জানি দেখা হবে পর্ব ৯+১০

#জানি_দেখা_হবে ❤
Israt Jahan Tanni ✍
#Part_09
..
রাত ১২:৩০
তারা এতোক্ষন সজাগ থাকলে এতোক্ষনে তন্দ্রা লেগে এলো ওর। ক্ষাণিক সময়ের জন্য বিছানায় গা এলিয়ে দিলো তারা। মুহুর্তেই ঘুমিয়ে গেলো ও।
কিছুক্ষন পর বাসার কলিংবেল বাজলো। বাজছে তো বাজছেই। কেউ খোলছে না। মাতাল অবস্থায় দরজায় ধ্রুব কয়েকটা লাথি দিলো। তখনই দরজাটা খোলে গেলো। ভালো করে লক করা ছিলোনা তাই। দরজাটা লাগিয়ে মাতলামো করতে করতে রুমে এলো ধ্রুব। ভিতরে ঢুকেই সামনে ঘুমিয়ে থাকা তারাকে দেখে মাথাটা হ্যাং হয়ে এলো ধ্রুবর। ঘুমন্ত তারাকে দেখে ধ্রুবর নেশা ধরে গেলো। ধ্রুব মাতাল অবস্থায় ঘুমন্ত তারার দিকে এগিয়ে গেলো। তারার সামনে বসে ওর ঘুমন্ত চোখ মুখে , ঠোঁটে হাত বুলাতে লাগল ধ্রুব। সাথে সাথে ঘুম ভেঙ্গে গেলো তারার। তারাতা‌ড়ি উঠে বসে বলতে লাগলো..
– আপনি আপনি এখানে? কখন এলেন?
– চুপ সুন্দরী। এখন কোনো কথা হবেনা। বলে ধীরে ধীরে তারার দিকে এগুতে লাগলো ধ্রুব। তারা ভয়ে ভয়ে পিছাচ্ছে আর বলছে, কিক কি করছেন আপনি? আপনি এখন হুশে নেই। প্লিজ এমন করবেন না। আমি তো আপনার স্ত্রী, আপনি যখনই আমাকে চাইবেন, পাবেন। কিন্তু এখন আমাকে ছেড়ে দিন।
– তুই নাকি আমার তুরিনের থেকেও ভালো। দেখি তুই কতোটা ভালো।
– এইসব কি বলছেন আপনি? আমি আপনার স্ত্রী।
.
ধ্রুবর কানে এসব কিছুই ঢুকলো না। সে সবকিছু ভুলে গিয়ে তারাতে মেতে উঠলো।
সকালে ঘুম ভাংলে তারা উঠে ফ্রেশ হতে গেলো। আজ ওর জন্য অনেক খুশির দিন। কিন্তু সে খুশি হতে পারছেনা। সবটাই যে ধ্রুবর অজান্তে হয়েছে।
অনেক বেলা করে ঘুম থেকে উঠলো ধ্রুব। চোখ কচলাতে কচলাতে উঠে বসলো ও। হটাৎ ই নিজের শরীরের দিকে তাকিয়ে স্তব্ধ হয়ে গেলো। সারা শরীরে খামছির দাগ। চিন্তা কাজ করতে লাগলো ওর মাথায়। শরীরে এতো দাগ কেন? কি হয়েছিলো রাতে। ঝাপসা ঝাপসা মনে হতে লাগলো ধ্রুবর। একসময় সবটায় মনে হয়। এরপরই ধ্রুব কেমন বিচলিত বোধ করতে থাকে। এমন টা করা উচিৎ হয়নি ও। গতকাল বন্ধুদের কথায় রাগ হয়ে ইচ্ছামতো মদ গিলেছে ও । তাই এখন এই অবস্থা। এখন তারাকে কি বলবে ও? অস্বস্তি বোধ করছে ধ্রুব। এমন সময় তারা রুমে এলো। ধ্রুবকে বসে থাকতে দেখে বললো..
– কখন উঠছেন?
কিছু বললো না ধ্রুব। তারা আবারও বললো..
– অনেক বেলা হয়ে গেছে। ফ্রেশ হয়ে আসুন। খাবেন।
– আমাকে মাফ করে দিও। অন্যদিকে তাকিয়ে বললো ধ্রুব।
তারা কিছুটা অবাক হয়ে বললো
– কেন?
