তুমি_আমার_অধিকার🍂 পর্ব ৬+৭

#তুমি_আমার_অধিকার🍂
#লেখক_সাব্বির আহাম্মেদ
#পার্ট_6

নিলয় এক এক করে আবিরকে সব কিছু খুলে বললে, আবির আর অথৈ নিলয়ের মুখ সব শুনে থেকে থম মেরে আছে । একটু আগে নিলয়ের মুখ থেকে কি শুনলো তারা ।

এত কিছু ঘটে গেলো নিলয়ের ওপর দিয়ে, তারা কিছুই জানতে পারলো না তারা । আবির তো রেগে বললো আজ ওই সালির একদিন কি আমার একদিন?? সে এমন সাহস কোথার থেকে পায় । যে নিলয় কখনো রিলোশন যাই নি সব ভালোবাসা রেখে দিয়েছে বউয়ের জন্য অথচ আজ সে তার অধিকার থেকে বনছিত।

_আবির আর অথৈ নিলয়কে তার বাসায় দিয়ে আসলো ।
নিরা তখনও বাসায় আসে নি, আবির আর অথৈ কিছুক্ষণ থেকে চলে গেলো ।

আজ প্রায় এক মাস পর,.

এই একমাসে অনেক কিছু ঘটে গেলো, অনেক কিছু চাপা পড়ে থাকলো, নিলয়ের আস্তে আস্তে সব অনুভৃতিগুলো নিরার থেকে সরে যেতে লাগলো । চলে তো যাবেই নিরার ব্যবহার দিনে দিনে অনেক খারাপ হয়ে গেছে ।
সে যতই চাচ্ছে নিরার ওপর ফোকাস করতে । অজানা টানে তা হয়ে উঠছে না ।

ওপর দিকে….

_অন্তী বসে আছে তার বাবার কবরের পাশে, সেই ছোট বেলা থেকে বাবা তাকে কোলে পিঠে করে মানুষ করছে কখনো ভালবাসার কমতি বুজতে দেই নি তাকে ।

_ মা কি জিনিস কখনো বুজে উঠতে পারিনি সে, অন্যদের মতো সেও বাবাকে কখনো কখনো মা বলে ডাকতো আর তার বাবা তখন হে হে করে হেসে উঠতো.

ছোটবেলা থেকে বাবা যে কতটা পরিমাণ কষ্ট করে তাকে‌ মানুষ করেছে, এই কথা গুলো ভাবছে আর তার চোখ থেকে পানি পড়ছে
তাদের অনেক জায়গা সম্পওি ছিলো একসময়ে তার রাজ্য জুড়ে শুধু বাবা ছিলো । সারাদিন ব্যস্ত থাকতো তার বাবা কিন্তু রাতে তার জন্য সময় বরাদ্দ থাকতো । তখন বাবাকে পেয়ে অন্তী সেই ছোটবাবুদের মতো অচারণ করতো, নিয়ম করে প্রত্যেকদিন চকলেট আনা সপ্তাহে একদিন তাকে নিয়ে ঘুরে বেড়ানো । সব কিছু মিলিয়ে অন্তীর সেইদিন গুলো সুখের রাজ্য ছিলো..

বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে তার জিবনে অন্ধকার নেমে এলো চাচা কৌশলে তাদের সব জমি হাতিয়ে নিলো। আর তাকে তার নিজ বাসায় চাকরাণীর মতে আচরণ করতে শুরু করলো । মানসিক নির্যাতন, দিন দিন বেড়ে চলছিলো তার ওপর পড়ালেখা তো দূরের কথা ।

অন্তী এইগুলো সহ্য করতে না পেরে, নিজ বাড়ি নিজ গ্রাম থেকে রাতে পালিয়ে এলো, অন্ধকারে অবছা আলো যতদূর চোখ যায় অন্ধাকারে ছেয়ে গাছে, গ্রাম থেকে অনেকদূর চলে আসলো সে, এই পথটা পাড়ি দিতে সে খুব ক্লান্ত হয়ে গেলো । চাদের আলো তখনও পৃথিবীতে পড়া শুরু করেনি
রাস্তার‌ ওইদিক থেকে কুকুরের ডাক শুনা গেলো, এই কুকুর গুলো ও না রাতবিরাতে চিৎকার করে মানুষদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায় ।

