#জানি_দেখা_হবে❤️
Israt Jahan Tanni ✍️
#Part_37
কেনো হঠাৎ তুমি এলে?
কেনো নয় তবে পুরোটা জুড়ে?
আজ পেয়েও হারানো যায়না মানা,
বাঁচার মানেটা রয়ে যাবে দূরে।
এই কয়েকটা লাইন বার বার অস্পষ্টভাবে বলে যাচ্ছে আকাশ। কথাগুলো সম্পূর্ণই যেনো ওর মনের ভাষা। হটাৎ করে একদিন তারা এসেছিলো ওর জীবনে। কিন্তু সেটা সাময়িক সময়ের জন্য, স্থায়ী ভাবে নয়। বুকটা ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে আকাশের। না পারছে কিছু বলতে আর না পারছে সইতে। এমন অবস্থায় দম বন্ধ হয়ে আছে ওর। কিন্তু ওতো এইরকম অনুভূতি চায়না। সে চায় তারাকে ভুলতে, তারার সুখে সুখী হতে। এতোদিন অনেক চেষ্টা করেছে, কিছুটা সফলও হয়েছিলো আকাশ, কিন্তু পুরোনো ব্যাথাটা আজ আবার বুকের মাঝে হানা দিয়েছে। দূর থেকে একনজর দেখেছিলো সে তারাকে, কিন্তু সামনে যাওয়ার সাহস হয়নি ওর।
এর উপর জুটেছে আরেক প্যারা। কোনো স্বস্তি পাচ্ছেনা আকাশ।
সীমা ভাবী, আশা আর ওর মাকে দেখে প্রচন্ডভাবে চমকে উঠলো তারা। ওরা এখানে এসেছে এটা বিশ্বাস করতেও কষ্ট হচ্ছে ওর। বারবারই মনে হচ্ছে ও কোনো ভালো স্বপ্ন দেখছে। ঘুম ভাংগার সাথে সাথে সেটাও শেষ হয়ে যাবে। তবে তারা এটাও জানে এটা কোনো স্বপ্ন নয়, বাস্তব। তবুও কেন জানি বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে।
সীমা ভাবী হাসি হাসি মুখ করে তারার থুতনিতে ধরলো। পুরনো আমেজটা মুখে বহাল রেখে বললো
-বাহ, খুব সুন্দর লাগছেতো আমার এই ননদিনীটাকে। ইচ্ছে করছে আমিই প্রেমে পড়ে যাই।
সীমার কথায় কিছুটা লজ্জা পেলো তারা। সংকোচ নিয়ে বললো
-কিভাবে এলেন ভাবী?
-এসেছি বলে রাগ করেছো নাকি? ভ্রু বাকিয়ে বললো সীমা।
-কি বলেন ভাবী। আমি জানতে চাইছি শুধু। কথাটা বলে প্রসঙ্গ পাল্টালো তারা। ওর শাশুড়ির দিকে তাকিয়ে বললো
-আন্টি, আপনার শরীর ভালো আছেতো?
-সেটা জানার প্রয়োজন মনে করেছিস তুই? সেই যে এলি, আর কোনো যোগাযোগ করলিনা। মুখ ভার করে বললেন আকাশের মা।
-আমি স্যরি আন্টি। আসলে এখানে আসার পর একটা দুর্ঘটনা ঘটেছে আমার সাথে। তাই যোগাযোগ করার কথা চিন্তা করতে পারিনি। অপরাধীর মতো করে বললো তারা।
-থাক, এখন ওইসব কথা মনে করার কোনো প্রয়োজন নেই। আমরা সব জানি।
-কিভাবে জানেন? অবাক হয়ে বললো তারা।
-সেটা তোমার না জানলেও চলবে ননদিনী। পাশ থেকে বললো সীমা ভাবী।
-আপনাদের কোনো কষ্ট হয়নি তো এখানে আসতে? আকাশের মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো তারা।
-এতো চিন্তা করিস না তো। আমরা ঠিকঠাক মতোই এসেছি। তাছাড়া, আজ বাদে কাল তোর বিয়ে, এই মুহূর্তে চিন্তা করলে অসুস্থ হয়ে যেতে পারিস।
-আমার খুবই আনন্দ লাগছে ভাবী, আমি কখনো ভাবতেও পারিনি, আপনাদের সাথে আর কখনো আমার দেখা হবে।
-সেটা তোমার বরের জন্যই সম্ভব হয়েছে তারা।
তারা পরম আবেশে তাকালো ধ্রুবর দিকে। ধ্রুব একনজরে তারার দিকে তাকিয়ে ওর প্রশান্তিমাখা মুখটা দেখছে। একটা ভালো লাগা অনুভব করছে এতে। প্রিয় মানুষের সুখে বুঝি অনুভব শক্তিটা এতো গভীর হয়, জানা ছিলোনা ধ্রুবর। তারা বললো
-আপনাদে অসংখ্য ধন্যবাদ, এতো বড় একটা সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য।
-তুমি খুশি তো?
