তুমি হাতটা শুধু ধরো পর্ব -০৮+৯

#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো
#পর্বঃ৮
#Jhorna_Islam

দায়ানের কথা শুনে সোহা কতক্ষন চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে রয়।তারপর বলে,,,আপনি কি আমার সুনাম করলেন না বদনাম?

তুমি এখনো বুঝোনি আমি কি করেছি? থাক বুঝতে হবে না তোমার অবুঝ বালিকা।এক কাজ করো, সুনাম করছি নাকি বদনাম করছি জানতে চাইছো না? এই দুইটা থেকে তুমি যেইটা হলে হেপি হবা,সেইটাই ভেবে নেও।বলেই কফির মগে আবার চুমুক বসায়।

সোহা মাথা চুলকে ভাবতে থাকে।

দায়ান কফির মগে লাস্ট চুমুকটা বসিয়ে দেয়।কফি শেষ করে মগটা টেবিলের উপর রেখে দেয়।কফিতো ভালোই বানাও।”টেস্টিং গুড”।

সোহা দায়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,শুনুন না!

দায়ান সোহার দিকে চোখ খুলে তাকায়।

সোহা দায়ান কে দেখে আঁ’তকে উঠে। দায়ানের চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। মনে হয় মাথা ব্যাথাটা আরো বেড়েছে।মাথা দিয়ে এখনো টপটপ করে পানি পরতেছে।

দায়ান সোহা কিছু বলেনা দেখে আবার চোখ ব’ন্ধ করে নেয়।

সোহা কি করবে ভেবে পায় না। মাথা ব্যাথায় কষ্ট পাচ্ছে লোকটা।এই লোকটার কষ্ট সোহার সহ্যই হয় না।

সোহা সোফা থেকে উঠে দাড়ায়। আগে মাথাটা মুছে দিতে হবে।কিন্তু তাওয়াল তো দায়ানের পিঠের নিচে।কিভাবে নিবে? কোনো কিছু আর না ভেবে নিজের ওড়না দিয়েই মাথা মুছতে থাকে।খুব য’ত্ন সহকারে মাথার চুল গুলো মুছে দেয়।

দায়ানের মাথা ব্যাথাটা অনেক বেড়েছে। চোখ মেলে তাকাতে পারতেছেনা।সোহা যে মাথা মুছে দিতেছে বুঝতে পারতেছে।ওড়না থেকে মিষ্টি একটা ঘ্রা’ণ এসে নাকে লাগছে। কতোদিন পর কেউ য’ত্ন সহকারে মাথা মুছে দিতেছে দায়ানের। দায়ান চোখ ব’ন্ধ করে বিষয়টা উপভোগ করতে থাকে।

সোহা দায়ানের মাথা মুছে ওড়না টা আবার ভালো করে গায়ে জড়িয়ে নেয়।মাথা ব্যাথাটা সাড়িয়ে দেওয়ার জন্য কিছু করতে হবে।লোকটার কষ্ট একদম সহ্য হচ্ছে না।কান্না পাচ্ছে।

শুনছেন? মলমটা কোথায়?

দায়ান কিছু বলছেনা।তার বলতেই ইচ্ছে করতেছে না।তাই চুপ করেই থাকে।

সোহা দায়ানের কাছ থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে, নিজেই খুজতে থাকে।আলমারি,ওয়া’ড্রপ সব জায়গায় খুজতে থাকে।সোহার হাটার তালে তালে তার পায়ের নুপুর রিমিকি ঝিমিকি শব্দ তুলে বাজতে থাকে।যা দায়ানের কানে এসে লাগে।

অনেক খুঁজাখুঁজির পর বেড সাইড টেবিলের উপর গিয়ে দেখতে পায়।ওখানেই রাখা আছে।মনেহয় প্রায়ই লোকটার মাথা ব্যাথা করে।এসব ভাবার এখন সময় নেই।তাড়াতাড়ি করে দায়ানের কাছে আসে।

