#তোমাতেই_খুজি_আমার_পূর্ণতা🤗 (৮)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)
অনাথ আশ্রমের দরজার সামনে প্রায় ৩০-৪০ জন বাচ্চাকে হাসি মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতে পাই, প্রত্যকের হাতে একটা করে তাজা গোলাপ ফুল রয়েছে। ওদের দেখেই আমার চোখ-মুখ খুশিতে জ্বল জ্বল করে উঠেছিলো। পরমূহূর্তে ওদের এভাবে একত্র হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মনে হচ্ছে ওরা যেনো আমার আর তীব্রের আসার অপেক্ষাতেই ছিলো, আর আমাদের হাতে ফুল তুলে দিয়ে স্বাগতম জানিয়ে ভিতরে প্রবেশ করতে বলবে।
আমি আমার ঠোঁটের কোনে হাসির রেখা বজায় রেখে পিছন ঘুরে তীব্রের দিকে লক্ষ্য করি৷ তীব্র গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে বুকের সাথে দু’হাত ভা’জ করে ঠোঁটের কোনে হাসির রেখা ফুটিয়ে তুলে দাঁড়িয়ে আছে, আমাকে তাকাতে দেখে ইশারায় সামনের দিকে অগ্রসর হতে বলে। আমি আবারও বাচ্চাদের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই ওরা সকলে এক সুরে বলে উঠে…
_____সু’স্বাগতম মামনি ও বাবাই।
বাচ্চাদের মুখে আমাকে মামনি আর তীব্রকে বাবাই সম্মোধন করতে শুনে আমি যেনো অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে। সেই মূহূর্তে তীব্র আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফি’স’ফি’সি’য়ে বলে…
_____এতো বেশি অবাক হয়েও না ম্যডাম৷ আপাতত ওদের ডাকে ও সব কথায় সায় প্রদান করো পরে আমি তোমাকে এইসবের পিছনে থাকা কারণগুলো ব্যখা করে শুনাবো কেমন! পরপর অনেকগুলো সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে তোমার জন্য এটা তো মাত্র শুরু।
তীব্র আমাকে কিছু বলতে না দিয়ে আমার হাত নিজের হাতের মুঠোয় মুষ্টিবদ্ধ করে নেয়। আমি চ’ট করে তীব্রের দিকে তাকাই। তীব্র হাসি মুখ নিয়ে আমার হাত ধরে সামনের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে। বাচ্চাগুলোর কাছাকাছি এসে দাঁড়াতেই একএক করে সবগুলো বাচ্চা আমার আর তীব্রের হাতে গোলাপ দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করতে শুরু করে। সর্বশেষ গোলাপ দুটো আমাদের হাতে দিতেই অনাথ আশ্রমের কতৃপক্ষ আমাদের সামনে এসে দাঁড়িয়ে হাসি মুখ নিয়ে বলে…
_____ভিতরে আসুন স্যার এবং ম্যম। আপনাদের অপেক্ষাতেই ছিলাম আমরা, আপনারা এসে গিয়েছেন এবার আমরা অনুষ্ঠান পর্ব শুরু করে দিবো।
তীব্র ওনার কথায় সম্মতি প্রদান করে আমাকে নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে, আশ্রমের ভিতরের জায়গাটা ততোটাও বড় না, অনেক সুন্দর ভাবে সাজানো হয়েছে সম্পূর্ণ জায়গাটি। মাঠজুড়ে বাচ্চাদের বসার সুবিধার্থে চেয়ার দেওয়া হয়েছে সকল বাচ্চারা সেখানে বসে রয়েছে। একেবারে সামনে মন্ঞ্চ বানানো হয়েছে, মন্ঞ্চ থেকে কিছুটা দুরত্ব বজায় রেখে আশ্রমের নিয়োজিত কতৃপক্ষদের পাশাপাশি আমার তীব্রের বসার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। তীব্র আমাকে নিয়ে সেখানে বসে পড়লো। আমি বা’ক’রু’দ্ধ হয়ে শুধু সবটা দেখ ছি।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পর্ব শে’ষ হওয়ার পর খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করা হয়েছে। আমি একপার্শে দাঁড়িয়ে থেকে বাচ্চাদের উল্লাস করতে দেখছি, কতোটা খুশি দেখাচ্ছে ওদের। ওদের এই আনন্দে ভরপুর মুখশ্রী দেখে আমার মন প্রশান্তিতে ছে’য়ে যায়। সেইমূহূর্তে তীব্র আমার পাশে এসে দাঁড়ায় আর বলে…
_____কেমন লাগলো সারপ্রাইজ গুলো?
আমি আমার ঠোঁটের প্রশান্তির হাসির রেখা বিরাজ রেখেই বললাম…
_____আমার মনের গ’হী’ন পর্যন্ত ছুঁয়ে দিয়েছে আপনার দেওয়া আজকের এই সারপ্রাইজ এর প্রত্যেকটি মূহূর্ত। আচ্ছা একটা প্রশ্ন ছিলো আমার!
