গোধূলি লগ্নের সেই তুমি পর্ব -১৪+১৫

#গোধূলি_লগ্নের_সেই_তুমি
#লেখনীতে_জেনিফা_চৌধুরী
#পর্ব_চৌদ্দ

পেছন থেকে কেউ মাথার মধ্যে আচমকা কিছু দিয়ে আ’ঘা’ত করতেই মাটি’তে লুটিয়ে পড়লো ফাইজা। নিচে পড়ে যাওয়ার আগে অব্দি দেখলো ফারদিনের চোখ দুটো বন্ধ। কিন্তু এইতো খোলা ছিলো চোখ দুটো তাহলে এখন বন্ধ কেনো? আর ভাবতে পারলো না চোখের সামনের সব কিছু ঝাপসা হয়ে এলো। আপনা-আপনি চোখ বন্ধ হয়ে এলো। তার পর আর কিছু মনে নেই। ফারদিনের র’ক্তা’ক্ত চেহারা’টা ভেসে উঠতে’ই ধড়ফড়িয়ে লাফিয়ে উঠে বসলো ফাইজা। তৎক্ষনাৎ মাথায় প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করতেই দুই হাতে মাথা চে’পে ধরে আস্তে আস্তে চারদিকে চোখ বুলালো। ওর সামনেই নাদিয়া বেগম আর সায়মা দাড়িয়ে চিন্তিত ভঙ্গী’তে। কিন্তু ও তো ফারদিনের কেবিনে ছিলো তাহলে এখানে এলো কি করে? মাথা ব্যাথায় চোখ বুঝে আসচ্ছে। ফাইজা ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ব্যাথা সহ্য করার চেষ্টা করে বলে উঠলো…

–আমি এখানে কি করে এলাম? আর আর উনার জ্ঞান ফিরে এসেছে জানো মা…

বলেই মুখে হাসির রেখা টানলো। ফাইজার কথা শুনে সায়মা খানম নিজের কান্না লুকাতে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো। আর নাদিয়া বেগম মুখে আঁচল গুঁজে কান্না নিবারনের চেষ্টা করলো। উনাদের অবস্থা দেখে ফাইজার মুখের চিলতে হাসি’টা বেশিক্ষন রইলো না। মুখে কালো মেঘ এসে ভর করলো। ফাইজা চিন্তিত স্বরে আবার বললো…..

–কাঁদছো কেনো? আর দীদা ওইভাবে চলে গেলো কেনো মা?

ফাইজার মা মেয়ের প্রশ্নের উওর খুঁজে পাচ্ছেনা। কি জবাব দিবে? মেয়ে’টা এত বড় একটা ধাক্কা সামলাতে পারবে তো? ভাবতে ভাবতেই রুমে প্রবেশ করলো নিরব। নিরব কে দেখেই ফাইজা হেসে বলে উঠলো…….

–ভাইয়া উনাকে কবে বাড়ি নিয়ে যেতে পারব? আর আমার হঠাৎ কি হলো জানিনা। মনে হলো কেউ পেছন থেকে কিছু দিয়ে আঘাত করেছে। এখনো ব্যাথা রয়েছে। হয়তো আমি সেন্সলেস হয়ে গিয়েছিলাম বেশি খুশিতে।

বলেই শব্দ করে হেসে উঠলো। নিরব গম্ভীর কন্ঠে বললো….

–ফারদিন কোমায় চলে গেছে ফাইজা।

ফাইজার মনে হলো ওর মাথায় সম্পুর্ন আকাশ’টা ভেঙে পড়লো। মুখের হাসি’টা ইতোমধ্যে থেমে গেছে। মাথা’টা ভনভন করে ঘুরতে লাগলো। বিস্ফোরিত চোখে নিরবের দিকে তাঁকালো। লাগিয়ে বেড থেকে নেমে নিরবের সামনাসামনি দাড়িয়ে নিরবের দিকে শান্ত চাহনী দিয়ে বললো…..

–ভয় দেখাচ্ছেন তাইনা ভাইয়া। আমি জানি উনার জ্ঞান ফিরেছে। উনি আমার সাথে কথা ও বলেছে। এখন আপনি বললেই আমি বিশ্বাস করব না…..

