ঘর বাধার স্বপ্ন পর্ব -১০

#ঘর_বাধার_স্বপ্ন
#আরোহী_ইসলাম
#পর্ব:১০

ধ্রুব শান্ত চাহনিতে বললো ‘ হ‍্যাঁ আমিই।’
ধ্রুবকে দেখে আবিদ রেগে ধ্রুবের কাছে এসে ওর শার্টের কলার ধরে চেচিয়ে বললো’ তোর সাহস কি করে হয় আমার হবু বউকে বিয়ে করার? তুই আমার ভাই হয়েও আমার সাথে চিটারি করিস?

আবিদের মা ধ্রুবের কাছে এসে চোখ মুখ শক্ত করে আবিদের থেকে ধ্রুবকে ছাড়িয়ে বললো’ তুমি তোমার দায়িত্ব পালন করো না এতে অন্যকে দোষারোপ করছো কেনো? ধ্রুব অবনির সম্মান বাঁচিয়েছে। আজ যদি ধ্রুব অবনিকে বিয়ে না করতো তাহলে অবনিকে সবাই খারাপ চোখে দেখতো। তোমার বিয়ে ভেঙে গেছে এতে কেউ তোমাকে কিছু বললো না ঠিকই কিন্তু মেয়েদের বেলায় তাকে সমাজে থাকতে দেওয়াই কঠিন হয়ে দাড়ায়।’

আবিদ ধ্রুবের কলার ছেড়ে তার মাকে বললো
‘ আমাকে একজন ফোন দিয়ে বলে ** এই জায়গাই আপনাকে দুই লক্ষ টাকা নিয়ে লাল শার্ট পরা একটা লোক যাবে আপনি টাকাটা নিতে চাইলে দ্রুত তাড়াতাড়ি চলে আসেন। আমি লোভের নেশায় তাড়াতাড়ি চলে যায় কিন্তু ওইখানে যেয়ে দেখি কেউ নেই। আমি কিছুক্ষন আশেপাশে দেখি কিন্তু লাল শার্ট পরা লোক দেখিনা। ওইখান থেকে বাড়ির দিকে রওনা দেয় কিন্তু অনেক জ‍্যাম থাকাই আসতে পারিনি। আমি বুঝতে পারিনি আমার সাথে কেউ ফান করবে।’

সবাই অবাক হয়ে গেলো আবিদের কথায়। অবনির দাদি চোখ মুখ শক্ত করে ধ্রুবের মাকে বললো’তুমি সব জানতে?

আবিদের মা তখন শান্ত চাহনিতে বললো
‘মা অবনিকে আমি অনেক ভালোবাসি। অবনি অনেক ভালো একটা মেয়ে আমি চায় না যে অবনির অন্য যায়গায় বিয়ে হোক সেই জন্য আবিদের সাথে ওর বিয়ে ঠিক করেছিলেন আমি রাজি হয়েছি কিন্তু আবিদ তার দায়িত্ব পালন করতে পারেনি যার জন্য অবনি আজ ধ্রুবের। আমি চায় না আপনি আর কোনো ঝামেলা করেন।’

অবনির দাদি তখন মুখ বাকা করে বললো
‘একবারেও কি ধ্রুবের মতামত নিয়েছো এই বিয়েতে?

ধ্রুব বললো
‘ আমি অবনিকে ভালোবাসি আর অবনিও ভালোবাসে তাই আমরা দুজনেই রাজি হয়েছি।’

আবিদ অবাক নয়নে অবনির দিকে তাকিয়ে বললো
‘ তুই ধ্রুবকে ভালোবাসিশ? তুই না আমাকে ভালোবাসিশ আমার সাথে রিলেশন করেছিস?

