গোধূলি লগ্নের সেই তুমি পর্ব -০১+২

কলেজের স্যারকে ভালোবাসি শব্দটা নির্লজ্জের মতো বলতেই ফাইজার গালে সজোরে পর পর দুইটা থা’প্পড় পড়লো। তাও ভরা রাস্তার জনসম্মুখে।রাস্তার মানুষজন কেউ কেউ হাসচ্ছে,, আবার কেউ সার্কাস দেখার মতো উচ্ছুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। লজ্জা আর অপমানবোধে ফাইজার চোখ বেয়ে শীতল অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। ফাইজা গালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে চোখের জল ফেলছে। ফাইজার সামনেই ফারদিন রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাকিয়ে আছে। রাগে ওর মাথা ফে’টে যাচ্ছে। ফাইজা ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠতেই ফারদিন চিৎকার করে বললো….

–এই মেয়ে, বয়স কত তোমার? টিচার কে রাস্তার মাঝে দাড়িয়ে প্রোপজ করছো। কোনো ভদ্রতা শিখো নি? কি শিক্ষা দিয়েছে তোমার পরিবার? এন্সার মি?

ফাইজার কান্নার বেগ এইবার বেড়ে গেলো। ফারদিন পূর্নরায় চেঁচিয়ে বলে উঠলো….

—স্টপ ক্রায়িং এন্ড এন্সার মাই কুয়েশ্চন?

ফাইজার পাশে ওর ফ্রেন্ডরা ভয়ে কাচুমাচু হয়ে দাড়িয়ে আছে। ফাইজা ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকানোর চেষ্টা করে বললো…

—স্যারি স্যার। আসলে এটা একটা ডেয়ার ছিলো। আমাকে ভুল বুঝবেন না স্যার প্লিজ। আমাকে ক্ষমা করে দিন স্যার প্লিজ…..

বলেই ফাইজা আবারো কান্না করে দিলো। ইতোমধ্যেই ফাইজার গাল দুটো লাল হয়ে আছে। গালে আঙ্গুলের ছাপ স্পষ্ট। কান্না করার ফলে ঠোঁট দুটো আরো গোলাপি হয়ে উঠেছে। চোখের পানিতে পুরো মুখ ভিজে একাকার অবস্থা। ফারদিন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ফাইজাকে একবার দেখে নিলো। ৫ ফুট ২/৩ ইঞ্চি হবে হয়তো। গায়ের রঙ খুব বেশি ফর্সা না হলেও এই রঙটাকে ফর্সা বললেই চলে। পড়নে কলেজের সাদা ড্রেস আর চুল বেনুনী করে সামনে এনে রেখেছে। কপালে কাটা চুল গুলো ছড়িয়ে আছে। দেখতে বেশ মায়াবী লাগছে। ফারদিনকে চুপ থাকতে দেখে ফাইজা অশ্রুসিক্ত চোখে ফারদিনের দিকে তাকাতেই ফারদিন দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে নিজেকে শান্ত করে চোখে মুখের রাগী ভাব এনে বলে উঠলো….

— টিচারের সাথে এই ধরনের ফান করাকে অভদ্রতা বলে। তোমাকে দেখে আমি যথেষ্ট ভদ্র মনে করেছিলাম। নেক্সট টাইম এমন কিছু করলে পরিনতি বাজে হবে।

ফারদিনের কথা শেষ না হতেই ফাইজা ফুঁপিয়ে কেঁদে বলে উঠলো…

–স.স.সস্যারি স্যা..

পুরো কথাটা শেষ হওয়ার আগেই ফারদিন ধমক দিয়ে বলে উঠলো…

–গেট আউট ফ্রম মাই আই’স…..