বলেই মুচকি হাসলো। নিরবের কন্ঠস্বর বাধা পেয়ে শব্দ বের হচ্ছেনা। নিরব কয়েক’বার ঢোঁক গিলে ফাইজার হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে উঠলো……

–তুমি কল্পনা করেছিলে তখন যে ফারদিনের জ্ঞান ফিরেছে ও কথা বলেছে?

বলেই একটু থামলো। ফাইজা পূর্বের মতোই শান্ত হয়ে তাঁকিয়ে আছে। নিরব পূর্নরায় বলে উঠলো….

–বোন জীবনের অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে যায়। হঠাৎ, ঝড় এসে সব লন্ডভন্ড করে দেয়। ঝড় থেমে যাওয়ার পর কিন্তু আবার পরিবেশ আগের রুপ ধারন করে। কিছু সত্যি মেনে নেওয়ার ক্ষমতা না থাকলেও মেনে নিতে হয়। তেমনি তোমাকেও এই সত্যি’টা মেনে নিতে হবে। ফারদিন সত্যি’ই কোমায় চলে গিয়েছে। কবে, কখন, কতদিনে? ওর জ্ঞান ফিরবে আমরা কেউ জানিনা…….

নিরবের কথা শুনে ফাইজা কয়েক-পা পিছিয়ে গেলো। মাথার যন্ত্রনায় মনে হচ্ছে মাথা ফেটে যাবে। পিছিয়ে যেতে যেতে নিরবের দিকে তাঁকিয়ে ঠোঁটে হাসির রেখা টেনে নিলো। তারপর ধপ করে বেডে বসে বসলো। ওর কাঁদছে না। কোনো রিয়েক্ট করছেনা। নাদিয়া বেগম মেয়ে’কে জড়িয়ে নিলো দুই হাতে। তাও ফাইজা কাঁদছে না। কি ব্যাপার? ওর তো গলা ফাটিয়ে কান্না করা উচিত তাহলে ও কাঁদছে না কেনো। ফাইজা ওর মা’কে শক্ত করে ধরে বিড়বিড় করতে লাগলো। মেয়ে’টার অবস্থা দেখে নিরবের নিজেকে অপরাধী লাগছে? আবার রাগ ও উঠছে? কিন্তু ওরা তো নিরুপায়? কিছু করার নেই এই মুহুর্তে। তাই ফাইজার রুম ত্যাগ করলো।
____________________________________________
হসপিটালের ঢুকতে’ই কোনো পুরুষের শক্ত দেহের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে নিচে পড়ে গেলো আরজা। কোমড়ে যথেষ্ট ব্যাথা পেয়েছে। কোমড়ে হাত দিয়ে চেঁচিয়ে বলে উঠলো…..

–আহাম্মক নাকি আপনি দেখে চলতে পারেন না। মেয়ে দেখলেই শুধু ধাক্কা খেতে ইচ্ছে করে। এক থা’প্প’ড়ে নোংরামি বের করে দিব। যত্তসব ফা’ল’তু লোক…….

বলেই উপরে তাঁকাতেই ওর মুখ’টা থেমে গেলো। অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যাক্তি’টিকে দেখে কোমড়ে ব্যাথা নিয়েও লাফিয়ে উঠলো। জেহের ভ্রু কুচকে আরজার দিকে তাঁকিয়ে আছে। আরজা জেহের কে দেখেই মাথা চুল’কাতে লাগলো। না দেখেই একটা মেয়ে এমন ভাবে বকবক করতে পারে তা জেহের অজানা ছিলো। জেহের রাগী চাহনী নিক্ষেপ করে বললো…..

–তুমি বা’চা’ল জানতাম কিন্তু এত’টা বাঁচাল তা জানা ছিলো না……

আরজা অসহায় ফেস করে মাথা চুলকা’তে চুলকা’তে মিনমিনিয়ে বলে উঠলো…..

–সরি জেহের ভাইয়া আমি দেখিনি। ক্ষমা করবেন।

জেহের আর কথা না বাড়িয়ে সামনে পা বাড়ালো। বোনের বিপদের কথা শুনে আর বসে থাকতে পারলো না তাই চলে এসেছে আজ৷ আর আরজা ও আজ ফাইদিন’কে দেখার জন্য এসেছিলো। তখনি ঢুকতে গিয়ে দুজন বেখায়ালি ভাবে ধাক্কা লেগে যায়। জেহের পেছন পেছন আরজা ও এগিয়ে গেলো। অন্য সময় হলে দুজন জমিয়ে ঝগড়া করতো। কিন্তু আজ ওদের কারোর মনের অবস্থা ঠিক নেই তাই দুজনেই থেমে গেলো অল্প কথায়।
____________________________________________

–তোমাকে কতবার বলেছি হসপিটালের মধ্যে কিছু করতে যেও না ফেসে যাবে। শুনলে না আমার কথা। ওই নিরব প্রচন্ড চালাক সব বের করে ফেলবে অনায়াসে।

রেজওয়ানের কথা শুনে কাকন গুনগুনিয়ে গাইতে গাইতে গাইতে বললো….

