#গোধূলি_লগ্নের_সেই_তুমি
#লেখনীতে_জেনিফা_চৌধুরী
#পর্ব_পাঁচ
ভরা ক্লাসে মাথা নিঁচু করে কান ধরে দাড়িয়ে আছে ফাইজা। কিন্তু ও কি দোষ করেছে তাই জানেনা। ফারদিন ক্লাসে ঢুকেই ধমকের স্বরে ফাইজা’কে কান ধরে দাড়িয়ে থাকতে বললো। হঠাৎ এমন আচরণে ফাইজা ভয়ার্ত ফেস করে ফারদিনের দিকে প্রশ্নসূচক দৃষ্টি’তে তাকাতেই ফারদিন কোনো উওর না দিয়ে রাগী স্বরে বললো….
–কি বলেছে শুনতে পাও নি। যতক্ষন ক্লাস চলবে এক সেকেন্ডের জন্য কান থেকে হাত সরলে ক্লাস থেকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দিব। আন্ডারস্ট্যান্ড ….
বলেই ফারদিন নিজের মতো ক্লাসে পড়ানো শুরু করলো। ফাইজা বাধ্য হয়ে কান ধরে দাড়িয়ে পড়লো। ফাইজার সাথে কথা বলার সময় ধমক ছাড়া কথা বলতে পারেনা। আর এখন কত সুন্দর সবার সাথে হেসে হেসে কথা বলছে। ফাইজা অসহায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আরজা’র দিকে। আরজা ও অসহায় ফেস করে বুঝালো ও কি করবে? ফারদিন পড়ানোর ফাঁকে ফাঁকে ফাইজা’র দিকে আড় চোখে তাঁকাচ্ছে। ফারদিন’কে একটা মেয়ে প্রশ্ন করতেই ফারদিন মেয়ে’টার কাছে দাড়িয়ে সুন্দর করে হেসে হেসে বুঝিয়ে দিচ্ছে। আর মেয়ে’টা ফারদিনের দিকে তাঁকিয়ে মিটমিটিয়ে হাসচ্ছে৷ তা দেখে কেনো যেনো ফাইজা’র শরীর জ্বলে উঠলো। ফাইজা খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে লাগলো ফারদিনের মধ্যে কি আছে? ফারদিনের চেহারা’টার মাঝে গম্ভীর্য থাকলে ও হাসলে ডান দিকের গালে টোল পড়ে। সচারাচর খুব কম ছেলেদের গালে টোল পড়তে দেখা যায়। টোল পড়ায় চেহারা’টার সৌন্দর্য ফুটে উঠে দ্বিগুন। বেশি লম্বা না ছেলেদের যতটুকু লম্বা হলে পারফেক্ট লাগে ঠিক ততটুকুই লম্বা মনে হচ্ছে। চুল গুলোর জন্য একটু বেশিই সুন্দর লাগছে চেহারা’টা। ফাইজার ইচ্ছে করছে চুল গুলো এলোমেলো করে দিতে। হঠাৎ, করেই ধাক্কা লাগায় ফাইজা নিজেকে সামলা’তে না পেরে পড়ে যেতে নিলে আরজা ধরে বসিয়ে দিলো। শব্দ শুনে ফারদিন সহ সবাই ফাইজার দিকে তাকাতেই দেখে ফাইজা বসে আছে। ফারদিন’কে তাকাতে দেখেই ফাইজা আবার রোবটের মতো কান ধরে দাড়িয়ে গেলো। ফারদিন একবার ফাইজার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে সামনে ঘুরে গেলো। তা দেখে ফাইজা হাফ ছেড়ে বাঁচলো। সম্পূর্ণ ক্লাস ফাইজা কান ধরে দাড়িয়ে রইলো। যাওয়ার সময় ও ফারদিন বসতে বললো সোজা ক্লাস রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো। ফাইজার হাত আর পা দুটোই ব্যাথা হয়ে গেছে।
