জানি দেখা হবে পর্ব ৩৫+৩৬

#জানি_দেখা_হবে❤️
Israt Jahan Tanni ✍️
#Part_35

পড়ন্ত বিকেলের লাল সূর্যের আভাটা এতোটাই কোমল থাকে যার প্রেমে পড়ে যায় অনেকে। অনেকে হয়তো ধারণাই করতে পারেনা, কেন এই সময়টা এতোটা মায়ায় বাধা থাকে। এই সময়টা কেন আসে এই সময়? আসেই যখন কেনই বা সেটা থমকে থাকেনা? এমন অনেক মুহূর্ত আছে, যেটা মানুষ চায় থমকে থাকুক, কিন্তু সময় তার নিজ গতিতে চলে, থেমে থাকেনা কারো জন্য।

যখন তারা জানতে পারলো, ধ্রুব আর ওর ফ্যামিলি ওর বিয়ের জন্যই এসেছে ওদের বাসায়, তখন নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারেনি তারা। এটা কিভাবে সম্ভব? ওরা তো আগে থেকেই বিবাহিত, তাহলে কেন এই মজা, ভেবেই দুশ্চিন্তায় পরে গেছিলো তারা। ওরা যাবার পর নীলিমাকে বেশ করে ধরার পর জানতে পারে ওরা সত্যিই তারার বিয়ের প্রস্তাব নিয়েই এসেছে। এতোটুকু বলেই চলে গেছে নীলিমা। তারার মাথা কাজ করা বন্ধ হয়ে গেছে। হটাৎ এমন করার মানেকি সেটাই বুঝতে পারছেনা ও। তবে মনে খুব আনন্দও কাজ করছে। ইচ্ছে করছে সেই সময়টা আবারও আসুক, যখন একভাবে ধ্রুব ওর দিকে তাকিয়ে ছিলো, চোখের মাধ্যমে ভালোবাসা বিনিময় করছিলো সে, তারার লজ্জায় তখন প্রাণ যায় যায় অবস্থা, কিন্তু এখন আফসোস করছে, কেন সময়টা তখন থমকে দাড়ালো না, কেনো মুহুর্তটা এতো তারাতাড়ি শেষ হয়ে গেলো?

বেলকনির এক কোনায় একটা ইজি চেয়ারে বসে হাতে গরম কফির মগ নিয়ে মাঝেমধ্যে ছোট্ট করে চুমুক দিচ্ছে আর দুপুরের ঘটে যাওয়া ঘটনাটা মনের মধ্যে আবারও রিপিট করে যাচ্ছে তারা। মাঝেমধ্যে নিজের অজান্তেই ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠছে ওর।
নীলিমা কিছুটা হেলে দুলে এগিয়ে এলো তারার দিকে। তারাকে এইভাবে বসে থাকতে দিয়ে দেখে পিছন থেকে ওর মাথায় একটা টোকা দিলো সে। ধরফরিয়ে উঠলো তারা। নীলিমা তারাকে দুহাতে শান্ত করতে করতে বললো
-রিল্যাক্স তারু, আমিই এসেছি, কোনো ডাকাত টাকাত নয়।
-ওহ তুই। কখন এলি?
-উমম, অনেক্ষন। কি ভাবছিস?
-কিছুনা।
-আমি জানি তুই কি ভাবছিস?
-কি ভাবছি?
-তোর দুলহান কে নিয়ে ভাবছিস, সেটাই তো?
তারা লজ্জা পেলো, লজ্জায় মুখ টা কিছুটা রক্তবর্ণ ধারণ করলো ওর। নীলিমা হাসতে হাসতে বললো
-ওরে আমার লাজুকলতা রে, এতো লজ্জা আসে কোথা থেকে? Anyway, যেখান থেকে খুশি সেখান থেকে আসুন, আমার তাতে কিছু আসে যায়না। এবার এটা বল, কেমন দিলাম?
তারা ভ্রু কুচকালো নীলিমার কথায়। ভ্রু বাকিয়ে সন্দিহান ভাবে নীলিমাকে প্রশ্ন করলো
-কেমন দিলি মানে?
-এখনো বুঝছিস না গাধী, এইটা তো তোর সখা আর আমার প্ল্যান ছিলো। ইনফ্যাক্ট, তোকে আবার রাগ দেখিয়ে বাসা থেকে চলে যেতে বলা সেটাও ওর প্ল্যান ছিলো, যাতে তোকে সারপ্রাইজটা দিতে পারে। আর..
-আর কি? উৎকন্ঠা গলায় বললো তারা।
-আর আমিও যে এলাম না, সেটাও তোর ওই মজনুর কথায় এসেছি।
-এতোকিছু? আর আমাকে কিছুই বললিনা?? তুই কি আমার বন্ধু, নাকি ওই বেটার? মুখ বাকিয়ে বললো তারা। নীলিমা ঠোঁট উল্টিয়ে বললো
-কিচ্ছু করার নাই, নিষেধ ছিলো।
-হুহ, কথা বলবিনা আমার সাথে।
-ওকে, বলবোনা।
তারা কিছুক্ষণ কি যেনো ভাবলো। তারপর নীলিমার দিকে তাকিয়ে বললো
-এইসব কেন করলো ও? আমাদের তো বিয়ে হয়েই আছে। তাহলে আবারও এইসব করার প্রয়োজন কি?
-কথা বলতে বারণ করেছিস, কিভাবে বলবো?
-ভাব ধরবিনা। যেটা জিগ্যেস করছি, সেটার উত্তর দে।
নীলিমা এইবার তারার দিকে তাকালো। তারপর হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে বিজ্ঞের মতো বলা শুরু করলো
-শোন, তোদের বিয়েটা কিভাবে হয়েছিলো বল?
-একটা এক্সিডেন্ট। মুখ কালো করে বললো তারা।
-এক্সাক্টলি, আর সেইজন্যই ধ্রুব ভাইয়ার এই আয়োজন। সে চায় তোদের বিয়েটা পূর্ণতা পাক,যেটা আগে হয়নি। একটা বিয়ের আয়োজন প্রথম থেকে যেসকল নিয়ম মেনে শুরু হয় ঠিক সেই সেই ভাবেই প্রতিটা স্টেপ কমপ্লিট করেই এইবার তোদের বিয়েটা হবে, আর সেই ব্যবস্থা করেই উনি এবার মাঠে নেমেছেন।

