এখানে সবাই আমাদের কে দেখছে।তুমি আমাকে মেমের নজরে না দেখলেও আমি তোমাকে ছাত্রের নজরেই দেখি।’
সব স্যার সহ রেখা মেম অবাক হয়ে সব টা দেখছে।এ যেনো বিনা টিকিটে সিনেমা চলছে।হা করে সবাই দেখছে ওঁদের কে।শৈবাল অনুনয় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে কুহুর দিকে।কুহু চাইলো হাত টা এক ঝটকায় ছাড়িয়ে নিতে।কিন্তু হঠাৎ তার নজর পরলো তার সামনের কয়েকটি টেবিল আগে একজন পুরুষের দিকে।তার দিকেই তাকিয়ে আছে সে।কুহু ভাবতেও পারেনি এই মানুষ টা এখানে থাকতে পারে।চেয়েও সে হাত টা ছাড়িয়ে নিলো না কিছু একটা ভেবে।
এদিকে একই রেস্টুরেন্টের ঠিক কোণের একটা টেবিলে বসে আছে তৌহিদ।তার অফিসের বসের সঙ্গে একটা গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ের জন্য সে এই রেস্টুরেন্টে এসেছে।আসার পর পরই সে কুহুকে দেখেছে। আড় চোখে তাকিয়েছে বহু বার এর মধ্যেই।নিজেকে আড়াল করছিলো সে যাতে কুহুলতার নজরে সে না পরে।কিন্তু হঠাৎ শৈবাল কোথা থেকে যেনো আসলো।শৈবাল কে দেখেই পুরনো রাগ মাথা চা’ড়া দিয়ে উঠলো তার।কিন্তু কিছুক্ষন পরেই কুহুর হাত ধরে কখন থেকে কি যেনো বলছে শৈবাল।মিটিং এ তার মন নেই।না চাইতেও বার বার দৃষ্টি চলে যাচ্ছিলো সেদিকে। আর কুহুলতাই বা কেমন একটা ছেলে ওর হাত ধরবে আর ও কিছুই বলবে না।ওঁদের দুজন কে এক সাথে ওইভাবে দেখে তৌহিদের গা জ্বলে যাচ্ছে।কিন্তু কি ই বা করতে পারে ও। যেখানে কুহুলতা নিজেই শৈবাল কে প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে সেখানে ওই নোং’রা ছেলেটা তো সুযোগ নেবেই।সব টা দেখে ওর চোখে জল এসে যায়।হতে পারে শৈবাল খুব স্মার্ট কিন্তু ও তো ওঁকে সত্যিই ভালোবাসে না যেরকম ওঁ কুহুকে*।আর ভাবলো না সে।নিজের মনের বিরুদ্ধে গিয়ে সে মনোযোগ দিলো মিটিংয়ে।আর একটিবারের জন্যও তাকাইনি সে সামনের দিকে।ভুলেও না।
কুহু দুর্বোধ্য হাসলো।তারপর শৈবালের মুখের দিকে আঙ্গুল গোল করে ঘুরিয়ে বলে,
‘দিস ফেইস অফ ইউরস উইল নট সো মি এনিমোর।আই থিংক ইউ হ্যাভ মিস-আন্ডারস্টুড ম্যান!’
কুহুর সেই হাসিতেও শৈবাল কি যেনো মাদকতা খুজে পেলো। মুগ্ধ হয়ে দেখছে সে কুহুকে।কুহু হাত টা ফট করে ছাড়িয়ে নিলো শৈবাল এর থেকে।স্যার দের থেকে ইশারায় বিদায় নিলো সে।বেরিয়ে এলো রেস্টুরেন্ট থেকে।এ যেনো জু’তো মেরে গেলো কুহু শৈবালকে।শৈবাল অপমানিত হলো।তবুও কুহুকে যতক্ষণ দেখা গেলো সে তাকিয়েই রইলো।চোখের কোণে অশ্রু কণারা খেলা করলেও তা বৃদ্ধা আঙ্গুল দিয়ে মুছে নিলো সে।
শৈবাল বিরবির করে আওড়ালো,
‘আজ না হয় কাল আমি তোমাকে নিজের করেই ছাড়বো মেম।দেখে নিও তুমি।শাহরিয়ার শৈবাল যেটা চাই সেটা পাই।পেয়েছে আর ভবিষ্যতেও পাবে।’
•
মুহু আর তানহা ফিরছিলো ভার্সিটি থেকে।মুহু সাইকেল চালাচ্ছিলো।তানহা পিছনে বসেছে।যদিও মুহুর ডাবলিং করার অভ্যাস রয়েছে।তবুও আস্তে আস্তে চালাচ্ছে সে সাইকেল।তানহা কিছুদূর যেতেই থামলো।সাইকেল থেকে নেমে বলে,
