গোধূলি লগ্নের সেই তুমি পর্ব -০৮+৯

#গোধূলি_লগ্নের_সেই_তুমি
#লেখনীতে_জেনিফা_চৌধুরী
#পর্ব_সাত

কলেজের ক্যাম্পাসে সবার সামনে আচমকা ফাইজার গালে থা’প্পড় পড়লো। মুহূর্তেই ওর কান গরম হয়ে চিনচিনে ব্যাথা শুরু হলো। গালের হা’ড্ডি গুলো বোধহয় ভেঙে গেছে এমন লাগছে। গাল জ্বলে যাচ্ছে। ব্যাথায় চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়তো। ফাইজা’র সামনেই ফারদিন রাগী দৃষ্টি’তে তাঁকিয়ে আছে। ফারদিন’কে দেখেই মনে হচ্ছে ও অনেক রেগে আছে। কলেজের ক্যাম্পাসে আরজা আর ফাইজা বসে গল্প করছিলো। ওদের পাশেই দুইটা ছেলে বসে গল্প করছিলো। আর, তখনি হুট করে ওর গালে থা’প্পড় পড়ায় সবাই ভরকে গেলো। ফারদিন’কে দেখেই ওরা তিন জন চুপ করে রইলো। আরজা ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে দাড়িয়ে ফাইজা’র পেছনে লুঁকিয়ে পড়লো। আর ফাইজা অশ্রু ভর্তি চোখে সারা ক্যাম্পাসে একবার চোখ বুলাতেই দেখলো উপস্থিত সবাই ওদের দিকে চেয়ে আছে। কিছু মেয়ে মিটমিটিয়ে হাসচ্ছে। লজ্জা আর অপমানে ফাইজার মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে। হঠাৎ, করেই ফারদিনের প্রতি রাগে ফাইজার চোয়াল শক্ত হয়ে এলো। চোখ দুটো মুহূর্তেই তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিলো ফারদিনেফ দিকে। রাগে ফেটে পড়ে আচমকা সবাই’কে অবাক করে দিয়ে ফারদিনের কলার চে’পে ধরলো। ফারদিন ফাইজার এহেতুক আচরণে অবাক হয়ে দাড়িয়ে রইলো। ফারদিন নিজের কলার ছুটানোর জন্য ফাইজার হাত চে’পে ধরতেই ফাইজা চেঁচিয়ে বলে উঠলো…..

—কেনো আমার গায়ে হাত দিলেন? কথায় কথায় আমার গায়ে হাত তোলার অধিকার আপনাকে কে দিয়েছে? কি ভেবেছেন? আমার কোনো আত্মমর্যাদা নেই। সব সময় চুপ থাকি বলে আমার সাথে যখন যেখানে ইচ্ছে যেমন খুশি তেমন ব্যবহার করবেন। হাউ ডেয়ার ইউ মিস্টার ফারদিন আবসার তাজ। আজকে আপনাকে আমার সব প্রশ্নের উওর দিতেই হবে। কে আপনি? কোন অধিকারে আমার গায়ে হাত তুলেন সব সময়? শুধুমাত্র আপনাকে ভালোবাসি আর আপনি আমার স্যার বলে এতদিন সব’টা মুখ বুঝে মেনে নিয়েছি। আজকে আপনাকে জবাব দিতে হবে। এন্সার মি…….

রাগে ফাইজা কি বলছে ও নিজেও বুঝতে পারছে না। রাগে আর লজ্জা অপমানে ফাইজা চিৎকার করে কেঁদে উঠলো। আর ফারদিনের কানে এখনো একটা শব্দ বাজচ্ছে” আপনাকে ভালোবাসি”। ফারদিন যেনো নিজের কান’কেই বিশ্বাস করতে পারছে না। ফাইজা হঠাৎ করেই সবার সামনে ফারদিন’কে জড়িয়ে ধরে জোরে কান্না করতে লাগলো। এইবার উপস্থিত সবাই বিস্ময়ের শেষ সীমানায়। আরজা মুখ’টা হা করে তাঁকিয়ে আছে ওদের দিকে। ফারদিন এখনো ঘোরের মধ্যে আছে। ফাইজা যখন আরজার সাথে কথা বলছিলো তখন ওর ওড়না’টা বুকের এক সাইড থেকে সরে গিয়েছিলো। আর তখন ফাইজা’র পাশে বসে থাকা ছেলে’টা লোভাত্তুর দৃষ্টি’তে সেদিকে তাঁকিয়ে পাশের ছেলে’টাকে কিছু একটা ইশারা করে ফাইজা’র দিকে হাত বাড়াতে লাগলো। ফাইজা কথায় এতই ব্যস্ত ছিলো যে সেদিকে ওর কোনো ধ্যানেই ছিলো না। ফারদিন ক্যাম্পাসে ঢুকতেই এই দৃশ্য দেখে ওর রাগে কপালের রক’টা ফুলে উঠলো। ফাইজা এতটা কেয়ার লেস ভাবতেই রাগ কন্ট্রোল করতে না পে’রে এসে ফাইজার গালে থা’প্পড় মে’রে’ছিলো। ফাইজা এখনো ফারদিন’কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে যাচ্ছে। ফারদিন ফাইজার মাথায় হাত রাখতেই ফাইজা’র হুশ ফিরে আসলো। ফাইজা তৎক্ষনাৎ ফারদিন’কে ছেড়ে দিয়ে ওর থেকে খানিক’টা দূরে গিয়ে দাড়িয়ে পড়লো। আড় চোখে দেখলো সবাই ওদের দিকে তাঁকিয়ে আছে। নিজের বো’কা’মির জন্য এখন নিজের উপর রাগ উঠছে ওর। ফারদিন ফাইজা’কে কিছু না বলে রাগী চাহনী নিক্ষেপ করলো ছেলেদুটোর দিকে। বা’ঘের মতো দুই হাতে ছেলে’টার কলার চে’পে ধরলো। ফারদিনের কান্ডে ফাইজা এইবার বিস্ময়ের চরম পর্যায়। শরীরের সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করে ঘু-ষি মে/রে বসলো ছেলে’টার নাকে। ছেলে’টা ছিটকে গিয়ে মাঠের মধ্যে পড়লো। ফারদিন রাগে কাঁপছে। ছেলে’টা ব্যাথায় কুঁকিড়ে উঠতেই ফারদিন রাগে ছেলেটা’র গলা চে’পে ধরে মাটির সাথে মিশিয়ে নিয়ে রাগে চিৎকার করে বলতে লাগলো……

