ঘর বাধার স্বপ্ন পর্ব -১৪

#ঘর_বাধার_স্বপ্ন
#আরোহী_ইসলাম
#পর্ব:১৪

অবনি মনে মনে রহস্যময় হাসি দিয়ে বললো’ ডিয়ার ফুপি যতটা পারো আজকেই খেয়ে নেও কারন আজ তোমার শেষ দিন।’ অবনির ফুপি অবনির দিকে তাকিয়ে বিরক্ত কন্ঠে বললো’ এতোটা খাবার দিচ্ছিস কেনো? এইগুলো কে খাবে?

অবনি মুচকি হেসে বললো’ আজকের পর থেকে তো তুমি এই রকম আরাম আয়েশ করে খেতে পারবে কিনা ঠিক নেই তো তাই এখন বেশি করে খেয়ে নেও।’

অবনির আশ্চর্য জনক কথা শুনে সবাই অবনির দিকে তাকালো। নিলিমার মা ভ্রু উলটে বললো’ মানে, কি বলছিস?

অবনি মিষ্টি করে হাসি দিয়ে বললো’ তোমার জন্যই তো রান্না। তুমি যদি না খাও হয় নাকি?

নিলিমার মা বাকা চোখে অবনির দিকে তাকিয়ে খেতে লাগলো। কিছুক্ষন পর খাওয়া শেষ সবাই ড্রয়িং রুমে বসে আছে।

অবনি দাঁড়িয়ে আছে নিলিমার মা অবনির কাছে এসে আস্তে করে বললো’ আজ কিন্তু টার্গেট মিস করা যাবে না ঠিক আছে অবনি? তোকে তোর বাবার সাথে করা অন‍্যায়ের শা’স্তি দিতে হবে মনে থাকে যেনো?

অবনি মুচকি হেসে বলে’ অবশ্যই। আজ হিসেবে বরাবর হবে। যে যা করেছে তার ফল পাবে।’

নিলিমার মা হুম বলে অবনির কাছ থেকে সরে নিলিমার পাশে এসে বসলো। সবাই কথা বলতেছে হঠাৎ কলিং বেল বাজার শব্দে অবনির মা বললো’ কে এসেছে দেখ তো।’অবনি আচ্ছা বলে ধ্রুবের দিকে তাকিয়ে দরজা খুলে দিতেই পুলিশ ভিতরে আসলেন। পুলিশকে এই সময় দেখে সবাই প্রচন্ড অবাক হলো। নিলিমার মা ভয়ার্ত চোখে অবনির দিকে তাকিয়ে বললো’ পুলিশ এইখানে কেনো?

অবনি পুলিশর দিকে তাকিয়ে বললো’ চোর ধরতে এসেছে।’ অবনির কথায় নিলিমার মা চুপ করে রইলো। পুলিশ অফিসার সবার দিকে তাকিয়ে বললো’ আমরা এইখানে তদন্ত করতে এসেছি মিস্টার রফিকুল এর মৃত্যুর।’

অবনির মা অবনির দিকে তাকিয়ে বললো’ মানে?

অবনি তার মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো’ হ‍্যাঁ।’

পুলিশ বললো’ আপনাদের সবাই কে কিছু জিজ্ঞেস করবো?

আবিদের মা বললো’ আচ্ছা।’ আবিদ ধ্রুবের পাশে বসে আছে। নিলিমা আর ওর মা পুলিশ কে দেখে অনেক ভয়ে আছে। অবনি ওদের ভয়ার্ত চোখ মুখ দেখে মুচকি হাসলো। পুলিশ অফিসার নিলিমার মায়ের কাছে এসে দাড়ালো। পুলিশ কে দেখে নিলিমার মা কাপতে লাগলো। পুলিশ তা দেখে ভ্রু কুচকে বললো ‘ আপনি কাপছেন কেনো?

নিলিমার মা কিছুটা তোতলাতে তোতলাতে বললো’ কোই? আপনি হয়তো ভুল দেখছেন।’

পুলিশ অফিসার বললো’ আপনাকেই প্রশ্ন করি তাহলে? আপনার ভাইয়ের মৃত্যুর দিন আপনি কোথায় ছিলেন?

পুলিশের এই রকম প্রশ্নে নিলিমার মা থমথমে গলাই বললো’ ভাইয়ার মৃত্যুর দিন সকাল বেলায় আমি সুইজারল্যান্ড গিয়েছিলাম।’

পুলিশ তখন বললো ‘ ওওহ আচ্ছা।’

ধ্রুব অবনির কাছে এসে অবনিকে বললো’ কি হচ্ছে কি? পুলিশ বাড়িতে এনেছিস কেনো?