-অনেক।
-ইটস মাই প্লেজার। আমার আর কিছু চাইনা। শুধু তোমার ওই খুশিটুকু ছাড়া।
তারা হাসলো। ধ্রুব আলতো করে তারার হাতটা নিজের দুহাতের মুঠোয় বন্দী করে নিলো। সাথে সাথে এক অজানা শিহরণে শিহরিত হয়ে উঠলো তারা। এতো ভালো লাগছে কেনো? এই নাম না জানা অনুভূতির কারণটাই বা কি? সে জানেনা, আর জানতেও চায়না। শুধু চায়, এই মানুষটা পাশে থাকুক সারাজীবন।
হলুদের ফাংশন শেষ হয়েছে অনেক্ষন। এখন হাতে মেহেদী পরানোর পালা। নীলিমা আর আশা বসেছে মেহেদী পরাতে। নীলিমা পরাবে ধ্রুবকে, আর আশা পরাবে তারাকে। ওইদিকে আশা এক মনে তারার হাতে মেহেদী দেওয়া শুরু করেছে। কিন্তু নীলিমার মন কিছুতেই বসাতে পারছেনা। মনটা শুধু উড়ু উড়ু করছে। ছটফট করছে খুব। ধ্রুব ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বললো
-তোমার কি মৃগী রোগ আছে?
-আমাকে রাগাবেন না বললাম। মুখে স্টেপলার মারবো। খানিকটা তেজ দেখিয়ে বললো নীলিমা।
-আমার কি দোষ, ওখানে আমার বউ এর হাতে এতো সুন্দর আর্ট করা হচ্ছে, আর এইখানে আমার হাতের উপর নির্যাতন চলছে।
-কে আপনার হাতে নির্যাতন করছে শুনি? এক হাত কোমড়ে বেধে বললো নীলিমা।
-আমি চিনিনা তাকে, সে আমার বউ এর ফ্রেন্ড। খুবই পাজী জানোতো শ্যালিকা।
-মানে কি ভাইয়া, আপনি আমাকে পাজি কেন বলছেন। চেচিয়ে বললো নীলিমা।
-ওহ তুমিই তাহলে সেই মেয়ে? আমি ভুলে গিয়েছিলাম। মুখ টিপে হাসছে ধ্রুব, আর ওইদিকে লুচির মতো ফুলেই যাচ্ছে নীলিমা।
ধ্রুব আবারও হাসলো। হাসতে হাসতে বললো
-আচ্ছা স্যরি, এইবার বলো তোমার সমস্যা কি? এদিক ওদিক কি খোজে বেড়াচ্ছো?
নীলিমার স্বর এইবার নরম হলো। ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে বললো
-একজনকে খুব মনে ধরেছে দুলাভাই।
-ওমা তাই? কে সে বলির পাঠা?
-দুলাভাই! প্রচন্ড রাগে হুংকার করে উঠলো নীলিমা।
-উপস স্যরি, মিসটেক করে ফেলেছি। এইবার বলো।
-বলবোনা, ঠোঁট উল্টিয়ে বললো নীলিমা।
-আই এম জোকিং নীল। বলো তো, দেখি সাহায্য করতে পারি কিনা।
ধ্রুবর মুখে সাহায্য কথাটা শুনে ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠলো নীলিমার। সে বললো
-সত্যিই আমাকে সাহায্য করবেন দুলাভাই?
