তোমাতেই ইতি,পর্ব-৬+৭

#তোমাতেই_ইতি
#আয়েশা
পর্ব-০৬

বাসায় ফিরতে না ফিরতেই দরজায় ঠাস ঠুস আওয়াজে ঘরে ঢুকল ইচ্ছে।বসার ঘর থেকে বাবা সব খেয়াল করছেন।আজ নিশ্চয়ই আবার লেগে এসেছে দুটোতে।ইচ্ছে না হয় ছেলে মানুষ কিন্তু পূরণ! তাকেই বা কি বলবেন তিনি?
হাত পা সব বাধা।চাইলেও ইচ্ছে করে না একটু গলা উচু করে কথা বলুক পূরণের সাথে।বাকি সব দিক থেকে কারও এক বিন্দু কথা শোনার মত কাজও পূরণ করেনা।অত্যন্ত লক্ষীমন্ত একটা ছেলে,কতটা স্ট্রং সেটা তার জীবন সম্পর্কে বিস্তারিত না জানলে কেউ বুঝতেও পারবেনা।

কিভাবে সেই ছেলেটাকে কথা শুনাবেন তিনি!আজ যদি ইচ্ছের ভাই থাকতো নিশ্চয়ই দুটোতে মিলে এমন লেগে থাকতো!যদিও দুজনকেই তিনি সমান ভাবে বকে দিতেন কিন্তু ভালবাসা তো আর কাউকে কম আর কাউকে বেশি দিতে পারতেন না!পূরণ কেও তিনি কম ভালবাসেন না।তার বোনের একমাত্র অবলম্বন ছেলেটা, বারো মাসে তেরো পূজোর মত পূরণও বারো মাসে তেরোবার অসুস্থ হয়েই থাকে।

রুমে কাউকে না দেখে দরজা বন্ধ করে দিল ইচ্ছে, তারপর আয়নায় নিজেকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখল কিছুক্ষন।কোন এঙ্গেলে তাকে ছেলে মনে হয়!
ওই পূরইন্নার তো চোখ ই নেই।তা নাহলে ওর মত একটা মেয়েকে নাকি তার রুচিতে বাধে!
আর তার ওই গার্লফ্রেন্ড সে কি?পুরাই শাকচুন্নি!ছেলের উপরে কিছু থাকলে তবে সে হচ্ছে তার গার্লফ্রেন্ড।
এসব বলতে বলতে আবার ইচ্ছের কান্না পেল।বাইরে থেকে দরজায় ধাক্কা ধাক্কি শুরু।স্বর্নাপুরা বোধহয় দোতলায় ছিল,ইচ্ছে ফিরেছে শুনে নেমে এসেছে।

চোখের পানি মুছে নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করে নিল ইচ্ছে।দরজা খুলে চোখ লুকাতে লাগল।এমন চুপচাপ দেখে স্বর্নাপু ইচ্ছেকে ধরে থুতনিতে হাত রেখে নিজের দিকে ফেরালেন।

-ইচ্ছে!কেঁদেছিলি?
-কান্না যেন এবার আপনা আপনিই বেড়ে গেল।
স্বর্নাপু ইচ্ছেকে জড়িয়ে ধরে পিঠে হাত ঘষতে লাগলেন।
-কেন কাঁদছিস পাগলী মেয়ে,কেউ কিছু বলেছে?
-বলেছেতো ওই উপরতলার ঝুলন্ত বাদর থাকে না, সে বলেছে।তার লেজটা কেটে দেয়া দরকার।

স্বর্নাপু কিছুক্ষন হা হয়ে তাকিয়ে বলে,
-পূরণ ভাই!
-আচ্ছা!আমাকে দেখতে কি ছেলে ছেলে লাগে?
-আমি দেখতে কি খুব খারাপ!কারও রুচিতে বাধার মত?
স্বর্নাপু আবার জড়িয়ে ধরে বলল,
-কে বলে এসব পূরণ ভাই!আরে তোকে জ্বালানোর জন্য বলে।
এত এত কথা শুনায় অথচ আমার বাবা তাকে কিচ্ছু বলে না স্বর্নাপু!উলটো আমাকে বকে।আজ আমার হয়ে তুমি তাকে কথা শুনাবে চল।বলেই স্বর্নাপুর হাত ধরে টানতে লাগলাম।

