#গল্পের_নাম_তোমাকে_চাই
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ৩
সেন্টারে পৌছে অধরা গাড়ি থেকে সবার আগে নেমে পরলো অধরাকে নামতে দেখে রক্তিম বললো,
~যেখানে দাঁড়িয়ে আছিস সেখানেই থাকবি।আমি গাড়ি পার্ক করে আসছি।
অধরা বললো,
~সবাই ভিতরে আমি এখানে কী করবো?
পৃথুলা বললো,
~হ্যাঁ রক্তিম। অধরা চলে যাক আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করছি।
রক্তিম এবার ধমক দিয়ে বললো,
~পৃথুলা তুই আমার চোখের সামনে থেকে চলে যা আমার মুখ থেকে এমন ভয়াবহ কিছু বের হয়ে যাবে।যেটা তোর জন্য অনেক অপমানজনক হবে
পৃথুলা একবার অধরার দিকে তাকিয়ে রাগে ফুসতে ফুসতে চলে গেলো ভিতরে।অধরার দিকে গরম চোখে তাকালো রক্তিম অধরা চুপ হয়ে সেখানেই দাড়িয়ে রইলো।কিছুক্ষণ পর রক্তিম গাড়ি পার্ক করে অধরার কাছে চলে আসে অধরা রক্তিমকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে থাকে হালকা মেরুন রঙ্গের পাঞ্জাবি পরেছে রক্তিম হাতে কালো ঘড়ি চুলগুলো সুন্দর করে সেট করা আছে।রক্তিম অধরার এহেন চাহনি দেখে বললো,
~এখানেই দাড়িয়ে থাকবি নাকি ভিতরেও যাবি।
অধরা চোখ সরিয়ে নিয়ে বললো,
~হুম আপনিই তো দাড়িয়ে থাকতে বলেছেন।
রক্তিম কথা না বাড়িয়ে হাঁটা ধরলো অধরাও তার পিছে পিছে হাঁটা ধরলো।সেন্টারের ভিতরে ডুকতেই রক্তিমকে তার ফ্রেন্ড সার্কেল ঘিরে ধরলো অধরা তাদের থেকে সরে আসলো একবার রক্তিমের হাসি-মাখা মুখের দিকে তাকিয়ে সেখান থেকে চলে আসলো।অধরা মনে মনে বললো,
~মানুষটা বড্ড ফেমাস এমন মানুষের আশেপাশে থাকলে নিজেকে খুকি মনে হয়।
অধরার ভাবনার মাঝে শাওন এসে বললো,
~কীরে দেখেছিস আমার ভাইয়ের দাপট একদম বাঘ তার আগমনে সবাই কেমন করছে।
অধরা বললো,
~শুনো শাওন ভাইয়া সে সবার সাহায্য করে এলাকার প্রতিটা মানুষ তাকে ভালোবাসে তাই তার এতোটা চাহিদা।
শাওন বললো,
~কতো মেয়ে যে পাগল ভাইয়ের জন্য হিসেব নেই।
অধরা মুচকও হেসে বললো,
~কোটিপতির মেয়ে আছে নাকি লাইনে থাকলে বিয়ে করিয়ে দেও দেখবে বড়চাচি তোমায় মাথায় নিয়ে নাচবে।
বলেই অধরা ইরার কাছে চলে গেলো এতটুকু কথা বলতে অধরার অনেক কষ্ট হয়েছে কিন্তু সে এই কষ্টকে নিজের মনে ঘর বানাতে দিবে না।”বামুন হয়ে সে চাঁদের আশা করে না” অধরা ইরার পাশে এসে দাড়ালো।শাওন একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রক্তিমের কাছে চলে গেলো তার মনটা একটু হলেও খারাপ হয়ে গেছে।
রক্তিম সবার সাথে কথা বলছে বেশ শালীন ভাবে নিজের কাজ করছে বেশ বিচক্ষণতা দিয়ে।রক্তিমের বন্ধুরা তার কাছে এসে দাড়ালো বলতে গেলে রক্তিমের নিজের এক গ্যাং রয়েছে সেই স্কুল লাইফ থেকে তারা সবাই একসাথে।তাদের মধ্যে থেকে শওকত রক্তিমের অনেক কাছের শওকত রক্তিমের পিঠ চাপরে বললো,
~তা বোনের বিয়ে দেখে আমাদের ভুলে গেলি?