-চেষ্টা করবো।
-চেষ্টা না, হান্ড্রেড পার্সেন্ট করে দিতে হবে কিন্তু।
-আরে, চিনিনা জানিনা, হান্ড্রেড পার্সেন্ট কিভাবে করবো? আগে নামটা তো বলো, দেখি কি করা যায়।
নীলিমা হাসি হাসি মুখ করে বললো
-আপনি উনাকে চিনেন দুলাভাই। আপনাদের সাথেই এসেছে।
-তাই, আমাদের সাথে এসেছে? ভ্রু বাকিয়ে বললো ধ্রুব।
-হুম।
-কে? নাম কি?
-মিস্টার স্কাই।
-মানে? অবাক হয়ে বললো ধ্রুব।
-বুঝলেন না?
-নাতো। এটা আবার কে? আমাদের মাঝে এই নামের কেউতো নেই।
-আছে আছে, ভেবে দেখুন।
-আরে সিরিয়াসলি, এই নামের কেউই নেই আমাদের এখানে।
-কি মুর্খের পাল্লায় যে পড়লাম বাবা, কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে বললো নীলিমা।
-তুমি কি আমাকে মুর্খ বললে?
-অবশ্যই। কোনো সন্দেহ আছে?
-পুরোটাই সন্দেহ।
-কি মজা করছো নীল, আমি হাইয়ার এডুকেশন কমপ্লিট করা ছেলে, আর তুমি আমাকে এই এইসব ভুলাভাল বকছো?
-স্কাই মানে কি?
-কি আবার, আকাশ। কথাটা বলেই চমকে গেলো ধ্রুব। নীলিমার দিকে তাকিয়ে সন্দিহান ভাবে বললো
-এক মিনিট, তুমি আকাশের কথা বলছো না তো?
-হান্ড্রেড পার্সেন্ট ওর কথা বলছি।
-ওহ মাই আল্লাহ, এ তুমি কি করেছো?
-এভাবে রিয়েক্ট করছেন কেন? মনে হচ্ছে খুব বড় অন্যায় করে ফেলেছি।
-তুমি কি জানো আকাশ কে?
-আপনাদেরই কোনো আত্মীয় হবে হয়তো।
-ও তোমার বান্ধবীর সাবেক প্রেমিক।
-হোয়াট? চিৎকার করে বললো নীলিমা।
-শান্ত হও। কথা তো শুনো আগে।
-আপনি কি সত্যি বলছেন দুলাভাই? কাদো কাদো মুখ করে বললো নীলিমা।
-অর্ধেক সত্যি।
নীলিমা হাজারো প্রশ্ন নিয়ে তাকালো ধ্রুবর দিকে। ধ্রুব বলতে লাগলো…
-তুমিতো জানোই, তারা অনেকদিন নিখোঁজ ছিলো। আমরা অনেক খোজেও পায়নি তাকে। আর সেই সময় ওরাই তারাকে আশ্রয় দিয়েছিলো…
এরপর সমস্ত ঘটনা নীলিমার কাছে খুলে বলে ধ্রুব। নীলিমা কিছুক্ষণ গভীর চিন্তা করে ধ্রুবকে বললো
-যার অন্যের বউ এর প্রতি এতো ভালোবাসা, নিজের বউ এর প্রতি তো তা আরো বেশি হওয়া উচিৎ তাইনা। তার মানে আই এম সো লাকি। আমাকে সে অনেক বেশি ভালোবাসবে। বলেই আনন্দে প্রায় লাফাতে লাগলো নীলিমা।
নীলিমার এমন ভাবনায় অবাক হলো ধ্রুব। তবে স্বীকার করে নিলো আকাশ আসলেই অনেক ভালো একটা ছেলে।
সে নীলিমাকে বললো
–আকাশকে রাজী করানোটা মুশকিল হবে।
-প্রেমের প্রস্তাব নয়, বরং একেবারে বিয়ের প্রস্তাব দিবো। তখনও রাজি হবেনা?
ধ্রুব অবাক হলো, এ মেয়ে বলে কি? পাগল টাগল হয়ে গেলো নাকি। নীলিমা ধ্রুবর চোখের সামনে তুরি বাজিয়ে বললো
-কেমন দিলাম আইডিয়াটা?
