তোমাকে চাই পর্ব -০২

#গল্পের_নাম_তোমাকে_চাই
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ২
অধরা পিছন ফিরে দেখতে পায় রাহাত দাড়িয়ে আছে মুখে তার বিশ্রী হাসি অধরা নিজেকে সামলে বললো,
~কেমন আছেন রাহাত?
রাহাত বাঁকা হেসে বললো,
~এতক্ষন খারাপ ছিলাম তোমাকে দেখে মনটা ভালে হয়ে গেছে।
রাহাতের কথা শুনে অধরার গা জ্বলে গেলো রাগে মাথা ব্যাথা শুরু হয়ে গেলো রাহাত এগিয়ে এসে অধরার কাছাকাছি দাড়িয়ে বললো,
~শাড়িতে তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে আমার জন্য রোজ শাড়ি পরবে।
রাহাতের কথা শেষ হতেই রক্তিম সেখানে উপস্থিত হলো রক্তিমকে দেখে রাহাত পিছিয়ে গেলো রক্তিম অধরার হাত শক্ত করে ধরে বললো,
~এখানে কী করছিস চাচী তোকে খুঁজছে যাহ এখনই নিচে।
অধরা আর এক মুর্হুত দেরি না করে সেখান থেকে নিচে নেমে যায় রাহাত অধরার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে রক্তিমের দিকে তাকিয়ে বললো,
~কেমন আছেন আপনি?
রক্তিম বললো,
~এতক্ষন ভালো ছিলাম তোমাকে দেখে মুডটা নষ্ট হয়ে গেছে।
এতটুকু বলে রক্তিম সেখান থেকে চলে আসে রাহাত রক্তিমের যাওয়ার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে থাকে।
অধরা নিচে নামতেই ইরা তাকে ধরে বলে,
~আপু আমরা সবাই মেহেদী লাগাবো একটুপরই হলুদের অনুষ্ঠান শেষ হয়ে যাবে।
অধরা বললো,
~তাহলে ফ্রেশ হয়ে সবাই হলরুমে একসাথে বসে মেহেদী লাগাবো।
ইরা বললো,
~ঠিক বলেছো।
অধরা আর ইরা নিজ নিজ রুমে চলে গেলো অধরা ফ্রেশ হয়ে সোজা মায়ের ঘরে আসতেই দেখতে পেলো তাহিদা ইসলাম নিজের পা মালিশ করছে।অধরা রুমের ভিতরে ডুকে মায়ের পা মালিশ করতে লাগলো তাহিদা ইসলাম মেয়ের কান্ডে অবাক হয়ে বললো,
~তুই এখানে কী করছিস?সবার সাথে মেহেদী লাগাতে বসে পর
অধরা বললো,
~পা ব্যাথা করছিল তো আমাকে কেন ডাকোনি?
তাহিদা ইসলাম বললেন,
~আমার ব্যাথা কমে গেছে তুই যা ইরা তোর জন্য অপেক্ষা করছে।
অধরা বললো,
~আমি যাবো কিন্তু পরে।
অধরা মায়ের পা মালিশ করে দিয়ে হাত ধুয়ে বাহিরে চলে আসলো সব মেয়েদের সাথে হলরুমে বসে মেহেদী লাগাতে শুরু করলো প্রিয়ার জন্য মেহেদী ডিজাইনার ১রাতের জন্য ডেকে আনা হয়েছে বউয়ের জন্য সব কিছু বেস্ট হতে হবে।প্রিয়া অধরার হাত ধরে বললো,
~তুই কিন্তু খালি হাতে থাকবিনা আমার মেহেদী দেওয়া শেষ হলে তুইও মেহেদী দিবি।
অধরা বললো,
~আমি তো নিজেরটা নিজেই দিতে পারবো।
প্রিয়া বললো,
~বেশি কথা বলবিনা বুঝেছিস।
তখনই পৃথুলা এসে হাজির হলো সে এসেই মেহেদী ডিজাইনারকে বলতে লাগলো,
~বউয়েরটা শেষ হলে আমাকে দিয়ে দিবেন টাকার টেনশন করবেন না।
প্রিয়া বললো,
~আপু, তুমি টাকার কথা বলছো কেন?যার যার ওনার কাছ থেকে মেহেদী দিতে মন চাইবে সে দিতে পারবে।
পৃথুলা বললো,
~প্রিয়া চুপচাপ মেহেদী দাও এতো কথা বলো না তো আর অধরা এক কাপ চা নিয়ে আসো মাথাটা ধরেছে।
অধরা চা আনার জন্য উঠে দাড়াতেই ইরা তার কানে বিড়বিড় করে বললো,
~চিনির বদলে লবণ দিবে চা তে তাহলে বুঝবে কতো মজা লাগে।
অধরা বললো,
~এসব কী বলছো চুপ থাক।
বলেই সে চলে আসলো রান্নাঘরে চা নিয়ে পৃথুলাকে দিয়ে সে বসে পরলো তখনই রক্তিম এসে বললো,

