জানি দেখা হবে পর্ব ১১+১২

#জানি_দেখা_হবে ❤
Israt Jahan Tanni ✍
#Part_11
..
ধ্রুবর মা সোফায় বসে নিরবে কাঁদছে আর একা একাই বলছে..
– এতো ভালো ভালো না রে মা। এদিকে নিজের কপাল পুড়াচ্ছিস অন্যদিকে নিজের স্বামীর বাসর সাজাচ্ছিস। তুই কি দিয়ে তৈরি রে মা? কিভাবে সহ্য করছিস তুই এগুলো?
বাসর সাজানো প্রায় শেষ হয়ে গেছে। দরজাটা লক করে বাইরে বের হয়ে শাশুড়ির পাশে এসে বসলো তারা। কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বললো..
– কাঁদছেন কেন মা? আজ আপনার ছেলের বাসর রাত। আমার বোনের বাসর রাত। আমাদের তো খুশি থাকার কথা। কাদবেন না প্লিজ মা।
– আমার ছেলেটা বুঝতে পারলো না রে মা। ও হীরের টুকরো রেখে কাঁচের উপর মা দিচ্ছে। কখনো সুখী হবেনা এই মেয়েকে নিয়ে ও।
– এভাবে বলবেন না মা। ওরা সুখে থাকুক এটার আমার কাম্য।
তারাকে নিজের বুকে জড়ালো ধ্রুবর মা। মাথায় হাত রেখে বললো.
– দোয়া করি মা, এই অশুভ মেয়েটার ছায়া যেনো তোর উপর না পরে। তুই যেনো অনেক বড় হোস। অনেক বড়।
..
সারাদিন বাসায় ছিলানা ধ্রুব। রাত ১১ টায় বাসায় ফিরলো ও। তারা গিয়ে দরজাটা খোলে দিতেই ভিতরে ঢুকলো ধ্রুব। ভিতরে ঢুকে সামনে এগুতে নিলেই তারা পিছন থেকে বললো..
– ঘরে নতুন বউ রেখে কেউ এতো রাত করে বাইরে থাকে?
তারার কথায় দাড়ালো ধ্রুব। অবাক হয়ে বললো
– মানে?
– অনেক্ষন ধরে তুরিন আপনার অপেক্ষা করছে। কোথায় ছিলেন এতোক্ষন? যান , আগে ওর সাথে দেখা করে আসুন।
ধ্রুব তারার দিকে তাকিয়েই নিজের ঘরের দিকে এগুতে লাগলো। কেন যেনো তারার মুখটা খুব শুকনো লাগছে। ধ্রুব নিজের ঘরে যেতে নিলেই ধ্রুবকে থামিয়ে দিয়ে বললো..
– ও ঘরে না, এ ঘরটায় আছে তুরিন।
ধ্রুব আর কিছু বললো না। সোজা পাশের রুমটায় গিয়ে ঢুকলো। তুরিন শুয়ে আছে। তুরিনকে ডেকে বললো..
– তুরিন..
ধ্রুবর ডাকে তুরিন পাশ ফিরে তাকালো। কিন্তু উঠলো না। শুয়ে থেকেই বললো..
– কিছু বলবে?
– এখানে শুয়ে আছো কেন? আমাদের রুমে শুয়ে থাকতে।
এই কথায় তুরিন উঠে বসল। ন্যাকামো করে বলতে লাগলো..
– ও আমাকে ওই ঘরে ঢুকতে দিলে তো।
– কে ঢুকতে দেয়নি তোমাকে?
– কে আবার, তোমার আগের বউ।
– তারা তোমাকে রুমে ঢুকতে দেয়নি?? কিন্তু আজই তো বলেছিলাম ও ঘরে আমরা থাকবো।
– এখন দেখছো তো ও কেমন মেয়ে? তুমি বলার পরেও ও ঘরে আমাকে ঢুকতে দেয়নি। বরং ঘরটা লক করে রেখেছে।
– ঠিকআছে, আমি দেখছি। তুমি খেয়েছো?