_অন্তী সাথে করে কিছু খাবার নিয়ে এসেছিলো বিধায় ক্ষুধা লাগার পর সে গুলো খেলো । গুটিসুটি মেরে বসে রইলো সে,
শরীরের ক্লান্তিতে ঘুম ঘুম ভাব আসতে শুরু করলো, এলাকাটা তেমন নিরাপদ মনে হচ্ছে না তার কাছে । উঠে দাড়ালো আবার এই সরু পথ ধরে হাট শুরু করলো সেও জানেনা কোথায় যাবে, কোথায় তার ঠিকানা হবে আশে পাশের বিল্ডিং গুলো দেখতে চাক্যচিক্যময় গ্রামে থাকতে থাকতে কখনো দেখা হয় নি তার, আর রাতের নির্জন শহরে সঙ্গি হলে তো কথাই নেই ।

অন্তী বিড় বিড় করে কথা গুলো বললো ‌, আর নিজেই হো হো করে হেসে উঠলো ।

কিছুদূর যেতেই গাড়ির হেডলাইটের আলো তার চোখে এসে পড়লো । মনে মনে একবার ভাবলো হেল্প চাইবে, অজানা ভয়ে সে‌ কুলিয়ে উঠতে পারছে না । চাইবে কি না??..

_গাড়িটা এসে তার সামনে দাড়ালো গাড়ির কালো গ্লাসটা সরিয়ে কালো চশমাওয়ালা একজন লোক,
আপনার কেনো হেল্প দরকার..??
এমন বাজগাইয়ে কন্ঠে বললো কথাটা অন্তী ভয় পেয়ে গেলো,
সে আমতা আমতা করে বললো না কেনো হেল্প লাগবে না ।
থ্যাংকস..

তারপর ওই ব্যাক্তিটা জিজ্ঞাসা করলো তাকে এতো রাতে আপনি কোথায় যাচ্ছেন, আর কোথায় থেকে এসেছেন জানতে পারি??

অন্তী এইবারও চুপ করে রইলো, অন্তীর এই চুপ দেখে স্যার মেয়েটি কিছুই তো বলছে না ।

তারপর গাড়ি থেকে সুর্দশন এক যুবক নামলো, সাদা শার্টের উপর কালো ব্লেজার বেশ মানিয়েছে তার ওপর চুলগুলো একপাশে হেলে আছে উফফ অন্তী তো এক দেখাতে পাগল হয়ে যাচ্ছে মনে হয়…

ছেলেটি কাসে অন্তীকে বললো আপনি কে আর এতোই কোথার থেকে এসেছেন আর কোথায় যাবেন..??

অন্তী:- সে কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো আমার নাম অন্তী, আমি গ্রাম থেকে এসেছি আর কোথায় যাবো সেটাও জানি না । ( আর ছেলেটির নাম হলো নিলয় আপনাদেরকে অন্তীর আর নিলয়ের ফার্ষ্ট কিভাবে পরিচয় হলো সেটা তুলে ধরা হলো..)

নিলয়ঃ- আপনি যদি আমাকে ভয় না পান তাহলে আপনার কেনো হেল্প লাগলে বলতে পারেন. ‌!
অন্তীঃ- না কেনো হেল্প লাগবে না আপনারা যেতে পারেন ।
নিলয়ঃ- দেখুন এতো রাতে কোথায় যাবেন আপনি নিজেও জানেন না ।
অন্তীঃ- বললাম তো লাগবে না । আপনারা যান.
নিলয়ঃ- ওকে ঠিক আছে ??

নিলয়ের গাড়ি চলা শুরু করলো, আর এইদিকে অন্তীর মনে হাসপাস শুরু হয়ে গেলো তার তো হেল্প লাগবে তাহলে কেনো সে না করে দিলো ধ্যাত এখন তার নিজের ওপর খুব বিরক্ত হচ্ছে ।
হঠৎা ঝোপের থেকে কিসের আওয়াজে সে ভয় পেয়ে গেলো সে খুব দৌড়াতে থাকলো আর সামনে দেখলো ওই গাড়িটা দাড়ানো । সে এক দৌড়ে গাড়ির কাছে এসে হাপাতে লাগলো নিলয় গাড়ি থেকে নেমে পানির বোতলটা অন্তীর হাতে দিলো অন্তী এক ঝাটকায় সে বোতলটা হাতে নিয়ে পুরো পানি খেয়ে ফেললো.. নিলয় হাসতে হাসতে বললো আস্তে আস্তে খান ।