রক্তিম বললো,
~তোদের সাথে বসে থাকলে আমার কাজও বসে থাকবে।
মাহাদী বললো,
~দোস্ত গায়ে হলুদ তো সেই ছিল আর বিয়ের অনুষ্ঠান তো আরো বেশি জোস।
ফারাবী বললো,
~তোর কাছে তো সবই জোস।এই রক্তিম শোন আমি কিন্তু ডবল খাবো
রক্তিম বললো,
~খাদক কোথাকার আচ্ছা তোরা enjoy কর আমি আসছি।
শওকত বললো,
~চল আমিও যাবো তোর সাথে।
শওকত আর রক্তিম খাবার অ্যারেঞ্জমেন্ট দেখছে শওকত বললো,
~অধরা তোর দেওয়া ড্রেসটা পরেনি কেন?
রক্তিম বললো,
~আমার ড্রেস থেকেও দামী ড্রেস সে পরে আছে।চাচা তাকে ওই ড্রেসটা দিয়েছে।
শওকত বললো,
~রক্তিম কোনোকিছু নিয়ে এতো দেরি করা ভালো না।পরে কিন্তু অবস্থা খারাপ হবে।
রক্তিম বললো,
~এই রক্তিম হোসেন কোনো কাজ অসম্পূর্ণ রাখেনা।
______________♥__________________
শাওন এক কোণায় দাড়িয়ে তার মা ইলিনা চৌধুরীর অহংকার দেখছে এলাকার মানুষদের কাছে নিজ গহনার প্রশংসা করতে করতে অস্থির সে।শাওন ইলিনা চৌধুরীর কাছে গিয়ে বললো,
~মা, চলো আমার সাথে কয়েকটা ছবি তুলো।
ইলিনা চৌধুরী খুশিতে খুশিতে গদগদ হয়ে বললেন,
~বাবা তুই আমার সাথে ছবি তুলবি লক্ষ্মী বাবা আমার।
শাওন বললো,
~তা তো তুলতেই সব গহনার হিসাব আমি রাখতে চাই যাতে আমার বউয়ের বেলায় কোনো গহনার কমতি যাতে না হয়।
শাওনের কথা শুনে ইলিনা চৌধুরীর হাসি মাখা মুখ চুপসে গেলো সে বললো,
~আমার গহনা তোর বউকে দিতে যাবো কেন?তুই দিবি তোর বউকে।
শাওন বললো,
~তাহলে এসব গহনা কী করবে বুড়ো বয়সে পরে ঘুরবে?
ইলিনা চৌধুরী বললো,
~যাহ তো এখান থেকে তোর কথা শুনে আবার মুড নষ্ট করতে চাই না।
শাওন বললো,
~ওকে তুমি থাকো তোমার মুড নিয়ে।
শাওন উল্টোপথে হাঁটা ধরলো প্রিয়া স্টেজে নানান ধরনের ছবি তুলতে ব্যস্ত ইরাও রয়েছে তার সাথে পৃথুলা একা দাড়িয়ে নিজ ইচ্ছা মতো ছবি তুলছে
অধরাকে প্রিয়া ডেকে নিয়ে নিজের সাথে দাড় করিয়ে ছবি তুলতে লাগলো তখনই শাওন এসে বললো,
~বরযাত্রা এসে পরেছে।ইরা, অধরা তাড়াতাড়ি নিচে চল।
বাহিরে আতঁশবাজির আওয়াজ আসছে ইরা আর অধরা নিচে নেমে গেইট ধরে দাড়িয়ে আছে আজ কোনো মতেই তারা ছাড় দিবেনা।রক্তিম আর শাওন তাদের আশেপাশেই আছে যদি কোনো সমস্যা হয় তারা সামলিয়ে নিবে।রক্তিম অধরার কাছাকাছি দাড়িয়ে আছে রায়হান গাড়ি থেকে নামতেই সবাই হৈ-হুল্লোড়ে মেতে উঠলো রায়হান ইর আর অধরার সামনে এসে দাড়ালো সাথে আছে রাহাত আর তার বন্ধুরা।রায়হান বললো,
~শালী সাহেবা কী চাই আপনাদের?বউ যে আমার অপেক্ষা করছে।
অধরা বললো,
~ওগো দুলাভাই বউয়ের কাছে তো যেতে পারবেন না। যদি শালী সাহেবাদের হাতে দেন ১০,০০০ টাকা তবেই খুলবে বউয়ের কাছে যাওয়ার দুয়ার।
রাহাত বললো,
~আরে ভাইয়া রে তোর শালীরা জোস কবিতা বলতে পারে।
অধরা রাহাত কে ইগনোর করে বললো,
~দিবেন তো শালীদের হাতে নগদ টাকা।
রায়হান বললো,
~না দিয়ে কী উপায় আছে আমার?
