তোমাতেই ইতি,পর্ব-১৪

#তোমাতেই_ইতি
#আয়েশা
পর্ব-১৪

সেকেন্ড ফ্লোরে উঠেই দেখলো পুরো ঘর অন্ধকার।কোথাও একটু আলোর চিহ্নও নেই!ইচ্ছের ভয়ে বুকটা আঁতকে উঠলো একবার।কেন জানিনা মনে হলো কিছু করে ফেলেনি তো পূরণ ভাই?
কিন্তু কিছু করবেনই বা কেন?তিনি তো ইচ্ছে কে ভালোইবাসেন না!যা দেখিয়েছেন সব তো তার অভিনয় ছিল।

খানিকটা ভয় ভয় পায়ে ভেতরে ঢুকলো ইচ্ছে।এমনিতেই না খেয়ে গলাটা শুকিয়ে আছে তার উপর এখন ভয় আর বুকের ধুকপুকানির সাথে কলিজা কাঁপাকাঁপি, ইচ্ছে নিজেই কখন মারা যায় কে জানে?
কষ্ট দিয়ে মারছে যে হচ্ছে না লোকটার এখন আবার ভয় পাইয়ে ও মারছে।ফুফু আর ফুফা দুজনই ইচ্ছেদের বাসায়।তিনিও তো ছিলেন হুট করেই গায়েব হয়ে গেলেন!

পূরণ ভাইয়ের রুমে গিয়ে কাঁপাকাঁপা হাতে লাইটের সুইচ অন করলো কিন্তু রুম খালি!ইচ্ছে পুরো ঘরের লাইট এক এক করে জ্বালালো কিন্তু কোত্থাও নেই!ইচ্ছের এবার কান্না পাচ্ছে আবার।ভয়টা বেড়ে দ্বিগুণ! মনে হচ্ছে কোথাও খুব বড় একটা ভুল হচ্ছে কিন্তু কি সেটাই তো বুঝতে পারছে না?
ফোনটাও সাথে নিয়ে আসে নি যে কল করবে।পুরো শরীর এবার ঘামাতে লাগলো।গলা কান আর হাতের ফুলের সেট গুলো ছিড়ে খুলে ফেলল ইচ্ছে।তবুও ঘামাচ্ছে!

ফুফুর রুম খুজে মোবাইলটা হাতে নিয়ে পূরণ ভাইয়ের নাম্বারে ডায়াল করতেই ফোন বেজে উঠল, তাও পূরণ ভাইয়ের টেবিলের উপর ফোনটা পড়ে আছে।আশ্চর্য!কোথাও যাওয়ার হলে ফোনটা নিয়ে গেলো না কেন?ইচ্ছের ভয় বাড়ছে তো বাড়ছেই।এবার তো হাতের সাথে পা কাঁপাকাঁপিও শুরু।টেবিলের উপর থেকে মোবাইল টা হাতে নিয়ে লাস্ট কল লিস্ট চেক করলো।সেখানে সৌম নামের একটা নাম্বার।সৌম তো পূরণ ভাইয়ের ই ফ্রেন্ড।ইচ্ছে সেটাতে ডায়াল করতেই কিছুক্ষণ রিং হওয়ার পর রিসিভ হলো।

যেই ইচ্ছে কিছু বলতে যাবে তার আগেই ওপাশ থেকে আওয়াজ আসলো,

-পূরণ প্লিজ তোর দোহাই লাগে দোস্ত আমার বাসায় চলে আয়।ওখানে থেকে তুই মরে যাবি।কেন ওই মেয়েটার কথা শুনতে হবে?যে তোর কষ্টটাই বুঝলো না!
ইচ্ছের সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।ওপাশ থেকে আবার কান্না ভাব গলায় চেঁচালো।

পূরণ!এখন লাস্ট স্টেপে আছিস তুই।পুরোপুরি ট্রিটমেন্ট টাও নিস নি!কেও এত পাগলামো করে?

নিজের মৃত্যুর পরোয়া না করে কিনা একটা মেয়ের কথায় তার বিয়ের দায়িত্ব নেয় যাকে কিনা সে ভালোবাসে অথচ সে জানেই না সেটা?

