তুমি বললে আজ ২ পর্ব -১৫

#তুমি_বললে_আজ_২
লেখনীতেঃ #রিধিমা_জান্নাত_রূপা
পর্বঃ ১৫.

.
“এসব…. এসব কি করেছেন আপনি, তাসফি ভাইয়া?”

ঘাড় ঘুরিয়ে আমাকে একবার দেখে নিলেন, কোন কথা না বলে বিরক্তি মুখে আবারও নিজের কাজে মনোযোগ দিলেন। অবশ্য কাজ বললে ভুল হবে, কাজের চাইতে অকাজটাই বেশি করছেন উনি। রান্না ঘরের পুরো ফ্লোর জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে হাঁড়ি পাতিল, ময়দার প্রলেপ সাথে সবজির কা*টা কা*টা অংশ। কেবিনেটের পুরোটা জুড়ে ছোপ ছোপ ময়দা ছিটিয়ে সাদা হয়ে আছে, সাথে সবজি দিয়ে বিছিয়ে আছে পুরোটা। একটুও জায়গা ফাঁকা নেই বললেই চলে। উনি কোন দিকে পাত্তা না দিয়ে এক মনে রুটি বেলে চলেছেন। একটু কাছে গিয়ে বুঝতে পারলাম রুটি নয়, উনি তো বাংলাদেশের মানচিত্র বানাতে ব্যাস্ত। শুধু বাংলাদেশের মানচিত্র বানিয়েই ক্ষ্যান্ত হন নি, বাকিগুলো ভারত পাকিস্তানের মানচিত্রও বানিয়েছেন। সেগুলো কয়েকটা ভেজেও ফেলেছেন, কালো কালো আধ পোড়া রুটির মাঝে আবার ফুটোও হয়ে আছে। তাতে যেন স্পষ্ট ভাবে মানচিত্রের রুপ ধারণ করেছে। ওনার বানানো রুটির নামে মানচিত্র গুলোর দিকে তাকিয়ে আবারও শব্দ করে হেঁসে উঠলাম। হাসতে হাসতে রুটির দিকে দেখিয়ে ওনাকে বলে উঠলাম,
“এগুলো কি তাসফি ভাইয়া? কি বানিয়েছেন এগুলো?”

আমার কথার কোন জবাব দিলেন না উনি, আর না তাকালেন। আমি হাসতে হাসতে মানচিত্রের মতো রুটির দিকে হাত বাড়িয়ে দিতেই সাথে সাথে আমার হাত ধরে আঁটকে ফেললেন উনি। গম্ভীর গলার বলে উঠলেন,
“খবরদার হাত দিবি না, তোকে এখানে কে আসতে বলছে? যা এখান থেকে।”

“কিন্তু আপনি এগুলো কি বানাচ্ছেন তাসফি ভাইয়া? কোন দেশের মানচিত্র এগুলো?”

বলেই হো হো করে হেঁসে উঠলাম। আমাকে দাঁত কেলিয়ে হাসতে দেখে আবারও ধমকে উঠলেন উনি।
“দেখতে পারছিস না, রুটিগুলো দেখে তোর মানচিত্র মনে হচ্ছে? বেয়াদব! আমার কাজের মধ্যে এসে বা হাত ঢুকাচ্ছিস কেন? যা এখান থেকে।”

“আপনি তো আর কাজের কাজ করছেন না, অ-কাজটাই বেশি করছেন। ছাড়েন এগুলো, সড়েন এখান থেকে।”

“গাধার মতো এমন ডিস্টার্ব করছিস কেন? বেয়াদব! তুই যা এখান থেকে। কাজ করতে দে আমাকে।”