-ধ্রুব শুধু হাসলো, কিছু বললোনা।
মেহেদী পরানোর পর মেহেদী লাগানো অবস্থাতেই একটা চেয়ারে হেলান দিয়ে বসলো তারা। খুব ঘুম আসছে চোখে। তাই চোখগুলো বন্ধ করে নিলো। কিছুক্ষণ পর ঘারে কারো হাতের স্পর্শ পেলো তারা। খুবই ধীরেস্থিরে চোখ মেলে সামনে তাকালো তারা। সীমা ভাবী দাঁড়িয়ে আছে পাশে। তারা হেসে বললো
-ভাবী, আপনি। বসুন না।
সীমা আরেকটা চেয়ার টেনে বসলো তারার সামনে।
তারা উনার মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু বুঝার চেষ্টা করলো। এরপর বললো
-কিছু বলবেন ভাবী?
-আমরা চলে যাবো এখন, তাই তোমার সাথে দেখা করতে এলাম।
-চলে যাবেন মানে? এটা কি কথা? অবাক হয়ে বললো তারা।
-আমরা ধ্রুবদের বাসায় যাবো তারা। আমরা তো এখন ওদের গেস্ট। আগামীকাল আসবো তোমাদের বাসায়, বরযাত্রী হয়ে। মুচকি হাসছে সীমা।
তারা কিছুটা অস্বস্তি বোধ করছে। কিছু একটা বলতে গিয়েও বলতে পারছেনা। সীমা সেটা খেয়াল করে বললো
-কিছু বলার থাকলে কোনোরকম সংকোচ ছাড়ায় বলতে পারো তারা।
-মানে আমি বলতে চাইছিলাম যে, কথাটুকু বলে ধ্রুবর মুখের দিকে তাকালো তারা। ধ্রুব মুচকি হেসে বললো
-তুমি কি বলতে চাইছো সেটা আমি জানি।
-জানেন? অবাক হয়ে বললো তারা।
-হুম জানি। আর হ্যাঁ, আকাশ এসেছে আজ। এবং বিয়ে পর্যন্ত থাকবে।
তারা অবাক হয়ে তাকালো ধ্রুবর দিকে। সে কিভাবে জানলো তারার মনের কথা?
নীলিমা মন খারাপ করে দাড়িয়ে আছে তারার পিছনে। ধ্রুবদের যাবার সময় হয়ে গেছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত ওকে মনের মধ্যে চেপে রাখা কথাটায় বলতে পারলো না সে।
এক এক করে সবাই বিদায় নিলো তারার ফ্যামিলির কাছ থেকে। এরপর তারার কাছ থেকেও বিদায় নিলো আকাশের ফ্যামিলি। কিন্তু তারা এটা ভেবে অবাক হচ্ছে, আকাশ এখন পর্যন্ত ওর সাথে দেখা পর্যন্ত করেনি। এটা কিভাবে সম্ভব?
এইসব ভাবার এক ফাকেই কারো পায়ের আওয়াজ এলো তারার কানে। খুব পরিচিত একটা চলার শব্দ, এ শব্দটা যেনো খুব চেনা। তারা সামনে তাকালো কে এসেছে দেখার জন্য। হটাৎ একটা চিরচেনা মুখ ওর সামনে ভেসে উঠলো। এই মানুষটা একটা সময় অনেকভাবেই প্রটেক্ট করেছে তারাকে৷ তারা ভুলবেনা কখনো সেই দিনগুলো, এই দিনগুলোর কথা ভুললে যে পাপ হবে। তারা একভাবে তাকিয়ে রইলো আকাশের দিকে, আকাশেরও একই অবস্থা। প্রথমে মুখ খুললো আকাশ।
স্টেজের এক পাশে বসে তারার দিকে তাকিয়ে শান্ত ভংগিতে বললো
-কেমন আছো তারা?
-ভালো আছি, আপনি?
-আলহামদুলিল্লাহ।
-আপনি এসেছেন, আমি খুব খুশি হয়েছি।
-তোমার খুশির জন্যই এসেছি আমি। সারাজীবন খুশিমনে সংসার করো, ধ্রুবকে আনন্দে রাখো, আরো খুশি হবো। আকাশ হাসলো।
তারা হেসে বললো..
