#ছুয়ে_দেখো_আমার_শহর
#লেখিকা_হৃদিতা_আহমেদ
পর্ব-৩
নতুন পরিবেশে ঠিক কি করবে বুঝতে পারছে না পুতুল।কি করবে ভেবে বেলকনিতে এসে দাঁড়ায়।বেলকনিটা বেশ বড়ো, বেতের দুটো সিঙ্গেল সোফা ও একটা টি-টেবিল দিয়ে সুন্দর করে সাজানো।বেলকনি থেকে সামনের বাগানটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।বাগানে অনেক ধরনের ফুল দেখা যাচ্ছে যার বেশির ভাগই পুতুলের অচেনা।সাদা ফুল গুলো খুব পছন্দ হয়েছে পুতুলের, ছন্দ আসলে নামটা জেনে নিবে।এসব ভাবতেই দরজা নকের শব্দ শুনতে পায় পুতুল।এগিয়ে এসে দরজা খুলতেই দেখতে পায় বড় আব্বু হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছেন।
-“গুড মর্নিং মামুনি” বলেই পুতুলের মাথায় ভালবাসার পরশ একে দেয়।
-“গুড মর্নিং বড় আব্বু”
-“চলো, চলো নাস্তা করতে হবে, বড় আব্বুর ভীষণ ক্ষুধা পেয়েছে।” বলে পুতুলের হাত ধরে নিচে নেমে আসেন।
ডাইনিং এসে দেখতে পায় সব তার পছন্দের খাবার। বড় আম্মু তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,
-” এই ড্রেসটাতে তোমাকে একদম ফেইরি মনে হচ্ছে পুতুল।”
পুতুলের হঠাৎই ভীষণ মন খারাপ হয়ে যায়, তার এই পরীর মতো চেহারা একদম দরকার নেই। সে তো সৃষ্টিকর্তার কাছে বার বার চাই, তাকে যেন সৃষ্টিকর্তা কুৎসিত করে দেন।তার এই সৌন্দর্যের জন্যই তো তার জীবন টা অসহনীয় হয়ে উঠেছে।ভেবেই চোখ ছলছল করে উঠে পুতুলের।বড় আম্মু খাবার জন্য তাড়া দিতেই পুতুল মৃদু হেসে খেতে শুরু করে।
-“ছন্দ!অবাক!,,,,, দুই ভাই-বোনের গল্প শেষ হলে নাস্তা করতে আই দয়া করে।” মিসেস মধুমিতা মাহবুব চেচিয়ে বললেন।মি. মাহবুব তার দিকে তাকিয়ে বললেন,
-” অবাক কখন ফিরলো? ”
-” রাতে এসেছে।”
কথা বলতে বলতেই দেখে ছেলে-মেয়ে একসাথে আসছে।
-” টুকটুকি এভাবে টানাটানি করছিস কেন? পড়ে যাবো তো।” কে শোনে কার কথা ছন্দ ভাইয়ের হাত ধরে হুরপার করে টেনে নামাচ্ছে।ডাইনিং এর সামনে এসে সূর্যের হাত ছেড়ে দৌড়ে এসে পুতুলকে দেখিয়ে বলল,
-“সারপ্রাইজ!!”
ছন্দর আওয়াজ পেয়ে পুতুল সামনে তাকাতেই দেখে তার সামনে একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে।ভালো ভাবে তাকাতেই বুঝতে পারে ছেলেটা দেখতে অনেকটা তার বাবার মতো।কিন্তু ছেলেটা তার দিকে কেমন ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে দেখে পুতুল দ্রুত চোখ নিচে নামিয়ে নেয়।
সূর্য তিনশো ষাট ডিগ্রি এঙ্গেলের শক খেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।নিজেকে বিশ্বাস করানোর জন্য একবার চোখটা বন্ধ করে আবার তাকালো।নাহ,,,, সে ঠিকই দেখছে।কিন্তু প্রশ্ন হলো ক্রায়িং বিউটি তার বাড়িতে কি করে? চিন্তার সুতো কাটে টুকটুকির কথায়,
-” দেখোতো ভাইয়া চিনতে পারো কিনা?”
বোনের কথায় সূর্য বোকার মতো মাথা চুলকিয়ে মায়ের দিকে তাকায় যার অর্থ সে চিনতে পারে নি।মিসেস মধুমিতা হেসে বললেন,
-“অবাক, ও আমাদের পুতুল।আমাদের মিহিরের পুতুল।”
মায়ের কথা শুনে আরেক দফা শক খেয়ে দাঁড়িয়ে আছে সূর্য।দফায় দফায় অবাক হয়ে আজ মনে হয় মায়ের দেওয়া ‘অবাক’ নামটা সার্থক করছে সূর্য।
-“পুতুল, ও অবাক আমার ছেলে।আর তোমার ভাইয়া।”
মায়ের কথা শুনে সূর্যের মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে যায়, মনে মনে রাগ করে হাজার বার বলল আমি মোটেও ওর ভাইয়া নই।পুতুল সূর্যের দিকে তাকিয়ে হেসে বলল,
-” হ্যালো ভাইয়া!”