তারার চোখমুখ চিকচিক করছে আনন্দে, এতো বড় একটা সারপ্রাইজ পাবে সে স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি। ওর জীবনেও এমন একটা দিন আসবে সেটা মেঘ না চাইতেও বৃষ্টির মতো। নীলিমা ওর মুখের দিকে তাকিয়ে একটা শান্তির হাসি দিলো। কন্ঠে গভীরতা এনে বললো
-তুই এইবার খুশিতো তারু?
-তুই সত্যি বলছিস তো নীল। এটা স্বপ্ন নয়তো?
-মোটেও না, এটা বাস্তব। ভালো করে তাকিয়ে দেখ চারপাশটায়।
তারা চোখ বুঝলো। নীলিমার হাতদুটো নিজের হাতের মুঠোয় পুরে নিয়ে বললো
-আমার জীবনে অনেক বাধায় পার করে এসেছি নীল, এইবার কেন যেনো ভয় হচ্ছে আমার।
-প্রেমের মধ্যে ভয় না থাকলে রস নিবিড় হয় না রে পাগলী। আর এতো ভয় পাচ্ছিস কেন? সব ভয় মন থেকে ঝেড়ে ফেলে দে। দেখবি, ভালোবাসাগুলো তোকে কিভাবে সুখের নিবিড়ে তোকে আচ্ছাদন করে রাখে।

তারা কিছু বলার ভাষা যেনো হারিয়ে ফেলেছে। সে আচমকায় নীলিমাকে জড়িয়ে ধরলো। চোখদুটো পানিতে ভরে গেছে তারার। এ পানি সুখের, এতে নেই কোনো দুখের খাদ। নীলিমা বুঝে গেছে তারার মনের অবস্থা। কোনো কথা না হওয়া স্বত্বেও পেয়ে গেছে ওর করা প্রশ্নের উত্তর।
তারা নীলিমাকে জড়িয়ে ধরেই বললো
-তোকে অনেক অনেক থ্যাংকস রে নীল, আমার জীবনে এমন একটা দিন উপহার দেওয়ার জন্য।
নীলিমা নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো আলতোভাবে। তারার চোখের পানি মুছতে মুছতে বললো
-এটা আমি করিনি, ভাইয়া করেছে রে। আমি শুধু উনার সাথে ছিলাম।
তারা কোনো জবাব দিলনা। নীলিমা হটাৎই মুখভার করে বলে উঠলো
-এইবার তো তোর ছাগলটাকে পার্মানেন্টলি পেয়ে গেলি, না জানি আমার ছাগলটা কোথায় আছে। এ জন্মে সেই ছাগলটার সাথে দেখা হবে কিনা কে জানে।
নীলিমার এমন কথায় থতমত খেয়ে গেলো তারা।
-ছাগল মানে? কি বলছিস এইসব? পাগল হয়ে গেলি নাকি?
-নিজের ছাগলটা তো পেয়েই গেছিস, এখন অন্যদের পাগল ছাড়া আর কিইবা ভাবতে পারবি।
-সিরিয়াসলি নীল, আমি বুঝতে পারছিনা তোর কথা।
-বুঝবিনা, বুঝার বয়সও হয়নি তোর। ফিডার এনে দিবো? খাবি?
-ধুর, কি বলছিস এইসব?
-তোর মুন্ডু বলছি। হনহন করে চলে গেলো নীলিমা। ওর কথার আগামাথা কিছুই বুঝে আসেনি তারার। সে আহাম্মকের মতো তাকিয়ে থাকলো নীলিমার যাওয়ার দিকে।