_____জানি কি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে তোমার মাঝে।
আমি উৎসুক নয়নে তাকিয়ে রইলাম তীব্রের মুখশ্রী পানে, তীব্র আবারও বললো….
_____১ম যেদিন তোমার সাথে আমার ওভাবে সাক্ষাৎ হয় তখন তোমার সাধারণ জনগনের প্রতি দূ’র্ব’ল’তা আর অত্যাধিক সাহসিকতা দেখে আমি কিছুসময়ের জন্য অবাক না হয়ে পারছিলাম না। সেইমূহূর্তেই আমার তোমার প্রতি রা’গ ও লেগেছিলো প্রচুর, এতোবড় মা’ফি’য়া’র মাথায় তারই গান ঠে’কি’য়ে তাকে মা’রা’র হু’ম’কি দিয়েছিলে তুমি রাগ লাগাটা তো স্বাভাবিক।
কিন্তু পরদিন যখন ওয়াসিফ এর নিকট জানতে পারলাম তুমি আমার কাছে সেদিনের বিষয় নিয়ে ক্ষ’মা চাইতে এসেছিলে তখন মনে মনে অনেক বিষয় নিয়ে ভাবলাম। কেনো জানি না তোমার প্রতি সৃষ্টি হওয়া সব রা’গ গুলো মূহূর্তেই হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো। তাই তোমাকে ফোন করেছিলাম গতকাল বিকালে, তোমার সাথে কিছু সময় কথা বলে নিজের মধ্যে একপ্রকার শান্তি খুঁজে পেয়েছিলাম যেনো৷
কতো নৃ’শং’স’তা চা’লা’ই আমি আমার অপছন্দের তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের উপর, তারজন্য কতোটা কঠোর মনের হতে হয় আমায়, আর গতকাল বিকালে একমুহূর্তের জন্য যেনো সেই সব নৃ’শং’স’তা, কঠোর মানসিকতাকে ভু’লে গিয়ে তোমার সাথে নিজের একাকিত্বের সময় কাটিয়ে নিজের মধ্যে ভালোলাগার অনুভূতি কাজ করতে দেখেছিলাম।
তোমার সাথে কথা বলা শে’ষ করে মনে মনে ঠিক করলাম তোমার সাথে দেখা করা দরকার আমার, দেখা তো যেখানে সেখানেই করে নিতে পারি কিন্তু জায়গাটি যদি হয় তোমাকে শান্তি দেওয়ার মতো তাহলে দেখা করার মূহূর্তটুকু স্মরণীয় হয়ে থাকবে আমাদের। এই যে আশ্রমে এতো এতো বাচ্চাদের দেখছো এদের কারোর ই বাবা-মা নেই, হয়তো আছে কিন্তু তারা কখনও এদের মাঝে একটা বাচ্চারও খো’জ নিতে আসে নি। এখানে আসার পর থেকে এরা বাবা-মায়ের শূ’ন্য’তা অনুভব করছে।
কিছুসময়ের জন্য যদি এদের মাঝে মা-বাবার শূ’ন্য’তা’র ঘর পূর্ণতায় ভরিয়ে দিতে সক্ষম হই ব্যপারটা ম’ন্দ হবে না, তাই মনঃস্থির করলাম তোমাকে আমার সাথে এখানে আনবো, আশ্রমের কতৃপক্ষের সাথে কথা বলে চূড়ান্ত করলাম বিষয়টা। পাশাপাশি এ ও জানালাম, সকল বাচ্চারা যেনো আমাকে বাবার নজরে আর তোমাকে মায়ের নজরে দেখে। আশ্রমের কতৃপক্ষ আমার এমন সিদ্ধান্তে সায় প্রদান করলেন।
রাতে তোমাকে কল করলাম আবারও, দেখা করতে পারবে কিনা জেনে নিলাম যখন তুমি সম্মতি জানালে তখন ভাবলাম আশ্রমে আসার বিষয়টা তোমাকে না জানিয়ে সারপ্রাইজ হিসেবে দিবো, এতে তোমার মাঝে আরো বেশি ভালো লাগা কাজ করবে। আমার অ’র্থ-সম্পদ যা আছে তার কিছু অংশ যদি আমি এই অনাথ বাচ্চাদের খুশি-আনন্দের পিছনে প্রতি মাসে ব্য’য় করি তাহলে আমার মনেও শান্তি বিরাজমান থাকবে সর্বক্ষণ।
—————————-
কথাগুলো বলে তীব্র থে’মে যায়, আমার উৎসুক চাহনি ইতিমধ্যে মুগ্ধতা ছে’য়ে গিয়েছে। মানুষটির চিন্তাধারা প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য৷ একটা মানুষের বাহ্যিক রূপ দেখে তাকে বিচার করা উচিত না, মানুষের আসল রূপ তো তার মনের ভিতর লু’কি’য়ে থাকে।
