তুমিই আমার প্রিয় নেশা পর্ব ১৮+১৯

#তুমিই_আমার_প্রিয়_নেশা
#পর্ব:18+19
#Suraiya_Aayat

” তোর শরীরের অবস্থা কেমন আছে এখন? এখন তো বুঝতে পারছি যে কতো বড়ো ভুল করেছি ওই ছেলের সাথে তোর বিয়ে দিয়ে ৷ শুধু মায়া না বললে আমি ওই ছেলের সাথে কখনো তোর বিয়ে দিতাম না ৷”
খানিকটা রাগান্বিত কন্ঠে কথাগুলো বললেন নূরের বাবা ৷
নূর মাথা নীচু করে আছে , আগে আয়াশের এগেইনস্টে কেউ কিছু বললে নূর সেই কথাকে সমর্থন করতো কিন্তু এখন কেন জানেনা কথা গুলো ওর গায়ে কাটার মতো এসে বাধছে ৷ নূর কথাটা শুনে বলল
” বাবা থাক না পুরোনো কথা ,যা হওয়ার তা হয়ে গেছে তাছাড়া তোমারা চোখ বন্ধ করে ওনার হাতে আমাকে তুলে দিয়েছিলে তাই তোমার এইসব কথা এখন ঠিক সাজে না ৷”

নূরের এমন প্রতিবাদ মুখর কথা শুনে নূরের বাবা একটু ভড়কে গেলেন , তাই আর কোন কথা বাড়ালেন না, মনে মনে অনেক কিছু ভাবতে লাগলেন যে নূরকে বাসায় নিয়ে গিয়ে অনেক কিছু বোঝাবে ৷
নূর ওর ভাইয়ার দিকে তাকালো , ওর ভাইয়া ওর দিকে তাকিয়ে আছে নিষ্পলক ভাবে ৷ ও ওর ভাইয়ার চাহনি উপেক্ষা করে বলল
” ভাইয়া কিছু খাচ্ছো না যে ৷”

হঠাৎই নূরের ভাইয়া বলে উঠলো
” তোকে আজকে আমরা নিয়ে যাবো, এই বাড়িতে তোকে আর থাকতে হবে না এই অবস্থায় ,যারা তোর অসুস্থতার একটা খবর অবধি দেই না তারা না জানি কেমন ভাবে তোর খেয়াল রাখবে ৷ আয়াশকেও আমার আর এখন বিশ্বাস হচ্ছে না ৷ তুই যতদিন না সুস্থ হবি ততদিন তোকে আমি এখানে পাঠাবো না, আর তুই যদি না ফিরতে চাস এখানে তাহলে তো ভালোই ৷ এরা মানুষগুলো কেমন জানি ৷”

নূর খানিকটা রেগে বলল
” কেমন জানি মানে টা কি ? তুমি ওদেরকে চেনো ? তাদের একটা কাজেই তুমি বুঝে গেলে তারা কেমন , আর তারা বলেনি তোমাদেরকে এমনটা তো নয় , তারা যদি না বলতো তাহলে তোমরা জানতে কিভাবে? আর তাছাড়া তুমি ভাবলে কি করে যে তারা আমাকে খারাপ রেখেছে , তারা আমাকে যথেষ্ট ভালো রেখেছে ৷ আমি নিজেকে অনেক সৌভাগ্যবতী বলে মনে করি যে আমি এই বাড়িতে বউ হয়ে এসেছি ৷”

নূরের কথার মাঝে নূরের বাবা বললেন
” আহা নূর মা তুই এতো রেগে যাচ্ছিস কেন? তোর ভাইয়া তো তেমন ভাবে বলেনি ৷”

নূর এবার ওর বাবার দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে বলল
” তাহলে এমন কথা আসছে কেন? ওনার সাথে আমার বিচ্ছেদের কথা আসবে কেন? আমি কি বলেছি যে আমি ওনার সাথে থাকতে চাইনা বা আমাকে উনি খারাপ রেখেছেন বা মানসিক ভাবে অত্যাচার করছেন ৷ করেননি তো ! আমি ওনার সাথে ভালো আছি আর ওনার সাথেই আমি থাকতে চাই এর বেশি কিছু আমার থেকে শুনবে না তোমরা ৷”