–আহ রেজওয়ান এখন আমাদের পথের কাটা শেষ। এখন আর আমাদের কোনো ভয় নেই৷ তোমার ছেলে চিরদিনের জন্য কো’মায় চলে গিয়েছে…..

বলেই বিদ্রুপ করে হাসলো। রেজওয়ান বিরক্তি’তে “চ” সূচক শব্দ করলো। পরে বলে উঠলো…..

–এইসব আমি শুনতে চাইনি। যে ছেলে আমাকে বাবা বলে মানে না। সে ম-রলো কি বাঁচলো তাতে আমার কিছু আসে যায়না। তুমি হসপিটালের মধ্যে আট্যাক করে ঠিক কাজ করো’নি…..

রেজওয়ানের কথায় কাকন পাত্তা না দিয়ে গাড়ির চাবি ঘুরাতে ঘুরাতে রুমের বাইরে চলে গেলো। আর রেজওয়ান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। মুখে যাই বলুক কিন্তু ফারদিনের এই অবস্থা হোক তাও সে চায়’নি।

____________________________________________
সময় প্রবাহ মান। কথায় আছে সময় এবং স্রোত কারোর জন্য অপেক্ষা করেনা। তেমনি সেদিনের পর আজ কেটে গেছে সাত দিন। অতি শোকে পাথরে পরিনত হয়েছে ফাইজা। সেদিনের পর হাজার’টা প্রশ্ন করলেও উওর পাওয়া যায়না ওর থেকে। সব সময় স্থির দৃষ্টি’তে তাঁকিয়ে থাকে সামনের দিকে। মনে হয় রাজ্যের ভাবনায় ডুবে আছে ও। চোখ মুখ শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছে। চেহারার মধ্যে কিছুদিন আগের চঞ্চল ভাব’টা নেই।ফারদিন সত্যি’ই কোমায় চলে গিয়েছে এই সত্য’টা ও কিছু’তেই মেনে নিতে পারে’নি। সেদিনের পর প্রতিদিন নিয়ম করে তিন বেলা ফারদিনের সাথে দেখা করতে হসপিটালে যায়। আবার নিজে নিজেই কথা বলে। হাজার প্রশ্ন করে কিন্তু ফারদিন তো কোনো প্রশ্নের উওর দেওয়ার মতো অবস্থা নেই। ফাইজার কেনো যেনো মনে হয় ফারদিন ওর সব কথা শুনে তাও চুপ করে থাকে? ওর এটাও মনে হয় সেদিন সত্যি’ই ফারদিনের জ্ঞান ফিরেছিলো ও স্বপ্ন দেখে’নি। কিন্তু এই কথা’টা কাউকে বিশ্বাস করাতে পারিনি। এইসব ভাবতে ভাবতেই প্রতিদিনের মতো আজ ও রাত করে হসপিটালের থেকে বাড়ি ফিরলো জেহেরে’র সাথে। নিজের রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে ক্লান্ত বিষাদে ভরপুর নিস্তেজ দেহ’টা হেলিয়ে দিলো বিছানায়। কখন চোখ লেগে গেছে নিজেও জানেনা। নির্ঘুম রাত কা’টাতে কা’টাতে চোখের নিচে গাঢ় ও কালির দাগ পড়ে গেছে। ঘুমের মধ্যে’ই কেনো যেনো ওর মনে হলো কেউ ও’কে জড়িয়ে ধরে আছে? কিন্তু কে? কারোর গরম নিশ্বাস পড়ছে ওর মুখে,ঘাড়ে। ঘুম ভেঙে ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলো ফাইজা। রুমের ড্রিম লাইট জ্বালানো ছিলো। ড্রিম লাইটের আলোয় সামনের ব্যাক্তি’টিকে দেখে ফাইজার অন্তরঙ্গ কেঁপে উঠলো। এটা কি করে সম্ভব?
#গোধূলি_লগ্নের_সেই_তুমি
#লেখনীতে_জেনিফা_চৌধুরী
#পর্ব_পনেরো