স্বর্নাপুও আমায় থামিয়ে দিলেন।
-ইচ্ছে!এসব দুষ্টামি সিরিয়াসলি নিস না।বরং তুই এসব যত গায়ে মাখবি পূরণ ভাই তোকে তত জ্বালাতে পারবে।কারণ তুই জ্বলছিস।
আর তুই যদি চুপ থাকিস তাহলে সে একসময় চুপ হয়ে যাবে কারণ তখন তার জ্বালানোটা কাজে দিবে না।

মনে মনে স্বর্নাপুর প্রতিও রাগ হল।তুমিও একই দলের স্বর্নাপু।

নিলু এসে বলল,
-আমার মনে হয় পূরণ ভাই তোকে পছন্দ করে ইচ্ছে?
ইচ্ছে মুখে এমন ভাব আনলো যেন পৃথিবীতে সপ্তাশ্চর্য কিছুর কথাই নিলু বলল।
কলেজ ড্রেস খুলে সবাই মিলে কিছুক্ষণ ফিল্ম দেখল টিভিতে।কিন্তু না ইচ্ছের মন কিছুতেই শান্তি পাচ্ছে না।

ওদিকে তায়েফ এসে চুপিসারে ডেকে নিল স্বর্নাকে।
ছাদে যেতেই রেলিং এ কোলে তুলে বসিয়ে দিল।
স্বর্না লজ্জায় রাঙা হয়ে যাচ্ছে।বাড়িতে থাকতে সবার নজর এড়িয়ে একটু কথা বলাও দায় হয়ে যায়।আশে পাশে কেউ না কেউ সর্বোক্ষন ঘুরোঘুরি করে।
এভাবে কখনও ছুয়ে দেখা হয়নি।মাঝে মধ্যে ইশারা ইঙ্গিতে ভালবাসাময় ভাবের ছুড়াছুড়ি হয়েছে শুধু।

স্বর্নাকে লজ্জা পেতে দেখে তায়েফ দুহাত ধরে খানিকটা এগিয়ে এলো।
উপরে বসে লজ্জায় রাঙা মুখ নিয়ে মুচকি হাসি লুকোতে ব্যস্ত স্বর্না।
-এদিকে তাকা একবার।
স্বর্না ঠোঁট কামড়ে হাসি আর লজ্জা আটকানোর মিছে চেষ্টা করছে।কিন্তু এভাবে আর লজ্জা থামে যেখানে প্রতিনিয়ত পাশের মানুষটি লজ্জা দিয়েই যাচ্ছে।

-প্লিজ তাকানা একবার!
-তায়েফের নম্র স্বরের আবেদনময় কথায় স্বর্নার অদ্ভুদ এক ভাললাগা কাজ করছে।
কাপা কাপা চোখে নিচের দিকে তাকাতেই দেখল তায়েফ মুখ উপরে করে এক নজরে তার দিকেই তাকিয়ে আছে।
-আর কত দূরে দূরে থাকবো বল?বাসায় জানাবো একবার?
-আমার মনে হয়না চাচী মেনে নেবে!
যদি সম্পর্ক টা না মেনে নেয় কি হবে তাহলে?

তায়েফ স্বর্নার মুখে হাত রেখে বলে,
-ভুলেও এমন কথা মুখে আনিস না!মরেই যাবো রে।
স্বর্না হুট করে নেমে জড়িয়ে ধরে তায়েফ কে।বেশ কিছুক্ষন মনে মনেই কথা চলল দুজনের।

পূরণ তো বলেছে কিছু একটা করবে অপেক্ষা করতে হুটহাট করে কিছু বাসায় না জানাতে।
-হুম সেটাই করো।তাড়াতাড়ি করতে গিয়ে পরে ব্যাপারটা ঘেটে যাবে।আমি চাই না খারাপ কিছু হোক তায়েফ ভাই।
তায়েফ আলতো করে স্বর্নার কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালো।

-আচ্ছা ইচ্ছে আর পূরণের কাহিনী কি?

