‘চরিত্রহীনা২’ পর্ব-৯
.
লেখক : Mahian Khan
.
তিন্নির চোখদুটো ক্রমেই বন্ধ হয়ে আসে। রনি ক্রমেই এগিয়ে আসে তিন্নির দিকে। চরম নেশার ঘোরেও তিন্নির ঠোট দুটোকে রনি বেশ ভালোভাবে চিনতে পারে। তিন্নির এই নরম, উষ্ণ ঠোট থেকে আজ প্রায় ৭ বছর পর রনি অমৃত পান করছে। কি অদ্ভুত! রনির নাক মুখ থেকে বেরিয়ে আসা বিদঘুটে গন্ধকেও তিন্নি সহ্য করে যাচ্ছে। রনির অবস্থা ক্রমেই খারাপ হচ্ছে। বাধ্য হয়ে রনিকে নিজের কাছ থেকে তিন্নি সরিয়ে দেয়। তিন্নির দুচোখের পানিগুলো এই রাতেও অলৌকিকভাবে অনেক উজ্জ্বল। রনি প্রায় বেহুশ অবস্থায় দেয়ালে মাথা রেখে বসে আছে। রনির হাত নিজের কাধে রেখে কোনোভাবে রনিকে দাড় করিয়ে সোফায় বসিয়ে দেয়। সোফায় বসা মাত্র রনি শুয়ে পড়ে আর চলে যায় গভীর ঘুমে। তিন্নির ক্ষোভ ক্রমেই বৃদ্ধি পেতে থাকে, ক্রমেই নিজের উপর চরম ঘৃনা হয়। তিন্নির নাক-মুখ থেকে বেরিয়ে আসা বিশ্রী গন্ধ তিন্নির মস্তিষ্ককে উত্তপ্ত কয়লার মত গরম করে তোলে। ইচ্ছে হয় রনিকে খুন করতে। কিন্তু রনির ঘুমন্ত এই চেহারার দিকে তাকিয়ে তিন্নির উত্তপ্ত মস্তিষ্ক ঠান্ডা না হলেও তিন্নির দেহ প্রায় অবশ হয়ে আসে। বারবার রনির লাল হয়ে থাকা চেহারাটা তিন্নিকে মনে করিয়ে দেয় সেই অতীত যখন রনি আঘাত পেলে অথবা কাঁদলে এভাবেই তার হলুদ চেহারাটা লাল হয়ে আসত। তখন তিন্নি ছিল রনিকে সান্তনা দেওয়ার জন্য কিন্তু আজ সে নেই, এতটা কাছে থেকেও নেই। হয়ত রনির অসাহয়ত্ব তিন্নির দেহকে ক্রমে নিস্তেজ করে দিচ্ছে, তিন্নির চোখ তাকে সেই ৭ বছর আগের রনির কাছে ফিরিয়ে নিচ্ছে। এই অসহ্য অনুভূতি, তিন্নির সহ্যের বাহিরে। ঘৃনা, রাগ, বেদনা আর কোনো এক লুকিয়ে থাকা সুপ্ত অনুভূতি। এই মিশ্র অনুভূতি সম্পুর্ন জঘন্য! এবং তিন্নির সহ্যের বাহিরে। তিন্নি দৌড়ে পালায় সাথে চোখের উজ্জ্বল পানিগুলো অদ্ভুত দ্রুত গতিতে, আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে। দৌড়ে বাথরুমে গিয়ে নিজের নাখ মুখকে বারবার পানি দিয়ে পরিষ্কার করে, দুহাতকে সাবান দিয়ে এতবার পরিষ্কার করে যে, দুহাতের চামড়া প্রায় উঠে যায়। নাক-মুখকে নখ দিয়ে এতটা ঘষেছে যে, পুরো নাক-মুখ জুড়ে ক্ষতের চিহ্নে ভরে গিয়েছে, হালকা রক্ত বের হয়ে গিয়েছে। তিন্নির গালদুটো আপেলের ন্যায় লাল হয়ে গিয়েছে কিন্তু তাতেও সে ক্ষান্ত না। যতবার তাকায় আয়নার দিকে ততবার তিন্নি চলে যায় তার অতীতে, আয়নাকে ভেঙে গুঁড়িয়ে দিতে ইচ্ছে হয়। স্বজোরে আয়নার উপর নিজের হাত দিয়ে আঘাত করে, ভেঙে যায় আয়না। তিন্নিরর বাম হাত লাল রঙে সম্পুর্ন রঙিন হয়ে ওঠে। আয়নাটা ভেঙে যাওয়ায় তিন্নি এক অদ্ভুত স্বস্তি অনুভব করে। হাতের লাল