বলতেই ফাইজা টলমল জল ভর্তি চোখে একবার ফারদিনের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে চোখের জল মুছতে মুছতে চলে গেলো। ফাইজা চলে যেতেই ফারদিন গাড়িতে গিয়ে বসে সিটে মাথা হেলিয়ে দিয়ে মুখ চেপে ধরে একটা বড় করে নিশ্বাস ছাড়লো। হাত দুটো বেগতিক ভাবে কাপছে। চুল গুলো এলোমেলো হয়ে চোখের উপরে ছড়িয়ে আছে। পানির বোতলটা বের করে কয়েক ঢোক পানি খেয়ে নিলো। গাড়িতে এসি চলছে তাও ফারদিনের অস্বস্তি হচ্ছে। এই অস্বস্তির কারন ওর জানা নেই। এখন আরো বেশি রাগ লাগছে ওর। ফারদিন রাগে হাত মুষ্টি বদ্ধ করে নিলো। এই মুহূর্তে ওর ভীষন রাগ লাগছে। এই রাগ, এই অস্বস্তির কারন কেনো জানা নেই ওর? ফারদিন চুল গুলো একবার খামচে ধরে আবার সিটে মাথা হেলিয়ে দিলো। পরক্ষনেই আবার মাথা উঠিয়ে ঘাড়ের দুই পাশে হাত রেখে নিজেকে শান্ত করে গাড়ির স্ট্যায়ারিং এ ঘু’ষি মে/রে বললো…..

–হোয়াই? আই কা’ন্ট কন্ট্রোল মাইসেল্ফ? হোয়াট’স হ্যাপেনিং টু মি?

বলেই কিছুক্ষন ঘনঘন শ্বাস নিয়ে চোখ বন্ধ করতেই আবার সেই চোখ দুটো ভেসে উঠলো। ফারদিন তাড়াতাড়ি চোখ খুলে গাড়ি স্ট্যাট দিলো।
____________________________________________
ফাইজা বাসায় আসতেই ওর মা হাজার টা প্রশ্ন করেছে গালে দাগ দেখে কিন্তু, অপর পাশ থেকে মেয়ের কোনো উওর না পেয়ে বিরক্ত স্বরে বললো…

–নিশ্চয়ই পড়া না দেওয়ার জন্য মা’র খেয়েছিস। নতুন নতুন কলেজে পা রেখেছিস কোথায় পড়া দিয়ে স্যারদের কাছে ভালো হবি তা না করে মা’র খেয়ে বাসায় ফিরচ্ছিস। আজকেই তোর বাবাকে বলতে হবে তোর জন্য যেনো ভালো একটা টিউশন টিচার খোঁজে।

ফাইজা ওর মায়ের বকবকানিতে বিরক্ত হয়ে ব্যাগটা সোফায় ফেলে বড় বড় পা ফেলে রুমে চলে গেলো। পেছন থেকে নাদিয়া বেগম মেয়ের যাওয়ার পানে তাকিয়ে ব্যাগটা গুঁছিয়ে রেখে কিচেনে চলে গেলো।
বাবার ডাকে ফাইজা চোখ মেলে তাকাতেই নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করতেই মনে পড়লো। সেই কলেজ থেকে ফিরে রুমে এসে কাঁদতে কাঁদতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছে নিজেও জানেনা। ঘড়ির দিকে চোখ যেতেই দেখলো ঘড়ির কাটা তিনটা ছুঁই ছুঁই। এখনো ড্রেসটা অব্দি খোলা হয়নি। ফাইজা দ্রুত বিছানা ছেড়ে উঠে দরজা খুলতেই বাবা হাসনাতের দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মুখটা দেখতেই ফাইজা মুচকি হেসে বলে উঠলো….

—আমি ঠিক আছি বাবা। তুমি টেবিলে বসো আমি পাঁচ মিনিটে খেতে আসচ্ছি।

মেয়ের থেকে অভয়বানী পেয়ে মেয়ের মাথায় আলতো হাতে হাত বুলিয়ে চলে গেলো হাসনাত। ফাইজা ওয়াশরুমে ঢুকে আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বের দিকে তাকাতেই দেখলো দুই গাল এখনো খানিকটা লাল হয়ে আছে। কান্না করার ফলে চোখের কোনা লাল হয়ে ফুলে আছে। ফাইজা রাস্তার ঘটনাটা ভুলে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে চলে গেলো।
খাবার টেবিলে বসতেই হাসনাত শেখ খাবার মুখে দিতে দিতে বলে উঠলো…

–কি মামনি শুনলাম আজ তুমি পড়া দিতে পারো নি। এটা কি ঠিক?

