ডাক্তার সাহেব পর্ব ১৫+১৬

#ডাক্তার সাহেব
#শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব -১৫

বুকটা কাঁপছে থরেথরে। আচমকা এরকম ঘুম ভাঙলে শরীরটা ভারী লাগে ভীষণ। লক্ষ্য করলাম রিদি কাকে যেন ফোনে যা’ তা বলছে। আমি ঘুম থেকে উঠেছি বিষয়টা লক্ষ্য করেই সে তড়িঘড়ি করে কলটা কেটে দিল। আমার সন্দেহ বাড়াল তার ভাবভঙ্গী। সন্দেহের তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম

– কী রে কাকে গালি দিচ্ছিলি?

সে ঢুক গিলতে লাগল। আমার সন্দেহ তাতে আরও বেড়ে গেল। প্রশ্নটা আরও গভীর করে বললাম

– উত্তর দিচ্ছিস না কেন? কাকে গালি দিচ্ছিলি? তোর চিৎকারের শব্দে আমার বুক কাঁপা শুরু হয়ে গেছিল। মায়ের পাশে বসে এভাবে চেঁচামেচি করছিলিস কেন? মা উঠে গেলে কী হত। আর কাকে গালি দিচ্ছিলি বল।

রিদির মুখটা চুপসে গেল। অনেকটা চুপ থেকে বলল

– অনীলকে।

উত্তরটা শুনে আমি বিস্মিত হয়ে গেলাম। মনে হলো ঝড়ের আগে যে দমকা হাওয়া বয়ে বেড়ায় সেটা এসেই আমার বুকে জোরেসোরে ধাক্কা দিয়েছে। অনীলকে রিদি কেন বকবে! কী ই’বা কারণ! প্রশ্নের জড়তা বাড়তে দেইনি মনে। ঝটপট জিজ্ঞেস করে বসলাম

– নীলকে কথা শুনাচ্ছিলি কেন?

– কেন আবার। কল দিয়ে তোকে চাচ্ছে।

– মানে?

– তোর মোবাইল বন্ধ তাই আমাকে কল দিয়ে তোকে চাচ্ছে।

– সেটা চাইতেই পারে তাই বলে যা’তা বলবি? তুই কী নীলকে পছন্দ করিস?

– আমার বয়েই গেছে নীলকে পছন্দ করতে। আমি তোর ভালোর জন্যই কথা গুলো শুনিয়েছি। তুই অবুঝ। উনি তো অবুঝ না। তোর এসবে কেনই বা উনি সায় দিবে? এমন তো না তোকে বিয়ে করবে। বিয়ের কথা বলতেই বলল

– ১৮ এর আগে বিয়ে করলে বাল্য বিবাহ হবে, মামলায় ফেঁসে যাব। চাকুরিও চলে যেতে পারে। ঝামেলায় ফেঁসে যাব। সিঁথির বয়স ১৮ হলেই বিয়ে করবে। সে পর্যন্ত বিষয়টা গোপন থাকবে। কারণ মফস্বলে এসব জানাজানি হলে মানুষ অনেক কথা শোনায়। আমি তো আর চলে যাচ্ছি না।

উত্তরে বললাম

– তাহলে এনগেজড করে রাখুন।

উনার প্রত্তুত্বর আসলো

– এনগেজড করতে গেলেও বিপদ। পরিবারের চাওয়ার মতো না মিললে ঝামেলা হবে। তাই যা করব একেবারে বিয়ে করব। সে পর্যন্ত আমি অপেক্ষা করব। আর সিঁথি একটু বড় হোক। বুঝদার হোক। স্ট্যাবল হোক। আমি নাহয় ওর পাশে থেকে ওর পথচলার সাথী হলাম। আর দিনশেষে ওরেই রয়ে গেলাম।

কথাটা শোনার পর মনে হলো নীলের মধ্যে ঝামেলা বা ত্রুটি রয়েছে নাহয় সে এনগেজমেন্টে রাজি কেন হবে না। বুঝতেই পারছিলাম তোর সাথে মজা লুটবে তাই তোকে উস্কে দিচ্ছে। তাই মুখে যা এসেছে বলে দিয়েছি।

