ঘর বাধার স্বপ্ন পর্ব -০৯

#ঘর_বাধার_স্বপ্ন
#আরোহী_ইসলাম
#পর্ব:৯

অবনি থমথমে গলায় বললো ‘ হাতে হলুদ লেগে ছিলো ওইখান থেকেই মুখে লেগেছে।’
অবনির কথা শুনে আবিদের মা তখন বললো
‘ আচ্ছা চল তোকে হলুদ দিতে হবে এখন।’
অবনি তখন আচ্ছা বলে স্টেজে গিয়ে বসলো। তারপর একে একে সবাই অবনিকে হলুদ লাগাতে লাগলো। আবিদের মা আবিদের ছেলে ফ্রেন্ডকে বললো’ অবনিকে হলুদ লাগিয়ে আসো যাও।’

আবিদের ফ্রেন্ড পাভেল আচ্ছা বলে অবনির কাছে আসলো। ধ্রুব অবনিকে চোখ দিয়ে ইশারা করে বললো ‘ ও যেনো তোমার গায়ে হলুদ না ছোয়ায়।’

অবনি মুচকি হেসে মাথা ঝাকিয়ে আচ্ছা বললো। ধ্রুব খুশি হয়ে গেলো তার অবনিকে অন্য কেউ হলুদ লাগাবে এইটা সে চায় না। পাভেল বাটি থেকে হলুদ নিয়ে অবনি কে দিবে তার আগেই অবনি পা দিয়ে টেবিলটা ধাক্কা দিতেই বাটিতে থাকা হলুদ পাভেলের পাঞ্জাবীতে লেগে গেলো। অবনি তাড়াতাড়ি করে দাঁড়িয়ে বললো’ সরি আমি দেখিনি।’

পাভেল বিরক্ত চাহনিতে অবনির দিকে তাকিয়ে বললো’ ইট’স ওকে।’ আবিদের মা এসে পাভেলকে বললো ‘ বাবা তোমার পাঞ্জাবীতে তো অনেকটাই লেগে গেছে।’

পাভেল তখন একটু হাসার চেষ্টা করে বললো
‘ কিছু হবে না আন্টি। আমি চেঞ্জ করে আসছি এই বলে পাভেল অবনির দিকে তাকিয়ে চলে গেলো। অবনি স্টেজে দাঁড়িয়ে আছে হঠাৎ আবিদ এসে পৈশাচিক হাসি দিয়ে অবনিকে বললো’ অবনি তোকে অনেক হট লাগছে। যদি তোর গায়ে কাপড় না থাকতো তাহলে.. আবিদকে আর কিছু বলতে না দিয়ে অবনি চোখ মুখ শক্ত করে বললো’ মুখের ভাষা ঠিক করো।’

আবিদ প্রতি উত্তরে কিছু বলবে তার আগেই পাভেল আবিদকে ডাক দিতেই আবিদ চলে গেলো।

ধ্রুব আফিহাকে ডেকে বললো অবনিকে নাচতে বলতে। ধ্রুবের কথায় আফিহা ভ্রু উলটে বললো ‘ আচ্ছা কিন্তু আগে ঘুস দিতে হবে তারপর।’ আফিহার কথায় ধ্রুব আফিহার কান ধরে বললো ‘ বড় ভাইয়ার থেকে ঘুস নেওয়া হচ্ছে?

আফিহা বললো
‘ লাগছে ভাইয়া কান ছাড়ো।’ ধ্রুব কান ছেড়ে দিলো আফিহা শয়তানি হেসে বললো তুমি আমার দুলাভাই। আর দুলাভাইয়ের থেকে ঘুস নিলে কিচ্ছু হয় না এইবার মানে মানে এক হাজার টাকা বের করো।’

ধ্রুব তখন হেসে পকেট থেকে এক হাজার টাকা বের করে আফিহাকে দিলো। আফিহা খুশি হয়ে ধ্রুবকে বললো’ মাই কিউট গুলুমুলু দুলাভাই।’ এই বলে আফিহা অবনির কাছে এসে অবনির হাত ধরে নাচতে লাগলো। হঠাৎ কারেন্ট চলে গেলো ধ্রুব অবনির কাছে আসতেই লাল লাইট জ্বলে উঠলো। ধ্রুব অবনির কানে ফিসফিস করে বললো’ অবনি তোকে আজ অনেক সুন্দর লাগছে।’ অবনি মুচকি হাসলো। লাইটের আলোতে ভালো করে দেখা যাচ্ছে না কে কার সাথে নাচতেছে। নাচ শেষ হলে ধ্রুব দ্রুততার সঙ্গে নাচের স্থান থেকে চলে গেলো।

কিছুক্ষন পর
গায়ে হলুদ অনুষ্ঠান শেষ হলো। আবিদের মা অবনিকে রুমে নিয়ে এসে ওর চুল থেকে ক্লিপ খুলে দিতে লাগলো। আবিদের দাদি আবিদের মাকে ডাকতে তিনি কিছুটা জোরে বললো’ মা আমি একটু দেরি করেন আমি আসছি।’

অবনি মিষ্টি হেসে বললো
‘ কাকি তুমি দাদির কাছে যাও আমি এইগুলো খুলতে পারবো সমস্যা নাই।’

আবিদের মা তখন শান্ত চাহনিতে বললো
‘ পারবি তো?

