তুই যে শুধুই আমার পর্ব ৫

#তুই_যে_শুধুই_আমার [❤You are only mine❤]
#Part_5
#Writer_Tanzin_Islam_Ishika

দেখতে দেখতে প্রায় ১ সপ্তাহ কেটে যায়,, আজ আমার আর আরুশের বিয়ে,, ভাবতেই মনের ভিতরে এক ভালো লাগা কাজ করছে,, কেন না আমার ভালবাসার মানুষের সাথেই যে আমার বিয়ে হচ্ছে,, কিন্তু আমি তাকে ভালোবাসলেও আদো কি সে আমায় ভালবাসে,, আদো কি আমি তার ভালবাসার মানুষ আছি,, নাকি ঘৃণার মানুষ হয়ে গিয়েছি জানি না,,
এই ১ সপ্তাহ আমি আরুশের সাথে কথা বলার আপ্রাণ চেষ্টা করেছি,, কিন্তু আরুশ আমার সাথে কথা বলতে নারাজ,, খালি দূর দূর পালিয়ে বেরাই,, কিন্তু আজ আমি সে আমার থেকে দূরে যেতে পারবে না,, তাকে আজ পুরো সত্যিটা জানিয়েই রাখবো,, আর আজই এক নতুন জীবনের শুরু করবো,, পিছনের সকল গ্লানি ভুলে ভালবাসার মানুষটি হাত ধরে সামনে পা বাড়াবো,,,


দুপুরবেলা,,,
বউ সেজে স্টেজে বসে আছি,, আজ আমি লাল রঙের লেহেংগা পরেছি,, সাথে হ্যভি ম্যাকাপ,, সাথে মেচিং অরনামেন্টস,, হাত ভরতি লাল চুড়ি,, সাইডে একটা খোপা করা,, তার মধ্যে কাঠগোলাপ,, কাঠগোলাপ বরাবরই আরুশের পছন্দ,, একবার সে বলেছিল যে আমাদের বিয়েতে যেন আমি খোপায় কাঠগোলাপ লাগাই,, তাই তহ আজ আমি তার ইচ্ছে আমি পুরণ করেছি,, নিজেকে আজ পুরোপুরি আরুশের মনে মত সাজিয়েছি,,
এর মধ্যে আমার ফ্রেন্ড জান্নাত এসে আমার পাশে বসে,, আমি ওকে দেখে জরিয়ে ধরি,, জান্নাতও আমায় জরিয়ে ধরে,, তারপর আমায় ছেড়ে বলে,,

জান্নাতঃ যাহ তাহলে অবশেষে তুই তোর ভালবাসার মানুষকেই পাচ্ছিস তাহলে,,

সায়রাঃ হা,,

জান্নাতঃ কিন্তু ভাইয়া কি তুই সব সত্যি বলেছিস,, যে তুই কেন এমন করেছিলি,, কেন তুই ভাইয়ার হাত ছেড়ে ওই বদজ্জাত পোলা রুহানের হাত ধরেছিলি,,
( জান্নাত হচ্ছে সায়রার বেস্ট ফ্রেন্ড,, বলতে গেলে বেস্টফ্রেন্ড কম বোন,,সায়রা আর আরুশের বেপারে সে শুরু থেকেই জানে,, আর ওদের মধ্যে কি হয়েছিল তাও জান্নাতের অজানা নয়,, সে জানে সায়রা কেন আরুশের সাথে এমন করেছিল,,)

সায়রাঃ বলার অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু সে শুনতে নারাজ,, জানস এই তহ,, ওই কেমন,,

জান্নাতঃ দেখ সায়রা খুব দেরি হওয়ার আগে ভাইয়াকে সব বলে দে,,, তা না হলে পরে অনেক বড় জামেলা হয়ে যাবে,,

