ওহ্! আর পারছি না ব্যাথা লাগছে তো রাজ।
রাজ ঠাস করে চড় বসিয়ে দেয় অধরার গালে!
চড়টা এতই জুরে ছিল, অধরার ঠোঁট কেটে রক্ত গড়িয়ে পড়তে লাগল। রাজ অধরাকে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে আছে! অধরা ছটফট করছে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য। আর বলছে, ”প্লিজ ছেড়ে দাও বলছি। কি করছো এসব? তোমার পায়ে পড়ছি আমার সর্বনাশ করো না। প্লিজ ছাড়ো। কি চাও তুমি আমার কাছে? আমার সতিত্ব হরণ করো না।”
– অধরা রাজের সাথে পেড়ে উঠছে না। রাজ জোর করে অধরার শাড়ির আচল টেনে হিঁচড়ে ছিড়ে ফেলছে!
– বাবা -মা কোথায় তোমরা বাঁচাও আমাকে। এই কালপিডটা আমার সাথে অসভ্যতামী করছে। অধরার চিৎকারে ড্রয়িংরুম থেকে সবাই অধরার ঘরের দরজায় এসে দাঁড়ায়।
– অধরা রাজের পায়ে পড়ছে তবুও রাজ ছাড়ছে না। রাজ যখন বুঝতে পারলো দরজায় সামনে সবাই এসে গেছে। তখন রাজ অধরাকে ছেড়ে দিয়ে বললো,’ তুমি যদি এখন সবাইকে বলোও যে আমি তোমার কোন ক্ষতি করিনি। শুধু তোমার শাড়ির আচল আর জামাটা একটু ছিড়েছি।” তা কেউ বিলিভ করবে না। ” কথাটা বলে মুচকি হেসে রাজ ঘরের দরজা খুলে দেয়।
– দরজা খুলতেই অধরাকে অর্ধনগ্ন অবস্থায় দেখে রাজের বাবা ঠাস করে রাজের গালে চড় বসিয়ে দিয়ে বলল,’ এজন্যই তোকে পড়ালেখা শিখিয়েছি?রাজ কোন কথা না বলে চলে যায়।
” অধরা দরজা লাগিয়ে কাঁদতে থাকে। রাজ তার স্বপ্নগুলো নষ্ট করে দিলো। তার মৃত্যু ছাড়া এখন কোন রাস্তা নেই। কেন এমন করল? সদ্য কাজল গুলো অধরার চোখের ভ্রু ছেড়ে গাল ছুঁয়ে যাচ্ছে। নতুন কালো পাড়ের নীল শাড়িটা আর আগের মতো নেই। নীল রঙা কাঁচের চুড়িগুলো ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে অধরার স্বপ্নগুলোর মতো এক নিমিষে। মাথার সিল্কি করা চুলগুলো আর আগের মতো নেই। জীবনটা যেন এক কালবৈশাখী ঝড়ে লন্ডবন্ড হয়ে গেল।
.