এক জোড়া ঠোঁট হুট করে ফাইজার কপাল ছুঁয়ে দিতেই ফাইজা নড়ে উঠলো। অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যাক্তি’টিকে দেখে নিজের চোখ’কেই বিশ্বাস করতে পারছেনা ফাইজা। যেই ব্যাক্তি’কে কিছুক্ষন আগে হসপিটালের বেডে দেখে আসলো। সেই ব্যাক্তি’কে কিছুতে’ই চোখের সামনে আশা করেনি ফাইজা। কপালে সাদা ব্যান্ডেজ প্যাঁচানো। বুকের দিকের ব্যান্ডেজ’টাও এখনো খোলা হয়নি। কিন্তু শার্টের জন্য অল্প খানিক’টা দেখা যাচ্ছে। পায়ে ব্যান্ডেজ নেই। হাতের কব্জি’তে ব্যান্ডেজ। কি আশ্চর্য এই লোক’টা এই শরীর নিয়ে এখানে কি করে আসলো? আবার স্বপ্ন দেখছে না তো ও? কোমায় যাওয়া একটা মানুষ কি করে আসবে এখানে? ফাইজা ড্যাব ড্যাব করে তাঁকিয়ে আছে ফারদিনের দিকে। ফারদিন ভ্রু উঁচু করে তাঁকিয়ে আছে ফাইজার দিকে। মুখে একটা মিষ্টি হাসি। দেখতে কি সুন্দর লাগছে ছেলে’টাকে। কে বলেছিলো এত সুন্দর হতে? ছেলেদের এত সুন্দর মানায় না। চোখের চাহনী’তে প্রেমে পড়ে যাবে যে কেউ। এমন করে কেউ তাঁকায় বুঝি? এই ছেলে’টার সৌন্দর্যের কাছে ফাইজা তুচ্ছ। তাও ছেলে’টা নিঃস্বার্থ ভাবে তিন বছর ধরে ভালোবেসে এসেছে। ফারদিন ফাইজার চোখের সামনে তু’রি বাজাতেই ওর ধ্যান ফিরে আসলো। ফাইজার মনে হচ্ছে ও ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছে। কিছুতে’ই নিজের চোখ’কে বিশ্বাস করাতে পারছেনা তুই সত্যি দেখছিস। কোনো স্বপ্ন দেখছিস না। ফাইজা এখনো অবাক নয়নে তাঁকিয়ে আছে। ফাইজার কান্ডে ফারদিন ও’কে বিশ্বাস করাতে আচমকা জোরে চি’মটি কে’টে বসলো ফাইজার গলার পাশে। ব্যাথায় ফাইজা “আহঃ” করে মৃদু শব্দ করে উঠলো। এখন কেনো যেনো ওর বিশ্বাস করতে মন চাচ্ছে ও স্বপ্ন দেখছে না সত্যি ফারদিন এসেছে? কিন্তু কি করে? ফারদিন ফাইজার চুল গুলো কানের পাশে গুঁজে দিয়ে বলে উঠলো…..

–বিশ্বাস করো তুমি স্বপ্ন দেখছো না। তুমি সত্যি দেখছো। তোমার সামনে মিস্টার অভ’দ্র বসে আছে।

বলেই খনিক হাসলো৷ ফাইজা অবাক স্বরে অস্পষ্ট ভাবে বলতে লাগলো…..

—আপনি আমাকে পা’গ’ল করে দিয়ে হসপিটালের বেডে নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছেন তাইনা। আর আমি যেখানে সেখানে যখন তখন আপনাকে স্বপ্নে দেখা শুরু করেছি। আপনি কি আমার স্বপ্ন হয়েই থাকবেন বাকি জীবন। নাকি ফিরে আসবেন আমার কাছে? আপনাকে ছাড়া আমি ভালো নেই। একটু ও ভালো নেই। প্রতি মুহূর্ত বিষাদের আ’গুনে জ্বলে পুড়ে ছাড়খার হয়ে যাচ্ছি…….