রক্তগুলো ধীরে ধীরে ফোটাফোটা করে মাটিতে পড়তে থাকে। ঝর্নাটা ছেড়ে, ঝর্নার মাঝে নিজের টানটান সোজা হয়ে থাকা দেহকে দাড় করিয়ে দেয়। রক্ত, অশ্রু আর ঝর্না থেকে নির্গত মাটির গভীর থেকে আসা পানি। তিনটি তরলের কি অদ্ভুত মিলন! হয়ত এই তিন ধরনের তরল একত্রিত হয়ে কোনো অদ্ভুত এক নতুন তরলের সৃষ্টি করে। হয়ত, সেই তরলকেই মানুষ, ‘বেদনা’ বলে। তিন্নি ভিজে যায়, ভিজে যায় তিন্নির রক্তাক্ত হাত। প্রায় পৌনে একঘন্টা এভাবেই তরলের মাঝে নিজের দেহকে স্থির করে রাখে। হয়ত তিন্নির বিশ্বাস ছিল, তার সকল ব্যাথা ও কষ্ট ধুয়ে যাবে ঝর্নার পানিতে কিন্তু তা অনেকাংশে মিথ্যা প্রমাণিত হল। এখনো তিন্নির সমগ্র দেহে অস্থিরতার স্পষ্ট ছাপ কিন্তু তবুও হালকা হলেও ভালো লাগছে! নিজের পোষাক পাল্টিয়ে, ইরাকে হালকা আদর করে, রনির পাশের সোফায় তিন্নি বসে পড়ে। রনি এখনো ঘুমন্ত, একেবারে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। রনির ঘুমন্ত চেহারাটার দিকে তিন্নির চোখ বারবার চলে যায়। এখানে বসতে ঘৃনা হয়, রনিকেও দেখতে ইচ্ছে হয় না। কিন্তু তবুও বসে আছে, তবুও সে রনিকে দেখছে। তিন্নির দুচোখ জুড়ে প্রচন্ড ঘুম কিন্তু দুচোখ বন্ধ হতে নারাজ। সোফার দুটো হ্যান্ডেলে, নিজের দুহাত ছড়িয়ে, বসে আছে। মনেমনে, রনিকে প্রচুর গালি দেয় আবার প্রচন্ড রাগ হয় এই ভেবে যে, রনিকে কেন কোনো লোক ডেকে বাহিরে দিয়ে আসল না। কিন্তু আবার চোখ যায়, রনির ঘুমন্ত চেহারার দিকে আবার বাষ্প হয়ে যায় সকল ঘৃনা, বাষ্প হয়ে যায় সকল রাগ, অভিমান। চোখ দুটো ফিরে তাকাতে চায় না, রনির দিকে। কিন্তু কেন জানি চোখদুটো তিন্নির বিরোধিতা করে, অনেকটা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই রনির দিকে চলে যায়। তিন্নির চোখ দুটো আসলে ধোঁকাবাজ, অনেক বড় ধোঁকাবাজ!
.
(১২)
.
সারারাত মাত্র এক-দেড় ঘন্টার মত তিন্নি ঘুমিয়েছে। সকাল প্রায় ৭ টার মত বেজে গিয়েছে। বাধ্য হয়েই রনিকে জোরে জোরে ধাক্কা দেওয়া শুরু করে। রনির ঘুম পর্যাপ্ত হয়েছে, অল্পকিছু ধাক্কাতেই ঘুম ভেঙে যায়। রনির মাথা জুড়ে প্রচন্ড ব্যাথা। তিন্নির ধাক্কাতে নিভু নিভু চোখে, উঠে সোফায় বসে।
.
– একটু পানি দিবে?
.
তিন্নি গ্লাসে করে একগ্লাস পানি নিয়ে রনির হাতে দেয়, রনির দুচোখ একেবারে লাল হয়ে আছে। গ্লাসের পানিটা একবারে শেষ করে গ্লাসটা তিন্নির হাতে ধরিয়ে দেয়। গ্লাসটা আবার টেবিলের উপর রেখে এসে, অনেকটা ঘুমন্ত আওয়াজে তিন্নি বলে,
.
– এখন চলে যাও।
.
– একটুও ঘুমাওনি রাতে?
.
– ঘুমিয়েছি, খুউব অল্প। শরীর খারাপ লাগতেছে, এখন যাও। কালকে রাতে যে কাজ করেছো তারপর তোমার মত অসভ্যর চেহারা দেখাও পাপ।
.