অন্তীঃ- লজ্জার চুপ হয়ে থাকলো ।
নিলয়ঃ- তো মেডাম যাওয়া যাক ।
অন্তীঃ- কোথায় যাবেন,
নিলয়:- কোথায় আর‌ আমাদের বাসায় আর কোথায়..
গাড়িতে উঠুন..
অন্তী:- না আপনাদের বাসায় যাবো না আর গাড়িতে উঠবো কেনো হেটে হেটে যাবো..
নিলয়ঃ- এহ আসছে তার জন্য আমি হেটে হেটে যাবো আর বাসায় না গেলে কোথায় যাবেন আপনি হুম..
অন্তী:- এইখানে কোনো মহিলা হোস্টেল নেই আপনি আমায় সেখানে দিয়ে‌ আসেন ।
নিলয় আর কি করবো বেচারি এমনিতে ভয় পেয়ে আছে তার ওপর আর কেনো চাপ দেওয়া ঠিক হবে না ।
অগ্যত সে হাটা শুরু করলো, কিছুদূর যাওয়ার পর দেখলো অন্তী এখনো আসছে না ।
নিলয়:- কি হলো আসুন না হলে কিন্তু চলে যাবো ।
অন্তী:- এক দৌড়ে এসে নিলয়ের পিছন পিছন হাটা শুরু করলো..
বলছি কি আমি আপনার পাশাপাশি হাটতে পারি অন্তীর মুখ থেকে এমন কথা শুনে নিলয় অবাক হয়ে গেলো সে না করে দিলো ।
অন্তী মুখ কালো করে বিড় বিড় করে নিলয়কে বকলো ।

কিছুদূর যাওয়ার পর নিলয় পিছনে এসে অন্তীর পাশাপাশি হাটতে শুর করলো । অন্তী মুখ ভেংচিয়ে অন্য দিকে চেয়ে হাটতে শুরু করলো । অন্যদিকে হাটার ফলে অন্তী ইটের সাথে বাড়ি খেয়ে বসে পড়লো ।
আর নিলয়ের দিকে চেয়ে বললো সব আপনার জন্য হয়েছে ।
নিলয় অবাক হয়ে বললো আমি কি করলাম??
দেখি‌ কি হয়েছে । অন্তী প্রথমে দেখাতে চাইলো না নিলয়ের জোড়াজোড়িতে দেখালো । খানিকটা বেশ ফুলে গেছে এই পা নিয়ে আর বেশিদূর যাওয়া যাবে না ।
নিলয়ঃ- এই পা নিয়ে বেশি দূর যেতে পারবেন না আর এখান থেকে হোস্টেল বেশি দূরে?? তো আপনাকে আমি আমার এক বান্ধবির কাছে নিয়ে যাই তার বাসায় এখানেই..

অন্তীঃ- সে আর কি বলবে, মাথা নাড়িয়ে হা বললো..
নিলয় অথৈকে কল দিলো অথৈ ঘুমাচ্ছিলো নিলয়ের কল পেয়ে উঠে বসলো
অথৈঃ- কিরে‌ এতো রাতে কল দিয়েছিস কেনো কি দরকার বাথরুমে যেতে ভয় পাচ্ছিস নাকি এই‌ বলে অথৈ হে হে করে হেসে উঠলো ।
নিলয় রাগিস্বরে বললো এই বাল তর ফাইজলামি‌ বাদ দে বিপদে পড়ে কল দিয়েছি ।
অন্তীঃ- কিসের বিপদ??
নিলয় তারপর সব খুলে বললো অথৈকে.
অথৈঃ- ওকে নিয়ে আয় আমার বাসার সামনে এসে একটা কল দিস আমি নিচে নামবো ।