অবনি আস্তে করে ধ্রুবকে বললো’ চুপ থাকেন একটু পরেই ধামাকা দেখতে পাবেন।’ অবনির কথায় ধ্রুব চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলো। অবনি ফোন নিয়ে পুলিশ অফিসারের কাছে এসে নিলিমার মায়ের দিকে আঙুল উচু করে তাকিয়ে বললো’ স‍্যার এই হচ্ছে আমার বাবার খু’নি।’

নিলিমার মা অবাক হয়ে বললো’ কি বলছিস তুই? আমি কেনো তোর বাবার খু’নি হতে যাবো?

আবিদের মা কিছুটা অবাক হয়ে বললো’ কি বলছিস অবনি?

অবনি মুচকি হেসে নিলিমার মায়ের কাছে এসে বললো’ তোমার সব কথা আমি জেনে গিয়েছি এইবার তুমি জেলে বসে নিজের পাপের ফল ভোগ করবে ।’

নিলিমা মা রেগে বললো ‘ আমি কিছু করিনি আমার নামে মিথ্যা বলছিস তুই?

মেয়ে পুলিশ অফিসার নিলিমার মাকে গ্রেফতার করলো। নিলিমাকে গ্রেফতার করবে তার আগেই নিলিমা অবনির হাত ধরে কান্না করে বললো’ আমায় ক্ষমা করে দে। আমি আর কখনো এমন অন‍্যায় করবো না। আমি জানতাম না কিছু আম্মু আমাকে নিজের জালে ফেলাইছে।’

নিলিমার কথায় অবনি দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বললো’ অফিসার ওকে ছেড়ে দিন।’ নিলিমার কথায় অফিসার নিলিমাকে ছেড়ে দিলো।

অবনি নিলিমার মায়ের দিকে তাকিয়ে চোখ মুখ শক্ত করে বললো’ আর নাটক করো না এইবার তুমি সব বলবে না আমি বলবো?

নিলিমার মা অবনির দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে আছে। অবনি দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বললো’ আমার বাবাকে ফুপি এই সব সম্পত্তির জন্য গাড়ি চাপা দিয়ে মে’রে ফেলেছে। ফুপি একটা ফেক ভিডিও বানিয়েছে যেখানে দেখা যাচ্ছে বড় আব্বু আমার বাবাকে মা’রার জন্য আরেকজনকে বলতেছে। ফুপি আমাকে ভিডিও দেখাই এবং বলে যে বড় আব্বুই আমার বাবাকে খু’ন করেছে সেই জন্য যেনো আমি ধ্রুব ভাইয়াকে খু’ন করে প্রতিশোধ নেয়।’ সবাই অবনির কথায় রেগে নিলিমার মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে।

অবনি ধ্রুবের দিকে তাকিয়ে আবার বললো’ আমার ভিডিওটা দেখে কেমন যেনো ঘটকা লাগে। সব থেকে বেশি সন্দেহ লাগে তখন যখন ফুপি প্রতি’শো’ধ নেওয়ার জন্য একদিনের মধ্যেই ধ্রুব ভাইয়াকে মে’রে ফেলতে বলে। আমি নিলিমার কাছ থেকে ভিডিওটা আমার ফোনে নিয়ে কম্পিউটারের দোকানে গিয়ে ভিডিও টা দেখাই তারপর ওনারা বলে যে এইটা ফেক। নিলিমা আমাকে একটা ঔষধ দেয় যেটা ছিলো বি’ষ আমি ওইটা ফেলে দেয়। তারপর পুলিশকে ফোন দেয়।’

অবনির দাদি রেগে নিলিমার মায়ের মুখে থাপ্পড় দিয়ে বলে ‘ তুই এতোটা নিচু মনের মানুষ ছিহ্। সম্পত্তির জন্য নিজের ভাইকে মে’রে ফেললি ছিহ্।’অবনির দাদির রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে।
ধ্রুবের বাবা দেশের বাহিরে গিয়েছে যার জন্য এই সব কিছুই জানেন না। অবনির মা কান্না করে দিলো। ধ্রুবের মা রেগে বললো’ আপা তুমি যদি বলতে তাহলে ভাইয়া তোমাকে সব সম্পত্তি দিয়ে দিতো। তুমি তো জানো ভাইয়া তোমাকে আমাদেরকে কতটা ভালোবাসতো। সামান্য সম্পত্তির জন্য নিজের রক্তের ভাইয়ের সাথে বেইমানি করলে?

