চিরকুটের শেষ কথা

#চিরকুটে_শেষ_কথা

“শান্তা প্লিজ একটু সরে শোবে?এভাবে গায়ের সাথে গা লাগিয়ে থাকলে আমার ঘুম হয়না।আর তুমি রাতে অন্য রুমে গিয়ে ঘুমাবে।এক বিছানাতে দুজন ঘুমাতে খুব কষ্ট হয়।”
দ্বীপের মুখে কোনোদিন এমন কথা শুনবো তা কখনো কল্পনাও করি নি।বিছানা থেকে উঠে রুমের লাইটটা জ্বালালাম।দ্বীপ বিরক্তিরসুরে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
“আবার লাইট জ্বালালে কেনো?”
আমি ওর সামনে দাঁড়ালাম।ওকে বললাম,
“কথা আছে, উঠে বসো।”
“এখন রাত বাজে বারোটা।এখন তোমার কিসের কথা?যা বলার সকালে বলো।এখন লাইটটা অফ করো আর দয়া করে আমাকে ঘুমাতে দাও।”
“তোমার চোখে যে ঘুম নেই তা স্পষ্ট বুঝতে পারছি।তুমি আমার সাথে কথা বলবে নাকি আমি বাসা থেকে বেরিয়ে যাবো?”
দ্বীপ তিরিক্ষি মেজাজে তাকিয়ে উঠে বসলো।চিল্লিয়ে বলল,
“কী সমস্যা বলো?”
“তোমার আমার বিয়ে হয়েছে কতদিন?”
“কেন তুমি জানোনা?”
“তুমি বলো।”
“দুই মাস।আর কিছু?”
“তাহলে বলতে গেলে আমরা সদ্য বিবাবিহত দম্পতি।এই দুই মাসে আমি আর তুমি কতবার স্বামী-স্ত্রীর গভীর সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছি তা তুমি নিশ্চয় হাতে গুণেই বলতে পারবে।আমি একজন নতুন বউ হয়ে আমার স্বামীর থেকে আমার চাওয়া-পাওয়াটা আবদার করতেই পারি।আর আমার তো আবদার করার কথা নয়।এটা তোমারই দেওয়া উচিত।আমি লক্ষ্য করেছি তুমি আজ একমাস যাবৎ আমার সঙ্গে ঠিকমত কথা বলোনা।আর আজ আমাকে তুমি অন্য রুমে গিয়ে ঘুমাতে বলছো!মানে নিজের বউ তোমার সঙ্গে এক বিছানায় ঘুমাবে সেটা তোমার কাছে কষ্টের মনে হয়।এরপরেও কী তুমি আমাকে স্বাভাবিক থাকতে বলছো?”
আমার কথাগুলো শুনে দ্বীপ একদম চুপ হয়ে থাকলো।আমি বললাম,
“কী হলো চুপ করে আছো কেন?”
“আমার ভালো লাগছেনা এই বিষয়ে কথা বলতে।লাইট অফ করো আমি ঘুমাবো।”
“আমার সাথে কথা শেষ না করে তুমি ঘুমাতে পারবেনা।”
“শান্তা আমি ভালোভাবে বলছি আমি ঘুমাবো লাইট অফ করো।”
“বললাম তো না।আমার কথার উত্তর দেবে, তারপর।”
“ধুরঃ।”
দ্বীপ বালিশ নিয়ে উঠে অন্যরুমে চলে গেলো।আমার সঙ্গে দ্বীপের ব্যবহার কোনোদিন এমন হবে আমি স্বপ্নেও ভাবি নি।এই মানুষটাকে বিয়ে করেছিলাম বাড়ির অমতে। সেদিন মানুষটার দু চোখে নিজের প্রতি অফুরন্ত ভালোবাসা দেখে তার হাতটা ধরে চোখ বন্ধ করে চলে এসেছিলাম। এইভাবে অন্ধবিশ্বাস করার পুরষ্কারই কী দিচ্ছে আমাকে আল্লাহ্?রাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে কিছুসময় ধরে ঘরের ভেতর ভাংচুর করলাম, সবকিছু এলোমেলো করে ফেললাম। তারপরো দ্বীপ একটিবার ঘরে এসে উঁকি মেরেও দেখলোনা আমি ঠিক আছি কিনা।এই দ্বীপকে আমি এর আগে কখনো দেখি নি। যে দ্বীপ আমার সামান্য রাতে ঘুম না হলে পাগল হয়ে যেতো আজ সারারাত ঘরের মেঝেতে বসে চোখের পানি ফেলছি তা বুঝতে পেরেও একটিবার ছুটে এসে দেখলোনা।

তিনদিন পর____

দ্বীপ সেদিন থেকে আর আমার কাছে থাকেনা।অফিস থেকে রাত করে বাড়ি ফিরে, খেতে বললে বলে, “খেয়ে এসেছি।” আর তারপর রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।আমিও আর ওকে বিরক্ত করলাম না দু’দিন।আজ থেকে নিজের মনকে শক্ত করলাম। যতটা শক্ত দ্বীপ করেছে তার থেকে বেশি হলাম নিজে।ছুটির দিন, সকাল আটটার মধ্যে খাবার রেডি করে দ্বীপের রুমে গেলাম।কাল রাতে বাইরে থেকে এসে পরনের প্যান্টও খুলে নি। শুধু শার্টটা খুলে আলগা শরীরে ঘুমিয়ে আছে।ওর পাশে গিয়ে বসে নিচু হয়ে ওর খোচা খোচা দাঁড়ি ভর্তি গালের সঙ্গে আলতো করে নিজের গালখানা ঘষতে শুরু করলাম।গলাতে নেমে কয়েকটা চুমুও খেলাম।তখন দ্বীপ একটু নড়ে চড়ে উঠলো।ঘুমের মধ্যেই আমাকে জড়িয়ে ধরে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে লেপ্টে রাখলো।তারপর ওর গালে, কানে, নাকের ডগায় আর চোখের পাতায় আদর করলাম।চোখদুটো বন্ধ রেখেই দ্বীপ বলল,
“ঠোঁটে দিতে কষ্ট হচ্ছে?”
আমি ইচ্ছা করেই ঠোঁট বাদে ঠোঁটের চারপাশে চুমু দিলাম শুধু। দ্বীপ এবার রেগে গিয়ে মুখ সরিয়ে নিলো।আমি ওর কানের লতি আলতো করে ঠোঁট দিয়ে চেপে ধরতেই চোখদুটো খুলে আমার দিকে তাকালো।কপাল কুচকে বলল,
“এসব দুই নাম্বারি আদর আমাকে করবানা।”
“দুই নাম্বারি আদর করলাম কীভাবে?”
“জায়গা ছাড়া অজায়গায় আদর করছো।”
“এখন কী তোমার ঠোঁটে আমার ঠোঁট মানায়?এখন তো ওখানে অন্য কারো…”
কথা শেষ করার আগেই দ্বীপ ঠেলে আমাকে সরিয়ে দিয়ে উঠে বসলো।
“তুমি কী আমাকে সন্দেহ করতে শুরু করেছো?”
“কিছুই করতে শুরু করি নি।দশ মিনিট সময় দিচ্ছি বিছানা ছেড়ে ফ্রেশ হয়ে খাবার খেতে টেবিলে আসবে।”
“পারবোনা, আজকে ছুটির দিন।তাও সকাল সকাল ঘুম ভাঙিয়ে তোমার নাটক করতে হচ্ছে।”
কথাটা বলেই দ্বীপ আবার শুয়ে পড়লো।আমি ওর গাল কামড়ে দিতেই ও “আহ্” বলে চিৎকার করে বলল,
“শান্তা এসব কী ধরনের বেয়াদবি?”
“কী ধরনের তা জানিনা।এখন না উঠলে আরো কয়েক ধরনের বেয়াদবি করবো।এখন ভেবে দেখো, আমার কামড় খাবে নাকি সকালের নাস্তা খাবে?”
