#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো
#পর্বঃ১০
#Jhorna_Islam
সোহাকে ভর্তি করিয়ে অফিস রুম থেকে বের হয়ে আসলো দু’জনই।
– শুনুন আমি ১ তারিখ থেকে ক্লাস করবো।তাও প্রতিদিন আসতে পারবোনা।অনার্সে উঠে যদি প্রতিদিন ক্লাস করা লাগে,তাহলে এতো ক’ষ্ট করে অনার্সে উঠে লাভ কি? তাহলেতো প্রাইমারি স্কুল ই ভালো তাই না? আমার আগের ভার্সিটিতে এমনিতেও আমি প্রতিদিন যেতাম না।
– দায়ান রাগী লুক নিয়ে সোহার দিকে তাকিয়ে বলে, কি বললা তুমি? আবার বলোতো ঠিক শুনতে পাইনি।
— ঠিক আছে। ঠিক আছে যেহেতু ভার্সিটিটা আমার প’ছন্দ হয়েছে তাহলে না হয় সপ্তাহে চারদিন ই আসবো।এর বেশি আসতে পারবোনা।
— ওহ শি’ট।আমিতো আসল কথাই ভুলে গেছি।
— আবার কি ভুলে গেলেন আপনি?
— তোমার বই বাড়ি থেকে আনার কথা বলতে ভুলে গেছিলাম।তোমার বাবা মা ওতো দিয়ে দিলো না বই গুলা।ওনাদের ও কি মনে ছিলনা?
— কেন এখন কিনে দিবেন।আপনার টাকায়তো আবার ছিনি’মিনি,ছিনি’মিনি করে।হুদাহুদি কতো গুলো টাকা দিয়ে ভর্তি করালো। আর তাছাড়া বই থাকলেতো দিবে।বইতো আমি কিনিই নি।
– হোয়াট? বছরের অর্ধেক সময় শেষ এখনো তুমি বই কিনোনি? এক্সাম দিছো কি করে?
— আপনারে বলবো কেনো? যে ভাবে ইচ্ছে সে ভাবে দিয়েছি।
— বলা লাগবেনা।আমার জানা হয়ে গেছে। তুমি যে কি
চি/স। আর কি করতে পারো।
— হুহ।
— আজ যাওয়ার সময় তোমার বই,খাতা আর যা প্রয়োজনীয় জিনিস আছে সব নিয়ে যাবো।বারোটায় আমার মিটিং আছে।তোমাকে এখন আমার সাথে অফিসে যেতে হবে। আমার হাতে বেশি টাইম নাই। শী’ট এখানেই সাড়ে এগারোটা বে’জে গেছে। আর একটা ও কথা বলবা না চুপচাপ গাড়িতে গিয়ে উঠে বসো।বলেই দায়ান পিছনে সোহার দিকে তাকায়।একি এই মেয়ে গেলো কোথায়? পিছন থেকে উধাও হয়ে গেলো? বলেই চুল টানতে টানতে এদিক ওদিক তাকায়।
— এইইই এখনো দাড়িয়ে আছেন কেনো? তাড়াতাড়ি গাড়িতে উঠেন।লেট হয়ে যাবেতো মিটিংয়ে।
— দায়ান অবাক হয়ে সোহার দিকে তাকাতে তাকাতে গাড়িতে এসে বসে।
— এতো অবাক হওয়ার কিছু নেই।পরেতো মিটিং না করতে পারলে আমাকেই দোষতেন।আর তাছাড়া আপনার ক্ষ/তি হোক এমন কোনো কাজ আমি করবো না।
— দায়ান আর কথা বাড়ায় না চুপচাপ গাড়ি চালানো শুরু করে।
————————————————
নোহা সকল কাজ সেরে তারপর সকালের না’স্তা খেয়ে রুমে এসে বসেছে মাত্র।