এবার হাসিটাকে দমিয়ে রেখে সিরিয়াস হলাম। পুরো রান্নাঘরের অবস্থা চোখে দেখার মতো নয়, ফুপিও অসুস্থ, এগুলো ঠিক করতেই যে আমার বারোটা বেজে যাবে। তাসফি ভাইয়ের চেহারার কথা আর নাই বলি, ওনার দিকে তাকানোই দায় হয়ে উঠেছে যেন। দেখে প্রচন্ড হাসিও পাচ্ছে আবার মায়াও হচ্ছে। কখনো একটা প্লেট ধুয়েও খান নি, অথচ উনি কি না রান্না করছেন? ভাবা যায় এগুলো? সকাল থেকে হয়তো ফুপির সাথে সাথে উনিও কিছু খান নি। ওনার ধমক কে পাত্তা দিলাম না। বলে উঠলাম,
“আমি মোটেও ডিস্টার্ব করছি না, দেখি ছাড়েন এগুলো আর যান এখান থেকে। আপনার কাজে সারাদিনও কিছু হবে না, আর না ফুপিকে কিছু খাওয়ানে যাবে।”

“আমার থেকে কি তুই বেশি পারিস? রান্নাঘরে গেছিস কখনো? আমাকে জ্ঞান দিচ্ছে, হু!”

“না গেলেও আপনার মতো এতো অ-কাজ করি না, পুরো রান্না ঘরের অবস্থা কি করছেন এগুলো? একবার তাকিয়ে দেখুন। আর আপনাকে…. আর আপনার দিকে তো তাকানোই যাচ্ছে না, কি অবস্থা করেছেন নিজের? দেখি ছাড়েন তো এগুলো। ফুপিকে কি এসব আধ পোড়া রুটি খাওয়াবেন নাকি?”

এবার পুরো রান্নাঘরের দিকে তাকালেন উনি, তারপর নিজের শরীরের দিকে একবার তাকিয়ে আমার দিকে তাকালেন। এতক্ষণে ওনার বিশ্বাস হলো হয়তো, করুন চোখে তাকিয়ে থাকলেন আমার দিকে। আস্তে করে বলে উঠলেন,
“কি করবো? আম্মুকে তোর আর বাইরের খাবার খাওয়াতে পারবো না।”

বলেই একটু থামলেন, সেকেন্ডের মতো সময় নিয়ে আবারও বললেন,
“আচ্ছা তুই যা, আমি এগুলো আস্তে আস্তে ঠিক করছি। লেগে যাবে তোর।”

বলেই উনি গোছানোর বৃথা চেষ্টা করতে লাগলেন। হতাশার নিশ্বাস ছাড়লাম আমি। মানুষটা এমন কেন? নিজের চেহারার দিকে তাকানো যাচ্ছে না, অথচ উনি আমাকে যেতে বলছেন, লেগে যাবে বলে। ইস্! মাঝে মাঝে এত কিউট করে কথা বলেন, কি আর বলি। তাসফি ভাইয়ের অবস্থা দেখে মায়াও হতে লাগলো অনেক, ওনার কথাকে পাত্তা না দিয়ে হাত দু’টো টেনে ধরলাম। বাঁধা দিয়ে বলে উঠলাম,
“উফ্! বললাম তো ছাড়েন এগুলো, আমি গুছিয়ে নিচ্ছি, তারপর রান্না বসাবো।”

“তোর মতো পুঁচকে মেয়ে কি রান্না করবি? গেছিস কখনো রান্নাঘরে, করেছিস রান্না? খালি তো বসে বসে মামার টাকা ধ্বংস করা শিখেছিস।”

“আমাকে দেখে কি আপনার পুঁচকে মনে হচ্ছে তাসফি ভাই? আর কে বলেছে আপনাকে, আমি রান্না পারি না? দেখি যান তো এখান থেকে, আমাকে এগুলো ঠিক করতে দেন।”

