চরিত্রহীনা ২ পর্ব ৮

‘চরিত্রহীনা২’ পর্ব-৮
.
লেখক : Mahian Khan
.
– আচ্ছা ঠিকভাবে হাটবে, নাকি? এখনি তো পরে যেতে।
.
তিন্নি কোনো উত্তর না দিয়ে জাভেদের দিকে বেশ অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে অত:পর চুপচাপ হেটে ঘরের ভিতরে চলে যায়। হয়ত হালকা বিব্রতবোধ করেছে, কে জানে! সন্ধ্যার আকাশ ক্রমেই কালো হতে থাকে। বারান্দার গ্রিল থেকে পানি ঢুকে প্রায় সমগ্র বারান্দাটাকেই একটা ছোটখাটো নদী বানিয়ে ফেলেছে। বৃষ্টির পানি হালকা জাভেদের শার্টে ছিটে আসছে। বৃষ্টির অবস্থা জাভেদ বেশ মনযোগ সহকারে লক্ষ্য করতে থাকে,
.
– বাপরে বাপ! এই বৃষ্টিতে কোনোভাবে বাস অথবা লঞ্চে যাওয়া যাবে না। শার্টও তো আবার একটা বাকিগুলো তো হোটেলে রুমে রেখে এসেছি এজায়গা দাড়ালে পুরা গোসল হয়ে যাব।
.
শার্টের মায়ায়, জাভেদকে বারান্দা ত্যাগ করতে হয়। ছাতাটা যথেষ্ট শুকিয়ে গিয়েছে তাই এখন রওনা দেওয়াটা জাভেদ উত্তম মনে করে কিন্তু আবার ভয়ও হয় এই বৃষ্টিতে রিক্সা,গাড়ি খুঁজে পাওয়া অনেক কষ্টসাধ্য কাজ হবে আর তার উপর যদি রাস্তা পানিতে তলিয়ে যায় তবে তো অবস্থা বারোটা বেজে যাবে! আর হোটেল একেবারে কাছেও না, যথেষ্ট দূরে। তাই চুপচাপ অল্পকিছু সময় ধৈর্য ধরে বসে থাকাটা জাভেদ বুদ্ধিমানের কাজ মনেকরে। তারপর যদি এক পর্যায় বৃষ্টি না থামে, সেক্ষেত্রে বিষয়টা ভিন্ন হবে। তবে আপাতত ধৈর্য ধরাটা উত্তম। একা একা বসে সময় অতিক্রম করা বেশ কঠিন কাজ তাই সময় পার করার সর্বশ্রেষ্ঠ বন্ধু অর্থাৎ মোবাইলের কাছেই জাভেদকে আত্মসমার্পন করতে হয়। অল্পকিছু সময়ের মধ্যেই মোবাইলের মাঝে সম্পুর্ন হারিয়ে যায় জাভেদ। এর মধ্যে তিন্নিও রুমে আসে, জাভেদ বিষয়টা হালকা খেয়াল করলেও মোবাইলের মাঝেই ড়ুবে থাকে।
.
– আপনি আবার মোবাইল চালাচ্ছেন? আপনি তো সম্পুর্ন নেশাখোর হয়ে যাচ্ছেন।
.
– আরে, বাবা! সময় নষ্টের জন্য তো কিছু করতে হবে নাকি?
.
– শুধু মোবাইল দিয়েই কি টাইমপাস হয়? এতগুলো বই রাখা আছে, একটা বই নিয়েও তো পড়তে পারতেন?
.
– আচ্ছা এতদিন পর দেখা করার পর তুমি আমার দোষ-ত্রুটি নিয়েই ব্যস্ত আছো?
.
– অবশ্যই কারো দোষ-ত্রুটি লক্ষ্য করলে সেটা ধরিয়ে দেওয়া উচিত। মোবাইলে আসক্তি একটা চরম বদ অভ্যাস আমি এই টাইপের আসক্তি থেকে প্রায় মুক্ত। জীবনে অগণিত বদ অভ্যাস ত্যাগ করেছি জানেন?
.
– তবে বৃষ্টিতে ভেজা বোধহয় মহান অভ্যাস, তাই না?
.
– আপনার অহেতুক তর্ক করার স্বভাব কখনো গেল না।
.