– গতরাতের জন্য। আসলে ড্রিংকস করেছিলাম, তাই কোনটা ঠিক কোনটা ভুল সেটা মাথায় কাজ করেনি।
– It’s Ok, আপনি আমার স্বামী, তাই এটা আমি স্বাভাবিক ভাবেই নিয়েছি। আপনিও তাই করুন।
– আমি পারবো না এটা স্বাভাবিক ভাবে নিতে। যেখানে এই সম্পর্কেরই কোনো ঠিক নেই, সেখানে এইরকম করাটা অন্যায়।
ধ্রুবর কথায় তারা কষ্ট পেলেও নিজেকে সামলে নিয়ে বললো..
– বেশি টেনশন করবেন না। এটার অজুহাত আমি কখনো আপনাকে বেধে রাখবোনা। ফ্রেশ হয়ে খেতে আসুন।
তারা চলে গেলো। ধ্রুব এখনো বসে আছে।
.
কয়েকদিন পার হয়ে গেলো। সেদিনের পর থেকে ধ্রুব কিছুটা অনুশোচনায় থাকলে পরে আবার স্বাভাবিক হয়ে গেছে। যদিও সম্পর্কটা স্বাভাবিক হয়নি। শুক্রবার সকালে চিৎকার করে মাকে ডাকতে লাগলো.. । ছেলের ডাকে রান্নাঘর থেক তারাতা‌ড়ি করে বের হলেন উনি। ধ্রুব বললো..
– মা, আমার কাপড়গুলো একটু ধুয়ে রেখো তো। সন্ধ্যায় এক বিকেলে একটু বেরোবো।
– কোথায় যাবি?
– একটু ঘোরাফেরা করবো।
– আচ্ছা ধুয়ে রাখবো।
– মা কেন ধুবে? মাইই যদি কাপড় ধুয়ে দিবে তাহলে আমি আছি কি করতে? পাশ থেকে তারা বলে উঠলো। তারার কথায় মা হেসে বললো..
– কি জানি, তোমাদের ব্যাপার তোমরা বুঝো। আমি যাচ্ছি। বলেই মা চলে গেলো সেখান থেকে।
ধ্রুব বললো..
– মায়ের সামনে কেন এইরকম ড্রামা করো?
– ড্রামা কোথায় করলাম? মায়ের বয়স হয়েছে। এখনো এইসব করার সময় মায়ের আছে?
– কাজের লোকেদের ছুটি দিলো কেন? ওরা থাকলেই তো আর মাকে করতে হতোনা এইসব।
– কাজের লোক লাগবেনা। আমিই আছি।
– লাগবেনা। আমার কাপড় আমিই ধুয়ে নিবো। ধ্রুব হনহন করে চলে গেলো। তারা হালকা হেসে আপনমনেই বললো..
– আমিও দেখবো, কতোদিন আপনি আমাকে এভাবে এড়িয়ে চলেন।
.
তারা বেশ চিন্তিত হয়ে বসে আছে রুমে। পিরিয়ডের ডেইট অভার হয়ে গেছে আজ পনেরো দিন। কিন্তু এখনো হওয়ার কোনো খবর নেই। তাহলে কি? নাহ, আগ বাড়িয়ে বেশি কিছু ভাবার দরকার নেই। আগে টেস্ট করে দেখি। পরেরটা পরে। নিজের কাজে মন দিলো তারা।
ধ্রুব অফিসে যাচ্ছে। কিছুটা এসেই গাড়িটা ট্রাফিক জ্যামে আটকা পরেছে। বসে থাকতে থাকতে হাপিয়ে উঠছে ও। বার বার ঘড়িতে টাইম দেখছে। already ৮:৫০ বেজে গেছে। ৯:০০ টায় অফিস শুরু। কেন জানি ভালো লাগছিলোনা। এপাশ ওপাশ তাকাচ্ছে ধ্রুব। হটাৎ ই কিছু একটা দেখে থমকে গেলো ও। চোখ ছানাবড়া হয়ে গেছে ধ্রুবর। এতোদিন যাকে মনে মনে খোজেছে সেই তুরিন রাস্তার একপাশে দাড়িয়ে আছে। তারাতা‌ড়ি গাড়ি থেকে নামলো ধ্রুব। দৌড়ে তুরিনের সামনে গিয়ে দাড়ালো। ধ্রুবকে সামনে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলো তুরিন। ধ্রুব হাঁপাতে হাঁপাতে বললো..