– আমি তো জানি, আমি অপরাধী! তাই তো বারবার করি পাপ। কিন্তু পাপগুলো করি শুধু তোমাকে পাওয়ার জন্য।
.
– আমি তোমাকে স্পষ্ট একটা কথা বলি, আমি আসলে তোমাকে দুচোখে দেখতে পারি না, সহজ ভাষায় ঘৃনা করি। বারবার অপমান করতেছি, তবুও কেনো বারবার একই কাজ করতেছো?
.
– গতরাতে মাতাল ছিলাম। হয়ত মাথা ঠিকমত কাজ করছিল না। কিন্তু তবুও তিন্নিকে এই মস্তিষ্ক ঠিকই চিনতে পেরেছে। তাহলে বল, যদি সত্যি আমায় ঘৃনা কর, তবে কেনো তোমার ঠোটের অমৃতে চুমুক দিতে দিলে?কেনো আমায় এখানে শুইয়ে দিলে? কেনো আমায় বাসা থেকে বের করে দিলে না? তুমি কি জানো, আমার বাবা-মায়ের কাছে গেলে তারা হয়ত পুলিশে দিত আর নাহলে ঘরে বিশাল এক তামাশা হত! কিন্তু আমি জানতাম সবাই আমায় ঘৃনা করলে, ত্যাগ করলেও, তিন্নি কখনো করবে না। কারণ, তিন্নিতো আমাকে ভালোবাসে।
.
– দেখো রনি, তোমার কথাগুলো ভিত্তিহীন। আমি একজন শান্তিপ্রিয় মানুষ। একটা নেশাখোর আমার বাসায় আসবে এটা মানুষকে জানিয়ে, অযথা তামাশার ইচ্ছে আমার ছিল না। তাছাড়া যা করেছি সব পরিস্থিতির জন্য। ঘরে ইরা ঘুমিয়ে ছিল, ও একটা মাতালের পাগলামি দেখবে, এটা আমি কখনো চাই না। তাই পরিস্থিতির জন্য অনেক কিছু করতে হয়।
.
– তুমি অনেক নিঁখুত অভিনয় পারো। তোমার অভিনয়ে খুঁত ধরার যোগ্যতা আমার নেই কিন্তু তবুও আমি জানি এগুলো শুধু অভিনয়।
.
– রনি, সারারাত এখানে কাটিয়েছো, পাগলামি করেছো, এবার যাও তোমার বাসায় সবাই অবশ্যই টেনশনে আছে।
.
– হাহাহাহাহা! টেনশন! তাও আবার আমাকে নিয়ে? সেটাও আবার আমার বাসায় করবে? আরে খোদা! আমি তো তাদের জন্য একটা বোঝা! ফ্রিতে খাবার খাই, তাদের টাকা নষ্ট করি, এই তো! প্রায় সময় ৪-৫ দিনের জন্য বাহিরে চলে যাই। কারু কোনো চিন্তা নেই, কোথায় গিয়েছি সেটাও জিজ্ঞেস করে না। চাচাত ভাইটা একটু জিজ্ঞেস করে, এই যা! তাও ওকে আবার কোনো পাত্তা দেই না।
.
– মানে, বাসায় কেউ তোমাকে নিয়ে চিন্তা করে না?
.
– চিন্তা! আরে, আমাকে তো আমার বাবা আর চাচ্চু পরিচয় দেয় না, ছেলে হিশেবে। চাচাতো ভাইটা একটু জ্ঞানমূলক কথাবার্তা শোনায় সেগুলো এক কানে ঢুকাই, অন্য কান থেকে বের করি। আর আম্মু, তাকে দেখি সারাদিন কাঁদতে। প্রায় যখন দেখি তখন কাঁদে। আগে অনেক বুঝাতো, এখন আর বুঝায় না। খালি কাঁদে! আমিও আগে মাঝে মধ্যে আম্মুর কান্না দেখে কেঁদে দিতাম এখন আম্মুর কান্না দেখেও চোখে পানি আসে না। শুধু স্থির দাড়িয়ে দেখি।
.
– মানে? তোমার মায়ের জন্য পর্যন্ত তোমার অনুভূতি নেই?
.
– অনুভূতি থাকতে হলে তো আগে, দেহে জীবন থাকা লাগবে। কিন্তু জীবনটা তো নেই। মৃত দেহে আবার অনুভূতি কিসের?
.