ফাইজা ওর বাবার কথায় নিচের দিকে তাকিয়ে খাবারে মনোযোগী হলো। হাসনাত শেখ কিছুক্ষন বাদে আবার বলে উঠলো….

—আজ থেকে তোমার টিউশন টিচার আসবে বিকেলে। পড়ায় যেনো কোনো গাফিলতি না দেখি। মনে রেখো, তোমাকে ঘিরেই আমার স্বপ্ন।

ফাইজা কিছু না বলে মাথা নাড়িয়ে চুপচাপ খেয়ে চলেছে। টিচার শব্দটা শুনলেই ফাইজার সকালের কাহিনী আর ফারদিনের চেহারাটা চেসে উঠছে বার বার।
____________________________________________
ফারদিন বাসায় কলিং বেল বাজাতেই একটা বয়স্ক মহিলা এসে দরজা খুলে দিলো। মহিলাটার বয়স ষাটোর্ধ হলেও দেখে মনে হয় এখনো পঞ্চাশঘরে পা রাখেনি। ফারদিন কে দেখেই সায়মা খানম বুঝতে বাকি রইলো না ছেলেটা রেগে আছে। ফারদিন কিছু না বলে সিড়ির দিকে পা বাড়াতেই পেছন থেকে সায়মা খানম শান্ত কন্ঠে বলতে লাগলো….

—আজকেও তোমার বাবা এসে তোমার খোঁজ করে গেছে। কত দিন আর বাবা ছেলের এই যুদ্ধ চলবে?

রাগের শরীরে ফারদিন বাবা নামক শব্দটা শুনে আরো দ্বিগুন রেগে গেলো। সিড়ির পাশে ভাজ’টা ঝড়ের গতীতে ছুড়ে মে’রে সায়মা খানমের সামনে ছুটে এসে চিৎকার করে বলে উঠলো…..

—পৃথিবীতে আমি দুইটা শব্দ সব থেকে বেশি ঘৃনা করি। “বাবা” এন্ড “মেয়ে” এই দুইটা শব্দ আমি সবথেকে বেশি ঘৃনা করি। আই হোপ ইউ নো দ্যাট ।

বলতেই সায়মা খানম ফারদিনের কাঁধে হাত রেখে স্বান্তনা বানীতে পূর্নরায় শান্ত কন্ঠে বললো….

—ক্লাম ডাউন নানুভাই। প্লিজ, ক্লাম ডাউন। লিস্টেন টু মি, বাবা একটা মধুর শব্দ। বাবা নামক ব্যাক্তিটা শ্রদ্ধার ব্যাক্তি। প্রত্যেক সন্তানের বটবৃক্ষ তার বাবা। বাবা না থাকলে পৃথিবীটা কতটা অসহায় যার বাবা নেই সেই বুঝবে। তাই একজন নিকৃষ্ট বাবার জন্য তুমি পুরো বাবা জাতীকে অসম্মান করতে পারো না। এন্ড পৃথিবীতে ভালো_খারাপ উভয় মানুষ বসবাস করে। সব ছেলেরা যেমন খারাপ হয়না, তেমনি সব মেয়েরাও খারাপ হয়না। তাই তুমি একজন নারীর জন্য সব নারীর দিকে আঙ্গুল তুলতে পারোনা সেই রাইট’স তোমার নেই। আমিও নারী, আমিও মা, আমিও মেয়ে, আমিও বউ। এখন তুমি আমাকেও বলবে আমি খারাপ, চরিত্রহীন। আমাকে ও এখন ঘৃনা করবে?

সায়মা খানমের কথা গুলো শুনে ফারদিন রাগে পুরো সামনে থাকা সোফায় লা/থি মে’রে বললো…..

–প্লিজ দীদা। আমাকে আর এইসব বুঝাতে এসো না। তুমি সব জেনেও কেনো বলছো এইসব?হ্যা,আমি মানছি সব মেয়েরা খারাপ না কিন্তু আমি কি করবো? আমি সব মেয়ের মাঝে ঐ ঘৃনিত একজনের প্রতিচ্ছবি দেখতে পাই। আমার লাইফে তুমি ব্যাতিত অন্য নারী থাকবে ন…….