অবনি মুচকি হেসে বললো ‘ হ‍্যাঁ পারবো।’ আবিদের মা মুচকি হেসে চলে গেলো। অবনি গলা থেকে ফুলের মালা খুলতে যাবে কিন্তু হুক পাচ্ছে না। অবনি আবারো চেষ্টা করলো কিন্তু বারবারই ব‍্যর্থ হচ্ছে তবুও অবনি হাল ছাড়লো না অবনি এইবার হুক লাগাতে না পেরে বিরক্ত হয়ে গেলো। হঠাৎ পিছন থেকে কেউ বলে উঠলো’ আমি লাগিয়ে দিচ্ছি।’

অবনি আয়নায় ধ্রুবের মুখ দেখে চমকে গেলো। ধ্রুব অবনির কাছে এসে মালা খুলে দিতে লাগলো। ধ্রুবের শ্বাস অবনির ঘাড়ে পরতেই অবনি চোখ বন্ধ করে নিলো। অবনির হার্টবির্ট দ্রুত গতিতে বাজতে লাগলো। অবনির অবস্থা থেকে ধ্রুব মুচকি মুচকি হাসলো। অবনি নড়াচড়া করতে দেখে ধ্রুব বললো ‘ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাক।’

অবনি আস্তে করে বললো ‘ লাগবে না। আমি অন্য কাউকে বলতেছি।’ ধ্রুব অবনির কথা না শুনে অবনির কানের দুল হাতের চুড়ি খুলে দিলো। ধ্রুব অবনিকে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে বললো’ যা ফ্রেশ হয়ে নে।’

অবনি ধ্রুবের দিকে তাকিয়ে বললো
‘ আপনি যে আমার রুমে এসেছেন কেউ দেখতে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে।’

ধ্রুব তখন অবনির কোমরে হাত দিয়ে নিজের কাছে এনে বললো কেউ দেখলে তো বলবে।’ কথার মাঝেই অবনির দাদি অবনিকে ডাকতে ডাকতে অবনির রুমে আসতে লাগলো। অবনি ভয় পেয়ে ধ্রুবকে বললো ‘ দাদি যদি তোমাকে আর আমাকে এক সঙ্গে দেখে তাহলে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে। এখন কোথায় পলাবে তুমি?

ধ্রুব কিছু একটা ভেবে অবনির হাত ধরে ওয়াশরুমে নিয়ে আসলো। অবনির দাদি রুমে এসে অবনিকে দেখতে না পেয়ে বললো’ অবনি কোথায় তুই?

ধ্রুব অবনিকে ভয় দেখাতে আস্তে করে বললো দাদি.. আর কিছু বলতে যাবে তার আগেই অবনি ধ্রুবের মুখে হাত দিয়ে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে বললো’ তুমি চুপ করে থাকো।’ অবনির কথায় ধ্রুব কাদো কাদো মুখ করে তাকালো। অবনি তার দাদিকে বললো ‘ দাদি আমি ওয়াশরুমে কি হয়েছে তুমি বলো?

অবনির দাদি তখন বললো
‘ আমি আজ তোর রুমে ঘুমাবো।’
দাদির কথা শুনে অবনির মাথায় বাজ পরলো। অবনি থমথমে গলায় বললো ‘ এখনই?

অবনির দাদি বললো
‘না একটু পর আসতেছি।’
দাদির কথায় অবনি শ্বাস নিয়ে বললো’আচ্ছা।’

ধ্রুব ঝর্না ছেড়ে দিতেই অবনি ভিজে গেলো। অবনি ধ্রুবের দিকে রাগি মুখ করে বললো’ কি করলে তুমি?

ধ্রুব অবনির চুলে মুখ ডুবিয়ে বললো
‘ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাক।’

ধ্রুবের নেশাময় কন্ঠে অবনি চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো। ধ্রুবের ছোয়ায় বরাবরের মতো অবনির মনে অন্যরকম অনুভূতি হতে লাগলো। অবনি ধ্রুবকে বললো’ তাড়াতাড়ি রুমে যাও তুমি। দাদি একটু পরেই আসবে।’

অবনির জোরাজোরিতে ধ্রুব নিজের রুমে চলে গেলো। ধ্রুব নিজের রুমে এসে মুখ ফুলিয়ে বললো’ কি কপাল আমার নিজের বউ নিজের বাড়ি কিন্তু বউয়ের সাথে থাকতে পারছি না। হাইরে ফাটা কপাল আমার। ধ্রুবের অবস্থা এখন ছলছল নয়নে হাসি মাখা বদনে।’

সকালবেলায়
‘ অবনি ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে ড্রয়িং রুমে গেলো। অবনির মা অবনিকে বললো’ কিছু খাবি?
অবনি বললো’না।’

আবিদের মা অবনির মাকে বললো
‘ ধ্রুবকে ডাক দিতে হবে। এইখানে এতো কাজ আমি যেতেও পারবো না। আফিহা কোথায়?

