গোধূলি লগ্নের সেই তুমি পর্ব -বোনাস +৩৯

#গোধূলি_লগ্নের_সেই_তুমি
#লেখনীতে_জেনিফা_চৌধুরী
#পর্ব_বোনাস_পার্ট(২)

প্রায় বিশ মিনিট ধরে কান ধরে উঠবস করছে ফারদিন। ওর সামনে’ই বুকে হাত গুঁজে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে দাড়িয়ে আছে ফাইজা।
টিচা’র হয়ে স্টুডেন্টের সামনে কান ধরে উঠবস করার মতো বিরল দৃশ্য এই প্রথম ঘটলো মনে হচ্ছে ফাইজা’র কাছে। ফারদিনের অবস্থা এখন “ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি”। আরজা, তনুজা, আর সায়মা খানম পাশেই সোফায় বসে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে৷ সেই তখন থেকে ফাইজা’ রাগ করে ছিলো। কিছুতে’ই বিয়ে করবে না আজ বলে’ই দিয়েছে। ঘড়ির কাটা চার’টা ছুঁইছুঁই। ফারদিন বেচারা ফাইজা’র হাতে পায়ে ধরার মতো অবস্থা হয়েছিলো। শেষ অব্দি ফাইজা শাস্তি হিসেবে একশো বার কান ধরে উঠবস করতে বলেছে। নিজের বিয়ে বাঁচানোর জন্য এখন ফারদিন’কে কান ধরে উঠবস করতে হচ্ছে। ফারদিনের চেহারা’টা এখন এত’টা অসহায় লাগছে যা দেখে’ই ফাইজা কিছু’তে হাসি থামিয়ে রাখতে পারছেনা। তাও, অনেক কষ্ট হাসি দমিয়ে রেখে মুখে গম্ভীর্য ধরে রেখেছে। আরজা’র হাসি দেখে ফারদিন ওর দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দাঁতে দাত চে’পে বলে উঠলো…..

–আজ আমার মতো অসহায় একটা ছেলে পেয়ে তোমরা দুই হিটলার অত্যাচার করছো। কিন্তু, কলেজে। ভুলে যেও না আমি তোমাদের টির্চার। সেখানে আমি যেইটা বলব সেইটাই করতে হবে। মাইন্ড ইট শা’লিকা……

বলে চোখ টিপ মা’রলো আরজা’কে। ফারদিনের কথা শুনে আরজা’র হাসি মুখ’টা চুপসে গেলো। সত্যি, তো কলেজে গিয়ে না জানি এইসবের শোধ কিভাবে তুলবে ফারদিন? এইসব ভেবে’ই আরজা’র মুখ’টা কাঁদো কাঁদো হয়ে গেলো। ফাইজা’ আরজার অবস্থা দেখে ওর দিকে ভ্রু কুচকে তাঁকিয়ে বললো…..

–লিস্টেন, মিস্টার ফারদিন আবসার বাড়িতে আপনি সম্পর্কে আমার হবু বর আর আমার বেস্টুর একমাত্র জিজু। তাই বাড়িতে আমরা যা খুশি করতে পারব। বাড়ির সম্পর্ক আর কলেজের সম্পর্ক গুলিয়ে জগা-খিচুড়ি বানাবেন না……

বলে মুখ বাঁকালো। ফাইজা’র কথা শুনে আরজা এইবার একটু মনে জোর পেলো। জেহের অনেক ক্ষন আগেই এদের মাঝ থেকে উঠে চলে গিয়েছিলো। মনের মধ্যে শান্তি নেই ওর। তাই ঘুমাতে চলে গেছে। ফারদিন কান ছেড়ে দিতে’ই আরজা জোরে চেঁচিয়ে বলে উঠলো…..

–এই চিটিং চিটিং। মাত্র ৩০ বার হয়েছে। আরো ৭০ বার বাকি হ্যা মেরি জিজু……

আরজা ও এইবার এইটুকু বলে ফারদিনের দিকে তাঁকিয়ে চোখ টিপ মা’রলো। ফারদিন কোমরে হাত দিয়ে ন্যাকা স্বরে বলে উঠলো…..