পুরো কথা শেষ না করেই হঠাৎ থেমে গেলো ফারদিন। কিছু একটা ভেবে চোখ বন্ধ করতেই তৎক্ষনাৎ চোখ খুলে সোজা সিড়ি দিয়ে উপরে যাওয়ার জন্য পা বাড়িয়ে আবার পেছন ফিরে শান্ত কন্ঠে বললো…..

—নেক্সট টাইম আমার সামনে বাবা নামক শব্দটা উচ্চারণ করবেনা দীদা। গট ইট……
#গোধূলি_লগ্নের_সেই_তুমি
#লেখনীতে_জেনিফা_চৌধুরী
#পর্ব_দুই

–বাবা “আই হেট দিস ওয়াড” আই ডো’ন্ট লাইক হেয়ারিং দিস ওয়াড ”

রুমে ঢুকে উপরোক্ত কথা বলেই ফারদিন দরজাটা শব্দ করে বন্ধ করে দিলো। রাগে ওর শরীর কাঁপছে।
ফারদিন খাটের উপর বসে দুই হাত দিয়ে মুখ চেপে বড় বড় নিশ্বাস ছাড়ছে। যতবার বাবা নামক ব্যাক্তিটার কথা ওর সামনে আসে ততবার ওর ভয়ংকর অতীতের দৃশ্য গুলো ভেসে উঠে চোখের সামনে। ওই লোকটা যদি ওর বাবা না হতো তাহলে নিজের হাতে ওই লোক’টাকে খু/ন করতো। অনেক বার চেষ্টা করেছিলো কিন্তু পেরে উঠেনি। সাদা শার্ট’টা ঘামে ভিজে শরীরের সাথে লেপ্টে আছে। ফোনের আওয়াজে ফারদিন নিজেকে শান্ত করে ফোন রিসিভ করে বেলকনিতে চলে গেলো।
____________________________________________
ফাইজা চুপ চাপ নিজের বিছানায় বসে পা দুলাচ্ছে। চারটার দিকে নতুন টিচার আসার কথা এখন চার’টা পাঁচ বাজে তাও আসেনি। এতে ফাইজার মুখে বিরক্তি ফুটে উঠেছে। ফাইজা বসে বসে নতুন টিচারের গুষ্টি উদ্ধার করছে। তখনি নাদিয়া বেগম রুমে ঢুকে হতাশ ভঙ্গীতে ফাইজার পাশে বসে বললো….

–তোর জন্য তোর বাবা যেই টিচার ঠিক করেছিলো। সে এখন ফোন করে বারন করে দিলো। বললো তার নাকি সময় হবেনা তাই পড়াতে পারবেনা।

মায়ের কথা শুনে ফাইজার ঠোঁটে চওড়া করে হাসির রেখা ফুটে উঠলো। কিন্তু হাসিটা স্থায়িত্ব কাল বেশি ক্ষন রইলো না কারন ফাইজার মা পরক্ষনেই বলে উঠলো…..

–তাই সে নিজেই, তোদের কলেজে নাকি নিউ একজন টিচার এসেছে তাকে ঠিক করে দিয়েছে…..

কথাটা শুনেই ফাইজা এক প্রকার লাফিয়ে উঠে জোরে বলে উঠলো….

—কিহ….

ফাইজার এহেতুক রিয়েকশনের নাদিয়া বেগম ভ্রু যুগল কুচকে ওর দিকে সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকাতেই ফাইজা আমতা আমতা করে বলে উঠলো…..

–না মানে। আমি তো জানতাম না আমাদের কলেজে নিউ টিচার এসেছে। আর কবে থেকে আসবে….

ফাইজার কথা শুনে ওর মা শান্ত ভঙ্গীতে পা দুলাতে দুলাতে বলে উঠলো…..

—কাল থেকে আসবে। আর তোকে এতসব ভাবতে হবেনা। যা গিয়ে টেবিলে পড়তে বস….