সবাই চুপ-চাপ বসে আছে। কারো মুখ থেকে কোন কথা বের হচ্ছে না। মনে হচ্ছে ঝড় থেমে গেলে যে শান্ত অবস্থা বিরাজ করে সেরক সব কিছু স্থবির হয়ে আছে। কেউ ভাবতেও ঘূণাক্ষরে মেয়ে দেখতে এসে রাজ এমনটা করবে। রাজের বাবা আর অধরার বাবা ছোটবেলা থেকেই বন্ধু। আর তাই রাজ আর অধরার বিয়ের জন্যই আজ কথা হচ্ছিল। এক পর্যায়ে ছেলে মেয়ে আলাদাভাবে কথা বলার জন্য যখন রুমে পাঠানো হয়। তখনি রাজ বিশ্রী ঘটনাটার জন্ম দেয়। অধরার বাবার মরে যেতে ইচ্ছে করছে। সে এ মুখ দেখাবে কি ভাবে সমাজে।
– রাজের বাবা এসে অধরার বাবাকে বললো,’ বন্ধু আমাকে ক্ষমা করে দে। তোর কাছে ক্ষমা চাওয়ার কোন উপায়ান্ত নেই।
– বন্ধু আমি কি করবো? আমার মরা ছাড়া কোন উপায় নেই! এ মুখ সমাজে দেখাবো কি করে? কাল যখন রাস্তা দিয়ে যাবো। তখন লোকে বলবে,’ ওই দেখ ধর্ষিতার বাবা যাচ্ছে!” এই বলে অধরার বাবা কেঁদে দিল।
-রাজের বাবা অধরার বাবাকে জড়িয়ে ধরে বললো,’বন্ধু কান্না করিস না আজ এ মুহূর্তে রাজ আর অধরা মার বিয়ে হবে। ”
– অধরা এ কথা শুনে বললো,’ কি বলছেন এসব? আমি কি আপনাদের হাতের পুতুল? যা ইচ্ছা তাই করবেন? মন চাইলে খেলবেন না মন চাইলে ছুঁড়ে ফেলে দিবেন? শুনেন দরকার হলে গলায় দড়ি দিব তবুও ওই দুশ্চরিত্রটাকে বিয়ে করবো না।’ ‘ বাবা তুমি না করে দাও উনাকে। আর বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে বলো।
– মারে চুপ কর, তুই কি তোর বাবার মরা মুখ দেখতে চাস? মারে তোর কাছে জীবনে কিছু চায়নি আজ বাবা হয়ে আমার সম্মান তোর কাছে ভিক্ষা চাচ্ছি। পারবি আমার সম্মান রক্ষা করতে? বিয়েটা তুই করে নে।
– বাবা তুমি ওমন করে বলো না। আমি বিয়ে করবো আয়োজন করো।
– এদিকে সন্ধ্যায় রাজ আর অধরার বিয়ে হয়ে যায়। অধরা বাসর ঘরে ঢুকার সময় বিষ খেয়ে নিছে। সে চায় না রাজ নামক ধর্ষক টার সাথে সংসার করতে।
অধরার খুব করে কান্না পাচ্ছে। একটা সময় সে রাজকে খুব ভালোবাসতো। কিন্তু যেদিন তার বোন সুসাইড করলো আর সুসাইড করার পর যখন তার বোনের ডাইরি পড়ে জানতে পারলো সুসাইডের কারণটা ছিল রাজ। এখনো সে দিনের কথা মনে হলে রাজকে খুন করতে ইচ্ছে করে। কিন্তু সেদিন কাউকে কিছু বলতে পারে নাই। আর এখন নিজের বোনের হত্যাকারীকেই বিয়ে করতে হলো। এসব ভাবতে ভাবতে চোখ থেকে টুপ-টাপ বৃষ্টির মতো জল গড়িয়ে পড়তে লাগল।
– বাসর রাত সবার স্বপ্নের হলেও, অধরার কাছে বাসর রাতটা জীবনের কাল রাত মনে হচ্ছে! বাসর ঘরটা তার কাছে নরক মনে হচ্ছে। তার সব স্বপ্নগুলো আজ ফ্যাকাশে। এসব ভাবতে ভাবতে,
হঠাৎ দরজায় কড়া নড়ল। অধরা তাকিয়ে দেখে রাজ রুমের দরজা লাগিয়ে এদিকে আসছে। কিন্তু এখনো বিষে কাজ করছে না কেন? রাজ যদি সত্যি স্বামীত্ব ফলায়? নাহ্ ওর মতো একটা দুশ্চরিত্রের সাথে ঘর করা যায় না। এদিকে রাজ অধরার কাছে এসে ঘুমটা সরাতেই,
.
.
চলবে……………..
.
গল্প :- গোধূলী বেলায় তুমি।
পর্ব :- ০১
লেখিকা :- তাসনিম রাইসা