নূর ছলছল চোখে জানালার দিকে মুখ করে তাকিয়ে রইলো , আয়াশ এখনো ফিরলো না, সকাল থেকে দুপুর হয়ে গেল মানুষটা একবারও ওর খোঁজ অবধি নিলো না, আজ যদি আয়াশ এই জায়গায় উপস্থিত থাকতো তাহলে নূরকে হয়তো কষ্ট করে এতোকিছু বলতে হতো না আয়াশ নিজেই বলে দিতো , কথাগুলো নিজের মনে মনে ভাবলো নূর ৷ তীব্র অভিমান আর কষ্ট হচ্ছে ভীষনরকম ৷ নূরের চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ছে টপটপ করে ৷

নূরের ভাইয়া রূম থেকে বেরিয়ে গেল, তা দেখে নূরের বাবা বলে উঠলো
” একটা বাইরের ছেলের জন্য নিজের ভাইয়াকে এতো আঘাত দিয়ে কথা না বললেও বোধহয় পারতিস ৷”

কাথাটা বলে উনিও রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন ৷
নূরের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসছে চোখের জলে , রক্তের সম্পর্কের মানুষজন সবসময় আপন হয় না, একে অপরের কষ্টটা বুঝে নেওয়াটাই হলো মনের মধ্যে গড়ে ওঠা দৃঢ় সম্পর্ক ৷

___

“তোমাকে আমি বলেছিলাম যে আমি এমন কিছু নূরকে বলতে পারবো না , কিন্তু নাহ তুমি তো আমার কথা কখনোই শোনোনি আর এখনো শোনোও না ৷ তুমি বাববার বলেছিলে যে নূর আয়াশকে ভালোবাসে না, ওদের সম্পর্কটা লোক দেখানো আরো কতো কি ৷ আমি তো বিশ্বাস করিনি কিন্তু তোমার কথা রাখতে ওকে এতো কিছু বলে ফেললাম না জানি মেয়েটা কতো কষ্ট পেয়েছে আমার কথা শুনে , ওর চোখে আমি কতোটা ছোটো হয়ে গেলাম তা তুমি বুঝবে না মায়া, একটা বড়ো ভাইয়ের সম্মান টুকু হারালাম আজ ৷”
একনাগাড়ে কথাগুলো বলে ফেলল নূরের ভাইয়া রেদোয়ান ৷ মায়া ওকে সামাল দেওয়ার জন্য বললো
” তুমি এখনো ভুল বুঝছো রেদোয়ান , আমি এখনো একশো শতাংশ নিশ্চিত যে নূর আর আয়াশের সম্পর্কটা ঠিক ঠাক না, ওরা কেমন দূরে দূরে থাকে, স্বামী স্ত্রী সুলভ আচরণ ওদের মাঝে নেই ৷”

রেদোয়ান আরো রেগে বলল
” বাহ এখন তো দেখছি তুমি ওদের ওপর রিতীমতো নজর রাখছো ৷ আমি বুঝতে পারছি না তুমি চাইছো টা কি ?”
মায়া একটা শুকনো ঢোক গিলে বলল
” দেখো তুমি ভুল ভাবছো, নূর আমার ননদ তাই আমি তো ওর ভালই চাইবো আর আমার মনে হয় ও ওখানে হ্যাপি নেই , আর ও যদি হ্যাপি না থাকে তাহলে ওর ডিভোর্স এর ব্যাবস্থা করা ভালো তা যতটা তাড়াতাড়ি সম্ভব আর তারপর আমার ভাই নাহিদের সাথে,,,,”

বাকিটুকু বলতে যাবে তার আগে রেদোয়ান থামিয়ে দিলো মায়াকে , বিরক্ত আর রাগ মিশ্রিত কন্ঠে বলল
” প্লিজ মায়া স্টপ ইট , আজ থেকে আর তোমাকে ওর ভাবনা ভাবতে হবে না ওকে ওর মতো থাকতে দাও, ও আয়াশের সাথে ভালো আছে আর নূর আর আয়াশকে নিয়ে আমাকে আর কিছু বলবে না , বললে ভালো হবে না তার ফলাফল ৷”