-আরো একটা কাজ করলে আমি বেশি খুশি হবো।
-তাই নাকি, কি সে কাজ? তোমার খুশির জন্য আমি মরতেও রাজি।
তারা হাতে মানা করার মতো করে বললো
-ওহু, মরলেতো আমাকে খুশি করা হবেনা। আমি খুশি হবো অন্য একটা কাজে।
-তা কি সেই কাজ, আপনি আজ্ঞা করুন। আকাশ মুচকি হেসে বললো।
–আপনি একজন জীবনসঙ্গী খোঁজে নিন, বিয়ে করুন, এবং সেই বিয়েতে আমাকে আর আমার পরিবারকে ইনভাইট করুন। প্রচুর আনন্দিত হবো আমি।
#জানি_দেখা_হবে❤️
Israt Jahan Tanni ✍️
#Part_38
চাঁদের আলোয় আলোকিত হয়ে আছে চারিপাশটা। আনন্দে উচ্ছ্বসিত আশেপাশের সবকিছু। হইচই হইহুল্লোড়ে মেতে আছে সকলেই। এতোটা রাত হয়ে গেছে, তবুও কারো মাঝে নেই কোনো ক্লান্তি। সকালের অপেক্ষায় প্রহর গুণছে সকলেই। ধ্রুবর মায়ের শরীরে ক্লান্তি ভর করেছে প্রচন্ড রকমের। গা টা একটু বিছানায় এলিয়ে দিতে হবে। এই আশাতেই রুমের দিকে ছুটলেন উনি। ক্লান্তি ভারাক্রান্ত স্ত্রীকে এভাবে হন্তদন্ত হয়ে রুমের দিকে ছুটতে দেখে পিছন পিছন গেলেন ধ্রুবর বাবাও। আকাশের মা ঘুমিয়ে গেছে অনেক্ষন, একে তো জার্নি করে এসেছে, তার উপর হলুদের ধকল, বাসায় ফেরা মাত্রই চোখে ঘুম এসে হানা দিয়েছিলো উনার। সীমা আর আশা সকল মেহমানদের আপ্যায়নে ব্যস্ত, যদিও ওরা নিজেরাও মেহমান। তবে, যে বাড়িতে একজন ঘরকন্যার অভাব, সেই বাড়িতে পায়ে পা দিয়ে বসে থাকার ইচ্ছা ওদের মোটেও নেই। মাত্র একদিনের ওরা নিজের করে নিয়েছেন এই ফ্যামিলিটাকে।
ছাদের এক কোনে দাঁড়িয়ে আগামীকাল দিনটার অপেক্ষা করছে ধ্রুব। কখন রাত শেষ হয়ে নতুন ভোরের সূচনা হবে, কখন তারাকে নতুন ভাবে আপন করে নিবে, তারাকে নিয়ের সুখের মুহূর্ত গুলো আরও অসাধারণ ভাবে উপভোগ করবে, সেই আশাতেই পরম অপেক্ষার প্রহর গুণছে ধ্রুব।
পকেট থেকে ফোনটা বের করলো ধ্রুব। বারোটা ছুইছুই। আচ্ছা, এখনো কি তারা জেগে আছে? ফোন করলে ওকে পাওয়া যাবেতো?
নীলিমার ফোনে কল করলো ধ্রুব। কয়েকবার রিং বাজার ফলেও কলটা রিসিভ করলো না কেউ। শেষবারেরমতো আবারও ডায়াল করলো ধ্রুব, এইবার যদি কেউ রিসিভ না করে, তাহলে এতো রাতে আএ বিরক্ত করবেনা।
এইবার কাজে আসলো কলটা। ঘুম ঘুম কন্ঠে নীলিমা বললো..
-কে?
-নীল, আমি ধ্রুব।
-হুম, আমি ঘুমোচ্ছি। বায়.. বলে ঘুমের ঘোরেই কলটা কাটতে নিলো নীলিমা।
ধ্রুব তরিঘরি করে বললো..
-প্লিজ প্লিজ নীল, ফোন কেটোনা, আমার কথা শুনো।
নীলিমা ভালো করে চোখ মেলে তাকালো, বিছানায় উঠে বসে বললো
-এতো রাতে কল করলেন, কোনো সমস্যা ভাইয়া?