আবারও হতাশার নিশ্বাস ছেড়ে বলে উঠলাম। এই চার বছরে যে কতকিছু শিখে গেছি সেটা তো আর ওনার জানার কথা নয়। রান্নাটাও যে মোটামুটি অনেকটাই পারি সেটাও উনি জানেন না। উনি আবারও আমাকে ধমকে উঠলেন, পাত্তা দিলাম না সেদিকে। অনেকটা জোর করেই ওনাকে যাবার জন্য বলে গেলাম। কিন্তু উনি তো উনিই, মি. বজ্জাত খ/চ্চ/র। আমার কথা কিছুতেই কানে নিলেন না। হাল ছেড়ে ওনাকে বললাম, আমি যা যা বলি সেটা করেন, এগুলো গোছাতে হবে আগে। উনিও আর না করলেন না। আমার কথার সায় দিয়ে যা যা করতে বললাম সেটাই করতে লাগলেন। কেবিনেটের সবকিছু গুছিয়ে আস্তে আস্তে বাকিটাও গুছিয়ে নিলাম তাসফি ভাইয়ের সাহায্যে। বেশ কিছু সময় নিয়ে গোছানোর পর উনিও যেন হাফ বাঁচলেন, মুখে ফুটে উঠলো তৃপ্তির হাসি। যেন কোন অসাধ্য সাধন করেছেন। ওনার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলাম,
“এবার আপনি যান, গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেন। আমি রান্নাটা করে নিচ্ছি।”

“তুই কি রান্না করবি? করলেও সেটা খেতে পারবো? যা এখান থেকে।”

“আপনি যান এখান থেকে। পারি কি না, সেটা করলেই বুঝতে পারবেন। এই অবস্থায় এখানে থেকে আবারও নোংরা করতে চাচ্ছেন? যান বলছি।”

রেগে উঠে কথাটা বলেই ওড়নাটা কোমরে বেঁধে নিলাম। রান্নার জন্য হাত লাগাতেই তাসফি ভাইয়া বলে উঠলেন,
“তুই তো দেখি চরম লেভেলের বেয়াদব হয়ে যাচ্ছিস রুপু। আমাকে ধমকাস, কত্তো বড় সাহস হয়েছে তোর?”

“যাবেন আপনি এখান থেকে? যান বলছি, ছি! কতটা নোংরা লাগছে আপনাকে দেখতে, তাকানো যাচ্ছে না পর্যন্ত।”

এবার যেন কাজ হলো আমার কথায়। নিজের দিকে তাকিয়ে অসহায়ত্বে ছেয়ে গেল ওনার মুখটা। ওনার ভাবভঙ্গি দেখে প্রচন্ড হাসি পেলেও তা প্রকাশ করলাম না, কোন ভাবে হাসিটা কন্ট্রোল করে রাখলাম। উনি আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন,
“আচ্ছা… আচ্ছা যাচ্ছি আমি। কিন্তু একদম কোন কাজে হাত দিবি না, আমি ফ্রেশ হয়ে এসে করবো।”

ওনার কথায় সায় জানিয়ে মাথা ঝাঁকালাম। যে করেই হোক এই বজ্জাত লোকটাকে এখান থেকে পাঠাতে পারলেই বেঁচে যাই। আমি সায় জানাতেই উনি আর কিছু বললেন না। নিজের দিকে তাকিয়ে চোখ মুখ কুঁচকে রান্নাঘর ছেড়ে বেড়িয়ে গেলেন। উনি যেতেই হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম যেন। হেঁসে উঠলাম আপন মনেই। তারপর চুলগুলো ভালোভাবে খোঁপা বেধে লেগে গেলাম রান্নার কাজে।

.
প্রচন্ড মনোযোগ দিয়ে রান্না করে চলেছি। ফুপির কথা ভেবে ভুনা খিচুড়ি এবং ভুনা মাংস রান্না করছি। জ্বরের কারণে নরম কিছু খেতেই সুবিধা হবে ফুপির। খিচুড়িটা হয়ে এসেছে, মাংস রান্নটাও প্রায় শেষের দিকে। রান্নায় মনোযোগের সাথে টুকটাক কাজ করতেই, হঠাৎ আমার মনোযোগটা নষ্ট করে কেউ খোঁপা করা চুলগুলো খুলে দিলো। ঝরঝর করে লম্বা চুলগুলো খুলে পিঠে, পিঠ থেকে কোমরে, কোমর থেকে হাঁটুর একটু উপরে গিয়ে পড়লো। মানুষটা কে, সেটা দেখার জন্য পিছন ফিরে তাকানোর আগেই শক্তপোক্ত হাত দু’টো পিছন থেকে কোমর জড়িয়ে ধরলো। একটানে বুকের সাথে মিশে নিয়ে চুলের ভাঁজে মুখ ডুবে দিলো। প্রচন্ড ঝাঁকুনিতে কেঁপে উঠলাম আমি, হাতে থাকা খু*ন্তিটা ফ্লোরে পড়ে গড়াগড়ি খেতে লাগলো। কাঁপা কাঁপা গলায় অস্পষ্ট সুরে বলতে লাগলাম,
“ক্.. কে আ…”