___________________________________________
কলেজ শেষ করে ফাইজা একা একা আপনমনে ফুটপাতের রাস্তা দিয়ে হাটছে আর কাল রাতের ঘটনার কথা ভাবছে। ভাবনার মাঝেই হঠাৎ করেই অস্বস্তি শুরু হলো ফাইজা’র। যখন অস্বস্তির কারন বুঝতে পারলো তখন ভয়ে জমে গেলো। মুহূর্তেই, পা দুটো থেমে গেলো জায়গায়। আর এক পা সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সাহস হলো না। পেটের মধ্যে দুই হাতে চেপে চারদিকে চোখ বুলিয়ে নিলো। রাস্তায় মানুষের অভাব নেই এই অবস্থায় কি করবে ও? খালি রিকশা ও আসচ্ছেনা এদিকে। ভয় আর অস্বস্তি’তে ফাইজা’র চোখে পানি টলমল করতে লাগলো। উপায়ন্তর না পেয়ে ফাইজা দুই হাতে পেট ধরে আস্তে আস্তে কয়েকপা এগিয়ে সামনে ফুটপাতের একটা বড় গাছের নিচে বসে পড়লো। কান্না গুলো গলায় ঝট পাঁকিয়ে আসচ্ছে৷ রাস্তার মধ্যে এমন একটা বিশ্রি দম বন্ধকর পরিস্থিতিতে পড়বে ভাবতেই পারছেনা ও। কয়েক-মিনিটের মাথায় সামনে কেউ একজন এসে দাড়াতেই ফাইজা টলমল চোখ মাথা উঁচু করে তাকা’তেই আরো ভরকে গেলো। ফারদিন কে দেখেই ফাইজা নিজেমে আরো গুটিয়ে বসলো। হঠাৎ ফাইজার এমন আচরণে ফারদিন ভ্রু যুগল কুচকে ওর দিকে তাঁকিয়ে বলে উঠলো…..
— রাস্তার মধ্যে বসে আছো কেনো? এনি প্রবলেম?
ফারদিনের প্রশ্নের ফাইজা কি উওর দিবে বুঝতে পারছেনা। ওর চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে। আশেপাশের কয়েকজন রাস্তা দিয়ে হেটে যাওয়ার সময় ওদের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে। ফাইজা’র কান্না গুলো শব্দ পাঁকিয়ে আসচ্ছে ভেতর থেকে। তাও ঠোঁটে ঠোঁট চেপে কান্না নিবারনের চেষ্টা করে উওর দিলো…..
—কিছু হয়নি স্যার। হঠাৎ, করে মাথা ঘুরছিলো আর শরীর’টা একটু খা’রাপ লাগছিলো তাই বসে পড়েছি….
ফাইজা’র উওর শুনে ফারদিন চিন্তিত ভঙ্গিতে জোরে বললো….
–হোয়া’ট? শরীর খারাপ লাগছে মানে? কি হয়েছে?
জ্বর এসেছে….
বলেই ফাইজা’র কপালে হাত রাখলো। তারপর ফাইজার সামনে একটু ঝুঁকে ওর দুই গালে হাত রেখে আবারো চিন্তিত স্বরে প্রশ্ন করলো……
—কি হয়েছে বলো? কোথায় খারাপ লাগছে? আচ্ছা চলো হসপিটালে নিয়ে যাই। উঠো……
বলেই ফাইজার হাত ধরতেই ফাইজা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো ফারদিনের দিকে। যে ছেলে ফাইজা’কে দুই চোখে সহ্য করতে পারেনা। তার হঠাৎ এমন আচরনে ফাইজা অবাকের শেষ সীমানায়। এক মুহূর্তের জন্য নিজের যন্ত্রনার কথা ভুলে গেলো ও। ফারদিন ওর হাত ধরে টান দিতেই ফাইজা শক্ত করে নিজ স্থানে বসে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বললো….
–স্যার, আমি কোথাও যাব না। আপনি চলে যান প্লিজ….