দ্বীপ কী উত্তর দেয় সে আশায় আমি চেয়ে আছি ওর দিকে। কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে তারপর বলল,
“তোমার এসব বেয়াদবি সহ্য করার কোনো ইচ্ছা নাই আমার।”
দ্বীপ উঠে ওয়াশরুমে চলে গেলো।কিন্তু আমি জানি এই কথাটি ওর মুখের কথা কেবল।অন্যসময় হলে ও আমাকে টেনে নিয়ে জড়িয়ে ধরে বলতো,
“যতক্ষণ পারো কামড়াতে থাকো।এই সুযোগে তোমার ঠোঁটের ছোঁয়া তো পাবো।”
টেবিলে বসে চুপচাপ ও খেয়ে নিলো।খাওয়া শেষ করার আগে আমাকে বলল,
“আগামী সপ্তাহে আমাকে অফিসের একটা প্রজেক্টের জন্য বসের সঙ্গে বাইরে যেতে হবে।”
“কোথায়?”
“অ্যামেরিকাতে।”
“তোমার বাবা-মায়ের সাথে গিয়ে দেখা করো তাহলে।”
“আমি কী বলেছি আমি তাদের সাথে দেখা করতে যাবো? আমি যাবো আমার অফিসের কাজে।তারপর কাজ শেষ হলে…”
কথাটা সম্পূর্ণ করলোনা দ্বীপ।পানি খেয়ে উঠে রুমে চলে গেলো।টেবিল পরিষ্কার করে আমি ওর রুমে গেলাম।হাতে সিগারেটের খাপ নিয়ে বসে নাড়াচাড়া করছিলো আর কিছু একটা ভাবছিল।আমাকে দেখে খাপ থেকে একটা সিগারেট বের করে ধরাতে গেলো।আমি সিগারেটটা হাত থেকে নিয়ে বললাম,
“আজকাল স্মোক করা তুমি ছেড়ে দিয়েছো।তাহলে এটা নিয়ে আমাকে দেখানোর কোনো প্রয়োজন নেই।”
কেমন গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো দ্বীপ আমার দিকে।মুখটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিয়ে বলল,
“তোমার বাবা আমাকে ফোন করেছিল।”
আমি অবাক হয়ে প্রশ্ন করলাম,
“কী বললো?”
“তারা তাদের জামাই মেয়েকে গ্রহণ করতে চায়।”
কথাটা শুনে আমার খুব খুশি লাগছিলো।কিন্তু তা আড়ালে রেখে বললাম,
“তুমি কী চাও?”
“আমি বলেছি আপনারা আসুন এসে আপনার মেয়েকে দেখে যান।আমার কোনো আপত্তি নেই।আর বলেছি দরকার হলে ওকে আপনাদের কাছে কিছুদিন রাখুন।”
আমি খুব অবাক হলাম।যে দ্বীপ আমাকে বলেছিল,
“এই দুনিয়াতে এখন আমরাই আমাদের সব।কারো প্রয়োজন নেই আমাদের।আমার বাবা-মার সঙ্গে আমিও কোনো যোগাযোগ করবোনা আর তুমিও তোমার বাড়িতে কোনো যোহাযোগ করতে পারবেনা।”
কথা দিয়েছিলাম আমি দ্বীপকে আমি আমার বাবা-মার সঙ্গে কখনো যোগাযোগ করবোনা।আসলে ওর এমন অভিমান হয়েছিল তার কারণ আমাদের বিয়েটা আমাদের দুই পরিবারের কেউই মেনে নিয়েছিল না বলে।আমি এই বিষয়ে দ্বীপকে আর কোনো প্রশ্ন করলাম না।ওকে বললাম,
“রেডি হও।”
“রেডি হবো মানে?”
“বাইরে যাবো।”
“বাইরে যাবে যাও তো আমাকে রেডি হতে বলছো কেন?”
