চিত্তদাহ লেখনীতে : শুভ্রতা আনজুম শিখা পর্ব ৫৪

0
444

#চিত্তদাহ
লেখনীতে : শুভ্রতা আনজুম শিখা
পর্ব ৫৪

🍂🍂🍂

সময় নিজের মতো যাচ্ছিলো। ধীরে ধীরে আমার অসুস্থতা বাড়তে লাগলো, আমি আরো দুর্বল হতে শুরু করলাম। রোজ মনে হয় আজই আমার শেষ দিন। প্রতিটা দিন আমার কাছে একেকটা সারপ্রাইজের মত লাগে। আল্লাহ যেনো একেকটা দিন আমাকে উপহারস্বরূপ দিচ্ছিলো। এক দিকে আমি যেমন খুশি মৃত্যুর পর আমার মায়ের কাছে যাবো ভেবে। তেমনিই চন্দ্রকে ছেড়ে যাওয়ার দুঃখ আমার হৃদয়কে দুমড়ে মুচড়ে দিচ্ছে। আমাদের বিয়ের সাত মাস চলে। মায়ের বাড়িতে যাওয়া হয়না অনেকদিন। ছোট রোজটাও বেশ বড় হয়েছে। সারাদিন রেনু আপার কাছেই থাকে। সেদিন চন্দ্রের সাথে কথা বলার পর থেকেই খেয়াল করেছি সে যথা সম্ভব নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে। তবুও মাঝে মাঝে ক্লান্ত হয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়। আমি শান্তনা দেওয়ার কিছুই পাই না। কি শান্তনা দিবো? সব ঠিক হয়ে যাবে? আমি কি ঠিক হতে পারবো? ইদানিং শ্রুতি আন্টির সেই অভিশাপের কথা খুব মনে পড়ে। অভিশাপ কি তবে সত্যি হয়? সে তো বলেছিল আমার প্রিয় বন্ধুই আমাকে বিনা দোষে সাজা দিয়ে যাবে। আমার কি তার কাছে গিয়ে ক্ষমা চাওয়া উচিৎ? মাফ চাইলে কি সব ঠিক হয়ে যাবে? আজ সকালে চন্দ্রের ফোনে মিসেস জাহানারার মেসেজ দেখলাম। মেসেজটা আমার হৃদয় কাপিয়ে দিয়েছিল। মিসেস ইতির মিসক্যারেজ হয়েছে। আমার মায়ের সতীন সে। তার দুঃখে তো আমার খুশি হওয়ার কথা। অথচ আমি আনন্দ পাইনি বিন্দু মাত্র। খুশি হওয়াটা কি আদৌ উচিত?

🍂🍂🍂

চন্দ্র হাসপাতালে যেতেই শুভ্রতা চিত্রার কাছে গেলো। চিত্রা রান্না করছেন। তাকেই সাহায্য করছে রেনু আর তিলোত্তমা। রাত্রি এখনও ঘুম। শুভ্রতা চিত্রার পাশে কিছু বলার জন্যে কাচুমাচু করতে লাগলো। কিন্তু বলতে পারছে না। চিত্রা গরম তেলে মাছ ছেড়ে আড়চোখে শুভ্রতার দিকে চেয়ে জানতে চাইলেন,
~কিছু বলবি?

শুভ্রতা মাথা ঝাঁকালো। রেনু ঠোঁট চেপে হাসছে। এমন দৃশ্য সে আগে প্রায় দেখতো। শুভ্রতা যখন কোনোকিছুর জন্য আবদার করতে উমার কাছে যেতো তখনও ঠিক এমনি গাল ফুলিয়ে উমার গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকতো। বিয়ের পর শুভ্রতা যেনো চিত্রার মধ্যেই নিজের মাকে খুজে পেয়েছে। রেনু খিল খিল করে হেসে বললো,
~আপামনি মনে হয় কোনো কিছুর আবদার করতে আইছে।

বলেই ঠোঁটে হাত চেপে হাসতে লাগলো। চিত্রা রেনুর দিকে তাকালো একবার। শুভ্রতার দিকে মুখ ফিরিয়ে বললো,
~তাই নাকি? কি লাগবে?