– কোথায় ছিলে এতোদিন তুমি? কতো খোজেছি তোমাকে। কোথায় গিয়েছিলে??
ধ্রুবর কথায় কাঁদতে লাগলো তুরিন। ধ্রুব ব্যস্ত হয়ে বললো..
– কাদছো কেন? কি হয়েছে তোমার ? বলো প্লিজ..
তুরিন কিছু বলছেনা। শুধু কাঁদছে। ধ্রুব বললো..
– আসো আমার সাথে।
কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বললো
– কোথায়?
ধ্রুব কিছু বললো না। তুরিনের হাতে ধরে নিজের গাড়িতে এসে বসলো ধ্রুব। ড্রাইভারকে অফিসে যেতে না বলে একটা ক্যাফেতে যাওয়ার কথা বললো ধ্রুব। ড্রাইভার তাই করলো। অন্যদিকে তুরিন মনে মনে শয়তানি হাসি দিলো একটা।
.
ক্যাফেতে সামনাসামনি বসে আছে ধ্রুব আর তুরিন। ধ্রুব কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো..
– কোথায় ছিলে এতোদিন? কোথায় গিয়েছিলে? আমি কতো আশা করে গিয়েছিলাম তোমাকে বিয়ে করে নিজের করে নেওয়ার জন্য।
তুরিন এখনো কিছু বলছে না। ধ্রুব তুরিনের হাতটা নিজের দুহাতের মুঠোয় পুরলো। বললো
– প্লিজ চুপ করে থেকোনা। বলো আমাকে সবটা।
তুরিন অন্যদিকে উদাশ নয়নে তাকালো। বললো..
– অনেক আশা নিয়ে বসে ছিলাম। তুমি আসবে, আমাকে তোমার করে নিয়ে যাবে। মা পার্লারে পাঠালো বড় আপু কে দিয়ে। যখন পার্লার কর্মীরা আমাকে বউ সাজাতে যাবে তখনই বড় আপু আমার সামনে একটা ছুরি ধরলো। আমি অবাক হয়ে বললাম ” আপু তুমি কি করছো?”
সে বললো, আমি যদি এই বিয়েটা করি, তাহলে এই ছুরিটা দিয়ে তোমাকে মেরে দিবে।
ধ্রুব অবাক হয়ে বললো
– আমাকে?
– হ্যাঁ তোমাকে। আমি তখন ভয় পেয়ে বললাম ” কি বলছো আপু, আমি তো তোমার বোন। কেন আমার সাথে এমন করবে?
সে বললো.. তুই আমার সৎ বোন। তারপর আবারও বললো.. যদি আমি তোমাকে বিয়ে করি বা তোমার সামনে আসি, তাহলে সত্যি সত্যিই তোমাকে মেরে দিবে। পরে কোথা থেক যেনো বাবা আসলো। তিনিও বড় আপুর পক্ষপাতিত্ব ই করলেন।
– কিন্তু কেন? কেন এমন করলেন উনারা?
– কারণ বড় আপু যে শ্যাম বর্ণের। তাকে কোনো ছেলে বিয়ে করতে চায়নি তাই।
– তাই বলে তুমি এভাবে আড়ালে চলে যাবে?
– কি করতাম আমি? আমার সামনে ও তোমাকে মেরে ফেলতো, আমি কি করে সইতাম এটা? আমি যে তোমাকে খুব ভালোবাসি ধ্রুব। ছোট থেকেই তারা আপুকে আমি খুব ভয় পেতাম। কিছু হলেই আমাকে বকতো, মারতো। ও যা বলতো তাই করতো। তাইতো আমি নিরবে সরে গেছিলাম, যেনো তোমার কিছু না হয়।
.
ধ্রুবর চোখমুখ এতোক্ষনে রক্তবর্ণ ধারন করেছে। রাগে শরীর জ্বলে যাচ্ছে ওর। তুরিন আড়চোখে ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো..
– যাক, টুপ গিলেছে দেখছি।
হটাৎ ধ্রুব বললো..
– তোমাকে বিয়ে করলে ওই তারা আমাকে মেরে ফেলতো?
তুরিন আবারও ন্যাকা কান্না দিয়ে বললো..
– হ্যাঁ।
– চলো আমার সাথে।
– কোথায়?
– চলো..
তুরিনের হাতটা ধরে টানতে টানতে ক্যাফে থেকে বেরিয়ে পরলো ধ্রুব।
..