আর বলতে পারলো কেনো যেনো অবাধ্য কান্নাগুলো শব্দ করে বেড়িয়ে এলো। ফাইজা’কে এমন আচমকা কাঁদতে দেখে ফারদিন ভরকে গেলো কিছুটা। রাস্তার মাঝেই ফাইজার সামনে বসে পড়লো হাটু ভে’ঙে। ফাইজা অবাক নয়নে ফারদিনের কান্ড দেখছে। ফারদিন পূর্নরায় ফাইজাকে কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো। ওর চোখ অন্য দিকে যেতেই ফাইজা’র এহেতুক আচরনের কারন বুঝতে পারলো। ফারদিন দাড়িয়ে গিয়ে মুখ চেপে ধরে সামনের দিকে ঘুরে নিজেকে শান্ত করলো। ফাইজা অস্বস্তিতে কাচুমাচু হয়ে বসে আছে। আর এই পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার পাওয়ার রাস্তা খুঁজে চলেছে। ফারদিন একটা বড় করে নিশ্বাস ছেড়ে ফাইজার দিকে ঘুরে শান্ত স্বরে বলে উঠলো…..
—কুল ইয়ার। এটা একটা নরমাল ব্যাপার। এত ভয় পাচ্ছো কেনো? ফ্রী মাইন্ডে শেয়ার করলেই পারতে এতক্ষন রাস্তায় বসে বসে সবার নজরে পড়তে হতো না…..
বলেই গাড়ির দিকে চলে গেলো ফারদিন। ফাইজা ফারদিনের কথা বুঝতে পারলো না ওর যাওয়ার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। মিনিটের মাথায় হাতে আলাদা একটা শার্ট নিয়ে ফিরে এসে ফাইজাকে আরেক দফা অবাক করে দিয়ে ওর চুলের কাঠি’টা খুলে দিলো। ফাইজা অবাক হয়ে দেখছে ফারদিনের আচরণ। ফাইজার চুল গুলো ছাড়া পেয়ে কোমরের নিচ অব্দি ছড়িয়ে পড়লো। ফারদিন ফাইজা’কে হাত ধরে টেনে দাড় করিয়ে সাথে সাথে ফাইজার পেছনে দাড়িয়ে পড়লো। ফাইজা’কে পেছন থেকে আড়াল করে দাড়িয়ে চারদিকে একবার চোখ বুলিয়ে ওর কানের সামনে আস্তে বলে উঠলো…..
—শার্ট’টা কোমরে বেধে নাও কুইক। নো কুয়েশ্চন ফাস্ট……
ফাইজা’র শরীর কাঁপছে। শব্দ না করে ফারদিনের কথা মতো শার্ট’টা কাঁপা হাতে কোমরে বেধে নিতেই ফারদিন ফাইজার হাত’টা চেপে ধরলো। ফাইজা জড় বস্তুর মতো সব’টা দেখছে৷ এতক্ষনে ওর কান্না থেমে গেছে। ফারদিন ওর হাত ধরে সামনে পা বাড়িয়ে ও থেমে গিয়ে ফাইজার দিকে তাঁকিয়ে শান্ত কন্ঠে বললো….
–হেটে যেতে পারবে…..
ফাইজা বাধ্য মেয়ের মতো মাথা নাড়ালো। যার অর্থ হ্যাঁ, পারব। ফারদিন ফাইজা’কে গাড়িতে এনে বসিয়ে গাড়ি স্ট্যাট দিলো। সারা রাস্তা ফাইজার মাথায় হাজার’টা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিলো কিন্তু লজ্জা আর অস্বস্তির জন্য একটা কথা ও না বলে জানালার দিয়ে বাইরে তাঁকিয়ে ছিলো। ফাইজা’দের বাসার নিচে এসে গাড়ি থাম’তেই ফারদিন বললো…..
— আমার গাড়িতে প্রয়োজনের সুবিধার্থে সব সময় এক্সার্টা কিছু টি-শার্ট, শার্ট থাকে তাই, আজ কাজে লেগেছে। সাদা ড্রেস’টার অবস্থা খা’রাপ হয়ে গিয়েছে তাই গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও…….
ফাইজা মাথা নাড়িয়ে গাড়ি থেকে নেমে সোজা বাড়ির ভেতরে দৌড় দিলো। ফারদিন কিছুক্ষন ওর যাওয়ার দিকে তাঁকিয়ে মুচকি হেসে মনে মনে বলে উঠলো….
–তুমি একটু বেশিই লাজুক। অবশ্য, লাজুকতার জন্য একটু বেশি সুন্দর লাগে…..