– অনেক আগেই খেয়েছি।
– আচ্ছা, তুমি থাকো এখানে। আমি আসছি।
.
ধ্রুব বের হয়ে গেলো। তুরিন ডাইনিং এ খাবার সাজাচ্ছে। ধ্রুবকে বেরোতে দেখে বললো.
– খাবার রেডি করেছি। ফ্রেশ হয়ে আসুন।
– সবসময়ই তো রুমেই খাবার দাও। আজ এখানে কেন?
– আজ রুমে খাবার দেওয়া যাবেনা।
– কেন? রুমে দেওয়া যাবেনা কেন? তুরিনকেও ও রুমে ঢুকতে দাও নি। সমস্যা কি তোমার? সকালে কি বলেছিলাম মনে নেই তোমার?
– সব মনে আছে। আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন।
ধ্রুব আর কথা বাড়ালোনা। ফ্রেস হয়ে এসে খেতে বসলো। অর্ধেক খাওয়া হলে ধ্রুব তুরিনের দিকে তাকালো। শুকনো মুখটা দেখে বললো..
– তুমি খেয়েছো?
– আমি কখনো আপনার আগে খাইনি। অন্যদিকে তাকিয়ে বললো তারা।
ধ্রুব অবাক চোখে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে আবারও খাওয়া শুরু করলো। খাওয়া শেষে নিজের রুমের দিকে পা বাড়াতেই মনে হলো দরজাটা লক। আচমকাই মাথা গরম হয়ে গেলো ওর। চেচিয়ে ডাকতে লাগলো তারাকে। তারা এসে বললো
– কি হয়েছে?
– দরজাটা এখনো লক। মানা করেছিলাম বলে কি লক করে নিজের দখলে রাখবে মনে হয়?
– আস্তে কথা বলুন। বাবা মা ঘুমোচ্ছে। উঠে যাবে।
– উঠুক। উঠে দেখুক তাদের আদরের বউমা কতোটা স্বার্থপরায়ন। কতোটা হিংসুটে। মা বাবা উঠে দেখুক আমি আর তুরিন যেনো এই রুমে থাকতে না পারি তাই রুমটাই দখল করে রেখেছে।
তারা ছলছল চোখে তাকালো ধ্রুবর দিকে। বললো..
– আপনি তুরিনকে নিয়ে আসুন এখানে।
– কেন? সারারাত কি ওকে নিয়ে এখানে থাকবো?
তারা কিছু বললো না। ধ্রুবকে তুরিনকে আনতে পাঠিয়ে নিজে গিয়ে রুমটা খোললো।
.
রুমে ঢুকেই অবাক হয়ে গেলো ধ্রুব। অবাক হয়ে দেখছে পুরো ঘরটাকে। পুরোটা ঘর ফুল দিয়ে সাজানো। স্পেশালি খাটের চারপাশটা গোলাপ আর হাসনাহেনা দিয়ে সাজিয়েছে। খাটের সামনের দেওয়ালে সুন্দর করে লেখা.. ধ্রুব + তুরিন। নামের পাশে আবারও জুই ফুল দিয়ে সাজানো। ধ্রুব সবকিছু অবাক হয়ে দেখে তারার দিকে তাকালো। তারার চোখগুলো ছলছল করছে। ধ্রুব শান্ত গলায় বললো
– এগুলো তুমি করেছো?
– হ্যাঁ। অন্যদিকে ফিরে বললো তারা।
– এই জন্যই রুমটা লক করা ছিলো?
এই প্রশ্নে তারা কিছু বললোনা। কথা বললেই যেনো কেদে দিবে। তাই চুপ থাকলো।
পাশ থেকে তুরিন বাকা কন্ঠে বলে উঠলো..
