চন্দ্ররঙা_প্রেম_২ পর্ব ৬

#চন্দ্ররঙা_প্রেম_২
#পর্বঃ৬
#আর্শিয়া_সেহের

সিন্থিয়া পাগলের পাগলের মতো এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। দু’চোখ শুধু তার কলিজার টুকরাকেই খুঁজে যাচ্ছে।
হঠাৎ করেই মাহিম কিছুটা জোরে বললো,
-“ওইতো ভাই।”
সিন্থিয়া চকিতেই মাথা তুলে তাকালো। সাঁঝ সিনিমের হাত ধরে এদিকেই নিয়ে আসছে।
সিন্থিয়া উদ্ভ্রান্তের মতো সিনিমের দিকে ছুটে গেলো।‌ মেহেদীও পিছু পিছু বড় বড় পা ফেলে হেঁটে গেলো।‌ ছেলেকে না পেয়ে তারও জীবন বের হয়ে যাচ্ছিলো।

সিন্থিয়া দৌড়ে গিয়ে সিনিমকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে নিলো। গালে,কপালে চুমু দিয়ে বললো,
-“কোথায় গিয়েছিলে তুমি? মা ভয় পেয়ে গিয়েছিলো না? এভাবে কেউ যায়?”
মেহেদী মাহিমকে কোল থেকে নামিয়ে সাঁঝের কাছে গিয়ে বসলো। সাঁঝ মেহেদীকে দেখে হেঁসে দিলো। মেহেদী মন ভরে দেখলো সে হাঁসি।‌ সাঁঝের হাঁসি একদম রুমঝুমের হাঁসির মতো। স্নিগ্ধ আর মনকাড়া।

মেহেদী সাঁঝের মুখে হাত বুলিয়ে বললো,
-“সিনিমকে নিয়ে কোথায় গিয়েছিলে সাঁঝ মামনি?”
সাঁঝ এক হাত নাড়িয়ে বললো,
-“না‌,না । আমি ওকে নিয়ে যাইনি তো, আঙ্কেল।”
সিন্থিয়া ভ্রু কুঁচকে বললো,
-“তাহলে সিনিম ওইদিকে কোথায় গিয়েছিলো,সাঁঝ? তুমি জানো?”
সাঁঝ বোঝানোর ভঙ্গিতে সিন্থিয়ার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো,
-“জানি তো। একটা লোকের পিছু পিছু ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কান্না করতে করতে হাঁটছিলো বুঝেছেন সিন্থিয়া আন্টি? তারপর আমি দেখেই দৌড়ে গেলাম। সিনিম ভাইয়াকে ডাক দিতেই ওই লোকটা আমার দিকে তাকালো। তারপর সেকেন্ড গেট দিয়ে বেরিয়ে গেলো । ”

মেহেদী সাথে সাথে প্রশ্ন করে বললো,
-“সেকেন্ড গেট কোথায়?”
-“ওইতো স্কুলের পেছনের দিকে।”
সাঁঝের সরল জবাব।
সিন্থিয়া সিনিমকে দাঁড় করিয়ে বললো,
-“ওই লোকের সাথে যাচ্ছিলে কেন?”
সিনিম হেঁচকি তুলতে তুলতে বললো,
-“আমি তোমাকে দেখতে পাচ্ছিলাম না ,আম্মু। আমার ভয় করছিলো। তাই কান্না করছিলাম। ওই লোকটা বললো, তোমার আম্মু গেটের কাছে দাঁড়িয়ে আছো। তাই আমি উনার সাথে যাচ্ছিলাম।”
সিন্থিয়া সিনিমের মুখ ভালো করে মুছিয়ে দিয়ে বললো,
-“আর কখনো কারো সাথে এভাবে যাবে না ,বুঝেছো? কাউকে খুঁজে না পেলে কাঁদতে হয় না। ব্রেভ বয় দের মতো তাকে খুঁজতে হয়।আর তুমিও তো সাহসী,তাইনা?”
সিনিম দ্রুত মাথা নাড়লো তার মায়ের কথা শুনে। মাহিম এগিয়ে এসে বললো,
-“আমিও তো ব্রেভ ,আম্মু।”
মেহেদী হেঁসে বললো,
-“আপনারা সবাই ব্রেভ। চলুন এখন। ভর্তি হতে হবে।
আর সাঁঝ,তুমিও ক্লাসে চলে যাও,মামনি।”
সাঁঝ একগাল হেঁসে বললো,
-“আচ্ছা আঙ্কেল।”