-এই মনে হয় একে অপরকে দেখতেই পারে না,আবার মাঝে মাঝে মনে হয় পূরণ আর ইচ্ছে দুজনই দুজনকে পছন্দ করে অথচ কোথাও তাদের ইমম্যাচিউরিটির কারণে দুজনেই দুজনকে না বুঝে গুলিয়ে ফেলে।

-তুই তো পূরণের ব্যাপারে সবটা জানিস,আমার মনে হয় সে নিজের জীবনের সাথে ইচ্ছেকে জড়াতে চায় না বলে,এমন এড়িয়ে যায়।

-হুম হয়তো।সত্যিই কপালে থাকলে জীবনে জুটে না আর জীবনে জুটলে কপালে।নিজের অনুভূতিটা পুষে রাখা খুব যন্ত্রণার!

এদিকে হুট করে ফিল্মের একটা সিন দেখে ইচ্ছের মনে ঘোলমাল পাকাচ্ছে।পূরণ ভাইকে উচিত জবাব দেয়া ছাড়া তার যে স্বস্তি হচ্ছে না!তাকে কিনা বলে ছেলে?
কাচুমাচু করে মায়ের কাছে বায়না জুড়ে দেয় শাড়ির জন্য।

-শাড়ি দিয়ে কি হবে ইচ্ছে?

-পরবো?

-তুই আর শাড়ি!পড়তে পারিস?

-সব সময় কেন তোমাদের আমাকে সব কিছু অযোগ্য মনে হয় বলোতো মা!

-কিসের মধ্যে কি বলছিস?তোকে দেখেছি কখনও শাড়ি পড়তে?যোগ্যতা আর অযোগ্যতা কোত্থেকে আসছে ইচ্ছে!

-পারি না বলে শিখতে হবে না!কেমন মা তুমি কখনও তো বলোনি আয় ইচ্ছে তোকে শাড়ি পরানো শেখাই!শ্বশুর বাড়ি গেলেতো তোমাদের কেই কথা শুনাবে,যে মেয়েকে কিচ্ছু শিখিয়ে পড়িয়ে পাঠাও নি।

-ইচ্ছের মা অবাক হয়ে বলল,
সব সময় যে বলি ইচ্ছে পাশে এসে দাড়া একটু রান্নাটা শিখ তখন এসব কথা মাথায় আসেনা।

-সব সময় কাজের মেয়ের বেশে মেয়েদের শ্বশুর বাড়ি পাঠাতে চাও কেন মা!তুমি না মা!

-কোথায় বলবে ও বাড়িতে গিয়ে কাজ করতে করতে মরে যাবে আমার মেয়েটা এখানে একটু ভাল থাকুক,কই সেটা তো ভাবো না!

ইচ্ছের মায়ের সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে, কি শুরু করেছে মেয়েটা।দ্রুত কাবার্ড খুলে দিয়ে বলে নে কোনটা পরবি নিয়ে গিয়ে আমায় উদ্ধার কর!

ইচ্ছে আর কথা না বাড়িয়ে গোল্ডেন পাড়ের একটা খয়েরী শাড়ি নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
-ইচ্ছে বেরিয়ে যাওয়ার পর কিছুক্ষন ভেবে দেখলেন,মেয়েদের বিয়ের শখ হলে শাড়ি পরতে চায় তবে কি ইচ্ছের ও!
আজই ওর বাবাকে একবার বলতে হবে।

ইচ্ছে স্বর্নাপুকে গিয়ে ধরল তাকে শাড়িটা কিভাবে পরলে আকর্ষনীয় দেখাবে,মেয়ে মেয়ে দেখাবে।

-কি সব বলছিস ইচ্ছে! মেয়ে মেয়ে দেখাবে মানে কি?তুই কি ছেলে!

-স্বর্নাপু তুমিও বলছো!বলেই কান্না কান্না ভাব ধরল।

-আরে তুই ভুল বুঝছিস আমি সেভাবে বলিনি!