রিদির কথা শুনে কেমন জানি চুপ হয়ে গেলাম। রিদি ঠিক নাকি নীল ঠিক বুঝতে পারছিলাম না। দু’টানা কাজ করছে মনে। তবে যা করেছি আমি করেছি। নীল কখনও এসবে আমাকে জড়াতে চায়নি। সবচেয়ে বড় কথা নীলের সাথে যোগাযোগও হয়েছে আমার মাধ্যমেই। আমি চেয়েছি তাই। এখানে নীলের কোনো দোষ আমি দেখছি না। তাই নীলকে কথা শুনানোর কোনো অর্থও নেই। কিছুটা রেগেই উত্তর দিলাম

– সে যাইহোক। আমাকে বলেছিস আমি মেনে নিয়েছি। নীল যদি বাজে হয় নীল কে সায় না দিলেই হলো। তুই কেন এতগুলো কথা শুনাবি? তুই আমার ভালো চাইতে গিয়ে অন্য মানুষকে না বুঝে অপমান তো করতে পারিস না। একটা মানুষকে যা’তা বলতে গেলেও অধিকার লাগে। কোন অধিকারে তুই যা’তা বলেছিস? তোকে তো সে অধিকার কেউ দেয়নি। যা হয়েছে সেটা তো আর নতুন করে ঠিক করা যাবে না। তুই নীলকে সরি বলবি। আর আমি তো সিদ্ধান্ত নিয়েছিই যে নীলের সাথে যোগাযোগ অফ করে দিব। তারপর এমন করাটা তোর অন্যায় হয়েছে বলে আমার মনে হয়। তুই বড় হতে পারিস তবে আমার বিষয়টা আমি ছাড়া অন্য কারও অনুধাবন করার ক্ষমতা নেই। তাই বাহিরে যা দেখছিস ভেতরে তো তার উল্টাটাও চলতে পারে। কারও বাহির দেখে ভেতর কেন বিবেচনা করবি? আর সেটা আদৌ উচিত না। আশাকরি নীলের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিবি।

রিদি আমার কথা শুনে আর কোনো উত্তর দিল না। চুপ হয়ে বসে রইল। তার উত্তরের অপেক্ষাও আমি করলাম না। ধপাশ করে মেঝেতে পুনরায় শুয়ে কাঁদতে লাগলাম। চোখটা যেন বাঁধা মানছে না। অল্পতেই কেঁদে দেওয়া মানুষ আমি। তাই চোখের পাতায় জলের অভাব নেই।।মোবাইলটা হাতে নিয়ে খুললাম। পরপর তিনটা মেসেজ নীলের

“দোষটা কী আমার? এভাবে রিদি কথা কেন শোনাল? কী করেছি বলবে একটু? তোমার প্রতি ভালোলাগা থাকা কী অন্যায়? আর পরিস্থিতিও এমন যে তোমাকে বিয়ে করতে পারছি না। এখন বিয়ে করলে চাকুরি চলে যাওয়ার সম্ভবনা বেশি। কারণ ১৮ এর আগে বাল্য বিবাহ ধরা হয়। একজন প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা হয়ে এমন কাজ করলে বিষয়টা অভিযুক্ত হলে চাকুরি চলে যাবে। বিসিএস টা আমার সাধনা ছিল। অনেক কষ্ট করে বিসিএস ক্যাডার হয়েছি। আর আমার পরিবার এখন আমার আয়ের উপর নির্ভরশীল। আশাকরি বুঝবে।”

“মোবাইলটা অন করলে প্লিজ রিপ্লাই করো। আমার অনুভূতি গুলো তোমাকে প্রকাশ করতে পারি না তাই বলে ভেবো না তোমার থেকে দূরে সরে গেলে আমি ভালো থাকব।”

” সময় হলে সব ঠিক হবে। একটু সময় দরকার। আশাকরি বুঝবে।”

নীলের মেসেজ পড়ে বুকের ভেতরটা কেঁদে উঠল। সত্যিই কী আমি এ সম্পর্কে জড়িয়ে ভুল করব নাকি এ সম্পর্ক আমাকে ব্যথা দিবে। কেনো উত্তরেই আমি পাচ্ছিলাম না। সারা শরীর অবশ অবশ লাগছে। শুধু একটা রিপ্লাই দিলাম

“ডাক্তার এসে দেখে গেছে মাকে কালকে রিলিজ দিবে। বাবাও চলে যাবে। আমি জানি না তোমার ব্যপারে কী বলব। মন বলছে তোমাকে চাই সবাই বলছে আমি ভুল। দু’টানা নিয়ে এগুনো যায় না। পথ নাহয় আলাদা হয়েই যাক।”