বলতেই ওর চোখ বেয়ে পানি পড়তে লাগলো। ফাইজার কান্না দেখে ফারদিন অসহায় ভাবে ওর দিকে দৃষ্টি দিলো। মেয়ে’টার মুখ’টা শুকিয়ে গেছে। চোখ গুলো মারাত্মক ভাবে ফুলে লাল হয়ে আছে। গাল দুটো ও লাল হয়ে আছে। চুলের বেনুনী এলোমেলো হয়ে আছে৷ সত্যি মেয়ে’টা ভালো নেই। ভাবতে’ই ফারদিনের বুকের ভেতর ঝড় বইতে লাগলো। দুমড়ে-মুষড়ে উঠলো। চোখের পানি গুলো আছড়ে পড়া শুরু করবে কিছুক্ষন পর। কিন্তু, ছেলেদের যে যখন-তখন কাঁদতে বারন। ফাইজা কিছুক্ষন চুপ করে থেকে আবারো কান্না মাখা কন্ঠে বলে উঠলো…..

–“আপনি আমার খুব কাছের কেউ”
যাকে ভুলে যাওয়ার কোনো আলাদা পথ নেই
প্রতিদিন মনে পড়বে,
আর, বিষাদের স্মৃতি গুলো হাহাকার করতে থাকবে

ফাইজার কথা শুনে ফারদিন টলমল চোখে ফাইজা’কে একবার জড়িয়ে ধরলো। ফাইজা নিশ্চুপ। আজকে আর ফারদিন’কে আকড়ে ধরছে না। যদি সেদিনের মতো ঘুম ভেঙে যায়। ফারদিন ফাইজা’কে ছেড়ে ওর দুই হাত মুঠোয় বন্দী করে কাতর কন্ঠে বললো…..

–তুমি নামক তৃষ্ণা আমার কোনোদিন মিটবে না…..

বলেই ওর কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালো। ফাইজা হালকা কেঁপে উঠলো ঠিকি কিন্তু অবাক নয়নে তাঁকিয়ে দেখছে ফারদিন’কে। ও আবার স্বপ্ন দেখছে? কি করে হবে এই মিরাক্কেল? এই লোক’টাই তো হসপিটালের বেডে ছিলো। তাহলে? ফাইজার ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে ফারদিন আলতো করে ফাইজার দুই গালে হাত রাখলো। ফাইজার নাকের সাথে নিজের নাক কয়েক’বার ঘ’ষে নিলো। তারপর ফাইজার কপালের সাথে নিজের কপাল লাগিয়ে নেশালো কন্ঠে বলে উঠলো…..

–কত দিন তোমাকে চু’মু খাই’নি বলো তো? চু’মুর অভাবে যে তৃষ্ণায় আমার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছে সে খেয়াল কি তোমার আছে? আমার এই তৃষ্ণা মিটিয়ে দিবে জান?

ফাইজা এইবার ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে ফারদিন’কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। হঠাৎ এমন ভাবে শক্ত করে ধরায় ফারদিন বুকে ব্যাথা পেয়েও নিজেকেও সামলে নিলো। ব্যান্ডেজ প্যাচানো হাত’টা ফাইজার চুলে ডুবালো। ফাইজা কেঁদেই যাচ্ছে। ওর চোখের পানি ফারদিনের শার্টের উপর পড়ে ভিজে যাচ্ছে। বেশ খানিক’টা সময় কেটে গেলো। ফাইজা’ শান্ত হয়ে ফারদিনের বুকে লেপ্টে আছে। ফারদিন ফাইজার মাথায় আলতো করে হাত বুলাচ্ছে। ফাইজা’কে শান্ত হতে দেখে ফারদিন বলা শুরু করলো……