ধ্রুবদের বাসায় সাজ সাজ রব পড়ে গেছে। তারার সাথে ওর বিয়েটা অনেক জাকজমকভাবেই পালন করবে ওরা। তারাদের বাসা থেকে আসার পর থেকেই ব্যস্ত মুহূর্ত কাটাচ্ছে ওরা সবাই। আত্মীয়রা এখনি আসবেনা, তবে দুই একদিনের মধ্যেই আসা শুরু করে দিবে। আগে বাসাটাকে ভালো ভাবে ডেকোরেট করতে হবে। পুরো বাসাটাতে ফুল দিয়ে আচ্ছাদন করে দিবে। তবে সেটা এখনই না। সেটার প্ল্যানিং চলছে।

রাতের খাওয়া শেষ করে বিছানায় এসে বসলো তারা। নীলিমা এখনো আসেনি। সে ডাইনিং টেবিলটা ক্লিন করেই রুমে আসবে। তারা চেয়েছিলো সেই করুক এগুলো, নীলিমা দেয়নি। ওর কথা, বিয়ের কনে যদি এখন কাজ করে তাহলে কাজের ফলে গায়ের রংটা কালো হয়ে যাবার আশংকা আছে। আর বিয়ের দিন ওকে কালো দেখাক, সেটা মোটেও চায়না নীলিমা।
সবকিছু গুছিয়ে বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে তাওয়াল দিয়ে হাত মুখ মুছতে মুছতে রুমে ঢুকলো নীলিমা। তারাকে এভাবে বসে থাকতে দেখে বললো
-কিরে, বসে আছিস কেন এভাবে? ঘুমোবি না?
-তোকে রেখে ঘুমোই কি করে?
-কিছুদিন পর তো ঠিকই পারবি। এখন এতো দরদ না দেখালেও চলবে।
-মাইর খাবি। সবসময় এমন ত্যাড়াব্যাকা কথা বলিস কেন।
-আমার জন্মই ত্যাড়াব্যাকা লগ্নে।
-মানে?
-সেটা বিয়ের কনের না ভাবলেও চলবে।
-বার বার বিয়ের কনে বিয়ের কনে বলে চিল্লাচ্ছিস কেন?
-বিয়ের কনে কে তাহলে কি বার্থডে গার্ল বলবো?
-তোর সাথে কথা বলাই মুশকিল।
-ভাইয়া কল করেছিলো?
-নাহ।
-করবেও না।
তারা ভ্রু বাকা করে নীলিমার দিকে তাকালো। নীলিমা ওর তাকানোর ধরন আচ করতে পেরে বললো
-সবসময় উল্টো বুঝে আমার দিকে এমন পেত্নীর মতো করে তাকাস কেন? আমি কি তোকে ভয় পাই? পাইনা তো, তাহলে কেন নিজের এনার্জি এভাবে লস করছিস। যেটুকু এনার্জি আছে সেটা স্টকে রাখ, ভবিষ্যতে কাজে লাগবে। আর হ্যাঁ, আমি বুঝাতে চাইছি, দুদিন পর উনার বিয়ে, তাই খুব ব্যাস্ত সময় পার করছে, তাই ফোন করার টাইম নাই।
-দুদিন পর বিয়ে মানে?
-এতো জেরা করিস কেন তুই? দুদিন পর না হোক, চারদিন পর তো হবে। আজ আসছিলোনা ডেইট ফিক্সড করতে। সেটাই করে গেছে ওরা।
-বিয়ের ডেইট পর্যন্ত ফিক্সড, আর আমি কিছুই জানিনা!!
-তোর জেনে কাজ নেই।

বিয়ের দিন ঠিক করা হয়েছে সামনের শুক্রবার, বৃহস্পতিবারে গায়ে হলুদ করা হবে। ছেলে মেয়ের হলুদ এক সাথেই করানো হবে, মেহেদী টাও সেখানেই পরানো হবে। তার জন্য কমিউনিটি সেন্টার ঠিক করা হয়ে গেছে। এখন শুধু এদিকটার বন্দবস্ত করতে হবে, হাতে টাইম নেই বেশি। তারার বাবা খুবই ব্যস্ত এই সময়ে। একা একা সবকিছু সামলানো দায় হয়ে গেছে, এই জন্য তারার মামাকে খবর পাঠিয়েছেন গতকাল। আজই চলে আসবেন উনি উনার ফ্যামিলি নিয়ে। তারার সৎ মায়ের জন্য কোনো আত্মীয়দের সাথে যোগাযোগ পর্যন্ত করতে পারেননি তারার বাবা। মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে সেটাও ঠিকঠাক হয়ে যাচ্ছে। রবির বউ মানে তারার খালাতো বোন আজ সকালেই এসে গেছে। রবিও এসেছে সাথে। ওরাও সমান তালে সাহায্য করে যাচ্ছে প্রতিটা কাজে।

দেখতে দেখতে দুটো দিন কেটে গেছে। আগামীকাল তারার হলুদ, কিন্তু হলুদের শাড়ি আর গহনায় কেনা হয়নি এখনো। তারা, নীলিমা আর রবির বউকে মার্কেটে পাঠিয়ে দিয়েছে ওর বাবা। মেয়েটার পছন্দেই কিছু কিনুক, এইটাই বাবার মনের ইচ্ছা।