–বিয়ের আগে’ই যদি বুড়ো বানিয়ে দিতে চাও তাহলে আমি আরো ৭০ বার কান ধরে উঠবস করতে রাজি।

আরজা ফারদিনের কথা শুনে কিছু একটা ভাবলো তারপর ভাবুক স্বরেই বললো……

–থাক থাক আপনার শাস্তি মাফ। আমার এই স্মার্ট জিজু’টাকে আমি বুড়ো বানাতে চাইনা….

বলে লাজুক হাসলো। ফারদিন যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলো। ফাইজাও আরজা’র তালে তাল মিলিয়ে ফারদিন’কে মাফ করে দিলো। ফারদিন খুশিতে লাফিয়ে উঠে দৌড়ে গিয়ে আরজা’কে জড়িয়ে ধরে ওর গালে চু’মু খাওয়ার জন্য কাছে যেতে’ই আরজা গলা ফাটিয়ে চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো……

–ফাইজু রে বাঁচা…….

আরজা’র চিৎকারে ফারদিন থতমত খেয়ে থেমে গেলো। খুশির চোটে বউ’কে রেখে শা’লি’কে চুমু খেয়ে ফেলছিলো ভেবে জিভে কামড় দিয়ে কান ধরে নিঁচু স্বরে বললো……

–স্যারি স্যারি শা’লিকা। বউ’কে জড়িয়ে ধরতে গিয়ে হাত ফস্কে শা’লিকে জড়িয়ে ধরেছিলাম। ক্ষমা করে দাও প্লিজ প্লিজ……

সরে এলো আরজা’র কাছ থেকে। পেছনে ঘুরে দেখলো ফাইজা’র রাগী ফেস করে কোমড়ে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে৷ তা দেখে ফারদিন ঢোঁক গিলে কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে উঠলো…..

–বিশ্বাস করো বউ হাত ফস্কে হতে গেছিলো সর্বনাশ’টা। আমার কোনো দোষ নেই….

ফারদিনের মুখের রিয়েকশন দেখে এইবার উপস্থিত সবাই উচ্চোস্বরে হেসে দিলো। পুরো ঘর জুড়ে হাসির রোল পড়ে গেলো। আর ফারদিন লজ্জা পেয়ে মাথা চুলকাতে লাগলো। তনুজা আর সায়মা খানম সবাই’কে তাড়া দিতে লাগলো ঘুমানোর জন্য। আর ফারদিন চোখের ইশারায় ফাইজা’কে ঘুমাতে বারন করছে। তাই ফাইজা’ আমতা আমতা করতে’ই আরজা বুঝতে পারলো। দুষ্টুমি ভঙ্গি’তে ফারদিনের সামনে দাড়িয়ে বলে উঠলো…..

–জিজু তখন উড়ে আসা লা’থি’ খাওয়ার সাধ কেমন ছিলো……

এইটুকু বলে’ই ফারদিন’কে ভেংচি কেটে আরজা দিলো দৌড়। ব্যাপার’টা বুঝতে ফারদিনের কয়েক সেকেন্ড সময় লাগলো। যখ’নি বুঝতে পারলো তখনি জোরে চেঁচিয়ে বলে উঠলো…..

—“তবে’রে আজ দেখাচ্ছি মজা দাড়াও”

সেও আরজা পেছন পেছন ছুটলো। ফাইজা’ও ওদের পেছন ছুটলো। তনুজা আর সায়মা খামন দুজনে ওদের কান্ডে হাসতে লাগলো।
____________________________________________
ছাদে এসে তিন’টায় মিলে এক সাথে হাসতে লাগলো। ফারদিন হাটু’তে ভর দিয়ে ঝুঁকে হাঁপাচ্ছে। ফাইজা’র যেনো কিছুতে’ই হাসি থামছেনা। পুরো বাড়ি রঙিন বাতি’তে ঝলমল করছে। আরজা হাসি থামিয়ে বলে উঠলো…..