– আমি কোনোকালে অহেতুক তর্ক করতাম না, আমার কোনো উত্তর তোমার পছন্দ না হলেই সবসময় রেগে যেতে অথবা আমাকে একগাদা শুনাতে। ইতিহাস সাক্ষী।
.
– বুজেছি, কফি খাবেন?
.
– হ্যা খাব তবে হোটেলে গিয়ে এখন যাই তাহলে।
.
– এই বৃষ্টির মধ্যে কোথায় যান?
.
– ছাতা এনেছি সাথে, দেখেছো?
.
– ছাতা আনলেও কেউ কিভাবে এই বৃষ্টির মধ্যে যাবে? আপনার মাথা নষ্ট? রিক্সা, গাড়ি কিচ্ছু পাবেন না তার উপর এতক্ষণে রাস্তা সাগর হয়ে গিয়েছে। মাথা ঠিক আছে আপনার?
.
– হুম! বুঝলাম কিন্তু ছাতাটা ভালোভাবে দেখো। কিছু মনেপড়ে?
.
তিন্নি বেশ মনযোগ দিয়ে ছাতাটা দেখে এবং বেশ অবাক হয়েই বলল,
.
– আচ্ছা এই ছাতাটাতো আমার, তাই না?
.
– হ্যা, এটা তোমার ছাতা। এটা আমার বাসায় ছিল, প্রায় ৩ বছর। এটা নিতে ভুলে গিয়েছিলে। যেদিন চলে গিয়েছিলে তার আগের দিন বৃষ্টি হয়েছিল তখন আমার ছাতাটা ছিড়ে গিয়েছিল তোমার ছাতাটা ধার নিয়েছিলাম, মনে আছে? তারপর আর নিয়ে যাওনি, উধাও হয়ে গেলে। ঋণি করে চলে গেলে, সেই থেকে আজব্দি এই ধার করা ছাতাটা ব্যবহার করি। নতুন কোনো ছাতা কেনা হয়নি, এই ৩ বছরে।
.
– কেনো?
.
– কারণ এটাতে তোমার হাতের স্পর্শ আছে, এটা তোমার স্মৃতি বহন করে, তাই আর এই ছাতাটার ইতিহাস মনেআছে? তোমার সাথে যেদিন প্রথম বাহিরে ঘুরতে গিয়েছিলাম, এই ছাতাটা সাথে ছিল। কি মেজাজ ছিল তখন তোমার! মনেআছে? ভাবলাম এই ছাতাটা আর ফেরত দিব না। বরং নিজের কাছেই রেখে দেই। কোনো আপত্তি আছে?
.
– আপত্তি থাকবে কেনো? কিন্তু এত বছরে ছাতাটার কিছু হয়নি! একইরকম আছে।
.
– কেনো তোমার কাছে যে, ৪ বছর ছিল তখনও তো ছাতাটা একেবারে নতুনের মত লাগত।
.
– হ্যা। কারণ, এই ছাতাটা আমার কাছে অনেক মূল্যবান। এটা কোনো সাধারন ছাতা না, আমার কাছে। এই ছাতাটা রনির ছিল। সেদিন কলেজে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছিল, আমার কাছে ছাতা ছিল না। রনির কাছে ছাতা ছিল, ওর সাথেই আসছিলাম কিন্তু আমাদের দুজনের বাসা তখন দুদিকে ছিল। কোনো রিক্সাও ছিল না রাস্তায় তার উপর অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছিল। রনি, আমার কাছে তাই ওর ছাতাটা দিয়ে দিয়েছিল। ওর ছাতা আমাকে দিয়ে নিজে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে চলে গিয়েছিল। আমি কোনোভাবে ছাতাটা নিতে চাইনি তবুও জোর করেই আমাকে দিয়ে নিজে ভিজতে ভিজতে চলে গেল। তারপর ছাতা ফেরত দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু নেয়নি, বলল, আমাকে এটা গিফট করেছে। সেই থেকে ছাতাটাকে টানা ৪ বছর যত্নে রেখেছি। সামান্য একটা ছাতা তবে কত ইতিহাস এর পিছনে! আর আমি ছাতাটার প্রতি প্রচুর কৃতজ্ঞ কেননা, রোদে, বৃষ্টিতে ও আমাকে অনেকবার নিজের ছায়া দিয়ে ঢেকে রেখেছে। ধন্যবাদ এটার এত যত্ন নেওয়ার জন্য।
.