নিলয়ঃ- এই যে মেম চলুন একটু খানি হাটলে তার বাসায় ।
পা চালান
অন্তী বহু কষ্টে উঠে দাড়ালো একটু পর অথৈয়ে বাসার সামনে এসে তাকে কল দিলো
_কিরে তুই কই..
এক‌মিনিট নামছি,
অথৈ নিচে নেমে বাসার মেইনগেট খুলে নিলয় আর অথৈকে ভিতরে নিয়ে গেলো । বাসাটা একদম ফাকা
কিরে আংকেল আন্টি কোথায়..?
তারা বেড়াতে গেছে কিছুদিনের জন্য!!
আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন এই অথৈ অন্তীকে ওয়ারুমটা দেখিুে দেয় ??
অন্তী ফ্রেশ হয়ে নতুন একটা জামা পড়ে আসলো । নিলয় চেয়ার থেকে উঠে দাড়ালো, আচ্ছা আমি যা তাহলে..

অন্তী চোখ চোখ বড় করে তাকিয়ে আছে নিলয়ের দিকে,
অন্তীঃ- আপনি চলে যাবেন?? থেকে যান
নিলয়:- আরে কেনো সমস্যা নেই । যেকোনো সমস্যা হলে অথৈকে বলবে আর আমি তো আছি । কাল সকালে আমি আবার আসবো ।

অথৈ তাকে দেখে রাখিস ওকে, গুড নাইট
সে থেকে অথৈ আর অন্তীর বন্ধুত্ব ।.
পরেরদিন সকালে
নিলয় এসে অন্তীকে নিয়ে গেলো কলেজে ভর্তি করে দিলো আর থাকার জন্য হোস্টেল বুকিং করলো অথৈয়ের আপওির জন্য অথৈয়ের বাসায় থেকে গেলো ।
অন্তী ভাবতে পারিনি অচেনা একজন লোক এত সাহায্য করবে তাকে সেও পড়ালেখার পাশাপাশি কয়েকটা টিউশনি করে নিজের খরচ চালাতো .

এইবার আসি বর্তমানে এতোক্ষণ অন্তী তার অতীত পূর্ণাবৃওি করলো । সেই থেকে নিলয়ের জন্য আস্তে আস্তে তার মনে জায়গা করে নিলো ।

এখন তার কেনো কিছুর অভাব নেই, বাবা মা পেয়েছে । টাকা পয়সা সব আছে শুধু প্রিয় মানুষটার ভালোবাসার পাওয়ার অধিকারটুকু পাচ্ছে না ।
আজকে আর গাড়িতে উঠলো না রাস্তার এক পাশ দিয়ে হাটা শুরু করলো । কিছুদূর যেতেই মানুষদের ভিড় দেখা গেলো মনে হলো কিছু একটা হয়েছে নয়তো এমন ভীড় তো হওয়ার কথা নয়… ভীড় ঠেলে এগিয়ে গিয়ে দেখলো একজনের নিথর দেহে পড়ে রয়েছে । মুখটা তার চেনা এমনটি মনে হচ্ছে অন্তীর একটু কাছেই যেতেই সে থমকে গেলো.. তর হদয়টা ধুমড়ে মুচড়ে গেলো, সে চিৎকার করে ডেকে উঠলো..
#তুমি_আমার_অধিকার 🍂
#লেখক_সাব্বির আহাম্মেদ
#পার্টঃ7

অন্তীর পচন্দইদ্রয়ী কাজ করছে না । নিলয়ের নিথর দেহটা রাস্তার মেঝে পড়ে আছে মাথার দিকে রক্তের ফিনকি ঝড়ে পড়ছে নিলয়ের। অন্তী দৌড়ে এসে নিলয়কে কোলে নিলো নিলয়ের মাথায় তার হাত চেপে রক্ত বন্ধ হওয়ার চেষ্টা করলো.

এইই কি হয়েছে তুমার, আর আপনারা কি করছেন দাড়িয়ে আমাকে একটু হেল্প করুন দ্রুত । ভীড় থেকে দুই তিনজন লোক এসে নিলয়কে ধরলো অন্তী তার ড্রাইবারকে কল করলো নিলয়কে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হলো ।

যেই হাসাপাতালে নেওয়া হয়েছে ওইখানে নিলয়কে ভর্তি করানো যাবে না সাফ জানিয়ে দিয়েছে ডাক্তাররা
অন্তীতো এক প্রকার চিৎকার চেচামেচি জুড়ে দিয়েছে হাসাপাতালে । অন্তী তার বাবাকে কল দিলো তার বাবা পুলিশের এসপি ওনি অন্তীর কল পেয়ে দ্রুত হাসপাতালের সার্জনকে কল দিলো

ডাক্তার দ্রুত অন্তীর বাবার কল পেয়ে নিলয়কে ভর্তি করালো..