–তোর সাহস কি করে হলো ওর দিকে হাত বাড়ানো?

বলেই আরেক’টা ঘু’ষি বসিয়ে দিলো। একাধারে মে/রেই যাচ্ছে। কয়েক’জন শিক্ষক ছুটে এসে ফারদিন’কে থামানোর চেষ্টা করছে। ফাইজা এখনো অবাক হয়ে তাঁকিয়ে আছে ফারদিনের দিকে। ভয়ে ওর বুকের ভেতর ঢিপঢিপ করছে। ফারদিন’কে সবাই মিলে টেনে আনলে ফারদিন পা দিয়ে লা/থি মা/রা শুরু করলো। ছেলে’টার অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে। কয়েকজন ছেলে এসে ওই ছেলে’টাকে ধরে হসপিটালে নিয়ে যেতে লাগলো। সবাই ফারদিনের রাগ দেখে ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে আছে। ফাইজা আর আরজা দুইজন একসাথে দুইজনের হাত ধরে দাড়িয়ে আছে। আরজার ভয়ে প্রান যায় যায় অবস্থা। রাগে ফারদিনের মুখ দিয়ে শব্দ বের হচ্ছে। সবাই ফারদিন’কে টেনে দূরে সরিয়ে এনে ছেড়ে দিতেই ফারদিন সোজা এসে ফাইজার হাত চেপে ধরলো। এইবার ফাইজা ভয়ে প্রান বেড়িয়ে যেতে লাগলো। ফারদিন কাউকে কোনো উওর না দিয়ে ফাইজার হাত চেপে ধরে হাটা শুরু করলো। ফাইজা রোবটের মতো ফারদিনের সাথে হাটা শুরু করলো। ফারদিন ফাইজা’কে টেনে এনে গাড়িতে বসিয়ে শব্দ করে দরজা বন্ধ করে দিলো। আজ তিনদিন পর ফাইজা কলেজে এসেছিলো। আর কলেজে এসেই এই অবস্থায় পড়বে ও ভাবতেও পারছেনা। ফাইজা ভয়ে হাত কচলাচ্ছে। ফারদিন গাড়িতে উঠেই গাড়ি স্ট্যাট দিলো। ফাইজা ভেবে ছিলো ফারদিন ওকে বাড়ি নিয়ে আসবে কিন্তু যখন দেখলো গাড়ি অন্য রাস্তায় যাচ্ছে তখন ফাইজা ভয়ার্ত স্বরে বলে উঠলো….

–এটা তো আমার বাড়ির রাস্তা না। আমি বাড়ি যাব। স্যার, প্লিজ গাড়ি থামান। আমি বা…..

আর বলার আগেই ফারদিন জোরে ব্রেক করলো। আচমকা ব্রেক কসাই ফাইজা ঝুঁকে পড়তেই এক হাত ওর কপালে ছুয়ে দিতেই ও মাথায় ব্যাথা পাওয়ার হাত থেকে বেঁচে গেলো। কিন্তু, হাতের ব্যাক্তি’টার হাতে যে প্রচন্ড ব্যাথা লেগেছে তা বেশ বোঝা যাচ্ছে। ফাইজা ভয়ে চোখ মুখ খিচে রেখেছিলো। যখন দেখলো ও ব্যাথা পায়’নি তখন চোখ খুলতেই দেখলো ওর কপাল ফারদিনের হাতের উপর। ফাইজা নিজেকে সামলে নিতেই ফারদিন হাত সরিয়ে নিলো। ওর হাত’টা ব্যাথায় লাল হয়ে উঠেছে তা ফাইজার দৃষ্টি এড়ালো না। ফারদিন শান্ত কন্ঠে বললো…..