– তুমি এখনো রনিকে ভালোবাসো?
.
– জানি না।
.
– তোমার কথা শুনে মনেহয় তুমি এখনো হয়ত, ওকে ভালোবাসো।
.
– আমি জানিনা। শুধু অতীত থেকে পালাতে চাই। এই যা!
.
– রনি কিন্তু আমার কাছে একবার এসেছিল।
.
– সত্যি?
.
– হ্যা, তুমি যাওয়ার ৩-৪ দিন পর। একগাদা প্রশ্ন করেছিল টানা প্রায় ৩-৪ ঘন্টা বসে। প্রথমে যখন বাসায় এসেছিল তখন প্রচুর রাগে ছিল, পারলে আমাকে খুন করত। তারপর এক পর্যায় কথা বলতে বলতে ছেলেটা প্রায় কেঁদে দিয়েছিল। তীব্র অনুশোচনা কাজ করছিল ওর মধ্যে, আমার মত। কিন্তু আমি কাঁদিনি বরং চোখের পানিগুলোকে শক্ত করে বরফ করে, নিজের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছিলাম।
.
– কি অদ্ভুত না, আমাদের জীবন? হাসি, কান্না, রাগ, অভিমান আর সবচেয়ে জঘন্য অনুভূতি ভালোবাসা! যে ব্যক্তি একবার ভালোবাসা নামক ফাদে পড়ে তার পুরো জীবন প্রায় শেষ হয়ে যায়।
.
– হুম, একমত। আমি নিজেই টের পেয়েছি।
.
– মানে?
.
– কিছু না। আমি এখন বরং চলি।
.
– এই বৃষ্টির মধ্যে? ভাত খেয়ে যান।
.
– না, বরং বৃষ্টিতে অল্প ভিজি, পা ডুবে যাক কৃত্রিম জলাশয়ে, ভিজে যাক আমার প্যান্ট, ছাতাটাকে ঢাল হিশেবে ব্যবহার করব। হয়ত বজ্রপাতে মরে যেতে পারি তবুও তোমাকে দেখে যেতে পেরেছি সেটাই হবে সার্থকতা।
.
– আপনার কোনো কথা বুঝতে পারছি না। আপনি মরে যাবেন, এমন উদ্ভট কথা বলছেন কেন?
.
– লেখিকা, আর্টিস্ট এরা তো মানুষের জীবনের গভীরতাকে কত সুন্দর ভাবে বর্ননা করতে পারে। তোমার বইগুলোতে, মানুষের প্রতিটা সূক্ষ্ম অনুভূতিগুলোকে কত নিঁখুতভাবে বর্ননা কর! তো আজকে কেন বুঝে উঠতে পারছো না? মৃত্যুর স্বাদ সবাইকে নিতে হবে। মানুষ জীবনে যত বাঁচে ততবেশী পাপ, দু:খ, কষ্ট তাকে গ্রাস করতে থাকে তার চেয়ে তাড়াতাড়ি পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়ে ঈশ্বরের আশ্রয় নেওয়া ভালো। কিন্তু আত্মহত্যা আবার মহাপাপ! তাই বরং স্বাভাবিক মৃত্যুর জন্য প্রার্থনা করি। আমি এখন গেলাম তাহলে।
.
– জাভেদ!
.
– কি?
.
– দাড়ান প্লিজ। প্লিজ ভাত খেয়ে যান।
.
– ক্ষুধা নেই।
.
– আপনি এমন করছেন কেন?
.
– কেমন করলাম?
.
– এই যে, চলে যাচ্ছেন, উদ্ভট কথা বলছেন। আপনি একসময় আমার বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা ছিলেন জাভেদ। আর আজকে আপনি এসব উদ্ভট কথা বলছেন?
.
– জানো, বাস্তব কথা আর হৃদয়ের কথা এই দুধরনের কথাগুলো প্রচুর উদ্ভট হয়।
.
– মানে?
.
– মানে, আজকের মত বিদায় নিলাম।
.
– আপনি আবার কবে চলে যাবেন?
.
– ইরার আর তোমার ছবি না তুলে যাব না।
.
– জাভেদ একটু বসুন, প্লিজ।
.