দায়ান সোফায় হেলান দিয়ে চোখ বুজে আছে।সোহা দায়ানের পিছন দিকে গিয়ে দাঁড়ায়। তারপর হাতে মলম নিয়ে কপালে লাগিয়ে দেয়। খুব যত্ন সহকারে কপাল মাসাজ করতে থাকে।

দায়ান মাথা তুলে সোহার দিকে একবার তাকায়।তারপর আবার চোখ ব’ন্ধ করে নেয়।

সোহা কতোক্ষন দায়ানের কপালে মাসাজ করে,তারপর আস্তে আস্তে চুলে হাত দেয়।চুল গুলো ধীরে ধীরে টেনে দিতে থাকে।

সোহার তুলতুলে নরম হাতের সেবায় সব ব্যাথা যেমন ভেনিশ হতে থাকে দায়ানের।দায়ান চোখ বন্ধ করে উপভোগ করতে থাকে সোহার ছোয়া।

সোহা দায়ানের চুল নিয়ে যেমন খেলতেছে।কি সুন্দর চুল।সিল্কি ঘণ, আহা আমারিতো কি ভালো লাগতেছে চুল টেনে দিতে। বলতে ইচ্ছা করতেছে,,” শুনুন আজ থেকে আপনার মাথার চুল টেনে দেওয়ার আর মাসাজ করে দেওয়ার দায়িত্ব টা আমায় দিবেন?”

আজ থেকে না হয় এই দায়িত্ব টা আমি নিলাম।

দায়ান সোহার হাতের ছোয়ায় অন্য রকম একটা সুখ অনুভব করছে।ইচ্ছে করতেছে সারাক্ষণ যেনো সোহা তার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।

মনে মনে আওড়ায় দায়ান” ম’ন্দ লাগছেনা।”

হঠাৎ ই দায়ানের কিছু মনে পরে যায়।তার মা ও তো এভাবে দায়ানের মাথা ব্যাথা দূর করে দিতো।মাথা মুছে দিতো।মাথা ব্যাথা হলেই মায়ের কাছে ছুটে যেতো।গিয়ে সোজা মায়ের কোলে শুয়ে পরতো।মায়ের মন বুঝে যেতো ছেলে কি চায়।খুব ভালোবাসা দিয়ে দায়ানের সব কষ্ট ব্যাথা নিমিশেই দূর করে দিতো। আর বলতো,,,
আমি না থাকলে কি হবে বাপ তোর? কে মাথা টিপে দিবে?

দায়ান মায়ের কোল থেকে ওঠে লাফ দিয়ে বিছানায় বসতো।আর বলতো এসব যদি তুমি আরেকবার বলো মা তাহলে আমি যেদিকে দু- চোখ যায় চলে যাবো।

দায়ানের মা তখন বলতো, আহারে বাপ আমার রাগ করে না।আমি থাকবো না তো কি হবে? তোর জন্য একটা লাল টুকটুকে বউ নিয়ে আসবো।সে দেখিস আমার মতোই তোকে সেবা করবে।সব কষ্ট ভুলিয়ে দিবে।আমরা না এনে দিতে পারলেও সে ঠিক তোর কাছে কোনো না কোনো ভাবে আসবে।বলেই কপালে চুমু একে দিতো।

দায়ানের অতীত মনে হতেই চোখের কোণ জলে ভরে উঠলো।চোখ মেলে লাফ দিয়ে দাড়িয়ে গেলো।

সোহা দায়ান এরকম ভাবে উঠে দাঁড়ানোতে ভয় পেয়ে যায়।অনুমতি না নিয়ে ছোঁয়ায় এই লোক আবার চ’ড় মে/রে দিবে নাতো?।আমার ই কি দোষ? এই লোকটার কষ্ট পাওয়া দেখে আমার সহ্য হচ্ছিল না।

এদিক ঐদিক তাকিয়ে দায়ান চোখের পানি আড়াল করে।সোহাকে বলে তুমি এখন যাও। আমি কিছুক্ষন একা থাকতে চাই।

সোহা মাথা নাড়িয়ে যাওয়ার পথ ধরে।

দায়ান অন্যদিকে তাকিয়েই আবার সোহা কে ডাকে।

শুনো।

সোহা ঘুরে দায়ানের দিকে তাকায়।

থ্যাংক্স!