বোনটার সাথে কথা বলতে মন চাচ্ছে। কে জানে কেমন আছে। সারাদিন কাজের মধ্যে থাকতে হয় বিধায় কারো সাথেই তেমন যোগাযোগ করা হয়না।
তাই কেমন জড়তা কাজ করতেছে বোনকে কল দিতে।
কি অবাক করা বিষয় যে বোনের সাথে এক সময় বাধাবিহীন আলাপচারিতা চলতো ঘন্টার পর ঘন্টা। সে বোনের সাথে কথা বলতে আজ কতো জড়তা।
সময় কিনা করতে পারে? নিজের আপন মানুষ গুলোকে দূরে নিয়ে গেলো।চাইলেই দেখা করা যায় না,,,মন খুলে কথা বলা যায় না।যে মানুষগুলো কে ছাড়া এক মুহূর্ত ও চলতো না,,অথচ সেই মানুষগুলোকে ছাড়া মাসের পর মাস,বছরের পর বছর কাটিয়ে দিতে হয়।
চাইলেই দেখা করা যায় না।কথা বলা যায় না।বুকের মধ্যে পাথর চাপা দিয়ে শ’ক্ত হয়ে থাকতে হয়।দূ’র্ব’ল হলেতো চলবে না এটাই নিয়ম।
সেই ছোট্ট বোনটা কবে যে বড় হয়ে গেলো।ভাবতেও অবাক লাগে সময় কতো দ্রুত চলে যায়।এইতো মনে হয় কিছুদিন আগে,,সোহা কোথাও ব্যাথা পেলে,,কেউ মারলে মায়ের কাছে না গিয়ে দৌড়ে নোহার কাছে ছুটে আসতো। সে কি কান্না বোনের আদর না খেলে যেমন ব্যাথা সাড়বেই না।নোহা একটু আদর করে ব্যাথার জায়গায় হাত বু’লিয়ে দিলে সব শে’ষ।
একবারতো এমনও হয়েছে,,খেলতে গিয়ে খেলার মাঝখানে কথা কা’টা’কা’টি নিয়ে নোহাদের পাশের বাসার এক মেয়ে নোহাকে ধা’ক্কা মারে।নোহা তাল সামলাতে না পেরে পড়ে যায়।যেই জায়গায় পরে ঐখানে একটা ইটের টু’করো ছিলো।ইটের টু’করোতে লেগে নোহার হাত কে’টে যায়। এই কথা সোহা কোনোভাবে কারো কাছ থেকে শুনতে পায়।
দৌড়ে ঐ জায়গায় গিয়ে পৌঁছায়। ঐ মেয়ের উপর হা/ম/লে পরে।সে কি মাইর,,কা’মড়ানো,চুলে ধরে টানা,খা’মচানো কোনো কিছু বাদ রাখেনি।সোহাকে কতো ক’ষ্টে যে ছুটিয়ে ছিলো সেটা নোহাই জানে।
সব কথা শুনেতো মা সোহাকে মা’রতে ও গেছিলো তার এক কথা,আমার আপুরে মারবে।কতো বড় সা’হস আমার আপুকে মা’রে। আমিকি চুপ করে বসে থাকবো? বেশ করেছি মে’রেছি।দরকার পরলে আরো মারবো।যে আমার আপুকে মারবে আ/ঘা/ত করবে তাদের আমি এমনিতেই ছে’ড়ে দিবো? কক্ষনো না।কাউকে ছাড়বোনা।
আগের কথা ভাবতেই চোখের কো’ণে পানি ও ঠোঁটে মিষ্টি হাসি খেলা করে নোহার।
বোন যদি কোনো ভাবে এসব জানতে পারে,, তাহলে এদের কি অবস্থা করবে ভাবে নোহা।
অনেক ভাবনা চিন্তা করে বোনকে ফোন লা’গাতে যায়।এমন সময় শাশুড়ীর চি’ৎকার চেঁ’চা’মেচি কানে আসে।
বলি সারাদিন ঘরে বসে থাকলে হবে? কতো কাজ পরে আছে ঐগুলা কে করবে শুনি? রোদ পরে গেলে কি কাপড় ধুয়ে শুকাতে দিবে?