ইচ্ছের হাত থেকে ফোনটা নিচে পড়ে গেল।কি শুনলো সে এসব? কই এত বছর এক সাথে থাকছে কিছুই তো জানে না সে।শুধু জানে পূরণ ভাইয়ের শ্বাস কষ্ট, বারো মাসে তেরোমাস অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকে।শ্বাস কষ্টের চিকিৎসা খুব একটা দুর্লভ না,তাই বলে মৃত্যু!

কিছু তো আছে আরও।ইচ্ছের পাগল পাগল লাগছে সব ফোনটা তুলে টেবিলে রাখতেই একটা ডায়েরী চোখে পড়ল।
নিশ্চয়ই এটাতে কিছু পাবে সে কারণ ডায়েরীতে মানু্ষ তাই লিখে যেটা কাউকে প্রকাশ করা যায় না।
ইচ্ছে কয়েকটা পাতা উল্টিয়ে পরের পাতায় গিয়ে থমকে দাড়ালো,

-একজন মৃত্যু পথযাত্রীর ইচ্ছে বলতে কিছু থাকে না!কিন্তু তুই যখন আমার লাইফে এলি কেন জানিনা বাঁচার ইচ্ছেটা আরও দ্বিগুণ পরিমাণে বেড়ে গেল।

তুই জানিস ইচ্ছেমতি!সেবার যখন তুই প্যান্টে হিসু করেছিলি,তার আগে থেকেই আমি রক্তশূন্যতায় ভুগছিলাম।যার কারণে শ্বাস কষ্ট আমার লেগেই থাকে।প্রতি ছয়মাস পরপর আমার শরীরে অন্যের রক্ত দিতে হয়।মনে কর অন্যের দয়ায় আমি বেঁচে আছি।সেখানে নিজের ইচ্ছেটা পূরণ করতে চাওয়া কতটা বোকামির তুই বুঝ একবার।

ছোটবেলা থেকেই ঔষুধ খেতে খেতে ত্যক্ত আমি।যখন খেতে চাইতাম না মা আমাকে তোর কথা শুনিয়ে শুনিয়ে খেতে বাধ্য করতো,
-বলতো ইচ্ছের বরের থেকে আমরা সব টাকা উশুল করে নেব।কত বড় সাহস আমার ছেলের প্যান্টে কিনা হিশু করে!ওই হিশুমতিকে আমরা শাস্তি দেব,ওর বরের সব টাকা আমরা নিয়ে নেব।সেই থেকে সব সময় এই একই প্রসেস চালু ছিল মা যখন দেখলো ওসব শুনলে আমি অনেকটা স্বাভাবিক থাকি তখনই নিজেদের ফ্ল্যাট ছেড়ে তোদের বাসায় চলে আসি।

এক পর্যায়ে আমি নিজেই জানতে পারি আমার জন্মের পর থেকেই আমি অসুস্থ আর সেই অসুখটা বেড়ে এবার মরণ অসুখে পরিণত হয়েছে।রক্তশূণ্যতা টা এবার ব্লাড ক্যান্সারে পরিণত হয়েছে।যেকোন সময় আমার মৃত্যু নিশ্চিত।কিন্তু আমি যে তখন বাঁচতে শিখে গিয়েছিলাম।কাউকে পাওয়ার তীব্র লোভ আমাকে বেঁচে থাকার জন্য মায়া জাগাতে লাগল।বড্ড দেরী করে চলে এসেছে মৃত্যু সংবাদ টা আরেকটু আগে আসলে কি হত!কাউকে ছাড়ার ভয় থাকতো না কাউকে পাবার লোভ জাগতো না।মারারই যখন ছিল মায়া বাড়ালো কেন?

এর পর থেকেই সব রকম দূরত্ব রাখার চেষ্টা করতাম।এত ভালবাসা থাকার পরেও তোর সাথে খারাপ বিহেভ করতাম।কেন জানিস?তুই তো তখন আমার অভ্যেসে পরিণত হয়ে গিয়েছিলি।তাই অনেক চেষ্টা করেও যখন দূরে থাকতে পারছিলাম না, সিদ্ধান্ত নিলাম তোকে রাগানোর জ্বালানোর আমার জন্য ঘৃনা জন্মানোর কিন্তু পাগলী একটা সেই তুই নিজেও কিনা এত কিছুর পরেও এই মরণ পথিককেই ভালবেসে ফেললি?