সোহা অবাক হয়।কিন্তু প্রকাশ করে না। রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।

দায়ান সোহার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ’শ্বাস ফেলে।
ঘুড়ে দাড়িয়ে বারান্দার দিকে হাটা দেয়।

—————————————–
চারদিকে কোলাহল সবাই যে যার কাজে ব্য’স্ত। দায়ান সেই সন্ধ্যায় যে বারান্দায় এসেছে আর যায় নি বারান্দা থেকে। সময়ের পালাক্র’মে দিন রাতের আধারে তলিয়ে গেছে।মানুষ তবুও থেমে নেই।নিজ নিজ কর্ম ব্য’স্ততা নিয়ে এগিয়ে চলেছে।জীবন কারো জন্য থেমে থাকেনা।এগিয়ে যায়। এই যে দিন রাতের আধারে ঢেকে আছে,তাও মানুষ জীবিকার তাগিদে ছুটে চলেছে।

দায়ান এক মনে অন্ধ’কার আকাশের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।তারা নেই আজ আকাশে।

রাত ১০ টা বাজতে চললো। সোহা রান্না করে কখনই নিজের রুমে বসে বসে মোবাইল এ কতোক্ষন ফানি ভিডিও দেখেছে।

ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ১০ টা প্রায় বাজে।তাই উঠে দাঁড়িয়ে দায়ানের রুমের দিকে হাটা দেয়।খাবার খেতে ডাকার জন্য। দায়ানের রুমের সামনে গিয়ে দরজার ফাঁক দিয়ে উঁ’কি দেয়। কিন্তু দায়ানকে দেখতে পায় না।তাই দরজায় টুকা দেয়।

দরজায় টুকার আ’ঘা’তে দায়ানের ধ্যা’ন ভাঙে।

সোহা আবার ডাকে ” শুনছেন? খাবেন চলুন।
দায়ান বারান্দা থেকে বের হয়ে আসে। সোহার দিকে একবার তাকিয়ে,কোনো কথা না বলে ডাইনিং এ যেতে থাকে। যাওয়ার আগে আবার দাড়িয়ে বলে যায়,,,,
নেক্সট টাইম আমায় একদম শুনছেন বলে ডাকবেনা।”

সোহা দায়ান কে মুখ বা’কায়। তো কি বলে ডাকবো,, ওগো?

খাবার টেবিলে কারো আর কোনো কথা হয়নি।যে যার মতো খেয়ে ঘুমিয়ে পরে।

সকাল সকাল সোহা রান্না করে ফেলে।দু’জন ই তাড়াতাড়ি নাস্তা করে নেয়।
————————————–

দায়ান রেডি হয়ে গাড়িতে হেলান দিয়ে ফোন টিপছে।সোহার এখনো আসার খবর নাই।কি করছেটা কি এই মেয়ে? এতো টাইম লাগে রেডি হতে।আমার আবার অফিসে যেতে হবে।
এসব ভাবতে ভাবতেই বির’ক্ত মুখ নিয়ে আবার বাড়ির গেটের দিকে তাকায়। তখনই চোখ একজায়গায় গিয়ে থমকে যায়। সোহা বের হয়ে আসছে।পরনে তার নীল কালার লম্বা হাতার গাউন। কালো হিজাব,হাতে মেচিং কালো রেশমি চুড়ি। এক কথায় চোখ ধা’ধা’নো সুন্দর লাগছে।দায়ান কিছু সময়ের জন্য থমকে গেছে।চোখ সোহাতে আটকে যায়।
সোহা দায়ানের সামনে এসে তু’ড়ি বাজায়।
দায়ানের ধ্যা’ন ভা’ঙে।নিজেকে অন্যদিকে তাকিয়ে স্বা’ভাবিক করে নেয়।