মার্কেটে গিয়ে হুলুস্থুল বাধিয়ে দিলো নীলিমা, সেখানে এক ভদ্রলোকের সাথে আচমকাই ধাক্কা খেয়ে ফেলে সে, তখন থেকেই তুমুল ঝগড়া। ভদ্রলোকটি বার বার স্যরি বলা সত্ত্বেও নিজেকে সামলাতে পারছেনা নীলিমা। তারা খুব করে বুঝাচ্ছে নীলিমাকে। কিন্তু কিছুতেই কাজ হচ্ছেনা। শেষে বিরক্ত হয়ে যান ভদ্রলোকটি। কপাল ভাজ করে কর্কশ গলায় বলেন
-উনাকে পাবনায় নিয়ে যান, ট্রিটমেন্ট প্রয়োজন উনার। যদি সেটা না পারেন তাহলে রুমে তালা মেরে বের হবেন, এমন একজন মেন্টালকে সাথে নিয়ে বের হন কোন আক্কেলে?
ভদ্রলোকের এই কথায় নীলিমার তেজ আরো তিনগুণ বেড়ে গেলো। সে হাতে থাকা শপিংগুলো এক ঝটকায় উনার গায়ে ছুড়ে মারে। ফুসতে ফুসতে বলে…
-আমি পাবনায় যাবো নাকি শশুরবাড়ি যাবো তাতে তোর কি, চোখ সাথে নিয়ে চলিস না? ইচ্ছে করে গায়ে গা লাগাস, বললেই দোষ। আমি পাগল তাইনা? তুই পাগল, তোর দাদা পাগল, তোর নানা পাগল, তোর চোদ্দগুষ্টি পাগল। আরেকটা বাজে কথা বলবি না, রাম দা নিয়া কুপাবো বললাম।
লোকটি নীলিমার কথার জবাবে কি বলবেন বুঝতে পারছেনা। শেষে নিজের মান বাচাতে মাথা নিচু করে চলে যান উনি। নীলিমা এখনো লোকটির দিকে তাকিয়ে বিরবির করে গালি দিচ্ছে। তারা সামলাতে পারছেনা নীলিমা কে। শেষে রবির বউ আর তারা দুজনে মিলে অনেক জোর করে নীলিমাকে বাসায় নিয়ে গেলো।

সবুজ পাড়ের একটা কাচা হলুদের শাড়ি পরে স্টেজে বসে আছে তারা। কাচা ফুলের গন্ধে মো মো করছে চারিদিকটায়। গোলাপ আর গাদা ফুলের মালা দিয়ে সাজানো হয়েছে তারাকে, সেইসাথে চারপাশটাও।
নীলিমা আজ খুব সুন্দর করে সেজেছে, সেও বউ এর সাথে ম্যাচ করে সবুজ পাড়ের হলুদ শাড়ি পরেছে। সেই সাথে শাড়ির সাথে ম্যাচ করে কাচের চুড়ি আর হালকা গয়না পরে নিয়েছে সে। এতেই অপূর্ব লাগছে ওকে। এতো এতো আত্মীয়ের মাঝে নীলিমাকে অনন্য লাগছে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই ধ্রুবরা চলে এলো কয়েকটা গাড়ি করে। এক সাথেই দুইজনের হলুদ ছোয়া হবে, সেইজন্য সকল আত্মীয়রা কমিউনিটি সেন্টারেই চলে এসেছে। চারিদিকটা গমগম করছে। ধ্রুবরা এক এক করে ভিতরে ঢুকছে। ধ্রুবদের বাসার সকল ছেলেরাও হলুদ পাঞ্জাবী, আর মেয়েরা হলুদ শাড়ি পরেছে। নীলিমা চারিপাশটা ঘুরে ঘুরে দেখছে ঠিক সেই সময় কাউকে দেখে চোখ আটকে যায় ওর। বেশ হ্যান্ডসাম একটা ছেলে ফরমাল ড্রেসে এসেছে এখানে। এক দেখাতেই নীলিমার চোখ আর মন তাতে আবদ্ধ হয়ে পড়ে। নীলিমা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ছেলেটার দিকে। হটাৎই চোখের পলকেই ছেলেটা চলে যায় নীলিমার চোখের আড়ালে। হন্তদন্ত করে চারপাশটা ভালো করে খোজতে লাগে নীলিমা। এক সময় ধ্রুবর সাথে পেয়েও যায় তাকে। খুশিতে চিকচিক করতে থাকে নীলিমার চোখ।৷ তারাহুরো করে তারার কাছে গিয়ে বসে নীলিমা। নীলিমা কে এভাবে হন্তদন্ত করে আসতে দেখে অবাক হয়ে তাকায় তারা। ওকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নীলিমা বলে উঠে
-জানিস তারু, আমার আশা পূরণ হয়েছে। আমার ছাগলটাকে খোজে পেয়ে গেছি আমি।
#জানি_দেখা_হবে❤️
Israt Jahan Tanni ✍️
#Part_36