একজন প্রেমিকের কাছে এই খবরটা জানতে পারা হয়তো সবচাইতে খুশির খবর।কিন্তু আমার কাছে ছিল তীব্র যন্ত্রণার।না পারছি কিছু করতে আর নাইবা সইতে।না এগোতে না পিছু হটতে!শুধু বারবার প্রে করতাম আমার মত কষ্টটা যেন তোকে না ছুতে পারে ইচ্ছেমতি!
অথচ তোকে ছুয়েই ছাড়লো।মাঝে মাঝে ইচ্ছে হত সব বাধা ভেঙে তোকে আলিঙ্গন করে নেই কিন্তু মৃত্যুর বার্তা আবার সব মনে করিয়ে দেয়।সবাই জানে শুধু তুই জানিস না!যখন জানবি তখন হয়তো আর ঘৃনা করবি না কিন্তু প্লিজ ভালও বাসবি না!আমার যে হিংসে হবে খুব হিংসে হবে তোকে পাওয়ার।

ঝগড়া হলেই না খেয়ে থাকাটা তোর অভ্যেস,আর তোর না খাওয়া মানে আমারও না খাওয়া।মা পড়ল এক জ্বালায় তুই না খেলে জানে আমি খাবো না।তাই বাধ্য হয়ে তোকে খাওয়াতে যেত।তোকে খুব ভালবাসে মা জানিস?
আবার মাঝে মাঝে ঘৃনা ও করে।কেন তুই তার ছেলের বউ হবি না!
আমি দেখতাম আর হাসতাম।তুই শুনে রাগিস না আবার সেও তো মা!জানিস ই তো কষ্ট টা যে তারই বেশি।একজন বাবা বা মায়ের কাছে সবচাইতে কষ্টের খবর হল বেঁচে থাকতে সন্তানের মৃত্যু দেখা!

সেদিন যখন শাড়ি পড়ে এসেছিলি না,বিশ্বাস কর আমার হৃদপিন্ডের একেকটা স্পন্দন শুধু বলছিল মৃত্যু বলতে যে কিছু আছে সেটা মিথ্যে হয়ে যাক।পুরো পৃথিবী থমকে যাক শুধু তুই আর আমি থাকি!নিজেকে সব চাইতে হতভাগা আর অসহায় মনে হচ্ছিলো আরও কয়েকটা বছর আমাকে বাঁচতে দিক না!কি এমন ক্ষতি হত?
বাচ্চাদের মত সেদিন তোর কোলে মাথা রেখে কেঁদেছিলাম।

কিন্তু না মনে হল আমি ভুল করে ফেলছি।আমার সাথে সাথে আমি তোকেও মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছি।পৃথীবিতে সব চাইতে কষ্টের জিনিস কি জানিস,ভালবাসার মানুষটাকে কষ্ট পেতে দেখা।আমি চাই তুই ভালো থাক,সবচাইতে সুখে থাক।আমার ছোয়াটাও তোর জন্য বিষাক্ত।নিঃশ্বাস্টাও এমনকি ছায়াটাও!

এখন মৃত্যুর সব চাইতে শেষ ধাপে এসে পৌছেছি!হয়তো আর তিন দুই বা একদিন!তোর পাগলামো বাড়ছে দেখে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিলাম।যে আমি কিনা তোকে এক মুহুর্ত না দেখে দিশেহারা হয়ে যেতাম।কিন্তু উপায় ছিল না।তোর থেকে দূরত্ব টা যে বড্ড প্রয়োজন ছিল!একটা লাল টুকটুকে বধূ বেশে তোকে রোজ স্বপ্নে দেখতাম।পায়ে আলতা দিবি,একটা লাল শাড়ি পরবি। হাত পা গলায় কোনও প্রকার স্বর্নের গহনা থাকবে না শুধু ফুলের গহনা থাকবে। তুই হবি আমার ফুলবতি বউ!পুরো গায়ে জড়ানো থাকবে ফুল!তোকে কোলে নিয়ে আমি অনেকক্ষন ঘুরবো।এত ছোট একটা মিষ্টি বউ হবে আমার, তোকে রাগানোর জন্য বলবো,

-খবরদার হিশুবতি!আবার হিশু করে দিস না যেন?তুই তখন কি করবি লজ্জা পাবি?নাকি আমায় কয়েকটা লাগয়ে দিবি?