এর ‌মধ্যে আবির অথৈ এবং নিলয়ের বাবা মা ভাই বোন আত্নীয়স্বজন যারা আছে সবাই চলে আসলো হাসপাতালে.
এর মধ্যে নিলয়ের আম্মুর অবস্থা তো শোচনীয় পর্যায়ে চলে গেছে ওনি বারবার মূর্চা যাচ্ছে । নিলয়ের ছোট ভাই বোন কেদে প্রায় পাগলপাড়া । নিলয়ের আম্মু হাসাপাতালের বারান্দায় অন্তীকে ছুটে গেলেন

_ এই তুমি অন্তী না …

অন্তী তো নিলয়ের আম্মুকে ধরে কেদে দিলো আন্টি নিলয়
ওর কি হয়ে গেলো । ও । তার কিছু হয়ে গেলে আমি কিভাবে বাচবো ।

নিলয়ের আম্মু নিজেই তো পেরেশান তার মধ্যে সে অন্তীকে কিভাবে সামলাবে ওনি এর মধ্যে অন্তী অজ্ঞান হয়ে পড়লো ।
অন্তীর বাবা হারুন সাহেব চলে আসলো

ওনি অন্তীকে অন্য কেবিনে নিয়ে গেলো ।
অপরেশন থিয়েটারের সামনের চেয়ারে আবির আর অথৈ বসে আছে । নিলয়ের আম্মুকে দেখে তারা দুজনে দাড়িয়ে গেলো ।
তুমরা থাকতে আমার নিলয়ের এই অবস্থা কি করে হলো হুম
তুমাদের দুজনকে আমি আমার নিজের সন্তানের মতো দেখতাম । আর তুমরা থাকতে আমার নিলয় আজ মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে ।

আবিরঃ- আসলে আন্টি?? এতটুকু বলতে অথৈ আবিরের হাতটা চেপে ধরলো আবির বলতে গিয়ে থেমে গেলো..
নিলয়ের আম্মুর চোখে বিষয়টা এড়ালো না
ওনি আবির কে আবার জিজ্ঞাসা করলেন দেখো কি হয়েছে তুমরা যা জানো সব আমাকে বলো??
আন্টির এইরকম পিড়াপীড়িতে আবির প্রথম থেকে সব খুলে বললো ।

নিলয়ের আম্মু সব শুনে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদতে লাগলো
ছেলেটার ওপর এতো ঝড় গেলো অথচ তাদেরকে কিছু জানালো চুপ করে সহ্য করে গেলো ।

_ ছোটবেলা থেকে নিলয় চাপা স্বাভাবের আঘাত পেলে কাউকে কিছু বলে না ।
ছোট কালে একবার খেলতে গিয়ে পা কেটে গিয়েছিলো । দুই দিন পর ওনি জানতে পারলো যখন সে ব্যাথা কাতরাচ্ছে তখন সে বলে নাই , এই হলো নিলয়ের স্বাভাব ।
নিরা এমন মেয়ে তার নিলয়ের মা ভাবতে পারছে না । নিলয়ের আব্বুকে কিভাবে বলবে ওনি এইসব তবে হ্যা একটা কথা ওই মেয়ের সাথে নিলয়ের আর সম্পর্ক রাখতে দিবে না..
নিরার বাবা মা এইসব জানতে পারলে নির্ঘাত তারা শকড হবে তাদের মেয়ে এমন হলো কিভাবে??