বলেই নাদিয়া বেগম চলে যেতেই ফাইজা মাথায় হাত দিয়ে খাটের সামনে মেঝেতে ধপ করে বসে পড়লো। কারন, কলেজে নিউ টিচার হিসেবে ফারদিন যোগ দিয়েছে কয়েকদিন ধরে। ফাইজা ভয়ে কয়েকবার ঢোঁক গিলে মিনমিনে স্বরে বললো…..

—“যেখানে বা’ঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়” এখন আমার কি হবে?

ভাবতেই ফাইজার মন চাচ্ছে নিজের চুল নিজে ছি’ড়ে ফেলতে। ভয়ে বুকের ভেতর’টা ধুকপুক করছে। ফাইজা রুমে পায়চারি করছে হাত কচলাচ্ছে বার বার। ফাইজা যখন বেশি টেনশনে তখন এমন করে। ওর মনে একটাই ভয়, স্যার যদি এসে বাসায় বলে দেয় আজ সকালে ফাইজা স্যার’কে প্রোপজ করেছিলো তাহলে কি হবে? ভাবতেই ফাইজার কান্না চলে আসচ্ছে।
____________________________________________
–“গোধূলি লগ্নের সেই তুমি” এইরকম ক্যাপশনের মানে কি? স্যার কি তবে প্রেমে পড়লো ফাইজু? নাকি স্যারের গার্লফ্রেন্ড আছে?

এই নিয়ে পাঁচবার প্রশ্নটা করলো আরজা। ফাইজা এইবার বিরক্ত হয়ে আরজার দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে বলে উঠলো…..

—স্যার প্রেমে পড়ুক বা তার হাজার খানেক গার্লফ্রেন্ড থাকুক তাতে তোর সমস্যা কোথায়? যদি সমস্যা থাকে তাহলে সরাসরি স্যার’কে গিয়ে প্রশ্ন কর। আমার মাথা খাওয়ার মানে কি?

ফাইজার কথা শুনে আরজা মুখ বাঁকিয়ে বললো….

—বাহ রে আমার ক্রাশের গার্লফ্রেন্ড আছে নাকি আমার জানতে হবেনা। যদি সিট ফাঁকা থাকে তাহলে তো একবার পটানোর ট্রাই করতে পারব…..

আরজার কথা শুনে ফাইজা বড় বড় চোখ করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। এ মেয়ে বলে কি? স্যার’কে পটানোর ট্রাই করবে। ফাইজা ভেবে পায়না একটা মেয়ের কতগুলো ক্রাশ থাকতে পারে। একটু সুন্দর ছেলে দেখলেই এ মেয়ে ক্রাশ খেয়ে বসে থাকে। ক্লাসরুমে বসে বসে আরজার বকবক শুনতে ওর ইচ্ছে করছেনা। আজ ফারদিনের ক্লাস আছে। এটা ভেবেই ফাইজা টেনশনে ম/রে যাচ্ছে। ফাইজা বড় করে একটা নিশ্বাস ছেড়ে কিছু বলতে যাবে তখনি ফারদিন রুমে ঢুকে। ফারদিন’কে দেখেই ফাইজার কাঁপা-কাঁপি শুরু হয়ে গেলো। ফারদিন হাতের ইশারায় সবাই’কে বসতে বললে সবাই বসে পড়লো। কিন্তু ফাইজা এখনো দাড়িয়ে আছে। ফাইজা’কে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ফারদিন ধমকের স্বরে বলে উঠলো….

—হেই ইউ. হোয়াই আর ইউ স্ট্যাডিং?

ফারদিনের আওয়াজ শুনতেই ফাইজা ধপ করে বসে পড়লো। আরজা মুখ টিপে টিপে হাসচ্ছে ফাইজার কমকান্ডে৷ ক্লাস চলাকালীন ফাইজার পেছনের বেঞ্চে একটা ছেলে বসে অনেকক্ষন যাবৎ পেছন থেকে ফাইজার চুল টানছে। ফাইজা অনেকবার কিছু বলতে গিয়েও চুপ করে ক্লাস শেষ হওয়ার অপেক্ষা করছে। আবার ফাইজার চুলে টান পড়তেই এইবার রাগে ফাইজা দাড়িয়ে গিয়ে সোজা পেছনে ফিরে ছেলেটার চুল টে’নে ধরে চেঁচিয়ে বলে উঠলো…..