– এতোগুলো বকশিশের কথা শুনলে কার না লোভ হয়? ওর ও হয়েছে। তাই এভাবে সাজিয়েছে।
তারা একবার তুরিনের দিকে তাকিয়ে বললো..
– টাকার লোভে যদি কেউ অন্যের স্বামীকে বিয়ে করতেও দ্বিধা করেনা, তাহলে আমি বাসর সাজিয়ে বেশি কিছু অন্যায় করিনি হয়তো।
তারার এই কথায় তুরিন তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো। ধ্রবকে বললো
– দেখলে ধ্রুব, ও কিন্তু আমাকে কথাটা মীন করে বললো। আর তাও তোমার সামনে। তুমি কিছু বলবে নাকি?
– দেখো তারা, আমরা দুজন দুজনকে ভালোবাসি। খুবই ভালোবাসি। তুরিন ও আমাকে ভালোবাসে আর তাই আমাদের বিয়েটা হয়েছে। তোমার যদি এরপরও আমাকে আর ওকে নিয়ে কোনো সমস্যা থাকে তাহলে তুমি চলে যেতে পারো এখান থেকে। আমাদের কারো কোনো সমস্যা হবেনা। তারা ছলছল চোখে ধ্রুবর দিকে তাকালো। কিন্তু কিছু বললোনা। তখনই সেখান থেকে চলে গেলো পাশের রুমটাতে।
..
পাশের রুমটাতেই নিজের প্রাণপ্রিয় স্বামীর বাসর হচ্ছে নিজেরই ছোট বোনের সাথে। ভাবতেই বুকটা ফেটে যাচ্ছে তারার। একি কপাল নিয়ে জন্মেছে ও। মা কে হারিয়ে একা হয়ে গেছিলো তারা। ওর একাকিত্ব ঘুচনোর জন্য বাবা আরেকটা বিয়ে করলো। কিন্তু সেই বিয়ে নিজের বাবার থেকেও আলাদা করে দিয়েছে তারাকে। শেষে ঠাঁই পেলো মামার বাসায়। মামা নিজের বাবার থেকেও বেশি আদর করেছে তারাকে। মামী কখনো ভালো ব্যাবহার করেছে কখনো বা খারাপ। সেটা আমলে নেয়নি তারা। ভেবেছিলো বিয়ের পর হয়তো বন্দিপনা জীবন থেকে মুক্তি পেয়ে স্বামীকে নিয়ে সুখে থাকবে। কিন্তু সুখ যে সবার কপালে সয় না।
..
সকাল ৯:০০ বেজে গেছে।
ধ্রুব আর তুরিন কেউই এখনো উঠেনি। তারা রান্নাবান্না শেষ করে টেবিল সাজাচ্ছে। এমন সময় বেরিয়ে এলো ধ্রুব। সদ্য গোসল করে এসেছে ও। তারা অনেক কষ্টে মনের কষ্ট চাপা দিয়ে মুখে হাসির রেখা টানলো। বললো
– আপনি একা যে, তুরিন কোথায়? খাবার রেডি করেছি তো।
ধ্রুব কিছুটা ইতস্তত বোধ করলো। তারা সেটা বুঝতে পেরে বললো
– কোনো সমস্যা হয়েছে কি?
– নাহ মানে, তুরিন এখানে খাবেনা। ওর খাবার টা রুমে নিয়ে যেতে এসেছি আমি।
– কেন? ও এখানে খাবেনা?
– নাহ, সবার সামনে খেতে ওর সমস্যা হবে।
– একি কথা, দুদিন হতে না হতেই এখনোই আলাদাভাবে খেতে চায় তোর বউ? পাশ থেকে বলে উঠলো ধ্রুবর মা।
– আহ মা, ও তো সবেমাত্র এসেছে। হয়তো লজ্জা পাচ্ছে। আমি খাবার রেডি করে দিচ্ছি। আপনি নিয়ে যান।
..