সারাদিন শুয়ে বসে থাকার ধা’ন্ধা। আমার বাড়িতে এসব চলবে না বলে দিলাম।
নোহা আর ফোন দেয়না সোহাকে। ফোন রেখে কাপড় ধোঁয়ার জন্য চলে যায়।সময় সুযোগ বুঝে বোনকে ফোন দিয়ে নিবে।এখন দিলে যদি এই মহিলা দেখতে পারে,,তাহলে আবার ছেলের কাছে না’লিশ দিবে।ওমিটা ও হয়েছে এমন যেনো মায়ের না’লিশের অপেক্ষায়ই থাকে নোহাকে শা’স্তি দেওয়ার জন্য।
নোহা মনে মনে ঠিক করে নেয়,যে করেই হোক এই মহিলার তাকে নিয়ে কি সমস্যা জেনেই ছাড়বে।কেনো এমন করে।কি দোষ তার।সেতো নিজের সবটুকু দিয়ে এই পরিবার আর পরিবারের লোক গুলো কে আপন করে নিতে চেয়েছিল।কিন্তু এরা প্রতিনিয়তো নোহা কে ওদের আচরণ দ্বা’রা মনে করিয়ে দেয় নোহা ওদের আপন না। প্রতিনিয়তো নোহার বি’রু’দ্ধে ওমিকে উ’স’কে দেয় এই মহিলা।
ওমিতো একটা কা/পু/রুষ। যে নিজের মায়ের কথায় ঠিক ভুল বিচার না করে অত্যাচার চালিয়ে যায় নোহার উপর।
আর এদের বাড়তে দেওয়া যাবেনা।এবার অ’ন্যা’য়ের বি’রু’দ্ধে প্র’তিবাদ করবে।
——————————————-
দায়ান অফিসের গে’টে এসে গাড়ি থামায়।
শুনো তুমি এসো আমি গেলাম।কাউকে বললেই আমার ক্যাবিন দেখিয়ে দিবে, ঐখানে গিয়ে বইসো।সোহাকে কিছু না বলতে দিয়েই দায়ান একপ্রকার দৌড়ে ভিতরে যেতে থাকে।এই মিটিং টা খুবই গুরু’ত্বপূর্ণ। নয়তো অনেক ল’স হয়ে যাবে।
সোহা আস্তে আস্তে গাড়ি থেকে নেমে চারিদিক ঘুরে ঘুরে দেখতে থাকে।বাহ অফিসটা ওতো দেখছি হে’ভি জোস। আরি’ব্বা’স এইখানেও দেখছি কতো ফুলের গাছ।
দৌড়ে বাগানের কাছে চলে যায় সোহা। জবা গাছ থেকে জবা ফুল নিয়ে হিজাবের মধ্যে গুঁ’জে দিয়ে গুন’গুন করে গান গাইতে থাকে।
তখনই কারো ক’র্ক’শ ক’ন্ঠ’স্ব’র শুনতে পেয়ে পিছনে তাকায়।
— এই মেয়ে কে তুমি? তোমারতো সাহস কমনা।তুমি আমাদের অফিসে এসে ফুল চু’রি করতেছো?(অফিসের একজন মেয়ে কর্ম’চারী)
— আমি যেই হইনা কেনো আপনাকে বলতে যাবো কেনো? আর ফুল চু’রির কথা বললেন না।দরকার পরলে পুরো অফিস আমি চু’রি করবো আপনার কোনো সমস্যা?
— একেইতো অন্যায় করেছো।তারউপর আবার মুখে মুখে কথা বলো? সাহস তো কমনা তোমার।
— হুম আমার সাহস একটু বেশিই।তো?
— তুমি জানো তোমার সাথে কি হতে পারে?
— না। জানার প্রয়োজন মনে করছিনা।
— এই তোমাকে ভিতরে ঢুকতে দিয়েছে কে? মুখে মুখে কথা বলো, তুমি জানো আমি কে?
— আপনি কে সেটা দিয়ে আমার কাজ কি? সরেন তো সামনে থেকে। বলেই যওয়ার জন্য হাটা দেয়।
— এই এই অফিসের ভিতরের দিকে কই যাও? বস কে দিয়ে এমন ব্যবস্থা করবনা। মজা তখন টে’র পাবে।চিনোনা তো আমাদের বস কে।
— সোহা মেয়েটার দিকে আঙুল তা’ক করে বলে,তোমাদের বস কে আমি ভয় পাই নাকি? আমি তোমার বসের ও বস বুঝলে।বলেই একটু ভা’ব নিয়ে অফিসের ভিতর ঢুকে গেলো।
মেয়েটা সোহার যাওয়ার পানে হা হয়ে তাকিয়ে আছে।কি বলল এই মেয়ে? বসের ও বস?
