গোধূলি লগ্নের সেই তুমি পর্ব -০৩+৪

#গোধূলি_লগ্নের_সেই_তুমি
#লেখনীতে_জেনিফা_চৌধুরী
#পর্ব_তিন

প্রায় আধঘন্টা ধরে ফাইজা ওয়াশরুমের আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজের ঠোঁট ঘষে চলেছে। এত ঘষার ফলে ঠোট খানিক’টা ছিলে বিন্দু বিন্দু র’ক্ত বের হচ্ছে। ওর চোখ থেকে অনবরত পানি পড়ছে। রাগে, ঘৃনায় চিৎকার করে কাঁদতে মন চাচ্ছে। কিছুক্ষন আগের আগের ঘটনা’টি বার বার চোখের সামনে ভেসে উঠছে। ফাইজার শরীর ঠান্ডা হয়ে গেছে।

“কিচ্ছুক্ষন আগেই ছায়া মানব’টি ফাইজার হাতে পা’গলের মতো চুমু খাওয়া শুরু করলে ফাইজা ভয় জড়ানো কন্ঠে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে জোরে মা-বাবা বলে চিৎকার করতেই ছায়া মানব’টি ফাইজার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো। মুহূর্তেই ঘটনা’টি ফাইজার বুঝতে দেরি হলেও যখন বুঝতে পারলো তখন দুইহাতে ছায়া মানব’টিকে সরানোর চেষ্টা করতে লাগলো। ফাইজার চিৎকার শুনে ওর মা-বাবা এসে দরজা ধাক্কা দিতেই হঠাৎ করেই ছায়া মানব’টি ফাইজার ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে ফাইজার কপালে গভীর ভাবে চুমু এঁকে দিয়ে নিমিশেই হাওয়া হয়ে গেলো। ছায়া মানব’টি ছেড়ে যেতেই ফাইজা দেয়াল ঘেঁষে বসে কাঁপতে লাগলো। ওর চোখ থেকে নোনাজল গড়িয়ে পড়ছে। দম আটকে আসচ্ছে ওর, এক অদ্ভুত অনুভূতি ঘিরে রেখেছে, শ্বাস উধ্ব-গতীতে চলছে। ফাইজা মুখ চেপে ধরে কান্না নিবারনের চেষ্টা চালাচ্ছে। শরীর ঘেমে একাকার। ফাইজার বাবা_মা একাধারে দরজার ওপাশ থেকে ডেকেই যাচ্ছে। ফাইজা নিজেকে শান্ত করে চোখের পানি টুকু দুই হাতে মুছে নিয়ে লাইট অন করে গিয়ে দরজা খুলে শান্ত ভঙ্গীতে বলে উঠলো….

—আমি ঠিক আছি। একটা বা’জে স্বপ্ন দেখেছি তাই ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। তোমরা গিয়ে সুয়ে পড়ো।

বলেই উনাদের উওরের আশায় না থেকে দরজা বন্ধ করে দিয়ে সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে গিয়ে ঠোঁট ঘষতে লাগলো”

