#তুমি আমার প্রাণ
#পর্বঃ২০
#Mitu-মিতু
“মনোহারিণী!”
রিশার মুখে লজ্জামিশ্রিত হাসি ফুটে উঠলো
স্পর্শের বাইরে থেকেও যাকে চাওয়া হয় সেটাই ভালোবাসা। দিনের পর দিন,,বছরের পর বছর না দেখেও যার প্রতি মুগ্ধতা কাজ করে,, সেটাই ভালোবাসা। দিনশেষে সেই নির্দিষ্ট একজন কে চাওয়াই ভালোবাসা।
তাসরিফের এমন মুগ্ধময় কন্ঠের ডাক শুনে রিশা শিহরিত। চোখে চোখ মেলানো তার জন্য এখন বিশ্ব জয়ের মতো। রিশার এমন লজ্জাবরণ মুখ দেখে তাসরিফের ঠোঁটে হাসি ফুটে উটলো।
“তাকাও আমার দিকে।কাজল বরণ আখি দেখে আমার নয়নকে ধন্য করি।”
“ভাইয়া তুমি আমাকে তুই বলেই ডাকবে।তোমার মুখে তুমি ডাক আমার নিঃশাস আটকিয়ে দেয়।”
“এখন থেকে অভ্যাস করে নে।তাছাড়া বিয়ের পর তুই বলে ডাকলে আমার ফুপির পুতুলই আগে মন খারাপ করবে।”
মেয়েদের প্রথম প্রেমিক হতে পারাটা সৌভাগ্যের। প্রথম প্রেমিককেই তারা সবটা উজাড় করে দিয়ে ভালোবাসতে পারে। কোনো ছেলের সংস্পর্শে না যাওয়া রিশা তাসরিফের প্রতি দুর্বলতা অনুভব করা শুরু করেছে। রাতে তাসরিফের ফোন না আসলে তার মনে অভিমান জমা হয়। এই বুঝি পুতুলকে সে ভালোবাসে এমন ভাবনা মনে এসে নাড়া দেয়।
“ভাইয়া!এমনটা হবে না। আমি তোমার থেকে অনেক ছোট। তোমার সাথে আমি পারফেক্ট না আর এটা পরিবারের কেউ মানবেও না।”
“শুধু তুই মেনে নে আমায়।আমি পুরো পৃথিবীর সাথে তোকে মানিয়ে নেবো।”
“এগুলো বাদ থাক এখন। তুমি আসছো কবে?”
“আমার প্রতীক্ষায় কেউ পথ চেয়ে তাকে কি? যারা বউ রেখে দূরে থাকে তাদের মধ্যে বাড়ি ফেরার টান থাকে।আমার তো আর বউ নেই,, যিনি আমার দেখা পাওয়ার জন্য প্রহর গুনবে।”
“বউ না থাকলেও মামা-মামী আছে,, তানিয়া আপু আছে। এদের টানে তুমি বাড়ি আসবে।”
আজকে ডিউটি শেষে তাসরিফের জন্য এক সপ্তাহের ছুটি পাশ হয়েছে। এখন রাত সাড়ে আটটা। আজকে রাতটা কোয়ার্টারে কাটিয়ে কালকে সকালের ট্রেনে বাড়ি ফেরার কথা ভেবে রেখেছিলো সে তবে শাড়ি পরিহিত প্রাণ কে দেখে তাসরিফের জন্য এই রাতটা বিশাল বড় পরিক্ষা।
“এই শোন,,তুই শাড়ি খুলবিনা।এখন সাড়ে আটটা বাজে আমার বাড়ি যেতে ট্রেনে গেলে লাগবে তিনঘণ্টা কিন্তু এখন ট্রেন পাবো না।বাসে আসছি আমি।১২ টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারবি আমার জন্য। আমি আমার প্রাণকে সামনে থেকে দেখে আমার তৃষ্ণা মেটাতে চাই। দিবি সেই সুযোগ? ”
“ভাইয়া!তুমি পাগল হলে নাকি? এখন আসা লাগবে না তুমি কাল সকালে এসো। ”
“না!আমি এখন ই বের হচ্ছি। তুই আমার জন্য অপেক্ষা করবি আর ভুলেও শাড়ি চেঞ্জ করবি না।আমি আসবো। ”
ফোন কেটে দিয়ে তাসরিফ ব্যাগ গোছাতে লাগলো। প্রাণের সাথে সে তার গাম্ভীর্যতা প্রকাশ করতে পারে না। প্রাণের আশেপাশে থাকলে সে অষ্টাদশ কিশোরের মতো ব্যাকুলতা উপলব্ধি করে। তাসরিফ ঝটপট কোয়ার্টার থেকে বেরিয়ে বাস স্ট্যান্ডে গেলো।
___________
নিজ ঘরে হতভম্ব হয়ে বসে আছে রিশা। গুনে গুনে তার থেকে দশ বছরের বড় তাসরিফ। মনে মনে বললো
“এটা কি মামা-মামী মানবে? লোকজন বলবে কি? বিরহের দহনে পুরতে হবে কি তাকে?”