–এইবার আপনারা দুজন প্রেম করুন আমি আসচ্ছি….

বলে নাচতে নাচতে চলে গেলো। আরজা চলে যেতে’ই ফারদিন দুষ্টু’মি ভঙ্গিতে ফাইজা’র দিকে তাঁকিয়ে ভ্রু নাঁচিয়ে বলে উঠলো….

–এইবার তুমি কোথায় যাবে জান….

ফারদিনের মুখের ভঙ্গি’মা দেখে’ই ফাইজা’র এতক্ষনের সব হাসি উড়ে গেলো৷ ঢোঁক গিলতে লাগলো একের পর এক। হৃদ যন্ত্রনা লাফাতে শুরু করলো। আমতা আমতা করে পেছনে যেতে গিয়ে দোলনার সাথে লেগে দোলনায় বসে পড়লো।।ফারদিন এগিয়ে এসে ফাইজা’র দুই পাশে হাত রেখে ফাইজা’র দিকে ঝুঁকলো। এতটাই কাছে ঝুঁকে আছে ফারদিন এক্ষুনি কথা বললে ঠোঁট ফাইজা’র ঠোঁট স্পর্শ করবে। ফাইজা ফারদিনের কলা’র চে’পে ধরে বলে উঠলো….

–কি ভেবেছেন শুধু আপনি’ই পারেন সব কিছু করতে। আর আমি শুধু ভয় পেয়ে যাব। কাবি নেহি…….

বলে এই প্রথম ফাইজা ফারদিনের ঠোঁট ঠোঁট রাখার প্রস্তুতি নিতে’ই ফারদিন সরে আসলো ফাইজা’র কাছ থেকে। এতে ফাইজা মুখ টিপে হাসলো। ফারদিন ফাইজা’র থেকে দূরে গিয়ে আমতা আমতা করে বললো….

–ইয়ে মানে আজকে’ই যদি সব রোমান্স করে ফেলি তাহলে কালকের জন্য কি রাখব জান……

ফারদিনের কথা শুনে ফাইজা নিঃশব্দে হাসলো। ফারদিন ও একটু হেসে মাথা চুলকে ফাইজা’র পাশে এসে বসে পড়লো। এক হাতে ফাইজা’কে টেনে বুকে জড়িয়ে নিলো। ফাইজা ও দুই হাতে আকড়ে ধরলো ফারদিন’কে অস্পষ্ট স্বরে বলে উঠলো…..

–আপনি আমার এক টুকরো সুখের রাজ্য। এই রাজ্য ছেড়ে আমি কখনো দূরে যেতে চাইনা…..

ফারদিন ফাইজা’র থুতনি তুলে ধরলো নিজের দিকে। ফাইজা’র গালে হালকা কামড় দিয়ে বললো…..

–এতক্ষন ইচ্ছে করে আমাকে হেনস্তা করার শাস্তি এটা…..

ফাইজা একটু দুষ্টু হেসে ফারদিনের কলা’র ধরে নিজের কাছে নিয়ে ফারদিনের গালে জোরে কামড় দিয়ে উঠলো। ব্যাথায় ফারদিন “মা’গো” বলে জোরে জোরে গাল ডলতে ডলতে বলে উঠলো…..

–হোয়াট ইজ দিস জান?

ফাইজা আঙ্গুল দিয়ে নিজের চুল প্যাঁচাতে প্যাঁচাতে ডোন্ট কেয়ার ভাবে বললো…..

–অন্য মেয়ে’কে চু’মু খাওয়ার শাস্তি এটা…..