______________♥________________

~অধরা,আমার খাবারটা নিয়ে রুমে আয় তো খিদে পেয়েছে খাওয়ার সময়ই পায়নি।
পৃথুলা চায়ের কাপটা রেখে তড়িঘড়ি করে উঠে দাড়িয়ে বললো,
~আমি নিয়ে আসছি তুমি ফ্রেশ হয়ে আসো।
রক্তিম ভ্রুকুচকে বললো,
~তোমার নাম অধরা?
পৃথুলা বললো,
~নাহ।
রক্তিম বললো,
~তাহলে তুমি কেন নিয়ে আসবে?আমি যাকে বলেছি সে নিয়ে আসবে দেখ পৃথুলা আমার মাথা এভাবেই গরম তোমাকে কোনো কিছু বলতে চাই না।
প্রিয়া বললো,
~ভাইয়া তুমি ঠান্ডা হও এই অধরা যা খাবার নিয়ে ভাইয়ের রুমে দিয়ে আয়।
রক্তিম রেগে বললো,
~তা শুনবে কেন মানুষের কথা শুনে থম মেরে বসে আছে stupid কোথাকার।
অধরা সাথে সাথে দাড়িয়ে পরলো আবার ছুটলো রান্নাঘরে খাবার নিয়ে ছুটলো রক্তিমের ঘরে।রক্তিমের ঘরে প্রবেশ করতেই অধরা ওয়াশরুম থেকে পানি পড়ার আওয়াজ শুনতে পায়।অধরা খাবার আর পানি টেবিলের উপরে রেখে রুম থেকে বাহিরে আসতে নিবে
তখনই রক্তিম ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে বললো
~আমার কার্বাডটা খুলে দ্যাখ একটা প্যাকেট আছে সেটা নিয়ে তোর রুমে চলে যাবি।আর হাতের অবস্থা কেমন?
অধরা পিছন ফিরে দেখলো রক্তিমকে মুখ বেয়ে পানির বিন্দু ঝড়ছে চুলগুলো ভিজে গেছে।রক্তিম সামনের চুল গুলো পিছনে ঠেলে দিয়ে বললো,
~কীরে কিছু বলছিস না কেন?
অধরা বললো,
~হাত ঠিক আছে।
রক্তিম বললো,
~মেহেদী একহাতে দিবি ওই হাতে দিলে ব্যাথা বাড়বে।
অধরা বললো,
~হুম জানি।
রক্তিম বললো,
~কার্বাড খুলে প্যাকেটটা নিয়ে যা।
অধরা ধীর পায়ে কার্বাডের সামনে গিয়ে তা খুলে দেখলো একটা শপিং ব্যাগ রাখা আছে।সেটা নিয়ে অধরা কার্বাড বন্ধ করে দিলো রক্তিমের দিকে তাকাতেই রক্তিম বললো,
~কালকে বিয়েতে এটাই পড়বি কোনো বাহানা শুনছিনা।
অধরা মাথা দুলিয়ে শপিং ব্যাগটা নিয়ে রুম থেকে চলে গেলো রক্তিম খাবারের প্লেট টা নিয়ে খাওয়া শুরু করলো তার ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি লেগে আছে।
সকাল থেকেই বিয়ের তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে অধরা নিজের রুমে বসে রক্তিমের দেওয়া গাউনটা খুলে দেখলো কালো রঙ্গের গাউনটা বেশ লাগছে অধরার কাছে।সবাই বিয়ের জন্য শপিং করতে পারলেও অধরা ইচ্ছা করেই করেনি এতো টাকা খরচ করে কোনো লাভ নেই।আর বাবার উপরে এতোটা চাপ সে সৃষ্টি করতে চায় না ভাবনার মাঝেই দরজা ঠেলে ঘরে ডুকলো তৈয়ব হোসেন। বাবাকে দেখে অধরা বললো,
~বাবা তুমি এখানে?
তৈয়ব হোসেন হাতে থাকা শপিং ব্যাগটা এগিয়ে দিয়ে বললো,
~তোর জন্য একটা জামা এনেছি দেখতো পছন্দ হয় নাকি?
অধরা শপিং ব্যাগ টা হাতে নিলো তৈয়ব হোসেনের চোখ পরলো কালো গাউনটার দিকে সে বললো,
~এই গাউন কবে কিনেছিস?
অধরা শপিং ব্যাগ থেকে নীল রঙ্গের একটা নরমাল ড্রেস বের করে নিজ গায়ে দিয়ে বললো,
~রক্তিম ভাইয়া দিয়েছে বিয়েতে পরার জন্য।
তৈয়ব হোসেন বললেন,
~তাহলে এটাই পর তুই আমার দেওয়া জামাটা নরমাল হয়ে যায়।
অধরা বললো,
~তোমার দেওয়া এই জামাটা আমার জন্য লাখ টাকার জামার থেকেও বেশি।
তৈয়ব হোসেন বললো,
~তাও ইরা তো অনেক ভালো জামা পরবে আর তুই
অধরা তৈয়ব হোসেনের কথা শেষ করতে দিলো না তার আগেই বললো,
~তো কী হয়েছে?তোমার অনেক কাজ আছে নিশ্চয়ই তুমি কাজে যাও।
তৈয়ব হোসেন হালকা হেসে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে চলে গেলেন।