ফাইজা এইবার আয়নার দিকে চেয়ে দেখলো ঠোঁটের চারপাশ লাল টকটকে হয়ে আছে। ঠোঁট দুটো কাঁপছে এখনো। ওর চোখ দু’টো ফুলে উঠে লাল হয়ে আছে। ঠোঁটে ব্যাথা অনুভব করতেই মুখে কয়েকবার পানি দিয়ে বেরিয়ে এলো ওয়াশরুম থেকে। ফাইজা এখনো ভাবছে এইসব কিছু একটা বাজে স্বপ্ন এক্ষুনি ঘুম ভা’ঙ্গ’লে স্বপ্ন ভে’ঙে যাবে। কিন্তু না সব সত্যি। কিন্তু কে হতে পারে? ভাবতেই ফাইজা বার বার ভয়ে শিউরে উঠছে। জীবনের প্রথম কোনো পুরুষ এতটা গভীর ভাবে ফাইজা’কে ছুঁয়েছে। কিছুক্ষন আগের ঘটনা’টা মনে উঠতেই ফাইজা ঘৃনা আর ভয়ে মুখ চেপে ধরে ফুঁপিয়ে উঠলো। সারা-রাত আর ভয়ে যে ঘুম হবেনা তা বেশ বুঝতে পারছে। তাই, বেলকনির দিকে পা বাড়াতেই দেখলো বেলকনির দরজা’টা খোলা। ফাইজা কিছু একটা মনে করে সোজা বেলকনি’তে গিয়ে নিচে উঁকি দিলো। কিন্তু, ওদের ফ্লাট’টা পাঁচ তলা আর ফাইজা’রা চার তলায় থাকে। চার তলায় বেয়ে উঠার কোনো সিস্টেম নেই তাহলে ছায়া মানব’টি কি করে প্রবেশ করলো রুমে? বিভিন্ন চিন্তায় মাথা ব্যাথায় চোখ বন্ধ হয়ে আসচ্ছে ফাইজার। লাইফে প্রথম বার এতটা বাজে অনুভূতি নিয়ে একটা নির্ঘুম রাত কাটাতে হলো ফাইজা’কে। ভোরের দিকে শরীর দূর্বল লাগছিলো আর দাড়িয়ে থাকা সম্ভব হচ্ছিলো না বিধায় ফাইজা রুমে এসে আধ-শোয়া অবস্থায় বিছানায় গা হেলিয়ে দিলো।
____________________________________________
–স্যার, কাকন সিকদারের খোঁজ পেয়েছি। সে কাল বাংলাদেশে ফিরেছে। বর্তমানে বনানী’তে নিজের বাসায় আছে। আপনি বললে আজেই…….

ফোনের ওপাশ থেকে উপরোক্ত কথা গুলো শুনে মাঝরাস্তায় গাড়ি থামিয়ে দিলো ফারদিন। ওর চোখ দুটো মুহূর্তেই লাল হয়ে উঠতে লাগলো। ওপাশের ব্যাক্তি’টার উদ্দেশ্যে শান্ত কন্ঠে বললো……

—নো, এত সহজ ভাবে সব হতে দেই কি করে বলো? কাকন সিকদার তো এইবার বুঝবে ফারদিন আবসার (তাজ) কি করতে পারে?

বলেই একটা রহস্যময় হাসি দিয়ে ফোন কেটে দিলো। অনেকদিন পর নিজের শিকার’কে হাতে পেয়েছে। ফোন কেটে নিঃশব্দে চোখ বন্ধ করলো তখনি এক ভয়ংকর অতীতের ভয়ংকর দৃশ্য ভেসে উঠলো ফারদিনের চোখের সামনে তৎক্ষনাৎ ফারদিন হকচকিয়ে চোখ খুলতেই ওর চোখ দিয়ে দুই ফোটা জল গাল বেয়ে পড়তে লাগলো। এই একজন মেয়ের জন্য নিজের মায়ের পর দীদা’কে ছাড়া এত বছর ধরে ফারদিন কোনো মেয়ে’কে সহ্য করতে পারেনা। আর সেই মেয়ে’কে কি করে এত সহজে ছেড়ে দেওয়া যায়।
ভাবতেই মুচকি হেসে গাড়ি স্ট্যাট দিলো।
___________________________________________
ক্লাস রুমের একদম সবার পেছনের বেঞ্চে গাল দিয়ে বসে আছে আরজা। ওর পাশেই মুখ গুমড়া করে বসে আছে ফাইজা। ফাইজার সব কথা শুনে আরজা অনেক ক্ষন ভাবুক ভঙ্গীতে থেকে কূল-কিনারা না পেয়ে হতাশ কন্ঠে বলে উঠলো…..

— তুই নিশ্চয়ই স্বপ্ন দেখেছিস ফাইজু।

আরজার কথা শুনে ফাইজা চোখ গরম করে ওর দিকে তাকাতেই আরজা থতমত খেয়ে বললো…..