সায়রাঃ আজকেই বল দিব,,,

জান্নাতঃ তাই ভালো হবে,,


এর কিছুক্ষন পরেই দেখি সবাই চেচিয়ে উঠে,,
“বর এসেছে!! বর এসেছে!!”
মা বরন দালা নিয়ে বরকে আপায়ন করে,, পরে তারা ভিতরে আসে,, আরুশকে ধরে আমার পাশে বসানো হয়,, আমি আড় চোখে আরুশকে দেখছি,, কেন না তাকে আজ বেশ হ্যান্ডসাম লাগছে,, আরুশের পরনে আজ লাল শেরওয়ানি,, সাথে লাল চুরিদার,, মাথায় পাগরি,, হাতে ব্রেন্ড্যাড ওয়াচ,, একদম সেই লাগছে,, আরুশ যখন আমার দিকে তাকায় তখন আমাদের চোখাচোখি হয়ে যায়,, আর আমি সাথে সাথে মাথা নিচু করে ফেলি,,,
এইদিকে অনেকেই কানা ঘুষা করছে,, অনেকটা আমার কানে এসেছে,, কিন্তু আমি রিয়েক্ট করি নি,,, চুপচাপ বসে আছি,,
কিছুক্ষণের মধ্যেই কাজী বিয়ে পরানো শুরু করে,,, এইবার আমি কোন দ্বিধাগ্রস্থ ছাড়াই কবুল বলে ফেলি,, আবার আমাদের সকলের সামনে বিয়ে হয়,, সকলকে বিদায়ই দিয়ে চলে আসি,, আশার সময় মা অনেক বেশি কান্না করেছে,, বাবা নিশব্দে নিজের চোখের জল ফেলছিল,, অনেক কষ্ট হচ্ছি তাদের ছেড়ে আসতে,,
গাড়িতে বসে আছি,, গাড়ি চলছে আপন গতিতে,, আরুশের নতুন বাসায় যাচ্ছি,, যা ঢাকার বনানীতে,,, আগে আমাদের বাড়ি এর পাশেই থাকতো,, কিন্তু আমার জন্যই আরুশ সেই বাড়ি ছেড়ে বনানীতে চলে যায়,, আরুশের বাসায় আসতে আসতে প্রায় রাত হয়ে যায়,, দরজার সামনে আসতেই রিপা বেগম মানে আমার খালামনি মানে আমার শ্বাশুড়ি আমায় বরন করে নেয়,, তারপর আরুশকে বলে আমায় কোলে করে নিয়ে ঘরে ঢুকতে,, এইটা নাকি এই বাড়ির নিয়ম,, সে যাই হোক আরুশ কোন কথা না বলে আমায় কোলে উঠিয়ে নেয়,, আর লিভিং রুমে এ গিয়ে সোফায় বসিয়ে চলে যায়,, আরুশের কিছু কাজিন আমায় ঘিরে বসে,,, তারা বিভিন্ন কথা জিজ্ঞেস করছে,, আর আমি হু হা জবাব দিচ্ছি,, প্রায় বেশ কিছুক্ষণ পর আমায় আরুশের রুমে বসিয়ে দিয়ে যায়,,
চারদিক কাঠগোলাপ দিয়ে সাজানো,, তার মধ্যে কিছু বেলি ফুলও আছে,, ফুলের ঘ্রাণে চারদিক একদম মো মো করছে,, বেশ ভালোই লাগছে,, এখন শুধু অপেক্ষা আরুশের আসার,,,



রাত প্রায় ২ টা বেজে ৩০ মিনিট,,

সায়রা মাথা নিচু করে বসে আছে,, আর মাঝে মাঝে ভিতু চোখে আরুশকে দেখছে,,
আরুশের চোখ অসম্ভব লাল,, কিছু ক্ষন আগেই আরুশ রুমে এসেছে,, সায়রা সামনে সালাম করতে গেলে আরুশ স্বরে আসে,, আর উঁচু গলায় বলে,,
” আমার সামনে এইসব ন্যাকমি করবি না,, চুপচাপ গিয়ে বেডে বসে পর,, ভুলেও যাতে কোন আওয়াজ না হয়,, যদি কোন আওয়াজ হয়,, তাহলে আমি কি করবো নিজেও জানি না,, ”
আমি ভূত দেখার মত দাড়িয়ে আছি,, তা দেখে আরুশ বলে উঠে,,
” কি বলছি কানে যায় না,,, যাহ চোখের সামনে থেকে,,,”
আমি আর কিছু না বলে বেডের সাইডে মাথা নিচু করে বসে থাকি,,,