ভালোবাসার মানুষটির সাথে বোধহয় এভাবেই দেখা হয়ে যায়। জানা নেই, শোনা নেই, হুট করে কেউ একজন মনের মধ্যে কড়া নেড়ে বাসা বেধে ফেলে। ভালবাসা সেই বাসাটিকে স্থায়ীত্ব দেয় আর শক্তপোক্ত করে, মজবুত করে।
যদিও নীলিমা মুখে বলে প্রেম ভালোবাসা তার দ্বারা হবেনা, এগুলোকে ছাগল পোষার সাথে তুলনা করে, তবুও মনে মনে কে না চায় কেউ তাকে ভালোবাসুক। নীলিমার ব্যাপারটাও তাই। একটাই আশা ওর, কেউ একজন ওর জীবনে আসুক, খুব করে ভালোবাসুক তাকে। মনের সমস্ত অনুভূতিগুলো জড়ো করে দুজন দুজনাতে আবদ্ধ হয়ে যাক। এমন কোনো মানুষের দেখা নীলিমা পায়নি আগে। কিন্তু এখন পেয়ে গেছে। নীলিমার মনে হচ্ছে এই সেই পুরুষ, যার অপেক্ষায় এতোদিন শুধু প্রহর গুণে এসেছে সে। এই সেই মানব, যার কারণে এখন পর্যন্ত ওর মনে কেউ উকি দিতে পারেনি। ছেলেটাকে দেখার পর থেকেই নীলিমার সবকিছু উলট পালট হয়ে গেছে। কি করছে বা কি করবে কিছুই বুঝতে পারছেনা নীলিমা।

তারা অনেক্ষন যাবত খেয়াল করছে নীলিমা কিছু একটা নিয়ে গভীর ভাবনায় আছে। সে নীলিমাকে আস্তে আস্তে ধাক্কা দেয়। নীলিমার হুশ ফিরে। এতোক্ষন সে তার ভালোবাসার মানুষটিকে নিয়ে স্বপ্নে মশগুল ছিলো। তারার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে নীলিমা –
-কি ব্যাপার? ধাক্কা দিচ্ছিস কেন?
-কোথায় হারিয়ে গেছিস তুই?
-আমি আবার কোথায় হারাতে যাবো। তোর পাশেই তো বসে আছি।
-মনটা এখানে আছেতো?
-তুই না ডিটেকটিভ হয়ে গেছিস।
-হলে হলাম। কি ভাবছিলি?
নীলিমা গালে হাত দিয়ে আবারও ভাবনায় মন দিলো। আগের মতো ভাবনারত অবস্থাতেই তারাকে বললো.
-খুব টেনশনে আছিরে বনু, আমি যাকে এক দেখাতেই ভালোবেসে ফেললাম, সে কি তা গ্রহণ করবে?
-এক দেখাতেই ভালোবাসা! আজব।
-আজবের কি হলো এতে, তুই কি লাভ এট ফার্স্ট সাইটে বিশ্বাসী না?
-নাহ।
-এভাবে বলতে পারলি তুই? আমার কচি হার্টটাকে এতোটা অ্যাটাক করাতে পারলি। তুই কি আমার আপন বান্ধবী? আমার তো এখন মনে হচ্ছে তুই আমার সৎ বান্ধবী।
-বান্ধবী আবার সৎ হয় কেমনে?
-তুই যেমনে হইছিস, ঠিক সেমনে।
-এইটা কেমন ভাষা নীল? সেমনে কি?
-ছন্দ মিলাইছি, দুইদিন পর প্রেম করমু, একটা ভাব আনা লাগবে তো মনে তাইনা।
-পারিস ও বটে তুই।
-চুপ থাক। বিয়ের কনে হয়ে এতো কথা কস কেন।
-ওকে। থাকলাম চুপ।

কিছুক্ষনের মধ্যের ধ্রুবকে এনে বসানো হলো তারার পাশে। ধ্রুব আঁড়চোখে তারাকে দেখছে আর মুচকি মুচকি হাসছে। যেটা তারাকে বেজায় অস্বস্তিতে ফেলছে। তারা না পারছে ধ্রুবর দিকে তাকাতে, আর না পারছে এখান থেকে চলে যেতে। আত্মীয়রা সবাই নিজেদেরকে ফিটফাট করে নিচ্ছে আবারও। হলুদের প্রোগ্রামটা ভিডিও করা হবে, সেইজন্য সবার এতো নিজেদের প্রতি কেয়ার বেড়ে গেছে। সবার নজর এখন অন্যদিকে। ধ্রুব ফিসফিস করে তারাকে বললো..
-রেগে আছো?
-রেগে থাকাটাই কি স্বাভাবিক না? নিচের দিকে তাকিয়ে নরম স্বরে বললো তারা।
-আই এম স্যরি বউ। তোমাকে সারপ্রাইজ দেবো বলেই তোমার সাথে এমনটা করেছিলাম।
-ঠিক আছে। স্যরি বলার প্রয়োজন নেই।
-বউ..
অস্পষ্ট ভাবে ভাংগা গলায় ফিসফিস করে বললো ধ্রুব। এইরকম ভাবে বলায় তারার মনের মধ্যটা যেনো কেউ খুব যত্নসহকারে ছুরিকাহত করে দিলো। তারা খানিকটা কেপে উঠলো। গভীর আবেশে তাকালো ধ্রুবর দিকে। ধ্রুবর চোখদুটো জানান দিচ্ছে সে বড়ই তৃষ্ণার্ত। তারা তাকিয়ে থাকতে পারলোনা সে চোখের দিকে। তারাহুরো করে চোখ নামিয়ে নিলো যথাসম্ভব। ধ্রুব হাসলো। ফিসফিস করে বললো
-যত ইচ্ছে এখন এড়িয়ে যাও আমাকে। পরে কোনো সুযোগ পাবেনা। এতোগুলো দিন ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়েছি আমি, বঞ্চিত হয়েছি বউ এর আদর থেকে, না নিজে পেয়েছি, আর না দিতে পেরেছি। সব সুদে আসলে আদায় করবো। রেডি থেকো বউ।
ধ্রবর বলা প্রতিটা কথা তারার বুকে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে। এ যেনো সুখের আগুন। এ আগুনে সে জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যেতে চায়। এতে নেই কোনো অনুশোচনা, নেই কোনো জ্বালা। এতো প্রেমের আগুন।