সাঁঝ চলে যেতেই সিন্থিয়া বললো,
-“মেয়েটা আজ বড় বিপদের হাত থেকে বাঁচিয়েছে সিনিমকে। আমার এখনো বুক কাঁপছে।”
মেহেদী সিন্থিয়ার দিকে তাকালো। মায়েরা কত অদ্ভুত হয়। বাচ্চাদের সামান্য কিছু হলেই ভেঙে পড়ে। পৃথিবীর বুকে মা এক অমূল্য রতন।

পুনম হোস্টেলে ঢুকতেই ওয়েটিং রুমে তার মামাকে বসা দেখলো। হঠাৎ করে তার মামার আসার কারণ বুঝতে পারলো না সে।
আতিকুর রহমান পুনমকে দেখে উঠে এলেন। পুনমের সামনে দাঁড়িয়ে কড়া গলায় বললেন,
-“আমি জিজ্ঞেস করবো না তুমি কোথায় গিয়েছিলে। তবে কলেজে যাওনি এটা আমি জানি। কলেজ ফাঁকি দিয়ে বাইরে ঘোরার জন্য তোমার পেছনে আমি টাকা ঢালছি না, পুনম।”
পুনম মাথা নিচু করে শুনছে শুধু। এই অবেলায় মামার এখানে আসাটাই এখনো হজম হয়নি তার।

পুনম একটুখানি মাথাটা তুলে বললো,
-“মামা আসলে…”
আতিকুর রহমান বাঁধা দিয়ে বললেন,
-“আমি কিছু শুনতে চাইছি না। বড় কথা হলো এটা তোমার কলেজ টাইম ছিলো। তাছাড়া আমি সবটা রেজাল্টেই দেখবো।
শোনো পুনম, তোমাকে ডাক্তারি পড়াচ্ছি তোমার ইচ্ছাতেই। আমার মেয়ের খুব শখ থাকলেও উপরওয়ালা আমাকে মেয়ে দেননি। একে একে তিন ছেলে দিয়েছেন তিনি। মূলত এজন্যই তোমাকে আমি আমার কাছে এনেছি। আদর স্নেহ দিয়ে তোমার মন মতো পড়াচ্ছি। তোমার থেকে এসব আশা করি না আমি।”

পুনম নিচু স্বরে বললো,
-“সরি মামা। আর কখনো এমন করবো না।”
আতিকুর রহমান একটা টিফিন বক্স এগিয়ে দিয়ে বললেন,
-“এটা তোমার মামি দিয়েছে। খেয়ে নিয়ো।”
পুনম মাথা কাত করে বললো,
-“আচ্ছা মামা।”
-“হুম,এবার ভেতরে যাও।”
পুনম একটু এগোতেই আতিকুর রহমান পিছু ডাকলেন। কয়েক পা হেঁটে পুনমের সামনে দাঁড়িয়ে বললেন,
-“মাথার মধ্যে আজেবাজে কিছু ঢুকে থাকলে সেটা বের করে দাও। তোমাকে এতো টাকা পয়সা খরচ করে পড়াচ্ছি। তাহলে তোমার থেকে আমি কিছু আশা করতেই পারি।”

পুনম মাথা উঁচু করে তাকালো আতিকুর রহমানের দিকে। আতিকুর রহমান কি বলতে চেয়েছে সেটা পুনম বেশ বুঝতে পেরেছে। আতিকুর রহমান হোস্টেল থেকে বের হতে হতে বললেন,
-“তোমার মা’কে বলে রেখেছি আমি। আমার পছন্দের ছেলের সাথেই তোমার বিয়ে হবে‌।”