‘এই মুহু আমি বুঝতে পারছি তোর খুব কষ্ট হচ্ছে।আমরা হেটেই যাচ্ছি চল।গল্প করতে করতে ঠিক চলে যাবো।’
মুহু মনে মনে খুশিই হলো।যাক তানহা অন্তত তার সঙ্গে গল্প করার আগ্রহ তো দেখালো।সে খুশিতে বলে,
‘ঠিক আছে তাই হবে জানুউ!আজকে তবে গল্প করতে করতেই যাওয়া যাক।’
ওরা গল্প করতে করতে আসছিলো।যদিও তানহা তেমন কোনো গল্প করেনি।সব কথায় একের পর এক মুহু বলে যাচ্ছে।সে সারাফের সঙ্গে দেখা হওয়া থেকে শুরু করে ওঁ যে সম্পর্কে ওর খালাতো ভাই হয় সে সব কিছুই বললো।তানহা চুপচাপ শুনছিলো সব কথা।সে ভেতর থেকে চাইছে স্বাভাবিক হতে কিন্তু পারছে না।আমাদের জীবনে এমন কিছু তিক্ত সত্য থাকে যেখান থেকে চাইলেও বেরোনো টা সহজ হয় না।তানহার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।
হুট করেই সেসময় শিশির ওদের সামনে এসে দাঁড়িয়ে পরলো।তানহা ঠিক এই ভয় টাই পাচ্ছিলো।ভার্সিটিতে ক্লাস করার সময় ভয়ে ভয়ে ছিলো।না জানি কখন এই ছেলে গুলো আবার তাকে দেখে ডিস্টার্ব করতে চলে আসে।পেছনে পেছনে দাঁত কে’লি’য়ে দাঁড়িয়ে ছিলো আশিক, মোর্শেদ।রিমন এখনো ভার্সিটির ভেতরে কিছু একটা করছে।ওঁদের পাশ কাটিয়ে চলে আসছিলো মুহু আর তানহা।কিন্তু না ওরা সমানে বাজে কথা বলেই যাচ্ছিলো।চুল ধরে টানছিলো।এক সময় শক্ত করে তানহার হাত ধরে গাড়ির দিকে নিয়ে যেতে চাইলো।তানহা চিৎকার করে উঠলো।কান্নারা ঠিকরে গড়িয়ে পরছিলো চোখ থেকে।
শিশির লালসার দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
‘আজকে তোকে কে বাঁচাবে।সেদিন তোর ভাই না হয় তোকে বাঁচিয়ে দিয়েছিলো কিন্তু আজ কে তোকে কেউ বাঁচাতে পারবে না।তোর উপর নজর পরেছে যখন তোকে একবার হলেও ছুয়ে দেখবোই।’
তানহা হাত মুচড়ে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে।কিন্তু পারছে না।আশিক কুটিল হেসে এবার মুহুর দিকে তাকালো।মুহুকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,
‘কি রে মামা দেখ এই মা’ল টাও কিন্তু সেই জোস রে।কি চেহেরা দেখেছিস।আজকে এক সাথে দুটোকে পেয়েছি।মজা হবেরে ভীষণ মজা হবে হিহিহিহি।’
মুহু তানহার এই অবস্থা দেখে ভীষণ ক্ষেপে গেলো।রাগে ব্যাগ থেকে লংকা গুড়ো বের করলো সে।
আশিক আর শিশির তানহাকে নিয়ে গাড়িতে তুলতে যাচ্ছিলো।ঠিক তখনই ঝড়ের বেগে মুহু এসে ওদের মুখ বরাবর লংকা গুড়ো ছিটিয়ে দিলো।শিশির নিচু হওয়াই আশিক
আর মোর্শেদের চোখে মুখে লংকা গুড়ো লাগলো।
শিশির রাগে ফেটে পরলো।তানহা কে ছেড়ে তেড়ে এলো মুহুর দিকে।মুহুর হাতে তখনও লংকা গুড়ো ছিলো।রাস্তায় লোক জনের সমাগম কম থাকে দুপুরের দিকে এই সময়।তাই সুযোগ টা পেয়েছে ওরা।মুহু লংকা গুড়ো আবার ছেটানোর আগেই শিশির ওর হাত চেপে ধরলো।জোর করে গাড়িতে তুলতে যাচ্ছিলো তখনই একটা শক্ত পুরুষালি হাত টেনে ধরলো মুহুর হাত।শিশির রক্ত লাল চোখে তাকালো বাধা পেতেই।মুহু কাঙ্ক্ষিত ব্যাক্তিটিকে দেখেই হাত ঝামটা দিয়ে ছাড়িয়ে নিয়ে তানহাকে আগলালো বুকের মধ্যে।কাঁপছে দুই তরুণী একাধারে।ভীষণ ভাবে ঘাবড়ে গেছিলো মুহু।তার বুবু সব সময় বলে বিপদ তো বলে কয়ে আসে না।তাই সেফটির জন্য ওর কাছে একটা ধা’রা’লো ছু’ড়ি আর লংকা গুড়ো,কালি এসব ব্যাগেই রাখে সব সময়।শিশির দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