-তারা কোথায়?
নীলিমা পাশ ফিরে তাকালো তারার দিকে। খুব নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে ও। নীলিমা ফোনের দিকে নজর দিয়ে বললো
-ও ঘুমোচ্ছে।
-খেয়েছে রাতে?
-হুম।
-আচ্ছা। তাহলে ঘুমোও এখন।
-কোনো সমস্যা ভাইয়া?
-নাহ, এমনিতেই তারার কথা মনে পড়ছিলো খুব।
-এবার গিয়ে ঘুমান তো। আগামীকাল সকাল সকাল উঠতে হবেতো, তাইনা? মুচকি হেসে বললো নীলিমা। ধ্রুব হালকা করে হাসলো। বললো
-গুড নাইট নীল।
-ওয়েট ওয়েট ভাইয়া। ওয়েট
-কি
-ও কোথায়?
-কে?
-আমার স্কাই।
-রুমে আছে। হয়তো সেও ঘুমোচ্ছে।
-আমার কথা বলেছেন?
-বলা হয়নি এখনো।
-মানে কি ভাইয়া, আমি আপনার জন্য এতো করলাম, আর আপনি আমার জন্য এই সামান্য কাজটুকু করতে পারলেন না? সামান্য অভিমানী কন্ঠে বললো নীলিমা।
-খোটা দিচ্ছ?
-সারাজীবন দিয়ে যাবো। অভিমানী কন্ঠে জবাব দিলো নীলিমা।
-খোটার ভাগিদার আমি হতে চাইনা নীল। খুব শীঘ্রই আমি তোমার কথা বলবো।
-মনে থাকবে তো?
-খোটা শুনতে না চাইলে মনে তো রাখতেই হবে।।
-ঠিক আছে, মনে থাকলেই ভালো।
ধ্রুব ফোনটা কেটে দিলো। নীলিমা ফোনের দিক থেকে চোখ সরিয়ে তারার দিকে তাকিয়ে আছে একভাবে। কি চুপচাপ ঘুমোচ্ছে মেয়েটা। পারেও বটে। একগাল হেসে তারার পাশে চুপচাপ করে শুয়ে পরলো নীলিমা।
রুমের দিকে এগিয়ে খানিকটা হাটার গতি কমিয়ে দিলো ধ্রুব। পাশের রুম থেকে কারো কথার আওয়াজ আসছে কানে। ধ্রুব ভাবলো, একটু খোজ খবর নেওয়া যাক, আসার পর থেকে ঠিকঠাক ভাবে ওদের সাথে একটু কথা বলা হয়নি।
ধ্রুব ধীরপায়ে রুমের দিকে এগুলো। দরজাটা ভিড়ানো আছে, ভিতর থেকে লাগানো নেই তাই নক করার প্রয়োজন হয়নি। দরজার পাশে দাড়িয়ে ধ্রুব সামান্য গলা কাশি দিলো। ওর কাশির শব্দে দরজার দিকে তাকালো সীমা আর আকাশের মা। আকাশের মা ধ্রুবকে দরজার পাশে দাঁড়ানো দেখে তড়িঘড়ি করে বললো
-আরে বাবা, ওখানে দাঁড়িয়ে আছো যে, আসো ভিতরে আসো।
ধ্রুব রুমের ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে বললো
-এখনো ঘুমান নি আপনারা? কোনো সমস্যা হচ্ছে আপনাদের?
-না বাবা কোনো সমস্যা হচ্ছেনা আমাদের। তুমি এখনো ঘুমোওনি যে!
-আসলে, ঘুম আসছেনা।
সীমা হেসে বললো
-আজ রাতে ঘুমটা চোখে খুব কমই দেখা দিবে ছোটভাই।
-কি যে বলেন ভাবী। আপনারা খেয়েছেন? সকলের উদ্দেশ্যে বললো ধ্রুব।
-হ্যা, আমরা খেয়ে নিয়েছি, সীমা বললো।
ধ্রুব খেয়াল করলো আশা রুমে নেই। ও সীমাকে উদ্দেশ্য করে বললো
-আশা কোথায় ভাবী?