নীলিমা ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে শাড়ির কুচি ঠিক করতে করতে এগুতে লাগলো। সামনেই ফ্লোরে পরে থাকা পানিগুলো নজরে আসেনি ওর। পানিতে পা রাখা মাত্রই অসতর্কতাবশত পা পিছলে যায় ওর। এক্ষুনি বড় একটা দুর্ঘটনা ঘটবে, হাত পা ভেংগে যাবে, সারাজীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যাবে, বিকলাঙ্গ ভাবে কাটাতে হবে প্রতিটি মুহূর্ত, এইরকম একটা খারাপ চিন্তা মুহুর্তেই কাজ করতে লাগলো নীলিমার মাথায়। চোখমুখ খিচে একটা গগনবিদারী চিৎকার করে বলে উঠলো…
-ইয়া আল্লাহ, মেরেকো মাদাদ কারো, বাচালে মুজে।
অনেক্ষন হয়ে গেছে, তবুও নিচে পড়ে যায়নি নীলিমা। কিছু একটার মধ্যে আটকা পড়ে আছে সে। কিন্তু যেভাবে পিছল টা খেয়েছিলো কম হলেও কোমড় ভেংগে যাওয়ার কথা। নীলিমা পিটপিট করে চোখ মেলে তাকালো। চোখ খোলা মাত্রই একটা ঝটকা খেলো সে। এক জোড়া হাত ওকে আষ্টেপৃষ্টে ধরে আছে, এগুলো তো তার হাত, যাকে এক নজর দেখেই নিজের অজান্তেই মন দিয়ে ফেলেছে নীলিমা। এই মুহূর্তে নীলিমা পরম সুখ অনুভব করছে, আবেশে চোখ দুটো বুজে নিলো সে। আর তখনই একটা তিক্ত কন্ঠের আওয়াজ নীলিমার কানে বেজে উঠলো।

-সমস্যা কি, সোজা হচ্ছেন না কেনো? কতোক্ষন এভাবে ধরে রাখবো আপনাকে?
নীলিমা চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে সেই নাম না জানা লোকটা ওর দিকে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাকিয়ে আছে। নীলিমা এখনো ওর বাহুডোরে বন্দী, সে কোনো কিছু না ভেবেই মনের অজান্তে বললো..
-থাকি না এভাবে কিছুক্ষন, ভালোই তো লাগছে।
-ওকে, থাকেন আপনি এভাবে। বলেই নীলিমাকে ফট করে ছেড়ে দিলো সে। আচমকা এমন করায় ধপাস করে নিচে পরে গেলো নীলিমা। প্রচন্ড ব্যাথায় ককিয়ে উঠে বললো
-ওমাগো, মরে গেলাম। কোমড় টা বুঝি এইবার সত্যি সত্যিই ভেংগে গেলো। আপনি কেমন মানুষ, এইভাবে আমার মতো একটা সুন্দরী মেয়েকে এতো বড় ব্যাথাটা দিতে পারলেন আপনি?
-যে যেটা ডিজার্ভ করে তাতে সেটা দেওয়াই উচিত।
নীলিমা কোমড়ে হাত দিয়ে অনেক কষ্টে উঠে দাড়ালো। কিছুটা মেজাজ দেখিয়ে বললো
-আপনার কাছ থেকে এটা মোটেও এক্সপেক্ট করিনি আমি।
-তো কি ভেবেছিলেন, আপনাকে কোলে নিয়ে মালিশ করে দিবো?
-আশ্চর্য, এভাবে রাগ দেখাচ্ছেন কেন?
-রাগ আমার পারসোনাল সম্পত্তি, তাই দেখাচ্ছি। যেতে যেতে বললো সে।