হাহাহা…কি সব নাম দিয়েছি তোর।দেখ তোর জন্য কিন্তু নিজের নামও চেঞ্জ করেছি।পূর্ণ এর সাথে কেমন শোভা পায়না।তাই নিজেকে পূরণ বানিয়ে দিলাম।

ইচ্ছে-পূরণ!

তখন মনে মনে ভাবতাম আমরা একে অপরের পরিপূরক হবো।তোর সকল ইচ্ছের পূরণ হব আমি।আর আমার সকল ইচ্ছের ইতিটা থামবে তোকে নিয়ে।তুই আমার ইচ্ছেমতি!

ইচ্ছের চারিপাশ স্তব্দ হতে লাগল।কান,গলা, নিঃশ্বাস সব যেন কাজ করা বন্ধ করে দিচ্ছে।দ্রুত স্বর্নাপুকে কল করল।সেকেন্ড ফ্লোরে আসতে বলল তায়েফ ভাইকে নিয়ে।ইচ্ছে তাদের কিচ্ছু বলেনি শুধু বলল,আজ বাকি রাতটা কেউ যেন আর ছাদে ভুলেও না আসে।সে জানে এই মুহুর্তে পূরণ ভাই ছাদেই আছে।স্বর্নাপুকে বলে শাড়িটা পরে নিল।লাল গোলাপের গাথা ফুলের সেটটা গলায় হাতে মাথায় কানে পরল।পায়ে লাল রঙা আলতা দিল।ইচ্ছের হাসি যেন থামছেই না।

স্বর্নাপু অবাক হচ্ছে কি হচ্ছে এসব!কিছুই বুঝতে পারছে না।একটু আগেই না মেয়েটা কতখানি রাগ নিয়ে না চাইতেও স্টেজে বসে ছিল।যেটা সবারই বুঝে নেওয়ার কথা, কারণ ইচ্ছের মুখের এক্সপ্রেশন টা এমনই ছিল!

হুট করে কি এমন হলো।সে এই অবস্থায় সেকেন্ড ফ্লোরে কেন এল।কালই তো তার বিয়ে,সজলের সাথে।কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবে কিন্তু ইচ্ছে থামিয়ে দিল।

-প্লিজ স্বর্নাপু এই শেষ ইচ্ছেটা রাখোনা একবার!কোনও প্রশ্ন না!শুধু কাউকে উপরে আসতে দিবে না।আর রুমেও কাউকে ঢুকতে দিবেনা।তুমি নিলু আর মিতু ছাড়া।কেউ ডাকলেই বলবে ইচ্ছে ঘুমোচ্ছে।আর তায়েফ ভাই যেন সিড়ি রুমের দরিজায় বাইরব থেকে তালা লাগিয়ে দেয়।সকাল হওয়া অবদি একদম খোলা নিষেধ।

ইচ্ছে যত দ্রুত পারল ছাদে গিয়ে উঠল।বেশি খুজতে হয়নি।ডান পাশের কোনায় গিয়ে বসে আছে পূরণ ভাই।ইচ্ছের কলিজাটা আবার মোচড়ে উঠলো।

কারও উপস্থিতি টের পেয়ে চোখ মুখ মুছে যেই তাকালো পূরণ ভাই অবাক হলো!

ইচ্ছে!তুই?

ইচ্ছের খুব কান্না পেল,কিন্তু নিজেকে শক্ত রাখার যথা সম্ভব চেষ্টা করলো।

কেন এমন করলে পূরণ ভাই?