নিজের ঘরের খাটে বসে আঁচলে মুখ গুজলো তারা। নিজের কাছেই নিজে লজ্জা পাচ্ছে। কিছুক্ষন আগে স্টিক দিয়ে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করিয়েছে ও। যেটাতে স্পষ্ট উঠেছে তারা প্রেগন্যান্ট। কিভাবে সবাইকে খবরটা দিবে ভাবতেই লজ্জায় মরে যাচ্ছে তারা। আচ্ছা, ধ্রুব যদি শুনে ও বাবা হচ্ছে তাহলে কি রিয়েক্ট করবে? ও কি খুশি হবে? নিশ্চয়ই খুশি হবে। আর যখন এই খবরটা পাবে তখন নিশ্চয়ই আমার সাথে আর রাগ করে থাকবে। ঠিক আমাকে আপন করে নিবে ও। ভাবতেই খুশিতে নেচে উঠছে তারার মন।
এইসব নানান কিছু ভাবছিলো তারা। এমন সময় কলিংবেলের আওয়াজে ঘোর ভাংলো তারার। এই বিকেলবেলায় আবার কে আসলো? প্রেগন্যান্সি স্টিক টা বাথরুমের এক কোনায় একটা বাক্সে রেখে তারাতা‌ড়ি ডোর টা খোলতে গেলো তারা। দরজাটা খোলা মাত্রই তারার মাথা ঘুরে গেলো। একি দেখছে ও? এটা কি স্বপ্ন নাকি বাস্তব? সারা শরীর কাঁপতে লাগলো তারার। এই বুঝি দেহ থেকে প্রাণ টা বেরিয়ে যাবে। ওরই সামনে দাড়িয়ে আছে ওরই স্বামী ধ্রুব..
.#জানি_দেখা_হবে ❤
Israt Jahan Tanni ✍
#Part_10
..
তারাকে পাশ কাটিয়ে ভেতরে ঢুকলো ধ্রুব। পিছনে পিছনে আসলো তুরিন। পরনে তার লাল শাড়ি, বুঝায় যাচ্ছে এই মাত্র বিয়ে করে ফিরেছে ওরা। তারা ছলছল চোখে ওদের দেখছে। কিছু বলতে পারছে না। মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছেনা। সারা শরীর কাঁপছে ওর। ঘরের ভেতরে ঢুকেই দাড়ালো ধ্রুব। সাথে তুরিনও। ধ্রুব তারার দিকে ঘুরে তাকালো। তারা এখনো ঠাঁই দাড়িয়ে আছে। তারার সামনে ধ্রুব একটা তুরি বাজালো। সাথে সাথেই তারা হুশ ফিরে পেলো। তখনই ধ্রুব বললো..
– আজ থেকে আমি তুরিনের হাজবেন্ড। আর তুরিন আমার ওয়াইফ। তুমিতো বলেছিলে তুরিন যদি আমাকে বিয়ে করে তাহলে তুমি মেরে দিবা আমাকে, তাইনা? এভাবেই তো ব্ল্যাকমেইল করে আমাকে নিজের করে নিয়েছো। তুরিনের থেকে দুরে সরিয়েছো। আজ থেকে তো আমি তুরিনের হাজবেন্ড, দেখি আমাকে মারতে পারো কিনা।
তারা অবাক হয়ে বললো.
– আমি ব্ল্যাকমেইল করেছিলাম? আপনাকে মারতে চেয়েছিলাম?
– তা নয়তো কি?
– সব মিথ্যা। কে বলেছে আপনাকে এইসব ?
সাথে সাথেই তুরিন ন্যাকা কান্না শুরু করে বললো..
– দেখেছো ধ্রুব দেখেছো, আসতে না আসতেই ও আমাকে মিথ্যাবাদী বানিয়ে দিচ্ছে।
– তুমি কাদবে না তুরিন। একদম কাদবে ন। এতোদিন অনেক কেদেছো। এখন থেকে ও কাদবে। ওর কাঁদার দিন সবেমাত্র শুরু।
.
তারা কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছেনা। ভেবেছিলো আজ ধ্রুব ওকে নিজের করে নিবে। কিন্তু নাহ, আজ যে সে আরো বেশি পর হয়ে গেলো।
ঘরে শুয়ে ছিলো ধ্রুবর মা। বাইরে কথার আওয়াজে উঠে রুম থেকে বাইরে গিয়ে তিনিও চমকে গেলেন। অবাক হয়ে বললেন..