নীলিমা পিছন পিছন আসতে আসতে বললো
-ওকে ওকে, আই ডোন্ট মাইন্ড।
-বাট আই ডু।
-হোয়াই? অবাক হয়ে বললো নীলিমা।
-আপনি আমার পিছু নেওয়া বন্ধ করুন, বিপদে পড়েছিলেন, তাই মানবতার খাতিরে সাহায্য করেছি মাত্র। নীলিমার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বললো সে।
-আপনার পিছু নেওয়া বন্ধ করবো?
-হুম। এবং সেটা এক্ষুনি।
-ওকে, তাহলে আপনার পাশাপাশি আসছি।
-আপনি আমার সাথে মজা করা শুরু করেছেন?
-মজা করাটা আমার পারসোনাল সম্পত্তি।
-আমার কথা আমাকেই রিপিট করছেন? সমস্যা কি আপনার?
-আই এম অল রাইট। নো সমস্যা। বলেই হাসতে লাগলো নীলিমা।
-ডিজগাস্টিং। বলেই হনহন করে চলতে লাগলেন উনি।
-আপনার পিছু আসলেও সমস্যা, পাশাপাশি আসলেও সমস্যা! তাহলে আপনি আমার পিছু পিছু আসেন। তাহলে তো কোনো প্রবলেম নেই । ঠিক বলেছি না?
-Are you crazy? Is the head okay? Know at home? Get out of here. Don’t show me this face. Leave me, leave me alone.
-বাবাহঃ এতো রাগ?
-শাট আপ। আর কখনো যেনো আপনাকে আমার আশেপাশেও না দেখি। কি গায়ে পড়া মেয়ে, জঘন্য।
বলেই উনি হনহন করে চলে যেতে লাগলেন।
নীলিমা কিছুক্ষণ নিজের জায়গাতেই দাঁড়িয়ে রইলো। ওই ছেলেটা ওকে জঘন্য বললো? পরক্ষনেই নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে মনে মনে বললো..
-নো প্রব্লেম, আমি কিছু মনে করিনি। প্রেমে পড়লে প্রথম প্রথম এমন হয়ই। বলেই পিছন পিছন ছুটলো নীলিমা।
-ও হ্যালো, যাচ্ছেন যান। নামটা তো বলে যান।
-আপনি আবারও আমার পিছু নিয়েছেন? সমস্যা কি আপনার?
-আপনি যদি আমার সামনে সামনে থাকেন, তাহলে আমার কি করার আছে?
-মাথা খারাপ করে দিবে এই মেয়েটা আমাকে।
নীলিমা মিষ্টি করে বললো
-What’s your name?
-Why?
-Please tell me, whats your name.
-আপনি আমার নাম জানতে চান?
-yes
ছেলেটি মুখ বিকৃত করলো। বললো
-My name is Sky.. okay?
-বারে, এটা আবার কেমন নাম?
-পারবোনা আর কিছু বোঝাতে আপনাকে।

নীলিমা ভাবনায় পরে গেলো। চিন্তা করতে লাগলো এটা কেমন না। বাংলাদেশি ছেলেদের তো এমন নাম হওয়া উচিৎ না। পরক্ষনেই নীলিমার মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠলো। খানিকটা চেচিয়ে সামনে তাকিয়ে বললো
-তার মানে আপনার নাম..
একি কোথায় উনি? এখানেই তো ছিলো, গেলো কোথায়? নীলিমা কিছুটা হতাশ হলো, কিন্তু দমে গেলো না। মুখে দুষ্টুমির হাসি ফুটিয়ে মনে মনে বললো
-পালাবে কোথায় বাবু, আছো তো এখানেই। আমার সামনাসামনি পড়তেই হবে তোমাকে৷ তখন আর ছাড়ছিনা।

হলুদের ফাংশন শুরু হয়েছে কিছুক্ষণ হলো। সবার প্রথমেই স্টেজে এলো ধ্রুবর মা। মুখে হাসি, মনে প্রশান্তি। হাতে সামান্য হলুদ বাটা নিলেন উনি, প্রথমে নিজের ছেলের গালে সামান্য হলুদের ছোয়া দিলেন উনি, তারপর ধ্রবর গালে মাখা হলুদটাই তারার গালে ছোয়ালেন তিনি। ওদের দিকে তাকিয়ে বললো
-সুখী হও তোমরা, আর কারো কুনজর যেনো না পরে তোমাদের উপর।
-দোয়া করো মা। সারাজীবন যেনো এইরকম হাসিখুশিতেই থাকতে পারি। মাকে জড়িয়ে ধরে বললো ধ্রুব।
-পাগল ছেলে। তোকে বলে দিতে হবে সেটা।
ধ্রুবর মা তারা আর ধ্রুবর মুখে মিষ্টি দিয়ে চলে এলেন স্টেজ থেকে। এরপর স্টেজে এলেন তারার বাবা আর ধ্রুবর বাবা। ওরাও ছেলেমেয়েদের হলুদ লাগালেন। এক এক করে আত্মীয়রা সবাই এসে হলুদের কাজ সম্পন্ন করলো। এখন বাকি আছে নীলিমা। হলুদের কাজ যে শেষ হতে চলেছে সেটার হুশ নেই ওর। ওর চোখ খোজে বেড়াচ্ছে অন্য একজন কে।