–নো কুয়েশ্চন। গাড়ি যতক্ষন না থামবে ততক্ষন অব্দি একটা সাউন্ড আমার কানে আসলে খুব খারাপ হবে। মাইন্ড ইট…..
বলেই আবার গাড়ি স্ট্যাট দিলো। ফাইজ ভয়ে আর প্রশ্ন করতে পারলো। অজানা এক অভিমান এসে মনের কোনে জড়ো হলো। ছলছল চোখে জানালার দিকে দৃষ্টি দিলো। রাগের বশে আজ সত্যি’টা ফারদিনের সামনে বলে দিয়ে যে ভুল করেছে তা এখন বেশ বুঝতে পারছে। ফারদিন তো ওকে সহ্যই করতে পারেনা। আর এখন ছাত্রী হয়ে স্যার কে ভালোবাসে এই কথা’টা শুনে নিশ্চয়ই একে অভদ্র,নির্লজ্জ ভাবছে। আজ নিশ্চয়ই সেদিনের মতো হাজার’টা কথা শুনাবে। হয়তো গায়েও হাত তুলবে আবার। আজ যদি ফারদিন ওকে আবার অপমান করে তাহলে ও কিছুতেই মুখ বুজে সহ্য করে নিবে না। ফারদিনের মুখের উপর পাল্টা জবাব দিবে। ভালোবাসার মধ্যে তো কোনো ভুল নেই। হোক না সে বয়সে বেশ কয়েকবছরের বড় আর সম্পর্কে টিচার। তাতে কি ভালোবাসা তো এসভ দেখে হয়না। এক বছর ধরে নিজের মনের মধ্যে এই কথা লুঁকিয়ে রেখেছিলো আজ এইভাবে নিজের অজান্তেই সেই কথা’টা প্রকাশ পাবে বুঝতে ও পারেনি ফাইজা। গাড়ি’টা থেমে যেতেই ফাইজার ভাবনায় ছেদ ঘটলো৷ ফাইজা চোখের জল টুকু মুছে নিয়ে জানালা দিকে তাঁকাতেই ওর মাথায় বাজ ভেঙে পড়লো। কারন ফাইজার চোখের সামনে স্পষ্ট লেখা আছে “কাজী অফিস”। হঠাৎ, কাজী অফিসের সামনে এসে গাড়ি থামতেই ফাইজার বুকের ভেতর’টা মুচড়ে উঠলো। ফারদিন কি করতে চলেছে? কি ঘটবে? কোন অপ্রত্যাশিত ঘটনার সাক্ষী হতে চলেছে ফাইজা………
#গোধূলি_লগ্নের_সেই_তুমি
#লেখনীতে_জেনিফা_চৌধুরী
#পর্ব_আট+নয়

গাড়ি থেকে নামিয়ে ফারদিন ফাইজা’র হাত ধরে টেনে “কাজী-অফিসের” ভেতরে নিয়ে যেতে লাগলো। ভয়ে ফাইজা’র বুক ধুকপুক করছে। কি করছে এই ছেলে? কোন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটাবে? বাবা_মায়ের সামনে কোন মুখ নিয়ে গিয়ে দাড়াঁবে? ভাবতে’ই ফাইজা’র শরীর অবশ্য হয়ে আসচ্ছ। দরজা দিয়ে ঢোকা’র জন্য পা বাড়া’তেই ফাইজা দাড়িয়ে পড়ে। ফাইজা’কে দাড়াতে দেখে ফারদিন ওর দিকে তাঁকিয়ে সানগ্লাস’টা নাকের ডগায় এনে ভ্রু কুচকে তাকা’তেই ফাইজা ওর ছাড়ানোর চেষ্টা করে বললো….

–স্যার আমার হাত ছাড়ুন প্লিজ। আমি এ বিয়ে কিছুতেই করতে পারব না…..

ফাইজা’র কথায় ফারদিন যেনো আকাশ থেকে পড়লো। ফাইজার হাত’টা ছেড়ে দিয়ে ওর কথার মানে বুঝতে না পেরে কিছুক্ষন ওর দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাঁকিয়ে থেকে হঠাৎ শব্দ করে হেসে উঠলো। এমন পরিস্থিতিতে ফারদিন’কে হাসতে দেখে ফাইজা অবাক হয়ে ওর দিকে তাঁকিয়ে আছে। ফারদিন হাসতে হাসতে বলে উঠলো….

–সরি বাট আই কা’ন্ট স্টপ লাফিং এট এনিথিং…

বলেই আবারো হেসে দিলো। ফারদিনের হাসি দেখে ফাইজার রাগে শরীর জ্বলে উঠলো। ফাইজা’ নাকের ডগায় রাগ নিয়ে প্রশ্ন করলো…..

–আমি আপনাকে কোনো জোক্স’স বলেছি নাকি? এইভাবে পা’গ’লের মতো হাসচ্ছে কেনো? অদ্ভুত তো….

ফাইজা’র কথা শুনে ফারদিন আরেক’দফা হেসে নিয়ে বলে উঠলো…..

–আর ইউ ম্যা’ড ফাইজা। আমি তোমাকে বিয়ে করতে এখানে এনেছি তুমি ভাবলে কি করে? সরি বাট এটা আমার প্রচন্ড ফানি জোক্স’স মনে হয়েছে….

ফারদিনের কথা শুনে ফাইজা খানিক’টা অপমানিত বোধ করলো। নিজের উপর বিরক্ত লাগছে। কিছু না জিজ্ঞেস করে আগেই বো’কার মতো বিয়ের কথা বলে ফেলেছে। ইসস! ফারদিন কি ভাবলো এখন ওকে? লজ্জায় মাথা নিঁচু হয়ে ফাইজা’র। ফাইজা মাথা নিঁচু করে বললো….

–আ’ম সো সরি স্যার। আস….

ফাইজা’কে থামিয়ে ফারদিন বলে উঠলো…

–ইট’স ওকে। আই আন্ডারস্ট্যান্ড। ভেতরে চলো সব বুঝতে পারবে…..

বলেই আবারো ফাইজা’র হাত ধরে ভেতরে নিয়ে গেলো। এইবার আর ফাইজা বাধা দিলো না। ভেতরে ঢুকতেই এক’টা ছেলে ফারদিন’কে দেখেই হাসি মুখে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো….

–হেই ফারদিন। হোয়াই আর ইউ সো লেট ?

ফারদিন ও হাসি মুখে ছেলে’টা হালকা জড়িয়ে বললো…..

—লুক ? আই এরাইভড ৫ মিনিট’স অ্যাগো…

ছেলে’টার পাশ থেকে একটা মেয়ে হঠাৎ বলে উঠলো….

–হেই ক্রাশবয়…..