———————————–
দায়ান অফিসে ঢুকেই সোজা মিটিং রুমে চলে গেছে।দ্রুত ড্রাইভ করায় বেশি টাইম লাগেনি আসতে।তাও দশ মিনিট লেট হয়ে গেছে। সবাই দায়ানের অপেক্ষাতেই ছিলো।
তাছাড়া রুশকে আগেই বলে রেখেছিল দেরি হয়ে যেতে পারে।রুশ যেনো সব কিছু ঠিকঠাক করে রাখে।
দায়ানের কথা মতো রুশ সব ঠিকঠাক করে রেখেছিল।যেনো দায়ান এসেই মিটিং শুরু করে দিতে পারে।
দায়ানও সকলের সাথে কু’শল বিনিময় করে মিটিং এর কার্য’ক্রম শুরু করে দেয়।
————————————-
সোহা অফিসে ঢুকে চারদিকে চোখ বুলাচেছ আর হাটছে।অফিসের কর্ম’চারীরা যে যার মতো কাজ করছে।কেউ কেউ সোহার দিকে আড়’চোখে তাকাচ্ছে। অন্যরা তাদের কাজ মনোযোগ দিয়ে করছে তাদের এতো দিকে খেয়াল নেই।সোহা ভাবছে কাকে জি’জ্ঞেস করবে,দা য়ানের অফিস কোনটা? ভাবতে ভাবতেই অন্য মন’স্ক হয়ে হাটতে গিয়ে কারো সাথে ঠা’স করে ধা’ক্কা খেয়ে নিচে পড়ে গেলো।
সকলে অবাক হয়ে সোহার দিকে আবার সামনে থাকা ব্য”ক্তিটার দিকে তাকিয়ে রয়েছে।
আম্মু গোওওও টা’ইটা’নিক জাহাজের মতো কোন বরফের খ’ন্ডে’র সাথে ধা’ক্কা খেলাম গোওও! আমার কো’ম’ড় গেলো গোওওও।
যতোসব ঝা’মে’লার সাথেই আমার দেখা হয়।এখন আমার কি হবে? এই বয়সে আমার কো’মড় টা ভে’ঙে দিলো।এই ভাঙা কো’মড় নিয়া আমি কই যাবো?
এই কোন আ’ন্ধা আমারে ধা’ক্কা দিলি? দিন কা’না কোথাকার দিনের বেলা চোখ পকেটে নিয়ে হাটস?
#চলবে#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো
#পর্বঃ১১
#Jhorna_Islam
রুশ অফিস রুম থেকে বলে মাত্রই বের হয়েছিলো ওয়াশরুম যাবে বলে।তার মধ্যেই তার ফোনটা বেজে ওঠে। তাই ফোনের স্ক্রি’নের দিকে তাকিয়েই হাটতেছিলো।তার মধ্যে কার সাথে ধা’ক্কা খেলো খেয়াল করতে পারেনি।সামনে থাকা ব্যক্তি যে তার সাথে ধা’ক্কা খেয়ে পরে গেছে, বুঝতে কিছুটা সময় লাগে।
সোহা ও বসা অবস্থায়ই সামনে তাকিয়ে দেখে একটা ছেলে।তার দিকেই তাকিয়ে আছে।মনে হচ্ছে শ’ক খেয়ে গেছে ব্যা’টা।
এই মিয়া এমন ভ্যাবলার মতো না তাকাইয়া আমারে উঠানোর ব্যবস্থা করেন।কোমড়টার তো বারোটা বাজিয়ে দিছেন।
রুশের হু’শ আসে তাড়াতাড়ি নিজের হাত বাড়িয়ে দেয় উঠার জন্য।
সোহা একবার রুশের দিকে,আরেকবার রুশের হাতের দিকে তাকায়।আপনারে হাত ধইরা আমি উঠবো? অন্যকাউরে ডাক দেন। এখনো নিজের জামাইর হাতটা ভালো করে ধরতে পারলামনা আসছে ইনি হাত ধরতাম মনে মনে বলে সোহা।
তখনই অফিসের আরেকটা মেয়ে স্টা’ফ এসে সোহাকে ধরে উঠতে সাহায্য করে।সোহা উঠে দাঁড়ায়,, বেশি ব্যাথা না পেলে ও সামান্য একটু ব্যাথা পেয়েছে হঠাৎ করে নিচে পড়ায়।সোহা কোমড় ধরে সোজা হয়ে রুশের দিকে রাগিভাব নিয়ে তাকায়।
আই এম এক্সট্রিমলি সরি মিস…! বুঝতে পারিনি সো সরি।তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে অসাবধানতায় হয়ে গেছে। ইচ্ছে করে করিনি।এখন আবার বলবেন না যে মেয়ে মানুষ দেখলেই গায়ে পড়তে ইচ্ছে করে। আমি আসলেই খেয়াল করিনি।
সোহা বুঝলো ছেলেটা আসলেই অনু’তপ্ত চোখ মুখের হাবভাব দেখে।তাই বলল ঠিক, আছে ঠিক আছে।পরের বার দেখে চলবেন। সবাই তো আর আমার মতো না যে সরি বলবেন আর ছেড়ে দিবে পরে লোকজনের গ’ণ ধো/লা/ই খেতে হবে।।
রুশ আর কথা বাড়ালো না।সোহার কাছে জানতে চাইলো আপনি কে মিস? অফিসে কারো কাছে এসেছেন,,নাকি কোনো দরকারে…?