_______________♥_______________

তৈয়ব হোসেন আর অধরার কথা এতক্ষণ পর্যন্ত কেউ আড়াল থেকে শুনছিল সেই ব্যক্তিটি মনে মনে বললো,
~আমার প্রিয়তমা যে সবার থেকে সেরা এটা আমি আগে থেকেই জানতাম।
অধরা প্রিয়ার রুমে বসে আছে প্রিয়া কাঁদতে কাঁদতে অস্থির হয়ে যাচ্ছে আজ সে নিজ বাসা থেকে বিদায় নিবে তাই।শাওন প্রিয়ার কান্না দেখে বললো,
~তাহলে তুই বিয়ে করিস না রায়হানকে সুন্দর একটা মেয়ে দেখে বিয়ে করিয়ে দিবো নে।
শাওনের কথা শুনে প্রিয়া কান্না বন্ধ করে বললো,
~শয়তান হারামি আমার সতীন আনতে চাও তুমি ভাইয়া আমার সাথে কথা বলবেনা।
রক্তিম প্রিয়ার পাশে বসে বললো,
~চেহারা অবস্থা খারাপ করে ফেলেছিস এখন তোকে রাক্ষসনীর মতো দেখা যাবে।
রক্তিমের কথায় প্রিয়া ভ্যা করে কেঁদে উঠলো তা দেখে শাওন বললো,
~ভাইয়া ছোট বাবু কাঁদছে ফিটার এনে দেও।
অধরা এবার কপট রাগ দেখিয়ে বললো,
~হয়েছে তো এখন আর প্রিয়া আপুকে জ্বালাতে আসবেন না।
শাওন মুখ বেকিয়ে বললো,
~ওরে আমার দরদ জননী এককেবারে পয়েন্টে লেগে গেছে।
ইরা বললো,
~আপু এইসব আজাইররা পাবলিকের কথা শুনতে হবে না তুমি রায়হান ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করো সে তোমার প্রশংসা করতে করতে হয়রান হয়ে যাবে।
রক্তিম বললো,
~কপালে দুঃখ না আনার জন্য অনেকেই মিথ্যা বলে রে বোন।
সবাই খুনশুটিতে ব্যস্ত তখনই সেখানে উপস্থিত হলো পৃথুলা তাকে দেখে চারজনই চুপ হয়ে গেলো।পৃথুলা বললো,
~রক্তিম তোমায় বড় মামা ডেকেছে।
রক্তিম শার্টের হাতা গুটাতে গুটাতে বললো,
~তোরা থাক আমি আসছি।
বলেই সে চলে গেলো পৃথুলা বিছানায় বসে বললো,
~শাওন, তুমি মেয়েদের ভিতরে কী করছো যাও কাজ করো।
শাওন বললো,
~জ্বী আপাজান অবশ্যই আপনার কথা আমি শুনতে বাধ্য নই।
বলেই সে বাহিরে চলে গেলো পৃথুলা বললো,
~ইরা মামীকে বলিস তার ছেলে বেয়াদব হয়ে গেছে।
ইরা বিরবির করে বললো,
~ফুপিকেও অনেক কিছু বলার ছিল তার মেয়েকে নিয়ে কিন্তু বলতে আমি নাহি পারি।
রক্তিম আইয়ুব হোসেনের সামনে দাড়িয়ে আছে সাথে আছে তার মেঝো চাচা তৌহিদ হোসেন আর ছোট চাচা তৈয়ব হোসেন।আইয়ুব হোসেন বললেন,
~এতিম খানায় খাবার পৌছাতে হবে রক্তিম সব ব্যবস্থা হয়ে থাকলে যত দ্রুত সম্ভব কাজটা শেষ করে দেও।
রক্তিম বললো,
~তা হয়ে গেছে বাবা। আমার একটু কাজ আছে বাহিরে যেতে হবে।
আইয়ুব হোসেন বললেন,
~দ্রুত ফেরার চেষ্টা করবে।
রক্তিম যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই তৈয়ব হোসেনের কথায় থমকে দাড়ালো সে বলছে,
~বড় ভাই আমি একটা বাসা ভাড়া নিয়েছি ভাবছি প্রিয়ার বিয়ের পর সেখানেই উঠবো।
তৌহিদ হোসেন তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে বললো,
~তাহলে ওই মহিলা তোকে এসব করতেও বাধ্য করলো আমি বলেছিলাম তোর বউ আমাদের থেকে তোকে আলাদা করে ছাড়বে।
তৈয়ব হোসেন শীতল কন্ঠে বললো,
~এমন কোনো কথা না ছোট ভাইজান আসলে অধরার কলেজটা সেই বাসা থেকে কাছে তাই যাতায়াতে কোনো সমস্যা হবে না।