আরুশ বেডের সামনে সোফায় বসে একের পর এক ডিংক্স করে যাচ্ছে আর নিজের নেশা ভরা চোখে সায়রাকে দেখে যাচ্ছে,,তার সামনে সায়রা কে বউ সাজে দেখে নেশা চড়ে যাচ্ছে তার কাছে এই মূহুর্তে মদের নেশা থেকে সায়রার নেশা বেশি ঝেকেঁ ধোরেছে,,, চোখ দুটো অসম্ভব লাল,, সে
নিজেকে বার বার কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে কিন্তু বার বারই নিজের উপর কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলছে সে,, অবশেষে নিজেকে আটকাতে না পেরে সায়রার কাছে চলেই যায় বেডের সামনে ফ্লোরে হাটুঁ ভেঙ্গে সায়রার মুখটা দু হাতে আলতো করে ধরে তার দিকে তাকিয়ে থাকে,,, আরুশের চোখে যেন আজ হাজারো নেশা ভিড় করছে,, আরুশ আস্তে আস্তে নিজের মুখটা সায়রার দিকে আগাতে লাগে সায়রার ঠোঁটের কাছে এসে পরে,, আরুশের এমন নেশা ভরা চাহুনিতে সায়রা পাগল হয়ে যাচ্ছে,, আরুশের এই নেশায় ভরা চাহুনিতে ডুবে যেতে ইচ্ছে করছে,, কিন্তু না এখন তা করা যাবে না,, তাকে আগে আরুশকে সব সত্যি জানাতে হবে,, তাই সায়রা বলে উঠে,,

সায়রাঃ আরুশ তোমায় আমার কিছু বলার আছে।

আরুশঃ হুসসস,, কোন কথা না,, In this moment I want no disturbance ❤

সায়রাঃ না আরুশ তোমায় শুনতে হবে,, আমি যা করেছি তা কেন করেছি তা তোমায় শুনতে হবে,, রুহানের আর আমার মধ্যে কি ছিল তা তোমাকে শুনতে হবে,, তা না হলে আমরা যে সামনে এগুতে পারবো না,, আমাদের ভালোবাসার মধ্যে যে খাদ রয়েই যাবে,, খুশি ভাবে জীবন যাপন করতে পারবো না,,

এইসব কথা শুনেই আরুশের মুহূর্তেই ধ্যান ফিরে আসে,, তার সাথে সায়রার করার প্রত্যেকটা কাজ তার দেওয়া ধোকা তার মনে পড়ে যায়,, সাথে সাথে আরুশের চোখ মুখ শক্ত হয়ে যায়,,
সে সায়রার গালে রাখা দুই হাত আরো শক্ত করে ধরে ।তার পর রাগে বলতে লাগে

আরুশঃ তুই কি ভেবেছিস আমি তোকে ভালোবাসতে বিয়ে করেছি,,, মোটেও না আমাকে দেওয়া আঘাত কষ্ট আর ধোকার প্রতিশোধ নিতে আমি তোকে বিয়ে করেছি,,,
তুমি আমার সাথে যা করেছিস তার শাস্তি দিতে তোকে বিয়ে করেছি,,তুই আমাকে তিলে তিলে শেষ করে দিয়েছিস, আমি তোকে কি করে ক্ষমা করি,, বল,,কেন আমার মন কে নিয়ে খেললি,,
কেন আমায় এমন ভেংগে দিলি,,আমার ভালোবাসার তো কোন কমতি ছিলোনা তাহলে কেন এমন করলে,, রুহানকে পাবার জন্য,, রুহানের মধ্যে এমন কি আছে যা আমার নেই,, শুধু টাকার অভাব ছিল আর তহ কিছু না,, কিন্তু
তাই বলে আমার সাথে এমন লাভ গেইম খেললে,, এতটা অপমান এতটা নিচু করলে,, পায়ে ঠেলে দিলি আমার ভালবাসা,, তুই যা করেছিস সব কিছুর ফল তোকে পেতে হবে,,
শাস্তি তহ তোকে পেতে হবে,,,