—এই তুই কি কা’না দেখতে পাস না নাকি। আরেকবার যদি আমার চুল হাত দিয়েছিস তাহলে তোর কপালে শনি আছে। মাইন্ড ইট…..

বলেই ফাইজা সামনে ঘুরতেই দেখলো ক্লাসের সবাই ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ফারদিনের দিকে তাকাতেই দেখলো ফারদিন রাগী চোখে ওর দিকে তাকিয়ে। রাগে ফাইজা এক মুহূর্তের জন্য ভুলে গিয়েছিলো ও ক্লাসে। ফারদিন’কে এগিয়ে আসতে দেখে ফাইজা ভয়ে মনে মনে দোয়া দুরুদ পড়া শুরু করে দিয়েছে। ফারদিন এগিয়ে এসে উঁচু স্বরে জিজ্ঞেস করলো……

—হোয়াট হ্যাপেন্ড?

ফাইজা ভয়ে আমতা আমতা করে কিছু বলার আগেই পেছনের ছেলে’টা বলে উঠলো….

–স্যার ওর চুল বার বার আমার খাতার উপর পড়ছিলো বলে আমি সরিয়ে দিচ্ছিলাম। আর ও বলছে আমি নাকি ওর চুল ধরে টানছি। তাই ও আম….

ছেলেটা আর কিছু বলার আগেই ফারদিন ওকে হাতের ইশারায় চুপ থাকতে বলে ফাইজার তাকিয়ে ধমক দিয়ে বললো…..

-এটা ক্লাস ভুলে গেছো। ক্লাসের মধ্যে দাড়িয়ে উচ্চস্বরে কথা বলছো কেনো?

ফাইজা কিছু বলার আগেই ফারদিন আরজার সামনে থেকে স্টিলের স্কেল’টা নিয়ে ধমক দিয়ে বললো…..

—নো ওয়াড’স। হাত বাড়াও……

ফাইজা ভয়ে এখনো কাঁপছে। ফাইজা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠলো….

—স্যারি স্যার। আর হবেনা….

ফারদিন এইবার পূর্বের চেয়ে দ্বিগুন ধমক দিয়ে বললো…..

—কি বলছি শুনতে পাও নি। হাত বাড়াও…..

অগত্যা ফাইজা ভয়ে ভয়া হাতের বাড়িয়ে দিতেই ফারদিন স্কেল দিয়ে জোরে পর পর দুইটা বা’ড়ি দিয়ে বলে উঠলো….

—নেক্সট টাইম ক্লাসে ভদ্রতা বজায় রাখার ট্রাই করবে নয়তো ক্লাস থেকে বের করে দিব। রাবিশ….

বলেই ফারদিন ক্লাস থেকে সোজা বের হয়ে গেলো। ক্লাসের সবাই ফাইজার দিকে তাকিয়ে হাসচ্ছে। ফাইজার হাতের তালু লাল টকটকে হয়ে গেছে মনে হচ্ছে এক্ষুনি রক্ত বের হয়ে যাবে। ওর চোখ থেকে টপ টপ করে পানি পড়ছে। হাত জ্বলে প্রচন্ড ব্যাথা করছে। আরজা অসহায় মুখ করে ফাইজার হাত’টা টেনে ব্যাগ থেকে বোতল বের করর পানি দিয়ে ডলে দিলো। এতে মনে হলো ব্যাথা’টা আরো বেড়ে গেলো। ফাইজা এইবার ব্যাথায় ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। পেছনের ছেলে’টা শিস বাজাতে বাজাতে বলে উঠলো….

—আমাকে শাসিয়ে ছিলি না এখন দেখ কেমন লাগে?