শুভ্রতা মাথা চুলকে হাসলো। চিত্রার গলা জড়িয়ে বললো,
~চিত্রা মা ও বাড়িতে যাই না বহুদিন। মিস করছি।
~ঠিক আছে। তবে আজ নয়, কাল।

শুভ্রতা চমকে তাকালো। খুশি হয়ে বলল,
~সত্যি?
~হ্যা তবে তুই একা না, আমরা সবাই যাবো।
~তোমরা গিয়ে কি করবে?
~দেখো মেয়ের কথা। তোকে কি একা ছাড়বো নাকি? আমি ছাড়লেও তোর বাবা, মাহতাব আর আহনাফ ছাড়বে? পুরো বাড়ি মাথায় তুলে ফেলবে। গতবার একা গিয়েছিলি দেখে কি কান্ড হয়েছিল মনে নেই?

শুভ্রতা চিত্রার গলা ছেড়ে চোখ পিট পিট করে তাকালো। তার মনে আছে। আশহাব আর মাহতাব খুব চেঁচামেচি করেছে শুভ্রতাকে একা যেতে দেওয়ার জন্য। চন্দ্র তো রীতিমতো পাগলামি শুরু করে দিয়েছিল। বাড়ি যাওয়ার আগে শুভ্রতা একটু শপিংয়ে গিয়েছিল। শপিংয়ের তালে সে বেমালুম ভুলেই গিয়েছিল দুপুর গড়িয়ে রাত নেমেছে। বাড়িতে তাকে খুঁজে না পেয়ে সে কি কেলেঙ্কারি হয়েছিলো। গ্রাম থেকে ছুটে এসেছিল মাহাদ। শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে অরণ্য, অর্ণব, মাহতাব, মাহাদ হন্য হয়ে খুঁজেছে তাকে। মনে পড়তেই শুভ্রতা শুকনো ঢোক গিললো। তাকে খুঁজে পাওয়া মাত্রই বাড়ি এনে সকলে মিলে টানা এক ঘন্টা লম্বা ভাষণ দিয়েছিল। শুভ্রতা পুনরায় চিত্রার গলা জড়িয়ে বললো,
~চিত্রা মা, আজ একটু বাইরে যেতে চাচ্ছি।
~আহনাফ জানে? তোকে একা যেতে দেওয়া…
~উহু, চিন্তা করো না একা যাবো না। সাথে এই তিলোকেও নিয়ে যাবো।
~কোথায় যাবি?
~এসে জানাই?

চিত্রা সরু চোখে চাইলেন। একটু চুপ থেকে বললেন,
~আচ্ছা যা, তবে জলদি ফিরে আসিস।

শুভ্রতা খুশি হয়ে চিত্রাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,
~তুমি খুব ভালো চিত্রা মা। একদম বেস্ট।

চিত্রা হাসলেন। শুভ্রতাকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বললেন,
~আরে ছাড়, ছাড়! দেখো মেয়ের কান্ড! মাছ পুড়ে যাচ্ছে তো!
__________________________________

~রেডি? (শুভ্রতা)
~হ্যা চল। (তিলোত্তমা)

শুভ্রতা বাসা থেকে বের হতেই দেখলো তাদের জন্য ড্রাইভার করিম অপেক্ষা করছে। শুভ্রতাকে দেখতেই করিম হুড়মুড় করে আগে ড্রাইভিং সিটে বসলো। তার এরূপ কান্ডে শুভ্রতা ফিক করে হেসে দিলো। তিলোত্তমা সেদিকে তাকিয়ে বললো,
~বেচারাকে অযথাই ভীষণ জ্বালাস তুই। তোকে দেখলেই সে যেনো আতঙ্কে থাকে।

শুভ্রতার হাসির মাত্রা বাড়লো। সে হাসি বজায় রেখেই জবাব দিলো,
~আমি ড্রাইভ করবো শুনলেই যেই ভাবে আঁতকে উঠে তা দেখে আমার বেশ মজা লাগে। চন্দ্রকে অকারনেই ভয় পায় সে।

~তোকে নিয়ে আহনাফ ভাই যেই পরিমাণে পসেসিভ, এটা নিয়ে আমরা বাড়ির মানুষই ভয়ে থাকি। উনি তো বেচারা এখানে কাজ করে।

গাড়িতে শুভ্রতার পাশে বসে বললো,
~বাই দ্যা ওয়ে, যাচ্ছি কোথায়?