বলতে বলতেই ফারদিন কে জড়িয়ে ধরল। তা দেখে ফাইজা’র শরীর জ্বলে উঠলো। নাকের ডগায় লাল বর্ন ধারন করলো। কপালে কয়েক’টা ভাঁজ পড়লো। চোখ দুটো ছোট ছোট করে ওদের দিকে তাঁকিয়ে আছে। মেয়ে’টার পড়নে একটা মেরুন কালার শর্ট টপ’স আর ব্লাক জিন্স। পায়ে এক ইঞ্চি হিল। দেখেই বেশ মর্ডান মনে হচ্ছে। ফাইজা ভেবেছে ফারদিন মেয়ে’টাকে জড়িয়ে ধরবে না। কিন্তু ফাইজা’কে অবাক করে দিয়ে ফারদিন একবার আড় চোখে ফাইজা’র দিকে তাঁকিয়ে মেয়ে’টাকে হালকা জড়িয়ে ধরলো। মেয়ে’টা ফারদিন’কে ছেড়ে দিতেই ছেলে’টা ফাইজা’র দিকে ইশারা করে কিছু বলতে যাবে তখনি ফারদিন ছেলে’টাকে থামিয়ে বিষয়’টা এড়িয়ে যেতে গভীর কন্ঠে বললো….

–হঠাৎ,পালিয়ে বিয়ে করার মানে কি তাকিন? তুরফা’র বাড়ির লোক’কে বলে বিয়ে’টা করলেই ভালো হতো।

এতক্ষনে ফাইজা ছেলে আর মেয়ে’টার নাম জানতে পারলো। সেই সাথে কাজি অফিসে আসার কারন ও জানতে পারলো। তাকিন একটু হেসে উওর দিলো….

–তুই তো জানিস মামা তুরফা’র বাবা ভীষন ডে’ঞ্জা’রা’স। এখনো আমি কোনো জব করিনা। আর আমি স্কলারশিপ পেয়েছি তাই কানাডা চলে যাব চার বছরের জন্য। তুরফা ভয় পাচ্ছে যদি ঐখানে গিয়ে ও’কে ভুলে যাই। তাই, ওর বুদ্ধি’তেই কোর্ট ম্যারেজ করে রাখতে চাচ্ছি। দেশে ফিরে সবাই’কে জানিয়ে বিয়ে’টা সেরে ফেলব। কি বলিস….

বলেই ফারদিনের কাঁধে হালকা থা’প্পড় দিতেই ফারদিন ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে সামনে থাকা সোফায় বসতে বসতে বলে উঠলো….

—এজ ইউ’র উইশ। কিছু মেয়ে’দের আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারিনা তাকিন। ইউ নো দ্যাট…..

ফারদিন কথা’টা বলেই ফাইজার দিকে তাঁকালো। কথা’টা শুনে ফাইজা বিস্ময়ে হা হয়ে তাঁকিয়ে আছে ফারদিনের দিকে। ফারদিনের কথা শুনে তুরফা বললো….

–তুই কিন্তু কথা’টা বলে আমাকে অপমান করলি ফারদিন। সব মেয়ে’রা এক না ইয়ার।

ফারদিন ওর কথায় কান না দিয়ে ফাইজা’র উদ্দেশ্যে গম্ভীর স্বরে বললো….

–এখানে এসে বসো। দাঁড়িয়ে থাকতে বলি’নি….

ফারদিনের কথা শুনে ফাইজা শব্দ না করে ফারদিনের থেকে একটু সরে সোফার এক পাশে বসে পড়তেই। আচমকা ফারদিন ফাইজা’র হাত ধরে টান দেওয়ায় ফাইজা ফারদিনের বুকের উপর পড়তেই ফারদিন বলে উঠলো….

–আমার পাশে বসলে কি আমি তোমাকে খে’য়ে ফেলবো। এভাবে বসে থাকো….

বলেই ফাইজার মাথা’টা এক হাতে বুকের পাশে চে’পে ধরলো। ফাইজা যেনো ঘোরের মধ্যে আছে। এই লোক’টার কি ল’জ্জা শ’রম বলতে কিছু নেই। সামনে দুইজন ব্যাক্তি দাড়িয়ে আছে। আর সে? ভাবতেই ফাইজা’র গাল দুটো লজ্জায় লাল হয়ে উঠলো। ফাইজা দুই হাতে ফারদিন’কে সরানোর চেষ্টা করতেই ফারদিন আরো জোরে চে’পে ধরলো ফাইজা’কে। এইবার ফাইজার মনে হচ্ছে ওর দম আটকে যাবে। শরীরে শীতল শিহরন বয়ে চলেছে। ফাইজা নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে একবার তাকিন আর তুরফার দিকে তাঁকালো। ওরা দুজন মুখে হাত দিয়ে মিটমিটিয়ে হাসচ্ছে। তা দেখে ফাইজা’র মনে হচ্ছে লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে। ফাইজা বেশি নড়াচড়া করতেই ফারদিন সবাই’কে অবাক করে দিয়ে ফাইজা’র কঁপালে ঠোঁট ছোঁয়া’তেই ফাইজা কেঁপে উঠলো। ফাইজা সরার জন্য জোর করতেই ফারদিন ফাইজা’কে ছেড়ে দিয়ে হাত’ চে’পে ধরে বললো….

–এখান থেকে একদম দূরে যাওয়া’র চেষ্টা করলে। আমি তোমার….

ফারদিনের কথা শুনে ফাইজা’ রাগে দাতে দাত চেপে উওর দিলো….