অবনি আবিদের মাকে বললো
‘ কাকি আমি যাচ্ছি। আফিহা ঘুমে ওকে এখন ডেকো না।’

আবিদের মা অবনির মুখে হাত দিয়ে মুচকি হেসে বললো ‘ লক্ষি মা আচ্ছা যা তুই।’

অবনি হুম বলে ধ্রুবের রুমে এসে দেখে মহারাজ ঘুমিয়ে আছে। অবনি ধ্রুবর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে ছোট বাচ্চাদের মতো ঘুমিয়ে আছে। অবনি ধ্রুবকে ডাকবে হঠাৎ অবনির মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি আসে। অবনি শয়তানি হেসে জোরে করে ভাইয়াআআআ বলে ডেকে উঠে। চিৎকারের শব্দে ধ্রুব তাড়াতাড়ি করে উঠে বলে কে কে, হাসির শব্দে ধ্রুব সামনে তাকিয়ে দেখে অবনি হাসতেছে। ধ্রুব বুঝতে পারে এই কাজ অবনি করেছে। ধ্রুব অবনির হাত টান দিয়ে বিছানায় ফেলে দেয়। অবনি তাড়াতাড়ি করে উঠে বলে তোমাকে ডাকে কাকি।’
অবনিকে ধরার আগে অবনি দৌড়ে রুম থেকে চলে যায়। অবনির কাজ দেখে ধ্রুব হেসে দেয়।

দুপুর বেলা

” অবনিকে পার্লারের লোক সাজিয়ে দিতেছে। কিছুক্ষন পরেই আবিদের সাথে অবনির বিয়ে হবে। অবনি চিন্তিত মুখ করে আছে। সাজানো শেষ হলে আবিদের মা এসে অবনির কাছে এসে বললো’ তোকে পরীর মতো লাগছে কারো যেনো নজর না লাগে।’ অবনি মুচকি হাসলো। তারপর আবিদের মা অবনিকে নিয়ে গেলো স্টেজে কাজি এসে গেছে। অবনি ধ্রুবকে খুজতে লাগলো। আফিহা অবনিকে আশেপাশে তাকাতে দেখে বললো ‘ কাকে খুজছিস আপুই?

অবনি আস্তে করে বললো ‘ ধ্রুব ভাইয়া কোথায়?.
আফিহা বললো’ আছে।’ অবনি পাশে তাকিয়ে দেখে বরবেশে আবিদ তার পাশে বসে আছে। অবনির হঠাৎ চোখ যায় আবিদের মুখের দিকে। অবনি অবাক হয়ে বলে মাক্স পরা কেনো আবিদ ভাইয়া?

আফিহা তখন বলে ‘ ভাইয়ার মুখে এলার্জি হয়েছে যার জন্য মাক্স পরা এখন চুপ করে থাক।অবনি মনে মনে আল্লাহ্ আল্লাহ্ করতে থাকে কোনো ভাবেই যেনো এই বিয়েটা না হয়। কাজি এসে অবনিকে কবুল বলতে বললো’ অবনি চুপ করে আছে। আফিহা অবনির হাত চেপে বললো’বল আপুই।’

অবনির এখন কান্না পাচ্ছে শেষ মেষ কিনা আবিদের সাথে বিয়ে হবে। সবার জোরাজোরিতে অবনি কবুল বললো। তারপর আবিদও কবুল বললো। কাজি বললো আলহামদুলিল্লাহ্।’
আবিদের মা খুশি হয়ে গেলো কিন্তু হঠাৎ কেউ চিৎকার করে বলে উঠলো এই বিয়ে হবে না।’

সবাই দরজার দিকে তাকাতেই দেখে আবিদ দাঁড়িয়ে আছে। সবাই অবাক হয়ে গেলো। অবনি অবাক হয়ে তার পাশে বরবেশে থাকা লোকটার দিকে তাকিয়ে বললো এই কে তাহলে?

আবিদ তার মায়ের কাছে এসে কান্নাকরে বললো’ আম্মু আমার একটা জরুরি কাজ পরাই আমি ** এই জায়গাই গিয়েছিলাম কিন্তু জ‍্যামের কারনে আসতে অনেক দেরি হয়েছে। আমি তোমাকে কল দিয়েছিলাম কিন্তু ফোনে নেটওয়ার্কে সমস্যা হয়েছিল যার জন্য যায়নি।’

আবিদের মা চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। অবনির দাদি অবনির পাশে বররুপে বসা ছেলেটাকে বললো’ তুমি কে? মাক্স খুলো।’

অবনির দাদির কথায় ছেলেটা মাক্স খুলতেই সবাই আরেকদফা চমকে গেলো। অবনির দাদি বললো ধ্রুব তুই?

অবনি তাকিয়ে দেখে ধ্রুব। অবনি মনেমনে অনেক খুশি হলো কিন্তু তা মুখে প্রকাশ করলো না। ধ্রুব শান্ত চাহনিতে বললো,,,

#চলবে…
(ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। কেমন হয়েছে অবশ্যই বলবেন। পড়ে মন্তব্য করার অনুরোধ রইলো। হ‍্যাপি রিডিং।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here