সারাদিন ঘর থেকে বের হয়নি তুরিন। ধ্রুব বাইরে গিয়েছিলো। কিছক্ষন আগেই ফিরেছে । ফিরেই রুমে গিয়ে ফ্যানটা ছেড়ে বসলো ও। তুরিন বিছানার এক কোনে বসে ফেইসবুকিং করছিলো। ধ্রুব গিয়ে এক পাশ থেকে তুরিনকে জরিয়ে ধরলো। তুরিন নড়লোনা। ধ্রুব শান্ত গলায় বলল..
– সারাদিন পর মাত্র ফিরলাম, আমার দিকে একবার তাকালেও না পর্যন্ত।
ধ্রুবর কথায় ফোনটা হাত থেকে রাখলো তুরিন। বললো
– sorry, ভুল হয়ে গেছে। ফেইসবুকিং করছিলাম তো।
– আমি পাশে থাকলে কিচ্ছু করবেনা Ok..
– ok, বলেই ধ্রুবকেও আলতোভাবে জরিয়ে ধরলো তারা।
হটাৎ ই তারা রুমে ঢুকে পরলো। ওদের এই অবস্থায় দেখে থমকে গেলো ও। তারাকে দুজনেই ভুত দেখার মতো চমকে গিয়ে দুজন দুজনকে ছেড়ে দিলো।
তুরিন রেগে গিয়ে বললো..
– কারো রুমে আসলে দরজায় নক করতে হয়, সেটা কি তোমার জানা নেই?
– বরের সাথে রোমান্স করতে গেলে দরজা লক করতে হয়, সেটা কি তোর জানা নেই? মুখের উপর ঠাস করে উত্তর দিয়ে দিলো তারা।
.
তারার এমন উত্তরে জলে যাচ্ছে তুরিন।
তারা বললো
– ভুল সময়ে আসার জন্য আমি দুঃখিত.। আমি যাচ্ছি। বলেই ফিরে যেতে গিয়েও আবার ঘুরে দাড়ালো তারা। ধ্রুবকে উদ্দেশ্য করে বললো..
– আপনি বাইরে থেকে এসেছেন তো, তাই আপনার কিছু লাগবে কিনা সেটাই জানতে এসেছিলাম। আসলে আমার মনেই ছিলোনা আপনার যে এখন আরেকটা বউ আছে। বহুদিনের অভ্যাস তো…
এতোটুকু বলে তারা আর দাড়ালো না। সোজা নিজের ঘরে চলে গেলো। চোখের কোনায় ওর পানি জমে গেছে। সেটা ধ্রুবর নজরে পরলোনা।
..
– দেখছো, কতোটা হিংসুটে মেয়ে ও?
– কে?
– কে আবার, ওই তারা। জানে তুমি এসেছো.. তাই ফন্দি করেই চলে এসেছে, যেনো তুমি আমাকে ভালোবাসতে না পারো।
– বাদ দাওনা, ও তো বলেছেই ভুল করে চলে এসেছে। আর আমাদের ও ভুল হয়েছে। দরজা লক না করে এভাবে জড়িয়ে ধরে বসে থাকা উচিত হয়নি।
– হয়েছে হয়েছে, ওর হয়ে আর উকালতি করতে হবে। এখন বলো, আমরা হানিমুনে যাবো কবে আর কোথায় যাবো?
– তুমিই বলো কোথায় যাবে?
..#জানি_দেখা_হবে ❤
Israt Jahan Tanni ✍
#Part_12
..
– হয়েছে হয়েছে, ওর হয়ে আর উকালতি করতে হবে না। এখন বলো, আমরা হানিমুনে যাবো কবে আর কোথায় যাবো?
– তুমিই বলো কোথায় যাবে?
– আমি যেখানে বলবো সেখানেই যাবে?
– অবশ্যই।
..