– এই মেয়েটা কে ধ্রুব?
– আমার বউ।
– মানে? কি বলছিস এইসব তুই? তোর বউ তো তারা।
– তারা আমার বউ কোনোদিন ছিলোনা। আর কোনোদিন হবেও না। ও একটা রাক্ষসী। ও একটা ছলনাময়ী। যে ছলনা করতেই জানে।
– মাথা ঠিক নেই তোর ধ্রুব। এই মেয়ে নাম কি তোমার?
– তুরিন। মুখ বাকা করে বললো নিজের নামটা।
– তুরিন, মানে সেই মেয়েটা? যে বয়ের দিন পালিয়ে গিয়েছিলো?
– না মা, ও পালায়নি। ওকে ব্ল্যাকমেইল করে সরিয়ে দিয়েছিলো এই মেয়েটা। তারাকে উদ্দেশ্য করে বললো ধ্রুব।
তারা কিছু বলছেনা। বেচারি শুধু কাঁদছে আর নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। ধ্রুবর মা বললেন.
– কিসের জন্যে ব্ল্যাকমেইল করবে ও?
– আমাকে বিয়ে করার জন্য। তুরিনকে আমার জীবন থেকে সরানোর জন্য।
ধ্রুবর বলা কথাগুলো সব মায়ের মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। মা গিয়ে তারাকে বললো..
– কিরে, কি বলছে এইসব ধ্রুব?
– আমি কিছু জানিনা মা। শুধু জানি আমি কোনো অন্যায় করিনি। কাঁদতে কাঁদতে বললো তারা।
.
– হুহ, ঢং দেখে বাচিনা। পাশ থেকে তুরিন বলে উঠলো।
ধ্রুবর মা রাগী চোখে তুরিনের দিকে একবার তাকালো। কিছু বললোনা। তারাকে শান্তনা দিয়ে বললো..
– কাদিস না মা। কেউ তোকে বিশ্বাস না করলেও আমি করি।
মা ধ্রুবর সামনে এগিয়ে গেলো। ধ্রুব অন্যদিকে ফিরে তাকিয়ে আছে। মা বললো..
– তুই কি এই মেয়েকে বিয়ে করেছিস?
– বার বার এই মেয়ে এই মেয়ে করছো কেন মা? ওর একটা নাম আছে। ও তুরিন। আর হ্যাঁ আমরা বিয়ে করেছি। কাজী অফিস থেকে বিয়ে করেই বাসায় আসলাম। আর একটা কথা, যদি বলো ওকে তোমরা মানতে পারবেনা, ওকে ছেড়ে দিতে হবে,, তাহলে জেনে রাখো, দরকার হলে এই বাড়ি ছেড়ে দিবো। তবুও তুরিনকে ছাড়বোনা।
মা হাসলো। বললো.
– বাহ, এই মেয়েটা আসতে না আসতেই দেখছি ওর উকালতি করা শুরু করেছিস।
ধ্রুব কিছু বললো না। মা চিন্তা করে বলতে লাগলেন..
– এখন আমি ওর বাবাকে কিভাবে সামলাই।
– আমি সব সামলাবো মা। আপনাকে কোনো চিন্তা করতে হবেনা।
তারার কথায় মা অবাক হয়ে বললো..
– কি বলছিস মা তুই? তুই পাগল হয়ে গেছিস নাকি?
– আমি ঠিক আছি না।
তারা এক দৌড়ে রুমে চলে গেলো কাঁদতে কাঁদতে। মা আরেকবার ধ্রুব আর তুরিনের দিকে তাকালো। তারপর তিনিও হনহন করে চলে গেলেন নিজের রুমে।
..
ধ্রুবদের বাসার ড্রয়িং রুমটা মানুষে গিজগিজ করছে। কিছুক্ষন আগে তুরিনের বাবা মা এসেছে বাসায়। সাথে তারার মামা ও। ধ্রুবর বাবা সবাইকে খবর দিয়ে আনিয়েছে। সবাই গম্ভীর মুখে বসে আছে। নিরবতা ভেঙ্গে ধ্রুবর বাবা বললো..
