#তুমি_আমার_প্রেয়সী
#সিজন ২
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
#পর্ব_১৮
কণার ফোন বেঁজে ওঠে। কণা ফোনটা রিসিভ করেই স্তব্ধ হয়ে যায়। ফোনটা হসপিটাল থেকে করেছিল। সাফাত এক্সিডেন্ট করেছে। সাফাতের অবস্থা বেশি ভালো না। কণা কী করবে বুঝতে পারছে না? নিজেকে পাগল পাগল লাগছে তার। আরুহি কণার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়,
কী হয়েছে কণা?
কণা কাঁপা কাঁপা গলায় বলে, ভা ভা ভা ভাইয়া এক্সিডেন্ট করেছে।
কথাটা বলেই কণা কান্নায় ভেঙে পড়ে। ধপ করে মাটিতে বসে পড়ে। কণা ভালো করেই জানে এটা কোনো এক্সিডেন্ট ছিল না কারো পরিকল্পিত প্লেন। ইচ্ছে করেই এমনটা করেছে। আরুহি কী করবে বুঝতে পারছে না। কণার কান্নার বেগ বেড়েই চলেছে। আরুহি দৌড়ে নিচে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর আদিয়াতকে সাথে করে নিয়ে আসে। আদিয়াত দৌড়ে এসে কণার সামনে এসে বসে পড়ে।
হেই মেয়ে স্টপ ক্রাইং। এখানে বসে কান্না কাটি করলে কী তোমার ভাই সুস্থ হয়ে যাবে?তোমার ভাইয়ের কী হয়েছে সেটা তো তুমি জানো না? হসপিটালে না গেলে তো জানতে পারবে না। কান্না কাটি বন্ধ করো। চলো হসপিটালে যায়।
আদিয়াতের কথায় কণা একটু শান্ত হয়। বসা থেকে ওঠে দাঁড়ায়। তারপর দৌড়ে নিচে নেমে যায়। উদ্দেশ্য সাফাতের কাছে যাবার। আদিয়াত আর আরুহিও কণার পিছন পিছন ছুটে।
৪২
হসপিটালের করিডোরে বসে আছে কণা। অনবরত কান্না করে যাচ্ছে কণা। আরুহি কণার কান্না থামানোর বৃথা চেষ্টা করে যাচ্ছে। তাহসিন আহম্মেদ নির্জীব হয়ে বসে আছেন চেয়ারে। কষ্টে উনার বুকের ভিতরটা ফেটে যাচ্ছে। উনি শুধু পারছেন নাহ কণার মতো করে কাঁদতে। ছেলেদের তো কাঁদতে মানে। আর উনি ভেঙে পড়লে তো কণা আরো ভেঙে পড়বে। তিনি ভাবছেন আল্লাহ তার ছেলে মেয়েদের কপালে এতো দুঃখ কেনো লিখে রেখেছে? জন্মের পর মা কেড়ে নিল। তারপর থেকেই একের পর এক দুঃখ। তাহসিন আহম্মেদের বুকে ব্যথা করছে। কিন্তু উনি বিষয়টা কাউকে বললেন নাহ। আদিয়াত ডক্টরের সাথে কথা বলছেন।
দেখুন মিস্টার আদিয়াত আমরা আমাদের সাধ্য মতো চেষ্টা করছি। বাকিটা আল্লাহর হাতে। উনি হাতে বাজে ভাবে আঘাত পেয়েছেন। উনি সুস্থ হয়ে গেলোও উনার হাত ঠিক হবে কী না সেটা আমরা বলতে পারছি না।
কথাগুলো বলে ডক্টর চলে গেলো। আদিয়াত একবার কণার দিকে তাকালো মেয়েটা এখনো কাঁদছে। সাফাতকে আই সি ইউ এর ভিতর রাখা হয়েছে। তাহসিন আহম্মেদের বুকের ব্যথা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। এক সময় তাহসিন আহম্মেদ বুকে হাত রেখেই ঢলে পড়েন। এটা দেখেই কণা চিৎকার করে ওঠে।
বাবা।
কণার চিৎকার শুনে সবাই তাহসিন আহম্মেদের দিকে তাকায়। সবাই ধরাধরি করে তাহসিন আহম্মেদকে একটা কেবিনে নিয়ে যায়। ডক্টর তিশান আহম্মেদকে দেখে জানায় যে তিশান আহম্মেদ হার্ট এ্যাটাক করেছে। কণা এবার আরো বেশি কান্নায় ভেঙে পড়ে। আদিয়াত কী করবে বুঝতে পারছে না। সে এরকম পরিস্থিতি আগে কখনো পড়েনি। কণার কান্না সে দেখতে পারছে না। বুকের ভিতর চিন চিন ব্যথা করছে। আদিয়াত কেবিন থেকে বের হয়ে যায়।