তারার বাবা নীলিমাকে খোজতে খোজতে এক সময় পেয়ে গেলেন।
-তুমি এখানে, আর কোথায় না কোথায় খোজতে হয়েছে তোমাকে। কি হয়েছে তোমার?
নীলিমা অবাক হয়ে বললো
-কেনো আংকেল, কি হয়েছে?
-তারার হলুদ প্রায় শেষ পর্যায়, আর তুমি এইসব বলছো মামনি? তারাকে হলুদ পড়াবে না?
নীলিমার হুশ হলো। বললো
-ওহ স্যরি আংকেল। আমি এক্ষুনি যাচ্ছি। নীলিমা প্রায় দৌড়াতে লাগলো। ওর এমন আচরণে হেসে ফেললেন তারার বাবা।

নীলিমাকে এতো দেরিতে আসতে দেখে তারা ফিসফিসিয়ে বললো
-কিরে, কোথায় ছিলি এতোক্ষণ?
-আমার স্কাইকে খোজছিলাম।
-মানে? অবাক হয়ে বললো তারা।
-বুঝবি না। চুপ থাক এখন। হলুদ লাগাতে দে তো।
-এতোক্ষন কি কাজে ছিলি, এখন তড়িঘড়ি করা শুরু করে দিয়েছিস কেন?
-ভাইয়া, আপনার বউকে কিছু বলবেন? সে কিন্তু আমাকে ডিস্টার্ব করছে।
-তোমরা বান্ধবী, তুমিই বুঝে নাও। তোমাদের মাঝে আমাকে কাবাব মে হাড্ডি করোনা তো। আমি নেই এইসবে। মুচকি হেসে বললো ধ্রুব।
নীলিমা তেজ দেখিয়ে বললো
-এখন থাকবেন কেন আমার সাথে, যখন নিজের প্রয়োজন ছিলো তখন তো ঠিকই আমাকে পাশে রেখেছেন।
-আমি কখন তোমার পাশে থাকলাম, বউ এর পাশে থাকার সুযোগইতো হলোনা ভালো করে
-আপনি আসলেই অসভ্য।
-অসভ্য তুমি, সাহায্য করে খোটা দিচ্ছো।
-একশো বার দিবো, হাজারবার দিবো। লক্ষ বার দিবো।
-আহ, থামবি তোরা। পাশ থেকে বললো তারা।
-দরদ হচ্ছে, স্বামীর জন্য দরদ উতলে পরছে?
-মাফ কর আমাকে। গাল ফুলিয়ে বললো তারা।
-হয়েছে হয়েছে, আর গাল ফোলাতে হবেনা।

সকলে হলুদ দেওয়া শেষ করলে তারা উঠে দাঁড়ায়। ধ্রুব তারাকে বাধা দিয়ে বলে
-কি হচ্ছে? যাচ্ছো কোথায়।
-কোমড় ব্যাথা করছে বসে থাকতে থাকতে।
-এখুনি যেওনা। হলুদ দেওয়া শেষ হয়নি এখনো।
-সবাই এসেছে তো এখানে। আপনার সামনেই তো হলুদ দিয়ে গেলো সবাই।
-আরো কয়েকজন বাকি আছে।
-কে? অবাক হয়ে বললো তারা।
-আমার কিছু স্পেশাল গেস্ট।
-কারা ওরা?
-বলা যাবেনা, সারপ্রাইজ।
-আপনার স্পেশাল গেস্ট আমার সারপ্রাইজ হবে কিভাবে?
-দেখলেই বুঝতে পারবে।
-কোথায় ওরা। দেখছি না তো।
-চোখ বন্ধ করো।
-মানে?
-যা বলছি তাই বলো। যখন বলবো তখন চোখ খুলবে।
-ওকেহ। চোখ বন্ধ করে নিলো তারা।

অনেক্ষন পার হয়ে গেলো। কিন্তু ধ্রুব কিছু বলছেনা। এদিকে এতোক্ষণ ধরে চোখ বন্ধ রাখতে রাখতে বিরক্ত হয়ে গেছে তারা। চোখ বন্ধ রেখেই বিরক্তিকর কন্ঠে বললো
-কোথায় আপনার গেস্ট? এখনো আসেনি? আর এতোক্ষণ এভাবে থাকবো?
ধ্রুব কিছু বললোনা। তারা অপেক্ষা করছে চোখ খোলার। আরো কিছুক্ষণ পর ধ্রুব বললো..
-এইবার চোখ খুলতে পারো তুমি।
তারা ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকালো। তাকানোর আগ পর্যন্ত ওর মনে এক অজানা অনুভূতি কাজ করছিলো। কে হতে পারে ধ্রুবর স্পেশাল গেস্ট?
চোখ মেলে সামনে তাকিয়ে বড়সড় ঝটকা খেলো তারা। আনন্দে হতবিহ্বল হয়ে সামান্য চিৎকার করে বললো
-আপনারা? আপনারা এসেছেন? এটা কি সত্যি? আমি স্বপ্নে আছি নাতো?

To be Continue….
To be Continue…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here