যেমন~ তীব্রকে প্রথমত আমি ভিষণ খা’রা’প স্বভাবের মানুষ বলে মনে করতাম ওনার এই খু*ন করা, মানুষের উপর অ’ত্যা’চা’র করা দেখে কিন্তু ওনার এই বাহ্যিক রূপের অন্তরালে যে এতো সুন্দর পরিষ্কার চিন্তাধারার একটা মানুষ বাস করছে তা তো জানতেই পারতাম না যদি না আজ ওনার সাথে এখানে আসতে নিজেকে প্রস্তুত করতাম৷ এই মূহূর্ত থেকে তীব্রের প্রতি আমার শ্র’দ্ধা ও ভালো লাগার জায়গাটি আরো মজবুত হয়ে উঠলো।
——————————
আমাকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে তীব্র ভ্রু’নাচিয়ে বলে…
______কি দেখছো বলো তো?
আমি আনমনেই বলে দিলাম…
______আপনি নামক মানুষটার প্রতি আজ অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করছে।
তীব্র ঠোঁট বা’কি’য়ে হেসে বলে…
______বাহ বাহ ম্যডাম দেখছি আজ আমার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে যাচ্ছেন, ব্যপার কি হুম হুম..!
ওনার কথা কর্ণপাত হতেই আমি বাস্তবে ফিরি, সঙ্গে সঙ্গে ওনার উপর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে চারপাশে দেখি একরাশ ল’জ্জা যেনো আমার সম্পূর্ণ মুখশ্রী গ্রা’স করে নিয়েছে ইতিমধ্যে। নিজমনে নিজেকে কিছু কড়া কথা শুনিয়ে দিলাম…
“””তৃপ্তি তুই হু’ট করেই এমন নি’র্ল’জ্জ হয়ে গেলি কি করে, তীব্র কি না কি ভাবছে আমাকে নিয়ে ইসসসস”””
পরমূহূর্তে বেশ কিছু সময় বাচ্চাদের সাথে হাসি-মজা করতে করতেই কে’টে যায় আমার আর তীব্রের। আমি একটা বাচ্চাকে আমার কোলে বসিয়ে ওদের সাথে গল্প করছিলাম সেইমূহূর্তে তীব্র আমার নিকট এসে বসে আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো…
____এই যে ম্যডাম! বাড়িতে ফিরতে হবে তো এবার, অনেক দূরের পথ যেতেও সময় লাগবে এখন বের না হলে সন্ধ্যা পেড়িয়ে যাবে তোমার বাড়িতে পৌছাতে পৌছাতে।
আমি আমার হাতে থাকা ঘড়ির দিকে দৃষ্টি পাত করতেই দেখি ঘড়ির কাটা ইতিমধ্যে বিকাল ৫টার ঘর ছু’ই ছু’ই। এবার আমার বাসায় ফেরা প্রয়োজন। কেনো যেন যাওয়ার কথা শুনে মনের কোনে অজানা খা’রা’প লাগা কাজ করছে, ওদের সাথে সময়টা বেশ ভালো কাটছিলো এখন চলে যেতে হবে তাই হয়তো এই খা’রা’প লাগা। ছোট্ট করে একটা নিশ্বাস ছাড়লাম, তারপর তীব্রকে যাওয়ার বিষয় নিয়ে সায় প্রদান করলাম। শেষ মূহূর্তে স্মৃতি হিসেবে সব বাচ্চাদের একত্র করে কতোকগুলো ছবি উঠিয়ে নিলাম। সকলের থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠে বসি, আলতো ভাবে হাত বাড়িয়ে বিদায় পর্বের সমাপ্তি ঘ’টা’ই। তীব্র গাড়ি স্টার্ট করলেন। বেশ খানিকটা পথ অতিক্রম করার পর তীব্র আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো…
_____মন খা’রা’প করছো কেন পা’গ’লী মেয়ে! আমরা সময় করে আবার আসবো ওদের সাথে দেখা করতে। আবারও এমন সুন্দর সময় কা’টি’য়ে যাবো।
আমি তীব্রের কথার প্রতিত্তুরে স্মিত হাসলাম মাত্র……
#চলবে….