বাবা পেপার পরছিলো সোফায় বসে। ধ্রুব এসে বাবার পাশে বসলো। বাবা আড়চোখে একবার ছেলের দিকে তাকালেন। তারপর আবার পেপারে চোখ বুলাতে বুলাতে বললেন..
– কিছু বলবি?
– হ্যাঁ বাবা।
– বলে ফেল।
– তুরিন বলছিলো ওকে নিয়ে কোথাও যাওয়ার জন্য।
– তো?
– ও লন্ডন যেতে চায়।
– আমি কি করতে পারি? পেপারের দিকে তাকিয়ে বললেন উনি।
– কিছু না। তোমার কাছ থেকে পারমিশন নেওয়ার জন্য আসছি।
বাবা এবার পেপার থেকে চোখ সরিয়ে ধ্রুবর দিকে তাকালেন। বললেন
– জীবনে কখনো কোনো কাজে আমার পারমিশন নিয়েছিস? ইনফ্যাক্ট, যাকে নিয়ে বেড়াতে যাওয়ার পারমিশন নিতে আসছিস তাকে বিয়ে করার পারমিশন পর্যন্ত আমার কাছ থেকে নিস নি। অনেকবার তোকে পারমিশন দিয়েছি, তারা মাকে নিয়ে কোনো জায়গা থেকে বেড়িয়ে আসতে। তখন কি আমার পারমিশন গ্রহণ করেছিস?
তাহলে আজ কেন এতো ভালোমানুষি দেখাতে আসছিস আমার কাছে?
বাবার কথার কোনো উত্তর দিতে পারছেনা ধ্রুব। তাই মাথা নিচু করে বসে আছে।
.
– কি হলো, মন খারাপ করে বসে আছো কেন?
– এমনি।
– এটা একটা কথা হলো? আমরা হানিমুনে যাচ্ছি, তাও লন্ডনে । কোথায় তুমি খুশি থাকবে। নাহ বাবু, মন খারাপ করে বসে আছে হুহ
– আমরা যাচ্ছিনা কোথাও।
– মানে কি? কিছুটা রেগে বলল তুরিন।
– মানেটা কিছুই না। যাচ্ছিনা মানে যাচ্ছিনা। ব্যস
– তুমি আমার সাথে রাগ দেখাচ্ছো? বলেই ন্যাকা কান্না শুরু করলো তুরিন। কেন জানি তুরিনের এই ন্যামাকি ধ্রুবর কাছে অসহ্য লাগছে। তাই রুম থেকে বেরিয়ে বাইরে চলে যেতে লাগলো। ড্রয়িং রুম পেরিয়ে যেতে নিলেই পিছন থেকে তারা বললো..
– না খেয়েই কোথায় যাচ্ছেন?
তারার কথায় ধ্রুব সাড়া দিলোনা। নিজের মতো যেতে লাগলো ও।
তারা ধ্রুবর সামনে গিয়ে দাড়ালো। ধ্রুব কপাল কুঁচকে তারার দিকে তাকালো। তারা বললো
– যেখানেই যাবেন যান, তবে খাওয়া দাওয়া করে তারপর।
– বলেছিনা, বেশি অধিকার ফলাতে আসবেনা।
– অধিকার না, এটা আমার কর্তব্য।
– অধিকার আর কর্তব্য ফলানোর জন্য আমার তুরিন আছে। তোমাকে এতো কিছু ভাবতে হবেনা।
ধ্রুব চলে গেলো। তারা আশাহত চোখে ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।
.
কিছুদিন পার হয়ে গেলো।
রাত বাজে ১০ টা। ধ্রুব এখনো বাসায় ফিরেনি। সেটা নিয়ে তুরিনের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। ও তো ফেইসবুকিং আর ফোনে কথা বলেই সময় পার করছে। কার সাথে যে এতো কথা বলে সেটা কিছুতেই বুঝতে পারছেনা ধ্রুবর মা। শেষে গিয়ে জিজ্ঞাসা করেই ফেললো
– তুমি সারাদিন কার সাথে এতো কথা বলো? আর এতো রাত করেই বা কার সাথে কথা বলছো?