_ রাত বারোটা বেজে গেলো কারো চোখে ঘুম নেই । নিলয়কে এখনো তারা অপরোশেন থিয়েটারে থেকে বের করে নাই ।

আবির আর নিলয়ের আব্বু এই‌মাএ এশারের নামাজ পড়ে তাহাজ্জুদও পড়ে নিলো । আদরের সন্তানের জন্য প্রাণ ভরে দোয়া করলো ।

অন্তীর এখনো জ্ঞান ফিরেনি , হারুন সাহেব আর অন্তীর পাশে বসে মাথায় হাত বুলাচ্ছে । একটু পর ডাক্তার অন্তীকে চেক আপ করে দিয়ে বললো আপনারা ওনাকে এখন নিয়ে যেতে পারেন । চিন্তা করার কেনো কারণ নেই, অতিরিক্ত টেনশনের কারণে এমন হয়েছে । হারুন সাহেব পরম মমতায় অন্তীর মাথায় হাত বুলাচ্ছে, মেয়েটাকে নিজের সন্তানের থেকে বেশি আদর করে তারা দুজন, কেনো কিছুর কমতি রাখে নাই । অন্তীও তাদের সাথে ভালোভাবে মিশে গেছে সারাদিন অন্তীর সাথে দৌড়াদৌড়ি করে ওনাদের দিন যায় ।

হারুন সাহেব অন্তীকে নিয়ে গেলো বাসায় ।

আজ দুই দিন হয়ে গেলো নিলয়ের জ্ঞান ফেরার নাম গন্ধ নেই. এই দুই দিনে অন্তীকে কেউ এক পা নড়াতে পারলো না নিলয়ের কাছ থেকে । তার একটিই কথা সে নিলয়ের পাশ থেকে কোথাও যাবে না । হারুন সাহেব অব্যশই অনেক জোড়াজোড়ি করেছে কিন্তু কাজ হয় নি দেখে ওনিও দুইদিন ধরে হাসপাতালে রয়ে গেলেন । নিলয়ের আব্বু আম্মুও কিছু বললো না ।

_ তিনদিন পর সকালের মৃদু হাওয়া জানালা দিয়ে সাই সাই করে ভেতরে আসলো ।আকাশটার যেনো আজ মন পরিষ্কার.
সূর্যের আলো নিলয়ের চোখে পড়ছে হালকা ভাবে । সে একটু একটু করে চোখ খুলতে লাগলো । বুকের ওপর ভারী কিছু অনুভব করলো ।
চোখটা মেলে তাকিয়ে দেখলো অন্তীর মাথায় তার বুকে, কত সুন্দর ভাবে ঘুমাচ্ছে মেয়েটা । মেয়েটাকে দেখতেই এমনি মায়াবি লাগে তারপর ঘুমালে তো তার রুপ ফুটে । নিলয় পরম আদরে অন্তীর চুল গুলোতে হাত বুলাচ্ছে মুখটা শুকিয়ে গেছে চোখের নিচে কালো দাগ জমে গেছে মনে হচ্ছে কতদিন ধরে মেয়েটার চোখে ঘুম নেই । আজ রাজ্যের ঘুম তার চোখে ভর করেছে, এই ভাবছে আর অন্তীর মাথায় হাত বুলাচ্ছে চুলগুলো উসখুসকো ভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ।

মেয়েটাকে নিলয় প্রথম যেইদিন দেখেছে সেই থেকে এক মায়া কাজ করছে তার প্রতি । অব্যশই সেও চেয়েছিলো অন্তীকে জিবনসঙ্গীনি হিসাবে রাখতে । কিন্তু বাবার কারণে আর অন্তীর উধাও হওয়ার কারণে তা হয়ে উঠে নাই ।
তারপর যখন অন্তী আসলো আর নিলয়ের কেনো কিছু করার ছিলো না । আজ বহুত বছর অন্তীকে সে প্রাণভরে দেখছে ।

এর মধ্যে আবির আর অথৈ কেবিনে ডুকলো । ডুকেই তারা চমকে গেলো নিলয়ের জ্ঞান ফিরেছে । আবির জোরে চিৎকার করবে নিলয় আঙ্গুল দেখিয়ে থামিয়ে দিলো অন্তী ঘুমাচ্ছে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটবে ।

আবির আর অথৈ নিলয়ের পাশে এসে বসলো, এখন কেমন আছিস,
_হুম কিছুটা সুস্থ আছি ।..
আচ্ছা কি হয়েছে নিলয় হঠৎা করে দুর্ঘটানাটা কিভাবে ঘটলো কিভাবে বলতো..????