“একদম আমার বউ বউ লাগছে রুপুসোনা।”

তাসফি ভাইয়ের কণ্ঠ কানে আসতেই আবারও কেঁপে উঠলাম আমি। নড়াচড়া বন্ধ করে স্থির হয়ে গেলাম মুহুর্তেই। বুকের টিপটিপ শব্দের ধ্বনি দ্বিগুণ থেকে দ্বিগুণ হয়ে গেল সহসায়। মানুষটা এমন কেন? হঠাৎ এভাবে জড়িয়ে ধরার মানেই বা কি? সেই সাথে ওনার বলা কথাটা… পা দু’টোয় ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকাটাও যেন দায় হয়ে উঠেছে আমার জন্য। তবুও কাঁপা কাঁপা গলায় অস্পষ্ট সুরে বলতে লাগলাম,
“কক্… কি করছে, ছা..ছাড়েন….”

“আর কত অপেক্ষা করাবে? একেবারে চলে আসলেই তো পারো? আমার কাছে, আমার হয়ে, আমার বউয়ের অধিকারে।”

ওনার কথার প্রতিত্তোরে কিছু বলতে পারলাম না আমি, কথাগুলো যেন গলায় এসে আঁটকে গেছে। কি করছেন উনি? এভাবেই বা কেন বলেন? মানুষটার প্রতিটা কথায় যেন টানতে থাকে আমাকে, না রাগ করে থাকা যায় আর না অভিমান করে।
মিনিট পাঁচেক সেভাবেই দাঁড়িয়ে থাকলাম স্থির হয়ে, ওনার বুকের সাথে হেলান দিয়ে। তারপর কোন ভাবে নিজেকে সামলে নিলাম। জোরে জোরে শ্বাস টেনে বলে উঠলাম,
“ছা..ছাড়েন না, ক্..কি করছেন….”

“তোমাকে দেখলেই ছাড়তে নয়, শুধু বেঁধে রাখতে ইচ্ছে করে, তোমার কাছে গচ্ছিত রাখা আমার জিনিসগুলো কে একটুখানি ছুঁয়ে দেবার বাসনা জাগে, তোমার পুরোটা জুড়ে শুধু আদর করতে ইচ্ছে করে।”

ওনার কথাগুলো শুনে আবারও কেঁপে উঠলাম আমি, কি বলছেন উনি? হুটহাট এমন কথাগুলো কেন বলেন উনি? এমনিতেই ওনার ছোঁয়াগুলোর সহ্য করার ক্ষমতা থাকে না আমার, সাথে ওনার বলা কথাগুলো। ইস্! এমন কেন এই বজ্জাত লোকটা? এমনভাবে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়েছেন নড়াচড়াও করতে পারছি না, আর না নিতে পারছি ঠিকভাবে নিশ্বাসটা।

“প্লিজ! ত..তাসফি ভাইয়া, ছাড়েন আমাকে। দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না, দম বন্ধ হয়ে আসছে আমার।”

“অভ্যাস করে নাও, রুপুসোনা। খুব তারাতাড়ি এই আমিই তোমার নিশ্বাসে পরিণত হবো।”

বলেই হাত দু’টো আলগা করে দিলেন, আলতো করে ছেড়ে দিয়ে আমাকে ঘুড়িয়ে সামনের দিকে নিয়ে এলেন। আলগোছে দু’ গালে হাত রেখে কপালে আলতো করে ঠোঁটের স্পর্শ ছুয়ে দিলেন। আস্তে করে বলে উঠলেন,
“এভাবে বউ বউ রুপে একদম আমার সামনে আর আসবা না, কন্ট্রোল করতে পারবো না নিজেকে। অনেক বড় ভুল হয়ে যাবে।”