অন্য মেয়ে কাকে আবার চু’মু খেলাম। এই প্রশ্ন’টা করতে গিয়েও ফারদিন থেমে গেলো। কিছুক্ষন আগের ঘটনা মনে করে হেসে দিলো। ফাইজাও তালে তাল মিলিয়ে হেসে দিলো। তারপর দুজনে’ই দুজন’কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। ভোরের আলো ফুটতে আর বেশিক্ষন নেই। এই কয়েক মুহূর্ত দুজন নিরবে কাটাবে। এই সময়’টা হবে ওদের দুজনের। দোলনা বাতাসের তালে তালে দুলে যাচ্ছে। কয়েক মুহূত কেটে গেলো এভাবেই নিরব। উপভোগ করতে লাগলো সময়’টা। ফাইজা ফারদিনের বুকে চুপটি করে মাথা রেখে আছে। ফারদিন নিঁচু স্বরে বলতে লাগলো……

–তোমাকে পেয়ে আমি নতুন করে বাঁচতে শিখেছি। তুমি আমার হাসির উৎস। আমি জানি তোমার মনের কোথাও না কোথাও একটা দুঃখ রয়ে গেছে যে, তুমি কোনোদিন মা হতে পারবে না। কিন্তু, বিশ্বাস করো আমার এটা নিয়ে এক বিন্দু আফসোস নেই। কোনো মেয়ে মা হতে পারবেনা এটা জেনে বাইরের লোক যেই আচরণ’টা করে এটা আদৌ কোনো মনুষ্য জাতির কাজ হতে পারেনা। মেয়ে’রা হলো মায়ের জাত। ওদের সম্মানের জায়গা’টা সবার উপরে। ওরা কত সুন্দর দুই হাতে সংসার সামলে রাখে। তাও দিন শেষে সব দোষ মেয়েদের হয়। কত মেয়ে’কে এইজন্য শুশুড় বাড়ি ছাড়া হতে হয়। কিন্তু, কেউ একবার ও ভাবেনা যে, এই মেয়ে’টা নিজে কত’টা কষ্ট পাচ্ছে। সবার যার যার দিক চিন্তা করে স্বার্থপরের মতো। মা হতে হলে কি গর্ভধারণ করতে’ই হবে এমন নয়। মা হতে হলে মায়ের মতো স্নেহ,ভালোবাসা থাকা’টাই যথেষ্ট। আচ্ছা সংসার করতে হলে, কাউকে ভালোবাসতে হলে কি রুপ, সৌন্দর্য, আর মা হওয়ার ক্ষমতা থাকতে’ই হবে এমন কি কোথাও লেখা আছে। দুটো মনের মিল হয় কোনো মানুষের রুপ আর সৌন্দর্যের তো মিল হয়না। আমাদের সমাজ’টা এখনো উন্নত হতে পারলো না। এইসব কথা কেনো বললাম জানো? তুমি প্লিজ কষ্ট পেও না। আমি তোমাকে মাতৃত্বের সুখ হতে বঞ্চিত হতে দিব না। ফুটফুটে একটা সদ্য জন্মানো বাচ্চা তোমাকে গিফট করব দেখো…….

ফাইজা’র চোখ থেকে গড়িয়ে পানি পড়ছে। নিজেকে পৃথিবীর সব থেকে ভাগ্যবতী মেয়ে মনে হচ্ছে। কোনো ছেলে একটা মেয়ে’কে এমন করে বুঝতে পেরে। এটা ফারদিন’কে না দেখে বুঝতে পারতোনা ফাইজা। কোনো উওর না দিয়ে পূর্বের মতো চুপ’টি করে রইলো ফারদিনের বুকে। ফারদিন ও প্রেয়সীর মাথায় পরম আবেশে হাত বুলাতে লাগলো।
#গোধূলি_লগ্নের_সেই_তুমি
#লেখনীতে_জেনিফা_চৌধুরী
#পর্ব_উনচল্লিশ