নিলয় একরাশ চাপা শ্বাস ছেড়ে বলা শুরু করলো..
ওইদিন অফিস করে ক্লান্ত শরীর নিয়ে সে তাড়াতাড়ি বাসায় প্রবেশ করলো । বাসায় প্রবেশ করে দেখে নিরা তার ব্যাগ গুচাচ্ছে,
নিলয়ঃ- কি হলো তুমি ব্যাগ গুচাচ্ছো কেনো? কোথায় যাচ্ছো.
নিরাঃ- হদয়ের কাছে যাচ্ছি খুশির স্বরে বললো.
নিলয়ঃ- না তুমি এমনটি করতে পারো না । আমাকে ছেড়ে কোথাও যেতে পারে না । নিলয় নিরার হাত ধরে

নিরাঃ- আমার হাত ছাড়ো তুমি কোন সাহসে আমার হাত ধরো তুমি । আমি তুমাকে ভালোবাসি না কতবার বলবো আমি হদয়কে ভালোবাসি..

নিলয়ঃ- তুমি কিছুদিন আগে বললনা হদয় তুমার সাথে চিট করেছে । তাহলে এখন কেনো আবার যাচ্ছে আর হদয় ছেলেটা ভালো না । যেয়ো না তুমি..
. নিরাঃ- আমি যাবো, আমার পথ আটকাবে না এই বলে সে চলে যাচ্ছে.
নিলয় তার হাত ধরলো আবার, এইবার নিরা নিলয়কে ঠাস করে থাপ্পড় দিয়ে বসলো কোন অধিকারে তুমি আমার হাত ধরো আমার পথ আটকাও হুম…

বাসার সব সার্ভরা চেয়ে রইলো সব নিস্তব্দ হয়ে গেলো

_ নিলয় এইবার আর চুপ থাকতে পারলো না. সে ও‌ নিরাকে কষে থাপ্পড় মারলো..

ভাগ সালি বহুত হয়েছে আর মেনে নেওয়া যায় না । আজ থেকে তোকে এই বাড়িতে যেনো না আর না দেখি । আর ভুলেও কখনো আমার কাছে আসবি না ।

নিরা এক দৌড়ে চলে গেলো, আর মনে মনে সে ভাবলো যাক আপদ থেকে মুক্তি পেয়েছি ।

সব তো শুনলাম তো তুই এক্সিডেন্ট হলি কিভাবে ।
নিলয়ঃ- হুম বাসা থেকে বের হয় দোকান থেকে সিগারেট নিয়ে রাস্তা দিয়ে বাসায় আসতেছিলাম তারপর অন্যমনষ্ক নাকি কি হয়েছে আমি নিজেও জানি না । তবে এইটুকু খেয়াল আছে আমার সামনে খুব জোড়ে ধেয়ে আসছিলো কার্ভাড ভ্যান তারপর আর কিছু খেয়াল নেই ।

নিলয়ের জ্ঞান ফিরেছে শুনতে পেয়ে নিলয়ের আব্বু আম্মু ভাই বোন সবাই হুড়ুমড়িয়ে কেবিনে ডুকলো ।
নিলয়ের আম্মু তো নিলয়কে ধরে কেদে দিলো বাবা তর কিছু হয়ে গেলে আজ আমরা কিভাবে থাকতাম । এই বলে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদতে শুরু করলো ।

নিলয়ঃ- মা মা, কেদো না এখন তো আমি সুস্থ?? আর বেশি কাদলে তুমি অসু্স্থ হয়ে যাবে.. নিলয়ের আম্মু অন্তীর দিকে তাকিয়ে বললো মেয়েটা আজ তিন চারদিন হলো কোথাও যায় নি কিচ্ছুটি খায় নি ।

অন্তীর এইবার ঘুম ভাঙ্গলো, ঘুম ভেঙ্গে দেখে সে নিলয়ের বুকে শুয়ে আছে । সে নিজেও তা খেয়াল করিনি, হুড়মুড়িয়ে উঠে গেলো সে । আর উঠে দেখে তাজ্জব কেবিনে সবাই তার পাশে দাড়িয়ে আছে আর মুচকি মুচকি হাসছে । অন্তীর এইরকম অবস্থা দেখে নিলয় সবাইকে বের হতে বললো, সবাই চলে গেলো

আবির যাওয়া র‌ আগে নিলয়ের কানে কানে বললো বেস্টআফ লাক মামা । নিলয় রাগাণ্তিত ভাবে আবির দিকে তাকালো ।