দায়ান ও আজ ব্লু শার্ট ও কালো জি’ন্স পড়েছে। এই মেয়ের পোশাক নিজের সাথে মিলে গেলো কি করে? তাই ভাবছে দায়ান।

দায়ানতো আর জানেনা সবই সোহার কার’সাজি। দায়ানের রুমে উঁ’কি দিয়ে দেখে নিয়েছে দায়ান আজ কি রং এর পোশাক পরে।
দায়ানের পোশাকের রং দেখে,তারপর গিয়ে নিজে পোশাক পড়েছে।তাইতো এতো দেড়ি হয়েছে। হিহিহি
সোহারে তর যে কি বু’দ্ধি । নিজের মাথায় নিজেই চুমু।এমনিতে তো দিতে পারবনা তাই মনে মনে দিয়েই চালিয়ে দিলাম।

দায়ানকে জিজ্ঞেস করে আমাকে কেমন লাগছে? অনেক সুন্দর লাগছে তাইনা? আমি জানি আমি সুন্দর সবাই তাই বলে।আপনি একটু প্রশংসা করুন না। বলুন আমায় কেমন লাগছে?

“কাজের মেয়ে সকিনার মতো।”
বলেই দায়ান গাড়িতে গিয়ে উঠে বসে।

#চলবে#তুমি_হাতটা_শুধু_ধরো
#পর্বঃ৯
#Jhorna_Islam

দায়ানের কথায় সোহা টলমলে চোখে তাকালো দায়ানের দিকে।দায়ান এখনো সোহার দিকে তাকায় নি সে নিজ মনে গাড়িতে বসে আছে।
সোহা দায়ানের থেকে চোখ সরিয়ে নিলো।বারবার যে কেনো এই পা/ষা/ণ লোকটার থেকে কিছু আসা করতে যায়।

দায়ান সোহার দিকে এবার তাকায়,,গাড়িতে উঠছেনা বলে কপাল কুঁ’চকে গাড়ির ডোর খুলে দেয়।এবার কি আপনাকে ইনভিটেশন কার্ড দিতে হবে? গাড়িতে উঠার জন্য।

তোমার সময়ের দাম না থাকতে পারে। আমার সময়ের অনেকদাম।এক কাজে বসে থাকলে হবে না।

সোহা কথা বাড়ায় না গাড়িতে উঠে বসে।
-সিট বে’ল্ট লাগাও।

– আমি লাগাতে পারিনা এসব।

– কি পারোটা কি তুমি?

-মানুষের মা’থা রান্না করে খেতে পারি। আপনাকেও খাওয়াবো খাবেন আপনি? কপট রাগ দেখিয়ে বলল।

– রান্না করে খাওয়ার কি দরকার? এমনিতেই তো বকবক করে আমার মাথা খে/য়ে ফেলতেছো।বিরবির করে বলে দায়ান।

– কিছু বললেন?

– নাহ।দায়ান নিজে সোহার কাছে এগিয়ে এসে,সিট বেল্ট বেঁ’ধে দেয়।

সোহা দায়ানকে পা’ত্তা না দিয়ে,জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকে।

– ঠোঁ’টে এটা কি রঙ লাগিয়েছো? মনে হচ্ছে রা/ক্ষ/সী।কারো ঘার ম/ট/কে র/ক্ত চু’ষে খেয়ে এসেছো।ছিঃ ই’য়া’ক!
কি বি/শ্রী লাগছে।

– খবর’দার যদি আমার সাজ’গোজ নিয়ে আরেকটা বা’জে কথা বলেন তো।আর কি যেনো বলছিলেন? আমাকে কাজের মেয়ে সকিনা লাগে? তাহলে আপনি ঐ কাজের মেয়ে সকিনার বর।ভুলে যাবেন না।আর এটা ঠোঁটের দিকে ইশারা করে,এটাকে লিপ’স্টিক বলে।সঠিক নাম বলতে শিখুন।আর আমাকে যে সুন্দরী লাগছে সেটা আমি জানি হুহ। আমি একটা ইশারা করলেনা,হাজার ছেলের লাইন লেগে যাবে আমার পিছনে।

– করেই দেখোনা,,,বাকিটা আমি দেখে নিবো।

– প্র’মান লাগবে আপনার?