—কি করবেন? থা’প্পড় মা’র’বেন। পারেন শুধু তাই করতে। যত্তসব…

বলেই হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলো। ফারদিন ফাইজার কথা শুনে ফাইজার দিকে একটু ঝুঁকে ভ্রু কুচকে বলে উঠলো….

–তোমাকে কে বললো? আমি তোমাকে থা’প্পড় মা’রব। আমি তো তোমাকে….

ফারদিন ওর দিকে ঝুঁকে থাকায় ফাইজার গলা শুকিয়ে আসচ্ছে। হার্টবিট বেড়েই চলেছে। ফাইজা লজ্জায় পড়ে রাগী স্বরে বলে উঠলো….

–কি করবেন আপনি? কি করবেন?

ফারদিন ওদের সবাই’কে আরেক দফা অবাক করে দিয়ে জোরেই বলে উঠলো….

–আমি তো তোমার ঠোঁটে চু’মু খাবো।

কথা’টা শুনেই তাকিন আর তুরফা শব্দ করে হেসে উঠলো। আর ফাইজা বড় বড় চোখে ফারদিনের দিকে তাঁকিয়ে আছে। তা দেখে একটু বাঁকা হাসলো। তাকিন হাসতে হাসতে বললো….

–আমরা এখানে আছি মামা। কন্ট্রোল…

বলেই আবারো হেসে উঠলো। লজ্জায় ফাইজার মনে হচ্ছে ম’রে যেতে। তুরফা হাসতে হাসতে বললো…

–বুঝলে তাকিন এই হলো আমাদের দ্যা গ্রেট ফারদিন আবসার। যে কিনা মেয়েদের বিশ্বাস করতে পারেনা অথচ মেয়েদের সাথে রোমান্স করতে পারে….

বলেই ফারদিনের দিকে তাঁকিয়ে চোখ মা’র’তেই ফারদিন একটু মুচকি হাসলো। তাকিন ওদের মাঝে বলে উঠলো….

–কাজি সাহেব আমাদের জন্য ওয়েট করতে করতে এইবার চলেই যাবে। চলো বিয়ে’টা করে নেওয়া যাক।

বলেই তাকিন তুরফার হাত ধরে ভেতরের রুমে চলে গেলো। তুরহা যেতে যেতে চেঁচিয়ে বলে উঠলো….

–মেয়ে’টাকে আর ল’জ্জায় না ফেলে ওকে নিয়ে ভেতরে চলে আয়। মেয়ে’টা লজ্জায় লাল নীল হয়ে যাচ্ছে…..

ফাইজা গাল ফুলিয়ে ফারদিনের পাশে বসে আছে। ফারদিন উঠে দাড়িয়ে কোনো কথা না বলে ফাইজার হাত ধরে টেনে ভেতরে নিয়ে যেতে লাগলো। ফাইজা ভেতরে ভেতরে রাগে বিড় বিড় করতে লাগলো….

–অ’স’ভ্য, বে’হা’য়া, নির্লজ্জ,লোক একটা। যেখানে সেখানে হাত ধরে টা’না’টা’নি শুরু করে দেয়। ছিঃ উনারা কিসব ভাবলো?

ফাইজা’কে বিড়বিড় করতে দেখে ফারদিন ফাইজা’র কানে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলো…

–এমন করে গাল ফুলিয়ে রেখো না জান। কিস করতে মন চাচ্ছে তো….

হঠাৎ এমন কথায় ফাইজার কাশতে শুরু করে দিলো। তা দেখে ফারদিন ডে’ভিল মার্কা হাসি দিয়ে ফাইজার দিকে তাঁকিয়ে চোখ মে’রে অন্য পাশে তাকিনের পাশে চলে গেলো। আর ফাইজা এখনো শুকনো কেশে যাচ্ছে। এই লোক’টা এমন অদ্ভুত কেনো? ভাবতেই ফাইজার শরীরে রাগে শিরা-উপশিরা গুলো জ্বলে উঠছে। অন্য সময় হলে ফাইজা হয়তো ফারদিনের ছোঁয়ায় খুশি হতো কিন্তু এইসময়ে এসে ওর রাগ লাগছে। আবার কোথাও একটা ভালো লাগা তৈরি হচ্ছে।
____________________________________________
–ফারদিন যদি জানতে পারে তুমি এই বাড়িতে পা রেখেছো। তাহলে, তোমাকে জানে মে/রে ফেলতেও একবার ভাববে না। তাই ভালো ভাবে বলছি। গেট আউট…..

সায়মা খানমের কথা শুনে কাকন সিকদার সোফায় বসে পায়ের উপর পা তুলে বললো….

–এটা আমার ও বাসা মা। তুমি কি ভুলে গেছো? আমি তোমার মেয়ে?

কাকনের কথা শুনে সায়মা খানম রাগে চেঁচিয়ে বলে উঠলো….

–তুমি আমার মেয়ে এটা ভাবতেও আমার নিজের উপরেই ঘৃনা হয়। তোমার মতো জঘন্য একটা মেয়ে আমি আমার গর্ভে ধারন করেছি। এক্ষুনি আমার বাসা থেকে বেড়িয়ে যাও। নয়তো ঘা’ড় ধা’ক্কা দিয়ে বের করে দিব।

সায়মা খানমের কথা শুনে কাকন উঠে দাড়িয়ে সায়মা খানমের সামনে এসে চোখ গরম করে বলে উঠলো…..

—তুমি ভুলে যাচ্ছো মা তোমার প্রানের প্রিয় নাতির দূর্বলতা আমি জানি। আমার পিছে তোমার নাতি’কে লাগ’তে বারন করে দিও। নয়তো ওর প্রানভ্রমর’কে পৃথিবী থেকে আউট করে দিতে আমার বেশিক্ষন সময় লাগবে না….