আর কোনো মেসেজ এর উত্তর আসলো না। মোবাইলটা পাশে রেখে প্রবল ভাবে কাঁদতে লাগলাম। এতদিনের করে যাওয়া সব পাগলামি যেন এখন ফিকে মনে হচ্ছে। এ কষ্টের দাবনাল থেকে বের হতে পারব কী না জানি না। এমন কী কোনো আলাদিনের চেরাগ নেই যেখানে তিনটা শর্ত দেওয়া হবে আমি তিনটার উত্তরেই দিব নীলকে চাই। চোখ গড়িয়ে জল পড়ছে। চোখটা বন্ধ করলেই যেন নীলের মুখটা ভেসে আসছিল। নীলের চোখটা,তার নিঃশ্বাসের শব্দ,মিষ্টি সুর,চোখের চাহনী সব যেন আমাকে আরও কাছে ডাকছে। সত্যিই কী আমি পারব তাকে ছাড়া থাকতে। ভাবনার কোনো কূল কিনারা পাচ্ছিলাম না।

পরদিন সকালে মাকে রিলিজ দেওয়া হলো। বাবা,মা আর রিদিকে নিয়ে বাসায় আসলাম। একমাস মাকে বিশ্রাম নিতে হবে। বাবা রিদিকে বাসায় রেখে গেছে। নীলের সাথে ফোনে কী যেন কথা বলেছে জানি না। তবে বাবার পাশে গিয়ে নীলের কন্ঠটা শুনতে প্রবল ইচ্ছা করছিল। সে মেসেজের পর নীল আর কল বা মেসেজ কিছুই দেয়নি। শত কিছুর মধ্যেও যেন বড্ড শূন্য আর একা লাগছে। সেদিন বিকেলবেলায় বাবা জরুরী কাজে ঢাকায় চলে গেল। আর আমি যেন ছন্নছাড়া হয়ে গেলাম। নীলকে হারিয়ে ফেলেছি ভাবতেই যেন বুক কেঁপে উঠছে আমার। মায়ের পাশেই শুলাম সেদিন। মাকে ধরে মায়ের শরীরের ঘ্রাণ নিচ্ছিলাম। একটু যেন স্বস্তি মিলছিল। মায়ের নিঃশ্বাসের অনেক শক্তি। শত কষ্টটাও যেন এ পরম মমতা মাখা নিঃশ্বাসের ছোয়ায় হালকা হয়ে যায়। এটা হয়তো মায়েদের দেওয়া সৃষ্টিকর্তার বিশেষ শক্তি। অনেক শান্ত মনেই ঘুমালাম।

ভোর ৬ টা। চারপাশে সবে আলো ফুটেছে। পূর্ব আকাশে সূর্যটা এখনও লাল। পাখি গুলো কিচিরমিচির করে উড়ছে। বাতাসটা বেশ মৃদু ভাবে বইছে। ঘরের দরজটা খুলে দরজার পাশে বসে দরজায় হেলান দিয়ে তাকিয়ে আকাশ দেখছিলাম। এর মধ্যেই কারও কন্ঠস্বর আমার কানে আসলো। চিনতে ভুল হলো না। এ কন্ঠস্বর চিনতে কখনও ভুলও হবে না। কারণ এ কন্ঠস্বর শুনলে আমার বুকের বা পাশটার গতিবেগ বেশ জোরে উঠানামা করে।

আমি পাশ ফিরতেই নীলের মুখ অবয়বটা দেখলাম। আমি কিছু একটা বলতে যাব এর আগেই সে…
#ডাক্তার সাহেব
#শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব -১৬

আমি কিছু একটা বলতে যাব এর আগেই সে আমার হাতটা তার হাতের আঙ্গুল দিয়ে চেপে জোরে মুচড়ে ধরল। বসানো থেকে টেনে দাঁড় করাল। ভয়ে বুক কাঁপছে। আশপাশ তাকিয়ে শুধু ভাবছিলাম কেউ দেখছে না তো? তাকানোর সুযোগ বেশি পেলাম না। এর আগেই টেনে ঘরে নিয়ে গেল। অপর হাত দিয়ে ঘরের দরজাটা লাগিয়ে দিল। আমাদের বাসায় সারি করা তিনটা রুম। মাঝখানের টায় আম্মু থাকে। তার ডান পাশের টায় আমি আর বাম পাশেরটা মেহমানদের জন্য। তিনটা রুমের সামনে ড্রইং রুম আর ডাইনিং রুম। তিনটা রুমেই বাথরূম এটাচ করা। আমার রুমটার পাশেই ছাদে উঠার জন্য সিঁড়ি দেওয়া। সিড়ির সাথেই রান্নাঘর। বাসাটা দোতলা ফাউন্ডেশন করা না তবে উপরে টিনের চালের পরিবর্তে ছাদ ঢালাই করে দিছে। তিনটা রুমেরেই বাইরের দিকে তিনটা দরজা রয়েছে। যেটা দিয়ে সরাসরি বাইরে বের হওয়া যায় অথবা ড্রইং,ডাইনিং রুমের সাথে যে মূল ফটক আছে সেটা দিয়েও বাইরে বেরুনো যায়।