আতিকুর রহমান চলে গেলেন। পুনম নিজ জায়গায় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হেঁটে যাওয়ার শক্তি টুকুও হারিয়ে ফেলেছে সে। তার জীবনের প্রথম এবং শেষ পুরুষ হিসেবে সে রুশানকেই ভেবেছে সবসময়। রুশান ছাড়া অন্য কাউকে সে নিজের জীবনে জায়গা দিবে না। কখনো না।

-“ভাই,ওই পোলার বেশ কয়েকটা খবরাখবর জোগাড় করছি।”
আরমান সিগারেটে শেষ টান দিয়ে বললো,
-“কি কি পাইছোস ,বল।”
-“ভাই, ওর নাম রুশান। বাড়ি যশোর। বাপের বিশাল ব্যবসা আছে। পোলা মাস্টারে পড়ে..”
-“হপপ। মাস্টারে না মাস্টার্সে।”
ছেলেটা কাঁচুমাচু মুখে বললো,
-“ওইতো ভাই,ওইডাই।”
আরিয়ান বিরক্ত ভঙ্গিতে বললো,
-“তারপর বল।”
-“বাপের ব্যাবসা বড় ভাই সামলায়। ওর একটা বোন আছে। আমাগো চট্টগ্রামেই বিয়ে দেওয়া। ভাবিরে যে অফিসে চাকরি দিছে ,ওই অফিসের বসের বউ সে। বোনের বাড়িতে বেড়ানোর জন্যই মাঝে মাঝে চট্টগ্রামে আসে ওই পোলা।”

আরিয়ান আড়চোখে তাকিয়ে বললো,
-“এটুকুই জানছোস?”
-“আরেকটা কথা জানছি ভাই। পোলাডার গার্লফ্রেন্ড আছে। তয় গার্লফ্রেন্ডের ব্যাপারে তেমন কিছু জানতে পারি নাই।”
আরিয়ান কিছু একটা ভেবে লাফ দিয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। ছেলেটার দুই গাল ধরে টেনে বললো,
-“আহা! খাসা খবর আনছিস একটা। এবার খেলা জমাবো আমি। পিহুরে.. তোর জীবনডা এবার পুরা শেষ করমু‌। সাথে তোর শুভাকাঙ্ক্ষী নাগররেও মাঝ নদীতে ফালামু। তীরে বইসা খেলা দেখমু আমি।”

প্রকৃতির নিয়মে বয়ে যাচ্ছে সময়। এক এক করে কেটে গেছে প্রায় এক মাস। রুশান এখনো কেসটার ব্যাপারে তেমন কোনো ক্লু পায়নি। তনিম যথাসাধ্য চেষ্টা করছে কিন্তু কোনো রকম তথ্য পাচ্ছে না।

তনিম কাজের পাশাপাশি পিহুর সাথেও বেশ মিশে গেছে। দু’জনের সম্পর্ক আগের চেয়ে ভালো হয়েছে। পিহু তনিমকে একজন ভালো বন্ধু মনে করলেও তনিম পুরোপুরি ভাবে আটকে গেছে পিহুতে। তবে পিহু ঘুনাক্ষরেও টের পায়নি তনিমের মনের অবস্থা।
তনিম এই একমাসে বেশ ভালো করে বুঝে গেছে যে পিহু একটু হলেও রুশানের উপর দূর্বল বা হয়তো রুশানকে সে ভালোবাসে। কারন সুযোগ পেলেই পিহু তনিমের কাছে ইনিয়ে বিনিয়ে শুধু রুশানের কথা জানতে চায়। তনিম একটা সঠিক সুযোগের অপেক্ষায় আছে পিহুকে ধোঁয়াশা থেকে বের করে আনার।