বলেই একটা বিশ্রি হাসি দিয়ে শিস বাজাতে বাজাতে বাইরে চলে। ফাইজা ব্যাগের উপর মাথা রেখে ফুঁপিয়ে কেদেই চলেছে। আরজা ওর মাথায় আস্তে আস্তে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে৷ ব্যাথা যে প্রচন্ড জোরে লেগেছে আরজা বেশ বুঝতে পারছে। আরজা এইবার রাগ নিয়ে বলে উঠলো….

—স্যার পুরো বিষয়’টা না জেনেই এইবার মা/রলো কেনো তোকে? তোকে তো কিছু বলার সুযোগ এই দিলো না………

ফাইজা উওর না দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে ব্যাগ নিয়ে বেড়িয়ে গেলো। আরজা ওর পেছন পেছন যাওয়ার জন্য দরজায় আসতেই দেখলো স্যার আসচ্ছে। তাই আরজা ভয়ে আবার ক্লাসে ঢুকে গেলো।
____________________________________________
ফারদিন কলেজ থেকে বেড়িয়ে গাড়ির সামনে এসে গাড়িতে কয়েকবার লা/থি মে/রে এক হাতে কপালে স্লাইড করতে করতে বললো….

—এই মেয়েটা’কে দেখলে কেনো আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনা?
____________________________________________
হাতের ব্যাথায় ফাইজার জ্বর এসে পড়েছে। কলেজ থেকে ফিরে না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়েছিলো। সন্ধ্যার দিকে চোখ খুলতেই বুঝলো গায়ে প্রচন্ড জ্বর আর ব্যাথা। ফাইজার বাবা মা দুজনেই চিন্তায় শেষ। ওষুধ দিয়ে ঘুম পারিয়ে দিয়ে গেছে। কোনো কিছুর আওয়াজে ফাইজার ঘুম ভেঙে যেতেই ড্রিম লাইটের আপসা আলোয় চারদিকে কাউকে দেখতে পেলো। তাও ফাইজার মন টা খচখচ করছে তাই বিছানা ছেড়ে উঠে বসতেই মাথায় ব্যাথায় মাথা চেপে ধরলো। ক্লান্ত, দূর্বল শরীর নিয়ে বিছানা থেকে নেমে চারদিক’টা ঘুরে দেখে কাউকে দেখতে না পেরে ভাবলো হয়তো মনের ভুল৷ এই ভেবে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো। ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে ড্রিম লাইট টা বন্ধ করে বিছানার কাছে যেতেই একটা শীতল হাত ফাইজার হাত চেপে ধরতেই ঘটনার আকস্মিকতায় ফাইজা কেঁপে উঠলো ভয়ে। অন্ধকারের মাঝেও চাদের আলো জানালা ফাঁক করে রুমে পড়ায় ফাইজা স্পষ্ট দেখছে একটা ছায়া মানব ফাইজার সামনে দাড়িয়ে আছে। ভয়ে ফাইজা চিৎকার করার শক্তি হারিয়ে ফেলছে।গলা আটকে আসচ্ছে। শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে চিৎকার দিতেই ছায়া মানব’টি ফাইজার মুখ চেপে ধরে ওকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো। ফাইজা “উম,উম’ শব্দ করে যাচ্ছে। ছায়া মানব’টি এক হাতে ফাইজার মুখ চেপে ধরে আছে। হঠাৎ করেই হাতে কারোর ঠোঁটের উষ্ণ ছোঁয়া পেতেই ফাইজা কেঁপে উঠলো। ওর সারা শরীর জুড়ে শীতল শিহরন ছেয়ে গেলো। ফাইজা মুহূর্তেই ঠকঠক করে কাঁপতে লাগলো। ছায়া মানবটি ফাইজার মুখের থেকে হাত সরিয়ে ওর দুই হাতে মনের মতো চুমু খেতে লাগলো। ফাইজা রোবটের মতো শক্ত হয়ে দাড়িয়ে আছে। ওর সাথে কি ঘটছে ও বুঝতে পারছেনা। ওর চোখ থেকে গড়িয়ে পানি পড়ছে। ছায়া মানব” টির উষ্ণ নিশ্বাস ওর মুখের উপর পড়ছে। ফাইজার মস্তিষ্ক বার বার প্রশ্ন করছে কে এই ছায়া মানব?

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here