তুই যে শুধুই আমার পর্ব ৪

#তুই_যে_শুধুই_আমার [❤You are only mine❤]
#Part_4
#Writer_Tanzin_Islam_Ishika

রুহানের পরিবারের সামনে আমি আর আরুশ বসে আছি,,, তার মধ্যে রুহানের দৃষ্টি আমাদের দিকে অটুট,, শুধু রুহানেরই বা কেন,, ওর পুরো পরিবারের দৃষ্টি আমাদের দুইজনের উপরে,, আর থাকবেই বা না কেন,,, আরুশ আমার কোমড় জরিয়ে ধরে আমার সাথে লেগে বসে আছে,, এতে আমার অস্বত্তিত লাগলেও কিছু করার নেই,,,
রুহানের পরিবারকে আগেই জানানো হয়েছে আমাদের বিয়ের কথা,, যেভাবে বড়রা প্লেন করেছিল ঠিক সেভাবেই,, তাদের মতে আমি আর আরুশ পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছি,, তাতে তারা বেশ রেগে যায়,, কিন্তু রুহান কিছুতেই মানতে চাইছে না যে আমার বিয়ে আরুশের সাথে হয়ে গিয়েছে,, সে ওইদিকে পাগলামি শুরু করে দিলে তার পরিবার বাধ্য তাকে আমাদের বাসায় নিয়ে আসে,,, আর এইখানে এসে দেখে আমি আর আরুশ একই রুম থেকে বের হচ্ছি,, আর যখন তাদের সামনে যাওয়া হয় তখন আরুশ আমার কোমড় জরিয়ে ধরে,, রুহান তহ বিশ্বাসই করতে পারছে না আমি এমন করেছি,, কেন না আমি যে ওর হাতের পুতুল,, তার হাতের পুতুল যে এমন এক এলাহি কান্ড করেছে তা সে বিশ্বাসই করতে পারছে না,,,


এইদিকে রুহানের বাবা মা আমার মা বাবাকে ইচ্ছে মত কটু কথা শুনাচ্ছে,, আর আমার বাবা মাও তেমন কিছু বলছে না,, কি বাই বলবে তারা,, তাদের বলার যে কিছু নেই,,, রুহানের মা আমায় যা নয় তাই বলছে,, শেষে যখন তিনি বলে উঠলেন,,,
” এমন দুশ্চরিত্ররা মেয়ে আমি একটাও দেখি,, নিজের বিয়ের এক সপ্তাহ আগে নিজের খালাতো ভাইয়ের সাথে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করতে পারে,, সে সব করতে পারে,, না জানি কত ছেলের সাথে এমনে ঘুরেছে,, নষ্টা মেয়ে জানি কথাকার,,”
আরুশ এতক্ষণ চুপ থাকলেও শেষের কথা গুলো যেন ওর গায়ে লেগে যায়,,, সে ভরকে উঠে বলে,,,

আরুশঃ একদম বাজে কথা বলবেন না,, আপনি যাকে কথা শুনাচ্ছেন সে এখন আমার স্ত্রী,, সে এখন সায়রা রহমান নয়,, সে এখন সায়রা আরুশ খান,, সো বি পোলাইট উইথ হার,,, আমার স্ত্রীকে এইসব বলার কোন অধিকার নেই আপনার,, যদি বেশি কথা বলেন তাহলে আপনাদের অবস্থা কি হবে তা আপনার ভাবতেও পারবেন না,, ভুলে যেয়েন না আপনাদের কোম্পানির ৬০% শেয়ারের মালিক আমি,, তাই আমি যদি চাই আমার এক মিনিটও লাগবে না আপনাদের রাস্তায় এনে দিতে,, সো পরেরবার আমার স্ত্রী এর সম্পর্কে কিছু বলতে গেলে সাবধানে কথা বলবেন,, আর এখন আপনারা যেতে পারেন,, আপনাদের যে বিষয় জানানোর ছিল তা জানানো হয়ে গিয়েছে,, ইউ কেন মে লিভ নাও,,, পায়ের উপর পা তুলে এটিটিউড নিয়ে,,

এতক্ষন আমি নিশব্দে কান্না করছিলাম,, না চাইতেও চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরছিল,, কিন্তু আরুশের কথা শুনার সাথে সাথে আমার কান্না অফ হয়ে যায়,, আমি অবাক চোখে ওকে দেখতে থাকি,, আমার ভিতরে এক চিল্লিক আশা ভর করছিল,, মনের মধ্যে এই কথা বার বার উঁকি দিচ্ছিল যে আরুশ হয়তো এখনো আমায় ভালবাসে,,