-আচ্ছা তোকে সব চাইতে আকর্ষনীয় ভাবেই সাজিয়ে দেবো।যাতে পূরণের হুশ উড়ে যায়।

ইচ্ছে খুব লজ্জা পেল।কিন্তু সে লজ্জা পাচ্ছে কেন?সে তো পূরণ ভাইকে বোঝাতে চায়,মেয়ে কি জিনিস?
না না তাকে লজ্জা পেলে হবে না।

#তোমাতেই_ইতি
#আয়েশা
পর্ব-০৭

স্বর্নাপুদের আজ ছাদে এন্ট্রি নিষেধ।ইচ্ছে আগে থেকেই বারণ করে দিয়েছে।রাতের আধার ঘনিয়ে সন্ধ্যা বেলার হালকা আলো টুকুও নিভে গেছে।এখন শুধু চারিদিকে সোডিয়ামের আলোক বাতি।আকাশে ঝলমলে চাঁদ উঠেছে বড় থালার মত।ইচ্ছে বেশ কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো।
মনে প্রাণে চাইছে পূরণ ভাই ফেসে যাক তার জালে,উচিত একটা শিক্ষা দেয়া যাবে।

সে কি জিনিস ভাল করে বুঝিয়ে দেবে।অথচ লজ্জায় বারবার রাঙা হয়ে উঠছে তার মুখ।স্বর্নাপু বলেছে,

-ইচ্ছে তোর আলাদা করে গালে ব্লাশ করতে হয়নি।লজ্জা পেয়ে পেয়ে আপনা আপনিই নিজের গাল দুটোকে গোলাপি করে নিচ্ছিস!
কথাটা ভাবতেই ইচ্ছে আবার লজ্জা পেল।
ইচ্ছে চেয়ে ছিল একটু স্ট্যান্ডার্ড ভাবে শাড়িটা পরতে কিন্তু স্বর্নাপু বাঙালি ভাবে পড়িয়ে দিল।পায়ের গোড়ালির অনেকটা উপরে শাড়িটা কোমরের দিক দিয়ে অনেকটা খালি।ইচ্ছে লজ্জা না বাড়বেই বা কেন?

স্বর্নাপু তো বলেছে ওভাবে কাত করা যায় না।একটু আকর্ষনীয় লাগলেও কাত হবে না।তাই এভাবেই পরা।

আচ্ছা তার এমন বুক দুরু দুরু ফিলিংস আসছে কেন?এভাবে হলে কিভাবে সে পূরণ ভাইকে কাত করবে যদি সে নিজেই গলে পড়ে যায়।
সব লজ্জা বোধ হয় তাকেই দিয়ে দিয়েছে।মা বোধ হয় পেটে নিয়ে খালি লজ্জাবতী গাছ ছুঁয়েছে।সবাই যেমন বলে পূরণ ভাইকে পেটে নিয়ে ফুফু হাসের মাংস খাওয়ায় এমন ফ্যাশ ফ্যাশ করা গলার আওয়াজ তার বেলায় ও বোধহয় তাই।

তানাহলে এত লজ্জা কেন পায় সে!কই স্বর্নাপুকে তো পেতে দেখেনি?কেমন আড়ষ্ট হয়ে তায়েফ ভাইকে জড়িয়ে রাখে।
ভাবতেই আবার লজ্জা পেয়ে হাসতে লাগল ইচ্ছে।
গ্রামে অনেক দেখেছে সে লজ্জাবতী গাছ কেমন হাত বা পা আলগোছে ছুয়ে দিতেই মিইয়ে যায়।ফুল গুলোও দেখতে বেশ,বেগুনি রঙের।

পূরণ মাত্র মিতুর ডাকে ছাদে এল।তাকে বলা হয়েছে তায়েফ ভাই জরুরী কথা বলতে ডেকেছে।কিন্তু এ কি দেখছে সে?
আজ শরীরটা ভাল লাগছে না।তাই ঘুমের ঔষুধ টা একটু তাড়াতাড়ি খেয়ে নিয়েছিল চোখে ঘুম ঘুম ভাব মাত্র খেয়ে আসলো।
ভুল হচ্ছে না তো তার?