যাইহোক আমি বুঝতে পারছিলাম না নীল কী করতে চাচ্ছে। আমার বোধদয় ঘটার পূর্বে মুখ দিয়ে কিছু একটা বলতে যাব এমন সময় নীল আমার মুখটা তার হাত দিয়ে চেপে ধরল।

– সুুুউউউউ…..একদম চুপ। কোনো কথা না। একদম চেঁচাবে না। আগে আমার কথা শুনবে তারপর কথা বলবে।

আমি শুধু অবাক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছি। চোখের দৃষ্টি কেবল তার দৃষ্টি বরাবর। তার কোমল ঠোঁটগুলো নড়ে উঠল।

– সমস্যা কী তোমার? রিদির কথায় তাল মিলাচ্ছ কেন? আমাকে কী ভরসা করতে পারো না? আমাকে ভালোবাস কিন্তু আমাকে বিশ্বাস করতে এত কষ্ট এত দ্বিধা? ভালোবাসা বুঝো, তবে এটা কেন বুঝো না ভালোবাসার প্রথম ধাপ হলো বিশ্বাস। বিশ্বাসটাকে কেন এত দূরে রেখেছো? সিঁথি রাণী তোমাকে ভালো না বাসলে তোমার এত পাগলামি সহ্য করতাম না। এত সময় কোথায় আমার বলবে? তবুও কেন সময় পেলে তোমার কাছে চলে আসি বলো তো? কারণ তোমাকে আমি গুরুত্ব দিই তোমার প্রতি থাকা ভালোবাসাকে অবহেলায় মুড়াতে দিই না। তবুও তোমার মনে এত অবিশ্বাস। তৃতীয় ব্যক্তির কথায় আমায় ছেড়ে দিচ্ছ! তুমি ছেড়ে দিলে জোর করব না তবে তোমার অনুপস্থিতি আমাকে ভীষণ কষ্ট দিবে যেটা এ কয়েক ঘন্টায় অনেক প্রখর করে দিয়েছে।

বলেই নীল মুখ থেকে হাতটা সরিয়ে নিল। লম্বা কয়েকটা নিঃশ্বাস নিয়ে নীলের চোখের দিকে তাকালাম। চোখগুলো তার রক্তবর্ণ। চোখের চারপাশটা জমাট বাঁধা রক্তের মতো লাল হয়ে আছে। চোখে জল নেই কিন্তু ভেতরের ক্ষতটা যেন চোখে লাল হয়ে ভেসে উঠেছে। আমি কী বলব জানি না। দুটানা আমাকে গ্রাস করছে। এদিকে ভয় ও করছে। কারণ ঘরের দরজাটা খোলা, কখন যে রিদি চলে আসবে জানিনা আর এসে আমাকে এভাবে দেখলে আরও বেশি কথা শুনাবে। তবে ভেতরে বয়ে যাওয়া ঝড়টা স্থিত হচ্ছে। হালকা গলায় বললাম

– আমাকে ছাড়ো। রিদি আসলে সমস্যা।

সে আরও টেনে তার কাছে নিল। হাতটা আরও মুচড়ে ধরল। তারপর চোখের দিকে তাকিয়ে কড়া মিষ্ট সুরে বলল

– আগে বলো কী চাও তুমি? চলে যেতে নাকি আমার হয়ে থাকতে। ২ টা বছর সময় কী আমাকে দেওয়া যাবে? আমি তোমার হয়ে তোমার পাগলামু গুলো দেখব। তুমি বয়সে ছোট অনেক, ধরে নাও না নিজের মতো করে বড় করে নিব তোমায়। পারবে তো এ বৃদ্ধকে বিশ্বাস করতে? অপেক্ষা করতে? ভালোবাসতে?