এইদিকে,,
রুহানের বাবা বুঝতে পারে এখন কিছু বললে সে সব হারাবে,,, তাই সে তার স্ত্রীকে চুপ করে থাকতে বলে,, আর এইখান থেকে চলে যেতে চান,, রুহানের বাবা তার স্ত্রীকে বুঝান যা হয়েছে হয়ে গিয়েছে,, এখন তাদের কিছু করার নেই,, এখন তাদের যতটুকু সম্মান আছে তা নষ্ট করার মানে হয় না,, তাই এখান থেকে চলে যাওয়াই বেটার,, এতক্ষন রুহান চুপচাপ বসে ছিল,, কিন্তু যখন তারা চলে যেতে নিবে এমন রুহান বলে উঠে,,

রুহানঃ আমি সায়রা এর সাথে একা কিছু কথা বলতে চাই,, প্লিজ কেউ মানা করবেন না,, এইটা আমার রিকুয়েষ্ট,, কিছু প্রশ্নের উত্তর জানা আমার খুব জরুরি,,

রুহানের এই কথা বলার সাথে সাথে আরুশের ঠোঁটের কোনে এক রহস্যময় হাসি ফুটে উঠে,, সে যেন এই টাইমেরই ওয়েট করছিল,, কখন রুহান এই কথাটি বলবে,,

আরুশঃ হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই,,, তুমি আরামসে কথা বলতে পারবে,, কিন্তু তা আমার সামনে,, বাকি কেউ আর কেউ থাকবে না,,

রুহানঃ ঠিক আছে,, রুহান আর কথা বারালো না,, কেন না সে আরুশকে হারে হারে চিনে,,সেই যত যাই বলুক না কেন আরুশ সায়রাকে একা তার সাথে ছাড়বে না,,

এই বলে আরুশ আমার হাত ধরে টানতে টানতে ছাদে নিয়ে যায়,, পিছে পিছে রুহানও চলে আসে,,,


ছাদের এক কোনায় দাড়িয়ে আছি আমি, আরুশ, রুহান,, তিনজনের মধ্যে পিন পিন নিরবতা,, কাউরো মুখে কোন কথা নেই,, হঠাৎ রুহান আমার হাত দুটো ধরে বসে,, আমি তহ রীতিমতো কাপাকাপি শুরু করে দেই,, একবার আরুশ এর দিকে তাকাচ্ছি আরেক বার রুহানের দিকে,, আরুশ চোখ মুখ শক্ত করে দাড়িয়ে আছে,, তা দেখে আমি কয়েক দফা ঢোক গিলি,, আর আস্তে করে নিজের হাত সরিয়ে নেই,, তা দেখে রুহান আড় চোখে আরুশ এর দিকে তাকিয়ে আমায় বলে,,,

রুহানঃ কেন করলে এমন আমার সাথে,, আমি জানি তুমি সেচ্ছায় এমন করো নি,, নিশ্চয়ই আরুশ তোমায় ধমকিয়েছে,, ভয় দেখিয়ে তোমায় উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে বিয়ের জন্য জোর করেছে তাই না,, বল,,

আমি একবার আরুশ এর দিকে তাকিয়ে নেই,, সে আমার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে,, তা দেখে আমি বলা শুরু করি,,,

সায়রাঃ একদম না,, আরুশ আমায় কিছু বলে নি,, না আমায় ধমকিয়েছে আর না আমায় ভয় দেখিয়ে বিয়ে করেছে,, আমি সেচ্ছায় ওকে বিয়ে করেছি,,, কেন না আমি ওকে ভালবাসি,, অনেক বেশি ভালবাসি,, আর এইটা তোমার অজানা নয়।

রুহানঃ তুমি তহ নিজেই ওর হাত ছেড়ে আমার হাত ধরে ছিলে তাহলে এখন কেন মাঝ পথে এসে আমার হাত ছেড়ে দিলে,,

সায়রাঃ সেম রিজেন,, আমি যে কারনে আরুশের হাত ছেড়ে তোমার হাত ধরেছিলাম,, সেই একই কারনে আজ আমি আবার আরুশের হাত ধরেছি,,, আর এমনেও তোমার সাথে আমার জমবে না,, তোমার আমার মধ্যে সেই কথাটা নেই যেটা আরুশ আর আমার মধ্যে আছে,,, আর এমনেও ও আমাকে তোমার থেকে বেশি হ্যপি রাখবে,, এন্ড আই থিংক আরুশ ইজ বেস্ট চয়েস ফোর মি,, রাইট না জান,,