–আমার একদম বিশ্বাস হচ্ছেনা এসব। তুই একবার ভেবে দেখ, যতই বেলকনির দরজা খোলা থাকুক তোর রুম’টা চার তলায় তাহলে কি করে একজন তোর রুমে ঢুকে তোকেই স্পর্শ করে চলে আসবে। তাও আবার যেনো তেনো নয় একদম লিপ কিস। তওবা তওবা…..

আরজার কথা শুনে ফাইজার মুখ আবারো অন্ধকারে ছেয়ে গেলো। সত্যিই তো একজন সরাসরি ঠোঁটে চুমু খেয়ে বসলো। ভাবতেই ফাইজার কান্না চলে আসচ্ছে। আরজা হতাশ ভঙ্গীতে আবার ভাবতে বসলো। হঠাৎ করেই কালকের ছেলে’টা হন্তদন্ত হয়ে ফাইজার সামনে এসে দাড়ালো। ছেলেটা’কে দেখেই ফাইজার নিজের ব্যাথায় জর্জরিত হাত’টার কথা মনে পড়লো। ছেলেটা’কে দেখে আরজা মনে মনে কতগুলো গালী দিয়েও শান্ত হলো না। মুখ ফুটে রাগী স্বরে বলেই উঠলো…..

—শা’লার নাতী তোর সাহস তো কম না। তুই আবার আজকেও এসেছিস ডিস্টার্ব করতে। এই আরজার হাতের একটা থা’ব’ড়ানি খেলে জায়গায় দাড়িয়ে প্যান্ট নষ্ট করে দিবি। এক্ষুনি চোখের সামনের থেকে ফটাফট দূর হয়ে যা। নয়তো…….

বলেই ছেলে’টার মুখের সামনে ঘু”ষি উঠাতেই ফাইজা বিরক্তি’কর চাহনী নিক্ষেপ করে ওর হাত’টা ধরে বললো……

—বইন একটু চা’পাবাজি কম কর। মুখেই ফট ফট কাছের বেলা জিরো।

ফাইজার কথা শুনে আরজা’র ভাব নেওয়া মুখ’টা চুপসে গেলো। তা দেখে ফাইজা মিটমিট করে হাসচ্ছে। ফাইজা’কে হাসতে দেখে আরজা মুখ ফুলিয়ে পাশ ফিরে বসে পড়লো। ফাইজা এইবার ছেলে’টার দিকে তাকিয়ে দাতে দাত চে’পে বললো…..

—কালকের মতো যদি কিছু করার চিন্তা ভাবনা করিস। তাহলে….

আর কিছু বলার আগেই ছেলে’টা ভয়ার্ত কন্ঠে হাত জোড় করে বলতে লাগলো……

–আমাকে ক্ষমা করে দাও প্লিজ। আমি কাল বুঝতে পারিনি। আমাকে প্লিজ ক্ষমা করে দাও। আই প্রমিস আজকের পর কোনো মেয়ে’কে ডিস্টার্ব করব না। প্লিজ ফরগিভ মি…….

ছেলে’টার হঠাৎ এহেতুক কথায় ফাইজা আর আরজা দুজনেই শ’ক খাওয়া দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। আরজার চোখ বড় বড় করে প্রশ্ন করে বসলো…..

–লে বিড়া’ল বলছে আমি আর মাছ খাব না। যা তো ফট এখান থেকে। তোকে দেখলেই আবার র’ক্ত গুলো টগবগিয়ে উঠছে……

আরজা’র ধমক খেয়ে ছেলে’টা মাথা নিচু করে ক্লাস রুম ত্যাগ করলো। ক্লাসের কেউ কেউ ওদের দিকে তাকিয়ে ব্যাপার’টা বোঝার চেষ্টা করছে। ওদের দিকে একবার তাকিয়ে আরজা মুখ বাকিয়ে বলে উঠলো…..

—এখানে কি সিনেমা চলছে যে হা করে তাঁকিয়ে আছিস তোরা…..