আমার চোখ দিয়ে জল টুপটুপ করে পড়ছে। নীলের এ কথাগুলো শোনার জন্যই আমি অপেক্ষা করছিলাম। এত অল্প সময়ে কেউ কারও মন এত প্রখর করে দখল করে নিতে পারে জানা ছিল না। কলিজাটা ঢিপঢিপ করছে৷ মৃদু সুর গলা দিয়ে বের হলো। মাথাটা তার বুকে ঠেঁকিয়ে দিলাম।

– আমার পাগলামি তুমি সহ্য করতে পারবে তো? এ নাছোর বান্দাকে সামলে নিতে পারবে তো? কখনও বিরক্ত হবে না তো? কখনও বলবে না তো পাগলামি করো না।

আমার মাথাটা তার অপর হাত দিয়ে ধরে বলল

– শুধু বলব পাগলামিগুলো আমার জন্য বরাদ্দ রাখতে। তোমার সত্ত্বাকে কখনও বিলীন হতে দিব না। সবসময় আগলে রাখব।

“আমি প্রতিজ্ঞা করছি সবসময় তোমার পাশে থাকব। তোমার পাগলামি গুলো সহ্য করব। তোমার অস্তিত্বের সাথে নিজেকে মিলিয়ে নিব। বুকে জড়িয়ে আগলে রাখব। সকল কষ্ট দূর করে দিব। জীবনের শেষ পর্যন্ত তোমার নীল তোমারেই হয়ে থাকবে। এ প্রতিজ্ঞা কখনও ভাঙব না”

আমার ভেতরে প্রশান্তের শীতল হাওয়া বইছে। এত শান্তি লাগছে মুখে প্রকাশ করতে পারছি না। ইচ্ছে করছে সময়টাকে থামিয়ে দিই। আর যেন সামনে না যেতে পারে। এটুকু সময় হয়তো ঠেঁকিয়ে রাখা যাবে না তবে স্মৃতির পাতায় ঠিকেই ফ্রেমবন্দী হয়ে থাকবে। মাথাটা নীলের বুক থেকে উঠিয়ে মৃদু গলায় বললাম

– ছাড়ো এবার, রিদি দেখতে পারলে ঝামেলা করবে। আর যদি বাবা, মা কে বলে দেয় তাহলে সমস্যা হবে।

নীল লম্বা লম্বা দম ছেড়ে আমাকে ছেড়ে দিল। আমি স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। শুধু মন চাচ্ছে এ সময়টাকে আর চলতে না দিতে। বুকের ভেতরটা কাঁপছে তবে ভালোবাসার ছন্দতালে। চোখটা শুধু তার দিকেই তাক করা নামাতে যেন পারছি না। কোথায় ছিল এত মায়া! যাকে আমি কয়েকদিন আগেও চিনতাম না তাকে এত আপন কেন লাগছে! কয়েকদিনের ব্যবধানে প্রিয়জনের তালিকায় কী করে চলে আসলো জানি না। নীল আবারও আমার কাছে আসলো। বাহু দুটো ঝাঁকিয়ে বলল

– এ হলো এক মহাবিপদ একটু আদর পেলেই হলো, মাথায় চড়ে বসো। নিজের মধ্যে ফিরে এসো। এত ডুবে গেলে চলবে না। অবিবাহিত পুরুষের দিকে এত সুন্দরী মেয়ের এভাবে তাকাতে নেই। যাও এক কাপ চা নিয়ে এসো। বেশ ক্লান্ত লাগছে। অনেক জ্বালিয়েছো এবার এক কাপ চা বানিয়ে দাও। আন্টি কেমন আছে?

– আগের চেয়ে ভালো। তুমি ড্র ইং রুমে বসো আমি চা করে নিয়ে আসছি। আমি কিন্তু রান্না বান্না পারি না। চা কেমন হবে বলতে পারব না।

– এক রকম হলেই হলো।

বলতে বলতে নীল সোফায় বসলো। মায়ের রুমে গিয়ে মাকে বললাম নীল এসেছে। মা হালকা সুরে বলল নীলকে নাস্তা দেওয়ার জন্য রিদিকে বলতে। আমি মথা নেড়ে গেলাম। যদিও নীলকে নাস্তা দিতে রিদিকে বলব না কারণ তাকে আমার মোটেও সহ্য হয় না। নীলকে নিয়ে যত ঝামেলা সে করেছে, মাঝ খান দিয়ে দুজনেই কষ্ট পেয়েছি।

মায়ের পাশ থেকে উঠে রান্না ঘরে গিয়ে চা বসালাম। যদিও চা বানানোতে এত পটু না। তবুও জোর গলায় জিজ্ঞেস করলাম

– দুধ চা খাবে নাকি রঙ চা?