আরুশ তখন আমার কোমড় জরিয়ে ধরে তার সাথে একবারে মিশিয়ে বলে,,,

আরুশঃ ইয়াহ রাইট জান,,, এই বলে আমার গালে একটা কিস করলো,,,
কি দেখলি তহ,, সায়রা তোকে কিভাবে ধোকা দিল,,দেখা হয়ে গেলে এখন যা,, আমি আমার ওয়াইফ এর সাথে কোলিটি টাইম স্পেন্ড করবো,, সো ডোন্ট ডিস্টার্ব আস,,

রুহানঃ সেই একই কাজ তুমি আমার সাথেও করলে,,, ছি,, তোমার থেকে আমি এইটা আশা করে নি,,,

সায়রাঃ তুমি আশা করলেও কি,, না করলেও কি,, আই ডোন্ট কেয়ার,,

রুহানঃ ঠিক আছে,, ভালো থেক,,

এই বলে রুহান চলে যায়,, আর আমি চুপ করে দাড়িয়ে থাকি,, নিজের মনের মধ্যে এক অন্য রকম ভয় কাজ করছে,, না জানি এখন রুহান কি করে,, ওর জন্যই আজ এত কিছু হচ্ছে,, আজ ওর জন্যই আমি আরুশের থেকে দূরে,, আবার না জানি সেই একই কাজ করে,, আমি যখন এইসব ভাবছিলাম তখন পাশে তাকিয়ে দেখি আরুশ মুচকি হাসছে,,

আরুশঃ বাহ ভালোই তহ এক্টিং করতে পারিস,, এত সুন্দর এক্টিং এর জন্য তহ তোকে ওস্কার পাওয়া উচিৎ,, আমি ঠিক যেভাবে বলেছি তুই ঠিক সেভাবেই করেছিস,, আই এম প্রাউড অফ ইউ,,
( সেইদিন রাতে আরুশের এই শর্ত ছিল যে রুহান যখন ওর সাথে একা কথা বলতে যাবে তখন সে আরুশের সাথে হ্যপি হওয়ার নাটক করবে,,আর বুঝাবে যে যা হয়েছে ওর সেচ্ছায়,, আর তানভী ওকে আরুশের সাথে মিলেই ধোকা দিয়েছে,,কেন না আরুশ আগে থেকেই জানতো রুহান সায়রা এর সাথে একা কথা বলতে চাইবে,,)

সায়রাঃ তোমার শর্ত তহ আমি পুরণ করেছি,, রুহানের সামনে দেখিয়েছি এইসব আমার ইচ্ছায় হয়েছে,, আর আমি তোমার সাথে যা করেছি সেই একই কাজ ওর সাথেও করেছি,,, এইবার খুশি তহ,,

আরুশ মুচকি হেসে আমার হাতটা পিছনের দিকে মুচড়ে ধরে বলে,,
আরুশঃ না আমি খুশি না,, তোর দেওয়া আঘাত আর কষ্ট আমায় খুশি থাকতে দেয় না রে,, বড্ড জ্বালায়,, তোর সেই ধোকার দহনে পুড়ছি আমি,, যা আমাকে শেষ করে দিচ্ছে,, এখন থেকে তুইও এই একই দহনে পুরবি,, তৈরি হয়ে যায়,, আরুশের দহনে নিজেকে পুড়াতে,,

এই বলে আরুশ আমায় ছেড়ে চলে যায়,,, আর আমি তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে নিজের হাত কচলাতে কচলাতে বলি,,

সায়রাঃ তোমার দহনে তহ আমি অনেক আগে থেকেই পুড়ছি আরুশ,, তুমি কি জানো তোমার দহনে আমি আরও আগেই পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছি,, তোমার ভালবাসার দহনে পুড়েছি আমি,, তোমার ঘৃণার দহনে পুড়েছি আমি,, তুমি যতটা না কষ্ট পেয়েছ তার চেয়ে শত গুন বেশি আমি কষ্ট পেয়েছি,, তিলে তিলে শেষ হয়ে গিয়েছি,, তুমি যদি আসতে আরেকটু দেরি করতে তাহলে হয়তো আমায় আর পেতেই না,, তুমি কেন কেউ পেত না আমায়,, পারি দিতাম না ফেরার দেশে,,
তোমার সাথে করা ভুলের শাস্তি নিজেকে শেষ করে দিতে চেয়েছিলাম,, কেন না যেই জীবনে আমি তোমায় পাব না সেখানে এই জীবন রেখে লাভ কি,, আমি তোমার না হলে যে কাউরো হতে পারতাম না,, কিন্তু না আজ আমি তোমায় পেয়েছি,, অনেক ভুল করেছি আর না,, তোমায় সব সত্য বলে নতুন করে জীবন শুরু করবো,, সকল ভুল বুঝা বুঝি দূর করবো,, তাও খুবই জলদি,,,



#চলবে,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here