– বিয়ের দিন কোথায় ছিলো আপনার মেয়ে? আমার ছেলেটা অনেক আশা নিয়ে গিয়েছিলো ভালোবাসার মানুষকে বিয়ে করবে বলে। কখন কোথায় ছিলো আপনার মেয়ের ভালোবাসা? সবার মান সম্মানের দিকে তাকিয়ে তারা মা বিয়েটা করেছে। এখন কোথায় ওদেরকে একটু সুখে থাকতে দিবে তা না করে এই মেয়েটা আবারও আমার ছেলের জীবনে এন্ট্রি নিয়েছে। এটা কি ঠিক করলো আপনাদের মেয়ে?
– আমরা আসলে দুঃখিত. । নিচের দিকে তাকিয়ে বললেন তুরিনের বাবা।
ধ্রুব রেগে গিয়ে বললো..
– কি শুরু করেছো তোমরা? ওদেরকে কেন এখানে ডেকেছো? আমরা নিজেরাই নিজেদের বিয়ে করেছি। আর তাছাড়া যাকে বলছো সেতো নাটের গুরু। ওনার উস্কানিতেই তো ওই তারা আমার তুরিনকে ব্ল্যাকমেইল করে নিজে বিয়েটা করেছে।
.
ধ্রুবর কথায় তারার বাবা আর তারা দুজনেই অবাক হয়ে গেলো। ধ্রুবর বাবা বললেন..
– তুই চুপ থাক, তোর মত ছেলে জন্ম দিয়ে আমি অনেক বড় অপরাধ করেছি। তুই কেমন ছেলেরে, ঘরে বউ রেখে এমন একটা মেয়েকে বিয়ে করে এনেছিস যে কিনা বিয়ের দিনই পালয়েছিলো আরেক ছেলের সাথে । তোকে আমার ছেলে পরিচয় দিতেও লজ্জা লাগে ছিঃ.
বাবার এমন কথায় ধ্রুব কিছু না বললেও তার চোখেমুখে বেশ রাগ দেখা গেলো।
পাশে থেকে তুরিনের মা হেসে দিয়ে বললো।
– যাই বলুন বিয়ান সাহেব। ছেলে মেয়ে যেহেতু দুজন দুজনকে ভালোবাসে সেখানে এভাবে রাগারাগি করার কোনো দরকার নেই। আর ধ্রুব বাবাতো তুরিনকে পছন্দ করে। তারাকে একটুও পছন্দ করেনা। তাই বলছি তুরিনকে মেনে নিয়ে তারাকে বিদেয় করে দেন। এটাতেই মঙ্গল হবে ।আপনি বরং মেনে নিন।
– কাকে মানবো আর কাকে বিদেয় করবো সেটা একান্তই আমাদের ব্যাপার। আপনাকে এর মাঝে আসতে হবেনা। গম্ভীর গলায় বললেন ধ্রুবর বাবা।
এতোক্ষন আশরাফ সাহেব সবটা নিরবে শুনে গেলোও এখন আর চুপ থাকতে পারলেন না। বললেন..
– তাহলে তারার কি হবে?
– মানে? অবাক হয়ে বললেন ধ্রুবর বাবা।
– মানেটা খুব সহজ। ধ্রুব তুরিনরে বিয়ে করেছে। ও তো তুরিনে পাগল। তুরিনের সাথেই ও সংসার করবে। আপনারা না চাইলেও। তাহলে আমাদের তারা এখানে থেকে কি করবে?
– তুমি কি বলতে চাইছো মামা?
– বলতে চাইছি, তোকে আমরা এখান থেকে নিয়ে যাবো। দাত থাকতে তো কেউ দাঁতের মর্যাদা বুঝেনা। কি যে দানা এনেছে সেটা দুদিন পরেই বুঝবে। কিন্তু তুই এখানে পড়ে থেকে মাঝখানে পুড়ে ছাই হয়ে যাস সেটা আমি চাইনা। তাই বলছি তোর এখানে থাকার দরকার নেই। আমরা আজই নিয়ে যাবো তোকে।
.