পিহুর অফিস শেষ হয় চারটায়। তবে আজ পিহুর তিনটার মধ্যেই কাজ শেষ হয়ে গেছে। ব্যাগ গুছিয়ে অফিস থেকে বের হতে হতে ভাবলো আজ কোথাও ঘুরতে যাবে। যেমন ভাবা তেমন কাজ। সাথে সাথেই কল করলো তনিমকে। তনিম খেয়ে উঠে বসে বসে গোপাল ভাঁড় দেখছিলো। অসময়ে পিহুর কল পেয়ে চটজলদি রিসিভ করলো।
-“হ্যালো,পিহু। সব ঠিক আছে?”
-“কিছু ভুল হওয়ার কথা আছে নাকি, মিস্টার তনিম?”
তনিম ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললো,
-“আরে না। মানে এই সময়ে কল করলে যে এজন্য জিজ্ঞাসা করলাম।”
পিহু হেঁসে বললো,
-“আজকে তাড়াতাড়ি কাজ শেষ হয়ে গেছে। ভাবলাম একটু ঘুরতে যাবো। এজন্য আপনাকে কল করলাম।”
তনিম টিভি অফ করে বললো,
-“তুমি কিছুক্ষণ অপেক্ষা করো। আমি আসছি।”
-“ধীরে ধীরে আসুন। সমস্যা নেই।”

তনিম আধ ঘন্টার মধ্যে হাজির হয়ে গেলো। পিহু অফিসের গেটের সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলো। তনিমকে দেখে মুচকি হেঁসে এগিয়ে এসে বললো,
-“আরে বাহ। আপনি তো সো ফাস্ট।”
তনিম ভাব নিয়ে বললো,
-“ছেলেরা একটু ফাস্টই হয় ম্যাডাম। তারা তো আর মেকআপ সেকআপ করে না।”
পিহু ভেঙচি কেটে বাইকে উঠে বললো,
-“হয়েছে হয়েছে। চলুন এখন।”

তনিম বাইক স্টার্ট দিলো। মোড় ঘুরতেই পিহুর চোখ গেলো আরিয়ানের দিকে। আরিয়ান তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। পিহু চোখ ফিরিয়ে নিলো আরিয়ানের দিক থেকে। আরিয়ান দাঁত কিড়মিড় করে বললো,
-“খুব বাড় বেড়েছিস তুই। এবার সময় হয়েছে তোকে ছেঁটে ফেলার।”

তনিম কিছুদূর যেতেই পিহু বললো,
-“দাঁড়ান, দাঁড়ান। ওই মামার ফুচকাটা অনেক টেস্টি। খাবেন আপনি?”
তনিম ঠোঁট বাঁকা করে বললো,
-“আমি এসব ছাইপাশ খাই না। তুমি খাও।”
পিহু বাইক থেকে নেমে ভেঙচি কেটে বললো,
-“আপনি খাবারই চিনেন না, হুহ। আপনার খেতে হবে না। আমার সাথে তো চলুন। একা কেমন জানি লাগে।”

তনিম বাইক পার্ক করে পিহুর সাথে সাথে ফুচকার দোকান অবধি গেলো।
পিহু এক প্লেট ফুচকা অর্ডার করে তনিমকে নিয়ে একটা বেঞ্চিতে বসে পড়লো। রাস্তাটা খুব বেশি কোলাহল পূর্ণ না। ফুরফুর করে ঠান্ডা বাতাস বয়ে যাচ্ছে। বেশ মনোরম পরিবেশটা। পিহুর গুনগুনানিতে তনিমের নজর গেলো পিহুর দিকে। পিহু রাস্তার দিকে তাকিয়ে একমনে নিচু কন্ঠে সুর তুলে গেয়ে যাচ্ছে-

“কি নামে ডেকে বলবো তোমাকে,
মুগ্ধ করেছে আমাকে ওই ঘন চুলে।
কি নামে ডেকে বলবো তোমাকে,
প্রাণটা কেড়েছে তোমার ওই পাতলা দু ঠোঁটে”