আরজার কথায় সবাই যে যার মতো ব্যস্ত হয়ে পড়লো। কারন আরজা একনাম্বার ঝ’গড়াটে মেয়ে। ফারিহা এখনো অবাকের শেষ সীমানায়। আরজা ফারিহার উদ্দেশ্যে বলে উঠলো….

–এই হা”দা’রাম টা এত ভালো হলো কি করে বুঝতে পারছিনা। নিশ্চয়ই কোনো ঘাবলা আছে…..

–ঘাবলা তো আছে তুই খেয়াল করেছিস ছেলে’টার দুই হাতেই ব্যান্ডেজ করা। মুখে কেমন আতঙ্কিত ভাব। চোখ দুটো বার বার চারদিকে কাউকে খুঁজছিলো।

ফাইজার কথা শুনে আরজা হা হয়ে আছে। এত কিছু ও খেয়ালি করেনি। আর ফাইজা ভাবছে ছেলে’টার হঠাৎ এমন পরির্বতনের কারন কি?
____________________________________________
নিজের রুমে খাটের উপর পা তুলে গালে হাত দিয়ে বসে বসে রাতের আর কলেজের ছেলেটার কথা ভাবছিলো ফাইজা। আজ সারাদিনেও ফারদিন’কে কলেজের আশেপাশে দেখা যায়’নি। এতে অবশ্য ফাইজা খুশিই হয়েছে। এই লোক’টাকে দেখলেই ওর কাঁপা-কাঁপি শুরু হয়ে যায়। কিন্তু কিছুক্ষন পরেই তো পড়াতে আসবে তখন কোথায় লুকাবে ও? ভাবতেই ওর কান্না পাচ্ছে। ভাবতে ভাবতেই ফাইজার রুমে প্রবেশ করলো ফারদিন। ফারদিন কে দেখেই ফাইজা লাফিয়ে খাট থেকে নামতে গিয়ে ধড়াম করে নিচে পড়ে গেলো। পায়ে অবশ্য ব্যাথা পেয়েছে তাও ব্যাথা নিয়ে উঠে দাড়িয়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে সালাম জানালো। ফারদিন সালামের জবাব দিয়ে টেবিলের সামনে এসে চেয়ার টেনে বসতে বসতে প্রশ্ন করলো……

–ঠোঁটের সাথে কি যুদ্ধ করেছিলে এই অবস্থা কেনো?

প্রশ্ন’টা শুনেই ফাইজার চোখ বড় বড় হয়ে মুখ’টা অটোমেটিক হা হয়ে গেলো। কলেজেতো মাস্ক পড়া ছিলো বলে কেউ প্রশ্ন করেনি কিছু। কিন্তু এখন কোনো কথা নেই বার্তা নেই নি’র্ল’জ্জের মতো এমন একটা প্রশ্ন করে বসলো কি করে?
#গোধূলি_লগ্নের_সেই_তুমি
#লেখনীতে_জেনিফা_চৌধুরী
#পর্ব_চার

–ঠোঁটের সাথে যুদ্ধ কেনো করেছো? বললে না তো…

প্রথমবার প্রশ্ন করে উওর না পাওয়ায়। দ্বিতীয় বার প্রশ্ন’টা করে বসলো ফারদিন। ফাইজা মুখে হাত দিয়ে চোখ বড় বড় করে তাঁকিয়ে আছে ফারদিনের দিকে। ফারদিন চেয়ার টেনে বসে চুল ঠিক করতে করতে ভ্রু-যুগল কুচকে তাকালো ফাইজার দিকে। ফাইজা কয়েকবার ঢোক গিলে মিনমিনিয়ে বলতে লাগলো…..

–সোজা আমার ঠোঁটের দিকে নজর দিয়ে দিলো। ব্যা’টা ব’দের হা’ড্ডির সাথে সাথে এক নাম্বার লু’চু…….