আমি মিস না মিসেস বলুন।আর আমাকে দায়ানের ক্যাবিনটা দেখিয়ে দেনতো।
দায়ান মানে স্যারের কাছে কোনো দরকার? স্যার তো মিটিং এ আমায় বলতে পারেন। আমি উনার পি.এ।
কোনো দরকার নেই উনার ক্যাবিনটা দেখিয়ে দিলেই হবে।আমি আপনার স্যারের ওয়াইফ।
রুশ এবার বুঝতে পারলো এটা সোহা,দায়ানের বউ।
ওহ শি’ট আগে বলবেন না।আসুন আমার সাথে। আমি নিজে দিয়ে আসছি।কি খাবেন ম্যাম বলুন আমি অর্ডার করে দিচ্ছি। চা কফি বা অন্য কিছু?
না আমি এখন কিছু খাবোনা আপনি আপনার কাজে যান।আমি কিছু-সময় রে’স্ট নিবো।
রুশ সোহার কথায় সম্মতি দিয়ে বেড়িয়ে গেলো।
সোহা অফিস রুমটাতে ভালো করে চোখ বু’লিয়ে সোফায় গিয়ে হাত পা ছড়িয়ে বসে পরলো।
———————————-
দায়ানের মিটিং টা খুব ভালো ভাবেই সম্পন্ন হয়েছে। ডিলটা ফাইনাল হয়ে গেছে।সকলকে বিদায় জানিয়ে স্ব’স্থির নি’শ্বাস নেয়।মিটিং রুম থেকে বের হয়ে নিজের ক্যাবিনের দিকে হাঁটা দেয়। রুশ ও সাথে।
এতোক্ষন ধরে রুশের মনটা আ’কু’পা’কু করতেছে,কখন দায়ানের মিটিং শেষ হবে।আর সোহার কথা জানতে পারবে।
দোস্ত তর ক্যাবিনেতো সাক্ষাৎ পরির আগমন ঘটেছে রে।
দায়ান বুঝতে না পেরে হাঁটা থামিয়ে দেয়।রুশকে জিজ্ঞেস করে মানে?