কথা’টা শেষ হতেই সায়মা খানম সমস্ত শক্তি দিয়ে কাকনের গালে থা’প্পড় মে/রে বলে উঠলো….

–এইবার আর সেম ভুল করতে যেও না। নিজের ভ’য়ংকর মৃ/ত্যু ডেকে আনবে তাহলে?

বলেই কাকন সিকদারের হাত ধরে টেনে নিয়ে ওর মুখের উপর দরজা আটকে দিয়ে। একটা দীর্ঘশ্বাস দেলে বলতে লাগলো….

–সাত বছরের একটা বাচ্চা ছেলের থেকে ওর মা’কে কেড়ে নিয়েছিলি। ও চেয়ে ও কিছু করতে পারেনি ছেলেটা। এখন ওই সাত বছরের বাচ্চা’টা সাতাশ বছরে পা রেখেছে। সব হিসেব সে নিবেই…….
____________________________________________
বিয়ে দেওয়া সম্পূর্ন হলে ওদের বিদায় জানিয়ে ফাইজা’কে প্রকার টেনেই গাড়িতে বসালো। হুট হাট এমন টানাটানি করার মানে ফাইজা বুঝতে পারেনা। কবে যেনো এই টানাটানির পাল্লায় বেচারীর হাত’টায় ছুটে যায়। ফাইজা গাল ফুলিয়ে বসে আছে। ফারদিন গাড়ি’তে বসে ফাইজা’কে বলে উঠলো….

–সিট বেল্ট’টা বেধে নাও….

ফাইজা ফারদিনের কথা কানে না তুলে জানালার দিকে দৃষ্টি দিলো। তখন মেয়ে’টাকে জড়িয়ে ধরেছিলো তাই অভিমানেরস হানা দিয়েছে মনের কোনে। ফারদিন কিছুক্ষন চেয়ে চেয়ে ফাইজার কান্ড দেখে নিজেই ফাইজার একদম কাছে বেল্ট’টা লাগিয়ে দিলো। হঠাৎ কাছে আসায় ফাইজা ভয়ে চোখ মুখ খিচে ফেলে। ওর হার্টবিট আবার বেড়ে গেলো। ফারদিন ফাইজার মুখের অবস্থা দেখে ফাইজার গালে টুপ করে একটা চু’মু খেয়ে বললো….

–একদম টমেটোর মতো লাগছে জান। এভাবে থাকলে টুপ করে খে’য়ে ফেলব তো…

ফারদিনের কথায় কথায় চু’মু খাওয়ায় ফাইজা প্রচন্ড বিরক্ত। ফাইজা রাগী দৃষ্টি’তে ফারদিনের দিকে তাঁকিয়ে বলে উঠলো….

,–বার বার আমার পারমিশন ছাড়া আমাকে ছোঁয়ার অধিকার কে দিয়েছে আপনাকে? আপনি তো মেয়েদের বিশ্বাস করেন না। তাহলে কেনো বার বার আমাকে ছুঁয়ে দিয়ে অস্বস্তিতে ফেলছেন?

ফাইজার রাগ দেখে ফারদিন ঠোঁট চে’পে হাসচ্ছে। ফারদিন ফাইজার মুখের অবস্থা দেখে বলে উঠলো….

–কাজী অফিস দেখে তো বিয়ের চিন্তা ভাবনা করে ফেলেছিলে?

ফাইজার মুখ’টা চুপসে গেলো। ফাইজা আমতা আমতা করে বলে উঠলো…

–আপনার ফ্রেন্ড’দের বিয়ে দিতে আমাকে কেনো আনলেন?

ফারদিন একটু কেশে বলে উঠলো…

— নিজের বউ’কে কি কেউ ডাবল বিয়ে করে। যদি তুমি চাও তাহলে সেকেন্ড বার বিয়ে করতেই পারি। আমার কোনো প্রবলেম নেই। তাহলে, সেকেন্ড বার বাসর টাও হয়ে যাবে কি বলো? না! না! সেকেন্ড বার বাসর না ফাস্ট টাইম বাসর হবে আমাদের তাইনা জান??

ফারদিনের কথা শুনে ফাইজা চমকে উঠলো। আর ফারদিন রহস্য ময় হাসি দিয়ে উঠলো।

#চলবে
#গোধূলি_লগ্নের_সেই_তুমি
#লেখনীতে_জেনিফা_চৌধুরী
#পর্ব_নয়

কেউ একজন ফাইজা’র হাত’ ধরে জোরে টা’ন মা/রতেই কারোর বক্ষস্থলে গিয়ে ধা’ক্কা খেলো ফাইজা। চোখের সামনে ফারদিন কে দেখে ফাইজা হা হয়ে আছে। এই রাতের বেলা নিজের বাড়িতে ফারদিন’কে একদমি আশা করেনি ফাইজা। ফারদিন ফাই’জাকে টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে নিতেই ফাইজা ফিসফিসিয়ে বললো…..

–আপনি এত রাতে এখানে কি করছেন?

ফাইজার কথায় ফারদিন সোজাসাপ্টা উওর দিলো….

–বাহঃ রে বউ’য়ের কাছে আসতে বুঝি কারোর দিন-রাত হিসেব করে আসতে হবে। আমার বউ’কে দেখতে আমি যখন খুশি তখন আসব…

বলেই ভ্রু কুচকালো। ফারদিনের মুখে আমার বউ শব্দটা শুনতেই ফাইজা লজ্জায় লাল হয়ে গেলো। তা দেখে ফারদিন বাঁকা হেসে বললো….