মায়া দেখলো যে রেদোয়ান তার মেজাজ হারাচ্ছে তাই মায়া এবার ফুঁপিয়ে কেঁদে বলল
” তুমি খামোখা আমার ওপর রাগ করছো , আমি নূরের ভালো চাই তাই জন্য বলেছিলাম আর তুমি আমাকে ভুল বুঝলে রেদোয়ান ৷”

মায়ার কান্না শুনে রেদোয়ান খানিকটা হলেও গলে গেল,তারপর বলল
” আচ্ছা হয়েছে আমি ভুল বুঝিনি , খেয়েছো তুমি?”

মায়া মৃদু কন্ঠে বলল
” হম ৷”

” আচ্ছা পরে কথা হবে ওরা খেতে ডাকছে বোধহয় ৷ নূর আমাদের সাথে যাবে না বলছে ৷”

মায়া কথাটা শুনে ভ্রূ কুঁচকে বলল
” কেন?”

” ও এখানে থাকতে চাই তাই ৷”

” বাবা শ্বশুর বাড়ির প্রতি এতো ভালোবাসা !”

রেদোয়ান এবার খানিকটা রাগী কন্ঠে বলল
” বলেছি না নূরের পারসোনাল ম্যাটার নিয়ে একটাও কথা বলবে না ৷”

মায়া চুপ হয়ে গেল, রেগে ফোনটা কেটে দিলো ৷

___

নূর ওর খাটে বসে আছে , ওকে ঘিরে সবাই বসে আছে নূরের শ্বশুর তেহেরাত সাহেব বাদে, উনি আজও রুম থেকে বার হননি ৷ হঠাৎ ইফা বলে উঠলো
” ভাবী তুমি কিছু খেলে না এখনও,তোমার তো ওষুধ খেতে হবে ৷”

নূর ইফার দিকে মুচকি হেসে বলল
” আমি পরে খাবো আমার খিদে নেই ইফা ৷”

আয়াশের খালাম্মু উনি সকলকে উদ্দেশ্য করে বললেন
” নূর একদম খেতে চাইনা, অনেক কষ্টে খাওয়াতে হয় তাছাড়া যখন আয়াশ বাসায় থাকে তখন আয়াশ জোর করে হলেও খাইয়ে দেয় ৷”
বোনকে ভালো আর সুখে থাকতে দেখে রেদোয়ানের চোখ ভরে এলো , আয়াশকেও অনেক কথা শুনিয়েছে সকালে সেই কারনে মনের মাঝে একরাশ অনুসুচনা কাজ করতে লাগলো ৷ হঠাৎ আরাফাত সাহেব বললেন
” আচ্ছা আপনাদের ছেলে মানে আয়াশ কি করে ?”

এই কথা শুনে নূর ওনার দিকে ঘুরে তাকালো যদিও তার প্রশ্নটা যথেষ্ট স্বাভাবিক একজন মেয়ের বাবা হিসাবে ৷ আয়াশের খালাম্মা বললেন
” আয়াশ কিছু করে না , তার বাবার এই খানাদনী পরিবারের যে পরিমান সম্পত্তি আছে তাতে ওর পর আরো কয়েকটা প্রজন্ম চলে যাবে এতটুকু বলতে পারি ৷”

নূরের বাবা খানিকটা গর্ব করে বললেন
” আমার মেয়েকে আমি ম
নিউট্রেশনে অনার্স পড়িয়েছি আর এখন দেখছি আপনাদের ছেলে তো অশিক্ষিত , বাদরের গলায় মুক্তর মালার মতো ব্যাপার হয়ে গেল না ৷”

কথাটা শুনে চোখের চোখদুটো আপনা আপনিই বড়ো বড়ো হয়ে গেল, হঠাৎ এসব কথা আসছে কোথা থেকে ৷ নূর রেগে গিয়ে বলল
” বাবা প্লিজ ,থামো এসব কথা বলে কি কিছু হবে ?”