–সেদিন তুমি স্বপ্ন দেখো নি। সেদিন সত্যি আমার জ্ঞান ফিরেছিলো। তোমার সাথে কথা বলার সময় চোখ যায় দরজার দিকে। একজন ব্যাক্তি ছিলো সেখানে আড়ালে। তার হাতে আমি স্পষ্ট ছু/ড়ি দেখতে পেয়েছিলাম। বুঝে গিয়েছিলাম এই মুহূর্তে আট্যাক করা হবে আমাকে’ই। চেষ্টা করলেও নিজেকে বাঁচাতে পারব না। আর তারা তোমার ক্ষ’তি করবে না সেটা আমি আগেই জানি। তাই তৎক্ষনাৎ পূর্বের মতো শান্ত হয়ে রইলাম। ব্যাক্তি’টা তোমাকে আট্যাক করবে আমি সত্যি বুঝতে পারি’নি। যখন তোমাকে আ’ঘাত করা হলো। আমি চেয়ে ও পারিনি তোমাকে সেভ করতে। সে তোমার মাথায় আ’ঘাত করেই আমাকে কিছুক্ষন তীক্ষ্ণ চোখে দেখে চলে গেলো। আমি চাইলেও তখন তোমার কাছে আসতে পারতাম না। তখনি রুমে তোমার মা ঢুকে তোমাকে ওই অবস্থায় দেখে সবাই’কে ডেকে তোমাকে নিয়ে যায়। তারা ভেবেছিলো তুমি সেন্সলেস হয়ে গিয়েছো। তোমাকে নেওয়ার সময় আমার অসহায় চাহনী কেউ দেখতে পায়’নি। দূর থেকে তাঁকিয়ে ভেতরে ভেতরে ম/রে যাচ্ছিলাম। সেদিন আমার জ্ঞান ফিরতে না দেখে নিরব ও ভেবেছিলো আমি কো’মায় চলে গিয়েছি। সবাই চলে যাওয়ার পর নিরব যখন একা আমার চেক-আপ করেছিলো তখন ও আর আমি মিলে এই কোমায় যাওয়ার ড্রামা’টা শুরু করি। কারন হসপিটালের সার্ভেন্ট দের মধ্যে কেউ একজন শত্রু পক্ষের লোক যে আমাদের উপর নজর রাখছিলো। সাড়া হসপিটালে আমার কো’মায় যাওয়ার ঘটনা’টা রটিয়ে দেওয়া হলো। এই খবর’টা শোনার পর আর কারোর উপর আট্যাক হবেনা আমি জানি। কারন, আমার শোকে সবাই এমনেই’ অর্ধেক ম/রে যাবে আর তারা দূর থেকে মজা নিবে। সেদিন আমার কেবিনের সিসি টিভি ফ্রুটেজ গুলো নিরব সরিয়ে রেখে দিয়েছিলো সবার আগে যার কারনে তারা কেউ কিছু জানতে পারিনি। তোমাকে সত্যি’টা জানানোর মতো সময় আমার হাতে ছিলো না। তাই এত’টা কষ্ট পেতে দেখতে হয়েছে তোমাকে? এই সাত দিন আমার সুস্থ হতে সময় লেগেছে। এখনো সব ক্ষ’ত রয়ে গেছে কিন্তু শারীরিক ভাবে অনেক’টাই ফিট তাই আজ আর নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারলাম না। ছুটে এসেছি তোমার কাছে। আমার এই লজ্জাবতী’কে ছাড়া সম্পূর্ণ অসহায়……

ফারদিনের কথা গুলো শুনে ফাইজা চুপ করে থাকলো কোনো রিয়েক্ট করলো না। যখন সব কথা গুলোর মানে বুঝলো তখন অভিমানে নিজেকে ফারদিনের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে রাগী স্বরে বলতে লাগলো…..

–তার মানে এত দিন আপনি সব নাটক করেছেন। বাহ আর আমি আপনার শোকে পাথর হয়ে পড়ে আছি। আমাকে কষ্ট দিতে আপনার খুব ভালো লাগে তাইনা। খুব মজা পান আমাকে কষ্ট দিয়ে। কেনো এসেছেন আজ? চলে যান এক্ষুনি। আমার আপনাকে চাইনা…..

বলতে বলতে ওর চোখ গুলো জলে ভরে উঠলো। ফাইজার অভিমানী কন্ঠ শুনে ফারদিন অসহায় ফেস করে ফাইজা’কে আবারো টেনে জড়িয়ে নিলো। ফাইজা নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই ফারদিন একটু শক্ত করেই ধরে বললো…..

–ব্যাথা পাচ্ছি তো জান। এত অভিমান করতে নেই…..

ফারদিনের কথা শুনে ফাইজা শান্ত হয়ে গেলো। আলতো ফারদিনের পিঠে হাত র রাখলো। মাথা’টা একদম ফারদিনের বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে চোখ দুটো বন্ধ করে নিলো। ফারদিন ফাইজা’র চুলে মুখ ডুবিয়ে শান্ত হয়ে রইলো। দুটি ভালোবাসার মানুষ আজ শান্তি’তে চোখ বন্ধ করে আছে……

#চলবে

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here