আবিদের কথায় সবাই আরেকদফা অবাক হলো। অবনি জানতো এই কথাটা আবিদ কোনো না কোনো দিন তাকে বলবেই অবনি তাচ্ছিল্য হেসে বললো ‘ হ‍্যাঁ তোমাকে ভালো বাসতাম কিন্তু এখন আর বাসি না কারন তুমি একটা প্রতারক।’

আবিদ পৈশাচিক হাসি দিয়ে অবনিকে বললো
‘ এখন তো আমার ভাইকে পেয়েছিস সুন্দর সেই জন্য ওর উপরে ঝুলে গিয়েছিস।’

ধ্রুব কিছুটা রেগে বললো’ চুপ কর..
ধ্রুবকে আর কিছু বলতে না দিয়ে আবিদের মা বললো কি বলতেছিস তোরা সব পরিষ্কার করে বল।’

আবিদ তখন বললো
‘ মা অবনির সাথে আমার একবছরের রিলেশন ছিলো ও আমাকে ভালোবাসত..

অবনি আবিদের মায়ের সামনে এসে বললো আমি বলতেছি

আবিদের মা বললো হুম।
অবনি বললো ‘ আবিদ ভাইয়া আমার ছোটবেলার ভালোবাসা ছিলো। আমি সবার ভয়ে কখনো ওনাকে বলিনি আমি আপনাকে ভালোবাসি কিন্তু আমি যখন ইন্টার প্রথম বর্ষে উঠি তখন আবিদ ভাইয়া আমাকে প্রোপোজ করে আমি ওনার আকুল ভরা কন্ঠে রাজি হয়ে যায়। বুনতে থাকি ঘর বাধার স্বপ্ন কিন্তু ওনি আমার সাথে প্রতারণা করে আমাকে ঘর বাধার স্বপ্ন দেখিয়ে আরো অনেক মেয়েদের সাথে কথা বলে ডেটে যায়। মাইশা আপুকে ওনি পছন্দ করে এবং বিয়েও করতে চাই। মাইশা ওনাকে ভালোবাসে না ওনি ভালোবাসে অন্য একটা ছেলেকে। মাইশা ওনার থেকে এক লক্ষ টাকা নিয়ে মেহেরকে নিয়ে পালিয়ে যায়। ওনি সেটা বুঝতেও পারে না।’
এই বলে থামলো অবনি। আবিদের মা সব শুনে আবিদকে থাপ্পড় দিয়ে বললো তোর মতো বেয়াদব যে আমার ছেলে সেটা ভাবতেই আমার অবাক লাগে।যা বাড়ি থেকে বের হয়ে।’

আবিদ অবাক চোখে বললো’তুমি থাপ্পড় মারলে ওর জন্য? ওকে ফাইন। এই বলে আবিদ রেগে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো। আবিদের মা আফিহাকে বললো তুই অবনিকে ধ্রুবের রুমে নিয়ে যা। আফিহা আচ্ছা বলে ধ্রুবের রুমে অবনিকে নিয়ে গেলো। অবনি তখন আফিহাকে বললো’ ধ্রুব ভাইয়া যে আমার পাশে বররুপে ছিলো তুই জানতি তবুও বলিসনি কেনো?

আফিহা দাত কেলিয়ে বললো
‘ তোকে সারপ্রাইজ দিলাম আরকি।’

অবনি তখন আফিহাকে বললো
‘ তোকে তো আমি,
আফিহা ভ্রু উলটে বললো
‘ কি খেয়ে ফেলবি ছিহ্ তুই রাক্ষসী হয়ে গেলি।’
আফিহা এই বলে তাড়াতাড়ি করে চলে গেলো। অবনির এখন রাগ লাগছে। অবনি চুপচাপ বসে আছে আবিদের মা এসে নিজের গলার চেইন খুলে অবনির গলায় পড়িয়ে দিয়ে বললো’ অবনি এইটা আজ থেকে তোর। তুই কিন্তু এই বাড়ির বউ আমাকে কাকি বলবি না এখন থেকে আম্মু বলবি আর বড় বউয়ের দায়িত্ব পালন করবি ঠিক আছে?