____________________________________________
সন্ধ্যার দূর আকাশে একটা শুকতারা জ্বলজ্বল করছে। সামনের রাস্তার ল্যাম্পপোস্ট গুলো ঠাঁই দাড়িয়ে পথচারীদের আলো দিচ্ছে। ব্যস্ত রাস্তা দিয়ে শুনশান গাড়ি চলছে। কিছু পোকার ডাক ভেসে আসচ্ছে নিচের ঝোঁপের আড়াল থেকে। বেলকনির এক প্রান্তে বেতের একটা চেয়ারে বসে সামনে টেবিলের উপর পা রেখে এক ধ্যানে সামনে তাকিয়ে আছে ফাইজা। ওর দৃষ্টি স্থির। ফারদিনের আচরন গুলো না চাইতেও ওকে ভাবাচ্ছে। আজ একটা জিনিস ফাইজা খেয়াল করেছে ছায়া মানব’টির শরীরের থেকে যেই পারফিউমের ঘ্রান পেয়েছে সেই সেম পারফিউমের ঘ্রান আজ ফারদিনের শরীর থেকে পেয়েছে। কেনো যেনো ফারদিনের স্পর্শ ফাইজার খুব চেনা মনে হচ্ছে। বার বার না চাইতেও মাথায় আসচ্ছে ছায়া মানব’টি ফারদিন। কিন্তু কি করে সম্ভব? ফারদিন তো ওকে সহ্যই করতে পারেনা। আকাশ-কুসুম ভাবনার মাঝে বেলকনিতে প্রবেশ করে জেহের। দরজায় শব্দ পেয়ে ফাইজা দরজার দিকে তাকাতেই না চাইতেও ওর ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠলো। জেহের কে দেখেই ফাইজা এক গাল হেসে উৎফুল্ল স্বরে বললো….
–ভাইয়া তুমি? তুমি কখন এলে?
বলতে বলতেই জেহের ফাইজার পাশে বসে ফাইজার মাথায় হালকা করে টোকা দিয়ে চোখ পিটপিট করে তাঁকিয়ে বলে উঠলো…..
–কি এত ভাবনায় মশগুল ছিলেন আফা….
ফাইজা হেসে একটু ন্যাকা স্বরে বলে উঠলো….
–এসেই মা’রা মা’রি শুরু করে দিয়েছিস হ’নু’মা’ন….
হ’নু’মান বলায় জেহের ধুম করে একটা কি’ল বসিয়ে দিলো ফাইজার পিঠে। ফাইজা ও কম কিসে একটার বদলে দুইটা কি’ল বসিয়ে দিলো জেহেরের বাহুতে। শুরু হয়ে গেলো দুই ভাই বোনের খুনশুটি। জেহের পড়াশোনার জন্য চট্রগ্রাম থাকে। মাত্রই বাসায় এসে সোজা তার প্রানের প্রিয় বোনের রুমে চলে এসেছে। ফাইজা জেহেরের সাথে না পেরে ন্যাকা কান্না শুরু করলো। তা বুঝতে পেরে জেহের ফাইজা’কে ঝাপটে ধরে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল….
–ওলেলে বাচ্চা কান্না করেনা। থাক তোমাকে একটা ফিটার কিনে দিব আমি……
বলতে না বলতেই ফাইজা শব্দ করে হেসে দিয়ে জেহেরের বুকে কয়েক’টা কি’ল ঘু’ষি দিয়ে বসলো।
তারপর শুরু হয়ে গেলো দুইজনের বকবকানি। এক পর্যায় জেহের ফ্রেশ হতে চলে গেলে ফাইজা আবার নিজের ধ্যানে মশগুল হলো। ফাইজা এই ভাবনার কূল কিনারা না পেয়ে উঠে চলে আসার সময় হঠাৎ করে থেমে গেলো। তড়িঘড়ি করে রেলিং ধরে নিচের দিকে ঝুঁকতেই দেখলো ওদের বাসার নিচে একটা কালো রঙের গাড়ি। এই গাড়ি’টা ফাইজা খুব ভালো করে চিনে কারন গাড়ি’টা ফারদিনের। ফারদিন তো আজ পড়াতে আসবে না তাহলে ওর গাড়ি এখানে কি করে আসলো? হঠাৎ করেই ফাইজার বুকের ভেতর’টা ছ্যাৎ করে উঠলো। তবে কি ফাইজা যা ভাবছিলো ঠিক ভাবছিলো? ওই ছায়া মানব’টি তাহলে ফারদিন? তবে কেনো নিজের থেকেই দূরে থাকতে বলেছিলো রাতে? নাহ আর ভাবতে পারলো না ফাইজার মাথা ধরে আসচ্ছে? এই রহস্যের খোঁজ বের করতেই হবে……….
