#তুমি আমার প্রাণ
#পর্বঃ১৫
#Mitu-মিতু
“ভাইয়া”
তাসরিফ রিশার দিকে শান্ত দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বললো
“এবার যা ঘরে। আমি এখন ঘুমাবো। ”
“কিন্তু ভাইয়া?”
“আমি বললাম না যা আমি ঘুমাবো।”
তাসরিফের ঘুমপরীর গল্প শুনে রিশা হতভম্ব হয়ে দাড়িয়ে ছিলো। তাসরিফের ধমকে বলা কথায় রিশা চমকে উঠলো। সে আর কথা না বাড়িয়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেলো। নিজের ঘরে গিয়ে সে ভাবতে লাগলো এটা তো তার সাথে ঘটে যাওয়া গল্প।
“কিন্তু ভাইয়া আমাকে ভালোবাসে,, এটা কেমন? নাকি আমার বুজতে ভুল হয়েছে। ”
রিশার মাথায় তালগোল পেকে গেছে এইমুহূর্তে। যাকে সে ভাই বলে সে নাকি ওকে ভালোবাসে..? রিশা আর না ভেবে সাহেরা বানুর ঘরে গেলো আজ সে তার মায়ের সাথে ঘুমাবে।
“মা জেগে আছো..?”
“পুতুল এতো রাতে তুই না ঘুমিয়ে এখানে কেনো..?”
“আমি তোমার সাথে ঘুমাবো মা। তুমি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পারিয়ে দিবে।”
সাহেরা বানুর মেয়ে কথায় খুব খুশি হলেন। প্রথম যখন রিশা চেয়ারম্যান বাড়ি আসলো তখন যেভাবে সাহেরা বানুকে ঘর থেকে বের করে দিতো সেটা ভেবে আর যেতো না রিশার কাছে রিশা বিরক্ত হবে বলে।
“আয় পুতুল আয়! আমার কলিজা।”
সাহেরা বানু মেয়ের কপালে চুমু দিলো।রিশা তার মাকে জরিয়ে ধরে শুয়ে পরলো। মায়ের পরশ,,ভালোবাসা সে পেয়েছে।
_______________
সময় ও স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না। তারা সর্বদা বয়ে চলছে নিজ নিয়মে। ভালোলাগা ভালোবাসা এক না। ভালোলাগা থাকে কিছু মুহূর্ত পর্যন্ত আর ভালোবাসার সাথে মিশে থাকে অঢেল মায়া। কেউ যদি কারো মায়ায় একবার পরে যায় তো সেই মায়া কেটে ওঠা বড্ড কঠিন। পাগল প্রেমিক হিসেবে পরিচিত হয় তারাই যারা মায়া কেটে উটতে না পেরে ভালোবাসার জন্য পাগলামি শুরু করে। সব ভালোবাসায় প্রতারণা থাকে না। কিছু ভালোবাসায় থাকে মুগ্ধতা সাথে থাকে শ্রদ্ধা। তেমনি এক ভালোবাসা আছে তাসরিফের কাছে তার ঘুমন্তপরীর জন্য। পরিবারের সবাই কি ভাববে সেটা ভেবে সে চেষ্টা করেছে মায়া কাটানোর জন্য। কিন্তু সে সফল হয়নি। মায়া কাটার পরিবর্তে সে আরো একরাশ মুগ্ধতায় ডুবে গেছে। খিলখিলিয়ে ওঠা হাসির শব্দ,,ভয়ে চুপসে যাওয়া মুখ,,প্রশ্নের পর উত্তর শোনার জন্য অধীর আগ্রহ,, সকল আচরনে সে খুজে পায় একরাশ মুগ্ধতা। বাড়ি থেকে কর্মজীবনে ফিরে আসা সপ্তাহ পার হয়ে গেছে তাসরিফের। সারাদিন ব্যস্ত থেকে যখন একটু বিশ্রামের সময় পায় তখনই প্রেয়সীর করা সকল আচরণ তার চোখের সামনে ভেসে উঠে। সে উপায় খুঁজে পায় না কিভাবে তার পুতুলকে নিজের করে পাবে,,কিভাবে বাবার কাছে বলবে সে পুতুলকে ভালোবাসে।অতি আদরে বেড়ে উঠলেও তারা যে বাবা-মায়ের সাথে জোর গলায় কথা বলার দুঃসাহস দেখায় না। তাসরিফ শুয়ে থেকে ভাবছে মতিন সাহেব কে কিভাবে জানাবে কথাটা।