নিলিমার মা পৈশাচিক হাসি দিয়ে বললো’ ওইটা সামান্য সম্পত্তি না। ওইটা কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি। আমাকে এই সম্পত্তির এক অংশও দাওনি। আমাকে জেলে পাঠিয়ে তোমরা কেউ শান্তিতে থাকতে পারবে না।’

অবনি পুলিশ অফিসারকে বললো’ এনাকে এইখান দেখে নিয়ে যান।’

নিলিমার মা রাগে ফোস ফোস করতে করতে চলে গেলো। অবনির দাদি অবনির কাছে এসে কান্না করে দিয়ে বললো’ আমায় ক্ষমা করে দিস অবনি। আমি তোকে অনেক কুটনৈতিক কথা বলেছি। তোকে তোর বাবার মৃ’ত্যুর জন্য দায়ী করেছি। এই বুড়ো দাদিকে ক্ষমা করেদে অবনি।’

অবনি তার দাদিকে জড়িয়ে ধরে বললো’ আমার মনে তোমাকে নিয়ে কোনো ঘৃণা নেই। আমি তোমাকে ভালোবাসি দাদু। তোমার কথা আমি কিছু মনে করেনি। আমি জানতাম একদিন আসবে যেদিন তুমি নিজের ভুল বুঝতে পারবে।’

অবনির দাদু হাসিমাখা মুখে অবনিকে বললো’ অবনি সত্যি তুই অনেক ভালোরে।’ প্রতি উত্তরে অবনি মুচকি হাসলো।

—–
নিলিমা মাথা নিচু করে অবনিকে বললো’ অবনি আমায় ক্ষমা করে দে। আমি আমার মাকে সাহায্য করেছি। আমি অনেক ভুল করেছি।’ নিলিমাকে দেখে অবনির মায়া হলো। অবনি নিলিমাকে বললো’ তোমাকে পুলিশে দেয়নি কারন তোমাকে একটা সুযোগ দেওয়া হয়েছে। আশা করি তুমি কোনো অন‍্যায় করবে না।’

নিলিমা অবনিকে বললো’ আমার মায়ের হয়ে সরি সবাই কে। আমি নিজের ভুল বুঝতে পেরেছি। তোকে অনেক অনেক ধন্যবাদ আমাকে আরেকটা সুযোগ দেওয়ার জন্য।’

অবনি মুচকি হাসলো। তারপর নিলিমা রুমে চলে গেলো। আবিদের মা অবনিকে বললো’ তোর ওকে সুযোগ দেওয়া উচিত হয়নি।’

অবনি শান্ত চাহনিতে তাকিয়ে বললো’ ও নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে। যার জন্য ওকে সুযোগ দিয়েছি। তুমি চিন্তা করো না কিছু হবে না।’
আবিদের মা চিন্তিত কন্ঠে হুম বলে রুমে চলে গেলো।

অবনি রুমে এসে মাথা ব‍্যথার ঔষধ খুজতে লাগলো। মাথাটা প্রচন্ড ভার হয়ে আছে। অবনির পিছু পিছু ধ্রুবও রুমে এসেছে। অবনি ঔষধ খুজতেছে ধ্রুব অবনির পিছু পিছু হাটতেছে। অবনি ঔষধ না পেয়ে দাঁড়িয়ে সামনের দিকে ঘুরতে যাবে হঠাৎ ধ্রুবের বুকের সাথে ধাক্কা খেলো। অবনি বিরক্ত কন্ঠে ধ্রুবকে বললো’এই ভাবে গাছের মতো দাঁড়িয়ে আছো কেনো?

ধ্রুব অবনিকে বললো’ তুই নিলিমাকে ছেড়ে দিলি কেনো? ও যদি পরে তোর ক্ষ’তি করে?

অবনি ধ্রুবের দিকে তাকিয়ে বললো’ আমি তো বলেছি তারপর কেনো এক প্রশ্ন করতেছো? ভালো লাগে না।’

ধ্রুব অবনির হাত ধরে বললো,,

#চলবে….
( ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। কেমন হয়েছে অবশ্যই বলবেন। পড়ে মন্তব্য করার অনুরোধ রইলো হ‍্যাপি রিডিং।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here