বিয়ে শুরু হওয়ার ঠিক পূর্ব মুহূর্তে জেহের আরজা’কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। উপস্থিত সবাই এক সাথে করোতালি দিয়ে উঠলো। এতক্ষন আরজা’কে খুশি দেখে জেহের অবাক হলে ফাইজা সব’টা বুঝিয়ে বলে। সব’টা শুনে জেহের মনে মনে একটা স্বস্তি পেলো। বিয়ে’টা রীতিমতো শুরু হলো। ফারদিন’কে কবুল বলতে বলা হলে ফারদিন ফাইজা’র দিকে তাঁকিয়ে একদমে তিন’বার কবুল বলে ফেলে। তা দেখে সবাই হাসি’তে ফেটে পড়ে। জেহের’কে কবুল বলতে বলা হলে জেহের ধীরে সুস্থে তিন’বার কবুল বললো আর আরজা ঠিক তার উল্টো ফারদিনের মতো আরজাও একনাগাড়ে তিন’বার কবুল বলে লাজুক হাসতে লাগলো। মেয়ে’টা পারেও বটে। সমস্ত নিয়ম মেনে বিয়ে’টা শেষ হলো। ফারদিন আর জেহের ফ্রেন্ড সার্কেল মিলে ওদের বাসর ঘর আগে’ই সাজিয়ে রেখেছিলো। সব অতিথি’রা চলে যেতে ফ্রেন্ড’দের সাথে ফারদিন আর জেহের সিড়ি দিয়ে উপরে উঠতে’ই ফাইজা আর আরজা দুজনে’ই সিড়ির সামনে বুকে হাত গুঁজে রাস্তা আটকে দাড়িয়ে পড়লো। ওদের দুজনের চোখে কালো সানগ্লাস পড়া। মুখে রয়েছে দুষ্টুমি হাসি। তা দেখেই ফারদিন আর জেহের বুঝে গেছে এদের মাথায় নিশ্চয়ই অন্য কিছু ঘুরছে। ফারদিন স্টাইল করে বুকের থেকে সানগ্লাস’টা নিয়ে ফুঁ দিয়ে চোখে পড়তে পড়তে বললো……

—আপনারা যদি একটু সরে দাড়াতেন তাহলে আমাদের জন্য সুবিধা হতো। আসলে আমাদের নতুন বউ’য়েরা আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে…..
,
বলে জেহেরের দিকে তাঁকিয়ে সানগ্লাস’টা নাকের ডগায় এনে জেহের’কে ইশারা করতে জেহের ও বাঁকা হেসে ওর সানগ্লাস’টা পড়ে নিলো। তারপর জেহের আরজা’কে আর ফারদিন ফাইজা’কে ধাক্কা দিয়ে রাস্তা থেকে সরিয়ে দিতে দিতে বলে উঠলো…..

—সাইড প্লিজ…..

বলে ওরা দুজন স্টাইল মে’রে হেটে দুজন দুজনের রুমে’র দিকে এগিয়ে গেলো। আরজা আর ফাইজা হা করে কিছুক্ষন বোকার মতো তাঁকিয়ে থেকে দুজনেই এক সাথে চিৎকার করে উঠলো…..

—স্টপ……

ওদের চিৎকার শুনে ফারদিন্নার জেহের দুজনে থেমে গেলো। ফাইজা আর আরজা এইবার রেগে ওদের সামনে গিয়ে কোমরে হাত দিয়ে দাড়ালো। ফাইজা’র সানগ্লাস’টা খুলে নিয়ে ফারদিনের দিকে একটু ঝুঁকে ফিসফিসিয়ে কিছু একটা বললো। তা জেহেরের কান অব্দি পৌঁছালো না। এইবার ফারদিন নিজের রুপ পরিবর্তন করে জেহেরের দিকে তাঁকিয়ে বললো…..

–আপনি হচ্ছেন আমার বড় ভাই। ইয়ে মানে আপনাকে ছেড়ে আমি আগে কি করে যাই বলুন তো????

ফারদিনের কথা শুনে জেহের পুরো বোকা বনে গেলো। এই ছেলে তো গিরগিটির থেকেও খারাপ। মুহূর্তে’ই কেমন রুপ বদল করে নিলো। জেহের কিছু বলতে চেয়েও পারলো না তার আগেই আরজা জেহেরের হাত ধরে সুর টেনে বলে উঠলো….

–ওগো চলো না ঘরে যাই। ওরা আমাদের জন্য ওয়েট করছে তো??

আরজার কথা শুনে জেহের হা করে তাঁকিয়ে বলে উঠলো…..

–কারা অপেক্ষা করছে গো?