______________
রসুলপুর গ্রামে বেড়ে ওঠা কিশোরী রিশা। বয়ঃসন্ধির সেই দুঃসাহ আবেগ,,অনুভূতি তার ভেতরেও জাগ্রত হয়েছে তবে বিশেষ পাত্তা দেয়নি এগুলোতে। রিশা তো বাবার ভালোবাসা,,মামা-মামীর আদর আর তার তাসরিফ ভাইয়ের বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতা নিয়ে বেড়ে উঠেছে। রিশা তার মায়ের চেহারা পেয়েছে সে এটাই জানে,, সবাই বলেও তাই। হলুদ ফর্সা শরীরে কোমড় পর্যন্ত একরাশ ঘন চুলের খোপায় তাসরিফ মাতোয়ারা। গোমরামুখো তাসরিফ তার পুতুলের সাথে এমন কোনো আচরণ করেনি যাতে রিশার মনে কোনো অনুভূতি জন্মাবে তার জন্য। সন্ধ্যায় রিশা তানিয়ার ঘরে গেলো। তানিয়া তখন ওর হবু বরের সাথে কথা বলছিলো দেখে রিশা আবার নিজের ঘরে ফিরে আসে। চেয়ারম্যান বাড়ির দোতলার সব কয়টা ঘরে সুন্দর বারান্দার ব্যবস্থা করা আছে। বারান্দায় রাখা চেয়ারে বসে রিশা ফোনে গেম খেলা শুরু করলো। সে যখন একা সময় কাটায় তখন তাসরিফের বলা ঘুমপরীর কথা ওর মস্তিষ্কে হানা দেয়। সে প্রত্যেক বার নিজের সাথে সেই গল্পের মিল খুঁজে বের করেছে। প্রত্যেক টা কাহিনি ওর সাথে মিলে যায়। ভাইয়া বলে ডাকা মানুষটাকে সে তার প্রেমিকের স্থানে ভাবতে পারে না।মনে অনেক দ্বিধা। রিশা যখন গেম খেলায় মগ্ন ছিলো সেসময় তার খেলার বারোটা বাজিয়ে ফোন টা বেজে উঠলো। মিঃ আর্মি দিয়ে সেভ করা নাম্বার থেকে কল দেখে রিশার ভেতরটা ধক করে উঠলো। গেম খেলায় বাঁধা পরায় ফোনটা ধরবে না বলেও রিসিভ করে কানে ধরলো।
“সে কি জানে,আমার মনপ্রাণ জুরে শুধু তার বিচরণ ..সে কি বোঝে,কোনো একজন তার মুগ্ধতায় বাধা পরেছে…না সে কিছু জানেনা। আমার অনেক সময় চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে হয় # তুমি আমার প্রাণ।
ফোন রিসিভের সাথে সাথে এমন কথা শুনে রিশা তাজ্জব বনে গেলো। কথা হারিয়ে গেলো তার থেকে। কোনো কথা না বলে রিশা চুপ থাকলো।
” কথা বল। চুপ করে আছিস কেনো? কি করছিস?”
“আম-মি বসে আছি। গেম খেলছিলাম।”
রিশার থেমে থেমে যাওয়া উত্তরে তাসরিফের ঠোঁটে হাসি ফুটলো। কি আছে এই মেয়ের মধ্যে যা তার মতো একজনকে আকর্ষণ করলো বুঝে পায় না তাসরিফ।
“ছোটদের মতো গেম না খেলে ভার্সিটির জন্য প্রিপারেশন নে। যদি তা না করিস তাহলে কারো হৃদয়ের রানী হওয়ার প্রস্তুতি নিতে পারিস।”
“ভাইয়া! তোমার কি হয়েছে? এমন করে তো কথা বলো না তুমি?”
“বলিনি তবে যে কখনো বলতে পারবো না এমন তো না।”
“ভাইয়া! ফোন রাখি।নিচে যাবো।”
“পুতুল একদম পালাই পালাই করবি না। আমি কেনো তোর সাথে এমন কথা বলছি তা বোঝার সক্ষমতা তোর আছে। সুতরাং,অযথা কারন আমায় দেখাবিনা।”
“বুঝেছি তবে আমি তোমাকে ভাইয়া বলে মানি। আমি এটা মানতে পারবো না। আর এটা কেউ মানবে না।সবাই আমাদেরকে ভাই-বোন বলে জানে। ”
“লোকে কি জানলো না জানলো তাতে আমার কিছু যায় আসে না। আমার জানানোর প্রয়োজন ছিলো জানিয়েছি। এতে তোর মতামত না থাকলেও আমার কিছু না।তবে আমি আমার জিনিস টা আদায় করেই দম নেবো।”
রাশভারি তাসরিফের হিমশীতল কন্ঠে রিশা জমে গেলো। এ কেমন ত্যাড়া কথা। রিশা কিছু না বলে ফোনটা কেটে দিলো। বয়ঃসন্ধির রেশ তার মধ্যে এখনো আছে। এমন কথা শুনলে যেকোনো কিশোরীর মনে অনুভূতি উঁকি দিতে বাধ্য। কথার মাঝখানে ফোন কেটে দেওয়া দেখে তাসরিফ হেসে উঠলো।
“যাকে ছোট থেকে দেখছি,,নিজ হাতে গড়ে তুলেছি,,তার ভেতরে অনুভূতি কিভাবে জাগাতে হয় তা আমার ভালোভাবে জানা আছে পুতুল। তোকে আমার চাই। খুব করে চাই।আমার পিচ্চি পুতুল। ”
চলবে……
[পাঠক/পাঠিকাগন আমার এই ছোট পেজটাতে ফলো করে রাখবেন। আমি গল্প দিলে যেনো সবার আগে আপনাদের কাছে পৌঁছে যায় ]