পিহুর গুনগুন করে গাওয়া এই গানটা শুনে হয়তো যে কেউ হেঁসে ফেলতো কিন্তু তনিম হাসলো না। বরং তার বুকে চিনচিনে ব্যথা অনুভূত হলো।
নিজের ভালোবাসার মানুষের মুখে অন্য পুরুষের বর্ননা বা প্রশংসা শোনাই বোধহয় সবচেয়ে ঈর্ষণীয় ব্যাপার।
তনিম সিদ্ধান্ত নিলো আজই পিহুকে সবটা বলে দিবে।

পিহু তৃপ্তি সহকারে ফুচকা খেলো। তনিম বার কয়েক পিহুর দিকে তাকিয়েছে। খাওয়া শেষে পিহু নিজেই বিল দিলো। তনিম দিতে চেয়েছিলো কিন্তু পিহু দিতে দেয়নি। পিহুর কথা হলো, তনিম খায়নি তো সে কেন বিল দিবে?

তনিম মিডিয়াম স্পিডে বাইক চালাচ্ছে। মনে মনে সাজাচ্ছে পিহুকে কিভাবে রুশানের ব্যাপারটা বলবে। তনিমের ভাবনা চিন্তার মাঝে পিহু প্রশ্ন করলো,
-“হঠাৎ চুপচাপ হয়ে গেলেন কেন, মিস্টার তনিম?”
তনিম একটু নড়েচড়ে বললো,
-“কই? চুপচাপ হইনি তো।”
-“তাহলে কথা বলছেন না কেন?”
তনিম একটু দম টেনে বললো,
-“তোমাকে একটা প্রশ্ন করি পিহু?”
-“এটা আবার প্রশ্ন করা লাগে? করে ফেলুন।”
-“তার আগে বলো , তুমি আমাকে কি ভাবো? মানে আমাদের সম্পর্কটা তোমার কাছে কি নামে পরিচিত?”
পিহু ভ্রু কুঁচকে বললো,
-” আরে এমন হেঁয়ালি করছেন কেন? সরাসরি বলুন না যা বলবেন।”
-“আহা আগে উত্তর দাও না।”
-“আমরা খুব ভালো বন্ধু। আমাদের বন্ধুত্বের সম্পর্ক।”

তনিম মুচকি হাসলো। সে জানতো পিহুর উত্তর এমনই হবে। তনিম একটু চুপ থেকে বললো,
-“বন্ধুর কাছে তো সবকিছুই শেয়ার করা যায় তাই না?”
-“অবশ্যই যায়।”
পিহুর সহজ উত্তর।

তনিম বাইকের গতি আরো কমিয়ে দিয়ে বললো,
-“তুমি কি রুশান স্যারের প্রতি দূর্বল?”
পিহু হঠাৎ এমন প্রশ্নের জন্য প্রস্তুত ছিলো না। সে কিছুটা অস্বস্তিতে পড়ে গেলো। পিহুর কোনো রুপ উত্তর না পেয়ে তনিম আবারো বললো,
-“নির্দ্বিধায় উত্তর দিতে পারো পিহু। একজন ভালো বন্ধু মনে করে।”

পিহু এবার মুখ খুললো। সকল জড়তা ঠেলে দিয়ে বললো,
-“আমি উনার প্রতি দূর্বল না। আমি উনাকে ভালোবাসি।”
তনিম ব্রেক কষলো। পিহুর উত্তরে মস্তিষ্ক ঝাঁ ঝাঁ করে উঠলো তনিমের। পিহু হঠাৎ ব্রেকের কারনে হুমড়ি খেয়ে তনিমের পিঠের উপর পড়লো। তনিম বাইক থেকে নেমে পিহুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে শক্ত গলায় বললো,
-“কেউ সাহায্য করলেই তার প্রেমে পড়ে যেতে হবে? তার ব্যাপারে কোনো কিছু না জেনেই তাকে ভালোবেসে ফেলতে হবে? কিভাবে পারো? মানে কোনো কমন সেন্স নাই?”