১ মাস পর।
হ্যাঁ কেটে গেছে এক মাস। গ্রীষ্ম গিয়ে বর্ষা চলে আসছে। সাফাত আর তিশান আহম্মেদ দুজনেই সুস্থ। আল্লাহর রহমতে সাফাতের হাতের তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। সাফাতের অসুস্থতার সময়ই সাফাতের চাকরি চলে যায়। সাফাত আর তিশান আহম্মেদ দুজনেই অসুস্থ এদিকে সাফাতের চাকরিও চলে গেছে। হসপিটালের বিল, ঔষধ পত্রের খরচ সব সামলাতে কণা হিমশিম খাচ্ছিল। কি থেকে কি করবে এসব ভেবে কণা দিশেহারা হয়ে পড়েছিল। সেই দুঃসময় পাশে ছিল আদিয়াত। ছায়ার মতো আগলে রেখেছিল কণাকে।
বর্ষার আগমনে তুমুল বর্ষণ হচ্ছে। জোরে জোরে হাওয়া বইছে। সাফাত বেলকনিতে বসে কফি মগে চুমুক দিচ্ছে আর বৃষ্টি দেখছে। বৃষ্টির পানি এসে সাফাতকে আধ ভেঁজা করে দিয়েছে। সেদিকে তার কোনো খেয়াল নেই। আজকে তার ভীষণ রকম মন খারাপ। বন্যার ফোন বন্ধ পাচ্ছে। সকাল থেকে হয়তো দুইশো বারেরও বেশি ট্রাই করেছে। কিন্তু বার বার বন্ধ দেখাচ্ছে। ফোন ছাড়া বন্যার সাথে যোগাযোগ করার আর কোনো ওয়ে নেই। সাফাতের হাতে থাকা ফোনটা বেঁজে ওঠলো। সাফাত তড়িৎ গতিতে ফোনের দিকে তাকায়।
বন্যা নাম্বারটা দেখে সাফাতের দেহে প্রাণ ফিরে আসে। দ্রুততার সাথে ফোন রিসিভ করে।
হ্যা…..
ঐপাশ কান্নার শব্দ শুনে সাফাতের কথা থেমে যায়। বন্যা ডুকরে ডুকরে কাঁদছে। কিছু বলতে চাচ্ছে কিন্তু কান্নার জন্য বলতে পারছে না। সাফাতের বুকের ভিতর অসহনীয় যন্ত্রণা হচ্ছে। খারাপ কিছু হলো না তো।
বন্যা কী হয়েছে? তুমি এভাবে কাঁদছো কেনো? বল আমাকে।
সাফাত বাসা থেকে আমার বিয়ে ঠিক করেছে। আমি এই বিয়ে কিছুতেই করতে পারবো না। আমি মামাকে এই কথা বলি। এটাও বলি যে আমি তোমাকে ভালোবাসি। তোমাকে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করতে পারবো না। এই কথা শোনার পর মামা আমাকে রুমে আটকে রাখে। আমার ফোনটা ছুঁড়ে মারে। সকাল থেকে অনেক চেষ্টা করার পর মাত্র ফোনটা চালু হলো। সাফাত তুমি……
আর কিছু শোনা গেলো না। সাফাত হ্যালো হ্যালো হ্যালো করছে। কিন্তু অপর পাশ থেকে কোনো উত্তর এলো না। শুধু ফোন কাটার শব্দ শোনা গেলো। সাফাত রুমে গিয়ে গায়ে কোনো মতে একটা শার্ট জড়ালো। তারপর ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে গেলো। কণা বা তাহসিন আহম্মেদ কেউই বাসায় নেই। কণা ভার্সিটিতে আর তাহসিন আহম্মেদ অফিসে। সাফাত বৃষ্টিতে ভিজে ভিজেই একটা সিএনজিতে ওঠলো।
সাফাতের বাসা থেকে বন্যার বাসার দূরত্ব অনেকটাই। বন্যাদের বাসার সামনে আসতে সাফাতের তেমন একটা অসুবিধা হলো না। কারণ এর আগেও বেশ কয়েক বার বন্যাকে ড্রপ করতে এখানে এসেছিল। সাফাত সন্ধ্যার সময় কাক ভেঁজা হয়ে বন্যার বাসার সামনে এসে দাঁড়ায়। কলিংবেল বাজাতেই একটা মেয়ে এসে দরজা খুলে দেয়। মেয়েটার বয়স ১৬-১৭ হবে। সাফাত আন্দাজ করে নেয় এই মেয়েটাই নিতু। নিতু উচ্ছাসিত গলায় বলে,
সাফাত ভাইয়া আপনি? আপনি সত্যিই এসেছেন।
নিতু সাফাতকে আগে থেকেই চেনে। বন্যার ফোনে সাফাতের অনেক ছবি দেখেছে। তাই সাফাতকে চিনতে তার বেগ পেতে হলে না। সাফাত সিওর হওয়ার জন্য বলে,
তুমিই কী নিতু?