-ওয়াশরুম গেছে ও।
-ওহ।
-কিছু বলবে বাবা? ধ্রুবকে বললো আকাশের মা।
-না, এমনিতেই আপনাদের কথা শুনতে পেলাম। তাই এলাম দেখতে।
ধ্রুব চলে যাওয়ার জন্য উঠে দাড়ালো। আকাশের মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো
-আপনারা ঘুমান আন্টি। আমি এখন যাই।
-ধ্রুব বাবা, একটু দাড়াও। আকাশের মা করুনভাবে ডাকলো ধ্রুবকে।
উনার ডাকে পিছন ফিরে তাকালো ধ্রুব। উনার সামনে এগিয়ে এসে বললো
-কিছু বলবেন আন্টি?
-হ্যাঁ মানে.. আমতাআমতা করতে লাগলো আকাশের মা। ধ্রুব অবাক হয়ে বললো
-কোনো সংকোচ না করে বলুন আন্টি, কি বলতে চান?
-আকাশের ব্যাপারে কিছু বলতে চাচ্ছিলাম তোমার সাথে।
-আকাশের ব্যাপারে? কি হয়েছে আকাশের? খানিক অবাক হয়ে বললো ধ্রুব।
-এখানে বসোনা, বলছি।
ধ্রুব গিয়ে বসলো আকাশের মায়ের পাশে, সীমা বসেছে শাশুড়ির কাছেই। এতোক্ষণে আশাও চলে এসেছে ওয়াশরুম থেকে। ধ্রুবকে এতো রাতে নিজেদের রুমে দেখে খানিকটা অবাক হলো সে।
“আকাশের বুকে আজ নেই কোনো তারা,
এই মেঘে ঢাকা আকাশটা আজ বেজায় দিশেহারা।
আমি একা, আমি একাকী, একাকিত্ব আজ আমার সঙ্গী..
এই সাদা-কালো আকাশে আজ আমি বড়ই একাকী” (👉তন্বী)
একা একা গুনগুন করে নিজে নিজেই এইসব বুলি আওড়াতে লাগলো আকাশ। চোখদুটো বুজে আছে ওর, হাতে জলন্ত সিগারেট, মুখ থেকে সিগারেটের কালো ধোয়া বেরিয়ে আসছে অনর্গল। প্রেম বিরহে আজ বিলীন প্রায় এই মানুষটা। বেলকনির এক প্রান্তে একটা চেয়ারে সিগারেট হাতে বসে মেঘেঢাকা আকাশটার দিকে তাকিয়ে অতীতের সুন্দর মুহুর্তগুলো মনে করার চেষ্টা করছে আকাশ। চোখের বাধ বড়ই খারাপ। মনটা বড়ই স্বার্থপর। এ মন নিজের হয়েও অন্যের জন্য ভাবে, এ চোখদুটো বড়ই বিষাদময়, নিজের শরীরের এক অংশে ঠায় পেয়েও অন্যের জন্য কাদে। একবারও নিজের জন্য ভাবেনা। এ বিষাদময় মুহুর্তগুলো চায়না আকাশ, এ থেকে মুক্তি চায় ওর বিরহগাথা মনটা। কিন্তু পাচ্ছেনা সে মুক্তি, যতোই ভুলতে চাইছে ততই দ্বিগুণ বেগে সেটা মনের মধ্যে আরো গভীরভাবে জেকে বসেছে। সন্ধ্যায় তারার কথা শোনার পর থেকে এই অশান্ত মনটা আরো অশান্ত হয়ে পরেছে। তারা কিভাবে বলতে পারলো এই কথাটা? ওকি জানেনা এই বেয়াহা মনটা শুধু তারাকে চেয়েছিলো, তারাকে ভালোবেসেছিলো।
ভালোবাসায় জোরাজুরি সে কখনই পছন্দ করেনা। সে মন থেকে চেয়েছিলো তারাকে, কিন্তু জোর করে পেতে চায়নি। সে অধিকার পেতে চেয়েছিলো, অধিকার খাটাতে চায়নি।
তারার ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে ওকে ভালোবাসার জন্য নাজেহাল করেনি আকাশ, ওকে ছেড়ে দিয়েছে ওর ভালোবাসার মানুষটির জন্য, ওর সুখেই আকাশের সুখ, সেটা নির্ধিদ্বায় মেনে নিয়েছে আকাশ। কিন্তু তাই বলে আরেকজন মেয়েকে বিয়ে করা, তাকে নিয়ে সংসার করা, এটা কিভাবে সম্ভব?