–তোমাকে কি বলেছিলাম সুইটহার্ট এভাবে লাল-নীল হবে না। টুপ করে কিস করে দিব…..

ফারদিনের কথায় ফাইজা ফারদিন’কে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরে যেতে যেতে বললো….

–প্রচন্ড অ’ভদ্র, অস’ভ্য লোক একটা…..

ফাইজা অন্য দিকে ফিরে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। এই ফারদিন’টা ও’কে লজ্জায় ফেলে কবে যেনো মে/রে ফেলবে। ফারদিন ফাইজা’র খোঁপা করা চুল গুলো ছেড়ে দিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে চুলে মুখ গুঁজলো। তাতে ফাইজা কেঁপে উঠলো। ফারদিন ফাইজা’র ঘাড়ে ডিপ’লি একটা চু’মু খেয়ে নেশালো কন্ঠে বলে উঠলো……

–আর মাত্র কিছুদিনের অপেক্ষায় তারপর তুমি পরিপূর্ণ আমার হবে সুইটহার্ট। তোমাকে কাছে পাওয়ার নেশায় আমি প্রতিনিয়ত মাতাল হয়ে আছি…..

ফাইজা চোখ বুঝে কোমরে থাকা ফারদিনের হাত দুটো শক্ত করে খা’মচে ধরে আছে। ওর মাথা থেকে পা অব্দি কাঁপছে। ফাইজা’কে এক টানে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলো। ফাইজা এখনো চোখ বন্ধ করে ফারদিনের শার্ট খা’মচে ধরে আছে। ওর ঠোঁট গুলো তিরতির করে কাঁপছে। চোখের পাপড়ি গুলো নড়ছে। ফারদিন ফাইজার থুতনি এক হাতে উঁচু করে মুখের সামনে এনে বলে উঠলো…..

—আই কা’ন্ট কন্ট্রোল মাইসেল্ফ হোয়েন আই সিইই ইউ জান। তোমাকে দেখলেই আমার বার বার চু’মু খেতে ইচ্ছে করে…..

বলেই ফাইজা’র ঠোঁটে ঠোঁট রাখার জন্য মুখ’টা সামনে নিতেই হঠাৎ দরজায় কেউ নক করে উঠতেই ফাইজা ছিটকে ফারদিনের থেকে দূরে সরে গেলো। এমন সময় ফারদিনের বিরক্তি’তে কপাল কুচকে এলো। দরজায় কে নক করছে ভাবতেই ফাইজার মুখ কাঁপছে। ফাইজা ফারদিনের সামনে এসে ফিসফিস করে বললো…..

–এখন কি হবে? যদি বাবা এসে থাকে তাহলে তো সব শেষ।

ফাইজার কথা শুনে ফারদিন একটা শুকনো ঢোঁক গিলে বললো….

–এই রে শুশুড় মশাই যদি জানে আমি লুকিয়ে আমার বউয়ের ঘরে এসেছি। তাহলে, নির্ঘাত আমাকে উল্টো করে ঝুলিয়ে রাখবে। এখন কি হবে?

ফারদিনের চেহারা দেখে মনে হচ্ছে ও সত্যিই আতঙ্কিত। তা দেখে ফাইজা মুখ চেপে হাসচ্ছে। ফাইজা’কে হাসতে দেখে ফারদিন রাগী স্বরে বললো…..

–এই শুশুড় মশাই কি আসার আর টাইম পেলো না। আমার বউ’কে একটা কিস ও করতে পারলাম না।

ফারদিনের কথা শুনে ফাইজা কোমরে হাত দিয়ে রাগী লুক নিয়ে ফারদিনের দিকে তাঁকাতেই ফারদিন বলে উঠলো….

–জান এইবারের মতোই বাঁচিয়ে দাও না। প্লিজ জান প্লিজ…..

ফাইজার কেনো যেনো ভীষন হাসি পাচ্ছে। কিন্তু দরজার ওপাশ থেকে ফাইজার বাবা একনাগাড়ে ডেকেই যাচ্ছে ফাইজা’কে। ফাইজা ফারদিন কে বেলকনি’তে ঢুঁকিয়ে দরজা হালকা টানতে টানতে বলে উঠলো…..

—এখানে চুপচাপ এক কোনায় বসে থাকুন। আমি না আসা অব্দি খবরদার নড়বেন না।

ফারদিন ও বাধ্য ছেলের মতো মাথা নাড়ালো। ফাইজা নিজেকে ঠিক করে জোরে একটা শ্বাস নিয়ে গিয়ে হাসি মুখে দরজা খুলতেই হাসনাত সাহেব ওর দিকে সন্দিহান দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে বলে উঠলো…..

—এতক্ষন ভেতরে কি করছিলে? দরজা খুলতে এত সময় লাগে….

বাবার গম্ভীর স্বর শুনে ফাইজা আস্তে করে বললো….

–ওয়াশরুমে ছিলাম বাবা। কি দরকার ছিলো বলো….

হাসনাত সাহেব দরজা’টা এক হাতে আরেক’টু খুলে ভেতরে উঁকি দিয়ে চারদিকে নজর বুলিয়ে বললো….

—কিছু না দেখতে এসেছিলাম তুমি ঘুমিয়েছো নাকি। অনেক রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পড়ো। দরজা নক করে দিও ভেতর থেকে….

ফাইজা মাথা নাড়াতেই হাসনাত সাহেব মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে চলে গেলো। ফাইজা মুচকি হেসে দরজা আটকে পেছনে ফিরতেই ভরকে গেলো। ফারদিন ওর সামনে বুকে হাত গুঁজে দাড়িয়ে আছে। ফাইজা ফারদিনের দিকে ভ্রু কুচকে তাঁকাতেই ফারদিন ও ভ্রু নাঁচিয়ে বলে উঠলো….