আরজা এইবার লাজুক হেসে বললো…..

-আমাদের জন্য ফুল দিয়ে সাজানো বিছানা…..

এইটুকু বলে লজ্জা পাওয়ার ভঙ্গি’তে দুইহাতে মুখ ঢেকে নিলো। আর জেহের চোখ বড় বড় করে তাঁকিয়ে আছে। এই মেয়ের কি লজ্জা শরম বলতে কিছু নেই। সবার সামনে কিসব বলছে? জেহের তব্দা খেয়ে দাড়িয়ে আছে। ফারদিনবার ফাইজা মুখ টিপে টিপে হাসচ্ছে। আরজা সেকেন্ড কয়েক পরে মুখ থেকে হাত সরিয়ে জেহেরের হাত ধরে টেনে রুমের দিকে পা বাড়ালো। ফারদিন আর ফাইজা ওদের আগে যেয়ে দরজা আটকে দাড়ালো। ফাইজা দরজায় দাঁড়িয়ে জেহেরের দিকে হাত বাড়িয়ে বলে উঠলো……

—বেশি না অনলি টেন থাউজ্যান্ড……

জেহের জোরে চেঁচিয়ে বলে উঠলো….

–হোয়াট? এই তুই না আমার বোন তুই আমার সাথে এমন করতে পারছিস?

ফাইজা ভাব নিয়ে হাত দিয়ে বাতাস করতে করতে বলে উঠলো….

–উহু ব্রো আজ আমি আপনাকে আমি চিনিনা। আজ তো আমি আমার বেস্টুর জামাই এর পকেট খালি করার ধান্দায় নেমেছি…..

ফাইজার সাথে তালে তাল মিলিয়ে ফারদিন ও বলে উঠলো….

–আজ আমি আমার শা’লিকার জামাই এর পকেট খালি করার ধান্দায় নেমেছি…..

বলে একটু হাসলো। আর জেহের ওদের কান্ড দেখে হা করে তাঁকিয়ে আছে। এরা দুজন কত তাড়াতাড়ি রুপ বদল করতে পারে তা দেখছে। এইবার আরজা ও ওদের সাথে তাল মিলিয়ে বললো….

–আরে এত কমে কি হয়? দশ হাজার খুব কম হয়ে যায়। আমার বি’শ হাজার লাগবে…….

বলে আরজা ও জেহেরের দিকে হাত বাড়ালো। জেহের সবার কান্ড দেখে মাথায় হাত দিয়ে নিচেই বসে পড়লো। তারপর হতাশ কন্ঠে বলে উঠলো……

–তোরা আমাকে বাঁচতে দিলিনা….

আরজা এইবার ভেংচি কে’টে বললো….

–আহ ম’রন টাকাই তো চেয়েছি তোমার জান তো চাই’নি। বেশি ফটফট করে না করে টাকা দাও। আমার ঘুম পেয়েছে ঘুমাব। থাক তোমার দেওয়া লাগবে না আমিই নিচ্চি…

বলেই জেহের কে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে টান দিয়ে ওর পকেট থেকে ওয়ালেট’টা বের করে টাকা বের করলো। গুনে দেখলো পনেরো হাজার টাকা আছে। তা দেখে আরজা মুখ’টা অন্য রকম করে বললো…..

–থাক পাঁচ হাজার টাকা মাফ করলাম…..

বলে ফাইজা’র দিকে টাকা গুলো এগিয়ে দিয়ে বললো….

–ননদিনী এইবার আমার জামাই’টাকে ছেড়ে দাও…..

জেহের বসা থেকে উঠে আরজার চুলে টান দিয়ে বললো…

–এহহ আমাকে নিঃস্ব করে দিয়ে এখন আইছে দরদ দেখাতে। লাগবে না তোর দরদ আমার……

জেহেরের কথা শুনে ফাইজা আর ফারদিন সশব্দে হেসে উঠলো। আর আরজা জেহেরের গলা জড়িয়ে আদর মাখা কন্ঠে বললো…..