তারা আবদার করেছিলো আকাশের কাছে এটা। কিন্তু এর বিনিময়ে আকাশ কিছু বলতে পারেনি তারাকে, কিইবা বলবে সে? বলার মতো কিছুই ছিলোনা ওর ভাষায়।
আকাশ জানে, তারা ওর নয়। অন্য কারো, আকাশ মানে, আর যাইহোক জোর করে কখনো ভালোবাসা পাওয়া যায়না, আর এতে আকাশ বিশ্বাসীও। কিন্তু সেটা মানতে যে বেজায় কষ্ট হচ্ছে আকাশের। এটা না পারছে কাউকে দেখাতে, আর না পারছে কাউকে বুঝাতে। এর চাইতে কষ্টকর আর কি হতে পারে?
জানেনা আকাশ।
ধ্রুব প্রশ্নবিদ্ধ নজরে তাকিয়ে আছে আকাশের মায়ের দিকে। আকাশের মা খুবই অস্বস্তিবোধ করছে, কিভাবে কি শুরু করবে বুঝতে পারছেন না উনি। ধ্রুব আকাশের মায়ের হাত নিজের দুহাতের মুঠোয় পুরে নিলো। আকাশের মা এতে অবাক হয়ে তাকালো ধ্রুবর দিকে। ধ্রুব মুখে হাসির রেখা টেনে বললো
–আমাকে নিজের ছেলে ভেবেই সবটা বলুন আন্টি। আমি সবকিছু শোনার জন্য প্রস্তুত।
-আসলে বাবা, কিভাবে যে কি বলবো বুঝতে পারছিনা।
-বললাম তো, নিজের ছেলে ভেবেই বলুন।
-আকাশকে নিয়ে খুব চিন্তিত আমরা সকলেই। বুঝতে পারছিনা ওকে কিভাবে কি করবো, কিভাবে সামলাবো।
-কি হয়েছে আকাশের? আমাকে খুলে বলুন আন্টি।
-আসলে, তুমি তো জানোই বাবা, তারাকে আকাশ পছন্দ করতো, শুধু পছন্দ না, ভালোও বাসতো অনেক। আর সেটা নিঃস্বার্থভাবে।
-আমি জানি আন্টি। নিচের দিকে তাকিয়ে বললো ধ্রুব।
-ও ভেবেছিলো, তারার জীবনে তুমি কখনোই আসবেনা। আর ও তারাকে বিয়ে করবে, সংসার করবে। কিন্তু সেটা তারার মত নিয়েই। ওর অমতে কিছু করার মানসিকতা আকাশের কখনোই ছিলোনা।
-হুম আন্টি। আকাশকে আমি খুব ভালোভাবেই চিনেছি। ওর মন মানসিকতা একদমই ফ্রেশ। তা নাহলে ও যেভাবে তারাকে ভালোবাসতো, আমিতো ভেবেছিলাম, তারাকে সে জোর করে আটকে রাখবে। কিন্তু সেটা ও করেনি। আর তখনই আমি আকাশকে খুব ভালোভাবেই চিনে গেছি।
-কিন্তু বাবা, এখন সমস্যা হচ্ছে আরেকটা।
-কি সমস্যা আন্টি? বিচলিত হয়ে বললো ধ্রুব।
To be Continue…….
(কিছুদিন আগে আব্বু ব্রেইন স্ট্রোক করলো, যার কারণে একপাশে কিছুটা প্যারালাইজড এর মতো হয়ে গেছিলো। এখনো পুরোপুরি সুস্থ হয়নি। ডক্টর বলেছে প্রায় ছয় মাস লাগবে পুরোপুরি সুস্থ হতে। এই শোকটায় এখনো সামলাতে পারিনি।
কিছুদিন আগে একজন দাদা মারা গেলেন। আরো কয়েকদিন পর দাদী শাশুড়ী মারা গেছেন। সেটাও আমার প্রথম বিবাহ বার্ষিকীর দিন। 😣😣
আমি কিভাবে কি করবো বুঝতে পারছিনা। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন 🙏)
To be Continue….