#গোধূলি_লগ্নের_সেই_তুমি
#লেখনীতে_জেনিফা_চৌধুরী
#পর্ব_ছয়
এক পায়ে ভর করে হাতে বই নিয়ে দাড়িয়ে আছে ফাইজা। ওর সামনেই সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসে এক ধ্যানে মোবাইলে গেম’স খেলছে ফারদিন। ফাইজা বার বার পড়ে যেতে নিয়েও নিজেকে সামলে নিচ্ছে। ফারদিন গেম’সের মাঝে মাঝে আড় চোখে দেখছে ফাইজা’কে। অদ্ভুত সব শাস্তি দেয় ফারদিন। আজ পড়া না পা’রার এমন শাস্তি দিয়েছে। কালকে’ই তো কত কেয়ার দেখাচ্ছিলো আর আজ আবার এমন খা”টা’শের মতো বিহেভিয়ার করছে। ভাবতেই ফাইজা’র রাগে শরীর জ্বলে উঠলো। ফাইজা মনে মনে ফারদিনের গুষ্টি উদ্ধার করছে। ওর চেহারা দেখে ফারদিন মিটমিটিয়ে হাসচ্ছে। ফাইজা এইবার অসহায় ফেস করে ফারদিনের দিকে তাঁকিয়ে নরম স্বরে বলে উঠলো…..
–স্যার কাল থেকে পাক্কা সব পড়ে আসব…..
ফারদিন যেনো শুনেও শুনলো না ওর কথা। তা দেখে ফাইজা রাগে দাতে দাত চেপে বিড়বিড় করতে লাগলো…..
–এহহ এমন ভাব দেখাচ্ছে যেনো কোন রাজ্যের রাজপুত্র। মন চাচ্ছে নাক বরাবর একটা ঘু’ষি মে-রে নাকের বারান্দা ছুটিয়ে ফেলি। শা’লা খা’রুশ…….
ফারদিন চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে দেখে ফাইজা বিড়বিড় করছে। ওর বুঝতে বাকি রইলো না ফাইজা ওর গুষ্টি উদ্ধার করছে। ফারদিন আচমকা ধমক দিয়ে বলে উঠলো…..
–এই মেয়ে কি বিড়বিড় করছো?
ফারদিনের ধমক শুনে ফাইজা ভয়ে লাফিয়ে উঠতেই নিজেই নিজের প্লাজুর সাথে পা আটকে ধ’পাস করে পড়ে গেলো। এইবার আর ফারদিন হাসি কন্ট্রোল করতে পারলো না। রুম কাঁপিয়ে হাহা করে হেসে উঠলো। ফাইজা নিচে পড়ে হাবলার মতো তাঁকিয়ে ফারদিনের হাসি দেখছে। কোথায় ও পড়ে গেছে ওকে তুলবে। তা না করে সে হেসে হেসে কুটিকুটি হচ্ছে। ফাইজা রাগী চাহনি দিয়ে আছে ফারদিনের দিকে। ফাইজার দিকে তাঁকিয়ে ফারদিনের হাসি থেমে গেলো। মুহূর্তেই চোখে মুখে একটা রাগী ভাব এনে বলে উঠলো…..
—এক্ষুনি থা’প্প’ড় মে-রে গালের চামড়া তুলে দিব। সব পড়া ফাঁকি দেওয়ার ধান্দা। কি ভেবেছো? এমন করলে তোমার শাস্তি কমে যাবে। নো ওয়ে, বরং শাস্তি বেড়ে যাবে। এখন তুমি এক পা তুলে কান ধরে দাড়িয়ে থাকবে……..