পিহু বিষ্ময়ে হতবাক হয়ে গেলো। হঠাৎ করেই তনিমের এমন আচরন করার কারন খুঁজে পাচ্ছে না সে। আশেপাশে তাকিয়ে নিচু স্বরে বললো,
-“এতো রেগে যাচ্ছেন কেন? ভালোবাসার উপর মানুষের হাত থাকে নাকি? কিভাবে তাকে ভালোবেসে ফেলেছি আমি জানি না।”

তনিম আরো কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো। নিজেকে সামলালো। নমনীয় কন্ঠে বললো,
-“লিসেন পিহু, তোমার এই ভালোবাসার অনুভূতি গুলো ভুল মানুষের জন্য জন্মেছে। ”
পিহু সরাসরি তনিমের দিকে তাকিয়ে বললো,
-“ভুল মানুষ মানে? সে আমার জন্য ভুল, এটাই বলতে চাচ্ছো? তবে এটাও বলো যে কেনো ভুল?”

-“বিকজ হি ইজ অলরেডি ইন এ রিলেশনশিপ।”

পিহুর চারিদিক কেমন যেন থমকে গেলো। সে কখনোই এমনটা ভাবে নি। তার কল্পনাতেও কখনো এমনটা আসেনি যে সে যাকে ভালোবাসে তার মনে অন্য কেউ থাকতে পারে।
পিহুর চোখ দুটো ছলছল করছে। তনিম সে চোখে তাকিয়ে থাকতে পারলো না। পিহু দাঁতের তলায় ঠোঁট চেপে বললো,
-“আমি বাড়ি যাবো।”

তনিম পিহুকে নিয়ে চুপচাপ বাইক চালাতে শুরু করলো আবার। পুরো রাস্তাতেই দু’জন নিশ্চুপ হয়ে ছিলো।
পিহুর বাড়ির কাছাকাছি এসে তনিম বাইক থামালো। পিহু কোনো কথা না বলেই হাঁটতে শুরু করলো। তনিম পেছন থেকে কোমল কন্ঠে ডাকলো,
-“পিহু শোনো।”
পিহু দাঁড়ালো। পিছু ফিরে বললো,
-“কিছু বলবেন?”
-“হুম। দেখো যা হয়েছে তাতে কারো কোনো দোষ ছিলো না। ভালোবাসা এক নির্মম সত্য। এটা কখন কার জন্য তৈরি হয় তা কেউ বলতে পারে না। তোমাকে শুধু এটুকুই বলবো, নিজেকে সামলে নিও।”

পিহু মাথা নিচু করে বললো,
-“হুম।”
তনিম পিহুর দিক থেকে চোখ সরিয়ে রাস্তার দিকে তাকিয়ে বললো,
-“আমি কাল দেশের বাইরে যাচ্ছি। কিছু কাজ আছে। দু’দিন পর ফিরবো। নিজের খেয়াল রেখো।”
পিহু তনিমের দিকে তাকালো। তনিম একদৃষ্টিতে রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে। পিহুর উত্তর না পেয়ে সেদিক থেকে চোখ ফিরাতেই পিহুর সাথে চোখাচোখি হয়ে গেলো তার । পিহু জোরপূর্বক হাসলো । মাথা দুলিয়ে বললো,
-“আমি নিজের খেয়াল রাখবো। আপনিও নিজের খেয়াল রাখবেন। সাবধানে থাকবেন।”

তনিম হেঁসে বাইক স্টার্ট দিলো। সে জানে পিহু নিজেকে ঠিকই সামলে নিবে। মেয়েটা ভীতু হলেও বেশ স্ট্রং। নিজেকে আড়াল করার একটা অনন্য প্রতিভা আছে পিহুর মধ্যে। যারা বাস্তবতাকে খুব কাছ থেকে দেখে তাদের মধ্যে হয়তো‌ এই গুনটা আপনাআপনিই তৈরি হয়ে যায়।

চলবে…….

(ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। যারা তিহান আর বিথীকে খুঁজছেন তারা অপেক্ষা করুন। সবাই আসবে ধীরে ধীরে।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here