দুহাতে চোখ ঘষে আবার তাকালো,
-ইচ্ছে!এটা সত্যিই ইচ্ছে তো!

ধীর পায়ে আস্তে আস্তে এগোতে লাগল।কেমন পাগল করা হাসি হাসছে।মুহুর্তেই পূরণের বুকে একটা ধাক্কা লাগল।

উফফ!মেরে ফেলবে নাকি মেয়েটা?
মনে হচ্ছে বাতাস এসে মুহুর্তেই তার শরীরে শিহরণ দিয়ে গেল।সামনে থাকা মানবীকে দেখে ভুলে গেল সব রাগ,অভিমান,ঝগড়া।মনে হচ্ছে এই মেয়েটার জন্য সে সব করতে পারে প্রয়োজনে ভুল ঠিকের জ্ঞান বোধও হারাতে পারে।কত দূরে দূরে সরিয়ে রাখবে?আর যে পারছে না!

এমন একটা পুতুলকে এড়িয়ে যেতে তারও যে বুকে বিধে।সূলের মত খোচা দেয়,মাঝে মাঝে শরীর বিষিয়ে উঠে।সব অসহ্য লাগে।শরীরের অসুখ তো ঔষুধ খেয়ে সারানো যায় কিন্তু মনের অসুখ!
মনের অসুখটা যে পূরণ কে তিলে তিলে কষ্ট দিয়ে মারে।আর না, আজ একটুও সম্ভব না এমন ঘোর লাগা মুহুর্তে ঠিক ভুলের হিসেব রাখা।

ইচ্ছের হাসি থামল পেছন থেকে জড়িয়ে ধরা কোমরে কারও স্পর্শ পেয়ে।মুহুর্তেই ইচ্ছের শরীরে একটা ঝাকুনি দিয়ে উঠল।একটা ঢোক গিলে নিল,বুকের ভেতর হাতুড়ি পেটা চলছে।পুরো শরীর যেন অবশ হয়ে আসছে।তবে কি সে বড্ড ভুল করে ফেলেছে।তার কি এমনটা করা ঠিক হয়নি!সে যে নিজেই ভেঙে পড়ছে।এমন লাগছে কেন তার?

যেই নিজেকে স্বাভাবিক করবে পূরণ ভাই তার গাঢ় থেকে আলগোছে চুল গুলো সরিয়ে ঠোঁট ছোয়াতেই ইচ্ছে উল্টো হয়ে ঘুরে ঝাপটে জড়িয়ে ধরল।পূরণ ও মুহুর্তেই ইচ্ছেকে বুকে চেপে ধরল।এত টাইটলি ধরল যে ইচ্ছের মনে হচ্ছে হয়তো তাকে বুকের ভেতরেই ঢুকিয়ে ফেলবে,পিষে ফেলবে।

ইচ্ছের ভাল লাগছে ভীষণ ভাল লাগছে।মনে হচ্ছে সে এটার জন্যই বোধ হয় অপেক্ষা করছিল কিন্তু না সেতো অন্যকিছুর জন্য এসেছে।
কতক্ষণ এভাবে ছিল জানা নেই ইচ্ছের।ঘোর ভাঙল পূরণের গলার আওয়াজে।

আবারও কানের পাশ থেকে চুলগুলো সরিয়ে মুখ রেখে বলল,
-কিরে হিশুমণি আজ আবার শাড়ির ভূত চাপলো কেন মাথায়?