– কালকে আসব অসুবিধা নেই।
.
নীল রঙের ছাতাটা হাতে নিয়ে জাভেদ চলে যায় দরজাটা খুলে। তিন্নি জানে, জাভেদ কালকে আসবে তবুও কোনো এক অজানা, তীব্র ব্যাথা তার তিন্নির সমগ্র দেহজুড়ে অস্থিরতা ছড়াচ্ছে। হয়ত এতদিন পর জাভেদকে দেখে তার সাথে আরো দীর্ঘ সময় কাটাতে চেয়েছিল, তিন্নি। কিন্তু সেটা হয়ত কপালে লেখা ছিল না। কপালকে দোষ দেওয়া হয়ত ভুল। হয়ত তিন্নির ভাগ্যে লেখা ছিল না। অনুমতি ছাড়া অনেকটা অবৈধভাবে চোখের পানিগুলো তিন্নির গাল ছুয়ে নিচে নেমে আসা শুরু করল। চোখের পানিগুলো হাত দিয়ে হালকা মুছে, উঠে দাড়িয়ে খুলে থাকা দরজাটা ঠাস করে তিন্নি লাগিয়ে দেয়।
.
– জাভেদ, এভাবে চলে গেলেন কেনো? উনিও বোধহয় আমার মত অতীতকে ভয় পায়। হয়ত অতীত থেকে পালাতে চায় তবে স্বীকার করতে চায় না।
.
ইরা মাত্র মাত্র ঘুম থেকে উঠে , তিন্নির কাছে এসে দাড়ায়। তিন্নি এখনো বেশ অন্যমনস্ক। ইরার, “আম্মু” ডাকে তিন্নির অন্যমনস্কতা ভেঙে যায়। ইরাকে কোলে তুলে নেয়। এখনো ঘুমের প্রভাব ইরার দুচোখে একদম স্পষ্ট। তিন্নির কোলে ঢুকে বেশ কাঁচুমাচু দিয়ে ঘুমন্ত স্বরে তিন্নিকে জিজ্ঞেস করে,
.
– জাভেদ কোথায়?
.
– জাভেদ চলে গিয়েছে আম্মু।
.
– আমাকে বাই বলেনি তো।
.
– তাই?
.
– হ্যা।
.
– আচ্ছা আবার যখন আসবে তখন অনেক বকা দিব। ওনাকে বলব, ইরাকে আপনি বাই বলেননি কেন? ঠিক আছ?
.
ইরার মুচকি হাসিতেই তিন্নি ধরে নেয়, ইরা তার প্রস্তাবে রাজি আছে। ইরাকে আরো জোরে জড়িয়ে ধরে। হয়ত ইরার শরীরের উষ্ণতা থেকে নিজের ব্যাথাগুলোকে পুড়িয়ে দেওয়ার চেষ্ট চালাচ্ছে। তিন্নি জানে, ইরা একটা সাংঘাতিক ওষুধ তার সকল, দু:খ, কষ্টের জন্য। আর এই ওষুধ ব্যবহারের ফলাফল কখনো বৃথা যাবে না।
.
(১১)
.
রাত সাড়ে ১০ টার মত বাজল। এর মধ্যে ইরা আবার ঘুমিয়ে পড়েছে। শরীর হালকা গরম, বোঝা যাচ্ছে যে,জ্বর হয়েছে একারণে হয়ত এভাবে এত তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়েছে। ইরাকে ওষুধ খাইয়ে দিয়েছে তবুও, তিন্নির মন প্রচন্ড অস্থির। বারবার শুধু ইরার চুলগুলো বুলিয়ে দিচ্ছে। ইরাকে ছেড়ে যাওয়ার সামান্য ইচ্ছে এখন তিন্নির মধ্যে নেই। তিন্নির কাছে সবচেয়ে অসহ্য মুহূর্তগুলো হল, যখন ইরার চঞ্চলতাকে সে উপভোগ করতে পারে না। এজন্য রাতকে তিন্নি খুব ভয় পায়। যখন ইরা গভীর ঘুমে চলে যায় তখন তিন্নির দুচোখ তাকে সজাগ রাখতে চায় আর তাই রাতকে সে চরম ভয় পায় কেননা অতীতের সকল ভয়ানক স্মৃতিগুলো তখন তিন্নির কাছে আসতে চায়, তিন্নির মস্তিষ্ককে ফিরিয়ে নিতে চায় সেই ভয়ানক দিনগুলোতে।
.