“কারণ তোমার সঙ্গেই যাবো।”
“আমার বাইরে বের হওয়ার কায়দা নাই।আমি এখন ঘুমাবো।”
“ওকে ফাইন, রাতে বাসায় না আসলে কোনো খোঁজ করবেনা।”
কথাটা বলেই আমি রেডি হয়ে বাইরে বেরিয়ে এলাম।তারপরই দেখলাম দ্বীপ কোনোরকমে শার্ট পরে চুলগুলো এলোমেলো করেই বেরিয়ে এলো।রাগ দেখিয়ে বলল,
“কোথায় যাবে চলো।”
“আগে রিক্সা ডাকো।”
রিক্সাতে উঠে রিক্সাওয়ালাকে বললাম,
“মামা সোজা যেতে থাকুন।থামতে বললে শুধু থামবেন।”
দ্বীপ ভ্রু কুচকে তাকালো আমার দিকে।আমি দ্বীপের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে ওর হাতটা আমার কোমরে জড়িয়ে নিলাম।দ্বীপ শুধু আমার দিকে চেয়ে আমার কার্যকলাপ দেখছে। আমি ওর কানে কানে বললাম,
“প্রেম করার সময় একসঙ্গে রিক্সাতে উঠলে মাঝে মাঝে যেমন দুষ্টুমি করে পেটে চাপ দিতে আজ একটু তেমন করোনা?”
দ্বীপ একটু অবাক হয়ে তাকালো এবার।আমি কড়াগলায় বললাম,
“যা বললাম তাই যদি না করো তাহলে এবার রিক্সা থেকে নেমে অন্যদিকে হাঁটা দেবো।”
কথাটি শোনামাত্রই দ্বীপ ভীষণ জোরে আমার পেট চেপে ধরলো।আমি ব্যাথায় উহ্ বলতেই দ্বীপ ছোট করে একটা দুষ্টু হাসি দিয়ে বলল,
“কোনো উহ্ আহ্ করা যাবেনা।চেপে ধরতে বলেছো চেপে ধরবো।আর শব্দ করলে চাপ এবার অন্য জায়গায় দেবো।”
আমি কোনো কথা বললাম না।মনে মনে এত খুশি হলাম যা বলে প্রকাশ করা যাবেনা।কারণ এই দ্বীপটায় ছিল আমার আগের দ্বীপ।যাকে আমি এই একমাস ধরে খুঁজছিলাম।সারা রাস্তা দ্বীপ আমার কোমর জড়িয়ে ধরে পেটের ওপর হাত রেখে বসেছিল।সারাদিন আমরা ঘোরাঘুরি করে রাতে বাইরে খেয়ে বাসায় ফিরলাম।দ্বীপ আজ পুরোনো অভ্যাসবশত আমাদের আগের রুমে এসে শার্টটা খুলে ফ্যান ছেড়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো।আমি বাথরুম থেকে ব্লাউজ আর পেটিকোট পড়ে রুমে এলাম।আমার বিয়ের শাড়িটা হাতে নিয়ে ওর সামনে দাঁড়িয়ে বললাম,
“এটা পরিয়ে দাও।”
দ্বীপ কেমন অবাক হয়ে বলল,
“এখন আবার শাড়ি পরতে হবে কেন?”
“পরিয়ে দিতে বলেছি পরিয়ে দাও।”
“শান্তা প্লিজ, আমি খুব টায়ার্ড।পরার দরকার হলে তুমি পরো। আমি গিয়ে শুয়ে পড়লাম।”
আমি দ্রুত দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে ওর সামনে এসে বললাম,
“তুমি শাড়িটা না পরিয়ে দেওয়া অব্দি এখান থেকে বের হতে পারবেনা।”
দ্বীপ আর কিছু না বলে শাড়িটা পরাতে শুরু করলো আমাকে। আমাদের বিয়ের দিন রাতে দ্বীপ নিজে আমাকে শাড়ি পরিয়ে দিয়েছিল।আর কীভাবে আমি সাজবো সেটাও দ্বীপই আমাকে বলে দিয়েছিল।আর বলেছিল,
“তুমি যখন শাড়ি পরতে চাইবে তখন তুমি আমাকে বলবে। আমি তোমাকে শাড়ি পরিয়ে দেবো।তুমি নিজে কখনো শাড়ি পরবেনা।”
আমি যখন জিজ্ঞেস করলাম,
“কেনো?”