ইচ্ছে,কাল তোর বিয়ে।কেউ দেখে ফেললে খারাপ ভাববে।বাসা ভর্তি গেস্ট।

ইচ্ছের এসব কথা কান দিয়েই ঢুকছে না।নিচে বসে পূরণ ভাইয়ের পা ছুয়ে একবার সালাম করে নিল।পূরণ ভাই কেঁপে উঠল,যা ইচ্ছে স্পষ্ট টের পেল।

কাঁপাকাঁপা গলায় বলল,
কি করছিস এসব?

কেন,কাল যদি বিয়েটা তোমার আর আমার হত তাহলে আমি কি রাতে সালাম করতাম না!

পূরণ ভাইয়ের ভেতরকার সব ভেঙে চুরে আসছে।বুকটা কেমন ঘষছে শুধু।ইচ্ছে দেখেই বুঝে ফেলল।

আমাকে কেমন দেখাচ্ছে পূরণ ভাই?একবার বলো না প্লিজ!

পূরণ তাকাতেই অবাক হল সে যেমনটা চেয়েছিল একদম সেভাবেই সেজেছে ইচ্ছে!কিন্তু কি করে!ইচ্ছেকি তবে সব জেনে গেছে?

ইচ্ছে হুট করে ঝাপটে জড়িয়ে ধরল এবার।পূরণ ভাই এখনও শক্ত হয়ে দাড়িয়ে আছে।কিন্তু নিঃশ্বাস নিতে কেমন কষ্ট হচ্ছে।
নিজেকে যতই শক্ত রাখার চেষ্টা করুক ইচ্ছেতো জেনে গেছে সব।কি হবে আর ঢং করে!

আমাকে একবার খুব শক্ত করে ধরোনা প্লিজ!একবার শুধু একবার ধরোনা!

পূরণ ভাই এবার হাউমাউ করে কেঁদে উঠে ইচ্ছেকে খুব শক্ত করে জড়ালো।কেন এমন হলো তাদের ভাগ্যটা?তাদের ফ্যামিলির সাপোর্ট থাকলেও ভাগ্যের সাপোর্ট নেই!একজনের টিকেট কেটে দিয়েছে যে!

ইচ্ছে দুহাতে পূরণ ভাইয়ের মুখ ধরে কপালে গালে আর ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ছোয়ালো।পূরণ ভাই নিজেও এবার ইচ্ছেকে আদরে আবিষ্ট করে জড়ালো।ইচ্ছে বায়না ধরলো তাকে একবার কোলে নিতে?

পূরণ ভাইয়ের আর বুঝতে বাকি নেই যে ইচ্ছে সব জেনে গেছে!পাগলামি করিস না রে ইচ্ছেমতি!
আল্লাহ তোকে আমার জন্য বানায়নি!

ইচ্ছে নিজেও এবার জোরে আওয়াজে কেঁদেদিল।আরও শক্ত করে গলা জড়িয়ে ধরতেই পূরণ ভাই কোলে উঠিয়ে নিল।

ইচ্ছে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে পূরণ ভাইয়ের দিকে।যদি আজ সত্যিই বিয়েটা পূরণ ভাইয়ের সাথে হত আর পূরণ ভাই এভাবে ইচ্ছেকে কোলে তুলে নিত ইচ্ছে লজ্জা পেয়ে পেয়ে মরেই যেত।কিন্তু আজ যে লজ্জা পাওয়ার কোনও সুযোগ ই নেই!আজ লজ্জা পাওয়া মানে আজীবনের জন্য একে অপরকে না দেখার অতৃপ্ত চাওয়া নিয়ে থাকা।

পূরণ ভাই মজা করে বলল,

-বাহ তুইতো বেশ ভারী হয়ে গেছিস!

ইচ্ছে এই মুহুর্তেও হেসে উঠে বলল,

এসব বলে লাভ নেই আমি নামবো না কোল থেকে।সে যতই ভারী হইনা কেন?