– কেন?
– এটা ভদ্রলোকের বাসা। এ বাসায় তোমার শশুর শাশুড়ি নামের দুইটা প্রাণী আছে সেটা কি ভুলে গেছো?
– কিছুই ভুলি নি।
– তাহলে বেহায়ার মতো এভাবে কার সাথে কথা বলো সারাদিন সারারাত?
শশুড়ির কথা জ্বলে উঠলো তারা। বললো
– কি বললেন আপনি? আমি বেহায়া?
– শুধু বেহায়া না। চরম বেহায়া। এ বাড়িতে থাকতে গেলে ভালোভাবে থাকতে হবে।
শাশুড়ির কথায় কি বলবে কিছু বুঝতে পারছেনা তুরিন। হটাৎ আচমকাই বললো
– এ বাড়ির একমাত্র উত্তরাধিকার কে?
– কেন, আমার ছেলে।
– তার মানে, সমস্ত সম্পদ, ফ্যাক্টরি, বিজনেস, এ বাসা সবকিছুর মালিক ধ্রুবই হবে।🙃
– হ্যাঁ, ভবিষ্যতে হবে।
– তার মানে হলো, ধ্রুবর বাসায় আপনারা আছেন,আর ধ্রুবর বাসা মানে, আমার বাসা। এটার আরেকটা মানে হলো, আমার বাসায় আপনারা আছেন। আপনারা যদি আমার বাসায় থাকতে পারেন তাহলে আমার বাসায় আমি যা খুশি যা করব। কেউ কিছু বলতে পারবেনা আমাকে। চোখ রাঙ্গিয়ে বললো তুরিন। তুরিনের এমন কথায় ধ্রুবর মা যেনো বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছে। তিনি ভাবতেও পারছেন না, কিভাবে বলতে পারে এই মেয়ে এগুলো।
..
এতোক্ষন শাশুড়ির পিছনে দাড়িয়ে সবকিছু শুনছিল তারা। মাথাটাই গরম হয়ে গেলো ওর। আচমকাই এসে তুরিনকে কষিয়ে দুটো চর বসিয়ে দিলো তারা। আর তখনই আগমন ঘটলো ধ্রুবর। এমনিতেই সারাদিনের ধকলে মন মেজাজ ভালনা, তার উপর তুরিনকে এভাবে মারতে দেখে মেজাজটা আরো বিগড়ে গেলো ওর।
তুরিন গালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে। ধ্রুবকে আসতে দেখেই কান্নাকাটি শুরু করে দেয় ও।
.
ধ্রুব ধীরে ধীরে সামনে আসলো। তারার সামনে দাড়ালো। তারা অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। ধ্রুব তারাকে উদ্দেশ্য করে বললো..
– তোমার সাহস হয় কি করে ওকে এভাবে মারার? কেন মেরেছো ওকে?
– ওকেই জিজ্ঞাসা করুন আমি ওকে কেন মেরেছি। শক্ত গলায় বললো তারা।
ধ্রুব তুরিনের সামনে গিয়ে বললো
– ও তোমাকে কেন মেরেছে?
তুরিন কাঁদতে কাঁদতে বললো..
– ফোনে টাকা ছিলোনা। তাই আপুকে বলেছিলাম ওর ফোনটা একটু দেওয়ার জন্য। মায়ের সাথে কথা বলবো। তখনই তোমার মা এসে বলল, টাকা নাকি গাছে ধরে না। কথা বলতে হলে যেনো কামাই করে তারপর বলি, আর নাহয় বাবার বাসা থেকে টাকা নিয়ে এসে যেনো খরচ করি।
.