—আহ বাবু রাগ করছো কেনো? তোমার মানেই তো আমার। আমার মানেই তো তোমার। আসো একটা চু’মু খাই তোমাকে……

বলে জেহের’কে চু’মু খাওয়ার জন্য তৈরি হতে’ই ফারদিন ফাইজা’র চোখে হাত দিয়ে জোরে চেঁচিয়ে বলে উঠলো…….

—আমরা এখানে আছিইইইই……

ফাইজা চোখ ছাড়াতে ছাড়াতে বললো….

–আরে চোখ ছাড়ুন আমি একটু দেখব….

বলে চোখ ছাড়িয়ে নিলো। জেহের এইবার আরজা’কে সরিয়ে ফাইজা’র সামনে গিয়ে ওর মাথায় গাট্টি মে’রে বললো….

—স্টুপিড আমি তোর বড় ভাই। লজ্জা করেনা তোর এইসব বলতে…..

ফাইজা কিছু বলতে যাবে তার আগেই আরজা এগিয়ে এসে বললো…..

–কি বলছো? লজ্জা করবে কেন? বেস্টুর রোমান্স দেখবে এতে লজ্জার কি আছে? তাইনা ননদিনী…..

বলে দুজনেই একসাথে হেসে দুজন’কে জড়িয়ে ধরলো। ফারদিন ফাইজার হাত ধরে অধৈর্য কন্ঠে ফাইজা’র কানে কানে বলে উঠলো…..

–জান আমরা কি এখানে দাড়িয়ে অন্যের বাসর দেখব। তাহলে, আমাদের’টা কি হবে?

ফারদিনের কথা শুনে ফাইজার হাসি মুখ’টা চুপসে গেলো। ভয়ে ঢোক গিললো বার কয়েক। ফারদিন জেহের আর আরজার উদ্দেশ্যে বললো…..

–আপনারা রোমান্স করুন আমরা যাই….

বলে ফাইজা’র হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো। আর ফাইজা যেতে যেতে জোরে চেঁচিয়ে বলতে লাগলো……

—অল দ্যা বেস্ট ভাবি আর ভাইয়া…..

ফাইজার কথায় আরজা লাজুক হাসলেও জেহের রাগান্বিত হয়ে “ঢং” বলে রুমে ঢুকে গেলো। আর আরজা এইবার আরো জোরে হেসে দিয়ে নিজে নিজেই বলে উঠলো….

–আজকে দেখো চান্দু তোমার কি হাল করি। আমাকে কষ্ট দেওয়ার ফল এইবার হাড়ে হাড়ে টের পাইবা তুমি……
____________________________________________
ফারদিনের রুমের সামনে এসেই ফাইজা নিজের হাত’টা ছাড়িয়ে নিয়ে দরজা আগলে দাড়িয়ে বলে উঠলো……

–ভাই আপনি ব্যবসায়ী একজন মানুষ। সাথে আবার কলেজের শিক্ষক। আপনার থেকে তো আমার পঞ্চাশ হাজার দাবি করা। আমি আবার খুব দয়ালু মানুষ তাই বেশিনা মাত্র পঁচিশ হাজার চাচ্ছি…..

ফাইজা’র কথা শুনে ফারদিন চোখ বড় বড় করলো। পরক্ষনেই মুখে দুষ্টু এঁকে চারদিকে নজর বুলালো। তারপর ফাইজা’কে চমকে দিয়ে ফাইজা’র ঠোঁট জোড়া নিজের করে নিলো। সেকেন্ড কয়েকপর ঠোঁট জোড়া ছেড়ে ফাইজা’র একদম কাছে ঝুঁকে বলে উঠলো….

–দিয়ে দিলাম তোমার পঁচিশ হাজার। কিছুক্ষন পর পঞ্চাশ হাজারের খালি ঘর’টা পূরণ করে দিব জান…..

ফাইজা’কে ঘেষে ফারদিন ভেতরে ঢুকে গেলো। এদিকে ফারদিনের কথা শুনে ফাইজা’র অটোমেটিক হেচকি উঠে গেছে……

#চলবে

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here