– সাট আপ।চুপচাপ বসে থাকো।নয়তো ধা’ক্কা দিয়ে গাড়ি থেকে ফেলে দিবো।বে/য়া/দপ হয়ে গেছো? সাহস দেখেতো অবাক হচ্ছি আমার মুখে মুখে ত’র্ক করো?

সোহা আর কথা বাড়ায় না।চুপ করে বাইরের দৃশ্য দেখতে থাকে।দায়ান ও গাড়ি চালানোতে মন দেয়।

———————————————
সকাল সকালই রহিমা বেগম চি’ল্লা পা’ল্লা করতেছেন।মেজাজ খারাপ হয়ে আছে।বাড়িতে কিছুই রান্না করার মতো নেই।মেয়েটা মাছ,মাংস ছাড়া খেতে পারেনা।মুখে খাবার দেয় না।আবার মেয়ের সাজ গোজের জিনিস ও শেষ হওয়ার পথে সেই দিকে খেয়াল নেই।

দায়ানের চাচা সবই বারান্দায় বসে শুনছেন।কিছু বলছেননা।কথায় কথা বাড়ে।এখন কিছু বললে রহিমা বেগম আরো পেয়ে বসবেন।

বলি সংসারটা কি শুধু একলা আমার? আপনার কি কোনো দা’য়িত্ব নেই? দায়ান কে ফোন লাগান।টাকা লাগবো আমাদের।বলেন টাকা পাঠানোর কথা। বিয়ে করে যেমন উ’দ্ধার করছে।টাকা দেওয়ার কথা ভুলে গেছে বউ পাইয়া।

কতো করে আপনারে বললাম, আমাদের মেয়ে হিমার সাথে বিয়ে দেন।শুনছেন আমার কথা? মেয়েটা কতো পছন্দ করতো দায়ান কে।আমার মেয়েটার সাথে বিয়ে দিলে,নিজের সব কিছু নিজেরই থাকতো।আমগোরে আর অভাব করন লাগতো না। মেয়েটা আমার দেখতে কি কম সুন্দরী ছিলো?

— আমার মাইয়ারে কা’ন্দাইয়া আপনি অন্য মেয়েরে দায়ানের গলায় ঝুলাইয়া দিছেন।
আমার মাইয়ায় আপনার কাছে দায়ানের কথা বলার পর।পরেরদিন ই আপনি এই সর্ব’নাশ টা করলেন।
মাইনষের কি দোষ দিমু? নিজের ঘরে ইতো শ’ত্রু।

আমার মেয়ে হিমা রে দায়ান ঠিকই বিয়া করতো আমনে কইলে।

— চুপ করো রহিমা।আর ভাল্লাগে না তোমার কথা।আমার বাপ মা মরা ভাতিজারেতো আমি নিজে গা’ঙ্গে ভাসায় দিবার পারি না।তোমারে আর তোমার মেয়েরে ভালা কইরাই চিনা আছে আমার। ভাতিজা আমার এমনিই দুঃখী তোমাগো লিগা তো আর তার জীনটা আরো দুঃখী বানাইতে পারুম না।

আমার জীবনটাইতো মা মেয়ে মিলে শেষ করে দিছো।এখন আমার ভাতিজার আর তার টাকার উপর ন’জর দিছো।তারেতো তোমার মাইয়া পছন্দ করে না।করে তার টাকারে।টাকা পাইলেতো মা মেয়ের কিছু লাগে না।

আমার মেয়ে হইয়া মেয়েটা আমার বৈ’শি’ষ্ট্য কিছুই পাইলো না।সব তোমারই পাইছে।যেমন মা তেমন মেয়ে।