— মানে আবার কি তোর বউ।আমার ভাবি।ভাবিতো পুরাই জোস।সাথে এ’ট’ম বো/ম।
— অফ যা ভাই।আমি চিনি ঐই মেয়েকে তোর গুনগান করা লাগবোনা। বলেই ক্যাবিনের দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করে।
সোহা কারো আসার আওয়াজ শুনে সোজা হয়ে বসে।
দায়ান সোজা গিয়ে নিজের চেয়ারে বসে মাথা হেলিয়ে দেয়।চোখ বন্ধ করে বসে থাকে কিছু সময়।তারপর রুশকে ডেকে এনে সোহার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।
সেই থেকে রুশ আর সোহার বকবকানি শুরু হয়ে গেছে।কোন কথা থেকে কোন কথায় চলে গেছে এরা নিজেও জানেনা। এতো কথা এরা কি করে বলে ভেবে পায় না দায়ান।এদের কথা শুনে বিরক্তিকর ভাব নিয়ে এদের দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নেয় দায়ান।এদের দেখলে কেউ বুঝতেই পারবেনা মাত্র এদের পরিচয় হয়েছে।মনে হচ্ছে কতো বছরের চেনা জানা।
ইতি মধ্যে সোহা রুশকে বড় ভাইয়ের আসন ও দিয়ে ফেলেছে।রুশতো একবার সোহাকে ভাবি আরেকবার ম্যাম ডাকতেছিলো।সোহা এসব ডাকতে মানা করে দিয়েছে।সোজা বলে দিয়েছে আপনি আমার বড়,আমি আপনার ছোটো বোনের মতো সো এসব বাদ নাম ধরে ডাকবেন।আর কিসের আপনি আ’জ্ঞে করছেন? হয় তুমি বলবেন নয়তো তুই। রুশতো সোহার কথা শুনে আরো বেশি ইমোশনাল হয়ে গেলো এমনিতেই ওর কোনো বোন নেই।সোহাকে পেয়ে যেনো সেই সখটা মি’টে গেলো।
দায়ান এবার এদের কথার জ্বা’লা সহ্য না করতে পেরে উঠে দাঁড়ায়। মাথা ধরিয়ে দিয়েছে দুটো মিলে।সোহাকে উদ্দেশ্য করে বলে এই তোমাদের কথার ঝুড়ি এবার অফ করো।চলো বাসায় যাওয়ার আগে আবার লাইব্রেরি তে যেতে হবে।
দায়ানের কথায় সোহা চুপ করে দায়ানের দিকে তাকায়। অনেকদিন পর নিজের মন খুলে কথা বলার মতো কাউকে পেলো তাও দায়ানের সহ্য হলো না।এমন কেনো লোকটা? করুণ চোখে রুশের দিকে তাকায়।
রুশ বুঝতে পেরে বলে উঠে, কোনো ব্যাপার না বোন।আমিতো আর পালিয়ে যাচ্ছি না।আবার সময় নিয়ে কথা হবে।আর আমি দুই দিন পর পর গিয়েই তোমার সাথে দেখা করে আসবো।তোমার হাতের রান্না খেয়ে আসবো।সো চি’ল।
সোহা এবার হাসি মুখেই বি’দায় জানায়।যাওয়ার আগে বারে বারে বলে গেছে বাসায় যেনো অবশ্যই যায়।
—————————————-
চোখের পলকেই যেনো সময়গুলো কেটে যায়। বোঝাই যায় না কোনদিক দিয়ে সময় নিজ গতিতে বয়ে যায়।
তেমনই দেখতে দেখতে দুটো দিন চলে গেলো।
।।এর মধ্যে দায়ান সোহার জন্য দুই ভেন ভরে ফুলের গাছ এনে দিয়েছে। সাথে মালিও রেখেছে ফুলের গাছ পরিচর্যা করার জন্য। বলাতো যায়না যদি সত্যি সত্যিই এই মেয়ে ভার্সিটি থেকে ফুলের চারা নিয়ে আসে।তখন দায়ানে মান স’ম্মান সব যাবে।
এতে ফুলের গাছ একসাথে দেখে সে কি খুশি। বাগানের প্রতি সোহার একটা আলাদা ভালোবাসা কাজ করে। আরো বেশি খুশি হয়েছে দায়ান তার কথা ভেবে তার জন্য এগুলো এনে দিয়েছে।খুশি হয়ে দায়ানকে যে কতো বার ধন্যবাদ জানিয়েছে তার কোনো ই’য়’ত্তা নেই।
দায়ান অবশ্য কিছুই বলে নি শুধু নিরবে সোহার কার্যক্রম পরিচালনা করে গেছে।
এখন প্রতিদিন সোহা সকালে দায়ানের জন্য কফি করে দেয়।জমিলা খালা এখনো গ্রাম থেকে আসেনি।
সকালে দায়ানকে কফি দিয়েই বাগানে চলে যায়। নিজে গিয়ে সকালে পানি দেয়। মালি থাকলেও এই কাজটা সোহার নিজের করতে ভালো লাগে।আ’ত্ন তৃ’প্তি পায় এতে।দায়ান অবশ্য সকালে বারান্দায় দাঁড়িয়ে কফির মগে চুমুক দেয় আর সোহার পা/গ/লামি ল’ক্ষ করে।