ও বলেছিল,
“কারণ শাড়ি পরানোর সময় তোমার এই মেদহীন পেট দেখতে আমার ভীষণ ভালো লাগে।”
প্রচন্ড লজ্জা পেয়েছিলাম সেদিন ওর কথায়।দ্বীপ নিচু হয়ে বসে শাড়ির কুচিগুলো ঠিক করছিল।কুচিগুলো যখন পেটিকোটের ভেতর গুজতে গেলো তখন আমি খেয়াল করলাম ওর দু চোখ ভেজা।বারবার চোখের পলক ফেলে চোখে পানি ধরে রাখার চেষ্টা করছে যাতে গড়িয়ে না পড়ে।এবার আর নিজের চোখের পানি আটকে রাখতে পারলাম না।ওর মাথায় হাত রাখতেই ও আমার পেটের মাঝে মুখ গুজে কেঁদে ফেললো।আমি কোনো কথা বলতে পারলাম না।ও কোনোরকমে আমায় শাড়িটা পরিয়ে দিয়ে উঠে গেলো।আমি চোখের পানি মুছে ওর কাছে গেলাম। ওকে আমার দিকে ঘুরিয়ে বললাম,
“আমাকে কষ্ট দিয়ে নিজে ভালো থাকতে পারোনা।তাহলে এত নাটক করার কী দরকার?”
“শান্তা মাথা ভীষণ যন্ত্রণা করছে।আমাকে ঘুমাতে দেবে প্লিজ?”
“আমি জানি তুমি নিশ্চয় বুঝতে পেরেছো আমি আজ কী চাইছি?আর তাই এখন তুমি ঘুমের বাহানা দিয়ে দূরে থাকতে চাইছো।কিন্তু আমি আজ তোমাকে কোনোভাবেই দূরে থাকতে দেবোনা।”
“আমি কোনো বাহানা দিচ্ছিনা।আমার সত্যিই খুব খারাপ লাগছে।”
আমি শাড়িটা টেনে খুলে ফেললাম ওর সামনে।তারপর ওকে বললাম,
“ঠিক আছে তুমি ঘুমাও।আর আমি এভাবেই বেলকোনিতে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবো।সামনের ফ্ল্যাটের কিছু ব্যাচেলর ছেলেরা সবসময় উঁকি ঝুকি মারে বেলকোনিতে।আজ আর ওদের উঁকি মারতে হবেনা।আমি নিজেই ওদের দেখার সুযোগ করে দেবো।”
কথাগুলো বলে বেলকোনির দিকে পা বাড়ানোর আগেই দ্বীপ আমাকে টেনে এনে বিছানায় ফেলে দিলো।আর তারপর রুমের লাইটও অফ করে দিলো।

আমি দাঁড়িয়ে আছি এয়ারপোর্টে দ্বীপকে বিদায় জানাতে। দ্বীপের সঙ্গে ওর দুজন কলিগ আর ওর বস কেমন মন ভার করে ওর সঙ্গে দাঁড়িয়ে আছে।দ্বীপ যতক্ষণ অব্দি আমার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল ততক্ষণ আমার হাতটা শক্ত করে ধরে ছিল।আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছিলাম দ্বীপের হাত কাঁপছিল ততসময়। চলে যাওয়ার সময় ও বার বার পিছে ঘুরে আমাকে দেখছিল।আমার চোখে পানি দেখে দূর থেকেই আমাকে আঙুলের ইশারায় দ্বীপ বারণ করেছিল কাঁদতে।

দেড়মাস পর____

অ্যামেরিকা যাওয়ার পর দ্বীপ আমার সঙ্গে টেক্সটে ছাড়া কথা বলতোনা।আজ চারদিন হলো দ্বীপ কোনো টেক্সট করেনা আমায়।আমি নিজে থেকে টেক্সট করলে বলতো,
“আমি টেক্সট না করলে তুমি কখনো করবেনা।”