– তুমি যা ভালো পারো তাই নিয়ে এসো।

– আমি সব পারি। তুমি কোনটা খাবে?

– দুধ চা বানিয়ে নিয়ে এসো তাহলে।

আমি দুধ চা বসালাম। চা আমি কখনই ভালো বানাতে পারি না। রান্না বান্নায় বেশ কাঁচা। তবুও চেষ্টা করতে তো ক্ষতি নেই। অনেকটা সাধনার পর আমার কাঙ্ক্ষিত চা তৈরী। চা টা নিয়ে নীলের কাছে গেলাম। চা টা বাড়িয়ে দিয়েই গড় গড় করে বললাম

– কোনো ভুল ধরা যাবে না। অনেক কষ্ট করে চা বানিয়েছি। শুধু প্রশংসা করবে। বলবে আমার চা অনেক মজা। আমার হাতের চায়ের সাথে কারও হাতের চা এমন মজা হবে না। তোমার খাওয়া শ্রেষ্ঠ চা আমার হাতের চা।

নীল চা টা হাতে নিয়েই ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে বলল

– ভালো না হলেও কী এগুলো বলতে হবে?

– হ্যাঁ।

– আচ্ছা দেখা যাক।

বলেই নীল চা টা মুখে নিয়ে চুমুক দিল। মুখে দিয়েই পরক্ষণেই আবার দ্বিতীয় চুমুক দিল। তারপর আমার দিকে চা টা বাড়িয়ে দিয়ে বলল

– একটু খাও।

আমি তার হাত থেকে চা টা নিয়ে মুখে দিলাম। এতটাও খারাপ হয়নি যেমন হয়েছে চলে। আর আমার মতো রান্না পারে না মেয়ের এমন চা বানানোটায় স্বাভাবিক। আমি দৃঢ় গলায় বলে উঠলাম

– চা তো ঠিকেই আছে। আমার কাছে খারাপ লাগেনি। দ্রূত প্রশংসা করো।

নীল চা টা হাতে নিয়ে কপালটা কুঁচকে বলল

– তা ঠিক আছে। তবে দুধ চায়ে লবণ দিছো কেন?

আমি মুখটা বাঁকিয়ে বললাম

– লবণ দিলে চিনির স্বাদটা টের পাওয়া যায়। নাহয় চিনির স্বাদ বুঝা যায় না।

– তাই বলে দুধ চা এ লবণ? কে বলেছে লবণ দিলে চিনির স্বাদ টের পাওয়া যায়। এ থিওরি কোথায় পেয়েছো?

– এ থিওরির বিজ্ঞানী আমি৷ আর এত কথা বলছো কেন? না খেলে চায়ের কাপ দাও। খেতে হবে না তোমার।

নীল চায়ের কাপটা পেছন দিকে নিয়ে বলল

– বানিয়েছো যখন খাই। কারও বানানো জিনিস যত্ন করে খেলে মহব্বত বাড়ে। মুরুব্বিরা বলে।

– জোর করে খেতে হবে না।

– মজা করেই খাব। জোর করে না।

– তাহলে প্রশংসা করো চায়ের।

– এ সাত সকালে মিথ্যা প্রশংসা শুনতে চাচ্ছ! সকাল বেলা এত মিথ্যা বলা কী ঠিক হবে?

আমি চোখটা রাঙিয়ে উত্তর দিলাম।

– প্রশংসা করতে বলেছি সুতরাং প্রশংসা করো। তাড়াতাড়ি করো।

নীল চায়ে চুমুক দিতে দিতে চায়ের প্রশংসা করা শুরু করল। তার অতিশয় মনোমুগ্ধকর প্রশংসা শুনে আমার হার্ট এটাক হবার উপক্রম হচ্ছে। নিঃশ্বাসটাও যেন ঝট পাঁকিয়ে যাচ্ছে। একটা মানুষের প্রশংসা এমন হয় নীলকে না দেখলে জানা ছিল না।

চলবে?

(কপি করা নিষেধ)
(কপি করা নিষেধ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here