নূরকে বলতে দেখে আয়াশের খালাম্মু একগাল হাসি হেসে বলল
” নাহ তাতে কি হয়েছে, ওনার যা মনে হয়েছে উনিও তাই বলেছেন আর মনের কথা বলতে হয় সবসময় ৷ তবে যাই হোক ভাইয়া আমি দুঃখিত আপনার ধারনাকে ভুল প্রমান করার জন্য, আমাদের আয়াশের সাথে আপনার মেয়ের শিক্ষার তুলনা না করায় ভালো ৷”

নূরের বাবা বাঁকা হেসে বললেন
” সে তো জানিই ,আপনারা আর কি বুঝবেন এসবের ৷”

হঠাৎ আয়াশের খালাম্মু রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন এতে সবাই অবাক হলো সাথে নূর ও ৷ উনি হাতে করে একটা ফটো ফ্রেম নিয়ে রুমে ঢুকতেই নূর বেশ অবাক হলো ৷ উনি ফটো ফ্রেমটা আরাফাত সাহেবের হাতে ধরিয়ে বললেন
” এই দেখুন ভাইজান এটা আয়াশের পিএইচডি কমপ্লিট করার দিনকার ফটো ৷ আর যে ইউনিভার্সিটি টা দেখছেন সেটা হলো নিউইয়র্কের সবচেয়ে বেস্ট ইউনিভার্সিটি , যেখান থেকে বায়োকেমিস্ট্রিতে আয়াশ স্কলার হয়ে বাংলাদেশ এসেছে ৷ ”
ছবিটা ধরে আর ওনার কথা শুনে আরাফাত সাহেবের হাত কাঁপতে লাগলো ৷ নূর অবাক চোখে তাকিয়ে আছে আয়াশের খালাম্মুর দিকে ৷ আয়াশ এতো উচ্চশিক্ষিত আর সেটা আয়াশ কখনো কাউকে গর্ব করে জানাই না বা কখনো কাউকে জানতেও দেইনি ৷নূর খানিকটা শিউরে উঠলো ৷ বেশ কাঁপাকাঁপা কন্ঠে বলল
” আন্টি ছবিটা একটু দেখা যাবে ?”

উনি আরাফাত সাহেবের কাছ থেকে ছবিটা নিয়ে নূরের হাতে দিলো ৷ নূর ছবিটা দেখে আর একটু অবাক হলো ,গায়ে কালো কোট,মাথায় ক্যাপ, হাতে একটা মেমেন্টো আর পাশে দাঁড়িয়ে আছে সাদা চামড়ার কিছু ছেলে আর মেয়ে ৷ নূর চোখ যেন ধাঁধিয়ে এলো, তাড়াতাড়ি ফটোটা ওনার হাতে দিয়ে দিলো ৷ নূরের বাবা বেশ চুপ ৷ রেদোয়ান আনন্দের সাথে বলল
” সত্যিই আয়াশ অনেক ট্যালেন্টেড যাই হোক আমরা রত্ন পেয়েছি বলতে গেলে ৷”
নূর মাথা নীচু করে হাজারো কল্পনা জল্পনা করছে ,তখনই আরাফাত সাহেব বলে উঠলেন,
” চারিদিকে অন্ধকার হয়ে আসছে এবার বোধ হয় আমাদের ফিরে যাওয়া উচিত ৷”

” ভাইজানের সাথে দেখা না করেই চলে যাবেন আপনারা ?” বেশ চঞ্চল কন্ঠে বলল আয়াশের খালাল্মু ৷
কথাটা শুনে আরাফাত সাহেব এটু নড়েমচড়ে বললেন
” অন্য কোন দিন না হয় ৷”

নূর শক্ত কন্ঠে বলল
” অন্য কোন দিন কেন? আজকে যখন এসেছো আজকেই দেখা করে যাও ৷”