“রিশা এই রিশা! ঘরের মধ্যে কি করছো তুমি? তানিয়া তোমাকে ছাদে ডেকেছে।”
সুমিকে ছাদ থেকে নামতে দেখে তানিয়া তাকে রিশাকে ডেকে দেওয়ার কথা বলায় সে প্রথমে রিশার ঘরে আসলো।
“আমি যাচ্ছি আপু।”
রিশা শাড়ি ধরে সিড়ি বেয়ে উঠে ছাদে গেলো। রিশাকে দেখে তানিয়া অভিমানে মুখ ফুলিয়ে বললো
“পুতুল! আজকে আমার গায়ে হলুদ। তুই আমার একমাত্র বোন আর তুইই দূরে দূরে থাকছিস। আয় আমার কাছে বোস।”
রিশা তানিয়ার পাশে গিয়ে বসলো। তানিয়া আশেপাশে কাউকে খুজতে লাগলো। না পেয়ে নুপুরকে জিজ্ঞেস করলো
“নুপু! রায়হান কে তো কোথাও দেখতে পাচ্ছি না। একটু ডেকে দে তো।”
রায়হান বাবার কল আসায় ছাদের চিলেকোঠার ওপারে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলো। বক্সের সাউন্ডে একটু অসুবিধা হচ্ছে কথা বলতে।
“আমার কথার অবাধ্য হয়ে গ্রামে গেছো রায়হান। বান্ধবীর বিয়েতে আউটসাইডে যেনো নজর না পরে। মনে রেখো গ্রাম বা গ্রামের কোনোকিছুই আমার পছন্দ না। ”
বাবার কথায় রায়হান এটা ঠিক বুজতে পারলো নিশ্চয় তার আম্মু ওর মায়াকন্যার কথা বলেছে তার বাবাকে।
“আমার অলরেডি অন্য দিকে নজর পরে গেছে আব্বু। আমার একটা মেয়েকে ভালো লেগেছে আর তাকে আমার চাই চাই। ”
“মানুষ সৌন্দর্যের পূজারী। তোমার একজন কে ভালো লাগতেই পারে ওটা নিয়ে ওত লাফালাফি করা লাগবে না। তুমি বাড়ি ফিরছো কবে?”
“আব্বু প্রথমে তাকে আমার ভালো লাগলেও এখন আমি তার মায়ায় আটকেছি। আর মায়া কেটে ওঠার সাধ্য কোনো পুরুষের মাঝে নেই। আর চারদিন পর আমি ফিরছো।”
“তোমার এমন প্রেমকাহিনী আমি শুনতে চাই না। আমি আমার বিজনেস পার্টনারের মেয়ের সাথে তোমার বিয়ের কথা বলেছি। তুমি এসে তার সাথে কিছুদিন কথা -বার্তা বলো।ওসব মায়া কেটে যাবে।”
“আব্বু! ”
রায়হান আর কিছু বলার সুযোগ পেলো না।আজমল আহমেদ ফোন কেটে দিয়েছেন। একমাত্র সন্তান হওয়ায় বাবা-মায়ের ওপর কথা বলার সাহস তার হয়নি। কিন্তু এবার সে অবাধ্য হবে তার মায়াকন্যার জন্য।
_____________
চিলেকোঠার ওপার থেকে রায়হান কে বেরিয়ে আসতে দেখে নুপুর ওকে ডেকে উঠলো
“তুই ওখানে কি করছিলি? তোকে তানিয়া খুজছে।”
“এই তুই কোথায় ছিলি রে।আয় আমার আর পুতুলের কিছু ফটো তুলে দে।ফটোগ্রাফার হিসেবে তুই পারফেক্ট। ”
অনেকক্ষন পর মায়াকন্যার মিষ্টি মুখটা দেখে রায়হানের মন খারাপ দূর হয়ে গেলো।খুশিমনে সে অনেক গুলো ফটো তুলে দিলো ওদের। একটু চালাকি করে রিশার একটা ফটো নিজের ফোনে কালেক্ট করলো।
____________
সবাই রাতভর আড্ডা দেওয়ার কথা বললেও মতিন সাহেবের কথায় ১১ টায় সবাই হলুদ সন্ধ্যা সমাপ্ত করে নিচে নামলো। রিশা নিজের ঘরে গিয়ে তাসরিফের জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনতে লাগলো। পাগল প্রেমিকের একটু-আধটু পাগলামি সব প্রেমিকাকেই সহ্য করতে হয়।এখানে ঠিক পরিচয় পাওয়া যায় মেয়েটা ঠিক কতো টা ধৈর্যশীল।
চলবে……