শুভ্রতার ঠোঁট এলিয়ে হাসলো। তিলোত্তমাকে হাতের ইশারায় কাছে ডাকলো। শুভ্রতার দিকে কান এগিয়ে দিতেই শুভ্রতা তার কানের কাছে চিৎকার করে বললো,
~সেটা তো গেলেই দেখতে পাবি।
~ইশ!!!!! কানের পোকা মেরে ফেললো আমার।

শুভ্রতা খিল খিল করে হেসে উঠলো। গাড়ির দরজায় পিঠ ঠেকিয়ে পেট চেপে অনেকক্ষণ হাসলো। তিলোত্তমা বুঝতে পারলো আজ শুভ্রতার মন ভীষণ ভালো। শুভ্রতার হাসি দেখে তিলোত্তমাও হাসলো। মনে মনে দোয়া করলো তার বান্ধবী যেনো সারাজীবন এভাবেই হাসিখুশি থাকে।
________________________________

প্রায় ঘন্টা খানেক পর গাড়ি থামলো তিন তলা এক বাড়ির সামনে। বাড়ির সামনে ছোট্ট একটা বাগান। শুভ্রতা গাড়ি থেকে নামতেই একজন মাঝ বয়স্ক নারী তাদের দিকে ছুটে এলো। শুভ্রতাকে সালাম দিলো আগ বাড়িয়ে। শুভ্রতা মুখটা গম্ভীর করে সালামের জবাব নিলো। মহিলাটি শুভ্রতাকে ভেতরে যেতে আমন্ত্রণ জানালে শুভ্রতা মাথা নাড়ালো। বললো,
~আপনি শুধু তাকে আসতে বলুন। আমরা ওখানে বসছি।
~কিন্তু ম্যাডাম।
~মিসেস জাহানারা!
~জ্বি… জ্বি ম্যাডাম, আমি ডেকে আনছি।

জাহানারা তৎক্ষনাৎ বাড়ির ভেতরে চলে গেলো। শুভ্রতার পিছন পিছন ছুট লাগালো তিলোত্তমা। কৌতূহলী কন্ঠে জানতে চাইলো,
~কে উনি? আর আমরা এখানে কেনো এসেছি? আর কাকে ডাকতে গেলেন উনি?
~বাবাকে।

তিলোত্তমা অবাক চোখে চেয়ে রইলো। চোখ দুটো যেনো কোটর হতে বেরিয়ে আসবে। শুভ্রতা আয়েশী ভঙ্গিতে ঘাসের ওপর পা মেলে বসলো। আজাড় দৃষ্টিতে তাকালো খোলা আকাশের দিকে। তিলোত্তমা কান খাড়া করতেই শুনতে পেলো কয়েকজনের পায়ের আওয়াজ। সময়ের সাথে সাথে তীব্র হচ্ছে আওয়াজ। অর্থাৎ মানুষগুলো তাদের দিকেই আসছে। তিলোত্তমা পেছন ফিরে তাকালো। আবসার শুভ্রতার দিকে চেয়ে। যেকিনা উল্টো দিকে মুখ করে বসে এখনও আকাশের দিকে চেয়ে আছে। আবসার এক পলক তিলোত্তমার দিকে চাইলো। তারপর জাহানারার দিকে। এরপর আবারো তাকালো শুভ্রতার দিকে। আবসার প্রশ্ন করলো,
~তুমি এখানে?

শুভ্রতা চোখ বন্ধ করে মাথা নামালো। তার ঠোঁটের কোণে মুহূর্তের জন্য ভেসে উঠা হাসিটা তিলোত্তমার চক্ষু এড়ালো না। তিলোত্তমা নিরব দর্শক হয়ে দেখতে লাগলো সব কিছু। শুভ্রতা ঘুরে না তাকিয়েই নিজের পাশের জায়গাটায় হাত দিয়ে দুবার চাপড় মেরে বললো,
~বসুন, একটু গল্প করি।

আবসার ভ্রু কুঁচকে তাকালো। শুভ্রতা তিলোত্তমার হাত টান দিয়ে তার আরেক পাশে বসালো। শুভ্রতা ঘাড় ঘুরিয়ে জাহানারার দিকে তাকাতেই জাহানারা নড়েচড়ে দাড়ালো। ইতস্তত করে বললো,
~আপনারা কথা বলুন, আমি আসছি।

জাহানারা এক প্রকার ছুটে পালালো সেখান থেকে। আবসার শুভ্রতার পাশে গিয়ে বসলো। জানতে চাইলো,
~কেমন আছিস?

শুভ্রতা মাথা দোলালো। মুখে উত্তর দিলো,
~ভালো।
~আজ এখানে?