কিন্তু আজ আর নিজে থেকে না করে পারলাম না।আমাদের ভালোবাসার প্রথম ফসল আসতে চলেছে দুনিয়াতে।এই সংবাদ আমি না জানিয়ে থাকি কী করে?মেসেজটা দেওয়ার জন্য ফোন হাতে নিতেই বাসার কলিংবেল বেজে উঠলো। দরজা খুলতেই দেখলাম আমার শ্বশুড় শাশুড়ি।আমার শাশুড়ি আমাকে দেখেই জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললো।আমার আর বুঝতে বাকি রইলোনা দ্বীপ আমাকে চিরকালের জন্য ছেড়ে চলে গেছে। সেদির রাতে যখন ঘরের মাঝে সব ভেঙে চুরে এলোমেলো করছিলাম তখন দ্বীপের ব্লাড ক্যান্সারের রিপোর্ট আমার হাতে পড়ে যায়।দ্বীপ শেষ ধাপে ছিল।সেদিন বুঝেছিলাম দ্বীপ কেন আমার থেকে দূরে থাকে?নিজেকে শক্ত করতে পুরোপুরি দু’দিন সময় নিয়েছিলাম।ঠিক করে ফেললাম দ্বীপকে আমি বুঝতে দেবোনা আমি সব জানি।তাহলে ও আমাকে না জানিয়ে আমাকে অপূর্ণ রেখে পালিয়ে যেতো।ও চায়নি ওর মৃত্যু আমার সামনে হোক।ও জানতো আমরা কেউ কারো মৃত্যু কখনো নিজে চোখে দেখে সহ্য করতে পারবোনা। কিন্তু আমার দ্বীপটা জানেইনা আমি নিজেকে কতটা শক্ত বানিয়েছি।আমার শাশুড়ি আমার হাতে একটি চিরকুট দিলো।চিরকুটটা খুলে দেখলাম আমার দ্বীপের হাতের লেখা।দ্বীপ লিখেছে,
“শান্তা!এগুলোই আমার বলা শেষ কথা।তুমি জানো? তোমার মুখটা দেখলে আমার বেঁচে থাকার তৃষ্ণা আরো বাড়তো। তাই দূরে চলে এলাম।আমি চেয়েছিলাম না আমার অস্তিত্ব তোমার জীবনে থাকুক।তাই তোমার থেকে দূরে সরে থাকতাম।কিন্তু সেদিন রাতে যখন তুমি নিজেকে অন্যদের দেখানোর জন্য ওভাবে বেলকোনিতে যেতে গেলে তখন বুঝতে পেরেছিলাম আমার জায়গায়া তোমার জীবনে অন্য কেউ আসলে তা আমি মরে গিয়েও সহ্য করতে পারবোনা।এই জীবনে তোমাকে বেশিদিন ভালোবাসার সুযোগ পাইনি। পরকালেও যদি না পাই?তুমি যদি অন্য কাউকে বিয়ে করে তাকেই যদি পরকালে চাও তাহলে আমার কী হবে?আমি ভাবতে পারি না তুমি আমার জায়গায় অন্য কাউকে ভালোবাসবে কখনো, সে তোমাকে শাড়ি পরিয়ে দেবে, তোমার পেট দেখবে, পুরো তুমিটাকেই সে নিয়ে নেবে। সেদিন রাতে তোমার চোখেও পানি দেখে আর আমাকে কাছে পাওয়ার জন্য তোমাকে উতলা হতে দেখে আমি বুঝে গিয়েছিলাম তুমি জেনে গেছো।তুমি আমার অস্তিত্ব ধরে রাখার জন্য আমার সন্তানের মা হতে চেয়েছিলে তা আমি জানি।শান্তা! আমি নিশ্চয় তোমার মনের আশা পূরণ করেছি? বেশি দেরী করোনা।চলে এসো বাবা-মায়ের সাথে।আমার সন্তান আমাকে দেখতে না পাক অন্তত আমার কবরটা যেন দেখে।তাই চলে এসো বাবা-মায়ের সাথে।”

চোখের পানির মাঝেই আমার ঠোঁটে একটা প্রশান্তির হাসি ফুটলো।আমার দ্বীপ জানতে পেরেছে আমার মাঝে ওর অস্তিত্ব বেড়ে উঠছে।চিরকুটের শেষ কথাগুলোই আমার বেঁচে থাকার শেষ সম্বল।চিরকুটটা বুকে জড়িয়ে ধরে বললাম,
“মা! আমি আর বেশিসময় এখানে থাকতে পারবোনা।আমাকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিয়ে চলুন।”

সমাপ্ত____

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here