ফারদিনের কথা শুনে ফাইজার কেঁদে দেওয়ার উপক্রম। এই ছেলে’টা কেনো ওর সাথে এমন করে। হাসলে ছেলে’টাকে কত সুন্দর লাগে। অথচ সব সময় মুখ গম্ভীর করে রাখবে। উঠে দাড়িয়ে ফাইজা আমতা আমতা করে বলে উঠলো……
—স্যার পেটে খুব ব্যাথা এভাবে দাড়িয়ে থাকতে কষ্ট হচ্ছে….
ফাইজার কথা শুনে ফারদিনের কালকের কথা মনে পড়ে গেলো। ফারদিন হুট করে দাড়িয়ে গেলো। চোখ দুটো সাথে সাথে রক্তিম বর্ণ ধারন করতে লাগলো। হাত দুটো শক্ত করে মুষ্টিবদ্ধ করে নিলো। হঠাৎ ফারদিনের বদলে যাওয়া রুপ’টা দেখে ফাইজা ভয়ে বার বার ঢোক গিলছে। ও ভাবছে ফারদিন এক্ষুনি ও’কে এসে থা’প্পড় দিয়ে দাত ফেলে দিবে। ভয়ে ফাইজা দুই গালে হাত দিয়ে কয়েক-পা পিছিয়ে গেলো। ফারদিন ফাইজার ভয়ার্ত চেহারা দেখে। মুষ্টিবদ্ধ হাত’টা ছেড়ে দিয়ে ঘাড়ের দুই পাশে হাত রেখে নিজেকে শান্ত করলো। চোখ বন্ধ করে জোরে একটা নিশ্বাস নিয়ে। বিড়বিড় করে বললো…..
–ড্যাম ইট। এতটা স্টুপিডের মতো কাজ কি করে করতে পারলাম আমি। মেয়ে’টা অসুস্থ জানা স্বত্তেও কি করে এত ক্ষন এইভাবে দাড় করিয়ে রাখতে পারলাম। ওহ গড কি করে ভুলে গেলাম এই কথা’টা রাবিশ…..
নিজের উপরেই রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। ফাইজা এখনো গালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে। ফারদিন এগিয়ে ফাইজার দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই ফাইজা চোখ বন্ধ করে এক নিশ্বাসে বলে উঠলো…..
–স্যারি, স্যারি, স্যার। আর হবে না স্যার প্লিজ মা’র’বে’ন না। আমার ভুল হয়ে গেছে….
গালে কারোর শীতল হাতের স্পর্শ পেতেই ফাইজা চোখ খুলতেই অবাকের শেষ সীমানায়। ফারদিন ওর দিকে এক দৃষ্টি’তে তাঁকিয়ে আছে। ফারদিনের চোখে আজ কি যেনো আছে। কেমন একটা মাতাল চাহনী। এই দৃষ্টির অর্থ ফাইজা বুঝতে পারছে না। ফারদিনের স্পর্শে ফাইজা জমে গেলো। নড়ার শক্তি পাচ্ছেনা আজ। হৃদযন্ত্র’টা এত বেশি লাফাচ্ছে যে মনে হচ্ছে এক্ষুনি বের হয়ে যাবে। ফাইজা কিছু বলার জন্য মুখ খুলতেই শীতল হাত দুটো ফাইজার কোমর জড়িয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। ফাইজা তাল সামলাতে না পেরে ফারদিনের বুকের সাথে বা’ড়ি খেলো। ফারদিনের কান্ডে অটোমেটিক কাঁপা-কাঁপি শুরু হয়ে গেলো ওর। ফাইজা ফারদিনের পেশীবহুল বাহু খামচে ধরে আছে। ফারদিন কেনো এমন করছে? ফারদিনের দিকে প্রশ্ন সূচক চাহনী দিতেই ফাইজা’কে আরেক দফা অবাক করে ফাইজার কপালে পরম আবেশে নিজের ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো। ফাইজা এইবার চারশো ভোল্টের শক খেয়ে চোখ বড় বড় করে তাঁকিয়ে আছে। ফারদিনের দিকে। ফাইজার ওষ্ঠ জোড়া তির তির করে কাঁপছে যা ফারদিন’কে আরো কাছে টানছে। ভয়ে ওর গলা