ফাইজার মিনমিনে স্বরে বলা কথা ফারদিনের কান অব্দি না গেলেও ফারদিন আন্দাজ করতে পারছে ফাইজা দাড়িয়ে দাড়িয়ে কি বলছে। তাই হালকা করে গলা ঝেড়ে বলে উঠলো…..

—ঠোঁটের মধ্যে সাইনবোর্ড লাগিয়ে ঘুরে বেড়াবে আর আমারা নজর দিলেই দোষ।

ফারদিনের কথা শুনে ফাইজা’র কান্না করে দেওয়া ভাব। ফাইজার মুখের অবস্থা বুঝতে পেরে ফারদিন শান্ত স্বরেই বলে উঠলো……

—কাম এন্ড সিট কুইক..

ফাইজা কাঁপতে কাঁপতে এসে ফারদিনের পাশে চেয়ার টেনে বসে। কাঁপা কাঁপা হাতে বইয়ের দিকে হাত বাড়াতেই ফারদিন আচমকা ফাইজার হাত’টা ধরে ফেলতেই ফাইজা ভয়ে কেঁপে উঠলো। তা দেখে ফারদিন ফাইজার আড়ালে মুচকি হাসলো। পরক্ষণেই রাগী স্বরে বলে উঠলো…..

–হোয়াট হ্যাপেন্ড? এত কাঁপছো কেনো? আমি কি বা’ঘ নাকি ভা’ল্লু’ক খে’য়ে ফেলব তোমাকে? স্ট্যারেঞ্জ…….

বলেই হাত ছেড়ে দিলো। ফাইজার মনে হচ্ছিলো ওর দম বে’ড়িয়ে যাবে। ঠোঁটে ঠোঁট চে’পে চোখ মুখ খি’চে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করলো। নাহ! তাও ওর কাঁপা-কাঁপি কমছে না। ভয়ে ওর চোখে পানি টলমল করতে লাগলো। ফারদিন এইবার বিরক্তি’তে “চ” শব্দ করে কাছে থাকা স্কেল টা নিয়ে টেবিলের উপর জোরে বা’ড়ি মে/রে ধমকের স্বরে বললো…..

—এই মেয়ে, এক্ষুনি যদি কাঁপা-কাঁপি না থামিয়েছো তাহলে ধাক্কা দিয়ে চেয়ার থেকে ফেলে দিব। ননসেন্স….

ফারদিনের ধমকে আর ভয়ে ফাইজার চোখের অবাধ্য জল গুলো এইবার গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়তে লাগলো। ফাইজা নিজের দিকে তাঁকিয়ে ফারদিনের দিকে বই এগিয়ে দিতেই ফারদিন পড়ানো শুরু করলো। এক ঘন্টা পড়ানোর মধ্যে ফারদিন একশো’বার বেচারী’কে ধমক দিয়েছে। ফারদিন চলে যেতেই ফাইজা’র মনে হলো ওর দে’হে প্রান ফিরে এসেছে। ফাইজা কয়েকবার বুঁকে থু’থু দিয়ে নিজের চুল গুলো দুই হাতে এলোমেলো করে বলতে লাগলো……

—উফফ এই ফারদিন নামক উদ্ভট প্রা’নী’র টা’র জন্য আমার লাইফ’টা দুইদিনেই হেল হয়ে যাচ্ছে। ওহ আল্লাহ প্লিজ হেল্প মি। একদিনেই আমার এই অবস্থা বাকি দিন গুলো’তে আমার কি হবে?

বলতে বলতেই ফাইজা বাচ্চা’দের মতো ঠোঁট ফুলিয়ে কেঁদে উঠলো। দরজার আড়াল থেকে ফাইজার মা মেয়ের এই অবস্থা দেখে মুখ টিপে হেসে চলে যেতে যেতে বলতে লাগলো….