–খবরদার হিমার বাপ। মুখ সামলে কথা কইবা।এই দুনিয়ায় টাকাই সব।টাকা আছে তো জীবন সুখী।আমার মাইয়া তার টাকারে পছন্দ করে তো কি হইছে? টাকাতো তারই,, তার টাকারে পছন্দ করা মানে তারেই পছন্দ করা।নিজের মেয়ের সুখ তো তুমি দেখতে পারো না।আবার বড় বড় কথা।

চুপচাপ দায়ানরে ফোন লাগাইয়া টাকা দিতে কও।তারপর বাজারে গিয়ে বাজার করে আনো।

— শুনো হিমার মা,,,অনেকতো হলো। পোলাটারে এইবার একটু শা’ন্তি তে থাকতে দেও।

— কেন আমি কি অ’শা’ন্তি করছি তোমার পোলারে?

— জানো না তুমি? আমার বলা লাগবো সব ভা’ই’ঙ্গা?

এবার রহিমা বেগম চুপ হয়ে যায়।

— আর একবার ও দায়ানের কাছে টাকার জন্য ফোন যাইবনা এই বাড়ি থেইকা।না আমি দিবো না তুমি।আমার যা রোজগার আছে সেই টাকা দিয়েই আমাগো হইবো।
অনেকতো পরের উপর চইড়া খাইলা।এইবার আর না।আমাগো যা টাকা পয়সা আছে,,ঐই টাকা দিয়া সুখে শান্তি তে ডাল ভাত খাইতে পারুম।

— ডাল ভাত খাইয়া জীবন চলে? তুমি জানোনা আমাগো হিমা টা বড়লোকদের মতো আচার ব্যবহার পাইছে।পোলাও কো’রমা ছাড়া খাইতে চায় না।

—- যার পোষা’ইবো না তার জন্য বাড়ির দরজা খোলা আছে।চইলা যাইতে পারে আমি বাঁ’ধা দিমুনা।বলেই বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গেলেন।রোজ রোজ আর মা মেয়ের অ’শান্তি ভালো লাগেনা।

—– এদিকে রহিমা বেগম হায় হায় করতেছেন।কি বলে গেলো এইলোক? সব শেষ গো। নিজের ভালোতো পা/গ/লে ও বোঝে।মার থেইকা মাসির দ’রদ বেশি? নিজের মাইয়ার থেইকা ভাতিজা বেশি হয়ে গেলো? কে সুখে না থাকতে চায়। দুনিয়াটা টাকায় চলে।এসব আ’বে’গের দা/ম নাই।কে বোঝাইবো এই লোকরে।সারাজীবন নিজের ইচ্ছে তে চইলা গেলো।আমার কতা শুনলো না।আমি তো ভালোর লাইগাই বলি।

এসব বলতে বলতে বি’লা’প শুরু করে দেন রহিমা বেগম।

———————————————
দায়ান গাড়ি নিয়ে এসে সোহাকে যে ভার্সিটিতে ভর্তি করাবে ঐখানে এসে থামায়।

সোহার ঐদিকে খেয়াল নেই।সে চারপাশ টা দেখতে ব্য’স্ত।

দায়ান সোহার দিকে তাকিয়ে বলে,,,শুনো যাওয়ার আগে কিছু কথা বলে নেই।

—- হুম৷ বলেন।

—- মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করবা।এইটা তোমার গ্রাম না কোনো বা/দ/রামি করবানা।এইখানকার সবাই খুব স্মা’র্ট। চাল চলন ব্যবহার ও অন্য রকম। তাই বলে তোমাকে ওদের মতো হতে হবে এমন বলছিনা।নিজের শালী’নতা বজায় রেখে চলবা।সহজে কাউকে বি’শ্বাস করবানা।এদের সবার বাইরেটা যেমন ভিতরের টা ওরকম না ও হতে পারে।

আর সবচাইতে বড় কথা,,,আমি অনেক আশা নিয়ে তোমাকে ভর্তি করাতে আসছি।আমার ফেস ল’স হয় এমন কোনো কাজ করোনা।ছেলেদের সাথে অতো মিশার দরকার নেই।আশা করি বুঝতে পারছো?