———————————
আজও সকাল সকাল সোহা দায়ানকে কফি দিয়ে সোজা বাগানে চলে আসে।বাগানে এসে পাইপ হাতে নিয়ে গাছে পানি দেওয়া শুরু করে।
দায়ান ফ্রেশ হয়ে কফির মগ নিয়ে বারান্দায় এসে দাড়ায়।সোহার দিকে চোখ আ’ব’দ্ধ করে।মেয়েটা একা একাই বক বক করছে।কথা বলতে না পারলে যেনো দ/ম বন্ধ হয়ে যায় এই মেয়ের।দায়ান সোহাকে লক্ষ করে এবার ডাক দেয়।
— এই মেয়ে পড়াশোনা নেই? সারাক্ষণ এগুলো নিয়ে পড়ে থাকার জন্য বই খাতা এনে দিয়েছি? যাও পড়তে বসো।আর ভার্সিটিতে যাওনা কেনো? ড্রাইভার কে তো বলাই আছে।গাড়ি দিয়ে নিয়ে যাবে আবার নিয়ে আসবে।
—- সোহা দায়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,,,শুনুন আমি বাচ্চা নই।যে আমাকে বলে বলে পড়াতে হবে।হুহ,, সময় হলে আমারটা আমি নিজেই করবো।
— কতো যে করতেছো দেখতেইতো পাচ্ছি।
— এতো পড়া লাগে নাকি? পরীক্ষার আগের রাতেই সব পড়া যায়।
— হ্যা পরে ফে’ল করবা।
— কখনো না।আপনাকে আমি পরীক্ষার আগের রাতে পরে পাস করে দেখিয়ে দিবো।
— শুধু পা’শ করলেতো হবে না।ভালো রেজাল্ট করতে হবে।
— পাশ করবো এটাইতো বেশি। আবার ভালো রেজাল্ট খুঁজে। আস্তে আস্তে বলে।যা দায়ানের কান পর্যন্ত পৌছায় না।
— কি মিন মিন করছো?
— কিছু না ভার্সিটিতে আরো দুই দিন পর যাবো।একটা মানসিক প্রি’পারেশন আছে না।
—-ভার্সিটি যেতে মা’নসিক প্রিপারেশন লাগে? যেমন তুমি কোনো অপা’রেশন করতে যাবে।মানসিক ভাবে প্রিপারেশন না নিলে সাকসেস হবে না।
— তেমনকিছুই আপনি বুঝবেন না।
— না সব তুমিই বুঝো।সব পড়াশেনা না করার ধা’ন্ধা। তোমার মতো পড়াচো’র আমি একটাও দেখি নি।
— আমি এক পি’ স ই আছি।এইযে দু চোখ ভরে আমায় দেখে নেন।
দায়ান কিছু বলতে নিবে তার আগেই তার ফোনে একটা নোটিফিকেশন আসে।তাই সোহাকে কিছু না বলেই চলে যায় রুমে।
সোহা ও আবার নিজের কাজে মনোযোগ দেয়। গাছে পানি দেওয়া শেষ করে বাড়ির ভিতর ঢুকে পরে।
দায়ান ফোন হাতে নোটিফিকেশন চেক করতে করতে রুমের বাইরে বের হয়ে আসে।নোটিফিকেশন চেক করতে গিয়ে বুঝতে পারলো,কেউ একজন অপরিচিত নাম্বার থেকে ছবি পাঠিয়েছে। দায়ান কিছু সময় মোবাইলের দিকে তাকিয়ে থাকে।কৌ’তুহল হয়ে ক্লি’ক করে দেখার জন্য কিসের ছবি।
ছবি গুলো দেখে যেনো দায়ানের পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গেলো।ধপ করে সোফায় বসে পড়লো।এ কি দেখছে দায়ান? নিজের চোখকে ও বিশ্বাস করতে পারতেছেনা।পুরো শরীর যেনো অ’বশ হয়ে আসছে।মাথা ঝী’ম ঝী’ম করতেছে।
নিজের চুল নিজে টেনে ধরলো।চুল টেনে ধরে মাথা নিচে দিয়ে স্থি’র হয়ে বসে রইলো।কোনো অনুভূতিই কাজ করতেছেনা দায়ানের মধ্যে। মাথা যেমন হ্যাং হয়ে গেছে।
সোহা মাত্রই বাসার ভিতরে ঢুকেছে।দরজা লাগিয়ে নিজের রুমে যাবার সময় সোফায় বসে থাকা দায়ানের দিকে চোখ যায়। মাত্রইতো ঠিক ছিলো লোকটা।ভালোভাবে কথা বলে আসলো।তখনতো দেখে মনে হয়নি যে মাথা ব্যা’থা বা অ’সুস্থ । দায়ান কে এভাবে চুল টেনে ধরে বসে থাকতে দেখে অবাক হয়।পরোক্ষনেই মনে হলো দায়ানের মাথা ব্যাথা করতেছে হয়তো।দৌড়ে দায়ানের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।
— শুনছেন।আপনার কি আবার মাথা ব্যাথা করতেছে?