সবাই চলে যাওয়ার পর অন্তী চুপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে ।

নিলয় এইবার বলা শুরু করলো, হুম যে মেয়েটি সারা রাত আমার বুকে শুয়ে ছিলো আর এখন ঢং করা হচ্ছে ।
অন্তী কুওা বলে নিলয়ের বুকে কিল ঘুষি মারা শুরু করলো
নিলয়ঃ- আরে আস্তে আস্তে ব্যাথা পাবো তো
অন্তী:- পেলে পাবা হুম… এখন ওই ডাইনিটার কাছে আবার গেলে মেরে ফেলবো.

নিলয়ঃ- কি এতো সাহস, কোথার থেকে এলো মেম হুম..
নিলয় দুষ্টামি স্বরে বললো যাবো.. ( আস্তে বললো).
অন্তীঃ- কি বললা তুমি এইবার সে নিলয়ের গলা ধরলো আবার বলল কি বললি আবার বলল ।
নিলয়ঃ- আচ্ছা বাবা বলবো না ।
অনেকক্ষণ তাদের দুজনের খুনসুটি চলতে লাগলো ।
এরপর ডাক্তার তাদের কেবিনে ডুকলো অন্তী ডাক্তারকে দেখে সরে দাড়ালো । আচ্ছা ওনার গার্জিয়ান কোথায়
অন্তী নিলয়ের বাবা মা কে ডেকে আনলো…
ডাক্তারঃ- এখন ওনি মোটামোটি সুস্থ মাথায় ব্যান্ডেজটা দুই তিন পর এসে খুলে দিবো । আর তাকে আপনারা বাসায় নিয়ে যেতে পারেন.

নিলয়ের আব্বুঃ- থ্যাকুইউ ডাক্তার আচ্ছা ওর বিলটা কত হলো আমরা পে করে তাকে নিয়ে যাচ্ছি ।
ডাক্তারঃ- তার কেনো দরকার নেই হারুন সাহেব ( অন্তীর বাবা) দিয়ে দিছে
নিলয়ের আব্বু:- তার কি দরকার হারুন সাহেব আপনারা আমার ছেলের জন্য যা করছেন তার জন্য আমরা অনেক ঋণী হয়ে আছি । সময় পেলে আমাদের বাসায় আসবেন দাওয়াত রইলো । আর অন্তী মা তুমি অনেক ক্লান্ত যাও বাসায় চলে যাও তুমার বাবার সাথে ।

অন্তী প্রথমে যেতে চায়ছে না নিলয়ের দিকে তাকালো নিলয় তাকে চলে যেতে বললো, অন্তী রাগ করে রুম থেকে বের হয় গেলো পিছু পিছু হারুন সাহেব ও‌ তার বউ চলে আসলো ।

_ নিলয়কে কাছে পেয়ে তার ছোট দুই ভাই বোন দুষ্টামি আর খুনসুটিতে মেতে উঠলো ।

নিলয়ের আম্মুঃ- আরে কি করছিস, তর ভাই ব্যাথা পাবে তো.
নিপাঃ- কিছু হবে না ভাইয়াকে আর কোথাও যেতে দিবো না.

তাদের ভাই বোনের খুনসুটি দেখে নিলয়ের বাবা মা হে হে করে হেসে উঠলো । অনেক দিন পর তারা একসাথে হলো..

এইদিকে অন্তী বাসায় গিয়ে নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো । হারুন সাহেব মেয়ের এমন আচারণ দেখে থতমত হয়ে গেলো ।

অনেকক্ষণ নিরা দাড়িয়ে রয়েছে হদয়ের আসার কেনো খোজ নেই…..

( পরের পার্টে নিরার পরিণিতি দেখানো হবে. আর কেমন হলো জানাবেন রহস্য আরো বাকি রয়েছে.) আর লেখা কেনো ভুল হলো দুঃখিত .
পরের পার্টের জন্য অপেক্ষা করুন ধন্যবাদ
( অন্তীত রহস্য কিছুটা খুলে দিলাম..) গল্পটা যেহেতু শেয পর্যায়ে চলে এসেছে তাই আস্তে আস্তে রহস্য খুলে দিচ্ছি.

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here