আমি বললাম ধ্রুবর টাকায় তো আমারও অধিকার আছে। অধিকারের কথা বলাতে আপু রেগে গিয়ে বলে সব অধিকার নাকি ওর। আমার কোনো অধিকার নেই। আমি এর বিরোধীতা করেছি বলেই আমাকে চর মারলো ও। তুরিনের এমন কথায় অবাক হয়ে গেলো তারা। সাথে ধ্রুবর মাও। একটা মেয়ে কিভাবে পারে এতো মিথ্যা বলতে। ধ্রুব তুরিনকে শান্তনা দিয়ে তারার দিকে এগিয়ে গেলো। তারার নজর তখনও তুরিনের দিকে। ধ্রুব গিয়ে তারাকে থাপ্পড় দিতে যাবে তখনই ওর হাত ধরে ফেলল মা। বললো
– কিছু না জেনেই ওকে মারতে যাচ্ছিস?
– আমি সবটা শুনেছি।
– ও মিথ্যা বলেছে। সবটা মিথ্যা বলেছে। এখানে তারার কোনো দোষ নেই।
ধ্রুব মাকে উদ্দেশ্য করে বলল
– এটা আমাদের স্বামী স্ত্রীর ব্যাপার মা। এখানে তোমার নাক না গলালেও চলবে। তারপরও যদি এমন করো, আমি ভুলে যাবো যে আমাদের মধ্যে মা ছেলের সম্পর্ক আছে।
ছেলের কথায় থমকে গেলেন মা। কি বলে তার ছেলে। দুদিনের একটা মেয়ের জন্য মা ছেলের সম্পর্ক ভুলে যেতে চায় ও। ভাবতেই ঘৃণা লাগছে উনার।
..
তারা মায়ের হাতটা ধরে বললো
– চলে আসুন মা, আপনার ছেলে আর আপনার নেই। উনি এখন উনার বউয়ের বাধ্য স্বামী হয়ে গেছে। মাকে নিয়ে চলে এলো তারা। তারপর যে যার রুমে চলে গেলো।
তুরিন বিছানায় বসে আছে নাক ফুলিয়ে। ধ্রুব ওকে নানাভাবে শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছেনা। ধ্রুব বললো
– প্লিজ, এবার রাগটা তো কমাও। কি করবো আমি বলো।
– আমি চলে যাবো এখান থেকে। সবকিছু ছেড়ে তোমার কাছে এসেছি সবার এতো অপমান সহ্য করার জন্য নয়।
– এমন করেনা লক্ষিটি প্লিজ। তুমিতো জানোই তোমাকে আমি কতোটা ভালোবাসি। তুমি চলে গেলে আমি কিভাবে থাকবো।
.
– আমাকে চাও তুমি?
– নিজের থেকেও বেশি।
– তাহলে তোমার একজনকে বেছে নিতে হবে।
– মানে?
– হয়তো আমাকে নয়তো তারাকে। এবার বলো কাকে চাও তুমি?
– অবুঝের মতো বলছো কেন। প্লিজ শান্ত হও।
– বলেছি তো, হয়তো আমাকে রাখবে নয়তো তারাকে। ও এ বাড়িতে থাকলে আমি এখানে থাকবোনা।
– কি বলছো তুমি? এটা কিভাবে সম্ভব?
– সম্ভব নাহলে আমি চলে যাবো। অন্যদিকে ফিরে বললো তুরিন।
ধ্রুব দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দাড়ালো। বললো…
– তোমাকে কোথাও যেতে হবেনা। আমি দেখছি কি করা যায়।
ধ্রুব রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। বেরোতেই তুরিন ফোনটা হাতে নিলো। ফোন করলো একটা নাম্বারে।
– হ্যাঁ তুষার
– বলো। কাজ হলো কিছু?
– ওই তারার জন্য আগাতে পারিনি। তবে এখন মনে হয় কাজ হয়ে যাবে।
– হলেই ভালো, নাহলে মনে রেখো, আমার জীবনে তোমার ঠাঁই হবেনা।
– এভাবে বলোনা, তোমার সাথে ভালোভাবে থাকার জন্যই তো এতোকিছু করছি।
– রাখছি bye।
ফোনটা রেখে দিলো তুষার। তুরিন ফোনের দিকে তাকিয়ে নিজে নিজেই বলতে লাগলো..