– দেখো, যা হয়েছে তা শেষ হয়ে গিয়েছে। এই এক জিনিস নিয়ে আর কত! তুমি তোমার মত থাকো,আমি আমার মত থাকি। ব্যাস!
.
– পারতাম, যদি তুমি শুধুমাত্র জীবনের একটা অংশ হতে! কিন্তু তুমি তো আমার জীবন ! তাহলে কিভাবে অতীত ভেবে তোমায় মিটিয়ে দিব?
.
– দেখো, এগুলো শুধু আবেগ। আর বেশী কিছু বলতে চাই না। তুমি এখন চলে যাও আর ভুলেও কখনো আসবে না। আবার যদি আসো তাহলে আমি কঠিন হতে বাধ্য হব।
.
– সেটাতো অনেক কঠিন! এত কষ্টে তোমায় খুঁজে পেয়েছি আবার তোমাকে ছেড়ে যেতে হবে? আদৌ তুমি কি তা মন থেকে চাও?
.
– হ্যা, আমি শুধু এই তামাশা থেকে বের হতে চাই। এত বছর সব ঠিক ছিল। কেন আবার এসব শুরু হল? প্লিজ এগুলো সহ্যের বাহিরে।
.
– আচ্ছা আর জ্বালাবো না, তোমাকে। বরং প্রতিদিন সকালে দাড়িয়ে থাকব তোমার বাসার সামনে,শুধু একটাবার যদি তোমাকে আর ইরাকে দেখতে পাই। হোক শত বৃষ্টি, শত ঝড় তবুও রাস্তার অপর পাশে থাকব আমি দাড়িয়ে যাতে, রাতে চাঁদের আলোয় দেখতে পাই আমার তিন্নিকে। কথা দিলাম, জ্বালাবো না। যদি আমায় দেখে ঘৃনায় তুমি ঘরের ভিতর চলে যাও তবে হাতদুটো পিছনে রেখে আবার চলে যাব। তোমাকে যে এক ঝলক দেখতে পেরেছি সেটাকে সৌভাগ্য মনে করব।
.
বেলটা বেজে ওঠে হঠাৎ করে। নিশ্চুপ তিন্নি উঠে দাড়িয়ে, দরজাটা খুলে দেখে, জাভেদ এসেছে।
.
– জাভেদ! আপনি?
.
– হ্যা আমি, কেনো এতটা অবাক হচ্ছো যে! বলেছিলাম তো, আজকে আসব।
.
তিন্নি একদম নিশ্চুপ হয়ে দাড়িয়ে থাকে। জাভেদ ভিতরে হালকা ঢুকতেই রনিকে দেখতে পায়। দুজন একে অপরের দিকে প্রচন্ড বিস্ময়ের সাথে তাকিয়ে থাকে। দুজন একে অপরকে এত বছর পর দেখলেও বেশ ভালোভাবে চিনতে পেরেছে। জাভেদ, তিন্নি আর রনিকে বিরক্ত করতে চায় না।
.
– আচ্ছা, তিন্নি আমি একটু পরে আসি।
.
রনি উঠে দাড়িয়ে বলে,
.
– না, বসুন। আমি এখন যাচ্ছি।
.
এতক্ষণ গম্ভীর মুখে যে রনি বসেছিল সে বেশ হাসি মুখেই জাভেদের সাথে হ্যান্ডশেক করে হেটে দরজা দিয়ে বেরিয়ে যায়। রনির আচরণের এমন অদ্ভুত পরিবর্তনে তিন্নি অবাক হয়ে যায়। জাভেদ কিছুই বুঝে উঠতে পারে না। বাধ্য হয়েই তিন্নিকে জিজ্ঞেস করে,
.
– রনি! এখানে? ও কি তোমার বাসার চেনে?
.
– হ্যা, চেনে। হয়ত আমার কপালটা খুউব খারাপ! নাহলে, বারবার এভাবে অতীতে আমার কাছে ফিরে আসে কেন? হয়ত চরিত্রহীনা বলেই আমার ভাগ্য পর্যন্ত আমাকে ঘৃনা করে।
.
– তুমি তো চরিত্রহীনা না। আর ফাও প্রশ্ন করে তোমার সময় নষ্ট করবা না, আমার সময়ও নষ্ট করব না। যাক আর আমি তো বিদায় নিতে এসেছি। ইরার আর তোমার ২-৩ টা ছবি তুলতে এসেছি। তারপর চলে যাব। অন্তত একটা অতীত থেকে তো মুক্তি পাবে।
.
– মানে, আপনি আজকে চলে যাবেন।
.
– হ্যা, একটু পরেই যাব।
.