–একদম ঠিক হয়েছে। এইরকম একটা রাগী টিচার এই দরকার ছিলো তোর জন্য। বেছে বেছে একজন যোগ্য টিচার খুঁজে দিয়েছে আমাদের। আহা শান্তি……
____________________________________________
গভীর রাতে ঘুমের মধ্যে মুখের উপর কারোর গরম নিশ্বাস পড়তেই আচমকা ঘুম ভেঙে যায় ফাইজা। মস্তিষ্কের কাল রাতের ঘটনা মনে পড়তেই চোখে মেলে তাকাতেই দেখলো ওর দিকে একটা ছায়া মানব ঝুঁকে আছে। ফাইজা চিৎকার করার জন্য মুখ খুলতেই ছায়া মানব’টি ফাইজার মুখ চেপে ধরলো। ফাইজার শরীরে ভূমিকম্প শুরু হলো মুহূর্তেই। ছায়া মানব’টির মুখ একদম ফাইজার মুখের কাছাকাছি দুজনের মুখের মধ্যে এক ইঞ্চি পরিমান ফাঁকা জায়গা রয়েছে। ফাইজার চোখ বড় বড় করে হাত দিয়ে ছায়া মানব’টিকে সরানোর চেষ্টা করলো। নাহ জিম করা বডি’তে ফাইজার নরম হাতের ধাক্কার চুল পরিমান এফেক্ট পড়লো। বরং ছায়া মানব’টি এইবার ফাইজার দিকে আরেক’টু ঝুঁকে আসতেই ফাইজা নিজের মুখে দাড়ির সংঘর্ষ হতেই ফাইজা নড়েচড়ে উঠলো। ফাইজা’র গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলো। দুই চোখ বেয়ে মোটা মোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়তেই ছায়া মানব’টি হঠাৎ ফাইজার কাছ থেকে সরে গেলো। ছায়া মানব’টি সরে যেতেই ফাইজা লাফিয়ে উঠে জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে লাগলো। অন্ধকার রুমে পিন-পতন নিরবতার মাঝে নিশ্বাসের শব্দ’টা শুনতে বেশ ভয়ানক লাগছে। ফাইজার হৃদস্পন্দন বেড়ে মনে হচ্ছে এক্ষুনি হার্ট টা বের হয়ে যাবে দেহ থেকে। ফাইজা অন্ধকারের মাঝেও অনুভব করলো ছায়া মানব’টি ওর থেকে খানিক’টা দূরে দাড়িয়ে আছে। তার নিশ্বাসের শব্দ শব্দহীন রুমে শব্দ সৃষ্টি করছে।
ফাইজা লাফিয়ে খাট থেকে নেমে কাঁপা কাঁপা স্বরে বলে উঠলো…..

—কে আপনি? কেনো এমন করছেন আমার সাথে? আমি জানি আপনি এখানেই আছেন? উওর দিন প্লিজ? কে আপনি?

ফাইজার কাঁপা কন্ঠ শুনতেই ছায়া মানব’টি হুট করে ফাইজা’কে কালকের মতো দেয়ালের চেপে ধরলো। দুই হাতে ফাইজার দুই হাত দেয়ালের সাথে আকড়ে ধরে ফাইজার থুতনিতে নিজের গাল দিয়ে স্লাইড করতে লাগলো। হঠাৎ স্পর্শে ফাইজা কাঁপতে শুরু করলো। ওর কন্ঠনালী থমকিয়ে আছে। শ্বাস-প্রশ্বাস বেড়ে বুক উঠানামা করছে। কানের ঠোঁটে স্পর্শ পেতেই ফাইজার কাঁপুনি দ্বিগুন হয়ে গেলো। ফাইজা নিজের হাত ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টা করে যাচ্ছে। ফাইজার কাঁপুনি তে ছায়া মানব’টি ফাইজার সাথে আরো ঘনিষ্ঠ হয়ে অস্ফুট স্বরে ফাইজার কানে নেশালো কন্ঠে বলে উঠলো…..

– এত কাঁপা-কাঁপির কি আছে সুইটহার্ট। এখনো তো কিছু করলাম এই না। সো, ডির্স্টাব করো না সুইটহার্ট প্লিজ। না,হলে ঠোঁট’টের সাথে কাল সারাদিন ঘ’ষা’মা’জা করা লাগবে…….