________________♥________________

আইয়ুব হোসেন বললেন,
~এসব কথা এখন হবে না বিয়ের পর আর তৈয়ব প্রিয়ার বিয়ের অনেক কাজ আছে সেই কাজে মনোযোহ দেও।
তৈয়ব হোসেন বড় ভাইয়ের কথায় উঠে চলে গেলেন যে যার কাজে চলে গেলেও রক্তিম এখনো একই জায়গায় দাড়িয়ে আছে।
বিয়ের সব আয়োজন শেষ হয়ে গেছে সব মেয়ের প্রিয়ার সাথে পার্লারে চলে গেঋে অধরা শুধু যায়নি।অধরা রুমে বসে নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত তাহিদা ইসলামকে রেডি করিয়ে নিজে রেডি হচ্ছে।বাবার দেওয়া ড্রেস পরে সে আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুল ঠিক করছে তখনই রুমে প্রবেশ করলো পৃথুলা অধরা তাকে দেখে বললো,
~আপু,তুৃমি পার্লারে যাওনি?
পৃথুলা বললো,
~আজ তুই যা যা দিয়ে সাজবি তা দিয়েই আমি সাজবো।
পৃথুলার কোনো কথা অধরা বুঝলোনা সে অবাক নয়নে তাকিয়ে রইলো।পৃথুলা বললো,
~তাড়াতাড়ি রেডি হও রাত ৭টায় সেন্টারের উদ্দেশ্যে বের হতে হবে।
অধরা আর কিছু না নিজ কাজে ব্যস্ত হয়ে পরলো পৃথুলাও তার দেখাদেখি সব করছে।অধরা আর পৃথুলা রেডি হয়ে নিচে নেমে আসলো শাওন তাদের নিয়ে যাবে সেন্টারে তারা শাওনের অপেক্ষা করছে। সবাই অনেক আগে চলে গেছে তাদের লেইট হয়ে গেছে তখনই তাদের সামনে একটা গাড়ি এসে থামলো সেই গাড়ি দেখে পৃথুলা অনেক খুশি হয়ে গেলো।গাড়ির মালিক গাড়ি থেকে নেমে পরলো পৃথুলা সেই মানুষটাকে দেখে আরো বেশি খুশি হয়ে গেলো কারণ সেই মানুষটি আর কেউ নয় রক্তিম।পৃথুলা এগিয়ে এসে বললো,
~তুমি আমার জন্য অপেক্ষা করছিলে?
রক্তিম বিরক্তি নিয়ে বললো,
~অধরা গাড়িতে উঠে বস।
পৃথুলা বললো,
~আর আমি?
রক্তিম বললো,
~তুই যদি আমার সাথে যেতে চাস তাহলে চল।
পৃথুলা কিছু না বলে সামনে সীটে বসে পরলো অধরা পিছনে বসে পরলো।রক্তিম ড্রাইভিং সীটে বসে পরলো তার রাগটা মাথা চাড়া দিয়ে দাড়িয়েছে।নিজেকে সামলাতে পারছেনা রক্তিম লুকিং গ্লাস দিয়ে অধরাকে একবার দেখে বড় বড় নিশ্বাস ছেড়ে গাড়ি ড্রাইভ করতে শুরু করলো।অধরা বাহিরের দৃশ্য দেখতে ব্যস্ত আর পৃথুলা তার নতুন পরিকল্পনা করতে ব্যস্ত।

চলবে

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here