#তোমাতেই_ইতি
#আয়েশা
পর্ব-০১
বর্ষার মৌসুম চলছে।মুষলধারে বৃষ্টি তো আছেই সাথে দিনভর টুপটাপ করে বৃষ্টির ফোঁটা পড়তেই থাকে, একেবারে থামার নামই নেয় না।
কলেজ থেকে ফিরছি বাসার পাশেই রাস্তার মোড় দিয়ে গলির ভেতরে এসে ঘটলো অঘটন,,,
দ্রুত চারিপাশে তাকিয়ে উঠে দাড়ালাম।মোড়ের পরে যে গলি দিয়ে বাসায় আসা হয় সেখানে কোনও দোকান পাট নেই।ভাগ্য ভাল বৃষ্টি ছিল বলে বাইরে লোকজন ও ছিল না,সবাই বাসার ভেতরেই ছিল।তা নাহলে কেউ দেখে ফেললে ভয়ঙ্কর লজ্জার ব্যাপার হয়ে যেত।
সিঁড়ি বেয়ে যেই উপরে যাবো অমনি পূরণ ভাই শিষ বাজিয়ে নিচে নামছিল।আমি যতটা সম্ভব ওড়না দিয়ে জামার পেছন দিকটা ঢাকার চেষ্টা করলাম।পেছনের দিকের একটু খানিই ভিজেছিল শুধু,বাদ বাকি সব ঠিক আছে।
তাকে দেখে আমি দাঁড়িয়ে পড়লাম,যতক্ষন না উনি যাবে ততক্ষন দাঁড়িয়ে থাকবো।কিন্তু তিনি ঘুরে ঘুরে আমার দিকেই তাকাচ্ছে।
এমনিতেই সব সময় কোনও না কোনও ভাবে আমাকে পঁচাতে তিনি এক পা ও পেছোন না।তার উপর এখন এই অবস্থায় দেখলে না জানি কি ভুলভাল ভেবে বসে!
“এই তুই দাঁড়িয়ে আছিস কেন?
যা উপরে যা।
বলেছিনা এভাবে ঘুরে ঘুরে দেখবিনা।তোর লজ্জা নেই বলে কি আমারও থাকবেনা?”
যদিও রাগ এসে মাথা জ্যাম হয়ে আছে তবুও তখন চুপ রইলাম।
ওড়নাটা আরেকটু টেনে টুনে ঘুরে যেই উঠতে যাব।তখনি তার ডাক পড়ল-
“এই ইচ্ছে দাঁড়া!
তুই আবার আজকে হিশু করে দিস নিতো!
দেখ ছোট বেলায় মানুষের কোলে চড়ে চড়ে নিজের ইচ্ছেমত হিসু করেছিস ভাল কথা কিন্তু তাই বলে এত বড় হয়েও কেউ ইচ্ছে করে হিসু করে?
আমার না প্রচুর টেনশান হচ্ছে না জানি বিয়ের পর জামাইয়ের কোলে হিসু করে দিস কিনা!
না মানে তোর বরতো আর তোর মত আনরোমান্টিক হবেনা।বেচারার শখ জাগতে পারে তার বউকে একটু কোলে নিয়ে ঘুরার,দেখিস না যেমন ফিল্মে হিরো হিরোইনকে কোলে নেয় তেমন আর কি!
অথচ দেখা যাবে কি তুই তোর বরের কোলে উঠে হিসু করে দিবি!মানে ভাবতে পারছিস বেচারার কি বেহাল টাই না হবে?
রাগে ক্ষোভে চোখ দিয়ে আগুন ছাড়া আর মুখ দিয়ে কিছুই বেরোচ্ছিলো না।
অথচ মনে মনে এত বড় বড় ঝাড়ি দিতেও থামছিনা।আবার নিজের উপরও খুব রাগ হচ্ছে মনে মনে তাকে যেভাবে ঝাড়লাম মুখ দিয়ে কেন আসেনা এসব!
বাসায় ঢুকতেই আব্বু আদুরে গলায় বলল,
” এসেছিস মা!ভিজে যাস নিতো আবার?কত করে বললাম আজ যাস না,বাসায় বসে ওয়েদার টা উপভোগ কর কিন্তু শুনলি না।”
আচ্ছা যাই হোক ফ্রেশ হয়ে আয় তোর মা পেয়াজু ভাজছে বাপ বেটি মিলে জমিয়ে খাবো।
বাবার কথায় খুব জোরে দরজা লাগিয়ে রুমে গিয়ে একেবারে গোসল করে তবে বেরোলাম।
বাবা প্লেট হাতে আমার দিকে এগিয়ে দিলো।
আমি সরিয়ে দিয়ে বললাম,
-খাওয়া দাওয়া সব অফ।এবার থেকে আমার অনশন চলবে,যতক্ষন না উপর তলার ওই ভাড়াটিয়াদের বিদেয় না করবে ততক্ষন আমি পানিও খাবো না।প্রয়োজনে হরতাল অবরোধ ও চলবে।
আব্বু হা হয়ে কতক্ষন তাকিয়ে বলল,
ইচ্ছে!ওরা তোর ফুফুর ফ্যামিলি,ভাই হয়ে নিজের বোনকে আমি কিভাবে বের করে দিতে পারি!