কথাটা শুনে উনি আর না করতে পারলেন না, ওনারা দেখা করতে গেলেন ৷
নূর ঘরের মধ্যে একা বসে আছে, আজ আয়াশ আসলে প্রচুর প্রচুর রাগ দেখাবে আয়াশকে আর আয়াশের জীবনে আর এমন কি কি জিনিস আছে যা নূর জানেনা সেগুলোও জানবে নূর ৷ সবাই আপাতত নীচে গেছে ৷ নূর চোখ বন্ধ করে আয়াশের ছবিটা নিজের চোখের দৃষ্টিতে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করতে লাগলো ৷

____

ঘরের মধ্যে মুখোমুখি বসে আছেন তেহেরাত সাহেব আর আরাফাত সাহেব ৷
“কেমন আছেন ভাইজান?”

কথাটা শুনে আরাফাত সাহেব কেঁপে উঠলেন খানিকটা, যেন ওনার ভাবনার ঘোর ভাঙিয়ে দিয়েছে কেউ ৷
উনিও নরম কন্ঠে বললেন
” জ্বি ভালো ৷”

কথাটা বলে উনি চুপ করে যেতেই তেহেরাত সাহেব বললেন
” জিজ্ঞাসা করবেন না যে আমি কেমন আছি?”

উনি অবাক হলেন ওনার এমন কথায় তারপর খানিকটা বাধ্য হয়ে বললেন
” জ্বি কেমন আছেন আপনি ?”

তেহেরাত সাহেব চোখ বন্ধ করে চেয়ারে হেলান দিয়ে বললেন
” জ্বি ভালো নেই আমি ৷ ”

কথাটা শূনেও আরাফাত সাহেব চুপচাপ রইলেন হয়তো উনি কথা বলতে চাইছেন না ‌৷

খানিকখন চুপ থেকে তেহেরাত সাহেব বললেন
” আমাকে চিনতে পারছেন ?”

” নূরের বাবা আরাফাত সাহেব যেন কথাটা শুনে কেঁপে উঠলেন ৷ তোতলাতে তোতলাতে বললেন
” মানে ?’

” এতো সহজ প্রশ্নের মানে বুঝলেন না ? বললাম যে আমাকে চিনতে পারছেন?”

উনি ওনার কপালের সূক্ষ্ম সূক্ষ ঘাম রুমাল দিয়ে মুছে বললেন
” না তো , আমি আপনাকে চিনবো কিভাবে আমি তো আপনাকে আজ প্রথম দেখছি ৷”

আয়াশের বাবা তেহেরাত সাহেব মুচকি হেসে বললেন
” সত্যিই চিনছে পারছেন না নাকি চিনতে চাইছেন না কোনটা ? নাকি আমি সবটা মনে করিয়ে দেবো ?”

আরাফাত সাহেব উত্তেজনায় উঠে দাঁড়িয়ে বললেন
” কি বলতে চাইছেন টা কি !”

তখনই হঠাৎ আয়াশ রুমে ঢুকলো ৷ হঠাৎ করে কেউ রুমে ঢুকতেই দুজনেই সেদিকে তাকালেন ৷
আয়াশ ওর বাবার দিকে তাকিয়ে বলল
” এভরিথিং ইজ ফাইন? ”

” সব ঠিক আছে আয়াশ, তোমার শ্বশুরের সাথে একটু গল্প গুজব করছিলাম আর কি ৷”

আয়াশ আরাফাত সাহেবের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলো
” নূরকে আপনারা নিয়ে যাবেন না ?”

উনি খানিকটা ভারী কন্ঠে বললেন
” না , নূর যাবে না বলেছে ৷”

আয়াশ ওর শার্টের হাতাটা গুটিয়ে বলল
“আপনি গাড়িতে গিয়ে বসুন ওকে আমি গাড়িতে তুলে দিচ্ছি ও আপনাদের সাথে যাবে ৷”

নূরের বাবা আয়াশের বাবার দিকে তড়িঘড়ি তাকিয়ে বলল
” আজ তাহলে আসি ৷”

কথাটা বলে বেরিয়ে গেলেন ৷

আয়াশ ওর বাবার দিকে তাকিয়ে বলল
” তোমার বৌমাকে দিয়ে আসি ৷”