পূরণ ভাই ইচ্ছের কপালে নিজের কপাল ঠেকিয়ে রাখল কিছুক্ষণ এভাবেই চলল একে অপরের শব্দহীন নিরব কান্না।যার একেকটা আওয়াজ অশ্রুর ফোটার সাথে সাথে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।পূরণ ভাই সচকিত হল ইচ্ছের নিঃশ্বাসের টানের আওয়াজে গলা থেকে ইচ্ছের হাত দুটো কেমন ছেড়ে দিল।শরীরটাও আস্তে আস্তে কেমন নরম হয়ে আসছে বিধায় ইচ্ছেকে আরও ভারী মনে হচ্ছে।

পূরণ ভাই বসল ইচ্ছেকে নিয়ে।দুহাতে ইচ্ছের গালে থাপড়াতে লাগল।

-ইচ্ছে কথা বল!ইচ্ছে!এই ইচ্ছে?

কেন এমন ভয় দেখাচ্ছিস ইচ্ছেমতি?উঠনা প্লিজ!কথা বল।ইচ্ছে একবার ফুফিয়ে উঠে বলল,

-আমার তোমাতেই শুরু পূরণ ভাই আর তোমাতেই যে ইতি!

পূরণ ভাইয়ের গোটা দুনিয়া থমকে গেল মুহুর্তেই।কি করলো ইচ্ছে এটা?গলা ফাঁটিয়ে কান্না করছে কিন্তু আওয়াজ আসছে না কেন?
তার নিজের নিঃশ্বাস্টাও বন্ধ হয়ে আসছে কেমন।ইচ্ছেকে কোলে উঠাতে চাইলো কিন্তু পারছে না?শরীরের সব শক্তি যেন ফুরিয়ে আসছে।

দরজায় অনেকক্ষণ যাবত কড়া নাড়ছে কিন্তু বাইরে থেকে বন্ধ!খুব জোরে চেচিয়ে চেচিয়ে তায়েফ ভাই স্বর্নাপু বাকিদের নাম ধরে ডাকছে। লাউড মিউজিকের জন্য কারও কানেও পৌছাচ্ছে না বোধহয়।পূরণ ভাই পাগলের মত নিজের চুল ধরে টানতে লাগল।বুকে হাত ঘষতে লাগল।একবার ইচ্ছের কাছে যাচ্ছে তো আরেকবার দরজায় কড়া নাড়ছে।ছাদের কার্নিষে গিয়ে গিয়েও চেচাচ্ছে!কারও কানে আওয়াজ যাচ্ছে না!এতটা অসহায় নিজের মৃত্যুর খবর শুনেও লাগেনি যতটা এখন লাগছে।

জোড় হাতে প্রার্থনা করে যাচ্ছে।অন্তত এই ইচ্ছেটা পূরণ করো না আল্লাহ।
আমার মৃত্যু নিয়ে কোনও আফসোস নেই ওকে তো বাঁচিয়ে দাও!

কেমন পাষবিক কষ্ট দিচ্ছো তুমি?নিজের মৃত্যুকে তো হাসি মুখে মেনে নিয়েছিলাম,তাহলে এটা কেন করলে?আমার যে অনেক অভিযোগ তোমার কাছে!

পূরণ নিজেও এবার ছাদে লুটিয়ে পড়ল।ইচ্ছের থেকে খানিকটা দূরেই চেয়েও এগোতে পারছেনা।তবুও মিছে একবার ছোঁয়ার আশায় হাত বাড়িয়ে আছে ইচ্ছের পাণে।আর ক’টা মিনিট!সেটাও দিলো না আল্লাহ!আর কিছু সময় যদি হাতে পেতো হয়তো ইচ্ছেকে বাঁচানো যেত।কিন্তু তিনিই তো চান না!যিনি জন্ম মৃত্যুর মালিক, ইচ্ছে নেই আর!ভাবতেই ভেতর ফেঁটে আসছে।কিন্তু জমদূত হয়তো গলা অবদি এসে গেছে তাই আর বুঝি আওয়াজ বেরোচ্ছে না?আস্তে আস্তে তার চোখ ও ঝাপসা হতে লাগল এই যে ইচ্ছে কে এত কাছে থেকেও কেমন অস্পষ্ট দেখাচ্ছে।

সমাপ্ত।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here