নিতু মাথা কাত করে সম্মতি জানায়। সাফাত অস্থির গলায় বলে, নিতু বন্যা কোথায়?
আপুকে আব্বু রুমে আটকে রেখেছে।
সাফাত নিতুকে পাশ কাটিয়ে বাসার ভিতরে ঢুকে। ইতিমধ্যে ড্রয়িংরুমে সবাই চলে আসছে। সাফাতকে দেখে আনজুম বেগম মোটামুটি অনুমান করে নেয় এটা কে হতে পারে। উনি ভয়ে আছেন। এই ছেলে আবার কোনো গণ্ডগোল করবে না তো। তাহলে তো উনার সব প্লেন ভেস্তে যাবে। সব টাকা হাতছাড়া হয়ে যাবে। এটা উনি কিছুতেই হতে দিবেন নাহ। যে করেই হোক এই ছেলেকে তাড়াতে হবে।
এই ছেলে কে তুমি? এখানে কী করছো?
সাফাত আনজুম বেগমের দিকে তাকিয়েই বুঝতে পারলো এটাই বন্যার সো কল্ড মা। যে নিজের সুখের জন্য নিজের মেয়েকেও চিনে না।
আমি সাফাত। আমি বন্যাকে নিতে এসেছি। আপনারা বন্যাকে এভাবে জোর করে বিয়ে দিতে পারেন নাহ। বন্যা এডাল্ট। নিজের সিদ্ধান্ত নেওয়া মতো বয়স হয়েছে। বন্যা আমাকে ভালোবাসে। আমাকে ছাড়া অন্য কারো সাথে বিয়ে হলে বন্যা কোনোদিন সুখী হবে না।
বন্যার বড় মামা উগ্র কন্ঠে বলে, তোমার সাথে বিয়ে হলে বুঝি খুব সুখী হবে। কী দিয়ে সুখী করবে? কী আছে তোমার? না আছে টাকা আর না চাকরি? ভালোবাসার দাবি নিয়ে তখন আসতে হয় যখন যোগত্যা থাকে। কী যোগত্যা আছে তোমার। তুমি বন্যাকে ভালোবাসো তাই না? বন্যার সুখের জন্য তুমি বন্যার পথ থেকে সরে দাঁড়াও। চলে যাও এখান থেকে।
সাফাত হাত জোড় করে। শেষ পর্যন্ত পায়ে পড়ে যায় বন্যার বড় মামার কোনো কাজ হয়নি। উনার পাষাণ মন শুনতে পায়নি সাফাতের আহাজারি। আনজুম বেগম আর উনার দ্বিতীয় স্বামী সাফাতকে বাসা থেকে বের করে দেয়।
সাফাত বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে রাস্তার পাশ দিয়ে হাঁটছে। সাফাতের চোখের পানি আর বৃষ্টির পানি মিলেমিশে এককার হয়ে যাচ্ছে। এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে ভালোবাসার কোনো মূল্য নেই। শুধু আছে টাকার মূল্য। সাফাত কী তাহলে তার ভালোবাসা হারিয়ে ফেললো?
চলবে…….