” কিন্তু আয়াশ ৷”

” কোন কিন্তু না , কথাটা বলে আয়াশ বেরিয়ে গেল ৷”

নূর জানালার রড ধরে দাঁড়িয়ে ছিলো এতখন কিন্তু আয়াশকে গাড়ি নিয়ে ঢুকতে দেখে নূর খাটে গিয়ে বসে পড়লো , এতখন দূর থেকে সবাইকে দেখছিলো নূর ৷
হঠাৎ রুমের দরজা খুলে কেউ ঢুকতেই সামনে তাকিয়ে দেখলো আয়াশ দাঁড়িয়ে আছে ৷ নূর খানিকটা অবাক হয়ে তাকালো, আয়াশ সকালে একটা টি শার্ট পরে বেরিয়েছিলো আর গায়ে এখন একটা হোয়াইট শার্ট ৷ নূরের গলা ধরে এলো, সারাটা দিন আয়াশ কোথায় ছিলো কিছু জানে না ৷ নূর ভাবলো আয়াশের প্রতি রাগ দেখাবো আর আয়াশ কথা বলতে চাইলেও বলবেনা তাই আয়াশের থেকে মুখ ফিরিয়ে অন্য দিকে তাকাতেই আয়াশ ওর কাছে এসে ওকে কোলে তুলে নিলো ৷ আচমকাই আয়াশ কোলে নেওয়াতে নূর অবাক হলো না চাইতেও বলল
” কি হচ্ছে টা কি এভাবে কোলে তুলে নিলেন কেন ?নামান আমাকে ৷”

আয়াশ নূরের দিকে ভ্রূ কুঁচকে তাকিয়ে সন্দীহান চোখে তাকিয়ে বলল
” কেন ভালো লাগছে না ?”

” জানি না, আমাকে নামান ৷ ”

আয়াশ হঠাৎ নূরকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে নূরের ঠোঁটে ঠোঁট মেশাতেই নূর আয়াশকে শক্ত করে চেপে ধরলো , যদিও আয়াশের এই পতিক্রিয়া আকস্মিক তবুও নূর আয়াশের থেকে এই ভালোবাসা গুলোকে চাই ৷ কয়েক মিনিট পর আয়াশ নুরের কাছ থেকে সরে এসে নূরের শাড়ির আঁচলে মুখটা মুছে বলল
” এবার তুমি যেতে পারো ৷”

নূর অবাক চোখে তাকিয়ে বলল
” কোথায় যাবো আমি ?”

আয়াশ নূরকে পুনরায় কোলে তুলে নিয়ে বলল
” তোমার ভাইয়া আর বাবা তোমাকে নিতে এসেছেন তাদের সাথে যাও ৷”

নূরের সমগ্র শরীর কেঁপে উঠলো, অশ্রুভরা চোখে আর কঠিন সুরে বলল
” আমি কোথাও যাবো না ৷”

আয়াশ নূরকে কোলে নিয়ে হাটতে হাটতে বলল
” আমি যখন যেতে বলেছি তখন তো যাবেই আফু সোনা ৷”
নূর আয়াশের শার্ট শক্ত করে খামচে ধরে বলল
” আমি বলছি তো যাবো না, আপনি আমাকে জোর করতে পারেন না, আমাকে নামান আমি রুমে যাবো ৷”

আয়াশ নূরের দিকে ডেভিল স্মাইল দিয়ে বলল
” জোর করে কিছু হাসিল করাটা আমার একপ্রকার নেশা বলতে পারো ৷ তোমাকে যেমন জোর করে পেয়েছি তেমনি তোমাকেও জোর করে কাছে পেতে আমার সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে ৷ একটা কথা মনে রেখো সারাদিন যেখানেই থাকি না কেন দিন শেষে আমি তোমার কাছে ফিরবো আর তুমি সবসময় আমার ভালোবাসা কে গ্রহন করার জন্য প্রস্তুত থাকবে , বুঝলে আফু সোনা !”