– মানে? চলে যাবেন? আর আসবেন না?
.
– না! আর আসব না। আর বিরক্ত করব না। আমি তো কথা দিয়েছিলাম তোমাকে। আর কথা না ভাঙার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব, ওয়াদা দিলাম। আর ঘুমাওনি রাতে? নাক মুখের এমন অবস্থা কেন?
.
– না,খুউব একটা ঘুমাইনি।
.
– হুম, তা বুঝেছি। যাক ছবিটা তুলি।
.
মোবাইলটা বের করে, ক্যামেরা অন করে মোবাইলটা তিন্নির দিকে তাক করে।
.
– কি ব্যাপার এমন মুখ কালো করে আছো কেন? একটু হাসো? নাহলে মন খারাপ থাকলে এই ছবি দেখলে তো আমার মন আরো খারাপ হয়ে যাবে।
.
তিন্নি অনেকটা কৃত্রিম হাসি দিয়েই মোবাইলের দিকে তাকায়। পরপর দুটো ক্লিক দিয়েই ভালোভাবে ছবি দুটো পর্যবেক্ষন করে তিন্নিকে জিজ্ঞেস করে,
.
– আচ্ছা ইরা কোথায়?
.
– ঘুমিয়ে আছে।
.
– আচ্ছা, আমি ওর দুটো ছবি তুলে আসতেছি।
.
জাভেদ দ্রুত গতিতে বেডরুমে গিয়ে ইরার প্রায় ৩-৪ টা ছবি মোবাইল বন্দি করে বেরিয়ে আসে।
.
– কি ব্যাপার? এখনো দাড়িয়ে আছো? ইরার ছবি তুললাম আর একটু সাথেও এলে না?
.
– না, এমনি, আমি গিয়ে আর কি করতাম? যাক এখনই চলে যাবেন?
.
– হ্যা যেতে তো হবে। তো যা বলি, এই নাও একটা গিফট। আমি তোমার মত অত বড়লোক না, গরীব মানুষ! যতটুকু পেরেছি, দিলাম। সেদিন, ইরাকে ফাও দোষ দিয়েছিলে চকলেট খাওয়ার কিন্তু এই অভ্যাস যে ইরা তোমার কাছ থেকে পেয়েছে সেটা বলতে মনেছিল না। এজন্য দুই প্যাকেট চকলেট, একটা ইরার জন্য আরেকটা তোমার জন্য। নীল ছাতাটাও দিয়ে গেলাম। ভাবলাম, অযথা কারো কাছে ঋণী হব কেন! তোমার জিনিস, তোমাকেই ফেরত দিলাম। আর ভালো থেকো, আরো বই লিখ। তোমার প্রতিটা বই, আমি কিনব আর ইরাকে একদম তোমার মত, একজন সাহসী মেয়ে হিশেবে বড় কর। এমন একটা মেয়ে যে কাউকে ভয় পাবে না। আর হ্যা সবচেয়ে বড় কথা, তোমার সাথে কাটানো সেই ৪ বছর, আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ ৪ বছর ছিল। আর আমি এখনো তোমাকেই ভালোবাসি আর চিরকাল তোমাকেই ভালোবাসব! শেষবার যখন, তোমাকে ভালোবাসি বলেছিলাম তখন অনেক মেজাজে বলেছিলাম। আর তখন ভালোবাসার মানে বলতে বুঝতাম,আকাঙ্খা। আজ ভালোবাসার প্রকৃত মানে বুঝি। তাই, ঠান্ডা মাথায় বললাম, তোমাকে ভালোবাসি আর চিরকাল ভালোবেসে যাব। অন্যকোনো মেয়ে আমার হৃদয়ে জায়গা করতে পারবে না। হয়ত মস্তিষ্কে জায়গা করতে পারবে, হয়ত আমার দেহে পারবে কিন্তু হৃদয়ে শুধু তুমি থাকবে। আমি হয়ত, ব্যর্থ কিন্তু ব্যর্থতাও একটা অর্জন। আর এই অর্জন নিয়ে আমি যথেষ্ট সুখী। ভালো থাকবে, আল্লাহ হাফেজ!
.
তিন্নি তখনও অনেকটা কৃত্রিম কোনো বস্তুর মত স্থির হয়ে দাড়িয়ে আছে। জাভেদ একটা কৃত্রিম রহস্যজনক হাসি দিয়ে, বেরিয়ে যায়। কিন্তু হঠাৎ তিন্নির কন্ঠ, জাভেদের পা দুটোকে স্থির করে দেয়।
.
(চলবে………)
.