ইরা বললো,
~আহারে বেচারা পায়না যে বউয়ের দেখা।
সবাই হো হো করে হেসে উঠলো রায়হান পকেট থেকে টাকা বের করে অধরার হাতে দিয়ে দিলো অতঃপর রায়হান ভিতরে ঢোকার সুযোগ পেলে।অধরা হাতের জিনিস টেবিলে রেখে যেই না চলে আসতে নিবে তখনই রাহাত এসে বললো,
~অধরা আজও তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে তা রূপের রহস্য কী?
অধরা বললো,
~২ গ্লাস করোল্লার জুস প্রতিদিন আপনার এই বোরিং চেহারা একদম সুন্দর হয়ে যাবে।
অধরা এতটুকু বলে সেখান থেকে চলে আসে রাহাত সেখানেই দাড়িয়ে নিজ অপমানের জন্য ফুসছে।
রক্তিম অধরাকে এতো রাগী মুডে দেখে তার কাছে চলে আসে অধরা রক্তিমকে দেখে নিজেকে সামলে নিলো।রাহাতের কথা শুনে আর তার ব্যবহারে রাগ হচ্ছে প্রচুর রক্তিম অধরার পাশে দাড়িয়ে বললো,
~কী হয়েছে?
অধরা বললো,
~না কিছু না।
রক্তিম বললো,
~একদম মিথ্যা বলবিনা রাহাত কিছু করেছে?
অধরা অবাক চোখে রক্তিমের দিকে তাকালো রক্তিম বললো,
~কি করেছে?
অধরা জানে রক্তিম জানলে এখানে অনেক খারাপ কিছু হয়ে যাবে তাই অধরা বললো,
~কিছু না আপনি শুধু শুধু এসব ভেবে মাথা নষ্ট করবেন না।
অধরা নিজ কথা শেষ করে সেখান থেকে চলে গেলো রক্তিম নাক ফুলিয়ে ফোন বের করে শওকত কে ফোন করে বললো,
~রাহাত ছেলেটার উপর নজর রাখবি।
বলেই সে খট করে ফোন রেখে মেহমানদের কাছে চলে যায়।
________________♥____________________
প্রিয়া আর রায়হানের বিয়ের কার্যক্রম শুরু হলো কাজী বিয়ে পড়ানো শুরু করলো প্রিয়াকে কবুল বলতে বলা হয় সে কিছুক্ষন সময় নিয়ে কবুল বলে দেয়।রায়হানের কাছে গিয়ে তাকে কবুল বলতে বললে সে দ্রুত কবুল বলে দেয়।সবাই তাদের মন ভরে দোয়া করে দেয় যাতে তাদের বিবাহিত জীবন সুখের হোক।বিয়ের সব কাজ শেষ হওয়ার পর সবাই খেতে বসলো অধরা, ইরা অতিথি আপ্যায়ন করতে ব্যস্ত।হঠাৎ রাহাত অধরাকে ডেকে তার টেবিলের সামনে নিয়ে আসে আর বললো,
~অধরা,তুমি যদি আমার প্লেটে খাবার পরিবেশন করতে তাহলে আমার জীবন ধন্য হয়ে যেতো।
অধরা না চাইতেও রাহাতের প্লেটে খাবার তুলে দিতে লাগলো রাহাত অধরার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসছে হঠাৎ সে অধরার হাত ধরে ফেলে অধরা বড় বড় চোখে রাহাতের দিকে তাকাতেই সে হাত ছেড়ে দুষ্ট হেসে বললো,
~ভুলে হাত লেগে গেছে।
অধরা সেখান থেকে দ্রুত পায়ে হেঁটে ইরার কাছে চলে যায়।সবাই ব্যস্ত থাকার কারণে এ ঘটনা কারো চোখে পরেনি কিন্তু একজনের চোখ এসব এড়ায়নি ব্যক্তির চোখ লালবর্ণ ধারন করেছে রাগে তার সমস্ত শরীর কাঁপছে তবুও নিজেকে ঠান্ডা রাখছে।সেই ব্যক্তিটি আর কেউ না রক্তিম সে রাগ কন্ট্রোল করার জন্য হাতে থাকা গ্লাসটা ফ্লোরে আছাড় মেরে ফেলে দেয় চেচামেচিতে কেউই খেয়াল করেনি। শওকত এসে রক্তিমকে সেখান থেকে নিয়ে চলে আসে সেন্টারের বাহিরে খালি জায়গা টায় নিয়ে যায় রক্তিমকে।রক্তিম বললো,