শুভ্রতা সেই প্রশ্নের জবাব দিলো না। আবসারের দিকে চেয়ে বললো,
~শুনলাম আপনার বউয়ের মিসকারেজ হয়েছে। কি অবস্থা তার?
~তুমি কি?
~কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিতে আসিনি। শুধু দেখতে এসেছি মানুষটা কেমন আছে। তার স্বামীর মতো আমি আবার নির্দয়, নিষ্ঠুর না।

আবসার অসহায় চোখে তাকালো। ব্যথিত কন্ঠে বললো,
~মাফ করে দেওয়া যায় না? আমার ভুল হয়ে গেছে।
~উহুন! মোটেও না। আপনার মত মানুষকে জীবনেও না।
~তবে এখানে কেনো এসেছো?
~আপনার মনের ঘা তাজা করতে। আর…
~আর?
~মিসেস ইতিকে জানাতে আমার মা মৃত্যুর আগে তাকে ক্ষমা করে গেছে। তার মিসক্যারেজ হওয়ার কারণ যেনো সে কোনোমতেই আমার মাকে না মনে করে। শুনেছি সে নাকি অনুতাপে ভুগছে? তাকে বলবেন তাকে আমার মা যাওয়ার আগেই তাকে ক্ষমা দিয়ে গেছেন।

~তাকে এই কথা তুমি নিজে কেনো জানাচ্ছো না?
~আমার মা তাকে ক্ষমা করেছে। আমি তো করেছি কিনা বুঝতে পারছি না।

আবসার চুপ রইলেন। বলার মতো কিছুই সে খুঁজে পাচ্ছে না। কথারা যেনো গলায় আটকে আসছে। আবসার দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে প্রশ্ন করলেন,
~শ্বশুরবাড়ির সবাই কেমন আছে? তোমার খেয়াল রাখে তো? শুনেছি…
~আমার দুটো কথা রাখবেন? মনে করবেন মেয়ের অধিকার নিয়ে বাবার কাছে শেষ চাওয়া।

আবসার ধরা গলায় প্রশ্ন করলো,
~কি?

শুভ্রতা ঠোঁটে হাসি টানলো। সম্পূর্ণ ঘুরে বসলো বাবার দিকে।

~প্রথমত, যেই ব্যবসাটা আপনি আর মা চালু করেছেন তাতে আগের মতোই যোগদান দিতে শুরু করুন। মায়ের তো ৬০% ভাগ রয়েছে। এতে আপনার, আপনার বউ বা বাচ্চার কোনো প্রকার হক থাকবে না। কোম্পানিতে প্রফিট যা আসবে তার ৩০% যাবে এতিমখানা আর বৃদ্ধাশ্রমের নামে। ১৫% রেনু আপার, বাকি ১৫% এসব যে সামলাবে তার নামে। আর আপনাকে ব্যবসাতে সাহায্য করবে তিলোত্তমা।
~আর তোর নামে কি থাকবে?
~মৃত মানুষের টাকার প্রয়োজন হয় না। প্রয়োজন হয় দোয়ার।
~দ্বিতীয় চাওয়া?
~আমার মৃত্যুর খবর শুনলে আপনি বা আপনার স্ত্রী যেনো আমার লাশ দেখতে না যান। মনে করুন এটাই আপনার সাথে আমার শেষ দেখা।

আবসার করুন চোখে চেয়ে রইলো মেয়ের মুখপানে। কি নিষ্ঠুর ভঙ্গিতে তার শেষ চাওয়াটা বলে দিলো। এটা বুঝলো না তার প্রতিটা কথা ছুরির ন্যায় আঘাত করছে তার মনে। শুভ্রতা কিছুক্ষণ অনিমিখে বাবার দিকে চেয়ে রইলো। ইচ্ছা করছে বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলতে,
~বাবা আমার কষ্ট হচ্ছে। আমাদের সুন্দর সংসারটা কেনো এমন ভেঙে গুড়িয়ে দিলে? তুমি কি কখনোই আমাদের ভালোবাসোনি?