বলেই থামলেন উনি। সেকেন্ডের মতো সময় নিয়ে আবারও বলে উঠলেন,
“হুটহাট ভুল কিছু করে ফেললে সেই আমাকেই আগের মতো শাস্তি পেতে হবে, তোমার বাপ চাচা এবং একমাত্র ফুপার থেকে। তাই একটু সাবধানে থাকবা।”

বলেই ছেড়ে দিলেন উনি। ওনার শেষ কথাটা ঠিক বুঝতে পারলাম না। কিশোর আগের মতো শাস্তির কথা বলছেন উনি? কিশোর শাস্তি পেয়েছিলেন?
আমার ভাবনার মাঝেই তাসফি ভাই চোখে মুখে বিস্ময় প্রকাশ করে আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন,
“রুপু, এগুলো কে রান্না করলো? কে এসেছিলো বাসায়?”

ওনার কথায় বিরক্ত হলাম আমি। কে এসেছিলো মানেটা কি? আমাকে কি চোখে পড়ছে না? চোখের সামনে জলজ্যান্ত আমি রান্না করছি, তবুও এই কথাটা কিভাবে বলেন? আমার ভাবনার মাঝেই উনি একটুখানি খিচুড়ি নিয়ে মুখে দিলেন। অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আবারও বলে উঠলেন,
“সত্যি করে বল রুপু, কে রান্নাগুলো করে দিয়ে গেল? এটা বলিস না যে, তুই করেছিস।”

“তো আবার? বলতে হবে কেন আমি করেছি? দেখে পারছেন না আপনি?”

আমার কথাটা শুনে বিস্মিত হয়ে অদ্ভুত চোখে তাকালেন আমার দিকে। কয়েক সেকেন্ড সেভাবেই তাকিয়ে থেকে এগিয়ে এলেন আমার কাছে। একহাতে কোমর জড়িয়ে কাছে টেনে নিয়ে অপর হাত গালে রাখলেন। আমি কিছু বোঝার আগেই টুপ করে গালে চুমু দিয়ে বলে উঠলেন,
“আমার রুপুসোনা এই চার বছরে সত্যিই অনেক বড় হয়ে গেছে। অনেক বেশিই বড় হয়ে গেছে, সাথে অনেক কিছু শিখেও গেছে।”

.
ফুপির ঘুম ভাঙতেই বললাম ফুপিকে বললাম একটু খেয়ে নিতে, তারপর ওষুধটাও খেতে হবে। আমার কথায় রাজি হয়ে ডাইনিং রুমে আসতে চাইলে, বাঁধা দিয়ে রুমেই নিয়ে আসলাম খাবারটা। তাসফি ভাইয়াও বলে উঠলেন উনিও এখানেই খাবেন, একসাথে সবাই। আমাদের দুজনের খাবারও যেন রুমেই নিয়ে আসি। আমি বারণ করতেই যেন আরও পেয়ে বসলেন। একরোখা ভাবে বলতে লাগলে, এখানেই খাবেন, সবাই একসাথে। ওনার কথায় প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে বলে উঠলাম,
“আপনি কি বিছানা শয্যা হয়ে গেছেন তাসফি ভাই, যে খাবার এনে মুখে তুলে দিতে হবে আপনাকে? চুপচাপ ডাইনিং টেবিলে গিয়ে খেতে বসেন।”

শেষ কথাটা বেশ জোরেই বললাম যেন। আমার কথায় উনি কপাল কুঁচকে ফেললেন, ধমক দিয়ে বলে উঠলেন,
“তুই চরম লেভেলের বেয়াদব হয়ে গেছিস রুপু, মামার টাকা ধ্বংস করে এগুলো শিখছিস? বেয়াদব!”