তিন্নি একটু পরপর শুধু ইরার গালে চুমু খেতে থাকে। হঠাৎ করে বেলটা বেজে ওঠে ।
.
– এইরাতে কে হতে পারে?
.
মনের ভিতর হালকা ভয়ও কাজ করে তিন্নির, প্রচুর সাহস জুটিয়ে দরজাটা খোলে। দরজা খুলে রনিকে দেখতে পায়। কিন্তু রনি মোটেও স্বাভাবিক নেই। নেশারঘোরে রনি প্রায় তিন্নির গায়ের উপর পড়ে যাওয়া শুরু করে। তিন্নি,রনিকে কোনোরকম স্থির দাড় করায়। রনির নাক মুখ থেকে চরম বিদঘুটে গন্ধ। খুব সহজেই অনুমান করা যাচ্ছে যে, রনি নেশা করেছে।
.
– রনি, তুমি এতটা নিঁচু?
.
– কি? কি? আমি ইরার কাছে যাব।
.
– তোমার মত নেশাখোর ইরার কাছে যাবে?
.
– আমার নেশা তো তুমি এত ধৈর্য ধরে নিজের নেশার জন্য অপেক্ষা করেছি। কাছে পেয়েও ছুঁতে পারিনি, তাই অন্য নেশার আশ্রয় নিলাম কিন্তু তারা তোমার মত, এত সুন্দর আর ভালো না।
.
রনি নিজেকে কোনোরকম আর স্থির থাকতে পারে না, রনির সমগ্র দেহ মাটিতে পড়ে যায়। রনির এই জঘন্য অবস্থা দেখে আশেপাশে কাউকে ডেকে ঘর থেকে বের করতে ইচ্ছে হলেও, কোনো এক অদ্ভুত মায়ায় রনিকে টেনে কোনোরকম দেয়ালের সাথে বসিয়ে দিয়ে একগ্লাস পানি নিয়ে আসে তিন্নি। রনির প্রায় কোনো হুশ নেই, পানিটাও তিন্নিকেই খাইয়ে দিতে হয়। তিন্নি প্রায় কান্নাস্বরে বলে,
.
– দেখো, পাগলামির সীমা থাকে। সারা জীবন কি পাগলামি করে কাটিয়ে দেওয়া যায়? তুমি কেন এরকম কর? এত খারাপ কাজ কিভাবে মানুষ করে?
আর এখানে এসেছো কেন? বাসায় যাওনি কেন?
.
– কারণ, এই প্রথম এই কাজ করলাম। বাসায় গেলে সবাই মেরে ফেলত, পুলিশে ধরিয়ে দিত হয়ত। কিন্তু আমি জানি, আমার তিন্নি আমাকে ভালোবাসে, অনেক বেশী ভালোবাসে। আর তিন্নি শুধু আমার একমাত্র আশ্রয়স্থল, এই পৃথিবীতে!
.
তিন্নির কান্নার মাত্র ক্রমে বৃদ্ধি পেতে থাকে।
.
– রনি, প্লিজ পাগলামি বন্ধ কর। এগুলো সহ্যের বাহিরে।
.
– আমি তো একটা কৃত্রিম দেহ, আমার জীবনকে আরো বহুবছর আগে হারিয়েছি। আমার পাগলামিতে কার কি যায় আসে! আমি বাচিতে চাই তিন্নি, আমি।শুধু বাচতে চাই তোমার হাতদুটো ধরে। আমাকে বাচাও।
.
রনি তিন্নির হাত বেশ জোরে চেপে ধরে। নেশায় প্রায় বেহুঁশ অবস্থায়, রনির নিভু নিভু চোখ দুটো শুধু তিন্নিকে দেখতে পায়। রনির অদ্ভুত এই ছোয়া পেয়ে তিন্নি প্রায় অবশ হয়ে যায়। নিশ্চুপ হয়ে যায় তিন্নির প্রতিটি অঙ্গ। তিন্নির নরম চুলগুলোতে হাত দিয়ে ক্রমেই রনি এগোতে থাকে তিন্নির নরম দুই ঠোটের দিকে।
.
(চলবে….)
.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here