বলেই দুই হাতে ফাইজার কোমড় জড়িয়ে নিজের সাথে আরো খানিকি’টা মিশিয়ে নিলো। এইবার ফাইজা ছায়া মানব’টির বুকের সাথে মিশে আছে। ছায়া মানব’টির কন্ঠ স্বর ফাইজা’কে ভাবাচ্ছে কে এই লোক? মুহূর্তেই শীতল হাতের স্পর্শে ফাইজার শরীরের কম্পন তীব্র গতীতে বাড়তে লাগলো। ছায়া মানব’টির উষ্ণ নিশ্বাস ফাইজার ঘাড়ে পড়ছে। ছায়া মানব’টি ফাইজার ঘাড়ে গভীর ভাবে চুমু খেলো। ফাইজা ঘন ঘন নিশ্বাস ফেলছে। এতে ছায়া মানব’টি অস্পষ্ট স্বরে বললো….

–এমন করে না সুইটহার্ট। নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছিনা যে……

বলতেই ফাইজার গলায় মুখ ডুবিয়ে কয়েকবার চুমু খেয়ে খেলো। ফাইজা সা’পের মতো মুচড়া-মুচড়ি করেই যাচ্ছে। ফাইজার মুচড়া-মুচড়িতে বিরক্ত হয়ে ছায়া মানব’টি ফাইজার ঘাড়ে আস্তে করে কা’মড় দিয়ে পূর্বের মতো অস্পষ্ট স্বরে বললো….

–বেশি নাড়াচাড়া তো সুইটহার্ট। তাহলে পরের বার লাভ বাইট’টা ঠোটে হবে আর এত জোরে হবে যে বাইরে বের হতে পারবে না……

ফাইজা বিদ্যুৎ গতীতে কেঁপে উঠলো। মনে হলো ও বিদ্যুৎ এর শক খেয়েছে। ফাইজা অজানা ভয়ে শিউরে উঠে বাচ্চা’দের মতো কেঁদে উঠলো। ফাইজার কান্নার স্বরে ছায়া মানব’টি ফাইজার থেকে একটু দূরে সরে কয়েকবার ঘন ঘন নিশ্বাস ছেড়ে। ফাইজার সামনে এসে ওর দুই গালে হাত রেখে শান্ত কন্ঠে বললো…..

—প্লিজ কান্না করো না। স্যারি। এক্ষুনি চলে যাচ্ছি…..

ফাইজার সেদিকে ধ্যান নেই ও ফুঁপিয়ে কেঁদেই চলেছে। ছায়া মানব’টি ফাইজার থেকে দূরে গিয়ে এক প্রকার শাসিয়ে বলে উঠলো…..

–ঐ ফারদিন আবসার তাজ এর থেকে যত’টা সম্ভব দূরে থাকবে সুইটহার্ট। নয়তো…….

বলতেই আর শব্দ শুনতে পেলো না ফাইজা। হঠাৎ করেই রুম’টা আগের মতো নিস্তব্দ হয়ে গেলো। ফাইজা দেয়াল ঘেঁষে বসে নিজেকে হাটুর ভাঁজে গুটিয়ে নিয়ে কেঁদে উঠলো। কি হচ্ছে ওর সাথে এসব? ফাইজার বুক এখনো কাঁপছে। তীব্র বেগে শরীর কাঁপছে। মস্তিষ্ক অজানা কোনো ঝড়ের সংকেত দিচ্ছে। কে এই ছায়া মানব? কেনো আসে ফাইজার কাছে? ভাবতেই ফাইজা আবারো কেঁদে উঠলো। হঠাৎ ম্যাসেজের শব্দে ফাইজা মাথা উঠিয়ে কৌতুহল বশত ফোন’টা ধরতেই একটা ম্যাসেজ ভেসে উঠলো……

“আমি কে খোঁজার চেষ্টা করো না সুইটহার্ট। ডোন্ট নো, তোমাকে দেখলে কেনো নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনা”

#চলবে…..

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here