‘কিবে এরকম ভাবে আমার কাজে বাধা দেওয়ার মানে কি?বেশি হিরোগির ফলানো হচ্ছে নাকি।মে’রে’ ফাটা তরমুজ বানিয়ে দেবো সা**লা!সর এখান থেকে!হাত টা ছাড় বলছি।’
সারাফ এসেছিলো শৈবালের খোজে।এক সাথে দুই ভাই ফিরনী খাবে বলে।মা রান্না করেছে আজকে ওর জন্য।ভাইকে নিয়ে খাবে এই কথা ভেবেই এসেছে শৈবাল কে পিক করতে।কিন্তু আসার পথে ওঁদের কে দুটো মেয়েকে এভাবে ডিস্টার্ব করতে দেখেই গাড়ি থেকে নেমেছে।একটু কাছে আসতেই দেখতে পাই মেয়েটি আর কেউই নয় মুহু।মুহুর্তেই তার অভিব্যক্তি বদলে ভয়ংকর হলো।সারাফ শান্ত ভাবে হেসে শিশিরের হাত টা আরও শক্ত করে ধরলো।তারপর ঠান্ডা কিন্তু হু’ম’কির স্বরে বলে,
‘দেখুন আপনার সাথে আমার কোনো শত্রুতা নেই।আর পাঁচ টা মেয়ের সঙ্গে যা খুশি করেন বলেই যে ওঁদের সঙ্গেও করবেন ভাবলেন কি করে?’
‘কেনো রে ওই মা’ল টা তোর পার্সনাল প্রোপার্টি নাকি?’
বলেই শিশির শব্দ করে হাসতে লাগলো।মোর্শেদ আর আশিক কোনো রকমে উঠে চলে গেছে মুখ ধুতে।চোখ মুখ জ্বলে যাচ্ছে একেবারে।একেবারে ধা’নি লংকা লাগিয়েছে মেয়েটি।
সারাফ নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করে বলে, ‘আর একটা বাজে কথা বললে কিন্তু তোমাকে পস্তাতে হবে খুব।’
‘এই এই কি করবি রে তুই।তাল পাতার সেপাই আবার এসেছিস বড় বড় কথা বলতে।ভাগ এইখান থেকে।’
শিশির এবার গিয়ে তানহার বদলে মুহুর হাত ধরে টানতে লাগলো।মুহুকে তানহা শক্ত করে ধরে আছে।যথা সম্ভব চেষ্টা করছে নিজেকে ছাড়ানোর।নাহ, সারাফের আজকের মুড টা ভালো ছিলো কিন্তু সেটাও আর বেশিক্ষন স্থায়ী হলো না।এবারে সে ক্রোধানল দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
‘ওঁকে ছেড়ে দে বলছি।’
‘চিন্তা করিস না রে।মা’ল টাকে একবার বি’ছা’না’য় তু’লি তারপর এমনি এমনি ছেড়ে দেবো।তোকে এতো রিকোয়েস্ট করতে হবে না।’
আর কিছু বলতে পারলো না শিশির।ওঁকে এলোপাতাড়ি মা’র শুরু করলো সারাফ।মুহুর্তেই হট্টগোল বেধে গেলো সেখানে।শিশির ও সারাফের গা’য়ে হাত তুলেছে।সারাফ মে’রে’ই যাচ্ছে শিশির কে।মুহু আর তানহা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে আছে।মুহু রাগে থরথর করে কাঁপছে।তাকে ছুঁয়েছে এই জানু’য়ার টা।ওঁকে তো সে শাস্তি দেবেই।ভেবেই তানহা কে ছাড়িয়ে কোনো মতে ব্যাগ থেকে আরও লংকা গুড়ো বের করে এগিয়ে শিশির কে লাগিয়ে দিলো।শিশির দৌড়ে পালালো কোনো রকমে সেখান থেকে।এমতাবস্থায় কিছু টা লংকা গুড়ো সারাফের ও লেগে যায়।সারাফ চোখ খুলতে পারছে না।চোখ থেকে টপটপ করে পানি পরছে।নিচে বসে পরেছে সে।মুহু ব্যাপার টা বুঝতে পেরে বসে পরে সারাফের পাশে। তানহা কে বলে ব্যাগ থেকে পানির বোতল এগিয়ে দিতে।তানহা দৌড়ে পানি নিয়ে আসে।
#চলবে