চিত্তদাহ লেখনীতে : শুভ্রতা আনজুম শিখা পর্ব ৬১

#চিত্তদাহ
লেখনীতে : শুভ্রতা আনজুম শিখা
পর্ব ৬১

🍂🍂🍂

~শুভ্রতা? রেডি?

তিলোত্তমার ডাকে জবাব দিলো না শুভ্রতা। গভীর দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো আয়নায় নিজেকে। গায়ে তার বাসন্তী রঙের শাড়ি। চোখে কাজল ছাড়া চেহারায় নেই কোনো প্রসাধনীর ছোঁয়া। শেষবারের মতো নিজেকে দেখে নিয়ে শুভ্রতা ঘুরে দাঁড়ালো।

~সবাই রেডি?

তিলোত্তমা মাথা দোলালো। তার দৃষ্টি শুভ্রতার চুলের দিকে স্থির। শুভ্রতা তা খেয়াল করে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।

~আমাকে কি দেখতে বাজে লাগছে?

প্রশ্ন করলো শুভ্রতা। তিলোত্তমা মাথা ঝাঁকালো।

~ভাবছি আর কেমোথেরাপি করাবো না। আমার শখের চুল সব শেষ।

শুভ্রতার কথায় জোরপূর্বক হাসলো তিলোত্তমা। মুখে কিছুই বললো না।

~ভাবী! জলদি আসো!

তরী নিচের ঘর থেকে ডেকে উঠলো।
.

গাড়ির জানালা খুলে মাথা বের করলো শুভ্রতা। গুনগুন করে গাইলো,

“বাতাসে বহিছে প্রেম,
নয়নে লাগিলো নেশা
কারা যে ডাকিলো পিছে,
বসন্ত এসে গেছে”

চন্দ্র ড্রাইভ করতে করতে এক হাতে আগলে ধরলো তাকে।

~এমন করে না বউ, পড়ে গিয়ে ব্যথা পাবে।

শুভ্রতা সোজা হয়ে বসলো। মুখ ভেংচি কাটলে চন্দ্র হেসে বলল,

~এমন করো না তো! পরে দিবো। ড্রাইভ করছি আমি।

শুভ্রতা অবাক হলো।

~কি করেছি আমি? আর কি দিবেন পরে?
~যেটা তুমি মাত্র ইশারায় চাইলে।
~কি চাইলাম?

শুভ্রতা এক ভ্রু উঁচিয়ে তাকালো।

~চুমু।

শান্ত গলায় বললো চন্দ্র। পেছন সিট থেকে খুকখুক করে কেশে উঠলো অরণ্য আর অর্ণব। শুভ্রতা রাগ, লজ্জা মিশ্রিত চোখে চেয়ে রইলো চন্দ্রের দিকে। চন্দ্রের ঠোঁটে বিশ্বজয়ের হাসি।

~ভাই গাড়িতে তোর বউ এর দুই দুইটা বড় ভাই বসে আছে। একটু লাগাম দে!
~কেনো দিবো? বউ আমার, গাড়ি আমার, বউয়ের ঠোঁটও আমার। তোরা শালা জোড় করে আমার গাড়িতে উঠে এসেছিস। এখন ঠেলা সামলা।
~আমরা জোড় করে উঠেছি?
~অবশ্যই!
~ভোর বেলা আমাদের বাসায় হামলা দিয়ে যে তোর লোক আমাদের তুলে নিয়ে এলো সেটা?
~আমি তো আর আনিনি। আমার লোক এনেছে।

চন্দ্রের সাথে আর কথা বাড়ালো না অরণ্য। বিড়বিড় করে অশ্রাব্য ভাষায় গালি দিলো তাকে। নেহাৎ বোন তার গাড়িতে উপস্থিত নয়তো সেও চন্দ্রের মত কিছু একটা বলে লড়াই চালিয়ে যেতো। এখন কিছু বললে চন্দ্রের বেফাঁস কথায় পরে বোনের সামনে ইজ্জত যাবে। অন্যদিকে শুভ্রতার লজ্জায় মরিমরি অবস্থা। চন্দ্র একটু পর পর তার দিকে তাকাচ্ছে আর মুচকি মুচকি হাসছে। শুভ্রতা মুখ ফিরিয়ে জানালার বাহিরে দৃষ্টি স্থির করলো। তার মন, মস্তিষ্ক জানান দিচ্ছে এক জোড়া চোখ তাকে গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করায় ব্যস্ত।
______________________________

বড় এক রেস্টুরেন্টের সামনে গাড়ি থামতেই দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে পালালো অরণ্য আর অর্ণব। চন্দ্র পেছন থেকে হাক ছাড়লো,
~আরে শালা আস্তে যা!