—জান এখন তুমি কোথায় যাবে??

বলেই ফাইজা’কে দরজার সাথেই মিশিয়ে নিয়ে ফাইজার কোমর শক্ত করে দুই হাতে চে’পে ধরলো। ফাইজা কাঁপতে কাঁপতে বললো….

–দেখুন একদম ঠিক হচ্ছে না। সরুন আমার দম বন্ধ হয়ে আসচ্ছে।

ফাইজার কথা শুনে ফারদিন ওর কোমরে জোরে চাপ দিতেই ফাইজা নড়ে উঠলো। ফারদিন ফাইজার মুখের সামনে মুখ নিয়ে বলতে লাগলো…..

—এতদিন তোমাকে ছুঁতে আমার অস্বস্তি হতো। কারন, আমি জানতাম তুমি আমাকে ভালোবাসো না। কিন্তু এখন তোমাকে ছোঁয়ার সম্পূর্ণ অধিকার আছে আমার। বিকজ, ইউ আর মাই ওয়াই’ফ। মাই লাভ। মাই হার্টবিট……

ফারদিনের কথায় ফাইজা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে মুচকি হেসে হঠাৎ করে’ই ফারদিন’কে জড়িয়ে ধরলো। ফারদিন ও পরম আবেশে ফাইজার চুলে হাত ডুবিয়ে শক্ত করে চেপে ধরলো ফাইজা’কে। ফাইজা মুখ গুঁজে শান্ত হয়ে আছে। হঠাৎ করেই ফারদিন নরম কন্ঠে বললো…..

–জানো, আমি সাত বছর বয়স থেকে একা বাঁচতে শিখেছিলাম। কারোর হিংস্র থাবা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারলেও আমার মা’কে রক্ষা করতে পারিনি। সেই সাত বছরের একটা ভয়ংকর ঘটনা আমাকে অনেক বছর শান্তি’তে ঘুমোতে দেয়নি। সাত বছরের বাচ্চা ছেলে’টার মনে মেয়েদের নিয়ে হাজার ঘৃনা জমতে শুরু করছিলো। কিন্তু গোধূলির এক সন্ধ্যায় হঠাৎ করে তুমি এসেই আমার ঘৃনা ভরা মনে ভালোবাসা সৃষ্টি করেছিলে। #গোধূলি_লগ্নের_সেই_তুমি টাকে আমি ভীষন ভালোবাসি। তোমাকে কষ্ট দিয়ে আমি নিজেই জলন্ত আগুনে নিজেকে পুড়িয়েছি কতশত বার। তোমা একটা আঘাতের পরিবর্তে নিজেকে দ্বিগুন আঘাত করেছি। আই লাভ ইউ সুইটহার্ট….

ফারদিনের কথাগুলো শুনে ফাইজা ফারদিনের বুকের থেকে মাথা তুলে বললো….

–একটু নিঁচু হন তো….

ফাইজার কথায় ফারদিন ড্যাব ড্যাব করে চেয়ে আছে। ফাইজা একটু হেসে পা দুটো খানিক’টা উঁচু করে ফারদিনের কপালে আচমকা ঠোঁট ছোঁয়ালো। ফারদিন যেনো ফাইজার কান্ডে বিস্ময়ের চরম পর্যায়। ফাইজা ফারদিন’কে চু’মু দিয়ে আবার জড়িয়ে ধরতে ধরতে বললো…..

—আমি আপনাকে সেই এক বছর আগের থেকে ভীষন ভালোবাসি জনাব।

ফারদিন এখনো হা হয়ে আছে। ফারদিনের কোনো রেসপন্স না পেয়ে ফাইজা হঠাৎ ফারদিনের হাতে জোরে চিম’টি কে’টে বললো……

—কি ভাবছেন ভাবুক মশাই??

ফারদিন হা করে বললো….

–তুমি আমাকে চু’মু খেলে আই কা’ন্ট বিলিভ দিস। আর যখন চু’মুই খাবে তখন ঠোঁটে একটা চু’মু খে’লে কি হতো জান……

বলেই চোখ মা-রলো ফাইজা’কে। ফাইজা আবারো হেসে ফারদিনের বুকে কয়েকবার কি’ল ঘু’ষি মে/রে বললো…..

–আমি এই অভ’দ্র’টাকে ভালোবাসি। আপনি আমার মিস্টার অ’ভ’দ্র। বুঝলেন জনাব….

বলেই ফারদিনের নাক’টা হালকা করে টেনে দূরে সরে যেতে নিলে ফারদিন আবারো ওর হাত ধরে টেনে সোফায় বসিয়ে দিলো। তারপর হুট করে ফাইজার কোলে মাথা রেখে ফাইজার পেটে মুখ গুঁজলো। হঠাৎ স্পর্শে ফাইজা কেঁপে উঠলো। ফারদিন ফাইজার পেটে মুখ গুঁজেই বললো…..

–একটু মাথা’টা টিপে দাও তো বউ……

ফাইজা মনে মনে ফারদিন’কে পা’গল সম্মোধন করে নরম হাতে ফারদিনের মাথা টি’পে দিতে লাগলো। ফারদিন শান্ত হয়ে চোখ বুজে আছে। ফাইজা সুযোগ বুঝে প্রশ্ন করে বসলো…..

–আপনি আমাকে না জানিয়ে বিয়ে কেনো করেছিলেন? এখনো কিন্তু তার উওর দেন’নি আমাকে। আমাদের বিয়ে কবে হয়েছিলো আমি কেনো জানিনা…….

#চলবে
#চলবে

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here