– ওই তারার জন্য যদি আমি আমার উদ্দেশ্য সফল করতে না পারি, তাহলে ওকে আমি ছাড়বোনা। হুহ..
.
তারা নিজের রুমে শুয়ে আছে আর অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে। যেভাবেই হোক, ওতো আমার স্বামী। তাহলে কেন ও আমাকে বুঝতে পারেনা। কেন আমাকে একটুও বুঝার চেষ্টা করেনা? ভাবতে পারেনা তারা। দরজায় নক পেয়ে উঠে দাড়িয়ে চোখমুখ টা ভালোকরে মুছে নিলো তারা। পরনের শাড়িটা ঠিক করে দরজাটা খোলতেই অবাক হয়ে গেল ও। যে ধ্রুব ওর রুমের দিকে তাকায় পর্যন্ত না, ও আজ এতো রাতে স্বশরীরে এসে হাজির হলো তারার রুমে।
তারাকে পাশ কাটিয়ে ভিতরে ঢুকলো ধ্রুব। তারা বললো
– বসুন,
– বসতে আসিনি আমি তোমার রুমে। কঠোর স্বরে বলল ধ্রুব।
– তাহলে কেন এসেছেন?
– মুক্তি নেওয়ার জন্য এসেছি।
– মানে? অবাক হয়ে বললো তারা।
– তোমার কাছ থেকে আমি মুক্তি চাই, বুঝেছো? তোমার জন্য আমি আর তুরিন কেউই সুখে নেই। প্লিজ আমাকে মুক্তি দাও।
– কি বলছেন আপনি এইসব? আমিতো আপনাদের মাঝে কোনো বাধা দেইনি।
– তুমি নিজেই তো একটা বাধা, নতুন করে আর কি বাধা দিবে তুমি?
তারা কেদে দিলো। বললো..
– এমন করবেন না প্লিজ, আমাকে তাড়িয়ে দিবেন না।
– তোমাকে তাড়িয়ে দিতে তো আসিনি। তুমি নিজেই চলে যাবে আমাকে মুক্তি দিয়ে।
– কোথায় যাবো আমি? আর তাছাড়া এখন আমি মা…
এতোটুকু বলতেই ধ্রুব ওর কথায় বাধা দিয়ে বললো..
– এখন কি? মাকে ডাকবে তাইতো? ডাকোনা.. দেখি মা তোমাকে কিভাবে আটকায়।
তারার অসম্পুর্ণ কথা অসম্পুর্ণই থেকে গেল। যেচে আর কিছু বললোনা ও। তারা শক্ত গলায় বললো
– আমি চলে গেলে আপনারা সুখী হবেন?
– খুব।
– তাহলে তাই হবে।
ধ্রুব আর কিছু বললনা। বেরিয়ে গেলো। তারা ধপাস করে বিছানায় বসে পরলো। কি হবে এখন তার? এই অনাগত সন্তান কে নিয়ে ও কোথায় যাবে?
তখনই ধ্রুব আবারও ফিরে এলো তারার রুমে। ওকে দেখে তারার চোখদুটো জ্বলজ্বল করতে লাগলো। এই বুঝি ও বলবে তোমাকে কোথাও যেতে হবেনা। তুমি এখানেই থাকবে, এ বাড়িতেই থাকবে।
কিন্তু তারার সমস্ত চিন্তা বৃথা করে দিয়ে ধ্রুব বললো.
– আমার কথায় যে চলে যাচ্ছো এটা যেনো তোমার আর আমার মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকে। কোনো কাকপক্ষিতেও যেনো টের না পায়।
..
To be Continued ……
To be Continued ……

.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here