কিন্তু বলা হলো না। শুভ্রতা চোখ ফিরিয়ে নিলো। আবারো আগের ন্যায় সোজা হয়ে বসলো। হাঁটু ভাঁজ করে তাতে হাত বেঁধে বললো,
~বাড়িটা সুন্দর। আপাতত এই বাড়ির ভাড়া দিয়েই চলছেন বোধয়?
~হুম।
~ভালো।

শুভ্রতা উঠে দাঁড়ালো। সে দাড়াতেই উঠে দাঁড়ালো তিলোত্তমা। আবসার তখনও বসে মেয়ের দিকে চেয়ে আছে। শুভ্রতা বিস্তর হেসে বললো,
~যাওয়ার সময় হয়ে এসেছে। যাই তবে?

আবসারের থেকে কোনোরূপ জবাব না পেয়ে শুভ্রতা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। গাড়ির দরজা খুলতে নিতেই তার হাত ধরে আটকালো আবসার। শুভ্রতা মাথা তুলে তাকাতেই আবসার পরম স্নেহে মেয়েকে জড়িয়ে ধরলো। শুভ্রতা কতক্ষন ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো। আবসার নিঃশব্দে কান্না করছেন। শুভ্রতা অভিমান ছেড়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরতে নিতে চাইলো। বাড়ির দিকে চোখ পড়তেই হাত নামিয়ে নিলো। ইতি মুখে ওড়না চেপে দাড়িয়ে কাঁদছে। শুভ্রতার সাথে চোখাচোখি হতেই সে হাত জোড় করে ক্ষমা চাওয়ার মত করলো। শুভ্রতার চোখ দিয়ে এক বিন্দু অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। শুভ্রতা তৎক্ষণাৎ চোখ মুছে বাবাকে ছাড়ালো। আবসার রয়ে রয়েই বলছে,
~ক্ষমা করে দে মা। তোর বাবা ভুল করেছে।

শুভ্রতা আবসারের শার্টের কলার ঠিক করে দিয়ে মাথার চুল গুছিয়ে দিলো। ঠিক যেমন আগে করতো। আবসারের চোখের পানি মুছে দিয়ে মুচকি হেসে বললো,
~ভালো থাকবেন, নিজের যত্ন নিবেন।

বলেই দরজার কাছে দাড়িয়ে থাকা ইতির দিকে তাকালো সে। ইতি বুঝতে পারলো শুভ্রতা এক ঢিলে দুই পাখি মেরেছে। শুভ্রতা গাড়িতে বসে জানালা নামিয়ে দিলো। গাড়ি ছাড়তেই শুভ্রতা জানালা দিয়ে মাথা বের করে তাকালো। শেষবারের মতো মন ভরে দেখে নিলো নিজের বাবাকে। একবারের জন্য তাকালো ইতির দিকেও। যে তারই যাওয়ার দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে। শুভ্রতা সোজা হয়ে বসে ফোন হাতে নিলো। জাহানারার উদ্দেশ্যে মেসেজ দিলো,

“তার সব খবর প্রতিনিয়ত আমাদের জানানোর জন্য ধন্যবাদ। আজকের পর থেকে আর কোনো খবর দেওয়া লাগবে না।”
_________________________________

শুভ্রতা খেয়াল করলো গাড়ির ভেতরের মহল একদম থমথমে। তিলোত্তমা সিটে গা এলিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছে। করিম মাঝে মাঝেই চোখ মুছছে। শুভ্রতা কপাল কুঁচকে তাকিয়ে রইলো।
~সমস্যা কি দুজনের? এ
কজন গম্ভীর, আরেকজন কান্না করে।

করিম চোখ মুছতে মুছতে জবাব দিলো,
~ম্যাডাম আপনি খুব ভালো মানুষ। আল্লাহ আপনার সব মনের আশা পূর্ণ করুক।

শুভ্রতা সরু চোখে চাইলো। প্রশ্ন করলো,
~আমি আবার আপনাকে কি করলাম?

~কি দরকার ছিলো এখানে আসার? অযথা মন, মস্তিষ্কের ওপর অত্যাচার। (তিলোত্তমা)

শুভ্রতা তিলোত্তমার মতোই সিটে গা এলিয়ে দিলো। তিলোত্তমার দিকে চেয়ে বললো,
~এখন মনটা হালকা লাগছে। আজ বুঝলাম মা কেনো মৃত্যুর আগে ওদের মাফ করে দিয়েছে।
~কেনো করেছে?
~আফসোস নিয়ে মৃত্যু খুব কষ্টের।
~শুভ্রতা!
~খেয়াল রাখিস আমার এই দুই চাওয়া যেনো অপূর্ণ না থাকে।
~~~
চলবে~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here