শুকিয়ে আসচ্ছে। কিছুক্ষন পর পর জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিচ্ছে৷ ফারদিনে কেমন যেনো ঘোরে চলে গেলো। ফাইজার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট রাখার জন্য একদম কাছে যেতেই মুহূর্তে ওর সব এলোমেলো হয়ে গেলো। ফাইজা’কে ধাক্কা মে/রে দূরে সরিয়ে দিলো। আকস্মিক ধাক্কা সামলাতে না পেরে ফাইজা ছিটকে টেবিলের কর্নারে বাড়ি খেতেই মৃদ স্বরে ব্যাথায় “আহঃ” বলে উঠলো। ফারদিন আর এক মিনিট ও না দাড়িয়ে বড় বড় পা ফেলে চলে গেলো। ফাইজা এখনো ঘোরের মধ্যে আছে। কি হয়ে গেলো ওর সাথে? ফারদিন কেনো এমন আচরণ করলো? আর ফারদিনের ছোয়া কেনো এত চেনা লাগছে ওর? ফাইজা ধপ করে বিছানায়া বসে পড়লো। ওর মাথা চড়কির মতো ঘুরছে। কাল রাতে ফারদিনের গাড়ি দেখে ফাইজা কিছুক্ষন বেলকনি’তে দাড়িয়ে থাকতেই দেখলো। ফারদিন ওদের বিল্ডিং থেকে বের হয়ে চলে গেলো। তখন ফাইজা ভেবে নিয়েছিলো ও যা সব ভাবছিলো সব ভুল। ছায়া মানব’টি ফারদিন না। এমন কি কাল রাতে বেলকনি’র দরজা ইচ্ছেকৃত ভাবে খোলা রেখেছিলো ফাইজা। কিন্তু কাল রাতে কেউ ওর রুমে প্রবেশ করেনি। আর আজ ফারদিনের এমন আচরণ আবারো ভাবাচ্ছে ওকে??
____________________________________________
ফারদিন বাড়ি এসেই রুমের সমস্ত কিছু ভাংচুর করছে। সায়মা খানম ফারদিন’কে কিছুতেই থামাতে পারছেনা। হাতের সামনে যা কিছু ছিলো ইতোমধ্যে সব ভাঙা শেষ। এক পর্যায় হাঁপিয়ে উঠে ক্লান্ত শরীরে ধপ করে সোফায় বসে পড়লো। দুই হাতে চুল গুলোকে শক্ত করে খামচে ধরলো। সায়মা খানম কাঁপা কাঁপা হাতে ফারদিনের কাঁধে হাত রাখতেই ফারদিন আচমকা সায়মা খানম’কে ঝাপটে ধরলো। সায়মা খানম আস্তে করে ফারদিনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে উঠলো…..
–কি হয়েছে নানু ভাই? কেনো এইভাবে নিজেকে আ’ঘাত করছো? কি প্রবলেম দীদা’কে খুলে বলো?
সায়মা খানমের কথা শুনে ফারদিন এলোমেলোহীন ভাবে বলতে লাগলো…..
–দীদা আমি কেনো ওর কাছে গেলে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারি’না। কেনো আমি নিজের অতীত ভুলতে পারছি’না। কেনো আমার মা’কে ওরা আমার কাছ থেকে কেড়ে নিলো? শুধু মাত্র একজন নারীর জন্য আমি আজো কোনো নারী’কে মন থেকে মেনে নিতে পারছি’না। নিজের বোনের স্বামীর সাথে পরকিয়ায় লিপ্ত হয়ে নিজেদের দোষ ঢাকতে ওরা আমার মা’কে আমার থেকে কেড়ে নিলো। এত’টা জঘন্য একজন মেয়ে কি করে হতে পারে দীদা? আমার খুব কষ্ট হচ্ছে দীদা। খুব কষ্ট হচ্ছে…..
ফারদিনের কষ্টের পরিমান’টা সায়মা খানম বুঝতে পেরে চুপ হয়ে গেলো। সায়মা খানমের চোখ থেকেও জল গড়িয়ে পড়ছে। ছেলে’টা যে ভালো নেই। তা সে বেশ বুঝতে পারছে। কবে এই কষ্ট থেকে মুক্তি পাবে ছেলেটা…………
#চলবে