অবনি মুচকি হেসে বললো
‘ আমি আমার সবটা দিয়ে চেষ্টা করবো।’

আবিদের মা মুচকি হেসে রুম থেকে চলে গেলো। ধ্রুব এসে অবনিকে বললো যাও ফ্রেশ হয়ে নামাজ পরে নাও।’

অবনি আচ্ছা বলে ফ্রেশ হয়ে নামাজ পরে নিলো। ধ্রুব অবনিকে বেলকনিতে নিয়ে এসে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো’ আজ আমি পরিপূর্ণ তোমাকে পেয়ে।’ ধ্রুবের কথায় অবনি মুচকি হেসে ধ্রুবকে জড়িয়ে ধরলো।
___
সকালবেলায়
অবনি ঘুম থেকে উঠে গোসল করে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল মুছতেছে হঠাৎ পিছন থেকে ধ্রুব অবনিকে জড়িয়ে ধরে বললো’ কখন উঠছিস?

অবনি তখন বললো
‘ কিছুক্ষন আগে। তুমি তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নাও।’

ধ্রুব হুম বলে ফ্রেশ হতে গেলো। অবনি ড্রয়িং রুমে এসে রান্নাঘরে গেলো। ধ্রুবের মা অবনিকে দেখে বললো কিছু খাবি?

অবনি বললো’না।’ ধ্রুবের মা বললো আচ্ছা তাহলে বসে থাক।’ অবনি তখন বললো আমাকে কিছু করতে দাও কাকি।’ ধ্রুবের মা বললো না’ তোকে কিছু করতে হবে না চুপচাপ বসে থাক।’

অবনি গোমড়া মুখ করে বসে রইলো। কিছুক্ষন পর খাওয়ার টেবিলে সবাই বসে আছে। অবনি আবিদের নানুর পাশে বসেছে।ধ্রুবের নানু অবনিকে বললো ঘুম কেমন হলো অবনি?

অবনি ধ্রুবের দিকে তাকিয়ে দেখে ধ্রুব চুপচাপ বসে আছে। অবনি শয়তানি হেসে বললো’ অনেক ভালো কাটছে। জানো রাতে না ভাইয়া আমার কিউট চুলগুলো টান দিয়েছিলো আমি রেগে তার হাতে কামরে দিয়েছি।’

ধ্রুবের নানু অবনির বাচ্চামো দেখে হেসে দিলো। ধ্রুব চোখ রাঙিয়ে অবনির দিকে তাকালো। অবনি ধ্রুবের নানি কে বললো’নানু তোমার নাতনি আমার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে আছে দেখো।’

ধ্রুবের নানু বললো ‘ ধ্রুব ওর দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়েছিস কেনো?

ধ্রুব কিছুটা রেগে বললো
‘ চুপ থাকবে তোমরা।’ ধ্রুবের কথায় সবাই চুপ করে রইলো।

এদিকে আবিদ অবনির দিকে তাকিয়ে আছে সেটা ধ্রুবের চোখ এড়ালো না। ধ্রুব প্লেটে চামচ দিয়ে শব্দ করতেই আবিদ মাথা নিচু করে খেতে লাগলো। ধ্রুব খাবার খাচ্ছে হঠাৎ অবনির পায়ে স্লাইড করতে লাগলো।

এদিকে
অবনির পাশে ধ্রুবের নানি আর অবনির সামনে ধ্রুব বসা। ধ্রুবের নানুর নিজের পায়ে সুড়সুড়ি লাগতে ধ্রুবের নানি টেবিলের দিকে তাকিয়ে দেখে ধ্রুব অবনিকে ভেবে তার পায়ে সুড়সুড়ি দিতেছে। ধ্রুবের নানি ধ্রুবকে বললো ধ্রুব।

ধ্রুব নানুর কথা শুনে থতমত খেয়ে বললো কি হয়েছে?

‘ ঠিকভাবে খাবার খা।’

ধ্রুব টেবিলের নিচে তাকিয়ে দেখে সে ভুলবসত নানুর পায়ে স্লাইড করছে। ধ্রুব পা সরিয়ে লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে।

কিছুক্ষন পর,,

#চলবে…
(ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। কেমন হয়েছে অবশ্যই জানাবেন। আজকে আরেকটা পার্ট দিবো।🙂 পড়ে মন্তব্য করার অনুরোধ রইলো। হ‍্যাপি রিডিং।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here