একটু থেমে ফুপির দিকে তাকালেন, তারপর আবারও বলে উঠলেন,
“আম্মু…. তুমি তাড়াতাড়ি আমার বউকে আনার ব্যাবস্থা করো। আমার বউটা থাকলে ঠিকই চুমু দিয়ে, আদর করে খাইয়ে দিতো, এই মাথামোটা গাধীটার মতো নির্দয় হতো না। সামান্য খাবারটাও রুমে নিয়ে আসতে চাচ্ছে না।”

“দেখুন তাসফি ভা….”

“অনেক হয়েছে, এবার থাম তোরা। তাসফি তুই যা, রূপা যেটা বলছে সেটা কর। আসার পর থেকে মেয়েটা কাজ করে যাচ্ছে, ওকে আর জ্বালাস না।”

দূর্বল কণ্ঠে আস্তে করে বলে উঠলো ফুপি। ফুপির কথায় কপাল কুঁচকে তাকালেন আমার দিকে, তারপর বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলে উঠলেন,
“আচ্ছা… আচ্ছা ঠিক আছে। আমি আবার ভালো মানুষ, তাই এসব বাচ্চা কাচ্চার কথায় কান দিলাম না, যাচ্ছি।”

অবাক হয়ে তাকালাম ওনার দিকে, উনি নাকি ভালো মানুষ? কত গর্ব করে আবার বলেও যাচ্ছেন, কত্তবড় বজ্জাত লোক একটা। আর কোন কথা না বলে তাসফি ভাই বেরিয়ে গেলেন রুম ছেড়ে। উনি যেতেই ফুপির দিকে তাকালাম। হতাশার নিশ্বাস ছেড়ে বললাম,
“তোমার ছেলেটা এত বজ্জাত কেন ফুপি? ওনার মুখে কি কিছুই আঁটকায় না?”

“বজ্জাত হলেও সেই তোকেই তো সামলাতে হবে। আমি বাবা এতকিছু ভাবতে পারবো না।”

ফুপির কথায় চমকে উঠলাম, হঠাৎ এমন কথা বলবে ভাবতেই পারি নি। নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বলে উঠলাম,
“পারবো না আমি, তোমার এই বজ্জাত ছেলেটাকে সামলাতে।”

বলেই একটু থামলাম। সেকেন্ডের মতো সময় নিয়ে আবারও বলে উঠলাম,
“তোমার ছেলের মনে বউয়ের খুব সখ জেগেছে ফুপি, তাড়াতাড়ি ছেলেকে বিয়ে দিয়ে বউ নিয়ে আসো। তারপর তোমার বজ্জাত ছেলেটা বউকে আদর করুক, কোলে নিয়ে ঘুরুক, চুমু খাক আমাকে তো ওনার কথা শুনতে হবে না? বেঁচে যাবো আমি।”

“তাহলে ভাইয়ের সাথে কথা বলি, কি বলিস? ছেলেটা আমার কতই আর বউ ছাড়া দিন কাটাবে?”

চমকে উঠলাম আমি। ইস! কি বলে ফেললাম এগুলো? কিভাবেই বা বললাম? কথাগুলোর মানে ঠিক কি, সেটা বুঝতেই হাজারো লজ্জায় ঘিরে ধরলো যেন। রূপা… তুই আসলেই গাধী, মাথামোটা একটা মেয়ে, ঠিকই বলেন উনি। লজ্জায় নিজেরই মাথা কা*টা যাচ্ছে এখন। ফুপিও ঠিক তাসফি ভাইয়ের মতোই, সুযোগ পেয়ে ঠিকই মজা নিচ্ছে। কোন রকম ভাবে ফুপিকে ওষুধটা খাইয়ে দিলাম। লজ্জা ও অস্বস্তি নিয়ে দ্রুত হাতে প্লেট ও পানির গ্লাসটা নিয়ে রুম ছেড়ে বেড়িয়ে আসতেই শব্দ করে হেঁসে উঠলো ফুপি। ফুপির হাসির আওয়াজে লজ্জাটা যেন দ্বিগুণ হতে দ্বিগুণ হয়ে গেল আমার।

.
.
চলবে…..

আজকে বিশাল বড় একটা পর্ব দিয়েছি। সবার বড় বড় মন্তব্য চাই কিন্তু। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ভালোবাসা সবাইকে।🖤

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here