আজ আবার কিছু করেছে কি পূরণ!
শুধু করেনি বরং করার উপরেও যদি কিছু থাকে সেটাও করেছে।
আরে ওসব কথা সে মজা করে বলে। তুই বুঝিস না কেন?
বাবা! তাই বলে কেউ ইচ্ছে করে ওসব করে তাও ওইটুকুন বয়সে!
সে এক করুণ কাহিনী সবে মাত্র তখন আমার এক বছর বয়স।আর পূরণ ভাইয়ের ৬ বছর।আমার জন্মদিন উপলক্ষে বাবা সবাইকে ইনভাইট করে।পূরণ ভাই সেদিন সিঙ্গাপুর থেকে তার বাবার নিয়ে আসা নতুন জিন্স প্যান্ট পরে আসে।আর আমাকে কোলে নিতেই নাকি তার কোলে আমি হিসু করে দিয়েছিলাম সেদিন তার যা কান্না,মায়ের কাছে শুনেছিলাম আর কি!
তারপর মা সেটাকে ধুয়ে দিয়েছিল বাবা সাথে সাথে নতুন প্যান্ট কিনে দিয়েছিল।না তবুও তার হবেনা,সব সময় কানের কাছে টেপ রেকর্ডার সেট করে রাখে।
“ইচ্ছে সেদিন তুই ইচ্ছে করেই আমার কোলে হিশু করেছিলি।তোর নাম ইচ্ছে রাখাটাই ভুল হয়েছে আরে নাম রেখেছে বলে যা ইচ্ছে তাই করে যাবি?
এক বছর বয়সে কেউ ইচ্ছে করে এমন করতে পারে?
একেতো বৃষ্টি মাথায় করে বাড়ি ফিরেছি তার উপর এসেই গোসল দিলাম এতেই সর্দি বাধিয়ে বসে আছি।দুপুরে না খেয়ে রাগের মাথায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছি,কিন্তু নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়ায় ঘুম আর বেশি টিকলো না।
ঘুম ভাঙতেই বাইরে গিয়ে দেখি ড্রয়িং রুমে পূরণ ভাই বাবার সাথে বসে আছে।
হাঁচি দিতে দিতে আমার দম ফুরিয়ে যাওয়া অবস্থা।যেই আবার ভেতরে যাব অমনি পূরণ ভাই ডাকল,
“ইচ্ছে!সর্দি হয়েছে নাকি? নাকের ডায়রিয়া বাধিয়ে বসে আছিস তাহলে।এমন তো হবেই, ইচ্ছে করে ছাতা না নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজলে সর্দি কি আর তোকে ছেড়ে দেবে নাকি!
বৃষ্টি কি আর তোর ইচ্ছেমত থামবে আর ঝরবে?যে এখন ইচ্ছেমতি যাচ্ছে তাই তার ইচ্ছে অনুযায়ী এখন বৃষ্টি পড়া বারণ।যেমনটা তোর প্রেমে পড়া বারণ!
দেখলে তো মামা মাত্রই তোমাকে বলছিলাম কেন যে এই নামটা রাখলে এখন তার অপব্যবহার করছে।যেমনটা করা হয় ক্ষমতার অপব্যবহার!
তেমনি ইচ্ছে নামটা রাখায় সে তার ইচ্ছের অপব্যবহার করছে।যা ইচ্ছে তাই করে যাচ্ছে।”
কত রাগ দেখাবো আর?একটা মানুষের রাগ হতে হতে দেখা যায় কি তখন সেটা গায়ে সয়ে যায়।
আমারও মনে হয় তাই হয়েছে কিন্তু মাঝে মধ্যে সেই গায়ের চামড়া বেদ করে যখন ভেতরে প্রবেশ করে যায় তখন আর টিকে থাকতে পারিনা।
আমি বুঝি না আমার বাবা কি করে এসব সহ্য করে।যেখানে অন্য কোনও ছেলে হলে বাবা গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে আসে সেখানে পূরণ ভাইয়ের বেলায় সব চুপ।
বিচার চাইতে চাইতে ও যখন পাই না তখন বিচার দিয়েও কি লাভ?
আমি চেঁচিয়ে উঠে বললাম,
” আর বলবোনা আমি,কিচ্ছু বলবোনা তোমাদের বাবা!যেখানে বিচারপতি, উকিল সব অপরাধীর পক্ষে সেখানে নির্দোষ ব্যক্তির বিচার চাওয়াটাও বোকামি।”
বলেই আমি রুমে ঢুকে পড়ি।
কত সহ্য করা যায়! যেখানে আমার বাবা মাও কিনা তার পক্ষ নেয়!
কি এমন সে?যদি ভাবতাম বড় কোনও মন্ত্রী সে,কিংবা জজ কোর্টের বিচার পতি,নাকি একজন বৈমানিক আর নাইবা একজন ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার কিছুই না!তাহলে কিসের এত দাম্ভিকতা তার!কেন সবাই তাকে সব কিছুতে সাপোর্ট করে যাবে!
চলবে