—- সোহা এতোক্ষন মনোযোগ দিয়ে দায়ানের সব কথা শুনলো।জ্বি আচ্ছা। আমি আপনার মান রাখার চে’ষ্টা করবো।

— হুম গু’ড। এবার চলো যাওয়া যাক।বলেই দায়ান গাড়ি থেকে নেমে ঘুরে এসে সোহার পাশের ডোরটা খুলে দেয়।

সোহা ও নেমে পরে।চারিদিকে ঘুরে ঘুরে পরিবেশ দেখছে সোহা।

কতো সুন্দর! সব কিছু স্ব’প্নে’র মতো লাগছে।বি’স্ময়ে মুখ হা হয়ে গেছে। নিজের অ’জা’ন্তেই দায়ানের হাত খামছে ধরে।

দায়ান সোহার দিকে একবার।নিজের হাতের দিকে একবার তাকায়।

— এই শুনছেন? আমি কি স্ব’প্ন দেখছি? আল্লাহ সব কিছু এতো সু’ন্দ’র? এটা কি কোনো স্ব’প্নপু’রী? আমার হাতে একটা চি’মটি কাটেনতো।
— বি’হেভ ইউর সে’ল্ফ সোহা।

–চুপ থাকেন আপনি।উফ কি সুন্দর জায়গা।পরাণটা জুড়ায় গেলো গো দেখে।এতো সুন্দর জায়গায় আপনি আমায় নিয়ে আসলেন?

আপনাকে অনেক অনেক গুলা থ্যাংকস। আমার না এই খানে নাচতে ইচ্ছে করছে।পাখির মতো উড়তে মন চাচ্ছে।
আমি নিজেও জানিনা আমার কি করতে ইচ্ছে করছে।

কে বানিয়েছে গো এই ভার্সিটি তারে দেখতে মন চাচ্ছে। সে ও মনে হয় এমনই সুন্দর হবে তাইনা?আমার না এখানে থাকতে ইচ্ছে করতেছে সব সময়ের জন্য।
দেখেন না ব্য”ব’স্থা করতে পারেন কি না।আমি আর আপনার সাথে যাবই না এখানেই থাকবো।
আমার না এখানে গড়া’গড়ি খাইতে মন চাচ্ছে। জায়গাটা খেয়ে ফেলতেও মন চাচ্ছে।

—- হ্যা খাবাতো কিন্তু এই জায়গাটা না।চুপচাপ না গেলে আমার থা’প্প’র খাবা।অনেক টে’স্টি! টে’স্ট করানো লাগবে?

—- এমন করেন কেন? জায়গাটা মানে আমার ভার্সিটিটা অনেক পছন্দ হয়েছে তাই বললাম।

—- বলে আমায় ধ/ন্য করলেন।

—- এই শুনেন না।দেখেন এখানে কতো কতো ফুলের গাছ। আমিতো নাম ও জানিনা এগুলার।কি সুন্দর ফুল ফোটে আছে।আমি এখান থেকে চারা নিয়ে যাবো।আমাদের বাগানেতো এতো গাছ নাই।বলে নিলে দিবে? না দিলে এমনিই নিয়ে যাবো লুকিয়ে।

—- চুপ আমি অনেক ফুলের গাছ এনে দিবো। আর একটা কথা ও বলবানা।সবাই দেখো কেমন করে তোমার দিকে তাকাচ্ছে।

—– এবার সোহা ঠিকঠাক ভাবে অফিস রুমের দিকে হাঁটা দেয়।

দায়ান ও সোহার পিছনে হাটা দেয়। আর বিরবির করে বলে,,কি মেয়েরে বাবা।চুরি করবে সেটা আমাকে বলছে।ভয় করলোনা?

চু/ন্নি কা’হি’কা।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here