শুভ্রতা ভীষণ রেগে চন্দ্রের দিকে চেয়ে আছে। চন্দ্র কপট লজ্জামাখা এক হাসি দিয়ে শুভ্রতার দিকে ফিরে বসলো।
~গাড়ি লক করেছেন কেনো?
~নিজেকে দেখেছো আয়নায়?

চন্দ্রের প্রশ্নে অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো শুভ্রতা। নিজের শাড়ি, চুল ঠিক করতে করতে প্রশ্ন করলো,

~কেনো? ভালো লাগছে না? খারাপ লাগছে? চুল নষ্ট হয়ে গেছে নাকি শাড়ি?

বিচলিত হলো শুভ্রতা। চন্দ্র তাকে শান্ত হতে বললো। তার কানের পিঠে চুল গুজে দিয়ে বলল,
~আমার জীবনে দেখা আমার মা, বোনের পর সব থেকে সুন্দর নারী তুমি।

মুচকি হাসলো শুভ্রতা। নিজেকে ধাতস্থ করে প্রশ্ন করলো,

~মা বোনের পর কেনো?
~তাদের কথা না বললে মার না খেতাম তোমার হাতে?

চন্দ্রের ভয়ার্ত হওয়ার ভঙ্গি দেখে হেসে উঠলো শুভ্রতা।

~হয়েছে আপনার কথা? এখন যেতে দিন।
~উমহুম!

মাথা নাড়ালো চন্দ্র।

~কেনো? কি সমস্যা?
~তখন যেটা চেয়েছো তা আগে দিয়ে নিই। নয়তো পরে বউ রাগ করবে।

বিস্ফোরক চোখে চেয়ে রইলো শুভ্রতা। ঠোঁটে দু হাত চেপে বললো,

~এখন? এখানে? একদমই না প্লীজ!
~কেনো? একটা, প্লীজ!

শুভ্রতা সমান তালে মাথা নাড়ালো।

~ভুলেও না, স্বপ্নেও না। যান, দূরে যান!
~বউ!
~গাড়ির দরজা খুলুন চন্দ্র। এমনিই ভাইদের সামনে উল্টা পাল্টা বলে লজ্জায় ফেলেছেন। যেতে দেরি হলে তিলোত্তমা লজ্জা দিতে দিতে মেরে ফেলবে।

হতাশ হলো চন্দ্র।
~বাড়ি যেতে দাও একবার! সব সুধে আসলে শোধ করবো।
~সেটা তখনের তখন দেখা যাবে। আপাতত লক খুলুন।

গাল ফুলিয়ে বিড়বিড় করতে করতে চন্দ্র দরজা খুললো। শুভ্রতা দরজা খুলে বের হতে নিয়েও ফিরে তাকালো। চন্দ্র অভিমানী গলায় প্রশ্ন করলো,
~কি থামলে কেনো? যাও!
~একটু আগে বাড়ুন, একটা কথা বলার ছিল।

চন্দ্র কান এগিয়ে দিলো।

~কি বলবে ব…

শুভ্রতা চন্দ্রের মুখটা নিজের দিকে ফিরিয়ে তার ওষ্ঠে আলতো করে নিজের ওষ্ঠ ছোঁয়ালো। শিহরনে কেঁপে উঠলো চন্দ্র। শুভ্রতা মুচকি হেসে কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,
~ভালোবাসি।

আর এক পল সেখানে দাঁড়ালো না শুভ্রতা। দ্রুত রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করলো। তখনও চন্দ্র নিজের ঠোঁটে হাত ছুঁয়ে স্তব্ধ হয়ে বসে। তার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে শুভ্রতা এই প্রথম নিজ থেকে তাকে চুমু দিয়েছে। চন্দ্রের গালে লাল আভা ছড়িয়ে পড়লো। সে লাজুক চোখে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো।
~~~
চলবে~

(এইটুকু লিখতে গিয়ে লজ্জায় আমার মরি মরি অবস্থা। আমার বেস্টির অভিযোগ আমি নাকি ওদের শুধু কষ্ট দেই? রোমান্টিক সীন নাকি খুবই কম? নেই বললেই চলে। কি করে বুঝাই এমন সীন লিখতে আমারই লজ্জা লাগে😬 যাই হোক, আর কার কার এমন অভিযোগ ছিল শুনি? এইযে দিলাম রোমান্টিক সীন🥹 এবার খুশি? হ্যাপি রিডিং~)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here