ইচ্ছের কানের পাশে লাগা মুখের শিহরণ এক ঝটকায় উবে গেল।কিসের জন্য এসেছে সে আর কি করতে যাচ্ছে?
এই লোকটা এমন একটা মুহুর্তেও হিশুর কথা তুলল?
না না ইচ্ছের বড্ড ভুল হয়ে গেছে,কিভাবে সে ফাসাতে এসে ফেসে গেল ভেবে পাচ্ছে না।

ইচ্ছে এবার নিজের মত ঘুরিয়ে নিল।আর যাই হোক এই ঝুলন্ত বাদরের বাদরামি সে সহ্য করবেনা আর।

-ইচ্ছে এবার পূরণ ভাইয়ের মুখোমুখি বসল।মাঝরাত চাঁদটা এই মুহুর্তে তার সর্বোচ্চ আলো ঢেলে দিচ্ছে।
কাঁপা কাঁপা হাতে পূরণের গালে হাত রাখতেই পূরণ ও কেঁপে উঠলো।
-চোখ বন্ধ করে নিল।
-ইচ্ছে ভুল করছিস! এমনটা করিস না?
-ইচ্ছে এবার পূরণের কানে মুখ রাখল।
-কেমন করছি পূরণ ভাই!

-ভেবে দেখ একবার তোর পুরো লাইফ পড়ে আছে।আমাকে নিয়ে ভাবিস না,তোর যে প্রেমে পড়া বারণ!
উফফ এই লোকটা এখনও বারণ নিয়ে আছে।তার কি কোনও ফিলিংস আসছে না নাকি!

ইচ্ছে আরেকটু এগোলো,
পূরণ ভাই তুমি আদর দিতে পার?

পূরণের শরীরের লোমকূপ দাঁড়িয়ে গেল।আদর!

হুম পূরণ ভাই,আমার যে আদর চাই?

পাগলামি করিস না ইচ্ছে,সব আদর তোর বর দিবে।

বলতে বলতেই পূরণ ভাই কেঁদে দিল।ইচ্ছে তো এসব ফাসানোর জন্য বলছে কিন্তু পূরণ ভাই কাঁদছে কেন?

আবার ঝাপটে ধরল ইচ্ছেকে এবার আগের বারের থেকে আরও টাইটলি।ইচ্ছে ভ্যাবাচেকা খেল।ইচ্ছের ভাল লাগছে কিন্তু আগেরবারের মত ফিলিংস আসছে না।
কেন জানি না মন খারাপি এসে ভিড় করলো।
কান্নাটা ইচ্ছের কলিজায় গিয়ে লাগছে।পূরণ ভাই আর কান্না ইম্পসিবল!
তবে কি ইচ্ছেকে ফাসাতে নাটক করছে?না তো!
ইচ্ছে অতোটাও ছোট না যে নাটক আর বাস্তব কান্না বুঝবে না।পূরণ ভাই কাঁদছে ছোট বাচ্চাদের মত ইচ্ছের কোলে মাথা রেখে কাঁদছে।চাইলেও ইচ্ছে এক মুহুর্তের জন্য সরে যেতে কিংবা সরাতে পারছে না!

একবার ভাবল জিজ্ঞেস করবে কিন্তু মনে জোর পেল না,ইচ্ছেও মনের ডাকে সাড়া না দিয়ে পারছে না।আলতো হাতে পূরণের মাথায় হাত রাখতেই পূরণ হাতটা ধরে আবারও উষ্ণ ঠোঁট ছোয়ালো হাতের উলটো পিঠে।সাথে কান্নায় ভিজে যাওয়া ঠোঁট। ইচ্ছের একহাত পূরণ ভাইয়ের হাতে অন্যহাতে আবারও চুলে হাত বুলাতে লাগল।
পূরণের ঘুমের ঘোর রয়ে গেছে তাছাড়া ইচ্ছের তুলতুলে হাতের স্পর্শ পেয়ে ঘুমটা একেবারে গাঢ় হয়ে ঝেকে বসেছে।মুহুর্তেই ঘুমের দেশে তলিয়ে গেল পূরণ।কিন্তু ঘুমের মধ্যেও এখনিও ফুফিয়ে যাচ্ছে,মাঝে মাঝে বড় বড় নিঃশ্বাস ফেলছে।