মনের রাগটা এবার আর ধরে রাখতে পারলো না সূর্য।রেগে বলল,
-“আমাকে ভাইয়া বলবে না, আমি শুধু মাত্র টুকটুকির ভাইয়া।”
সূর্যের কথায় পুতুল মাথা নিচু করে ফেলে।মি. মাহবুব ছেলের কথায় বেশ রেগে গেলেন।
-” অবাক বিহেভ ইউর সেল্ফ, বাচ্চাদের মতো কথা বলছো কেন?”
-“বাবা সরি বাট টুকটুকি ছাড়া কেউ আমাকে ভাইয়া ডাকুক সেটা আমার পছন্দ না।” বলে ধপাধপ পা ফেলে চলে যায় সূর্য।
সূর্যের এহেন কান্ডে সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।মি. মাহবুব অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে আছেন।তার বুদ্ধিমান ছেলে যে কিনা আর্মির স্পেশাল ফোর্সের কেপ্টেন তার এই বাচ্চাসুলভ ব্যবহার ঠিক হজম করতে পারছেন না।ছন্দ মন খারাপ করে পুতুলের গলা জড়িয়ে ধরে বলল,
-“পুতুল আপু, তুমি কষ্ট পেও না।ভাইয়া তোমার সাথে মজা করেছে।একটু পরে দেখো ঠিকই ভাব জমাতে আসবে।”
জবাবে পুতুল মৃদু হাসলো।
মি. মাহবুব চিন্তিত ভাবে ছেলের রুমের দিকে যাচ্ছেন।ছেলে-মেয়েকে ভীষণ ভালবাসেন তিনি, সব সময় বন্ধুর মতো সাপোর্ট করে এসেছেন। কিন্তু ছেলের এহেন আচরণে ভীষণ খারাপ লাগছে।তার কলিজার ভাই মিহিরের একমাত্র আমানত হলো পুতুল।তার সাথে কেউ খারাপ ব্যবহার করলে মোটেও মেনে নিবেন না, সে তার একমাত্র ছেলে হলেও না।কিন্তু একটা ব্যাপার কিছুতেই মাথায় আসছে না, যে ছেলে পুতুল বলতে অজ্ঞান ছিল সে কেন এতো বছর পরে পুতুলকে দেখে খারাপ ব্যবহার করলো।এসব ভেবে ছেলের দরজা নক করেলেন মি.মাহবুব।
দরজা খুলে বাবাকে চিন্তিত মুখে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকে বলল,
-“আমি যখন বলেছি ও আমাকে ভাইয়া ডাকবে না তার মানে ডাকবে না।পৃথিবীর সবাই আমাকে ভাইয়া ডাকবে কিন্তু ও নই।”
মি. মাহবুব বিস্মিত হয়ে বললেন,
-” মানে? ”
সূর্য বাবাকে রুমের মধ্যে টেনে এনে বিছানায় বসিয়ে দেয়।তারপর বাবার সামনে ফ্লোরে বাবু হয়ে বসে বলল,
-” বাবা, নিউইয়র্ক থেকে ফিরে আমি তোমাকে একটা মেয়ের কথা বলেছিলাম মনে আছে? ”
মাহবুব সাহেব চিন্তিত ভাবেই মাথা নেড়ে হ্যা জানালেন।
-” বাবা, পুতুলই সেই মেয়ে।”
ছেলের কথা শুনে মাহবুব সাহেব হো হো করে হেসে দেন। সূর্য কপট রেগে বলল,
-” হাসবে না বাবা, মা তোমাকে ভাইয়া ডাকলে কেমন লাগবে সেটা ভাবো?”
মি. মাহবুব হাসি থামিয়ে ফট করে ছেলের কান ধরে বললেন,
-” বাঁদর ছেলে বাবার সাথে ফাজলামো? ”
-” উহ,,, বাবা লাগছে। ”
————-
-” পুতুল আপু আমার মনে হয় ভাইয়া তোমার উপর অভিমান করেছে।”
ছন্দর কথায় পুতুল বিস্মিত হয়ে তার দিকে তাকায়।ছন্দ গম্ভীর হয়ে বলল,
-” মার থেকে শুনেছি,তুমি জন্মাবার পর ভাইয়া সব সময় তোমার সাথে সাথে থাকতো এমনকি রাতেও তোমার পাশে ঘুমতো।কিন্তু ছোট মা যখন তোমাকে নিয়ে চলে গেল ভাইয়া ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়ে।সুস্থ হবার পরে ভাইয়া নাকি খুব চুপচাপ হয়ে যায়।কারো সাথে ঠিক মতো কথা বলতো না।”
-“আমার মনে হয় তুমি চলে গেছিলে ভেবে ভাইয়া এখনো অভিমান করে আছে।”
-“কিন্তু এতে আমার উপর অভিমান করবে কেন? আমি তো তখন ছোট ছিলাম, আর আমি তো নিজে ইচ্ছায় যায় নি তাইনা?”
পুতুল অবাক হয়ে বলল।ছন্দ ভীষণ চিন্তিত হয়ে বলল,
-” হুম,,,,,এটাও তো ঠিক।”
চলবে