নূরের চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে ৷ কষ্ট হচ্ছে খুব , আয়াশ ওকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে ৷ নূর খেয়াল করলো ওরা গাড়ির কাছে চলে এসেছে, আয়াশ কতোটা স্বাভাবিক কিন্তু নূরের মনটা যে ভেঙে চূরমার হয়ে যাচ্ছে ৷ আয়াশ যেতেই ইফা গাড়ির দরজাটা খুলে দিতেই আয়াশ নূরকে গাড়িতে বসিয়ে দিলো ৷ নূর এখনো শক্ত করে আয়াশের শার্ট খামচি মেরে ধরে আছে আয়াশকে ছাড়ছে না , মনে হচ্ছে আয়াশকে ছেড়ে দিলেই আয়াশ পালাবে ৷ আয়াশ নূরকে উদ্দেশ্য করে বলল
” হাতটা ছাড়ো আফু সোনা ৷”

নূর ঠোঁট ফুলিয়ে কেঁদে বলল
” আমি যাবো না ৷ প্লিজ !”

আয়াশ নূরের হাতটা ছাড়াতে গেলেই নূর আয়াশের হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে কাছে টেনে আনলো, আশেপাশে কে কি দেখছে না দেখছে নূরের খেয়াল নেই ৷
” আমি যাবো না ৷”

হঠাৎই নূরের বাবা গম্ভীর কন্ঠে বললেন
” কি এতো দেরি হচ্ছে কেন , রাত হয়ে যাবে তো ৷”

ওনার কথা শুনে নূর কেঁপে উঠলো তবুও আয়াশকে ছাড়লো না ৷ নূর আয়াশের দিকে কান্নাভরা চোখে তাকিয়ে বলল
” এই হাত ছেড়ে দিলে আমাকে আর কখনো পাবেন না বলে দিলাম৷”
আয়াশ হাতটা ছাড়িয়ে বললো
” সবকিছু যে তোমার চাওয়া পাওয়া অনুযায়ী হবে এটা আমি বলিনি ৷ সবধানে থাকবে বুঝেছো ! আর আমার যখন সময় হবে আমি ঠিক,,,,,,”
কথাটা বলে গাড়ির দরজা বন্ধ করে দিলো ৷ নূর আয়াশের দিকে তাকিয়ে আছে, চোখ থেকে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়ছে ৷ গাড়ি স্টার্ট দিলো , আয়াশ নূরের দিকে না তাকিয়ে রেদোয়ানকে বলল
” ভাইয়া সাবধানে যাবেন ৷ ”
আয়াশ নুরের দিকে আর একটা বার ও তাকালো না , গাড়ি ধীরে ধীরে চলতে আরম্ভ করলো, নূর আয়াশের দিকে তাকিয়ে আছে যতখন দেখা যাই ও দেখেই যাবে , আয়াশকে ছেড়ে থাকা ওর পক্ষে কতোটা কষ্টকর তা নূর বুঝছে ৷”

আয়াশ ওর শার্টের কলারটা খানিকটা পিছন দিকে টেনে পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, ধীরে ধীরে নূর ওর চোখের সামনে দিয়ে মিলিয়ে গেল , ঝাপসা হয়ে এলো স্মৃতি ৷

#চলবে,,,,

অনেক অনেক বড়ো করে লিখেছি , পুরো 2401 শব্দের মধ্যে, তাই বড়ো করে যদি কমেন্ট না করেছেন তো কালকে আর পরশু গল্প দেবো না,এমনিতেও কালকে আমার এক্সাম আছে গল্প দেবো কি ভাবছি ৷ যদি দেখি নাইস আর নেক্সট বাদে বড়ো বড়ো আর ভালো কমেন্ট করেছেন তো কালকে দেবো নাহলে 2 দিন পর দেবো যদিও পরের পর্ব অনেক ধামাকাদার আর অনেক সুন্দর হবে আশা করি ৷ এবার আপনাদের চয়েজ ৷ বাই দা ওয়ে আমার জন্য দোঁয়া করবেন যেন এক্সাম ভালো হয় ৷ আবার বলে রাখলাম বড়ো কমেন্ট না করলে 2 দিন গল্প দেবো না ৷ টুইটুই😚

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here