ইচ্ছের অন্যরকম ভাললাগা কাজ করছে।হুট করে এমন কিছু হয়ে যাবে ভাবতেই পারেনি।সে কেন পূরণ ভাইকে কথা শুনাতে পারলো না যখন তাকে জড়িয়ে ধরল আর এখন ই বা কেন পূরণ ভাইকে সরাতে পারলো না।উলটো তাকে বারবার ছুয়ে দিতে ইচ্ছে করছে।মনে মনে বলছে এভাবেই কেটে যাক গোটা রাত।

তবে কি সে ভালবেসে ফেলেছে?
আর পূরণ ভাই!ভাবতেই আবারও লজ্জা পেল ইচ্ছে। এই তো আজ দিনেও তাকে কথা শুনালো আর এখন বাচ্চার মত জড়িয়ে ধরল।কাঁদতে কাঁদতে কিনা ঘুমিয়েই গেল।এমন রগচটা পূরণ ভাইকে ইচ্ছের সামনে এমন বাচ্চা হতে দেখে ইচ্ছের নিজেকে লাকি মনে হচ্ছে।সে একটা পিচ্চি মেয়ে হয়ে পূরণ ভাইকে তার কাত করে ফেলেছে ভাবতেই আবারও লজ্জা পেল।

ভালবাসারা বুঝি এমনই হয়।হুট করে না বলে কয়েই হয়ে যায়।আজ এমন না করলে সে তো জানতোই না পূরণ ভাইও ওকে ভালবাসে।বাবাতো সব সময় বলতো পূরণ ভাই তার কাছে নিজের ছেলের মত।আর ফুফু তো ইচ্ছে বলতে পাগল।একদিন না খেলে দিশেহারা হয়ে যায়।
মা ও তো কেমন ভালবাসে।ইনফ্যাক্ট সবাই ভালবাসে পূরণ ভাইকে।ইশ!ভাবতেই কেমন লাগছে ইচ্ছের এভাবে পূরণ ভাইয়ের সাথে তার মিল হবে ভাবতেই পারছে না সে!

বিয়ের কথা বললেও নিশ্চয়ই কেউ নারাজ থাকার কথা না!
সে পূরণের বউ হবে? ইচ্ছের পূরণ,হুট করে সে পূরণের কপালে এবার নিজের ঠোঁট ছুঁইয়ে দিল।
ভীষণ বোকা বোকা দেখতে লাগছিল কাঁদার সময়।অথচ পূরণ ভাই কত স্মার্ট!

সব সময় রেডি হয়ে ইচ্ছের কাছে গিয়ে দাঁড়াবে।আর বলবে ইচ্ছে কেমন লাগছে আমায়,তখন ইচ্ছে বলতো,
-জঘন্য লাগছে।
-হ্যা সে তো লাগবেই।তোর ইচ্ছেমত বলবি আর সবাই শুনবে এমনতো নয়।দেখ বলতেই মেয়েদের সামনে গিয়ে দাড়াতো আর মেয়ে গুলো পারে না গায়ে এসে পরতে।

ইচ্ছের বিরক্ত লাগতো কিন্তু সে জানতো পূরণ ভাই আসলে দেখতে কতটা আকর্ষনীয়।সেবার যখন একটা সাদা শার্ট আর ব্লু জিন্স পরেছিল ইচ্ছের তো চোখ ই সরছিল না কিন্তু তখন তো এমন ফিলিংস ছিল না।তাই এত গুরুত্ব দেয়নি।কিন্তু আজ ইচ্ছে দেখছে কেমন খুটিয়ে খাটিয়ে দেখছে।
গালে খোচা খোচা দাড়ি,মুখে এক ঝাক ক্লান্তি।কালো টি-শার্ট এর সাথে থ্রি-কোয়াটার জিন্স প্যান্ট। সব মিলিয়ে ইচ্ছের চোখে পূরণ ভাই ই বেস্ট আর কেউ তার মত হতেই পারে না।

জীবন ও মাঝে মাঝে স্বপ্নের মত।আজ সেটাই বাস্তবে দেখছে সে।সে তো স্বপ্নেও ভাবেনি পূরণ ভাই তার হবে কিন্তু হয়ে গেলো তো!

চলবে

সবাই গঠনমূলক মন্তব্য জানাবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here