– মেয়েরা স্বামীর বাড়ি থেকে মরার পরেই বের হয়। পাশ থেকে বলে উঠলো তারা।
– কিন্তু মা „ ওতো আরেকটা বিয়ে করেছে। তোকে থাকতে হলে এখন সতীনের সাথে সংসার করতে হবে। যদিও ও তোর বোন হয়। সেটা কেমন বোন ওরা না জানলেও আমরা সবাই জানি তা।
– ইসলামে ছেলেদের চারটি বিয়ের ব্যাপারে বৈধতা দিয়েছে আল্লাহ। আর উনি তো দুইটা বিয়ে করেছে মাত্র। আমার কোনো সমস্যা নেই। আমি থাকতে পারবো।
– কিন্তু মা,
– প্লিজ কেউ আমাকে জোর করোনা। আমাকে একটু শান্তিতে থাকতে দাওনা।
তারার কথায় কেউ কিছু বললোনা। রাতের খাওয়া দাওয়া করে সবার যা যার মতো চলে গেলো। তুরিনের মা বেরোতে যাবে তখনই তারাকে পাশে দেখতে পেলো। মুখে শয়তানি হাসির রেখা টেনে ওর পাশে গিয়ে দাড়িয়ে আস্তে আস্তে বললো..
– আমার মেয়েতো। তা বলে তাই করে। বলেছিলোনা ঠিক সময়ে এন্টি নিবে। দেখেছিস তাই করেছে ও। যেটা ওর প্রাপ্য সেটা ওরই। ওর জায়গায় অন্য কাউকে সে কখনোই মেনে নিবেনা। তোকে তো নয়ই হুহ।
তারা কিছু বলছেনা। শক্ত হয়ে দাড়িয়ে আছে আর শুনছে।
– কিগো, কি হলো আসো।
– হ্যাঁ আসছি। মেয়েটাকে একটু শান্তনা দিয়েই আসছি।
তারপর আবারও তারার দিকে তাকালো তুরিনের মা। বললো..
– তৈরি হো আমার মেয়ের সবকিছু সহ্য করার জন্য।
মা চলে গেলো। তারা এখনো পাথরের মতো দাড়িয়ে আছে সেখানে। চোখ দিয়ে অশ্রুধারা বেয়ে যাচ্ছে ওর।
.
এভাবে কতোক্ষন পার হয়ে গেলো বুঝতে পারলোনা তারা। সেদিন যে যার মতো শুয়ে পরলো। তুরিনকে রাখা হলো পাশের রুমে। ধ্রুব নিজের ঘরেই শুয়েছে। আর তারা, ও তো বেলকনিতে বসে থেকেই সারারাত কাটিয়েছে। পরেরদিন বেশ ক্লান্ত থাকায় বিছানায় শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলো তারা। মনের মধ্যে অনেক ঝড় বয়ে যাচ্ছে তার। এমন সময় ধ্রুব রুমে ঢুকলো। পিছনে তুরিন ও। ধ্রুবকে দেখে উঠে বসলো তারা। ধ্রুব অন্যদিকে তাকিয়ে বললো.
– এ রুমটা তোমাকে ছাড়তে হবে।
– মানে? অবাক হয়ে বললো তারা। পিছনে দাড়িয়ে শরীর দুলাচ্ছে আর হাসছে তুরিন। ধ্রুব বললো..
– বুঝনি? এ রুমটা তোমাকে ছাড়তে হবে। আজ থেকে এ রুমে আমি আর তুরিন থাকব। কথাটা ঢুকেছে তোমার মাথায়?
তারার মাথা ঘুরে গেলো ধ্রুবর কথায়। যে রুমে ও নিজে থাকতো, যদিও ধ্রুবর সাথে থাকার ভাগ্য তার হয়নি। তবুও এক ঘরে তো থেকেছে।
ধ্রুব বললো..
– এভাবে মুর্তির মতো দাড়িয়ে আছো কেন? কি বললাম শুনতে পাও নি?
ধ্রুবর কথায় হুশ ফিরে পেলো তারা। ব্যথিত কন্ঠে বললো..
– যাচ্ছি। তারা যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো।
ধ্রুব পিছন থেকে বলে উঠলো।
– আজ রাতে আমাদের বাসর। আর তুমিতো আমার খুব কাছের মানুষ তাইনা। তাই কাছের মানুষ হিসেবে আমার বাসর সাজানোর দায়িত্বটা আমি তোমাকেই দিলাম। যতো বকশিশ চাইবে ততোই দিব।
ধ্রুবর কথায় থমকে গেলো তারা। একি বলছে ধ্রুব? ওর বাসর আমাকে সাজাতে হবে? এতো শাস্তি দিয়েও মন ভরছেনা? এভাবে মানুষিকভাবেও শাস্তি দেওয়াটা বাকি?
..
To be Continue …..
To be Continued ………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here