………..
—- দায়ানকে চুপ থাকতে দেখে সোহা কথা বাড়ায় না। নিজে এগিয়ে গিয়ে দায়ানের মাথায় হাত রাখে মাসাজ করে দেওয়ার জন্য।
দায়ানের মাথায় হাত রাখতে দেরি,দায়ান সোহার হাত তার মাথা থেকে এক ঝটকায় সরাতে দেরি হলো না।
সোহা অবাক হয়ে দায়ানের দিকে তাকায়। এতো জোড়ে হাত ঝা’ড়া দেওয়ায় হাতে কিছুটা ব্যাথা ও পায়।কিছু মুখ ফোটে বলতে যাবে তার আগেই দায়ান বলে,,,,
তোমাকে না কতো বার বলেছি আমার থেকে দূরে থাকবে? কথা কানে যায় না? আমাকে টাচ করার সাহস হয় কি করে? যেই একটু ভালো ব্যবহার করেছি পেয়ে বসেছো না? ভেবে নিয়েছো মেনে নিয়েছি? একদম আমার কাছে ঘে’ষার ও চেষ্টা করবেনা।আর মুখে মুখে একদম ত’র্ক করতে আসবেনা। আর এসব করে কি বুঝাতে চাও? আমায় দয়া দেখাও।আমি একাই চলতে পারি।কারো দয়া আমার দরকার নেই।এতোদিন যখন একা চলতে পারছি এরপরেও পারবো। যাও এখান থেকে।
বলেই দায়ান আবার মাথা নিচু করে সোফায় বসে পরে।রা’গে ইচ্ছে করতেছে সব কিছু ভে’ঙে গু’ড়িয়ে দিতে।নিজেকে কোনো ভাবেই সামলাতে পারছেনা দায়ান।
সোহা দায়ানের কথা গুলো শুনে হেঁ’চকি তুলে কাদছে।ভেবে পায়না কি এমন করেছে সে।সেতো লোকটার ভালোর জন্যই গেছিলো মাথা মাসাজ করে দিতে।ঐই দিন ওতো দিয়েছে এমন তো করেনি।তবে আজ কেনো? কাদতে কাদতে মেঝেতেই বসে পরে।এক পর্যায়ে কাদতে কাদতে সোহার দ/ম ব’ন্ধ হয়ে আসে।জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিতে থাকে।নিজের গ’লায় হাত দিয়ে ড’লতে থাকে শ্বাস নেওয়ার জন্য কিন্তু নিতে পারেনা।একেকটা নিশ্বাস কতো কষ্ট করে যে নিতেছে।মনে হচ্ছে ভিতরের সব কিছু ভে’ঙে চু’ড়ে যাচ্ছে।
দায়ান জোড়ে জোড়ে নিশ্বাসের আওয়াজ শুনে সোহার দিকে তাকায়। সোহা কে দেখে আঁ’তকে উঠে। সোহা কেমন যেনো করতেছে।চোখ মুখ ফোলে লাল হয়ে গেছে। নিশ্বাস যে নিতে পারতেছেনা সেটা বোঝাই যাচ্ছে । দায়ান তাকিয়েই দৌড়ে সোহার কাছে গিয়ে বসে। কি করবে ভেবে পায়না।সোহার এই অবস্থা দেখে দায়ান ঘা’বড়ে গেছে।মেয়েটা এমন করতেছে কেন।
“এই মেয়ে কি হয়েছে তোমার? সোহা এমন করতেছো কেনো?”
#চলবে
বিঃদ্রঃ এর থেকে বড় পর্ব দিতে পারলামনা। এবার ভালো ম’ন্তব্য করে আমাকে উৎসাহ দিয়ে খুশি করে দিয়েন।