~শওকত,আমি ওকে জানে মেরে ফেলবো কতো বড় সাহস আমি ওকে ছাড়বো না।
শওকত রক্তিমের এ রূপ দেখে শুকনো ঢোক গিলে বললো,
~দোস্ত তুই শান্ত হ তোর বোনের বিয়ে সব নষ্ট হয়ে যাবে।
রক্তিম চোখ বন্ধ করে নিজের রাগকে সামলাতে লাগলো রক্তিম শওকতের কাঁধে হাত রেখে বললো,
~চল ভিতরে আমি ঠিক আছি।
শওকত বললো,
~ঠিক আছে মাথা ঠান্ডা রাখবি।
রক্তিমকে নিয়ে শওকত ভিতরে চলে আসলো সবাই ব্যস্ততার মধ্যে সময় পার করছে।
বিদায়ের সময় চলে আসলো প্রিয়া আইয়ুব হোসেন কে ধরে চোখের পানি ফেলছে। জোহোরা খাতুন মেয়ের জন্য কাঁদছে এতো আদরের মেয়ে আজ পরের ঘরে চলে যাচ্ছে।প্রিয়া অধরা আর ইরাকে ধরে অনেক কান্না করলো পৃথুলাও প্রিয়ার জন্য দুফোটা চোখের পানি ফেললো।সবার থেকে বিদায় নিয়ে প্রিয়া রক্তিমের হাত ধরে বললো,
~ভাইয়া রাগ সামলে রাখবে এতো রাগ ভালো না।
রক্তিম বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
~চেষ্টা করবো।
রক্তিম প্রিয়াকে রায়হানের হাতে তুলে দিলো প্রিয়া আর রায়হান গাড়িতে বসে পরলো। রক্তিম গাড়ির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো সব মেহমানদের বিদায় দিতে লাগলো রাহাত রক্তিমের দিকে হাত বাড়িয়ে বললো,
~Bye bro.কালকে দেখা হবে আমাদের বাসায়।
__________________♥___________________
রক্তিম রাহাতের হাতের দিকে তাকিয়ে একটা বাঁকা হাসি দিয়ে শক্ত করে তার হাতটা ধরে মুচরে দিলে যাতে করে রাহাত ব্যাথায় কুকড়ে উঠলো আর আহহ বলে আস্তে করে চিৎকার করে উঠলো।রক্তিম হাতটা ছেড়ে দিয়ে বললো,
~sorry bro.আসলে ভুলে এমনটা হয়ে গেছে।
রাহাত হাত ঝাড়া দিতে দিতে বলে,
~its okay.
বলেই সে গাড়িতে উঠে পরলো রক্তিম বাঁকা হেসে গাড়ির দিকে তাকিয়ে রইলো।সব কাজ শেষ করে সবাই বাসায় ফিরে আসলো সবাই বেশ ক্লান্ত তাই যে যার রুমে চলে গেলো অধরা রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই তার ফোনটা বেজে উঠলো অধরা ফোন হাতে নিয়ে দেখলো রক্তিম ফোন করেছে।অধরা একটু চিন্তায় পরে গেলো সে মনে মনে বললো,
~রক্তিম ভাইয়া আমাকে এখন কেন ফোন করছে?
আবারো ফোনটা বেজে উঠলো অধরা ফোন রিসিভ করতেই রক্তিম বলে উঠলো,
~ছাদে আয় তোর সাথে কথা আছে।
অধরা বললো,
~এত রাতে ছাদে আমি আসতে পারবো না।
রক্তিম শক্ত কন্ঠে বললো,
~আমি তোর রুমে চলে আসবো তখন যেটা হবে সেটা তুই সামলাবি।
অধরা হতভম্বের মতো চুপ করে রইলো রক্তিম আবার বললো,
~কী করবি তাড়াতাড়ি বল।
অধরা কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,
~আসছি আমি।
অধরার কথা শুনে রক্তিম ফোন কেটে দিলো অধরা ওড়ানাট মাথায় জড়িয়ে দরজা খুলে ছাদের উদ্দেশ্যে বের হয়ে পরলো।
অধরার মনটা ঢিপঢিপ করছে না জানি কী হয়?অধরা সিড়ি বেয়ে ছাদের দরজা ঠেলে ভিতরে চলে গেলো সামনে তাকিয়ে দেখলো রক্তিম
চলবে
(