বলেই আরুশ সায়রাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বারান্ধায় চলে যায়,,, সায়রা কিছু বলার সুযোগ পর্যন্ত দেয় না,, সায়রা বিছানায় মুখ গুজেঁ কান্না করতে করতে বলতে লাগে,,

সায়রাঃ কেন শুনলে না আমার কথা,, যদি শুনতে তাহলে বুঝতে পারতে আমি এমন কেন করেছি,, কেন তোমায় দূরে সরিয়েছি এইভাবে,,
তোমাকে ভালবাসি বলেই তহ এমন করেছি,, তুমি জানোও না তোমার থেকে বেশি ভালবাসি আমি তোমায়,, আর এই ভালবাসার ফলই তহ আমায় দিতে হয়েছিল,, তোমার ভালোর জন্যই যে আমি এইসব করেছি,,
এই সায়রা আবার কাদতে থাকে,,

এইদিকে,,
আরুশ আকাশের পানে তাকিয়ে আছে,, ওর বুকের ভিতরটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে,, চিন চিন ব্যথা অনুভব করছে,,সে সায়রা এর সাথে ওমন ব্যবহার করতে চাই নি,, তার যে বড্ড কষ্ট হয় সায়রাকে এইভাবে কষ্ট পেতে দেখলে,, যত যাই হোক সায়রা তহ তার ভালবাসার মানুষ তাই না,, কিন্তু যখনই সায়রার দেওয়ার ধোকার কথা মনে পরে যায় তখনই ওর রাগ উঠে যায়,, আর যা নয় তাই বলে দেয়,, আরুশ আকাশের পানে তাকিয়ে বলে,,

আরুশঃ এমন না করলেও পারতি তুই,, আমার ভালবাসা নিয়ে খেলে একদম ঠিক করিস নি তুই,, আমার সাথে এমন বিশ্বাসঘাতকতা করাটা তোর একদম ঠিক হয় নি,, আমার লাইফটা তুই একদম শেষ করে দিয়েছিস,, ছাড়খার করে দিয়েছিস,, রুহানের জন্য তুই আমায় কষ্ট দিতে পারলি,,কিভাবে পারলি তুই আমায় এইভাবে কষ্ট দিতে,, কিভাবে,,
আমি তহ পারি না তোকে কষ্ট দিতে,, তোকে কষ্টে দেখলে আমার যে বড্ড কষ্ট হয়,, সইতে পারি না যে তোর চোখের জল,, কেন করলি এমন তুই,, কেন,,

এসব ভাবতে ভাবতেই ভোরের আজানের আওয়াজ তার কানে আসে,,তখন আরুশের ধ্যান ভাংগে,, আরুশ রুমের দিকে আগায় সেখানে যেয় দেখে সায়রা কান্না করতে করতে অগোছালো হয়ে ঘুমিয়ে আছে চোখ এখনো ভেজা ভেজা রয়েছে,,, পাপড়িগুলোর মধ্যে মুক্তার মত দুই এক ফোটা পানি চিক চিক করছে,,
সায়রাকে এমন ভাবে দেখে তার বেশ কষ্ট হচ্ছে বুকের ভিতরে চিন চিন করে ব্যথা করছে কিন্তু সায়রার বিশ্বাসঘাতকতার পর থেকে তাকে মেনেও নিতে পারছে না,,,সায়রাকে বেডে ঠিক ভাবে শুয়িয়ে দিয়ে তার মুখের কাছে পড়া চুল গুলো সরিয়ে দিয়ে ফিসফিস করে বলতে লাগে,,,

“আজ যদি তুই ঔসব না করতি তাহলে হয়তো আমাদের গল্পটা অন্যরকম হতো,,
আজকের দিনটা ‌অন্যরকম হতো যেখানে শুধুই ভালোবাসা থাকতো”



#চলবে
গল্পটি কেমন হচ্ছে প্লিজ জানাবেন,, সকলের মতামত আশা করি,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here